সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আফ্রিকান ভাষায় বাইবেল উৎপাদনে বিভিন্ন মাইলফলক

আফ্রিকান ভাষায় বাইবেল উৎপাদনে বিভিন্ন মাইলফলক

আফ্রিকান ভাষায় বাইবেল উৎপাদনে বিভিন্ন মাইলফলক

 ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার আন্তরিক বাইবেল পাঠকরা দীর্ঘদিন ধরেই আফ্রিকার লোকেদের জন্য তাদের নিজ নিজ ভাষায় বাইবেল পড়তে পারার প্রয়োজন সম্বন্ধে উপলব্ধি করেছে। এই মহৎ উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে অনেক মানুষ আফ্রিকার বিভিন্ন ভাষা শিখতে আফ্রিকায় পাড়ি জমিয়েছিল। কেউ কেউ সেই ভাষাগুলোকে এক লেখ্য রূপ দান করেছিল ও বিভিন্ন অভিধান উৎপাদন করেছিল। এরপর, তারা আফ্রিকার বিভিন্ন ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে শুরু করেছিল। এটা সহজ কাজ ছিল না। “একজন ব্যক্তিকে হয়তো এমনকি সবচেয়ে সরল ও সবচেয়ে মৌলিক খ্রিস্টীয় ধারণাগুলোর জন্য সঠিক আখ্যা খুঁজে পেতে বছরের পর বছর ধরে অনুসন্ধান করতে হয়,” দ্যা ক্যামব্রিজ হিসটোরি অভ্‌ দ্যা বাইবেল ব্যাখ্যা করে।

১৮৫৭ সালে সোয়ানা লোকেরা সবচেয়ে প্রথমে এমন এক ভাষায় সম্পূর্ণ বাইবেলের অনুবাদ পেয়েছিল, যে-ভাষাটা আগে আফ্রিকার কথ্য ভাষাগুলোর মধ্যে একটা ছিল। * এটি একটি বই হিসেবে নয়, বরং বিভিন্ন খণ্ডে মুদ্রণ ও বাঁধাই করা হয়েছিল। পরে আফ্রিকার বিভিন্ন ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে দেখা গিয়েছিল। এই প্রাচীন আফ্রিকান অনুবাদগুলোর বেশ কয়েকটাতে, ইব্রীয় শাস্ত্র বা “পুরাতন নিয়ম” এবং খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র বা “নূতন নিয়ম” দুটোর মধ্যেই ঈশ্বরের নাম যিহোবা উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু, পুনর্সংশোধিত ও নতুন অনুবাদগুলো এমন ব্যক্তিদের দ্বারা উৎপাদিত হয়েছিল, যারা বাইবেলের গ্রন্থকার যিহোবার পবিত্র নামকে সম্মান করত না। এর পরিবর্তে, তারা ঐশিক নামের জায়গায় ঈশ্বর বা প্রভুর মতো উপাধিগুলো বসানোর কুসংস্কারাচ্ছন্ন যিহুদি পরম্পরাগত রীতিকে অনুসরণ করেছিল। তাই, আফ্রিকায় যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে তাদের জন্য এমন এক বাইবেল অনুবাদের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল, যেটি সেই ঐশিক নামকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে।

১৯৮০-র দশক থেকে যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠী পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল আফ্রিকার বেশ কয়েকটা প্রধান ভাষায় অনুবাদ করার জন্য সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা করেছে। ফলে, আজকে আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যারা বাইবেলকে ভালবাসে, তারা তাদের মাতৃভাষায় নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল পড়তে পারে। এই পর্যন্ত নতুন জগৎ অনুবাদ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আফ্রিকার স্থানীয় ১৭টা ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে।

আফ্রিকান ভাষার বাইবেলের এই পাঠকরা এমন এক অনুবাদ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত, যেটি ঈশ্বরের মহিমান্বিত নাম যিহোবা ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, যিশু যখন নাসরতের সমাজগৃহে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন তিনি যিশাইয়ের গুটানো লিপির এমন একটি অংশ পড়ার দ্বারা তাঁর দায়িত্ব সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন, যেখানে তাঁর পিতার নাম পাওয়া যায়। (যিশাইয় ৬১:১, ২, NW) লূকের সুসমাচার অনুসারে, নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি)-এ যেমন অনুবাদ করা হয়েছে, যিশু পড়েছিলেন: “যিহোবার আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কারণ যিহোবা আমাকে অভিষিক্ত করেছেন, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার জন্য; তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, বন্দিদের কাছে মুক্তি প্রচার করার জন্য, অন্ধদের কাছে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার বিষয় প্রচার করার জন্য, উপদ্রুতদের নিস্তার করে বিদায় করার জন্য, যিহোবার প্রসন্নতার বছর ঘোষণা করার জন্য।”—লূক ৪:১৮, ১৯.

২০০৫ সালের আগস্ট মাসে আফ্রিকান ভাষায় বাইবেল উৎপাদন আরেকটা মাইলফলক স্পর্শ করেছিল। সেই মাসে যিহোবার সাক্ষিদের দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা অফিসে, আফ্রিকায় প্রচলিত ভাষাগুলোতে নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলের ৭৬,০০০রেরও বেশি কপি মুদ্রণ ও বাঁধাই করা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে সোনা ভাষায় ৩০,০০০ বাইবেল ছিল। জিম্বাবোয়েতে যিহোবার সাক্ষিদের “ঈশ্বরীয় বাধ্যতা” সম্মেলনগুলোতে এই সংস্করণটি প্রকাশিত হয়েছিল।

সেই স্মরণীয় মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা অফিসে আসা দর্শনার্থীরা আফ্রিকার নতুন নতুন ভাষায় এই বাইবেল উৎপাদন করা দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছিল। “আমি সোনা ভাষা এবং আফ্রিকার অন্যান্য ভাষায় নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল উৎপাদনে অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়ে খুবই আনন্দিত ও রোমাঞ্চিত ছিলাম,” লাংলা নামে বেথেল পরিবারের একজন সদস্য বলেছিলেন, যিনি বাঁধাই বিভাগে কাজ করেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার পুরো বেথেল পরিবারের অনুভূতিই প্রকাশ করেন।

আগে যখন বিদেশে উৎপাদন ও সেখান থেকে আনা হতো, তার চেয়ে এখন আরও দ্রুত ও কম খরচে নতুন নতুন বাইবেল আফ্রিকার লোকেদের কাছে পৌঁছে যাবে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আফ্রিকার লোকেদের কাছে এখন সহজেই প্রাপ্তিসাধ্য এক নির্ভুল অনুবাদ রয়েছে, যেটি বাইবেলের সর্বমহান গ্রন্থকার যিহোবা ঈশ্বরের পবিত্র নামকে ব্যবহার করে।

[পাদটীকা]

^ ১৮৩৫ সালের মধ্যে মাদাগাস্কারের মালাগাসি ভাষায় আর ১৮৪০ সালের মধ্যে ইথিওপিয়ার আম্‌হারিক ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছিল। এই ভাষাগুলোতে বাইবেল অনুবাদিত হওয়ার বহু আগে থেকেই এই ভাষাগুলো লেখ্য রূপে বিদ্যমান ছিল।

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৮৪০ সালে প্রকাশিত একটি সোয়ানা বাইবেলে ঈশ্বরের নাম

[সৌজন্যে]

Harold Strange Library of African Studies

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

সোয়াজিল্যান্ড থেকে আসা দর্শনার্থীরা দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা অফিসে উৎপাদিত নতুন বাইবেলগুলো দেখছে