সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার উপলব্ধি বৃদ্ধি করাকে কখনো থামাবেন না

আপনার উপলব্ধি বৃদ্ধি করাকে কখনো থামাবেন না

আপনার উপলব্ধি বৃদ্ধি করাকে কখনো থামাবেন না

“হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান। তাহার সমষ্টি কেমন অধিক!”—গীতসংহিতা ১৩৯:১৭.

১, ২. কেন আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি উপলব্ধি দেখানো উচিত এবং কীভাবে গীতরচক তার উপলব্ধি প্রকাশ করেছিলেন?

 এটি ছিল এক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। যিরূশালেমে যিহোবার মন্দির মেরামত করার সময়ে মহাযাজক হিল্কিয় “মোশি দ্বারা দত্ত সদাপ্রভুর ব্যবস্থাপুস্তকখানি,” পেয়েছিলেন, যে-মূল কপিটি নিঃসন্দেহে প্রায় ৮০০ বছর আগে সম্পূর্ণ করা হয়েছিল! আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, ঈশ্বরভয়শীল রাজা যোশিয় কেমন বোধ করেছিলেন, যখন সেই বইটি তার সামনে রাখা হয়েছিল? বাস্তবিকপক্ষে, তিনি সেটিকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে শাফন লেখককে তা জোরে জোরে পড়তে বলেছিলেন।—২ বংশাবলি ৩৪:১৪-১৮.

আজকে লক্ষ লক্ষ লোক ঈশ্বরের বাক্য পুরোটা বা আংশিকভাবে পড়তে পারে। কিন্তু, এটা কি শাস্ত্রকে কম মূল্যবান, কম গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে? অবশ্যই না! সর্বোপরি, এতে স্বয়ং সর্বশক্তিমানের চিন্তাভাবনা রয়েছে, যা আমাদের উপকারের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১৬) ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করে গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান। তাহার সমষ্টি কেমন অধিক!”—গীতসংহিতা ১৩৯:১৭.

৩. কী দেখায় যে, দায়ূদ গভীর আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন?

যিহোবা, তাঁর বাক্য ও সত্য উপাসনার জন্য তাঁর ব্যবস্থার প্রতি দায়ূদের উপলব্ধি কখনো হ্রাস পায়নি। দায়ূদ যে-অনেক চমৎকার গীত রচনা করেছেন, সেগুলো প্রকাশ করে যে তিনি কেমন বোধ করতেন। উদাহরণস্বরূপ গীতসংহিতা ২৭:৪ পদে তিনি লিখেছিলেন: “সদাপ্রভুর কাছে আমি একটী বিষয় যাচ্ঞা করিয়াছি, তাহারই অন্বেষণ করিব, যেন জীবনের সমুদয় দিন সদাপ্রভুর গৃহে বাস করি, সদাপ্রভুর সৌন্দর্য্য দেখিবার ও তাঁহার মন্দিরে [“উপলব্ধি সহকারে,” NW] অনুসন্ধান করিবার জন্য।” মূল ইব্রীয় ভাষায় “উপলব্ধি সহকারে অনুসন্ধান করিবার” অভিব্যক্তিটির অর্থ হচ্ছে, ধ্যানে মগ্ন থাকা, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা, সুখ, আনন্দ ও শ্রদ্ধাবোধ সহকারে দেখা। স্পষ্টতই, দায়ূদ এক গভীর আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন, যিনি সত্যিই যিহোবার আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোকে উপলব্ধি করতেন এবং ঈশ্বরের দ্বারা প্রকাশিত আধ্যাত্মিক সত্যের প্রতিটা অংশকে উপভোগ করতেন। তার উপলব্ধির উদাহরণ অনুকরণযোগ্য।—গীতসংহিতা ১৯:৭-১১.

বাইবেলের সত্য জানার বিশেষ সুযোগের প্রতি উপলব্ধি দেখান

৪. কোন বিষয়টা যিশুকে “পবিত্র আত্মায় উল্লাসিত” হতে পরিচালিত করেছিল?

ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করার বিষয়টা বুদ্ধিমত্তা অথবা জাগতিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করে না, যেগুলো গর্বকে জাগিয়ে তুলতে পারে। বরং, এটা ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার ওপর নির্ভর করে, যা তিনি সেইসমস্ত নম্র ও সৎহৃদয়ের লোকেদের দান করেন, যারা আত্মাতে দীনহীন বা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন। (মথি ৫:৩; ১ যোহন ৫:২০) যিশু যখন এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, কিছু অসিদ্ধ মানুষ স্বর্গে তাদের নাম লিখিয়েছে, তখন “তিনি পবিত্র আত্মায় উল্লাসিত হইলেন ও কহিলেন, হে পিতঃ, স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে এই সকল প্রকাশ করিয়াছ।”—লূক ১০:১৭-২১.

৫. কেন যিশুর শিষ্যদের কাছে রাজ্যের যে-সত্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল, সেগুলোকে তাদের হালকাভাবে নিতে হতো না?

সেই আন্তরিক প্রার্থনা করার পর, যিশু তাঁর শিষ্যদের দিকে ফিরে বলেছিলেন: “ধন্য সেই সকল চক্ষু, তোমরা যাহা যাহা দেখিতেছ, যাহারা তাহা দেখে। কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যাহা যাহা দেখিতেছ, তাহা অনেক ভাববাদী ও রাজা দেখিতে বাঞ্ছা করিয়াও দেখিতে পান নাই; এবং তোমরা যাহা যাহা শুনিতেছ, তাহা তাঁহারা শুনিতে বাঞ্ছা করিয়াও শুনিতে পান নাই।” হ্যাঁ, যিশু তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের রাজ্যের সেই মূল্যবান সত্যগুলোকে হালকাভাবে না নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন, যেগুলো তাদের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে। এই সত্যগুলো ঈশ্বরের দাসদের প্রাথমিক বংশের কাছে প্রকাশ করা হয়নি আর নিশ্চিতভাবেই সেগুলো যিশুর দিনের “বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের” কাছেও প্রকাশ করা হয়নি!—লূক ১০:২৩, ২৪.

৬, ৭. (ক) ঐশিক সত্যের জন্য উপলব্ধিপরায়ণ হওয়ার কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে? (খ) সত্য ও মিথ্যা ধর্মের মধ্যে আজকে কোন বৈসাদৃশ্য দেখা যায়?

আমাদের দিনে, ঐশিক সত্যের জন্য আরও বেশি উপলব্ধিপরায়ণ হওয়ার কারণ রয়েছে, যেহেতু যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে তাঁর লোকেদেরকে তাঁর বাক্য সম্বন্ধে আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন। (মথি ২৪:৪৫; দানিয়েল ১২:১০) শেষ সময় সম্বন্ধে ভাববাদী দানিয়েল লিখেছিলেন: “অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে।” (দানিয়েল ১২:৪) আপনি কি একমত নন যে, আজকে ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান “বৃদ্ধি” পেয়েছে এবং যিহোবার দাসেরা প্রচুররূপে আধ্যাত্মিক খাদ্যের সরবরাহ পাচ্ছে?

ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি এবং মহতী বাবিলের ধর্মীয় বিভ্রান্তির মধ্যে কী এক পার্থক্যই না আমরা দেখতে পাই! এর ফলে, মিথ্যা ধর্মের ব্যাপারে যারা হতাশ অথবা বিরক্ত এমন অনেক ব্যক্তি সত্য উপাসনার দিকে ফিরে আসছে। তারা হচ্ছে সেই মেষতুল্য ব্যক্তি, যারা ‘[মহতী বাবিলের] পাপ সকলের সহভাগী হয় না’ অথবা ‘উহার আঘাত সকল প্রাপ্ত হয় না।’ যিহোবা ও তাঁর দাসেরা এইসমস্ত ব্যক্তিকে সত্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমন্ত্রণ জানায়।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২-৪; ২২:১৭.

উপলব্ধিপরায়ণ ব্যক্তিরা দলে দলে ঈশ্বরের নিকটে আসছে

৮, ৯. কীভাবে আজকে হগয় ২:৭ পদের কথাগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে?

