সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘সাহসের সঙ্গে’ পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া

‘সাহসের সঙ্গে’ পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া

“মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে”

‘সাহসের সঙ্গে’ পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া

 এক উদ্ধত জনতা ঈশ্বরের একজন বাধ্য দাসকে মারধর করে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। একেবারে ঠিক সময়ে, রোমীয় সেনাবাহিনী সেই ব্যক্তিকে কেড়ে নেয় ও তাকে আটক করে। এর ফলে পাঁচ বছর ধরে বেশ কয়েকটা ধারাবাহিক ঘটনা ঘটে। ফলস্বরূপ, অনেক উচ্চপদস্থ রোমীয় কর্মকর্তা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে শুনতে পায়।

সেই আটককৃত ব্যক্তি হলেন প্রেরিত পৌল। সা.কা. প্রায় ৩৪ সালে যিশু বলেছিলেন যে, পৌল (শৌল) “রাজগণের” কাছে তাঁর নাম বহন করবে। (প্রেরিত ৯:১৫) সা.কা. ৫৬ সালের মধ্যেও তা ঘটেনি। কিন্তু, প্রেরিত যখন তার তৃতীয় মিশনারি যাত্রা প্রায় শেষ করেন, তখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে শুরু করে।

উদ্ধত জনতার দ্বারা বেষ্টিত কিন্তু অদম্য

পৌল যিরূশালেমের দিকে যাত্রার মধ্যে আছেন আর তখন “আত্মার দ্বারা” কয়েক জন খ্রিস্টান তাকে সতর্ক করে যে, সেই শহরে তার জন্য প্রচণ্ড তাড়না অপেক্ষা করছে। সাহসের সঙ্গে পৌল বলেন: “আমি প্রভু যীশুর নামের নিমিত্ত যিরূশালেমে কেবল বদ্ধ হইতে, তাহা নয়, বরং মরিতেও প্রস্তুত আছি।” (প্রেরিত ২১:৪-১৪) পৌল যিরূশালেমের মন্দির পরিদর্শন করার সঙ্গে সঙ্গেই এশিয়া থেকে আগত সেই যিহুদিরা তাকে হত্যা করার জন্য জনতাকে উত্তেজিত করে, যারা সেখানে প্রেরিতের সুসমাচার প্রচার কাজের সফলতা সম্বন্ধে অবগত ছিল। শীঘ্রই রোমীয় সেনাবাহিনী তাকে সাহায্য করতে আসে। (প্রেরিত ২১:২৭-৩২) এই উদ্ধার কাজ পৌলকে বিদ্বেষপরায়ণ শ্রোতা ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কাছে সত্য ঘোষণা করার দুর্লভ সুযোগগুলো এনে দেয়।

সহজে পৌঁছানো যায় না এমন শ্রোতাদের কাছে প্রচার করা

জীবনের নিরাপত্তার জন্য পৌলকে তাড়াতাড়ি টেনে ধরে আ্যন্টোনিয়া দুর্গের সিঁড়ির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। * সেই সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে প্রেরিত ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন জনতার কাছে এক জোরালো সাক্ষ্য দেন। (প্রেরিত ২১:৩৩–২২:২১) কিন্তু যখনই তিনি বলেন যে, তাকে পরজাতীয়দের কাছে প্রচার করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে, তখন আবারও উদ্ধত আচরণ শুরু হয়। সহস্রপতি লুষিয় আদেশ দেন যে, কী কারণে যিহুদিরা তাকে দোষারোপ করছে তা জানার জন্য পৌলকে কোড়া বা চাবুক মেরে পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু, পৌল যখন জানান যে তিনি একজন রোমীয় নাগরিক, তখন চাবুক মারার বিষয়টা থামানো হয়। কী কারণে যিহুদিরা তাকে দোষারোপ করছে, তা জানার জন্য লুষিয় পরদিন পৌলকে মহাসভার সামনে নিয়ে যান।—প্রেরিত ২২:২২-৩০.

এই উচ্চ আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে পৌল সহযিহুদিদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার আরেকটা চমৎকার সুযোগ পান। সাহসী সুসমাচার প্রচারক পুনরুত্থানে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ঘোষণা করেন। (প্রেরিত ২৩:১-৮) তাকে হত্যা করার ঘৃণ্য মনোভাব যিহুদিদের মধ্যে আগের মতোই তীব্র থাকে আর তাই পৌলকে সৈন্যদের দুর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন রাতে, তিনি প্রভুর কাছ থেকে এই আন্তরিক আশ্বাস লাভ করেন: “সাহস কর, কেননা আমার বিষয়ে যেমন যিরূশালেমে সাক্ষ্য [“পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য,” NW] দিয়াছ, তদ্রূপ রোমেও দিতে হইবে।”—প্রেরিত ২৩:৯-১১.

