“যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে” যিহোবা “পবিত্র আত্মা” দান করেন
“যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে” যিহোবা “পবিত্র আত্মা” দান করেন
“তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”—লূক ১১:১৩.
১. বিশেষভাবে কখন আমাদের পবিত্র আত্মার সাহায্যের প্রয়োজন?
‘আমি নিজের শক্তিতে এটা মোকাবিলা করতে পারব না। একমাত্র পবিত্র আত্মার সাহায্যেই আমি এই পরীক্ষা সহ্য করতে পারব!’ আপনি কি কখনো এই ধরনের আন্তরিক অনুভূতি প্রকাশ করেছেন? অধিকাংশ খ্রিস্টানই করেছে। সম্ভবত আপনার কোনো গুরুতর অসুখ হয়েছে জানার পর আপনি তা প্রকাশ করেছেন। অথবা আপনার আজীবন সঙ্গী যখন মারা গিয়েছেন, তখন হয়তো তা প্রকাশ করেছেন। কিংবা আপনার এক সময়ের হাসিখুশি মেজাজ যখন হতাশার কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল, তখন তা প্রকাশ করেছেন। জীবনের বেদনাময় সময়গুলোতে আপনি হয়তো এইরকম বোধ করেছেন যে, একমাত্র যিহোবার পবিত্র আত্মাই আপনাকে “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করেছে বলে আপনি টিকে ছিলেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭-৯; গীতসংহিতা ৪০:১, ২.
২. (ক) সত্য খ্রিস্টানরা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
২ সত্য খ্রিস্টানদেরকে আজকের অধার্মিক জগতের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপ ও বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হয়। (১ যোহন ৫:১৯) অধিকন্তু, খ্রিস্টের অনুসারীরা স্বয়ং শয়তান দিয়াবলের আক্রমণের শিকার হয়, যে সেইসমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভয়ানক যুদ্ধ করছে, যারা “ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমাদের এখন আগের চেয়ে আরও বেশি ঈশ্বরের আত্মার সমর্থনের প্রয়োজন। আমরা ক্রমাগত প্রচুররূপে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা লাভ করব, এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কী করতে পারি? আর কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, পরীক্ষার সময়ে আমাদের যে-শক্তির প্রয়োজন, তা যিহোবা দিতে অত্যন্ত ইচ্ছুক? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা যিশুর দুটো দৃষ্টান্ত থেকে পাই।
বার বার প্রার্থনা করুন
৩, ৪. যিশু কোন দৃষ্টান্ত বলেছিলেন এবং কীভাবে তিনি তা প্রার্থনার প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন?
৩ যিশুর একজন শিষ্য একবার অনুরোধ করেছিলেন: “প্রভু, আমাদিগকে প্রার্থনা করিতে শিক্ষা দিউন।” (লূক ১১:১) উত্তরে যিশু সম্পর্কযুক্ত দুটো দৃষ্টান্ত বলেছিলেন। প্রথমটা হল এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে, যিনি একজন অতিথির আতিথ্য করছেন আর দ্বিতীয়টা হল একজন পিতা সম্বন্ধে, যিনি তার পুত্রের কথা শোনেন। আসুন আমরা এই দুটো দৃষ্টান্তের প্রত্যেকটা বিবেচনা করি।
৪ যিশু বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কাহারও যদি বন্ধু থাকে, আর সে যদি মধ্যরাত্রে তাহার নিকটে গিয়া বলে, ‘বন্ধু, আমাকে তিনখানা রুটী ধার দেও, কেননা আমার এক বন্ধু পথে যাইতে যাইতে আমার কাছে আসিয়াছেন, তাঁহার সম্মুখে রাখিবার আমার কিছুই নাই;’ তাহা হইলে সেই ব্যক্তি ভিতরে থাকিয়া কি এমন উত্তর দিবে, ‘আমাকে কষ্ট দিও না, এখন দ্বার বদ্ধ, এবং আমার সন্তানেরা আমার কাছে শুইয়া আছে, আমি উঠিয়া তোমাকে দিতে পারি না’? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, সে যদ্যপি বন্ধু বলিয়া উঠিয়া তাহা না দেয়, তথাপি উহার আগ্রহ প্রযুক্ত [“বার বার অনুরোধ করছে বলে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] উঠিয়া উহার যত প্রয়োজন, তাহা দিবে।” এরপর যিশু কীভাবে এই দৃষ্টান্ত প্রার্থনার প্রতি প্রযোজ্য, তা এই বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। কেননা যে কেহ যাচ্ঞা করে, সে গ্রহণ করে, এবং যে অন্বেষণ করে, সে পায়; আর যে দ্বারে আঘাত করে, তাহার জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে।”—লূক ১১:৫-১০.
