যিশাইয় বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
যিহোবার বাক্য জীবন্ত
যিশাইয় বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো
যিশাইয় একজন ভাববাদী হিসেবে বিশ্বস্তভাবে তার দায়িত্ব পালন করছেন। ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের বিরুদ্ধে তিনি যে-ঘোষণাগুলো করেছিলেন, সেগুলো ইতিমধ্যেই সত্য হয়েছে। এখন যিরূশালেমের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তার আরও কথা বলার আছে।
যিরূশালেম নগরী ধ্বংস হবে এবং এখানকার অধিবাসীদের বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু, এই জনশূন্য অবস্থা স্থায়ী হবে না। কিছু সময় পর সত্য উপাসনাকে পুনর্স্থাপন করা হবে। এটাই হল যিশাইয় ৩৬:১–৬৬:২৪ পদের মূল বার্তা। * এই অধ্যায়গুলোতে যা বলা হয়েছে, তা বিবেচনা করার দ্বারা আমরা উপকার লাভ করতে পারি কারণ এই বিভাগের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সময়ে বৃহৎ আকারে বা চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা লাভ করছে অথবা নিকট ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ হবে। যিশাইয় বইয়ের এই অংশে মশীহ সম্বন্ধেও রোমাঞ্চকর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো রয়েছে।
“দেখ, এমন সময় আসিতেছে”
(যিশাইয় ৩৬:১–৩৯:৮)
রাজা হিষ্কিয়ের রাজত্বের ১৪তম বছরে (সা.কা.পূ. ৭৩২ সাল) অশূরীয়রা যিহূদাকে আক্রমণ করে। যিহোবা যিরূশালেমকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেন। আক্রমণের হুমকি তখনই শেষ হয়, যখন যিহোবার একজন দূত একাই ১,৮৫,০০০ অশূরীয় সৈন্যকে হত্যা করেন।
হিষ্কিয় অসুস্থ হয়ে পড়েন। যিহোবা তার প্রার্থনার উত্তর দেন ও তাকে সুস্থ করে তোলেন আর তার আয়ু আরও ১৫ বছর বাড়িয়ে দেন। বাবিলের রাজা যখন তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য দূতদের পাঠান, তখন হিষ্কিয় বোকার মতো তাদেরকে তার সমস্ত সম্পদ দেখিয়ে দেন। যিশাইয় হিষ্কিয়ের কাছে যিহোবার বার্তা জানান, এই কথা বলেন: “দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যখন তোমার বাটীতে যাহা কিছু আছে, এবং তোমার পিতৃপুরুষদের সঞ্চিত যাহা যাহা অদ্য পর্য্যন্ত রহিয়াছে, সকলই বাবিলে নীত হইবে।” (যিশাইয় ৩৯:৫, ৬) ১০০ বছরের চেয়ে আরেকটু বেশি সময় পর সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৩৮:৮—সেই ‘ধাপগুলি’ কী ছিল, যেগুলোর ওপর ছায়া সরে যেত? যেহেতু সা.কা.পূ. অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে মিশর ও বাবিল দুই জায়গাতে সূর্যঘড়ির ব্যবহার ছিল, তাই এই ধাপগুলো একটা সূর্যঘড়ির ডিগ্রিকে বোঝাতে পারে, যা হিষ্কিয়ের বাবা আহস হয়তো অর্জন করেছিলেন। অথবা হতে পারে যে, রাজপ্রাসাদের ভিতরে একটা সোপান বা সিঁড়ি ছিল। সোপানের পাশের একটা স্তম্ভের জন্য ক্রমান্বয়ে ধাপগুলোর ওপর ছায়া পড়ত, যা সময় নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হতো।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৩৬:২, ৩, ২২. যদিও অধ্যক্ষপদ থেকে শিব্নকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তার স্থলাভিষিক্ত অধ্যক্ষের জায়গায় যিশাইয় ২২:১৫, ১৯) যিহোবার সংগঠনে কোনো কারণে যদি আমাদের দায়িত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে তিনি আমাদেরকে যেকোনো পদে সেবা করার সুযোগ দিন না কেন, আমাদের কি ঈশ্বরকে সেবা করে চলা উচিত নয়?
