সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সেই ঈশ্বরকে ভালবাসুন, যিনি আপনাকে ভালবাসেন

সেই ঈশ্বরকে ভালবাসুন, যিনি আপনাকে ভালবাসেন

সেই ঈশ্বরকে ভালবাসুন, যিনি আপনাকে ভালবাসেন

“তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিবে।”—মথি ২২:৩৭.

১, ২. কোন বিষয়টা হয়তো মহৎ আজ্ঞা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে পরিচালিত করেছে?

 এই প্রশ্নটা নিয়ে যিশুর দিনের ফরীশীদের মধ্যে স্পষ্টতই প্রচণ্ড তর্কবিতর্ক হয়েছিল। ৬০০রও বেশি আইন নিয়ে গঠিত মোশির ব্যবস্থার মধ্যে কোনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল? বলিদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আইনটা? বস্তুতপক্ষে, পাপের ক্ষমা পাওয়া ও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা উভয়ের জন্যই বলি উৎসর্গ করা হতো। নাকি ত্বক্‌চ্ছেদের আইনটা সর্বপ্রধান আইন ছিল? সেটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেহেতু ত্বক্‌চ্ছেদ সেই নিয়ম বা চুক্তির একটা চিহ্ন ছিল, যা যিহোবা অব্রাহামের সঙ্গে করেছিলেন।—আদিপুস্তক ১৭:৯-১৩.

অন্যদিকে, রক্ষণশীল ব্যক্তিরা স্পষ্টতই যুক্তি দেখিয়েছিল যে, যেহেতু ঈশ্বরদত্ত প্রতিটা আইনই মহৎ ছিল—এমনকি যদিও কোনো কোনো আইন হয়তো কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে—তবুও যেকোনো আজ্ঞাকে অন্যগুলোর চেয়ে উচ্চীকৃত করা ভুল হবে। ফরীশীরা সেই বিতর্কিত প্রশ্নটাই যিশুকে জিজ্ঞেস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সম্ভবত তিনি তাদেরকে এমন কিছু বলবেন, যা তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাদের মধ্যে একজন যিশুর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ব্যবস্থার মধ্যে কোন আজ্ঞা মহৎ?”—মথি ২২:৩৪-৩৬.

৩. কোনটাকে যিশু মহৎ আজ্ঞা বলেছিলেন?

যিশু যে-উত্তর দিয়েছিলেন, আজকে আমাদের জন্য সেটার অসাধারণ গুরুত্ব রয়েছে। উত্তরে তিনি সংক্ষেপে যা বলেছিলেন, তা সবসময় সত্য উপাসনার অপরিহার্য বিষয় ছিল এবং থাকবে। দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫ পদ থেকে উদ্ধৃত করে যিশু বলেছিলেন: “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করিবে,’ এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা।” যদিও সেই ফরীশী মাত্র একটা আজ্ঞা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন কিন্তু যিশু তাকে আরও একটা আজ্ঞা জানিয়েছিলেন। লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদ থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন: “আর দ্বিতীয়টী ইহার তুল্য; ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’” এরপর যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, এই দুটো আইনই সমগ্র সত্য উপাসনার অপরিহার্য বিষয়। তাঁকে দিয়ে অন্যান্য আইনকে গুরুত্ব অনুযায়ী তালিকাবদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে রোধ করে তিনি উপসংহারে বলেছিলেন: “এই দুইটি আজ্ঞাতেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদিগ্রন্থও ঝুলিতেছে।” (মথি ২২:৩৭-৪০) এই প্রবন্ধে আমরা এই দুটো আজ্ঞার মধ্যে মহৎ আজ্ঞাটা বিবেচনা করব। কেন আমাদের ঈশ্বরকে প্রেম করতে হবে? কীভাবে আমরা দেখাই যে আমরা ঈশ্বরকে প্রেম করি? আর কীভাবে আমরা এই ধরনের প্রেম বৃদ্ধি করতে পারি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ ঈশ্বরকে খুশি করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ ও মন দিয়ে তাঁকে ভালবাসতে হবে।

প্রেমের গুরুত্ব

৪, ৫. (ক) যিশু যা বলেছিলেন, তাতে সেই ফরীশী কেন অবাক হননি? (খ) ঈশ্বরের কাছে হোম ও বলিদানের চেয়ে কী আরও বেশি মূল্যবান?

