সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা “ন্যায়বিচার করিবেন”

যিহোবা “ন্যায়বিচার করিবেন”

যিহোবা “ন্যায়বিচার করিবেন”

“ঈশ্বর কি আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতীকার [“ন্যায়বিচার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করিবেন না, যাহারা দিবারাত্র তাঁহার কাছে রোদন করে?”—লূক ১৮:৭.

১. আপনার উৎসাহের এক উৎস কারা এবং কেন?

 সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিরা সেই খ্রিস্টান ভাই ও বোনদের সাহচর্য উপভোগ করে, যারা অনেক বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করছে। আপনি কি এইরকম কিছু প্রিয় ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন? আপনার হয়তো একজন বয়স্কা বোনের কথা মনে আসতে পারে, যিনি অনেক বছর আগে বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন এবং কদাচিৎ কিংডম হলের সভা বাদ দেন। অথবা আপনি হয়তো একজন বৃদ্ধ ভাইয়ের কথা চিন্তা করতে পারেন, যিনি সপ্তাহের পর সপ্তাহ মণ্ডলীর ক্ষেত্রের পরিচর্যাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন এবং তা অনেক বছর ধরে করে আসছেন। এটা ঠিক যে, এইরকম অনেক বিশ্বস্ত ব্যক্তি মনে করেছিল যে, এরই মধ্যে হর্‌মাগিদোন আসার কথা। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টা হল, এই অন্যায্য জগৎ যে এখনও রয়েছে, তা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর তাদের আস্থাকে নষ্ট অথবা ‘শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবার’ বিষয়ে তাদের দৃঢ়সংকল্পকেও দুর্বল করে দেয়নি। (মথি ২৪:১৩) যিহোবার এই অনুগত দাসদের দ্বারা দেখানো বিশ্বাসের গভীরতা পুরো মণ্ডলীর জন্য সত্যিই উৎসাহের এক উৎস।—গীতসংহিতা ১৪৭:১১.

২. কোন পরিস্থিতি আমাদের দুঃখ দেয়?

কিন্তু, মাঝে মাঝে আমরা হয়তো বিপরীত বিষয় লক্ষ করি। কিছু সাক্ষি বছরের পর বছর ধরে পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু একসময় যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রাক্তন সঙ্গীরা যিহোবাকে ত্যাগ করেছে বলে তা আমাদের দুঃখ দেয় আর আমাদের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা হল, প্রতিটা ‘হারাণ মেষকে’ পালের কাছে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে চলা। (গীতসংহিতা ১১৯:১৭৬; রোমীয় ১৫:১) তা সত্ত্বেও, এই বৈসাদৃশ্যপূর্ণ পরিণতি—কেউ কেউ বিশ্বস্ত থাকে আবার অন্যেরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে—বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে। কী অসংখ্য সাক্ষিকে যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর তাদের বিশ্বাস বজায় রাখতে সমর্থ করে যদিও অন্যেরা তা হারিয়ে ফেলে? “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] মহাদিন” নিকটবর্তী, সেই বিষয়ে আমাদের দৃঢ়প্রত্যয় যে স্থির রয়েছে, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমরা কী করতে পারি? (সফনিয় ১:১৪) আসুন আমরা লূকের সুসমাচারের একটি দৃষ্টান্ত বিবেচনা করি।

যারা ‘মনুষ্যপুত্ত্র আসিবার’ সময়ে বাস করছে, তাদের জন্য এক সতর্কবাণী

৩. বিশেষভাবে কারা বিধবা ও বিচারকর্তার দৃষ্টান্ত থেকে উপকার পেতে পারে এবং কেন?

লূক ১৮ অধ্যায়ে আমরা একজন বিধবা ও বিচারকর্তার দৃষ্টান্ত পাই। এটি বার বার অনুরোধ করেন এমন একজন নিমন্ত্রণকর্তার দৃষ্টান্তের মতোই, যা আমরা আগের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। (লূক ১১:৫-১৩) কিন্তু, বাইবেলের যে-বিবরণে বিধবা ও বিচারকর্তার দৃষ্টান্তটি রয়েছে, সেটার প্রসঙ্গ দেখায় যে, এটা বিশেষভাবে তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা “মনুষ্যপুত্ত্র” রাজ্যের ক্ষমতায় ‘আসিবার’ সময়ে বসবাস করছে, যে-সময়কাল ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছে।—লূক ১৮:৮. *

৪. লূক ১৮ অধ্যায়ে যে-দৃষ্টান্তটি রয়েছে, তা বলার আগে যিশু কী আলোচনা করেছিলেন?