তাকে একজন লেখক বা সচিব হিসেবে রাজাকে সেবা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। (৩৭:১, ১৪, ১৫; ৩৮:১, ২. বিভিন্ন দুর্দশার সময়ে প্রার্থনায় যিহোবার শরণাপন্ন হয়ে ও তাঁর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রেখে আমরা বিজ্ঞ হই।
৩৭:১৫-২০; ৩৮:২, ৩. যিরূশালেম যখন অশূরীয়দের হুমকির মুখে ছিল, তখন হিষ্কিয়ের প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল যে, যিরূশালেমের ধ্বংস যিহোবার নামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসবে। হিষ্কিয় তার অসুস্থতার কারণে মারা যাবেন, এই বিষয়টা জেনে তার চিন্তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর মধ্যেই সীমিত ছিল না। যে-বিষয়টা তার মনকে আরও ভারগ্রস্ত করেছিল তা ছিল যে, কোনো উত্তরাধিকারী না রেখেই তার মৃত্যু হলে, সেটা দায়ূদের বংশের রাজাদের ধারাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে। এ ছাড়া, অশূরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কে নেতৃত্ব দেবে, সেই বিষয়েও তিনি চিন্তিত ছিলেন। হিষ্কিয়ের মতো আমরাও আমাদের নিজস্ব পরিত্রাণের চেয়ে যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ ও তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করব।
৩৮:৯-২০. হিষ্কিয়ের এই গান আমাদের শিক্ষা দেয় যে, জীবনে যিহোবাকে প্রশংসা করতে সমর্থ হওয়ার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই।
“সে পুনর্নির্ম্মিত হইবে”
(যিশাইয় ৪০:১–৫৯:২১)
যিরূশালেমের ধ্বংস এবং এর ফলস্বরূপ বাবিলে বন্দিত্বে যাওয়ার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার পর পরই যিশাইয় পুনর্স্থাপন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। (যিশাইয় ৪০:১, ২) “সে [যিরূশালেম] পুনর্নির্ম্মিত হইবে,” যিশাইয় ৪৪:২৮ পদ বলে। বাবিলীয় দেবতাদের প্রতিমাগুলোকে, “যাহাদিগকে তুলিয়া লইয়া বেড়াইতে” হয় এমন জিনিসের মতো বহন করা হবে। (যিশাইয় ৪৬:১) বাবিল ধ্বংস হয়ে যাবে। দুই শতাব্দী পর এই সমস্তকিছু সত্য হয়।
যিহোবা তাঁর দাসকে “জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ” করবেন। (যিশাইয় ৪৯:৬) বাবিলীয় “আকাশমণ্ডল” বা শাসক শ্রেণী “ধূমের ন্যায় অন্তর্হিত” হবে এবং তার প্রজারা “কীটের মত মারা পড়বে” (বাংলা জুবিলী বাইবেল); কিন্তু ‘বন্দি সিয়োন-কন্যে তাহার গ্রীবার বন্ধন সকল খুলিয়া ফেলিবে।’ (যিশাইয় ৫১:৬; ৫২:২) যারা তাঁর কাছে আসে এবং কথা শোনে, তাদেরকে যিহোবা বলেন: “আমি তোমাদের সহিত এক নিত্যস্থায়ী নিয়ম করিব, দায়ূদের [প্রতি কৃত] অটল দয়া স্থির করিব।” (যিশাইয় ৫৫:৩) ঈশ্বরের ধার্মিক চাহিদাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা ‘সদাপ্রভুতে আমোদিত হইবার’ দিকে পরিচালিত করে। (যিশাইয় ৫৮:১৩, ১৪) অন্যদিকে, লোকেদের অপরাধ সকল ‘তাহাদের ঈশ্বরের সহিত তাহাদের বিচ্ছেদ জন্মায়।’—যিশাইয় ৫৯:২.