মনে হচ্ছে, যে-ফরীশী যিশুকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি যিশুর উত্তর শুনে মর্মাহত হননি অথবা অবাকও হননি। তিনি জানতেন যে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ছিল সত্য উপাসনার এক অপরিহার্য দিক, যদিও অনেকে তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল। সমাজগৃহে জোরে জোরে শেমা অথবা বিশ্বাস সম্বন্ধে ঘোষণাটা মুখস্থ বলা একটা রীতি ছিল আর এর মধ্যে দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৯ পদে বলা রচনাংশটাও ছিল, যেখান থেকে যিশু উদ্ধৃত করেছিলেন। মার্ক বইয়ে উল্লেখিত এই একই বিবরণ অনুসারে, সেই ফরীশী এরপর যিশুকে বলেছিলেন: “বেশ, গুরু, আপনি সত্য বলিয়াছেন যে, তিনি এক, এবং তিনি ব্যতীত অন্য নাই; আর সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়া তাঁহাকে প্রেম করা এবং প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করা সমস্ত হোম ও বলিদান হইতে শ্রেষ্ঠ।”—মার্ক ১২:৩২, ৩৩.

বস্তুতপক্ষে, ব্যবস্থা অনুযায়ী যদিও হোম ও বলিদান আবশ্যক ছিল কিন্তু ঈশ্বরের কাছে যে-বিষয়টা সত্যিই মূল্যবান, সেটা হল তাঁর দাসদের প্রেমময় হৃদয়ের অবস্থা। ভুল উদ্দেশ্য নিয়ে ঈশ্বরকে হাজার হাজার মেষ দেওয়ার পরিবর্তে প্রেম ও ভক্তি সহকারে একটা চড়ুই পাখি দান করা তাঁর কাছে আরও বেশি মূল্যবান ছিল। (মীখা ৬:৬-৮) সেই দরিদ্রা বিধবার ঘটনাটা মনে করে দেখুন, যাকে যিশু যিরূশালেম মন্দিরে লক্ষ করেছিলেন। ভাণ্ডারে তিনি যে-দুটো ক্ষুদ্র মুদ্রা দান করেছিলেন, সেগুলো দিয়ে এমনকি একটা চড়ুই পাখিও কেনা যেত না। কিন্তু, যিহোবার প্রতি আন্তরিক প্রেম সহকারে দেওয়া সেই দানই তাঁর কাছে, ধনী ব্যক্তিদের তাদের অতিরিক্ত ধন থেকে দেওয়া বিরাট দানের চেয়ে অনেক মূল্যবান ছিল। (মার্ক ১২:৪১-৪৪) এটা জানা কতই না উৎসাহজনক যে, আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা সকলে যা প্রকাশ করতে পারি—তাঁর প্রতি আমাদের প্রেমকে—যিহোবা অধিক মূল্যবান বলে গণ্য করেন!

৬. প্রেমের গুরুত্ব সম্বন্ধে পৌল কী লিখেছিলেন?

সত্য উপাসনায় প্রেমের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যদি আমি মনুষ্যদের, এবং দূতগণেরও ভাষা বলি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি শব্দকারক পিত্তল ও ঝম্‌ঝম্‌কারী করতাল হইয়া পড়িয়াছি। আর যদি ভাববাণী প্রাপ্ত হই, ও সমস্ত নিগূঢ়তত্ত্বে ও সমস্ত জ্ঞানে পারদর্শী হই, এবং যদি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে যাহাতে আমি পর্ব্বত স্থানান্তর করিতে পারি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি কিছুই নহি। আর যথাসর্ব্বস্ব যদি দরিদ্রদিগকে খাওয়াইয়া দিই, এবং পোড়াইবার জন্য আপন দেহ দান করি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমার কিছুই লাভ নাই।” (১ করিন্থীয় ১৩:১-৩) স্পষ্টতই, আমাদের উপাসনা যদি ঈশ্বরের কাছে সন্তোষজনক হতে হয়, তা হলে প্রেম অপরিহার্য। কিন্তু, কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম দেখাই?

যেভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম দেখাই

৭, ৮. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম দেখাতে পারি?

