সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা হলেন একজন উপলব্ধিপরায়ণ ঈশ্বর

যিহোবা হলেন একজন উপলব্ধিপরায়ণ ঈশ্বর

যিহোবা হলেন একজন উপলব্ধিপরায়ণ ঈশ্বর

“ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.

১. কীভাবে যিহোবা মোয়াবীয়া রূতের প্রতি তাঁর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন?

 যিহোবা সেইসমস্ত ব্যক্তির প্রচেষ্টাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেন, যারা আন্তরিকভাবে তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য প্রচেষ্টা করে আর তিনি তাদেরকে প্রচুররূপে পুরস্কৃতও করেন। (ইব্রীয় ১১:৬) বিশ্বস্ত ব্যক্তি বোয়স ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের এই চমৎকার দিকের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন কারণ তিনি সেই মোয়াবীয়া রূৎকে এই কথা বলেছিলেন, যিনি প্রেমের সঙ্গে তার নিজের বিধবা শাশুড়ির যত্ন নিয়েছিলেন: ‘সদাপ্রভু তোমার কর্ম্মের উপযোগী ফল দিউন; সদাপ্রভু তোমাকে সম্পূর্ণ পুরস্কার দিউন।’ (রূতের বিবরণ ২:১২) ঈশ্বর কি রূৎকে আশীর্বাদ করেছিলেন? অবশ্যই! বস্তুতপক্ষে, তার কাহিনি বাইবেলেই লিপিবদ্ধ রয়েছে! অধিকন্তু, তিনি বোয়সকে বিয়ে করেছিলেন এবং রাজা দায়ূদ ও যিশু খ্রিস্ট উভয়েরই পূর্বপুরুষী হয়েছিলেন। (রূতের বিবরণ ৪:১৩, ১৭; মথি ১:৫, ৬, ১৬) এটা হল বাইবেলের অনেক উদাহরণের মধ্যে মাত্র একটা, যা যিহোবার দাসদের প্রতি তাঁর উপলব্ধিকে তুলে ধরে।

২, ৩. (ক) কোন বিষয়টা যিহোবার উপলব্ধিবোধের অভিব্যক্তিগুলোকে উল্লেখযোগ্য করে তোলে? (খ) কেন যিহোবা প্রকৃত উপলব্ধি প্রকাশ করতে সমর্থ? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

যিহোবা যদি উপলব্ধিবোধের অভাব দেখাতেন, তা হলে সেটাকে তিনি তাঁর পক্ষে অন্যায় বলে গণ্য করতেন। ইব্রীয় ৬:১০ পদ বলে: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং তোমরা পবিত্রগণের যে পরিচর্য্যা করিয়াছ ও করিতেছ, তদ্দ্বারা তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” যে-বিষয়টা এই উক্তিকে উল্লেখযোগ্য করে তোলে সেটা হচ্ছে যে, একনিষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রতি ঈশ্বর উপলব্ধি দেখিয়ে থাকেন, এমনকি যদিও তারা পাপী এবং তাঁর গৌরববিহীন হয়েছে।—রোমীয় ৩:২৩.

আমাদের অসিদ্ধতার কারণে আমরা হয়তো এইরকম মনে করতে পারি যে, আমাদের ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলো গুরুত্বহীন ও তা ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের অযোগ্য। কিন্তু, যিহোবা আমাদের উদ্দেশ্য ও পরিস্থিতিগুলো পুরোপুরি বুঝতে পারেন আর তিনি আমাদের সমস্ত প্রাণ দিয়ে করা সেবাকে সত্যিই মূল্যবান বলে গণ্য করেন। (মথি ২২:৩৭) উদাহরণস্বরূপ: একজন মা তার টেবিলের ওপর একটা উপহার—সস্তাদামের একটা গলার হার—দেখতে পান। উপহারটাকে তিনি হয়তো কম মূল্যবান হিসেবে দেখতে ও উপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু, এর সঙ্গে দেওয়া কার্ডটা দেখায় যে, উপহারটা তার ছোট্ট মেয়ের কাছ থেকে, যে সেটা কেনার জন্য তার নিজের সমস্ত জমানো টাকা খরচ করেছে। মা এখন উপহারটাকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেন। সম্ভবত সজল নয়নে তিনি তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরেন এবং তার আন্তরিক উপলব্ধি প্রকাশ করেন।

৪, ৫. উপলব্ধি দেখানোর ক্ষেত্রে যিশু কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করেছিলেন?