৫. বার বার অনুরোধ করেন এমন ব্যক্তি সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্ত, প্রার্থনা করার সময় আমাদের মনোভাব সম্বন্ধে কী শিক্ষা দেয়?
৫ বার বার অনুরোধ করেন এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে এই স্পষ্ট দৃষ্টান্তটি দেখায় যে, আমরা যখন প্রার্থনা করি তখন আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত। লক্ষ করুন, যিশু বলেছেন যে সেই ব্যক্তি “বার বার অনুরোধ করছে বলে” তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেতে সফল হয়েছেন। (লূক ১১:৮) ‘বার বার অনুরোধ করা’ অভিব্যক্তিটি বাইবেলে মাত্র একবার এসেছে। এটা এমন একটি গ্রিক শব্দ থেকে অনুবাদিত হয়েছে, যার আক্ষরিক অর্থ হল “নির্লজ্জতা।” নির্লজ্জতা শব্দটি প্রায়ই এক নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যকে ইঙ্গিত করে। কিন্তু, যখন উত্তম কারণে নির্লজ্জতা দেখানো অথবা বার বার অনুরোধ করা হয়, তখন তা এক প্রশংসাযোগ্য গুণ হতে পারে। দৃষ্টান্তের নিমন্ত্রণকর্তার ক্ষেত্রে এটাই প্রযোজ্য। তার যা প্রয়োজন ছিল, তা বার বার চাইতে তিনি একটুও লজ্জা পাননি। যেহেতু যিশু এই নিমন্ত্রণকর্তাকে আমাদের জন্য এক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন, তাই একইভাবে আমাদের প্রার্থনাও বার বার হওয়া উচিত। যিহোবা চান যাতে আমরা ‘যাচ্ঞা করে, অন্বেষণ করে, দ্বারে আঘাত করে’ চলি। এর উত্তরে, তিনি “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”
৬. যিশুর দিনে আতিথেয়তা দেখানোর রীতিকে কীভাবে দেখা হতো?
৬ যিশু আমাদেরকে কেবল কীভাবে প্রার্থনা করা উচিত—বার বার অনুরোধ সহকারে—তা-ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে কেন প্রার্থনা করা উচিত, তা-ও দেখিয়েছেন। সেই শিক্ষাটা স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য আমাদের বিবেচনা করা উচিত যে, বার বার অনুরোধ করেন এমন নিমন্ত্রণকর্তা সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তটি যারা শুনছিল, তারা আতিথেয়তা দেখানোর রীতিকে কীভাবে দেখত। শাস্ত্রের বেশ কয়েকটা বিবরণ দেখায় যে, বাইবেলের সময়ে অতিথিদের যত্ন নেওয়া এমন এক রীতি ছিল, যেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হতো আর বিশেষভাবে ঈশ্বরের দাসেরা সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকত। (আদিপুস্তক ১৮:২-৫; ইব্রীয় ১৩:১, ২) আতিথেয়তা দেখাতে না পারা অসম্মানজনক ছিল। (লূক ৭:৩৬-৩৮, ৪৪-৪৬) এই বিষয়টা মনে রেখে আসুন আমরা আবারও যিশুর গল্পটাতে মনোযোগ দিই।
৭. যিশুর দৃষ্টান্তের নিমন্ত্রণকর্তা তার বন্ধুকে জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে কেন লজ্জিত ছিলেন না?