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৪০:২৭, ২৮—কেন ইস্রায়েল বলেছিল: “আমার পথ সদাপ্রভু হইতে লুক্কায়িত, আমার বিচার আমার ঈশ্বর হইতে সরিয়া গিয়াছে?” বাবিলে কিছু যিহুদি হয়তো ভেবেছিল যে, তারা যে-অন্যায় ভোগ করছিল, তা যিহোবার কাছে লুক্কায়িত ছিল বা তিনি তা দেখছিলেন না। তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, বাবিল পৃথিবীর সেই সৃষ্টিকর্তার নাগালের বাইরে ছিল না, যিনি ক্লান্ত বা শ্রান্ত হন না।
৪৩:১৮-২১—ফিরে আসা বন্দিদের কেন ‘পূর্ব্বকার কার্য্য সকল মনে না করিতে’ বলা হয়েছিল? এটা এই অর্থে ছিল না যে, অতীতে যিহোবার কৃত উদ্ধার কাজগুলো তাদের ভুলে যাওয়া উচিত। এর পরিবর্তে, যিহোবা চেয়েছিলেন তারা যে “এক নূতন কার্য্য” উপভোগ করবে, সেটার ভিত্তিতে তারা যেন তাঁর প্রশংসা করে, যেমন সম্ভবত আরও সরাসরি মরু পথের ওপর দিয়ে যিরূশালেমে তাদের নিরাপদ যাত্রার বিষয়। “মহাক্লেশের মধ্য হইতে” আসা ‘বিস্তর লোকেরও’ যিহোবাকে গৌরব করার নতুন ও ব্যক্তিগত কারণ থাকবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪.
৪৯:৬—কীভাবে মশীহ “জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ,” এমনকি যদিও তাঁর পার্থিব পরিচর্যা শুধু ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে সীমিত ছিল? যিশুর মৃত্যুর পর যা ঘটেছিল, সেই কারণে এমনটা বলা যায়। যিশাইয় ৪৯:৬ পদ তাঁর শিষ্যদের প্রতি প্রযোজ্য। (প্রেরিত ১৩:) আজকে, উপাসকদের এক বিস্তর লোকের দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা “জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ” কাজ করে আর “পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত” লোকেদেরকে জ্ঞানালোকিত করছে।— ৪৬, ৪৭মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.
৫৩:১১—সেই জ্ঞান কী, যেটার মাধ্যমে মশীহ “অনেককে ধার্ম্মিক করিবেন”? এটা হচ্ছে সেই জ্ঞান, যা যিশু পৃথিবীতে এসে, একজন মানুষ হয়ে এবং মৃত্যু পর্যন্ত অন্যায়ভাবে কষ্টভোগ করার দ্বারা অর্জন করেছেন। (ইব্রীয় ৪:১৫) এভাবে তিনি এক মুক্তির মূল্য জুগিয়েছিলেন, যেটা অভিষিক্ত খ্রিস্টান ও বিস্তর লোকের জন্য ঈশ্বরের সম্মুখে ধার্মিক হতে বা এক ধার্মিক মান অর্জনে সাহায্য করতে আবশ্যক ছিল।—রোমীয় ৫:১৯; যাকোব ২:২৩, ২৫.
৫৬:৬—“বিজাতি-সন্তানগণ” কারা আর কোন কোন দিক দিয়ে তারা “[সদাপ্রভুর] নিয়ম দৃঢ় করিয়া রাখে”? “বিজাতি-সন্তানগণ” হচ্ছে যিশুর “আরও মেষ।” (যোহন ১০:১৬) তারা এই অর্থে নতুন নিয়ম বা চুক্তি দৃঢ় করে রাখে যে, তারা চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আইনগুলোর বাধ্য হয়, এটার মাধ্যমে আয়োজিত ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মতো একই আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করে এবং রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে তাদেরকে সমর্থন করে।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৪০:১০-১৪, ২৬, ২৮. যিহোবা হলেন পরাক্রমী ও কোমল, সর্বশক্তিমান ও সর্ববিজ্ঞ এবং আমরা যতখানি কল্পনা করতে পারি তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন।
৪০:১৭, ২৩; ৪১:২৯; ৪৪:৯; ৫৯:৪. রাজনৈতিক মৈত্রীবন্ধন ও প্রতিমাগুলো হচ্ছে ‘অবস্তু।’ এগুলোর ওপর নির্ভর করা একেবারেই মূল্যহীন।
৪২:১৮, ১৯; ৪৩:৮. ঈশ্বরের লিখিত বাক্যের প্রতি চোখ বন্ধ করে রাখা এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ মাধ্যমে জোগানো তাঁর নির্দেশনার প্রতি কান বন্ধ করে রাখা হচ্ছে আধ্যাত্মিকভাবে অন্ধ ও বধির হয়ে যাওয়া।—মথি ২৪:৪৫.
