আমাদের প্রতিবেশীকে ভালবাসা বলতে যা বোঝায়
আমাদের প্রতিবেশীকে ভালবাসা বলতে যা বোঝায়
“তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।”—মথি ২২:৩৯.
১. কীভাবে আমরা দেখাই যে, আমরা ঈশ্বরকে প্রেম করি?
যারা যিহোবাকে উপাসনা করে, তাদের কাছ থেকে তিনি কী চান? কয়েকটা সাধারণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ শব্দে যিশু সংক্ষেপে এর উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, মহৎ আজ্ঞা হল আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ, মন ও শক্তি দিয়ে যিহোবাকে প্রেম করা। (মথি ২২:৩৭; মার্ক ১২:৩০) আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখেছি যে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের অন্তর্ভুক্ত হল, তিনি আমাদের জন্য যে-প্রেম দেখিয়েছেন, সেটার প্রতিদানে তাঁর বাধ্য থাকা এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করা। যারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, তাদের জন্য তাঁর ইচ্ছা পালন করা দুর্বহ নয়; এটা তাদেরকে প্রীত করে বা তাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে।—গীতসংহিতা ৪০:৮; ১ যোহন ৫:২, ৩.
২, ৩. কেন প্রতিবেশীকে প্রেম করার আজ্ঞার প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?
২ যিশু বলেছিলেন যে, দ্বিতীয় মহৎ আজ্ঞাটা প্রথমটার সঙ্গে যুক্ত: “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৯) এই আজ্ঞাটার ওপরই আমরা এখন মনোযোগ দেব আর তা উত্তম কারণেই। আমরা যে-সময়ে বাস করছি, তা এক স্বার্থপর ও প্রেমের বিকৃত ধরন দ্বারা চিহ্নিত। ‘শেষ কালের’ অনুপ্রাণিত বর্ণনায় প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, লোকেরা পরস্পরকে প্রেম করবে না কিন্তু তারা নিজেদের, টাকাপয়সাকে এবং বিলাসিতাকে ভালবাসবে। অনেকে “স্নেহরহিত” হবে অথবা একটা বাইবেল অনুবাদ এভাবে বলে যে, “পরিবারের প্রতি তাদের স্বাভাবিক স্নেহের অভাব” থাকবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৪) যিশু খ্রিস্ট ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “অনেকে . . . এক জন অন্যকে সমর্পণ করিবে, এক জন অন্যকে দ্বেষ করিবে। . . . অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হইয়া যাইবে।”—মথি ২৪:১০, ১২.
৩ কিন্তু লক্ষ করুন, যিশু বলেননি যে, সকলের প্রেম শীতল হয়ে যাবে। সবসময় এমন ব্যক্তিরা রয়েছে ও থাকবে, যারা সেই ধরনের প্রেম দেখায়, যা যিহোবা চান ও যা তিনি পাওয়ার যোগ্য। যারা প্রকৃতই যিহোবাকে প্রেম করে, তারা অন্যদেরকে তাঁর মতো করে দেখার প্রচেষ্টা করবে। কিন্তু, আমাদের প্রতিবেশী কে, যাকে আমাদের ভালবাসতে হবে? কীভাবে আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম দেখানো উচিত? শাস্ত্র আমাদের এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সাহায্য করতে পারে।
আমার প্রতিবেশী কে?
৪. লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায় অনুসারে, কাদের প্রতি যিহুদিদের প্রেম দেখাতে হয়েছিল?
৪ দ্বিতীয় মহৎ আজ্ঞা হচ্ছে একজন ব্যক্তির প্রতিবেশীকে নিজের মতো প্রেম করতে হবে, এই বিষয়ে সেই ফরীশীকে বলার সময় যিশু ইস্রায়েলকে দেওয়া এক নির্দিষ্ট আইন সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। এটা লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেই একই অধ্যায়ে যিহুদিদের বলা হয়েছিল যে, সহইস্রায়েলীয় ছাড়াও অন্যদেরকে তাদের প্রতিবেশী হিসেবে দেখা উচিত। ৩৪ পদ বলে: “তোমাদের নিকটে তোমাদের স্বদেশীয় লোক যেমন, তোমাদের সহপ্রবাসী বিদেশী লোকও তেমনি হইবে; তুমি তাহাকে আপনার মত প্রেম করিও; কেননা মিসর দেশে তোমরাও বিদেশী ছিলে।” তাই, এমনকি ন-যিহুদি, বিশেষভাবে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করতে হতো।
৫. প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমকে যিহুদিরা কীভাবে বুঝেছিল?