৭ দৃষ্টান্তের নিমন্ত্রণকর্তা মধ্যরাতে একজন অতিথিকে গ্রহণ করেন। নিমন্ত্রণকর্তা তার অতিথির জন্য খাদ্য পরিবেশন করতে বাধ্যবাধ্যকতা বোধ করেন কিন্তু “তাঁহার সম্মুখে রাখিবার কিছুই নাই।” তার দৃষ্টিতে এটা একটা জরুরি অবস্থা! মূল্য যতই হোক না কেন, তাকে কিছু রুটি জোগাড় করতেই হবে। তাই, তিনি তার এক বন্ধুর কাছে যান এবং নির্লজ্জভাবে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। নিমন্ত্রণকর্তা ডেকে বলেন, “বন্ধু, আমাকে তিনখানা রুটী ধার দেও।” তার যা প্রয়োজন, তা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি বার বার অনুরোধ করেই চলেন। তার কাছে রুটি থাকলে পরই তিনি কেবলমাত্র একজন উপযুক্ত নিমন্ত্রণকর্তা হতে পারেন।
যত বেশি প্রয়োজন—তত বেশি যাচ্ঞা করুন
৮. কী আমাদেরকে পবিত্র আত্মার জন্য বার বার প্রার্থনা করতে পরিচালিত করবে?
৮ কেন আমরা বার বার প্রার্থনা করি, সেই কারণ সম্বন্ধে এই দৃষ্টান্ত কী দেখায়? সেই ব্যক্তি রুটি চেয়েই গিয়েছিলেন কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে, তার কাছে সেই রুটি থাকা একজন নিমন্ত্রণকর্তা হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করার জন্য অত্যাবশ্যক ছিল। (যিশাইয় ৫৮:৫-৭) রুটি না পেলে তিনি একজন উত্তম নিমন্ত্রণকর্তা হতে পারবেন না। একইভাবে, সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের আত্মা যে অত্যাবশ্যক, তা বুঝতে পারি বলে আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে চলি, সেই আত্মার জন্য যাচ্ঞা করি। (সখরিয় ৪:৬) এটা ছাড়া আমরা ব্যর্থ হয়ে যাব। (মথি ২৬:৪১) এই দৃষ্টান্ত থেকে আমরা যে-গুরুত্বপূর্ণ উপসংহারে পৌঁছাতে পারি, তা কি আপনি দেখেছেন? ঈশ্বরের আত্মাকে যদি আমরা অপরিহার্যভাবে প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে দেখি, তা হলে আমরা এর জন্য আরও বেশি করে বার বার যাচ্ঞা করব।
৯, ১০. (ক) উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন যে, কেন আমাদের বার বার ঈশ্বরের কাছে তাঁর পবিত্র আত্মা যাচ্ঞা করা প্রয়োজন। (খ) কোন প্রশ্ন নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন?
৯ এই শিক্ষাটা আমাদের বর্তমান দিনের জীবনে প্রয়োগ করার জন্য কল্পনা করুন যে, আমাদের পরিবারের একজন সদস্য মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আপনি কি একজন ডাক্তারের কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবেন? তুলবেন না, যদি কিনা সেই রোগীর সাধারণ কোনো অসুস্থতা থাকে। কিন্তু, তার যদি হার্ট আ্যটাক হয়, তা হলে আপনি একজন ডাক্তারকে ডাকতে লজ্জিত হবেন না। কেন? কারণ আপনি এক জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন। আপনি বুঝতে পারেন যে, দক্ষতাপূর্ণ সাহায্য অত্যাবশ্যক। সাহায্য না চাইলে তা মারাত্মক হতে পারে। একইভাবে, রূপক অর্থে বললে সত্য খ্রিস্টানরা চলমান এক জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়। কারণ শয়তান “গর্জ্জনকারী সিংহের” ন্যায় ঘোরাফেরা করছে, আমাদেরকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে। (১ পিতর ৫:৮) আমরা যদি আধ্যাত্মিকভাবে বেঁচে থাকতে চাই, তা হলে ঈশ্বরের আত্মার সাহায্য অত্যাবশ্যক। ঈশ্বরের সাহায্য না চাওয়া মারাত্মক হতে পারে। তাই, আমরা বার বার ঈশ্বরের কাছে তাঁর পবিত্র আত্মা চাই। (ইফিষীয় ৩:১৪-১৬) একমাত্র তা করার মাধ্যমে আমরা সেই শক্তি বজায় রাখতে পারব, যা ‘শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবার’ জন্য প্রয়োজন।—মথি ১০:২২; ২৪:১৩.
