সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক বিচার্য বিষয় যা আপনাকে জড়িত করে

এক বিচার্য বিষয় যা আপনাকে জড়িত করে

এক বিচার্য বিষয় যা আপনাকে জড়িত করে

 আপনার কি এমন কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্য রয়েছে, যার সঙ্গে আপনি বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ? কী হবে যদি কেউ আপনাকে এই অভিযোগে অভিযুক্ত করে যে, আপনি কেবল স্বার্থপর কারণের জন্য সেই সম্পর্ক বজায় রাখছেন? আপনি কি কষ্ট পাবেন না, এমনকি হতে পারে ক্ষুব্ধ হবেন না? ঠিক এই অভিযোগটাই শয়তান দিয়াবল সেইসমস্ত লোকের বিরুদ্ধে করেছিল, যাদের যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক রয়েছে?

প্রথম মানব দম্পতি আদম ও হবাকে ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করাতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে তার সঙ্গে যোগ দেওয়াতে শয়তান যখন সফল হয়েছিল, তখন কী ঘটেছিল তা চিন্তা করুন। যা ঘটেছিল সেটার অর্থ কি এই যে, লোকেরা কেবল ততদিন পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকত, যতদিন পর্যন্ত এর ফলে তারা উপকৃত হয়েছিল? (আদিপুস্তক ৩:১-৬) আদমের বিপথগমনের প্রায় ২,৫০০ বছর পরে, শয়তান এই একই বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল—সেই সময় ইয়োব নামে এক ব্যক্তি সম্পর্কযুক্ত ছিল। দিয়াবল যে-অভিযোগ করেছিল, তা এর সঙ্গে জড়িত বিচার্য বিষয়কে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। আসুন আমরা সতর্কতার সঙ্গে বাইবেলের সেই ঘটনা পরীক্ষা করে দেখি।

“আমি আপন নীতিনিষ্ঠা, ত্যাগ করিব না”

ইয়োব হলেন, “সিদ্ধ ও সরল [“ন্যায়নিষ্ঠ,” NW], ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক।” কিন্তু, শয়তান ইয়োবের ন্যায়নিষ্ঠা সম্বন্ধে অপবাদ দেয়। “ইয়োব কি বিনা লাভে ঈশ্বরকে ভয় করে?” সে যিহোবাকে জিজ্ঞেস করে। এরপর, দিয়াবল এই অভিযোগ করে ঈশ্বর ও ইয়োব উভয়কেই অপবাদ দেয় যে, যিহোবা ইয়োবকে সুরক্ষা করার ও তাকে আশীর্বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ইয়োবের আনুগত্য কিনে নিয়েছেন। “কিন্তু,” শয়তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বলেছিল, “তুমি একবার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার সর্ব্বস্ব স্পর্শ কর, তবে সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।”—ইয়োব ১:৮-১১.

এই দাবিগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য যিহোবা শয়তানকে ইয়োবের ওপর পরীক্ষা নিয়ে আসতে দিয়েছিলেন। তাকে ঈশ্বরের সেবা করা থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় দিয়াবল সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তির ওপর একটার পর একটা বিপর্যয় নিয়ে আসতে থাকে। ইয়োবের সমস্ত পশুপাল হয় চুরি করা হয় নতুবা ধ্বংস করে দেওয়া হয়, তার পরিচারকদের হত্যা করা হয় এবং তার ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলা হয়। (ইয়োব ১:১২-১৯) কিন্তু, শয়তান কি সফল হয়? কখনোই না! যদিও ইয়োব জানতেন না যে, দিয়াবলই তার পরীক্ষাগুলোর কারণ ছিল, তবুও তিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু দিয়াছিলেন, সদাপ্রভুই লইয়াছেন; সদাপ্রভুর নাম ধন্য হউক।”—ইয়োব ১:২১.