সেই দৃষ্টান্তটি বলার আগে যিশু বলেছিলেন যে, রাজ্যের ক্ষমতায় তাঁর উপস্থিতির প্রমাণ ‘বিদ্যুতের’ মতো বহুদূর পর্যন্ত বোঝা যাবে, যা “আকাশের নীচে এক দিক্‌ হইতে চমকাইলে আকাশের নীচে অন্য দিক্‌ পর্য্যন্ত আলোকিত হয়।” (লূক ১৭:২৪; ২১:১০, ২৯-৩৩) তা সত্ত্বেও, ‘শেষকালে’ বসবাসরত অধিকাংশ লোক সেই স্পষ্ট প্রমাণের প্রতি মনোযোগ দেবে না। (দানিয়েল ১২:৪) কেন? সেই একই কারণে, যে-কারণে নোহ ও লোটের সময়কার লোকেরা যিহোবার সতর্কবাণীকে উপেক্ষা করেছিল। সেই সময়ে লোকেরা ‘ভোজন পান, ক্রয় বিক্রয়, বৃক্ষ রোপণ ও গৃহ নির্ম্মাণ করিত, যে পর্য্যন্ত না তাহারা বিনষ্ট হইল।’ (লূক ১৭:২৬-২৯) তারা তাদের জীবন হারিয়েছিল, কারণ তারা সেই সাধারণ কাজকর্মে এত বেশি মগ্ন ছিল যে, তারা ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগ দেয়নি। (মথি ২৪:৩৯) আজকে অধিকাংশ লোক একইভাবে দৈনন্দিন বিষয়গুলোতে এত বেশি মগ্ন যে, তারা এই অধার্মিক জগতের শেষ যে একেবারে সন্নিকট, তার প্রমাণ দেখতে ব্যর্থ হয়।—লূক ১৭:৩০.

৫. (ক) যিশু কাদেরকে সতর্কবাণী দিয়েছিলেন এবং কেন? (খ) কোন কারণে কেউ কেউ তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে?

স্পষ্টতই, যিশু চিন্তিত ছিলেন যে, তাঁর অনুসারীরাও শয়তানের জগতের দ্বারা বিক্ষিপ্ত হতে পারে, এতটাই বিক্ষিপ্ত হতে পারে যে, তারা হয়তো ‘পশ্চাৎ ফিরিয়া যাইতে’ পারে। (লূক ১৭:২২, ৩১) আর বস্তুতপক্ষে কিছু খ্রিস্টানের বেলায় তা-ই ঘটেছে। বছরের পর বছর ধরে এই ব্যক্তিরা সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে ছিল, যখন যিহোবা এই দুষ্ট জগতের শেষ নিয়ে আসবেন। কিন্তু, যখন হর্‌মাগিদোন তাদের প্রত্যাশিত সময়ে আসেনি, তখন তারা মর্মাহত হয়ে পড়েছিল। যিহোবার বিচারের দিন যে নিকটে, সেই বিষয়ে তাদের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারা পরিচর্যায় ধীর হয়ে পড়েছিল এবং ধীরে ধীরে জীবনের রোজকার বিষয়গুলোতে এতটাই জড়িয়ে পড়েছিল যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য তাদের খুব কম সময়ই ছিল। (লূক ৮:১১, ১৩, ১৪) অবশেষে, তারা ‘পশ্চাৎ ফিরিয়া গিয়াছিল’—কতই না দুঃখজনক!

‘সর্ব্বদাই প্রার্থনা করিবার’ প্রয়োজনীয়তা

৬-৮. (ক) বিধবা ও বিচারকর্তার দৃষ্টান্ত সম্বন্ধে বর্ণনা করুন। (খ) কীভাবে যিশু এই দৃষ্টান্তটি প্রয়োগ করেছিলেন?

যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আমাদের নিশ্চয়তা বা দৃঢ় আস্থা যে দুর্বল হয়ে যায়নি, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কী করতে পারি? (ইব্রীয় ৩:১৪) শয়তানের দুষ্ট জগতে ফিরে না যাওয়ার বিষয়ে শিষ্যদের সতর্ক করার পর পরই যিশু এই প্রশ্নটা সম্বন্ধে বলেছিলেন।

লূক উল্লেখ করেন যে, যিশু “তাঁহাদিগকে এই ভাবের একটী দৃষ্টান্ত কহিলেন যে, তাঁহাদের সর্ব্বদাই প্রার্থনা করা উচিত, নিরুৎসাহ হওয়া উচিত নয়।” যিশু বলেছিলেন: “কোন নগরে এক বিচারকর্ত্তা ছিল, সে ঈশ্বরকে ভয় করিত না মনুষ্যকেও মানিত না। আর সেই নগরে এক বিধবা ছিল, সে তাহার নিকটে আসিয়া বলিত, অন্যায়ের প্রতীকার [“ন্যায়বিচার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করিয়া আমার বিপক্ষ হইতে আমাকে উদ্ধার করুন! বিচারকর্ত্তা কিছু কাল পর্য্যন্ত সম্মত হইল না; কিন্তু পরে মনে মনে কহিল, যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না, মনুষ্যকেও মানি না, তথাপি এই বিধবা আমাকে ক্লেশ দিতেছে, এই জন্য অন্যায় হইতে ইহাকে উদ্ধার [“আমি তার পক্ষে ন্যায়বিচার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করিব, পাছে এ সর্ব্বদা আসিয়া আমাকে জ্বালাতন করিয়া তুলে।”

এই বর্ণনা সম্বন্ধে বলার পর, যিশু এর প্রয়োগ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “শুন, ঐ অধার্ম্মিক বিচারকর্ত্তা কি বলে। তবে ঈশ্বর কি আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে ন্যায়বিচার করিবেন না, যাহারা দিবারাত্র তাঁহার কাছে রোদন করে, যদিও তিনি তাহাদের বিষয়ে দীর্ঘসহিষ্ণু? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তিনি শীঘ্রই তাহাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার [“ন্যায়বিচার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করিবেন। কিন্তু মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন?”—লূক ১৮:১-৮.

‘ন্যায়বিচার করুন’

৯. বিধবা ও বিচারকর্তার দৃষ্টান্তে কোন মূলভাব তুলে ধরা হয়েছে?

এই স্পষ্ট দৃষ্টান্তের প্রধান মূলভাব একেবারে স্পষ্ট। এটা দৃষ্টান্তের দুটো চরিত্রের ও সেইসঙ্গে যিশুর দ্বারা উল্লেখিত হয়েছে। সেই বিধবা অনুরোধ করেছিলেন: ‘ন্যায়বিচার করুন।’ বিচারকর্তা বলেছিলেন: “আমি তাহার পক্ষে ন্যায়বিচার করিব।” যিশু জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘ঈশ্বর কি ন্যায়বিচার করিবেন না?’ আর যিহোবা সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন: “তিনি শীঘ্রই তাহাদের পক্ষে ন্যায়বিচার করিবেন।” (লূক ১৮:৩, ৫, ৭, ৮) বিশেষভাবে কখন ঈশ্বর “ন্যায়বিচার করিবেন”?

১০. (ক) প্রথম শতাব্দীতে কখন ন্যায়বিচারের সময় এসেছিল? (খ) কখন এবং কীভাবে আজকে ঈশ্বরের দাসদের জন্য ন্যায়বিচার করা হবে?

১০ প্রথম শতাব্দীতে, “প্রতিশোধের সময়” (‘ন্যায়বিচারের সময়’ নতুন জগৎ অনুবাদ, ইংরেজি) এসেছিল সা.কা. ৭০ সালে, যখন যিরূশালেম ও এর মন্দিরকে ধ্বংস করা হয়েছিল। (লূক ২১:২২) আজকে ঈশ্বরের লোকেদের জন্য ‘যিহোবার মহাদিনে’ ন্যায়বিচার করা হবে। (সফনিয় ১:১৪; মথি ২৪:২১) সেই সময় যিহোবা “যাহারা” তাঁর লোকেদের ‘ক্লেশ দেয়, তাহাদিগকে প্রতিফলরূপে ক্লেশ দিবেন, যখন [যিশু খ্রিস্ট] যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।’—২ থিষলনীকীয় ১:৬-৮; রোমীয় ১২:১৯.

১১. কোন উপায়ে ন্যায়বিচার “শীঘ্রই” আসবে?