৪৩:২৫. যিহোবা তাঁর নিজের অনুরোধে অধর্ম সকল মার্জনা বা দূর করেন। যিহোবার নামের পবিত্রীকরণের বিষয়টা, পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে আমাদের মুক্তি লাভ এবং জীবন অর্জন করার চেয়েও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৪৪:৮. আমাদের প্রতি যিহোবার সমর্থন রয়েছে, যিনি শৈলের মতো স্থায়ী ও দৃঢ়। তাঁর ঈশ্বরত্বের বিষয়ে সাক্ষ্য বহন করতে আমাদের কখনোই ভয় পাওয়া উচিত নয়!—২ শমূয়েল ২২:৩১, ৩২.
৪৪:১৮-২০. প্রতিমাপূজা হচ্ছে হৃদয়ের কলুষতার লক্ষণ। কোনোকিছুই যেন আমাদের হৃদয়ে যিহোবার স্থানকে দখল করে না নেয়।
৪৬:১০, ১১. ‘তাঁহার মন্ত্রণাকে স্থির রাখিবার’ ক্ষমতা অর্থাৎ তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করাই হচ্ছে যিহোবার ঈশ্বরত্বের নিশ্চিত প্রমাণ।
৪৮:১৭, ১৮; ৫৭:১৯-২১. যদি আমরা পরিত্রাণের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করি, তাঁর নিকটবর্তী হই এবং তাঁর আজ্ঞাগুলোতে মনোযোগ দিই, তা হলে আমাদের শান্তি প্রবাহমান নদীর জলের ন্যায় অঢেল এবং আমাদের ধার্মিক কাজগুলো সমুদ্রের তরঙ্গের ন্যায় অপরিমেয় হবে। যারা ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি একটুও মনোযোগ দেয় না, তারা হল “আলোড়িত সমুদ্রের” তুল্য। তাদের কোনো শান্তিই নেই।
৫২:৫, ৬. বাবিলীয়রা ভুলভাবে এই উপসংহারে পৌঁছেছিল যে, সত্য ঈশ্বর হলেন দুর্বল। তারা বুঝতে পারেনি যে, ইস্রায়েলের দাসত্বে যাওয়ার পিছনে কারণ হচ্ছে যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। যখন অন্যদের ওপর কোনো দুর্দশা আসে, তখন আমরা এর কারণ আসলে কী, সেই বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে কোনো উপসংহারে না পৌঁছে বিজ্ঞ হই।
৫২:৭-৯; ৫৫:১২, ১৩. রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে আনন্দের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পিছনে আমাদের অন্তত তিনটে কারণ রয়েছে। যে-নম্র ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত, তাদের প্রতি আমাদের চরণ শোভা পায়। আমরা যিহোবাকে ‘প্রত্যক্ষ দেখি’ বা তাঁর সঙ্গে আমাদের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া, আমরা আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি উপভোগ করি।
৫২:১১, ১২. ‘সদাপ্রভুর পাত্রবাহক’—পবিত্র সেবার
জন্য তাঁর আয়োজনগুলোর অংশী—হওয়ার যোগ্য হতে হলে আমাদের অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে ও নৈতিকভাবে বিশুদ্ধ হতে হবে।৫৮:১-১৪. ভক্তি ও ধার্মিকতার কপট প্রদর্শন নিষ্ফল। সত্য উপাসকদের ঈশ্বরীয় ভক্তির অকৃত্রিম প্রকাশ ও ভ্রাতৃপ্রেমের কাজে উপচে পড়া উচিত।—যোহন ১৩:৩৫; ২ পিতর ৩:১১.