যিহোবা তাঁর উপাসনার আধ্যাত্মিক গৃহ সম্বন্ধে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পাম্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব।” (হগয় ২:৭) এই বিস্ময়কর ভবিষ্যদ্বাণী হগয়ের সময়ে একবার পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসা ঈশ্বরের লোকেরা যিরূশালেমে মন্দির পুনর্নিমাণ করেছিল। আজকে, যিহোবার মহান আত্মিক মন্দির সম্বন্ধে হগয়ের কথাগুলো আবারও পরিপূর্ণ হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ লোক “আত্মায় ও সত্যে” ঈশ্বরের উপাসনা করার জন্য দলে দলে রূপক মন্দিরের দিকে এসেছে আর প্রতি বছর হাজার হাজার “মনোরঞ্জন বস্তু সকল” ক্রমাগত স্রোতের ন্যায় আসছে। (যোহন ৪:২৩, ২৪) উদাহরণস্বরূপ, ২০০৬ সালের পরিচর্যা বছরের বিশ্বব্যাপী রিপোর্ট দেখায় যে, ২,৪৮,৩২৭ জন যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে বাপ্তাইজিত হয়েছে। এটা প্রতিদিন গড়ে ৬৮০ জন নতুন ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে! সত্যের প্রতি তাদের ভালবাসা এবং রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রমাণ দেয় যে, তারা সত্যিই যিহোবার দ্বারা আকর্ষিত হয়েছে।—যোহন ৬:৪৪, ৬৫.

১০, ১১. কীভাবে লোকেরা বাইবেলের সত্যকে উপলব্ধি করেছে, তা দেখানোর জন্য একটা অভিজ্ঞতা বলুন।

১০ এইরকম অনেক সৎহৃদয়ের ব্যক্তি সত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে কারণ তারা “ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ” বুঝতে পেরেছে। (মালাখি ৩:১৮) বিবাহিত এক দম্পতি ওয়েন এবং ভার্জিনিয়ার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন, যারা প্রটেস্টান্ট গির্জার সদস্য ছিল। তাদের এমন অনেক প্রশ্ন ছিল, যেগুলোর উত্তর তারা পায়নি। তারা যুদ্ধকে ঘৃণা করত এবং যখন তারা দেখেছিল যে, পাদরিরা সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আশীর্বাদ করছে, তখন তারা একইসঙ্গে বিভ্রান্ত এবং বিরক্ত হয়ে পড়েছিল। সেই দম্পতি যখন বৃদ্ধ হয়, তখন তারা গির্জার অন্যান্যদের দ্বারা অবহেলিত বোধ করে, যদিও ভার্জিনিয়া বেশ কয়েক বছর সানডে স্কুলে শিক্ষা দিয়েছিলেন। “কেউই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসত না অথবা আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের প্রতি আগ্রহও দেখাত না,” তারা বলে। “গির্জা কেবল আমাদের টাকাপয়সার প্রতিই আগ্রহী ছিল। আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম।” তারা এমনকি আরও হতাশ হয়ে পড়েছিল, যখন তাদের গির্জা সমকামিতার প্রতি প্রশ্রয়ী এক মনোভাব গড়ে তুলেছিল।

১১ ইতিমধ্যে, ওয়েন এবং ভার্জিনিয়ার নাতনি এবং পরে তাদের মেয়ে যিহোবার সাক্ষি হয়। যদিও এর জন্য ওয়েন এবং ভার্জিনিয়া প্রথমে দুঃখ পেয়েছিল কিন্তু পরে তারা তাদের মন পরিবর্তন করে এবং বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়। “মাত্র তিন মাসের মধ্যে” ওয়েন বলেন, “গত ৭০ বছরে আমরা যা না শিখেছিলাম, তার চেয়ে বেশি বাইবেল সম্বন্ধে শিখতে পেরেছি! আমরা কখনো জানতাম না যে, ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা আর আমরা রাজ্য ও পরমদেশ পৃথিবী সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না।” শীঘ্রই এই আন্তরিক দম্পতি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে ও পরিচর্যায় অংশ নিতে শুরু করে। “আমরা প্রত্যেককে সত্য সম্বন্ধে বলতে চাই,” ভার্জিনিয়া বলেন। ২০০৫ সালে উভয়ের বয়স যখন ৮০র কোঠায়, তখন তারা বাপ্তিস্ম নেয়। “আমরা সত্য খ্রিস্টীয় বাড়ি খুঁজে পেয়েছি,” তারা বলে।

“সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” হচ্ছেন বলে উপলব্ধি দেখান