৫ কিন্তু, যিশুর দিনের যিহুদি নেতারা বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখেছিল। কেউ কেউ শিক্ষা দিয়েছিল যে, “বন্ধু” ও “প্রতিবেশী” শব্দগুলো কেবল যিহুদিদের বেলায় প্রযোজ্য। ন-যিহুদিদের ঘৃণা করতে হতো। এই শিক্ষকরা যুক্তি দেখিয়েছিল যে, ধার্মিকদের অবশ্যই অধার্মিক ব্যক্তিদের ঘৃণা করতে হবে। “এইরকম এক পরিস্থিতিতে,” একটি তথ্যগ্রন্থ বলে, “ঘৃণার কোনো কমতি ছিল না। এটাকে উসকে দেওয়ার জন্য প্রচুর বিষয়বস্তু ছিল।”
৬. প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম সম্বন্ধে বলার সময় যিশু কোন দুটো বিষয় তুলে ধরেছিলেন?
৬ পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু কাদের সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করা উচিত, সেটার ওপর আলোকপাত করার দ্বারা এই বিষয়টা সম্বন্ধে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, ‘তোমার প্রতিবাসীকে প্রেম করিবে,’ এবং ‘তোমার শত্রুকে দ্বেষ করিবে’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও; যেন তোমরা আপনাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও, কারণ তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৩-৪৫) এখানে যিশু দুটো বিষয় তুলে ধরেছিলেন। প্রথমত, যিহোবা ভাল ও মন্দ উভয় লোকের প্রতি উদার ও সদয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত।
৭. প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের নীতিগল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৭ আরেকবার একজন ব্যবস্থাবেত্তা যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমার প্রতিবাসী কে?” যিশু একটা নীতিগল্প বলার মাধ্যমে উত্তর দিয়েছিলেন, যে-নীতিগল্পে এমন একজন শমরীয় সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছিল, যিনি সেই যিহুদি ব্যক্তির কাছে এগিয়ে গিয়েছিলেন, যাকে দস্যুদল আঘাত করেছিল এবং তার বস্ত্র খুলে নিয়ে গিয়েছিল। যদিও যিহুদিরা সাধারণত শমরীয়দের ঘৃণা করত কিন্তু সেই শমরীয় ওই ব্যক্তির ক্ষত পরিষ্কার করে তা বেঁধে দিয়েছিলেন এবং তাকে এক পান্থশালার নিরাপত্তায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি সেরে উঠতে পারতেন। শিক্ষাটা কী? প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের প্রেম নিজেদের বর্ণ, জাতীয়তা ও ধর্মের লোক ছাড়িয়ে অন্যদের প্রতি প্রসারিত হওয়া উচিত।—লূক ১০:২৫, ২৯, ৩০, ৩৩-৩৭.
আমাদের প্রতিবেশীকে ভালবাসা বলতে যা বোঝায়
৮. কীভাবে প্রেম দেখাতে হতো, সেই সম্বন্ধে লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায় কী বলে?