১০ তাই, মাঝে মাঝে একটু থেমে নিজেদেরকে আমাদের এটা জিজ্ঞেস করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ: ‘আসলে, বার বার প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে আমি কতটুকু করে থাকি?’ মনে রাখবেন যে, আমরা যখন পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারব যে আমাদের ঈশ্বরের সাহায্যের প্রয়োজন, তখন পবিত্র আত্মার জন্য আমরা তত বেশি বার প্রার্থনা করব।
কী আমাদেরকে আস্থা সহকারে প্রার্থনা করতে পরিচালিত করে?
১১. কীভাবে যিশু একজন পিতা ও তার পুত্রের দৃষ্টান্তকে প্রার্থনার প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন?
১১ বার বার অনুরোধ করেন এমন নিমন্ত্রণকর্তা সম্বন্ধীয় যিশুর দৃষ্টান্ত যিনি প্রার্থনা করেন, তার—বিশ্বাসী ব্যক্তির—মনোভাবকে তুলে ধরে। পরের দৃষ্টান্তটি যিনি প্রার্থনা শোনেন, তাঁর—যিহোবা ঈশ্বরের—মনোভাবকে তুলে ধরে। যিশু জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে এমন পিতা কে, যাহার পুত্ত্র রুটী চাহিলে তাহাকে পাথর দিবে? কিম্বা মাছ চাহিলে মাছের পরিবর্ত্তে সাপ দিবে? কিম্বা ডিম চাহিলে তাহাকে বৃশ্চিক দিবে?” যিশু এই কথা বলে এর প্রয়োগ দেখিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”—লূক ১১:১১-১৩.
১২. পুত্রের অনুরোধ শোনেন এমন এক পিতার দৃষ্টান্ত কীভাবে আমাদের প্রার্থনার প্রতি সাড়া দেওয়ার বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছুক মনোভাবকে তুলে ধরে?
১২ একজন পিতার তার পুত্রের প্রতি সাড়াদানের এই উদাহরণের মাধ্যমে যিশু প্রকাশ করেন যে, যারা প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আসে, তাদের সম্বন্ধে তিনি কেমন বোধ করেন। (লূক ১০:২২) প্রথমে, বৈসাদৃশ্য লক্ষ করুন। প্রথম দৃষ্টান্তের যে-ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল কিন্তু সাড়া দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন, তার বিপরীতে যিহোবা এক যত্নশীল মানব পিতার মতো, যিনি তার সন্তানের অনুরোধে সাড়া দিতে আকুল আকাঙ্ক্ষী। (গীতসংহিতা ৫০:১৫) অধিকন্তু, মানব পিতার সঙ্গে স্বর্গীয় পিতার তুলনা করে যিশু আমাদের প্রতি যিহোবার ইচ্ছুক মনোভাব সম্বন্ধে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন যে, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপের কারণে “মন্দ” হয়েও একজন মানব পিতা যদি তার পুত্রকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করে থাকেন, তা হলে আমরা আরও কত বেশি আশা করতে পারি যে, আমাদের দয়ালু স্বর্গীয় পিতা তাঁর উপাসকদের নিয়ে গঠিত পরিবারকে পবিত্র আত্মা দেবেন!—যাকোব ১:১৭.
১৩. আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি?
১৩ আমাদের জন্য শিক্ষাটা কী? আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, আমরা যখন আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে পবিত্র আত্মা যাচ্ঞা করি, তখন তিনি আমাদের অনুরোধ শোনার জন্য অত্যন্ত ইচ্ছুক। (১ যোহন ৫:১৪) আমরা যখন বার বার প্রার্থনায় তাঁর কাছে আসি, তখন যিহোবা কখনো এইরকম বলবেন না: “আমাকে কষ্ট দিও না, এখন দ্বার বদ্ধ।” (লূক ১১:৭) এর বৈসাদৃশ্যে যিশু বলেছিলেন: “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে।” (লূক ১১:৯, ১০) হ্যাঁ, “যে দিন আহ্বান করি,” সেই দিনই যিহোবা ‘আমাদিগকে উত্তর দিবেন।’—গীতসংহিতা ২০:৯; ১৪৫:১৮.