১২. যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য সবসময় কী জোগান এবং উপকার পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১২ যিহোবা সবসময় তাঁর দাসদের তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য সাহায্য করেন। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে জাহাজ নির্মাণ করতে হবে—যে-প্রকল্প প্রথমবারেই একেবারে সঠিকভাবে করতে হবে—সেই সম্বন্ধে নোহ স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট নির্দেশনা পেয়েছিলেন। আর ঠিক সেভাবেই করা হয়েছিল। কেন? কারণ নোহ “সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।” (আদিপুস্তক ৬:১৪-২২) আজকেও যিহোবা তাঁর দাসদের তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত করেন। অবশ্য, আমাদের প্রধান কাজ হল, ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা এবং যোগ্য ব্যক্তিদের যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হতে সাহায্য করা। আর নোহের সময়ে যেমন সত্য ছিল, তেমনই আমাদের সফলতাও বাধ্যতার ওপর নির্ভর করে। যিহোবা তাঁর বাক্য ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে যে-নির্দেশনা দান করেন, তা আমাদের বাধ্যতার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.

১৩. কীসের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের প্রশিক্ষণ দেন?

১৩ সেই কাজ সম্পাদন করার জন্য আমাদেরকে আমাদের প্রধান হাতিয়ার—ঈশ্বরের বাক্য—“যথার্থরূপে ব্যবহার” করা শিখতে হবে, যা “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।” (২ তীমথিয় ২:১৫; ৩:১৬, ১৭) প্রথম শতাব্দীর মতো যিহোবা আমাদেরকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে অমূল্য প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরিচর্যায় আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য আজকে বিশ্বব্যাপী ৯৯,৭৭০টা মণ্ডলীতে প্রতি সপ্তাহে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় ও পরিচর্যা সভা হয়ে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই সভাগুলোতে নিয়মিতভাবে যোগ দিয়ে এবং যে-বিষয়গুলো শেখেন, সেগুলো প্রয়োগ করে আপনি কি সভাগুলোর প্রতি আপনার উপলব্ধি দেখান?—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

১৪. কীভাবে যিহোবার দাসেরা ঈশ্বরকে সেবা করার বিশেষ সুযোগের প্রতি তাদের উপলব্ধি দেখায়? (২৭-৩০ পৃষ্ঠায় দেওয়া তালিকার ওপর মন্তব্য অন্তর্ভুক্ত করুন।)

১৪ পরিচর্যায় আপ্রাণ চেষ্টা করার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের লক্ষ লক্ষ লোক তাদের গৃহীত প্রশিক্ষণের প্রতি উপলব্ধি দেখায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৬ সালের পরিচর্যা বছরে, ৬৭,৪১,৪৪৪ জন রাজ্য ঘোষণাকারী পরিচর্যা কাজের সমস্ত দিকে মোট ১৩৩,৩৯,৬৬,১৯৯ ঘন্টা ব্যয় করেছে, যার অন্তর্ভুক্ত হল ৬২,৮৬,৬১৮টা গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা। এগুলো হল মাত্র কিছু উৎসাহমূলক বর্ণনা, যেগুলো বিশ্বব্যাপী রিপোর্টে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আপনাকে এই রিপোর্ট ভাল করে দেখার এবং এটি থেকে উৎসাহ লাভ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, ঠিক যেমন আমাদের প্রথম শতাব্দীর ভাইয়েরা নিঃসন্দেহে তাদের সময়ের প্রচার কাজের প্রসার সম্বন্ধে রিপোর্ট শুনে অনেক উৎসাহ লাভ করেছিল।—প্রেরিত ১:১৫; ২:৫-১১, ৪১, ৪৭; ৪:৪; ৬:৭.

১৫. যিহোবাকে সমস্ত প্রাণ দিয়ে সেবা করার বিষয়ে কেন কারোরই নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়?

১৫ প্রতি বছর ঈশ্বরের কাছে যে-অসাধারণ প্রশংসাধ্বনি পৌঁছায়, তা যিহোবাকে জানার ও তাঁর সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার বিশেষ সুযোগের জন্য যিহোবার দাসদের যে-গভীর উপলব্ধি রয়েছে, সেটাকে প্রতিফলিত করে। (যিশাইয় ৪৩:১০) সত্যিই, আমাদের কিছু বয়স্ক, অসুস্থ অথবা অক্ষম ভাই ও বোনেরা যে-প্রশংসা বলি উৎসর্গ করে, তা বিধবার সেই সামান্য দানের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু, আসুন আমরা যেন ভুলে না যাই যে, যিহোবা ও তাঁর পুত্র সত্যিই সেইসমস্ত ব্যক্তির প্রতি উপলব্ধি দেখান, যারা সমস্ত প্রাণ দিয়ে ঈশ্বরকে সেবা করে, যখন তারা তাদের সাধ্যমতো সকলই করে থাকে।—লূক ২১:১-৪; গালাতীয় ৬:৪.