৮ ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের মতো প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমও নিছক এক অনুভূতি নয়; এর সঙ্গে কাজ জড়িত। লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আজ্ঞার প্রসঙ্গটা আরেকটু বিবেচনা করা উপকারজনক, যেখানে ঈশ্বরের লোকেদের তাদের প্রতিবেশীকে নিজের মতো প্রেম করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা পড়ি যে, ইস্রায়েলীয়দেরকে দুঃখী ও বিদেশিদের সঙ্গে শস্য ভাগ করে নেওয়ার আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। চুরি, বঞ্চনা অথবা মিথ্যার কোনো স্থান ছিল না। বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে ইস্রায়েলীদের কোনো পক্ষপাতিত্ব দেখানো উচিত ছিল না। যদিও প্রয়োজনে তাদের অনুযোগ করতে হতো কিন্তু তাদেরকে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছিল: “তুমি হৃদয়মধ্যে আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করিও না।” এগুলো এবং অন্যান্য অনেক আজ্ঞা এই শব্দগুলোর মাধ্যমে সংক্ষেপে বলেছিল: “আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।”—লেবীয় পুস্তক ১৯:৯-১১, ১৫, ১৭, ১৮.
৯. কেন যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের অন্যান্য জাতি থেকে পৃথক থাকতে আজ্ঞা দিয়েছিলেন?
৯ যদিও ইস্রায়েলীয়দের অন্যদের প্রতি ভালবাসা দেখাতে হয়েছিল কিন্তু তাদের সেই ব্যক্তিদের থেকে পৃথক থাকতে হয়েছিল, যারা মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করত। যিহোবা কুসংসর্গের বিপদ ও পরিণতি সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যে-জাতিগুলোকে ইস্রায়েলীয়দের অধিকারচ্যুত করতে হয়েছিল, তাদের সম্বন্ধে যিহোবা আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “তাহাদের সহিত বিবাহ-সম্বন্ধ করিবে না; তুমি তাহার পুত্ত্রকে আপনার কন্যা দিবে না, ও আপন পুত্ত্রের জন্য তাহার কন্যা গ্রহণ করিবে না। কেননা সে তোমার সন্তানকে আমার অনুগমন হইতে ফিরাইবে, আর তাহারা অন্য দেবগণের সেবা করিবে; তাই তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩, ৪.
১০. কীসের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে?
১০ একইভাবে, খ্রিস্টানরা সেই লোকেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকে, যারা হয়তো তাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) আমাদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে: “তোমরা অবিশ্বাসীদের” অর্থাৎ যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কোনো অংশ নয়, তাদের “সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না।” (২ করিন্থীয় ৬:১৪) অধিকন্তু, খ্রিস্টানদের “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) তা সত্ত্বেও, আমাদের কখনোই সেই লোকেদের ঘৃণা করা উচিত নয়, যারা আমাদের মতো করে যিহোবাকে বিশ্বাস করে না। খ্রিস্ট পাপীদের জন্য মারা গিয়েছিলেন এবং যারা একসময় কদাচরণ করত, তারা অনেকে তাদের পথ পরিবর্তন করেছে ও ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হয়েছে।—রোমীয় ৫:৮; ১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.
১১. যারা যিহোবাকে সেবা করে না, সেই ব্যক্তিদের প্রতি প্রেম দেখানোর সবচেয়ে উত্তম উপায় কোনটা এবং কেন?
১১ যারা ঈশ্বরকে সেবা করে না, তাদের প্রতি প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে স্বয়ং যিহোবাকে অনুকরণ করার চেয়ে উত্তম উপায় আর নেই। যদিও তিনি দুষ্টতাপ্রিয় নন কিন্তু তিনি তাদেরকে তাদের মন্দ পথ থেকে ফিরে আসার এবং অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ দিয়ে তাদের সকলের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান। (যিহিষ্কেল ১৮:২৩) যিহোবার “বাসনা” হল “সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়।” (২ পিতর ৩:৯) তাঁর ইচ্ছা এই যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) এই কারণে যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার এবং ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) এই কাজে আমাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বর ও প্রতিবেশী, হ্যাঁ সেইসঙ্গে আমাদের শত্রুদের প্রতিও প্রেম দেখাই!
আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের প্রতি প্রেম
১২. আমাদের ভাইবোনদের প্রেম করা সম্বন্ধে প্রেরিত যোহন কী লিখেছিলেন?