১৪. (ক) বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হয় এমন কিছু ব্যক্তিকে কোন ভুল ধারণা কষ্ট দেয়? (খ) পরীক্ষার সম্মুখীন হলে, কেন আমরা আস্থা সহকারে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি?
১৪ এ ছাড়া, যত্নশীল পিতা সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তটি এই বিষয়েও জোর দেয় যে, যিহোবার মঙ্গলভাব যেকোনো মানব পিতার দ্বারা দেখানো মঙ্গলভাবের চেয়ে অনেক মহান। তাই, আমাদের কারোরই কখনো এইরকম মনে করা উচিত নয় যে, আমরা যে-পরীক্ষাগুলোই ভোগ করে থাকি না কেন, সেগুলো নিশ্চয়ই আমাদের প্রতি ঈশ্বরের অসন্তোষের প্রকাশ। আমাদের প্রধান শত্রু শয়তানই চায় যেন আমরা এভাবে চিন্তা করি। (ইয়োব ৪:১, ৭, ৮; যোহন ৮:৪৪) এভাবে নিজেকে দোষী মনে করার কোনো শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই। যিহোবা “মন্দ বিষয়ের দ্বারা” আমাদের পরীক্ষা করেন না। (যাকোব ১:১৩) তিনি আমাদেরকে সর্পতুল্য অথবা বৃশ্চিকতুল্য পরীক্ষা দেন না। আমাদের স্বর্গীয় পিতা “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য” দান করেন। (মথি ৭:১১; লূক ১১:১৩) বস্তুতপক্ষে, যিহোবার মঙ্গলভাব ও আমাদেরকে সাহায্য করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে আমরা যতই উপলব্ধি করব, ততই আমরা আস্থা সহকারে প্রার্থনা করতে পরিচালিত হব। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরাও গীতরচকের মতো একই অনুভূতি প্রকাশ করতে সমর্থ হব, যিনি লিখেছিলেন: “সত্যই ঈশ্বর শুনিয়াছেন; তিনি আমার প্রার্থনার রবে অবধান করিয়াছেন।”—গীতসংহিতা ১০:১৭; ৬৬:১৯.
পবিত্র আত্মা যেভাবে আমাদের সহায়
১৫. (ক) পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে যিশু কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) একটা উপায় কী, যার মাধ্যমে পবিত্র আত্মা আমাদের সাহায্য করে থাকে?
১৫ তাঁর মৃত্যুর অল্প কয়েক দিন আগে যিশু তাঁর বলা দৃষ্টান্তগুলোতে যে-আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা পুনরাবৃত্তি করেন। পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন।” (যোহন ১৪:১৬) এভাবে যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, সহায় বা পবিত্র আত্মা ভবিষ্যতে ও সেইসঙ্গে আমাদের দিনেও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। একটা তাৎপর্যপূর্ণ উপায় কী, যার মাধ্যমে আজকে আমরা এই ধরনের সাহায্য লাভ করি? পবিত্র আত্মা আমাদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করে। কীভাবে? প্রেরিত পৌল, যিনি স্বয়ং পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তিনি করিন্থের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা একটা চিঠিতে বর্ণনা করেছিলেন যে, কীভাবে পবিত্র আত্মা তার সাহায্যে এসেছিল। তিনি যা লিখেছিলেন, আসুন আমরা সংক্ষেপে তা বিবেচনা করি।
১৬. কীভাবে আমাদের পরিস্থিতি পৌলের মতো একইরকম হতে পারে?
১৬ প্রথমত, পৌল খোলাখুলিভাবে তার সহবিশ্বাসীদের বলেছিলেন যে, তিনি ‘মাংসের একটা কন্টকের’ অর্থাৎ কোনো ধরনের পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। এরপর, তিনি বলেছিলেন: “আমি প্রভুর [যিহোবার] কাছে তিন বার নিবেদন করিয়াছিলাম, যেন উহা আমাকে ছাড়িয়া যায়।” (২ করিন্থীয় ১২:৭, ৮) যদিও পৌল তার দুর্দশা দূর করে দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু তা রয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত আপনিও আজকে একইরকম পরিস্থিতি ভোগ করেন। পৌলের মতো আপনিও হয়তো বার বার এবং আস্থা সহকারে প্রার্থনা করেছেন, কোনো পরীক্ষা দূর করে দেওয়ার জন্য যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করেছেন। কিন্তু, বার বার আপনার মিনতি সত্ত্বেও, আপনার সমস্যা রয়েই গিয়েছে। এর অর্থ কি এই যে, যিহোবা আপনার প্রার্থনার উত্তর দেননি এবং তাঁর আত্মা আপনাকে সাহায্য করছে না? কখনোই না! (গীতসংহিতা ১০:১, ১৭) এরপর পৌল কী বলেছেন, তা লক্ষ করুন।
১৭. যিহোবা কীভাবে পৌলের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন?