পরে একসময় শয়তান যিহোবার সামনে আসে আর যিহোবা তাকে বলেন: “[ইয়োব] আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] রক্ষা করিতেছে, যদিও তুমি অকারণে তাহাকে বিনষ্ট করিতে আমাকে প্রবৃত্ত করিয়াছ।” (ইয়োব ২:১-৩) অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা—এমন এক গুণ, যার জন্য ঈশ্বরের প্রতি আপোশহীন আনুগত্য এবং ধার্মিকতার প্রতি নিবিঢ়ভাবে লেগে থাকা যুক্ত। এভাবে ইয়োব নীতিনিষ্ঠার বিচার্য বিষয়ে জয়ী হন। কিন্তু, দিয়াবল হাল ছেড়ে দেয় না।

এরপর, শয়তান সুদূরপ্রসারী এক দাবি করে, যা সমস্ত মানবজাতিকে প্রভাবিত করে। “চর্ম্মের জন্য চর্ম্ম” সে যিহোবাকে বলে “আর প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে। কিন্তু তুমি এক বার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার অস্থি ও মাংস স্পর্শ কর, সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।” (ইয়োব ২:৪, ৫) এখানে দিয়াবল ইয়োবের নাম ব্যবহার করার পরিবর্তে সাধারণ শব্দ “লোক” ব্যবহার করার দ্বারা সে সমস্ত মানুষের নীতিনিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বস্তুতপক্ষে, সে দাবি করে: ‘একজন লোক তার জীবন রক্ষার জন্য যেকোনোকিছু করবে। আমাকে একটা সুযোগ দিন আর আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে যেকাউকে সরিয়ে নিতে পারি।’ সমস্ত পরিস্থিতিতে এবং সবসময় কোনো মানুষই কি ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকবে না?

যিহোবা দিয়াবলকে অনুমতি দেন, যাতে সে ইয়োবকে মারাত্মক রোগ দিয়ে আঘাত করতে পারে। ইয়োব এতটাই কষ্ট ভোগ করেন যে, তিনি যাতে মারা যান এর জন্য প্রার্থনা করেন। (ইয়োব ২:৭; ১৪:১৩) এরপরও ইয়োব বলেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] ত্যাগ করিব না।” (ইয়োব ২৭:৫) ইয়োব এই কথা বলেন কারণ তিনি ঈশ্বরকে ভালবাসেন আর কোনোকিছুই তা পরিবর্তন করতে পারে না। ইয়োব নিজেকে একজন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ দেন। “আর সদাপ্রভু” বাইবেল বলে, “ইয়োবের প্রথম অবস্থা হইতে শেষাবস্থা অধিক আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন।” (ইয়োব ৪২:১০-১৭) ইয়োবের মতো কি অন্যান্য ব্যক্তি রয়েছে? সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কী প্রকাশ পেয়েছে?

যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দেওয়া হয়েছে

প্রেরিত পৌল বাইবেলের ইব্রীয় বইয়ের ১১ অধ্যায়ে নোহ, অব্রাহাম, সারা এবং মোশিসহ প্রাক্‌খ্রিস্টীয় যুগের কয়েক জন বিশ্বস্ত নারী ও পুরুষের নাম উল্লেখ করেন। এরপর প্রেরিত ঘোষণা করেন: “এই সকলের বৃত্তান্ত বলিতে গেলে সময়ের অকুলান হইবে।” (ইব্রীয় ১১:৩২) ঈশ্বরের এই বিশ্বস্ত দাসদের সংখ্যা এত অধিক ছিল যে, পৌল তাদের ‘বৃহৎ সাক্ষিমেঘ’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে আকাশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিশাল মেঘের সঙ্গে তুলনা করেন। (ইব্রীয় ১২:১) হ্যাঁ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অসংখ্য লোক তাদের স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করেছে এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্য দেখানো বেছে নিয়েছে।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.

যিহোবার কাছ থেকে সে মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, শয়তানের এই দাবির চূড়ান্ত উত্তর ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের কাছ থেকে এসেছিল। এমনকি যাতনাদণ্ডে অতি যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুও ঈশ্বরের প্রতি তাঁর নীতিনিষ্ঠাকে ভাঙতে পারেনি। শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় যিশু চিৎকার করে বলেছিলেন: “পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।”—লূক ২৩:৪৬.

সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে, সত্য ঈশ্বরকে সেবা করা থেকে দিয়াবল সকলকে সরিয়ে নিতে সমর্থ হয়নি। অসংখ্য মানুষ যিহোবাকে জেনেছে এবং ‘তাহাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, তাহাদের সমস্ত প্রাণ ও তাহাদের সমস্ত মন দিয়া তাহাদের ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিয়াছে।’ (মথি ২২:৩৭) যিহোবার প্রতি তাদের অটল আনুগত্য মানুষের নীতিনিষ্ঠার বিচার্য বিষয়ে শয়তানকে ভুল প্রমাণিত করেছে। আপনিও নীতিনিষ্ঠা বজায়কারী এক নারী বা পুরুষ হয়ে দিয়াবলকে ভুল প্রমাণিত করতে পারেন।

আপনাকে কী করতে হবে?

এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং ‘একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তিনি যাঁহাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিবার’ বা তাদের সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার জন্য সময় করে নিন।—যোহন ১৭:৩.

ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে মানুষের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার দ্বারা শয়তান মানুষের নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধে আপত্তি জানিয়েছিল। জ্ঞানের দ্বারা যদি আপনার মনোভাবকে প্রভাবিত করতে হয়, তা হলে এটাকে আপনার হৃদয়ে পৌঁছাতে হবে। আর তা হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য আপনার কেবল বাইবেল থেকে তথ্য খোঁজার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আপনি যা শেখেন, তা নিয়ে ধ্যান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। (গীতসংহিতা ১৪৩:৫) বাইবেল বা বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা পড়ার সময় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করার বিষয়ে নিশ্চিত হোন: ‘এটা যিহোবা সম্বন্ধে আমাকে কী শিক্ষা দেয়? এখানে প্রকাশিত ঈশ্বরের কোন গুণাবলি আমি দেখতে পাই? আমার জীবনের কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমাকে এইরকম হতে হবে? ঈশ্বর কী অনুমোদন করেন অথবা কী অনুমোদন করেন না? ঈশ্বর সম্বন্ধে আমি যেমন বোধ করি, তাতে এটা কীভাবে প্রভাব ফেলে?’ এই ধরনের চিন্তা আপনার হৃদয়কে সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রেম ও কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দেবে।

ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠা ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। (১ রাজাবলি ৯:৪) যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আপনার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য আপনার জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে নৈতিক দৃঢ়তা প্রয়োজন। কিন্তু, নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখে আপনি কোনোভাবেই বঞ্চিত হবেন না। যিহোবা হলেন ‘পরম ধন্য [“সুখী,” NW] ঈশ্বর’ এবং তিনি চান যেন আপনি জীবন উপভোগ করেন। (১ তীমথিয় ১:১১) এখন কিছু অভ্যাস সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, যেগুলো আপনাকে নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকার জন্য এড়িয়ে চলতে হবে আর এভাবে আপনি সুখী জীবন ও ঈশ্বরের অনুমোদন উপভোগ করতে পারবেন।

যৌন অনৈতিকতা এড়িয়ে চলুন

যিহোবা নিজে তাঁর বাক্য বাইবেলে বিয়ের মান স্থাপন করেছেন, যেটি বলে: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (আদিপুস্তক ২:২১-২৪) যেহেতু বিবাহ সাথিরা “একাঙ্গ” হয়ে ওঠে, তাই তারা যদি পরস্পরের মধ্যে তাদের যৌনসম্পর্ক সীমাবদ্ধ রাখে, তা হলে ঈশ্বরের বৈবাহিক ব্যবস্থাকে তারা সম্মান করে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) ‘বিবাহ শয্যা’ অভিব্যক্তিটি সেই পুরুষ ও নারীর মধ্যে যৌনসম্পর্ককে নির্দেশ করে, যারা বৈধভাবে বিবাহিত। তাদের মধ্যে যেকোনো একজনের বিয়ের বাইরে যৌনসম্পর্কে রত হওয়া মানে পারদারিকতা করা আর তা ঈশ্বরের কাছ থেকে চরম বিচার নিয়ে আসতে পারে।—মালাখি ৩:৫.

বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক করা সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেটাও যিহোবার দ্বারা স্থাপিত নৈতিক মানগুলোর বিপরীত। “ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, . . . যেন তোমরা ব্যভিচার হইতে দূরে থাক,” বাইবেল বলে। (১ থিষলনীকীয় ৪:৩, ৪) সমকামিতা, অজাচার এবং পশুগমনও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ। (লেবীয় পুস্তক ১৮:৬, ২৩; রোমীয় ১:২৬, ২৭) কোনো ব্যক্তি যদি ঈশ্বরকে খুশি এবং সত্যিকারের সুখী জীবনযাপন উপভোগ করতে চান, তা হলে অবশ্যই তাকে অনৈতিক অভ্যাসগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

বিয়ের আগে কামোদ্দীপক যৌন আচরণ সম্বন্ধে কী বলা যায়? এই অভ্যাস ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে। (গালাতীয় ৫:১৯) তাই, মনকেও অনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” (মথি ৫:২৮) এই কথাগুলো বইপত্রিকায়, চলচ্চিত্রে অথবা ইন্টারনেটে অশ্লীল বিষয়গুলো দেখা; যৌনক্রিয়া সম্বন্ধে কোনোকিছু পড়া; এবং অশালীন গানের কথা শোনার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। এই ধরনের বিষয়বস্তু এড়ানো ঈশ্বরকে খুশি করে এবং তা একজন ব্যক্তির জীবনের ওপর গঠনমূলক প্রভাব বিস্তার করে।

প্রেমের ভান করা সম্বন্ধে কী বলা যায়? প্রেমের ভানকে “চপল প্রণয় অথবা যৌন প্রলোভনজনক” ব্যবহার হিসেবে বর্ণনা করা হয়। একজন বিবাহিত নারী অথবা পুরুষের জন্য তার বিয়ের বাইরে কোনো ব্যক্তির প্রতি এই ধরনের মনোযোগ দেওয়াটা বাইবেলের নীতির বিরুদ্ধে আর এটা যিহোবার প্রতি অসম্মানের ইঙ্গিত দেয়। (ইফিষীয় ৫:২৮-৩৩) কেবলমাত্র মজা করার জন্য পরস্পরের প্রতি রোমান্টিক ইঙ্গিত পাঠানো অবিবাহিত ব্যক্তিদের পক্ষে কতই না অনুপযুক্ত! কী হবে যদি এই ধরনের প্রেমের ভান যে-উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়? এটা যে-আবেগগত কষ্ট নিয়ে আসতে পারে, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। আরও গুরুতর বিষয় হল যে, প্রেমের ভান করা পারদারিকতা অথবা ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, বিপরীত লিঙ্গের সদস্যের সঙ্গে শুদ্ধতার সঙ্গে ব্যবহার করা একজন ব্যক্তির আত্মসম্মানকে বৃদ্ধি করে।—১ তীমথিয় ৫:১, ২.

জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে খুশি করা

অনেক দেশে মদ্যজাতীয় পানীয় চাইলেই পাওয়া যায়। এগুলো পান করা কি ভুল? পরিমিতভাবে দ্রাক্ষারস, বিয়ার অথবা অন্যান্য মদ্যজাতীয় পানীয় পান করার ব্যাপারে শাস্ত্রে নিষেধ করা নেই। (গীতসংহিতা ১০৪:১৫; ১ তীমথিয় ৫:২৩) কিন্তু, অতিরিক্ত পান করা ও মাতাল হওয়া ঈশ্বরের চোখে অন্যায়। (১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩) নিশ্চিতভাবেই আপনি আপনার স্বাস্থ্যকে নষ্ট করার ও আপনার পারিবারিক জীবনকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য মাত্রাতিরিক্ত পান করতে চাইবেন না।—হিতোপদেশ ২৩:২০, ২১, ২৯-৩৫.

যিহোবা হলেন “সত্যের ঈশ্বর।” (গীতসংহিতা ৩১:৫) “মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য,” বাইবেল বলে। (ইব্রীয় ৬:১৮) আপনি যদি ঈশ্বরের অনুমোদন চান, তা হলে আপনাকে মিথ্যা বলা এড়াতে হবে। (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯; কলসীয় ৩:৯, ১০) “প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও,” বাইবেল খ্রিস্টানদের উপদেশ দেয়।—ইফিষীয় ৪:২৫.