প্রেরিতকে তাড়াহুড়ো করে গোপনে যিহূদিয়ার রোমীয় প্রশাসনিক রাজধানী কৈসরিয়ায় নিয়ে গেলে, পৌলকে হত্যা করার একটা ষড়যন্ত্র পণ্ড হয়ে যায়। (প্রেরিত ২৩:১২-২৪) কৈসরিয়ায় পৌলের আরও মূল্যবান সুযোগ আসে আর তিনি “রাজগণের” কাছে সাক্ষ্য দেন। তবে, প্রেরিত প্রথমে দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সকে এটা দেখান যে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে সমর্থন করার কোনো প্রমাণই নেই। পরে পৌল তার কাছে ও তার স্ত্রী দ্রুষিল্লার কাছে যিশু, ইন্দ্রিয়দমন, ন্যায়পরায়ণতা, ও আগামী বা আসন্ন বিচার সম্বন্ধে প্রচার করেন। কিন্তু, তারপরও পৌলকে দুবছর কারাগারে রাখা হয় কারণ ফীলিক্স ঘুস পাওয়ার আশা করেন, যা কখনোই তাকে দেওয়া হয়নি।—প্রেরিত ২৩:৩৩–২৪:২৭.

যখন ফীলিক্সের পদে ফীষ্ট আসেন, তখন যিহুদিরা আবারও পৌলের বিচার করার ও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার চেষ্টা করে। কৈসরিয়ায় আবার এই মামলার শুনানি হয় আর বিচারটা যেন যিরূশালেমে স্থানান্তর করা না হয় সেইজন্য পৌল বলেন: “আমি কৈসরের বিচারাসনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছি, . . . আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি।” (প্রেরিত ২৫:১-১১, ২০, ২১) কিছুদিন পর, পৌল তার মামলা হেরোদ আগ্রিপ্প ২য়-র কাছে পেশ করার পর সেই রাজা তাকে বলেন: “তুমি অল্পেই আমাকে খ্রীষ্টীয়ান করিতে চেষ্টা পাইতেছ।” (প্রেরিত ২৬:১-২৮) সা.কা. প্রায় ৫৮ সালে পৌলকে রোমে পাঠানো হয়। সেখানে একজন বন্দি হিসেবে থাকায় এই ফলবান প্রেরিত আরও দুবছর ধরে খ্রিস্ট সম্বন্ধে প্রচার করার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে চলেন। (প্রেরিত ২৮:১৬-৩১) সম্ভবত, শেষ পর্যন্ত পৌল সম্রাট নিরোর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল আর অবশেষে তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে আবার তার মিশনারি কাজ শুরু করতে সমর্থ হয়েছিলেন। অন্য কোনো প্রেরিত এই ধরনের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সুসমাচার জানানোর সুযোগ পেয়েছেন বলে কোনো নথি পাওয়া যায় না।

ওপরে যেমন দেখানো হয়েছে, প্রেরিত পৌল এই তাৎপর্যপূর্ণ নীতির সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেছিলেন, যা তার সহখ্রিস্টানরা যিহুদি আদালতের সামনে বলেছিল: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” (প্রেরিত ৫:২৯) তিনি আমাদের জন্য কত চমৎকার এক উদাহরণই না স্থাপন করেছেন! তাকে থামানোর জন্য মানুষের অবিরত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এই প্রেরিত এক পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার আদেশের প্রতি পূর্ণরূপে বাধ্য ছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি এই ধরনের অটল বাধ্যতার ফলস্বরূপ পৌল “জাতিগণের ও রাজগণের এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিকটে” যিশুর নাম বহনার্থে “মনোনীত পাত্র” হিসেবে তার কার্যভার পরিপূর্ণ করেছিলেন।—প্রেরিত ৯:১৫.

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৬ সালের ক্যালেন্ডার (ইংরেজি), নভেম্বর/ডিসেম্বর দেখুন।

[৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

পৌল কি শুধুমাত্র আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন?

এই প্রশ্ন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে গ্রন্থকার বেন উইদারিংটন ৩য় লেখেন: “পৌলের . . . দৃষ্টিকোণ থেকে, আত্মপক্ষ সমর্থন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না বরং যিহুদি ও পরজাতীয় উভয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুসমাচার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়াই পৌলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। . . . বস্তুতপক্ষে, এখানে সুসমাচারই বিচারের মুখোমুখি হয়।”