১১ কিন্তু, যিহোবা যে “শীঘ্রই” ন্যায়বিচার করবেন, যিশুর এই আশ্বাসকে আমাদের কীভাবে বোঝা উচিত? ঈশ্বরের বাক্য আমাদের দেখায় যে, ‘যদিও [ঈশ্বর] দীর্ঘসহিষ্ণু’ কিন্তু যখন নিরূপিত সময় আসবে, তখন তিনি দ্রুত ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন। (লূক ১৮:৭, ৮; ২ পিতর ৩:৯, ১০) নোহের সময়ে যখন জলপ্লাবন এসেছিল, তখন দুষ্টরা অবিলম্বে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। একইভাবে, লোটের দিনে যখন স্বর্গ থেকে অগ্নি বর্ষিত হয়েছিল, তখন দুষ্টরা বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যিশু বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র যে দিন প্রকাশিত হইবেন, সে দিনেও সেইরূপ হইবে।” (লূক ১৭:২৭-৩০) আবারও দুষ্টরা “আকস্মিক বিনাশ” ভোগ করবে। (১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৩) বস্তুতপক্ষে, আমরা পূর্ণরূপে আস্থা রাখতে পারি যে, ন্যায়বিচার পূরণের জন্য যতদিন প্রয়োজন, শয়তানের জগৎকে যিহোবা তার চেয়ে একদিনও বেশি থাকতে দেবেন না

‘তিনি ন্যায়বিচার করিবেন’

১২, ১৩. (ক) কীভাবে বিধবা ও বিচারকর্তা সম্বন্ধীয় যিশুর দৃষ্টান্ত একটা শিক্ষা প্রদান করে? (খ) কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনবেন এবং ন্যায়বিচার করবেন?

১২ বিধবা ও বিচারকর্তা সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্ত আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সত্য তুলে ধরে। সেই দৃষ্টান্তটি প্রয়োগ করে যিশু বলেছিলেন: “শুন, ঐ অধার্ম্মিক বিচারকর্ত্তা কি বলে। তবে ঈশ্বর কি আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে ন্যায়বিচার করিবেন না?” অবশ্য, যিশু যিহোবাকে সেই বিচারকর্তার সঙ্গে এমনভাবে তুলনা করছিলেন না যেন ঈশ্বরও বিশ্বাসীদের সঙ্গে একই উপায়ে আচরণ করবেন। এর পরিবর্তে, যিশু সেই বিচারক ও ঈশ্বরের মধ্যে একটা তুলনা তুলে ধরার দ্বারা তাঁর অনুসারীদের যিহোবা সম্বন্ধে একটা বিষয় শিক্ষা দিয়েছিলেন। কয়েকটা উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্যকে তুলে ধরা যেতে পারে?

১৩ যিশুর দৃষ্টান্তে বলা বিচারকর্তা ছিলেন “অধার্ম্মিক” আর অন্যদিকে “ঈশ্বর ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা।” (গীতসংহিতা ৭:১১; ৩৩:৫) বিচারকর্তার সেই বিধবার প্রতি কোনো ব্যক্তিগত আগ্রহ ছিল না কিন্তু যিহোবা প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি আগ্রহী। (২ বংশাবলি ৬:২৯, ৩০) বিচারকর্তা সেই বিধবাকে সাহায্য করতে অনিচ্ছুক ছিলেন কিন্তু যিহোবা যারা তাঁকে সেবা করে, তাদেরকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক—হ্যাঁ, উৎসুক। (যিশাইয় ৩০:১৮, ১৯) শিক্ষাটা কী? একজন অধার্মিক বিচারকর্তা যদি একজন বিধবার অনুরোধ শুনতে এবং তার জন্য ন্যায়বিচার করতে পারেন, তা হলে যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রার্থনা আরও কত বেশি শুনবেন এবং নিঃসন্দেহে তাদের জন্য ন্যায়বিচার করবেন!—হিতোপদেশ ১৫:২৯.

১৪. ঈশ্বরের বিচারের দিন আসার বিষয়ে কেন আমাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা উচিত নয়?

১৪ তাই, যারা ঈশ্বরের বিচারের দিন আসার বিষয়ে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে তারা এক গুরুতর ভুল করে। কেন? “যিহোবার মহাদিন” নিকটবর্তী এই বিষয়ে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ত্যাগ করার দ্বারা তারা মূলত সন্দেহ করে থাকে যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো বিশ্বস্তভাবে রক্ষা করবেন, সেই ব্যাপারে তাঁর ওপর নির্ভর করা যায় কি না। কিন্তু, কেউই ন্যায়সংগতভাবে যিহোবার বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না। (ইয়োব ৯:১২) একটা উপযুক্ত প্রশ্ন হল, আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বস্ত থাকব? আর ঠিক এই বিষয়টাই যিশু, বিধবা ও বিচারকর্তা সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্তের একেবারে শেষে উত্থাপন করেছেন।

‘তিনি কি পৃথিবীতে এই বিশ্বাস পাইবেন?’