১২ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আইস, আমরা . . . সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০) খ্রিস্টান হিসেবে আমরা সেই লোকেদের প্রতি প্রেম দেখাতে বাধ্য, যারা আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত—আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনেরা। এই প্রেম কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এই জোরালো বিষয়টা তুলে ধরে প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যে কেহ আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে নরঘাতক . . . যদি কেহ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী; কেননা যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না।” (১ যোহন ৩:১৫; ৪:২০) এগুলো বেশ জোরালো কথা। যিশু খ্রিস্ট “নরঘাতক” ও “মিথ্যাবাদী” শব্দগুলো শয়তান দিয়াবলের প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন। (যোহন ৮:৪৪) আমরা কখনো চাইব না যে, আমাদের প্রতি এই কথাগুলো প্রয়োগ করা হোক!
১৩. কোন কোন উপায়ে আমরা সহবিশ্বাসীদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি?
১৩ সত্য খ্রিস্টানরা ‘আপনারা পরস্পর প্রেম করিবার জন্য ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইয়াছে।’ (১ থিষলনীকীয় ৪:৯) আমাদের “বাক্যে কিম্বা জিহ্বাতে নয়, কিন্তু কার্য্যে ও সত্যে” প্রেম করতে হবে। (১ যোহন ৩:১৮) আমাদের প্রেম “নিষ্কপট” হওয়া উচিত। (রোমীয় ১২:৯) প্রেম আমাদের মধুর বা সদয়, করুণচিত্ত, ক্ষমাশীল, দীর্ঘসহিষ্ণু হতে এবং ঈর্ষাপরায়ণ, দাম্ভিক, উদ্ধত অথবা স্বার্থপর না হতে পরিচালিত করে। (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫; ইফিষীয় ৪:৩২) এটা আমাদেরকে “এক জন অন্যের দাস” হতে উদ্বুদ্ধ করে। (গালাতীয় ৫:১৩) যিশু তাঁর শিষ্যদের পরস্পরকে ঠিক সেইরকম প্রেম করতে বলেছিলেন, যেমনটা তিনি তাদেরকে করেছিলেন। (যোহন ১৩:৩৪) তাই, একজন খ্রিস্টানের প্রয়োজনে তার সহবিশ্বাসীর জন্য এমনকি তার জীবন দিতেও ইচ্ছুক থাকা উচিত।
১৪. কীভাবে আমরা পরিবারের মধ্যে প্রেম প্রকাশ করতে পারি?
১৪ বিশেষভাবে খ্রিস্টান পরিবারের মধ্যে আর নির্দিষ্টভাবে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রেম প্রকাশ পাওয়া উচিত। বিবাহবন্ধন এতটাই অন্তরঙ্গ যে, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে।” (ইফিষীয় ৫:২৮) আমরা দেখতে পাই যে, আরও পাঁচটা পদ পরে পৌল এই উপদেশ পুনরাবৃত্তি করেছেন। যে-স্বামী তার স্ত্রীকে প্রেম করেন, তিনি মালাখির দিনের ইস্রায়েলীয়দের অনুকরণ করবেন না, যারা তাদের সাথিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। (মালাখি ২:১৪) তিনি তাকে লালনপালন করবেন। তিনি স্ত্রীকে ঠিক সেভাবে প্রেম করবেন, যেমনটা খ্রিস্ট মণ্ডলীকে করেছিলেন। একইভাবে প্রেম একজন স্ত্রীকে তার স্বামীকে সম্মান করতে পরিচালিত করবে।—ইফিষীয় ৫:২৫, ২৯-৩৩, NW.
১৫. ভ্রাতৃপ্রেমকে কার্যরত দেখে কিছু ব্যক্তি কী বলতে ও করতে পরিচালিত হয়েছিল?