অনেকে মনে করে যে, প্রেম হল এমন এক আবেগ, যেটার ওপর আমাদের সামান্যই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে; যেমন লোকেরা প্রেমে পড়ার কথা বলে থাকে। কিন্তু, প্রকৃত প্রেম কেবল অনুভূত কোনো বিষয় নয়। এটি কেবল অনুভূতির দ্বারা নয় কিন্তু কাজের দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও সংজ্ঞায়িত। বাইবেল প্রেমকে “আরও উৎকৃষ্ট এক পথ” এবং “অনুধাবন” করার মতো এক বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে। (১ করিন্থীয় ১২:৩১; ১৪:১) খ্রিস্টানদের ভালবাসার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে আর তা কেবল “বাক্যে কিম্বা জিহ্বাতে নয়, কিন্তু কার্য্যে ও সত্যে।”—১ যোহন ৩:১৮.

ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে তাঁকে খুশি করে এমন বিষয় করতে এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌমত্বকে সমর্থন এবং উচ্চীকৃত করতে অনুপ্রাণিত করে। এটা আমাদেরকে জগৎ ও এর ভক্তিহীন পথগুলোকে ভালবাসা এড়িয়ে চলতে পরিচালিত করে। (১ যোহন ২:১৫, ১৬) যারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, তারা মন্দ বিষয়কে ঘৃণা করে। (গীতসংহিতা ৯৭:১০) ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের অন্তর্ভুক্ত প্রতিবেশীদের প্রতি প্রেম, যা আমরা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করব। অধিকন্তু, ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের জন্য আমাদের বাধ্য হওয়া প্রয়োজন। বাইবেল বলে: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।”—১ যোহন ৫:৩.

৯. কীভাবে যিশু ঈশ্বরের প্রতি তাঁর প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন?

ঈশ্বরকে প্রেম করার অর্থ কী, তা যিশু নিখুঁতভাবে প্রদর্শন করেছিলেন। প্রেম তাঁকে তাঁর স্বর্গীয় আবাস ত্যাগ করতে এবং একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে বাস করতে পরিচালিত করেছিল। এটা তাঁকে তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেটার মাধ্যমে তাঁর পিতাকে গৌরবান্বিত করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রেম তাঁকে ‘মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইতে’ পরিচালিত করেছিল। (ফিলিপীয় ২:৮) সেই আজ্ঞাবহতা বা বাধ্যতা—তাঁর প্রেমের এক অভিব্যক্তি—বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক মান বজায় রাখার পথ খুলে দিয়েছিল। পৌল লিখেছিলেন: “সেই এক মনুষ্যের [আদমের] অনাজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল, তেমনি সেই আর এক ব্যক্তির [খ্রিস্ট যিশুর] আজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে ধার্ম্মিক বলিয়া ধরা হইবে।”—রোমীয় ৫:১৯.

১০. কেন ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের সঙ্গে বাধ্যতা জড়িত?

১০ যিশুর মতো আমরাও ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে আমাদের প্রেম দেখাই। “প্রেম এই,” যিশুর প্রিয় প্রেরিত যোহন লেখেন, “যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞানুসারে চলি।” (২ যোহন ৬) যারা সত্যিই যিহোবাকে প্রেম করে, তারা তাঁর নির্দেশনা পাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা করে। তারা নিজেদের পাদবিক্ষেপ নিজেরা সফলভাবে স্থির করতে পারে না, এটা উপলব্ধি করে তারা ঈশ্বরের প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করে এবং তাঁর প্রেমময় নির্দেশনার বশীভূত হয়। (যিরমিয় ১০:২৩) তারা হচ্ছে প্রাচীন বিরয়ার ভদ্র লোকেদের মতো, যারা “আগ্রহপূর্ব্বক” ঈশ্বরের বার্তা গ্রহণ করেছিল এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করায় আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিল। (প্রেরিত ১৭:১১) ঈশ্বরের ইচ্ছা আরও পূর্ণরূপে বোঝার জন্য তারা যত্নপূর্বক শাস্ত্র পরীক্ষা করেছিল, যা তাদেরকে বাধ্যতার আরও বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে প্রেম প্রকাশ করতে সাহায্য করেছিল।

১১. ঈশ্বরকে আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে প্রেম করার অর্থ কী?