১৫. (ক) যিশু কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং কেন? (খ) নিজেদেরকে আমাদের কী জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৫ যিশু এক আগ্রহজনক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন: “মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস [“এই বিশ্বাস,” পাদটীকা, NW] পাইবেন?” (লূক ১৮:৮) “এই বিশ্বাস” অভিব্যক্তিটি ইঙ্গিত করে যে, যিশু সাধারণ বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেননি বরং এক নির্দিষ্ট ধরনের—বিধবার যে-ধরনের বিশ্বাস ছিল সেই ধরনের—বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। যিশু তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেননি। তিনি এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যাতে তাঁর শিষ্যরা তাদের নিজেদের বিশ্বাসের গুণগত মান সম্বন্ধে চিন্তা করে। তা কি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিল, যার ফলে যে-বিষয়গুলো তারা পিছনে ফেলে এসেছে, সেগুলোতে ফিরে যাওয়ার বিপদের মধ্যে ছিল? নাকি তাদের বিধবার উদাহরণের মাধ্যমে যে-বিশ্বাস তুলে ধরা হয়েছে, সেইরকম বিশ্বাস ছিল? আজকে আমাদের একইভাবে নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘“মনুষ্যপুত্ত্র” আমার হৃদয়ে কোন ধরনের বিশ্বাস দেখতে পান?’

১৬. সেই বিধবার কোন ধরনের বিশ্বাস ছিল?

১৬ আমরা যদি সেই ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই, যারা যিহোবার ন্যায়বিচার লাভ করবে, তা হলে আমাদের সেই বিধবার পথ অনুসরণ করতে হবে। তার কোন ধরনের বিশ্বাস ছিল? তিনি বার বার “[বিচারকর্তার] নিকটে আসিয়া” এই কথা ‘বলিবার’ মাধ্যমে তার বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন যে, ‘ন্যায়বিচার করুন।’ সেই বিধবা একজন অধার্মিক মানুষের কাছ থেকে ন্যায়বিচার লাভ করার জন্য বার বার অনুরোধ করেছিলেন। একইভাবে, ঈশ্বরের দাসেরা আজকে আস্থা রাখতে পারে যে, তারা যিহোবার ন্যায়বিচার লাভ করবে—যদিও এর জন্য তাদের প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে আরও বেশি সময় লেগে থাকে। অধিকন্তু, তারা বার বার প্রার্থনা করার মাধ্যমে—হ্যাঁ, ‘দিবারাত্র যিহোবার কাছে রোদন করিবার’ মাধ্যমে—ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর তাদের আস্থা দেখায়। (লূক ১৮:৭) বস্তুতপক্ষে, একজন খ্রিস্টান যদি ন্যায়বিচারের জন্য প্রার্থনা করা বন্ধ করে দেন, তা হল তিনি দেখান যে, যিহোবা যে তাঁর দাসদের জন্য পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন সেই বিষয়ে তিনি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।

১৭. প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকার এবং যিহোবার বিচার দিনের নিশ্চিত আগমনের ওপর বিশ্বাস রাখার কোন কারণগুলো আমাদের রয়েছে?

১৭ সেই বিধবার নির্দিষ্ট পরিস্থিতি আমাদের দেখায় যে, প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকার আরও কারণ আমাদের রয়েছে। তার পরিস্থিতি ও আমাদের পরিস্থিতির মধ্যে কিছু পার্থক্য বিবেচনা করুন। সেই বিধবা বার বার বিচারকর্তার কাছে গিয়েছিলেন, যদিও কেউ তাকে তা করার জন্য উৎসাহ দেয়নি কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য আমাদের ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিবার’ জন্য অনেক উৎসাহ দেয়। (রোমীয় ১২:১২) বিধবার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না যে, তার অনুরোধ শোনা হবে কিন্তু যিহোবা আমাদের নিশ্চয়তা দেন যে, ন্যায়বিচার করা হবে। তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্‌কূক ২:৩; গীতসংহিতা ৯৭:১০) সেই বিধবার মিনতিকে আরও জোরদার করার জন্য তার পক্ষে অনুরোধ করতে কোনো সহায় ছিল না। কিন্তু আমাদের একজন শক্তিশালী সহায় যিশু রয়েছেন, যিনি “ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন।” (রোমীয় ৮:৩৪; ইব্রীয় ৭:২৫) তাই, সেই বিধবা যদি তার কঠিন পরিস্থিতিগুলো সত্ত্বেও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় বিচারকর্তার কাছে অনুরোধ করেই চলেন, তা হলে যিহোবার বিচার দিনের নিশ্চিত আগমনের ওপর আমাদের আরও কত বেশি বিশ্বাস রাখা উচিত!