১৫ স্পষ্টতই, এই ধরনের প্রেম সত্য খ্রিস্টানদের শনাক্তিকরণ চিহ্ন। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) পরস্পরের প্রতি আমাদের প্রেম লোকেদেরকে সেই ঈশ্বরের নিকটবর্তী করে, যাঁকে আমরা ভালবাসি ও প্রতিনিধিত্ব করি। উদাহরণস্বরূপ, মোজাম্বিক থেকে এক সাক্ষি পরিবার সম্বন্ধে এই রিপোর্ট এসেছে। “আমরা কখনো এইরকম দেখিনি। বিকেলবেলা প্রচণ্ড বাতাস বইতে শুরু করে আর এরপর ভারী বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়। দমকা হাওয়া আমাদের নলখাগড়ার ছাউনি দেওয়া বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছিল ও টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কাছের মণ্ডলী থেকে যখন আমাদের ভাইবোনেরা এসেছিল এবং আমাদের বাড়ি পুনর্নিমাণ করতে সাহায্য করেছিল, তখন আমাদের বিস্মিত প্রতিবেশীরা বলেছিল: ‘তোমাদের ধর্ম অনেক ভাল। আমাদের গির্জা থেকে আমরা কখনো এইরকম সাহায্য পাইনি।’ আমরা তাদেরকে আমাদের বাইবেল খুলে যোহন ১৩:৩৪, ৩৫ পদ দেখিয়েছিলাম। আমাদের অনেক প্রতিবেশী এখন বাইবেল অধ্যয়ন করছে।”
ব্যক্তি বিশেষের প্রতি প্রেম
১৬. একটা দলকে এবং ব্যক্তি বিশেষকে প্রেম করার মধ্যে পার্থক্য কী?
১৬ আমাদের প্রতিবেশীদের সমষ্টিগতভাবে অর্থাৎ একটা দল হিসেবে প্রেম করা কঠিন নয়। কিন্তু, ব্যক্তি বিশেষের প্রতি প্রেম দেখানো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু লোকের জন্য প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম দেখানো কিছু দাতব্য সংগঠনে দান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বস্তুতপক্ষে, আমাদের তেমন পছন্দ করেন না এমন একজন সহকর্মীকে, আমাদের পাশের বাড়িতে বসবাসরত এক বিরক্তিকর ব্যক্তিকে অথবা আমাদের হতাশ করেছেন এমন কোনো বন্ধুকে ভালবাসার চেয়ে বরং এই কথা মুখে বলা অনেক সহজ যে, আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে ভালবাসি।
১৭, ১৮. কীভাবে যিশু ব্যক্তি বিশেষের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন এবং কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি তা করেছিলেন?
১৭ ব্যক্তি বিশেষের প্রতি প্রেম দেখানোর ব্যাপারে আমরা যিশুর কাছ থেকে শিখতে পারি, যিনি নিখুঁতভাবে ঈশ্বরের গুণাবলি প্রতিফলিত করেছিলেন। যদিও তিনি জগতের পাপ দূর করার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন কিন্তু তিনি ব্যক্তি বিশেষের—একজন অসুস্থ মহিলা, একজন কুষ্ঠী, একটা ছোট মেয়ের—প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন। (মথি ৯:২০-২২; মার্ক ১: ৪০-৪২; ৭:২৬, ২৯, ৩০; যোহন ১:২৯) একইভাবে, প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে দেখা হয় এমন ব্যক্তি বিশেষের প্রতি আমরা যেভাবে আচরণ করি, তার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম দেখাই।
১৮ কিন্তু, আমাদের কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের সঙ্গে যুক্ত। যদিও যিশু দরিদ্রদের সাহায্য করেছিলেন, অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন, ক্ষুধার্তদের খাইয়েছিলেন কিন্তু এই সমস্তকিছু করার ও সেইসঙ্গে জনতাকে শিক্ষা দেওয়ার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল লোকেদেরকে যিহোবার সঙ্গে সম্মিলিত হতে সাহায্য করা। (২ করিন্থীয় ৫:১৯) যিশু সমস্তকিছু ঈশ্বরের গৌরবের জন্য করেছিলেন, তিনি কখনো ভুলে যাননি যে তিনি সেই ঈশ্বরকে তুলে ধরেছিলেন এবং প্রতিফলিত করেছিলেন, যাঁকে তিনি প্রেম করেন। (১ করিন্থীয় ১০:৩১) যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করার মাধ্যমে আমরাও প্রতিবেশীর প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখাতে পারি এবং একইসময়ে দুষ্ট মানবজাতির অংশ না হয়েও থাকতে পারি।
কীভাবে আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে নিজেদের মতো প্রেম করি?