যেহেতু যিহোবা আমাদের উদ্দেশ্য ও সীমাবদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত আছেন, তাই যখন আমরা তাঁকে আমাদের সর্বোত্তমটা দিই, তখন তিনি সেটাকে উপলব্ধি করেন, তা ছোট বা বড় যা-ই হোক না কেন। এই ক্ষেত্রে, যিশু ছিলেন তাঁর পিতার এক নিখুঁত প্রতিফলন। বিধবার সামান্য দান সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ মনে করে দেখুন। “[যিশু] চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, ধনবানেরা ভাণ্ডারে আপন আপন দান রাখিতেছে। আর তিনি দেখিলেন, একটী দীনহীনা বিধবা সেই স্থানে দুইটী সিকি পয়সা রাখিতেছে; তখন তিনি কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই দরিদ্রা বিধবা সকলের অপেক্ষা অধিক রাখিল; কেননা ইহারা সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখিল, কিন্তু এ নিজ অনাটন সত্ত্বেও ইহার যাহা কিছু ছিল, সমুদয় জীবনোপায় রাখিল।”—লূক ২১:১-৪.

হ্যাঁ, সেই মহিলার পরিস্থিতি—তিনি যে বিধবা ও দরিদ্রা তা—জানায় যিশু তার উপহারের প্রকৃত মূল্য বুঝতে পেরেছিলেন এবং উপলব্ধি দেখাতে পরিচালিত হয়েছিলেন। যিহোবা সম্বন্ধে একই বিষয় বলা যেতে পারে। (যোহন ১৪:৯) এটা জানা কি উৎসাহজনক নয় যে, আপনার পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আপনি আমাদের উপলব্ধিপরায়ণ ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের চোখে অনুগ্রহ পেতে পারেন?

যিহোবা এক ঈশ্বরভয়শীল কূশীয়কে পুরস্কৃত করেন

৬, ৭. কেন এবং কীভাবে এবদ-মেলকের প্রতি যিহোবা তাঁর উপলব্ধি প্রদর্শন করেছিলেন?

যারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করে, তাদের প্রতি যে তিনি উপলব্ধি দেখান, তা শাস্ত্রে বার বার দেখানো হয়েছে। ঈশ্বরভয়শীল কূশীয় এবদ-মেলক, যিনি যিরমিয়ের সমসাময়িক এক ব্যক্তি ও অবিশ্বস্ত রাজা সিদিকিয়ের রাজপ্রাসাদের একজন দাস ছিলেন, তার সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। এবদ-মেলক জানতে পারেন যে, যিহূদার অধ্যক্ষগণ অন্যায়ভাবে ভাববাদী যিরমিয়কে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে এবং তাকে একটা কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, যাতে সেখানে তিনি অনাহারে মারা যান। (যিরমিয় ৩৮:১-৭) যিরমিয় যে-বার্তা প্রচার করেছিলেন, সেটার জন্য তাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করা হয়েছে জেনে এবদ-মেলক তার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজার কাছে আবেদন করেন। সাহসের সঙ্গে সেই কূশীয় বলেছিলেন: “হে আমার প্রভু মহারাজ, এই লোকেরা যিরমিয় ভাববাদীর প্রতি যাহা যাহা করিয়াছে, সমস্তই মন্দ ব্যবহার করিয়াছে; তাঁহাকে কূপে ফেলিয়া দিয়াছে; তিনি সে স্থানে ক্ষুধায় মৃতপ্রায় হইয়াছেন।” রাজার আদেশে এবদ-মেলক ৩০ জন লোক নিয়ে ঈশ্বরের ভাববাদীকে উদ্ধার করেন।—যিরমিয় ৩৮:৮-১৩.

যিহোবা দেখেছিলেন যে, এবদ-মেলক বিশ্বাস সহকারে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা তাকে যেকোনো ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। তাই, যিহোবা তাঁর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন এবং যিরমিয়ের মাধ্যমে এবদ-মেলককে বলেছিলেন: “দেখ, মঙ্গলের নিমিত্ত নয়, কিন্তু অমঙ্গলের নিমিত্ত আমি এই নগরের উপরে আপন বাক্য সকল সফল করিব, . . . কিন্তু সেই দিন আমি তোমাকে উদ্ধার করিব, . . . এবং তুমি যে লোকদের হইতে উদ্বিগ্ন হইয়াছ, তাহাদের হস্তে তুমি সমর্পিত হইবে না। আমি তোমাকে অবশ্য রক্ষা করিব, . . . কিন্তু লুটিত দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণলাভ হইবে; কেননা তুমি আমাতে বিশ্বাস করিয়াছ।” (যিরমিয় ৩৯:১৬-১৮) হ্যাঁ, যিহোবা এবদ-মেলক ও সেইসঙ্গে যিরমিয়কে যিহূদার দুষ্ট অধ্যক্ষদের এবং পরবর্তী সময়ে সেই বাবিলীয়দের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন, যারা যিরূশালেমকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল। “[সদাপ্রভু] আপন সাধুবর্গের [“অনুগত ব্যক্তিদের,” NW] প্রাণ রক্ষা করেন, দুষ্টগণের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করেন,” গীতসংহিতা ৯৭:১০ পদ বলে।

“তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন”

৮, ৯. যিশু যেমন দেখিয়েছেন যে, কোন ধরনের প্রার্থনাগুলোকে যিহোবা উপলব্ধি করেন?

