সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 কান্না নগরে বিবাহভোজে যিশু তাঁর মাকে যেভাবে সম্বোধন করেছিলেন, সেটার দ্বারা কি তিনি অসম্মানজনক অথবা নির্দয় আচরণ দেখিয়েছিলেন?—যোহন ২:৪.

তাঁর বাপ্তিস্মের কিছু সময় পরেই, যিশু ও তাঁর শিষ্যদের কান্না নগরে একটা বিবাহভোজে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তাঁর মা-ও সেখানে ছিলেন। সেখানে যখন দ্রাক্ষারস কম পড়েছিল, তখন মরিয়ম যিশুকে বলেছিলেন: “উহাদের দ্রাক্ষারস নাই।” উত্তরে যিশু তাঁর মাকে বলেছিলেন: “হে নারি, আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কি? আমার সময় এখনও উপস্থিত হয় নাই।”—যোহন ২:১-৪.

আজকে, কারো কারো জন্য তার মাকে “নারি” হিসেবে সম্বোধন করা এবং তাকে “আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কি?” বলা হয়তো অসম্মানজনক এমনকি অপমানজনক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু, যিশুর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসা হলে, তা সেই ঘটনার সাংস্কৃতিক ও ভাষা সংক্রান্ত প্রসঙ্গকে উপেক্ষা করা হবে। বাইবেলের সময়ে এই অভিব্যক্তিগুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে বোঝা সাহায্যকারী হবে।

“নারি” শব্দটি সম্বন্ধে ভাইনস এক্সপজিটরি ডিকশনারি অভ্‌ ওল্ড আ্যন্ড নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডস বলে: “একজন মহিলাকে সম্বোধন করার জন্য ব্যবহৃত এই শব্দটি ভর্ৎসনা অথবা কঠোর ব্যবহারের কোনো শব্দ নয় বরং প্রিয় ও সম্মানপূর্ণ শব্দ।” অন্যান্য উৎসও এর সঙ্গে একমত। উদাহরণস্বরূপ, দি আ্যংকর বাইবেল বলে: “এটা কোনো তীব্র তিরস্কার অথবা অভদ্র শব্দ বা অনুরাগের অভাবেরও ইঙ্গিত নয় . . . মহিলাদের সম্বোধন করার জন্য এটা ছিল যিশুর স্বাভাবিক, ভদ্র উপায়।” দ্যা নিউ ইন্টারন্যাশনাল ডিকশনারি অভ্‌ নিউ টেস্টামেন্ট থিওলজি ব্যাখ্যা করে যে, শব্দটি “অন্য কোনো অসম্মানজনক অর্থ ছাড়াই ব্যবহৃত হয়েছে।” আর গ্যারহার্ট কিটলের নতুন নিয়মের ঈশ্বরতাত্ত্বিক অভিধান (ইংরেজি) বলে যে, এই ধরনের ব্যবহার “কোনোভাবেই অসম্মানজনক অথবা অবমাননাকর নয়।” তাই, আমাদের এই উপসংহারে আসা উচিত নয় যে, যিশু তাঁর মাকে “নারি” বলে সম্বোধন করার দ্বারা মায়ের প্রতি রূঢ় অথবা নির্দয় হয়েছিলেন।—মথি ১৫:২৮; লূক ১৩:১২; যোহন ৪:২১; ১৯:২৬; ২০:১৩, ১৫.

“আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কি?” এই অভিব্যক্তি সম্বন্ধে কী বলা যায়? স্পষ্টতই এটা হল এক সাধারণ যিহুদি প্রকাশভঙ্গি, যা বাইবেলে বেশ কয়েক বার এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২ শমূয়েল ১৬:১০ পদে আমরা দেখি যে, দায়ূদ অবীশয়কে এই কথা বলার দ্বারা শিমিয়িকে হত্যা করা থেকে বিরত করছিলেন: “হে সরূয়ার পুত্ত্রগণ, তোমাদের সহিত আমার বিষয় কি? ও যখন শাপ দেয়, এবং সদাপ্রভু যখন উহাকে বলিয়া দেন, দায়ূদকে শাপ দেও, তখন কে বলিবে, এমন কর্ম্ম কেন করিতেছ?” একইভাবে, আমরা ১ রাজাবলি ১৭:১৮ পদে পড়ি যে, সারিফতের বিধবা যখন দেখেছিলেন যে, তার ছেলে মারা গিয়েছে, তখন তিনি এলিয়কে বলেছিলেন: “হে ঈশ্বরের লোক, আপনার সহিত আমার বিষয় কি? আপনি আমার অপরাধ স্মরণ করাইতে ও আমার পুত্ত্রকে মারিয়া ফেলিতে আমার এখানে আসিয়াছেন।”