১৯, ২০. আমাদের প্রতিবেশীকে নিজেদের মতো প্রেম করার অর্থ কী?
১৯ যিশু বলেছিলেন: “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” নিজেদের যত্ন নেওয়া এবং ভারসাম্যপূর্ণ মাত্রায় আত্মসম্মান বোধ থাকা উপযুক্ত। যদি তা না হতো, তা হলে সেই আদেশের সামান্যই অর্থ থাকত। নিজের প্রতি এই সঠিক প্রেমকে ২ তীমথিয় ৩:২ পদে প্রেরিত পৌলের দ্বারা উল্লেখিত নিজের প্রতি স্বার্থপর প্রেমের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়। বরং এটা হল যুক্তিযুক্ত মাত্রায় নিজেকে যোগ্য মনে করার অনুভূতি। একজন বাইবেল পণ্ডিত এটাকে “এক ভারসাম্যপূর্ণ আত্মপ্রেম হিসেবে” বর্ণনা করেছেন, “যা ‘আমি শ্রেষ্ঠ’ অথবা ‘আমি নগণ্য’ এই দুটোর একটাও মনে করা নয়।”
২০ অন্যদেরকে নিজেদের মতো প্রেম করার অর্থ হল, আমরা অন্যদেরকে এমনভাবে দেখি এবং তাদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করি, যেমনটা অন্যেরা আমাদের দেখুক ও আমাদের সঙ্গে আচরণ করুক বলে আমরা চাই। যিশু বলেছিলেন: “অতএব সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” (মথি ৭:১২) লক্ষ করুন যে, অন্যেরা অতীতে আমাদের প্রতি যা করেছে, তা পুষে রাখার এবং এরপর তাদের সঙ্গেও ঠিক সেইরকম করার বিষয়ে যিশু বলেননি। এর পরিবর্তে, আমাদের চিন্তা করতে হবে যে, আমাদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করা হোক বলে আমরা চাই এবং তারপর সেইরকম আচরণ করতে হবে। এ ছাড়া লক্ষ করুন যে, যিশু তাঁর কথাগুলো বন্ধুবান্ধব ও ভাইদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি ‘লোক’ শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, সম্ভবত এটা ইঙ্গিত করার জন্য যে, সমস্ত লোকের সঙ্গে অর্থাৎ যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমাদের এভাবে আচরণ করা উচিত।
২১. অন্যদের প্রতি প্রেম দেখানোর মাধ্যমে আমরা কী দেখাই?
২১ আমাদের প্রতিবেশীকে প্রেম করা আমাদেরকে যা মন্দ তা করা থেকে সুরক্ষা করবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “‘ব্যভিচার করিও না, নরহত্যা করিও না, চুরি করিও না, লোভ করিও না,’ এবং আর যে কোন আজ্ঞা থাকুক, সে সকল এই বচনে সঙ্কলিত হইয়াছে, ‘প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও। প্রেম প্রতিবাসীর অনিষ্ট সাধন করে না।’” (রোমীয় ১৩:৯, ১০) প্রেম আমাদেরকে অন্যদের প্রতি যা ভাল, তা করার উপায় খুঁজতে পরিচালিত করবে। সহমানবদের প্রেম করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, যিনি মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন সেই যিহোবা ঈশ্বরকেও আমরা প্রেম করি।—আদিপুস্তক ১:২৬.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কাদেরকে আমাদের প্রেম করা উচিত এবং কেন?
• কীভাবে আমরা তাদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি, যারা যিহোবাকে সেবা করে না?
• কীভাবে বাইবেল সেই প্রেম সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যে-প্রেম আমাদের ভাইবোনদের প্রতি থাকা উচিত?
• আমাদের প্রতিবেশীকে নিজেদের মতো প্রেম করার অর্থ কী?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
“আমার প্রতিবাসী কে?”
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশুর প্রেম ব্যক্তি বিশেষের প্রতি প্রসারিত হয়