এ ছাড়াও, রয়েছে জুয়াখেলার অভ্যাস। যদিও অনেকের কাছে জনপ্রিয় কিন্তু জুয়াখেলা হল এক ধরনের লোভ, কারণ এটা অন্যদের হারিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে টাকাপয়সা অর্জন করার এক প্রচেষ্টা। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের অনুমোদন করেন না, যারা “কুৎসিত লাভের আকাঙ্ক্ষী।” (১ তীমথিয় ৩:৮) তাই, আপনি যদি যিহোবাকে খুশি করতে চান, তা হলে যেকোনো ধরনের জুয়াখেলা থেকে দূরে থাকুন যার অন্তর্ভুক্ত লটারি ধরা, বিঙ্গো এবং ঘোড়ার দৌড়ের বাজি ধরা। এর ফলে আপনি দেখতে পাবেন যে, আপনার পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য আপনার হাতে আসলে অনেক টাকাপয়সা রয়েছে।

চুরি করা অর্থাৎ আপনার নয় এমন কোনোকিছু নেওয়া আরেক ধরনের লোভ। “চুরি করিও না,” বাইবেল বলে। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৫) জেনেশুনে চুরি করা সম্পত্তি কেনা এবং অনুমতি ছাড়া কিছু নেওয়া অন্যায়। “চোর আর চুরি না করুক,” বাইবেল বলে, “বরং স্বহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করুক, যেন দীনহীনকে দিবার জন্য তাহার হাতে কিছু থাকে।” (ইফিষীয় ৪:২৮) নিয়োগকর্তার কাছ থেকে সময় চুরি করার পরিবর্তে, যিহোবার প্রেমিকরা সৎভাবে দৈনিক কাজকর্ম করে। তারা ‘সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে বাঞ্ছা করে।’ (ইব্রীয় ১৩:১৮) আর এক শুদ্ধ বিবেক নিশ্চিতভাবে একজন ব্যক্তির মনের শান্তি লাভ করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে।

যিহোবা এমন ব্যক্তিকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন, যিনি বদমেজাজি? বাইবেল সাবধান করে: “কোপন স্বভাব লোকের সহিত বন্ধুতা করিও না, ক্রোধীর সঙ্গে যাতায়াত করিও না।” (হিতোপদেশ ২২:২৪) অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ প্রায়ই দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজের দিকে পরিচালিত করে। (আদিপুস্তক ৪:৫-৮) প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়ে বাইবেল বলে: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর। যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও, কারণ লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন।’” (রোমীয় ১২:১৭-১৯) আমরা যখন এই ধরনের পরামর্শে মনোযোগ দেব, তখন আমাদের জীবন আরও শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে—আর তা আমাদের সুখকে বৃদ্ধি করবে।

আপনি সফল হতে পারেন

অন্যকিছু করার চাপ সত্ত্বেও, আপনি কি ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন? হ্যাঁ, পারেন। উপলব্ধি করুন যে, ঈশ্বর চান আপনি যেন নীতিনিষ্ঠার বিচার্য বিষয়ে শয়তানকে ভুল প্রমাণিত করার ক্ষেত্রে সফল হন কারণ তাঁর বাক্য বলে: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।”—হিতোপদেশ ২৭:১১.

তাঁর চোখে যা সঠিক তা করার জন্য আপনাকে শক্তিশালী করতে আপনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭, ১৩) তাই, ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল সম্বন্ধে আপনার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ প্রচেষ্টা করুন। বাইবেল থেকে আপনি যা শেখেন, তা উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করা ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেমকে গভীর করবে এবং তাঁকে খুশি করতে পরিচালিত করবে। “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই,” ১ যোহন ৫:৩ পদ বলে, “যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিরা আপনাকে বাইবেল অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পেরে আনন্দিত হবে। স্থানীয়ভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আপনি আমন্ত্রিত অথবা আপনি এই পত্রিকার প্রকাশকদের কাছে চিঠি লিখতে পারেন।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরীক্ষার মধ্যেও ইয়োব বিশ্বস্ত ছিলেন

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করা আপনাকে যা সঠিক, তা করার জন্য আপনার সংকল্পকে শক্তিশালী করবে