১৭ পৌলের প্রার্থনার উত্তরে ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: “আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট; কেননা আমার শক্তি দুর্ব্বলতায় সিদ্ধি পায়।” পৌল বলেছিলেন: “অতএব আমি বরং অতিশয় আনন্দের সহিত নানা দুর্ব্বলতায় শ্লাঘা করিব, যেন খ্রীষ্টের শক্তি আমার উপরে [“তাঁবুর ন্যায়,” NW] অবস্থিতি করে।” (২ করিন্থীয় ১২:৯; গীতসংহিতা ১৪৭:৫) তাই, পৌল অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, খ্রিস্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের শক্তিশালী সুরক্ষা তার ওপর তাঁবুর মতো বিস্তৃত রয়েছে। আজকে যিহোবা একই উপায়ে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন। তিনি তাঁর দাসদের ওপর আশ্রয়ের মতো সুরক্ষা বিস্তৃত করেন।
১৮. কেন আমরা পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে পারি?
১৮ অবশ্য, একটা তাঁবু বৃষ্টি পড়াকে বা বাতাস বয়ে যাওয়াকে রোধ করে না কিন্তু এটা এগুলো থেকে কিছুটা সুরক্ষা জোগায়। একইভাবে, ‘খ্রীষ্টের শক্তির’ মাধ্যমে যে-আশ্রয় জোগানো হয়, তা আমাদের ওপর পরীক্ষা আসাকে অথবা আমাদের বিরুদ্ধে কষ্ট আসাকে রোধ করে না। কিন্তু, এটা এই জগতের ক্ষতিকর শক্তিগুলোর এবং এর শাসক শয়তানের আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক সুরক্ষা জোগায়। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৫, ১৬) তাই, এমনকি আপনি যদি এমন এক পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করে থাকেন, যা ‘আপনাকে ছাড়িয়া যায়’ না, তবুও আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা আপনার সংগ্রাম সম্বন্ধে অবগত আছেন এবং তিনি ‘আপনার ক্রন্দনের রবে’ উত্তর দিয়েছেন। (যিশাইয় ৩০:১৯; ২ করিন্থীয় ১:৩, ৪) পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।”—১ করিন্থীয় ১০:১৩; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.
১৯. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ এবং কেন?
১৯ এটা ঠিক যে, এই অধার্মিক জগতের বর্তমান ‘শেষ কাল’ ‘বিষম সময়ের’ বা মোকাবিলা করা কঠিন এমন সময়ের দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। (২ তীমথিয় ৩:১) তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের দাসদের জন্য এই সময় মোকাবিলা করা অসম্ভব নয়। কেন? ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সমর্থন ও সুরক্ষার কারণে, যা যিহোবা যারা তাঁর কাছে বার বার ও আস্থা সহকারে যাচ্ঞা করে, তাদের সকলকে ইচ্ছুকভাবে এবং প্রচুররূপে দিয়ে থাকেন। তাই, আমরা যেন প্রতিদিন পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করে চলতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।—গীতসংহিতা ৩৪:৬; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা লাভ করার জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন?
• কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, পবিত্র আত্মা চেয়ে করা আমাদের প্রার্থনার প্রতি যিহোবা সাড়া দেবেন?
• কীভাবে পবিত্র আত্মা আমাদের পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
বার বার অনুরোধ করেন এমন নিমন্ত্রণকর্তা সম্বন্ধীয় যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার জন্য বার বার প্রার্থনা করেন?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন যত্নশীল পিতার দৃষ্টান্ত থেকে যিহোবা সম্বন্ধে আমরা কী শিখি?