বাইবেলের এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা দেখতে পারি যে, “আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কি?” অভিব্যক্তিটা প্রায়ই ব্যবহার করা হতো আর তা অবজ্ঞা অথবা উদ্ধত মনোভাব দেখানোর জন্য নয় কিন্তু কোনো প্রস্তাবে অথবা প্রস্তাবিত কাজে জড়িত হতে রাজি না হওয়ার অথবা কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা ধারণার ক্ষেত্রে মতভেদ প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হতো। তা হলে, মরিয়মের প্রতি বলা যিশুর কথাগুলো সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?

মরিয়ম যখন যিশুকে বলেছিলেন যে, “উহাদের দ্রাক্ষারস নাই,” তখন স্পষ্টতই তিনি কেবল যিশুকে সেই ঘটনা সম্বন্ধে জানাচ্ছিলেন না বরং তাঁকে বলছিলেন, যাতে তিনি এই ব্যাপারে কিছু করেন। মরিয়মের সূক্ষ্ম প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য যিশু সেই সাধারণ প্রকাশভঙ্গি ব্যবহার করেছিলেন এবং “আমার সময় এখনও উপস্থিত হয় নাই,” তাঁর বলা এই অতিরিক্ত কথাগুলো আমাদেরকে তাঁর এই কাজ করার যুক্তি বুঝতে সাহায্য করে।

সা.কা. ২৯ সালে তাঁর বাপ্তিস্মের ও অভিষিক্ত হওয়ার সময় থেকে যিশু খুব ভাল করেই জানতেন যে, প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে তাঁর জন্য যিহোবার ইচ্ছা হল সেই নীতিনিষ্ঠার পথ অনুসরণ করা, যা অবশেষে তাঁকে মৃত্যু, পুনরুত্থান ও মহিমার দিকে পরিচালিত করবে। “মনুষ্যপুত্ত্র পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন,” তিনি বলেছিলেন। (মথি ২০:২৮) যখন তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে আসছিল, তখন যিশু এই কথা বলার দ্বারা বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন: “সময় উপস্থিত।” (যোহন ১২:১, ২৩; ১৩:১) এভাবে, তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে প্রার্থনায় যিশু বলেছিলেন: “পিতঃ, সময় উপস্থিত হইল; তোমার পুত্ত্রকে মহিমান্বিত কর, যেন পুত্ত্র তোমাকে মহিমান্বিত করেন।” (যোহন ১৭:১) আর অবশেষে জনতা যখন গেৎশিমানী বাগানে তাঁকে ধরতে এসেছিল, তখন যিশু প্রেরিতদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং বলেছিলেন: “সময় উপস্থিত, দেখ, মনুষ্যপুত্ত্র পাপীদের হস্তে সমর্পিত হন।”—মার্ক ১৪:৪১.

কিন্তু, কান্না নগরে বিবাহভোজের সময় যিশু সবেমাত্র মশীহ হিসেবে তাঁর পরিচর্যা শুরু করেছিলেন এবং তাঁর “সময়” তখনও উপস্থিত হয়নি। তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাঁর পিতার ইচ্ছা এমনভাবে এবং এমন সময়ে পালন করা, যেভাবে ও যে-সময়ে তাঁর পিতা নির্দেশনা দেন আর কেউই তাঁর নির্ধারিত কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। তাঁর মাকে তা বলার সময় যিশু দৃঢ় ছিলেন কিন্তু কোনোভাবেই অসম্মানজনক আচরণ করেননি বা নির্দয় হননি। অন্যদিকে, মরিয়মও পুত্রের কথায় অস্বস্তি বা অপমানও বোধ করেননি। বস্তুতপক্ষে, যিশুর কথার অর্থ বুঝতে পেরে মরিয়ম ভোজের পরিচারকদের বলেছিলেন: “ইনি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলেন, তাহাই কর।” তাঁর মাকে উপেক্ষা করার পরিবর্তে, যিশু মশীহ হিসেবে তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ করেন—জলকে দ্রাক্ষারসে পরিবর্তিত করেন—আর এভাবে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার ও তাঁর মায়ের চিন্তা উপলব্ধি করার মধ্যে এক উত্তম ভারসাম্য দেখান।—যোহন ২:৫-১১.

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় দয়ালু কিন্তু দৃঢ় ছিলেন