১১ যিশু যেমন বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের সঙ্গে আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, মন, প্রাণ ও শক্তি জড়িত। (মার্ক ১২:৩০) এই ধরনের প্রেম হৃদয় থেকে উদ্ভূত হয়, যার অন্তর্ভুক্ত আমাদের অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা এবং গভীরতম চিন্তাধারা আর আমরা ঐকান্তিকভাবে যিহোবাকে খুশি করতে চাই। এ ছাড়া, আমরা আমাদের মন দিয়েও প্রেম করি। আমাদের ভক্তি অন্ধ নয়; আমরা যিহোবাকে—তাঁর গুণাবলি, মানদণ্ড এবং উদ্দেশ্যগুলো—জেনেছি। আমরা আমাদের প্রাণ অর্থাৎ আমাদের সমস্ত সত্তা এবং আমাদের যে-জীবন রয়েছে, তা তাঁকে সেবা ও তাঁর প্রশংসা করার জন্য ব্যবহার করি। আর আমরা আমাদের শক্তিকেও সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি।

যে-কারণে আমাদের যিহোবাকে প্রেম করা উচিত

১২. কেন ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁকে প্রেম করি?

১২ একটা যে-কারণে আমাদের যিহোবাকে প্রেম করা উচিত, সেটা হল তিনি চান যাতে আমরা তাঁর গুণাবলি প্রতিফলিত করি। ঈশ্বর প্রেমের উৎস এবং প্রেমের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ দুটোই। “ঈশ্বর প্রেম,” অনুপ্রাণিত প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন। (১ যোহন ৪:৮) মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে; আমাদেরকে ভালবাসার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, যিহোবার সার্বভৌমত্ব প্রেমের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তিনি কেবলমাত্র এমন ব্যক্তিদের তাঁর প্রজা হিসেবে চান, যারা তাঁর শাসন করার ধার্মিক উপায়কে ভালবাসে ও তা পেতে চায় বলে তাঁকে সেবা করে। সত্যিই, সমস্ত সৃষ্টির শান্তি ও সংগতির জন্য প্রেম অপরিহার্য।

১৩. (ক) কেন ইস্রায়েলীয়দের বলা হয়েছিল: “তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করিবে”? (খ) কেন এটা যুক্তিযুক্ত যে, যিহোবা চান যেন আমরা তাঁকে প্রেম করি?

১৩ যিহোবাকে প্রেম করার আরেকটা কারণ হল যে, তিনি আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন, সেটার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। মনে করে দেখুন যে, যিশু যিহুদিদের বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করিবে।” তারা এমন এক ঐশিক সত্তাকে ভালবাসুক বলে প্রত্যাশা করা হয়নি, যিনি দূরবর্তী ও অজ্ঞাত ছিলেন। তাদের এমন একজন ব্যক্তিকে ভালবাসতে হতো, যিনি তাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করেছিলেন। যিহোবা ছিলেন তাদের ঈশ্বর। তিনিই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি তাদেরকে মিশর থেকে বের করে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে এসেছিলেন, তাদেরকে সুরক্ষা করেছিলেন, বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবং ভালবেসেছিলেন ও তাদেরকে প্রেমে শাসন করেছিলেন। আর আজকে যিহোবা আমাদের ঈশ্বর, যিনি তাঁর পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়েছেন, যাতে আমরা অনন্তজীবন পেতে পারি। এটা কতই না যুক্তিযুক্ত যে, যিহোবা চান যাতে এর প্রতিদানে আমরা তাঁকে প্রেম করি! আমাদের প্রেম হল এক প্রতিক্রিয়াশীল প্রেম; আমাদের এমন এক ঈশ্বরকে প্রেম করতে বলা হয়েছে, যিনি আমাদের প্রেম করেন। আমাদের প্রেম সেই ব্যক্তির জন্য, যিনি “প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।”—১ যোহন ৪:১৯.

১৪. কোন উপায়ে যিহোবার প্রেম একজন প্রেমময় বাবা অথবা মায়ের মতো?