১৮. কীভাবে প্রার্থনা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে এবং ন্যায়বিচার লাভ করতে সাহায্য করবে?

১৮ বিধবার দৃষ্টান্ত আমাদের শিক্ষা দেয় যে, প্রার্থনা ও বিশ্বাসের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এবং আমাদের বার বার করা প্রার্থনা সেই প্রভাবগুলোকে প্রতিহত করতে পারে, যা আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। অবশ্য, এর অর্থ এই নয় যে, বাহ্যিকভাবে লোক-দেখানো প্রার্থনা বিশ্বাস হারানোর বিরুদ্ধে এক প্রতিকার হবে। (মথি ৬:৭, ৮) আমরা পূর্ণরূপে ঈশ্বরের ওপর নির্ভরশীল এই বিষয়টা উপলব্ধি করে আমরা যখন প্রার্থনা করতে পরিচালিত হই, তখন প্রার্থনা আমাদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী করে এবং আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। আর যেহেতু পরিত্রাণের জন্য বিশ্বাস প্রয়োজন, তাই যিশু উপলব্ধি করেছিলেন যে, তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়ে উৎসাহিত করা আবশ্যক যে, তাদের “সর্ব্বদাই প্রার্থনা করা উচিত, নিরুৎসাহ হওয়া উচিত নয়”! (লূক ১৮:১; ২ থিষলনীকীয় ৩:১৩) এটা ঠিক যে, “যিহোবার মহাদিন” আমাদের প্রার্থনার ওপর নির্ভর করে না—আমরা এর জন্য প্রার্থনা করি বা না করি, এটা আসবেই। কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে আমরা ন্যায়বিচার লাভ করব কি না এবং ঈশ্বরের যুদ্ধে রক্ষা পাব কি না, তা নিশ্চিতভাবেই আমাদের বিশ্বাসের ওপর এবং আমরা যে-প্রার্থনাপূর্ণ পথ অনুধাবন করি, সেটার ওপর নির্ভর করে।

১৯. কীভাবে আমরা প্রমাণ করি যে, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঈশ্বর “ন্যায়বিচার করিবেন”?

১৯ আমাদের যেমন মনে আছে যে, যিশু জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে এই বিশ্বাস পাইবেন?” তাঁর এই আগ্রহজনক প্রশ্নের উত্তরটা কী? আমরা কতই না সুখী যে, আজকে সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ যিহোবার বিশ্বস্ত দাস তাদের প্রার্থনা, ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে প্রমাণ দিচ্ছে যে, তাদের এই বিশ্বাস রয়েছে! তাই, যিশুর প্রশ্নের উত্তর হাঁ-সূচকভাবে দেওয়া যেতে পারে। হ্যাঁ, বর্তমানে শয়তানের জগৎ আমাদের ওপর যে-অবিচার নিয়ে আসছে, তা সত্ত্বেও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ঈশ্বর “আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে ন্যায়বিচার করিবেন।”

[পাদটীকা]

^ এই দৃষ্টান্তের অর্থ পূর্ণরূপে বোঝার জন্য লূক ১৭:২২-৩৩ পদ পড়ুন। লূক ১৭:২২, ২৪, ৩০ পদে উল্লেখিত ‘মনুষ্যপুত্ত্র’ কীভাবে লূক ১৮:৮ পদে উত্থাপিত প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তা লক্ষ করুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কোন কারণে কিছু খ্রিস্টান বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে?

• যিহোবার বিচারের দিন আসার ব্যাপারে কেন আমরা দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারি?

• প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকার কোন কারণগুলো আমাদের রয়েছে?

• কীভাবে বার বার প্রার্থনা করা আমাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলাকে রোধ করতে সাহায্য করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিধবা ও বিচারকর্তা সম্বন্ধীয় দৃষ্টান্ত দ্বারা কী তুলে ধরা হয়েছে?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আজকে লক্ষ লক্ষ লোক বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর “ন্যায়বিচার করিবেন”