১৬. সাম্প্রতিক সময়ে ঈশ্বর শিক্ষা দেওয়ার কোন হাতিয়ারগুলো জুগিয়েছেন?

১৬ পরিচর্যার জন্য প্রশিক্ষণ ছাড়াও যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার চমৎকার হাতিয়ারগুলো দিয়ে সজ্জিত করেন। সাম্প্রতিক দশকে এর অন্তর্ভুক্ত এই বইগুলো, যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায়, আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন, জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে এবং সম্প্রতি বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? যারা সত্যিই এই বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায়, তারা পরিচর্যায় সেগুলো উত্তমরূপে ব্যবহার করে থাকে।

বাইবেল শিক্ষা দেয় বইটি উত্তমরূপে ব্যবহার করুন

১৭, ১৮. (ক) বাইবেল শিক্ষা দেয় বইয়ের কোন অংশটা আপনি আপনার পরিচর্যায় তুলে ধরতে চান? (খ) একজন সীমা অধ্যক্ষ বাইবেল শিক্ষা দেয় বই সম্বন্ধে কী লক্ষ করেছেন?

১৭ উনিশটা অধ্যায়, বিস্তারিত পরিশিষ্ট এবং স্পষ্ট ও সহজ ভাষাসহ বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইটি পরিচর্যায় এক আশীর্বাদ হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ১২ অধ্যায়টা এই বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে যে, “ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করা।” এই বিষয়বস্তু ছাত্রের কাছে ব্যাখ্যা করে যে, কীভাবে তিনি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারেন, যে-সম্বন্ধে অনেকেই এমনকি কখনো চিন্তাও করেনি বা সম্ভবপর বলেও মনে করে না। (যাকোব ২:২৩) এই বাইবেল অধ্যয়ন সহায়কটির প্রতি কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে?

১৮ অস্ট্রেলিয়ার একজন সীমা অধ্যক্ষ রিপোর্ট করেন যে, বাইবেল শিক্ষা দেয় বইটির এক “তাৎক্ষণিক আবেদন রয়েছে, যা দ্রুত গৃহকর্তাদের আলোচনার দিকে আকৃষ্ট করে।” তিনি আরও বলেন যে, এই বইটি ব্যবহার করা এত সহজ যে, এটি “অনেক রাজ্য প্রকাশকদের পুনরায় পরিচর্যায় আস্থা ও আনন্দ এনে দিয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অনেকে এই বইটিকে সোনার পিণ্ড বলে অভিহিত করে!”

১৯-২১. কিছু অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলুন, যেগুলো বাইবেল শিক্ষা দেয় বইয়ের মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরে।

১৯ “নিশ্চয়ই ঈশ্বর আপনাকে পাঠিয়েছেন,” গায়েনার একজন মহিলা তার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা এক অগ্রগামীকে বলেছিলেন। সেই মহিলার সঙ্গী সম্প্রতি তাকে ও তাদের ছোট্ট দুই সন্তানকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন। সেই অগ্রগামী বাইবেল শিক্ষা দেয় বইয়ের ১ অধ্যায়টা খোলেন এবং “আমরা যে-অবিচারগুলোর মুখোমুখি হই সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেন?” শিরোনামের নীচে ১১ অনুচ্ছেদটা জোরে জোরে পড়েন। “বিষয়বস্তু তাকে অনেক গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল,” অগ্রগামী বলেন। “আসলে, তিনি উঠে তার দোকানের পিছনে গিয়েছিলেন এবং অনেক কেঁদেছিলেন।” এই মহিলা স্থানীয় এক বোনের সঙ্গে নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছেন এবং ক্রমাগত উন্নতি করে যাচ্ছেন।