১৪ মানবজাতির জন্য যিহোবার প্রেম, সন্তানদের জন্য একজন প্রেমময় বাবা অথবা মায়ের যে-প্রেম রয়েছে, সেটার মতো। অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, প্রেমময় বাবামারা তাদের সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে, বস্তুগত দিক দিয়ে অথবা অন্যান্য উপায়ে অনেক ত্যাগস্বীকার করে। বাবামারা তাদের সন্তানদের নির্দেশনা ও উৎসাহ দেয়, সমর্থন ও শাসন করে কারণ তারা চায়, সন্তানরা সুখী হোক ও সমৃদ্ধি লাভ করুক। প্রতিদানে বাবামারা কী চায়? তারা চায়, সন্তানরা তাদেরকে প্রেম করুক এবং সন্তানদের উপকারের জন্য তারা তাদের হৃদয়ে যা গেঁথে দিয়েছে, তার প্রতি মনোযোগী হোক। তাই, এটা কি যুক্তিযুক্ত নয় যে, আমাদের সিদ্ধ স্বর্গীয় পিতা আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন, সেই সমস্ত বিষয়ের জন্য আমরা প্রেমময় উপলব্ধি দেখাই বলে তিনি চান?

ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা

১৫. ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার প্রথম পদক্ষেপ কী?

১৫ আমরা ঈশ্বরকে দেখিনি অথবা তাঁর রবও শুনিনি। (যোহন ১:১৮) তা সত্ত্বেও, তিনি আমাদেরকে তাঁর সঙ্গে এক প্রেমময় সম্পর্কে প্রবেশ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। (যাকোব ৪:৮) কীভাবে আমরা তা করতে পারি? কাউকে ভালবাসার প্রথম পদক্ষেপ হল, সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া; এমন কারো প্রতি গভীর অনুরাগ বোধ করা কঠিন, যাকে আমরা জানি না। যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেল জুগিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁর সম্বন্ধে জানতে পারি। এই কারণে যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়ার জন্য উৎসাহিত করেন। বাইবেলই আমাদেরকে ঈশ্বর, তাঁর গুণাবলি, তাঁর ব্যক্তিত্ব ও সেইসঙ্গে হাজার হাজার বছর ধরে লোকেদের সঙ্গে তাঁর আচরণ সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়। আমরা যখন এই ধরনের বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করি, তখন তাঁর প্রতি আমাদের উপলব্ধি ও প্রেম বৃদ্ধি পায়।—রোমীয় ১৫:৪.

১৬. কীভাবে যিশুর পরিচর্যা নিয়ে বিবেচনা করা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে বৃদ্ধি করে?

১৬ একটা যে-প্রধান উপায়ে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেমে বৃদ্ধি পেতে পারি তা হল, যিশু খ্রিস্টের জীবন ও পরিচর্যা নিয়ে বিবেচনা করা। বস্তুতপক্ষে, যিশু তাঁর পিতাকে এত নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন যে, তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) একজন বিধবার একমাত্র পুত্রকে জীবন ফিরিয়ে দিয়ে যিশু যে-সমবেদনা দেখিয়েছিলেন, তা কি আপনাকে স্পর্শ করে না? (লূক ৭:১১-১৫) এটা জানা কি হৃদয়গ্রাহী নয় যে তিনি—ঈশ্বরের পুত্র এবং সর্বকালের সর্বমহান পুরুষ—নম্রভাবে তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন? (যোহন ১৩:৩-৫) এটা জানা কি আপনাকে অনুপ্রাণিত করে না যে, যদিও তিনি অন্য যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে মহান ও বিজ্ঞ ছিলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে এমন করে তুলেছিলেন, যাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েসহ সকলে তাঁর কাছে আসতে পারে? (মার্ক ১০:১৩, ১৪) আমরা যখন উপলব্ধি সহকারে এই বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করি, তখন আমরা সেই খ্রিস্টানদের মতো হয়ে উঠি, যাদের সম্বন্ধে পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা [যিশুকে] না দেখিয়াও প্রেম করিতেছ।” (১ পিতর ১:৮) যখন যিশুর প্রতি আমাদের প্রেম বৃদ্ধি পায়, তখন যিহোবার প্রতিও আমাদের প্রেম বৃদ্ধি পায়।

১৭, ১৮. যিহোবার কোন প্রেমময় ব্যবস্থাগুলো নিয়ে ধ্যান করা তাঁর প্রতি আমাদের প্রেমকে বৃদ্ধি করতে পারে?