৫৯:১৫খ-১৯. যিহোবা মানুষের কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাঁর নিরূপিত সময়ে তাতে হস্তক্ষেপ করেন।
সে “ভূষণার্থক মুকুট . . . হইবে”
(যিশাইয় ৬০:১–৬৬:২৪)
প্রাচীনকালে ও সেইসঙ্গে আমাদের সময়ে সত্য উপাসনার পুনর্স্থাপনের বিষয়ে যিশাইয় ৬০:১ পদ বলে: “উঠ, দীপ্তিমতী হও, কেননা তোমার দীপ্তি উপস্থিত, সদাপ্রভুর প্রতাপ তোমার উপরে উদিত হইল।” সিয়োন “সদাপ্রভুর হস্তস্থিত ভূষণার্থক মুকুট . . . হইবে।”—যিশাইয় ৬২:৩.
যিশাইয় যিহোবার কাছে তার দেশের সেই লোকেদের পক্ষে প্রার্থনা করেন, যারা বাবিলে নির্বাসিত থাকার সময়ে অনুতপ্ত হবে। (যিশাইয় ৬৩:১৫–৬৪:১২) সত্য দাস ও মিথ্যা দাসদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য দেখানোর পর সেই ভাববাদী ঘোষণা করেন যে, কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করবেন, যারা তাঁকে সেবা করে।—যিশাইয় ৬৫:১–৬৬:২৪.
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৬১:৮, ৯—“চিরস্থায়ী এক নিয়ম” বা চুক্তি কী আর “বংশ” কারা? এটা হল সেই নতুন চুক্তি, যা যিহোবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সঙ্গে সম্পাদন করেছেন। “বংশ” হচ্ছে “আরও মেষ”—সেই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা, যারা অভিষিক্তদের বার্তার প্রতি সাড়া দেয়।—যোহন ১০:১৬.
৬৩:৫—ঈশ্বরের কোপ কীভাবে তাঁকে তুলে ধরে বা সমর্থন করে? ঈশ্বরের কোপ হল এক নিয়ন্ত্রিত আবেগ—তাঁর ধার্মিক ক্রোধ। তাঁর কোপ তাঁকে তাঁর ধার্মিক বিচার সম্পাদন করতে সমর্থন করে ও প্রেরণা দেয়।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৬৪:৬.অসিদ্ধ মানুষেরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সময়, তাদের ধার্মিক কাজগুলো ময়লা বস্ত্রের চেয়ে বেশি কিছু হয় না।—রোমীয় ৩:২৩, ২৪.
৬৫:১৩, ১৪. যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের আশীর্বাদ করেন, প্রচুররূপে তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করেন।
৬৬:৩-৫. যিহোবা কপটতাকে ঘৃণা করেন।
‘তোমরা আমোদ কর’
পুনর্স্থাপনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বাবিলে নির্বাসিত বিশ্বস্ত যিহুদিদের কাছে নিশ্চয়ই কতই না সান্ত্বনাদায়ক ছিল! যিহোবা বলেছিলেন, “আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর; কারণ দেখ, আমি যিরূশালেমকে উল্লাসভূমি ও তাহার প্রজাদিগকে আনন্দ-ভূমি করিয়া সৃষ্টি করি।”—যিশাইয় ৬৫:১৮.
আমরাও এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন অন্ধকার পৃথিবীকে এবং ঘোর তিমির জাতিগণকে আচ্ছন্ন করে। (যিশাইয় ৬০:২) এখন “বিষম সময়” উপস্থিত। (২ তীমথিয় ৩:১) তাই, বাইবেলের যিশাইয় বইয়ে দেওয়া যিহোবার পরিত্রাণের বার্তা আমাদের জন্য প্রচুর উৎসাহজনক।—ইব্রীয় ৪:১২.
[পাদটীকা]
^ যিশাইয় ১:১–৩৫:১০ পদের ওপর আলোচনার জন্য ২০০৬ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “যিহোবার বাক্য জীবন্ত—যিশাইয় বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো” শিরোনামের প্রবন্ধটি দেখুন।
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
কেন হিষ্কিয় অশূরীয়দের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, তার মূল কারণটা কি আপনি জানেন?
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
“আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে সুসমাচার প্রচার করে”