২০ স্পেনে বসবাসরত হোসে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রীকে হারান। তিনি মাদকদ্রব্যের মধ্যে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করেন ও সেইসঙ্গে ডাক্তারের কাছ থেকে সাহায্য লাভ করেন। কিন্তু, মনোবিজ্ঞানীরা সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি, যা হোসেকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিত: “কেন ঈশ্বর আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেলেন?” একদিন হোসের সঙ্গে ফ্রানচেস্কের সাক্ষাৎ হয়, যিনি একই কোম্পানির জন্য কাজ করতেন। ফ্রানচেস্ক তাকে বাইবেল শিক্ষা দেয় বইয়ের ১১ অধ্যায়টা আলোচনার জন্য প্রস্তাব দেন, যেটার শিরোনাম হল, “কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?” শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং শিক্ষক ও ছাত্রের দৃষ্টান্ত হোসেকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি আন্তরিকতা সহকারে অধ্যয়ন করতে শুরু করেন, সীমা সম্মেলনে যোগ দেন এবং এখন স্থানীয় কিংডম হলের সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছেন।

২১ পোল্যান্ডের রমান নামে ৪০ বছর বয়স্ক একজন ব্যবসায়ীর সবসময় ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি সম্মান রয়েছে। কিন্তু, তিনি তার কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, বাইবেল অধ্যয়নে তিনি কেবল একটা নির্দিষ্ট ধাপ পর্যন্ত উন্নতি করেছিলেন। তবে, তিনি একটা জেলা সম্মেলনে যোগ দেন এবং বাইবেল শিক্ষা দেয় বইয়ের একটি কপি পান। এরপর, তিনি লক্ষণীয় উন্নতি করেন। “এই বইয়ের মধ্যে,” তিনি বলেন, “বাইবেলের সমস্ত মৌলিক শিক্ষা একসঙ্গে এসে একটা জিগসো পাজেলের মতো একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করেছে বলে মনে হয়।” রমান এখন নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করেন এবং চমৎকার উন্নতি করছেন।

উপলব্ধিকে বৃদ্ধি করে চলুন

২২, ২৩. আমাদের সামনে যে-প্রত্যাশা রয়েছে, তার প্রতি কীভাবে আমরা উপলব্ধি দেখিয়ে চলতে পারি?

২২ রোমাঞ্চকর “মুক্তি সন্নিকট!” জেলা সম্মেলনে যেমন ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, সত্য খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত এবং যিশু খ্রিস্টের পাতিত রক্তের দ্বারা সম্ভবপর ‘অনন্ত মুক্তির’ জন্য উৎসুক। ‘আমরা যেন জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পারি’ সেইজন্য “মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে” ক্রমাগত শুচি করার চেয়ে এই মূল্যবান প্রত্যাশার প্রতি আমাদের আন্তরিক উপলব্ধি দেখানোর সর্বোত্তম উপায় আর নেই।—ইব্রীয় ৯:১২, ১৪.

২৩ হ্যাঁ, যখন আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবের চাপ অন্য সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি, তখন ষাট লক্ষেরও বেশি রাজ্য ঘোষণাকারী বিশ্বস্ততার সঙ্গে ঈশ্বরের সেবায় যে ধৈর্য ধরছে, তা সত্যিই এক অলৌকিক কাজ। এটা এও প্রমাণ দেয় যে, যিহোবার দাসেরা ঈশ্বরকে সেবা করার সম্মানকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে, তারা জানে যে, “প্রভুতে” তাদের “পরিশ্রম নিষ্ফল নয়।” সেই উপলব্ধি বৃদ্ধি করা যেন কখনো থেমে না যায়!—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮; গীতসংহিতা ১১০:৩.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বর ও তাঁর আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোর প্রতি উপলব্ধি সম্বন্ধে গীতরচক আমাদের কী শিক্ষা দেন?

• কীভাবে আজকে হগয় ২:৭ পদের কথাগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে?

• তাঁকে কার্যকারীভাবে সেবা করার জন্য যিহোবা কীভাবে তাঁর দাসদের সজ্জিত করেছেন?

• যিহোবার মঙ্গলভাবের প্রতি উপলব্ধি দেখানোর জন্য আপনি কী করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭-৩০ পৃষ্ঠার তালিকা]

২০০৬ বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের পরিচর্যা বছরের রিপোর্ট

(বাঁধাই করা খণ্ড দেখুন)

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত করেন