১৭ আরেকটা যে-উপায়ে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমে বৃদ্ধি পেতে পারি, তা হল জীবন উপভোগ করার জন্য তিনি যে-প্রচুর প্রেমময় ব্যবস্থা জুগিয়েছেন—সৃষ্টির সৌন্দর্য, বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার, উত্তম বন্ধুদের উষ্ণ সাহচর্য ও সেইসঙ্গে অন্যান্য অসংখ্য আনন্দদায়ক বিষয়, যা আমাদের সুখ ও পরিতৃপ্তি প্রদান করে। (প্রেরিত ১৪:১৭) আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা যত বেশি জানব, তাঁর সীমাহীন মঙ্গলভাব ও উদারতার জন্য ততই উপলব্ধি দেখানোর কারণ আমাদের থাকবে। যিহোবা আপনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে যা করেছেন, সেই সমস্তকিছু নিয়ে চিন্তা করুন। আপনি কি একমত নন যে, তিনি আমাদের প্রেম পাওয়ার যোগ্য?

১৮ ঈশ্বরের কাছ থেকে অন্যান্য অনেক দানের মধ্যে আমাদের যেকোনো সময়ে প্রার্থনায় তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ রয়েছে, এটা জেনে যে “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” আমাদের কথা শোনেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে শাসন ও বিচার দুটোই করার অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু, তিনি তাঁর পুত্রসহ অন্য আর কাউকে প্রার্থনা শোনার দায়িত্ব দেননি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রার্থনা শোনেন। এভাবে যিহোবা যে-প্রেমময় এবং ব্যক্তিগত চিন্তা দেখান, তা আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী করে।

১৯. যিহোবার কোন প্রতিজ্ঞাগুলো আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী করে?

১৯ এ ছাড়া আমরা যখন মানবজাতির জন্য যিহোবা কী সঞ্চয় করে রেখেছেন, তা বিবেচনা করি তখন তাঁর নিকটবর্তী হই। তিনি অসুস্থতা, দুঃখ এবং মৃত্যুর শেষ নিয়ে আসার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছেন। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) মানবজাতিকে সিদ্ধতায় নিয়ে আসার পর, কেউই নিরাশা, হতাশা অথবা দুঃখজনক ঘটনা ভোগ করবে না। ক্ষুধা, দারিদ্র এবং যুদ্ধ আর থাকবে না। (গীতসংহিতা ৪৬:৯; ৭২:১৬) পৃথিবী এক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে। (লূক ২৩:৪৩) যিহোবা এই আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবেন কিন্তু তা এই কারণে নয় যে, তিনি সেগুলো আনতে বাধ্য বরং তিনি আমাদের প্রেম করেন বলে সেগুলো নিয়ে আসবেন।

২০. যিহোবাকে প্রেম করার উপকারগুলো সম্বন্ধে মোশি কী বলেছিলেন?

২০ তাই, আমাদের ঈশ্বরকে প্রেম করার ও সেই প্রেম বৃদ্ধি করার বহু জোরালো কারণ রয়েছে। আপনি কি ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেমকে ক্রমাগত শক্তিশালী করবেন, তাঁকে আপনার পথে নির্দেশনা দিতে দেবেন? কোনটা বেছে নেবেন, তা আপনার ওপর নির্ভর করে। মোশি ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ও তা বজায় রাখার উপকারগুলো সম্বন্ধে উপলব্ধি করেছিলেন। বহু পূর্বে ইস্রায়েলীয়দেরকে মোশি বলেছিলেন: “জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও; কেননা তিনিই তোমার জীবন ও তোমার দীর্ঘ পরমায়ুস্বরূপ।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• এটা কেন অপরিহার্য যে, আমরা যেন যিহোবাকে প্রেম করি?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম দেখাতে পারি?

• যিহোবাকে প্রেম করার কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা সকলে যা প্রকাশ করতে পারি—তাঁর প্রতি আমাদের প্রেমকে—যিহোবা সত্যিই মূল্যবান বলে গণ্য করেন

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

“যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” —যোহন ১৪:৯.