যিহোবা যে আমাদের ঈশ্বরীয় ভক্তির অভিব্যক্তিগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখান ও সেগুলোকে মূল্য দেন, তার আরেকটা প্রমাণ প্রার্থনা সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, সেটার মধ্যে দেখা যেতে পারে। “সরলদের [“ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিদের,” NW] প্রার্থনা [ঈশ্বরের] সন্তোষজনক,” একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি উল্লেখ করেছিলেন। (হিতোপদেশ ১৫:৮) যিশুর দিনে অনেক ধর্মীয় নেতা জনসমক্ষে প্রার্থনা করত, তবে তা অকৃত্রিম ভক্তি সহকারে নয় বরং লোকেদের প্রভাবিত করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে করত। “তাহারা আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে,” যিশু বলেছিলেন। “কিন্তু তুমি যখন প্রার্থনা কর,” যিশু তাঁর অনুসারীদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, “তখন তোমার অন্তরাগারে প্রবেশ করিও, আর দ্বার রুদ্ধ করিয়া তোমার পিতা, যিনি গোপনে বর্ত্তমান, তাঁহার নিকটে প্রার্থনা করিও; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন।”—মথি ৬:৫, ৬.

অবশ্যই, যিশু জনসমক্ষে করা প্রার্থনার নিন্দা করছিলেন না কারণ তিনি নিজেও মাঝে মাঝে জনসমক্ষে প্রার্থনা করেছিলেন। (লূক ৯:১৬) অন্যদের প্রভাবিত করার কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়া আমরা যখন আন্তরিক হৃদয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি সেটাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। বস্তুতপক্ষে, আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনাগুলো হল, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের গভীর ভালবাসা ও তাঁর ওপর আমাদের গভীর নির্ভরতার এক উত্তম নির্দেশক। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিশু প্রার্থনা করার জন্য প্রায়ই নির্জন স্থান খুঁজতেন। একবার তিনি তা “অতি প্রত্যূষে, রাত্রি পোহাইবার অনেকক্ষণ পূর্ব্বে” করেছিলেন। আরেকবার, “তিনি . . . বিরলে প্রার্থনা করিবার নিমিত্ত পর্ব্বতে উঠিলেন।” আর ১২ জন প্রেরিতকে মনোনীত করার আগে, যিশু একাকী প্রার্থনায় সারারাত কাটিয়েছিলেন।—মার্ক ১:৩৫; মথি ১৪:২৩; লূক ৬:১২, ১৩.

১০. আমাদের প্রার্থনাগুলোতে যখন আন্তরিকতা ও গভীর অনুভূতি প্রকাশ পায়, তখন কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?

১০ একবার কল্পনা করুন যে, যিহোবা তাঁর পুত্রের আন্তরিক অভিব্যক্তিগুলো কতটা মনোযোগ দিয়েই না শুনেছিলেন! বস্তুতপক্ষে, যিশু মাঝে মাঝে “প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে” প্রার্থনা করেছিলেন ‘এবং আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইয়াছিলেন।’ (ইব্রীয় ৫:৭; লূক ২২:৪১-৪৪) আমাদের প্রার্থনাগুলোতে যখন এই ধরনের আন্তরিকতা ও গভীর অনুভূতি প্রকাশ পায়, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা গভীর মনোযোগ ও উপলব্ধি সহকারে তা শোনেন। হ্যাঁ, “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, . . . যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৮.

১১. একান্তে আমরা যা করে থাকি, তার প্রতি যিহোবা কেমন বোধ করেন?

১১ আমরা যখন গোপনে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি যদি তা উপলব্ধি করেন, তা হলে আমরা যখন গোপনে তাঁর বাধ্য থাকি, তখন সেটাও তিনি কতই না উপলব্ধি করবেন! হ্যাঁ, আমরা একান্তে কী করি, সেই বিষয়ে যিহোবা অবগত আছেন। (১ পিতর ৩:১২) বাস্তবিকপক্ষে, একাকী থাকাকালীন আমরা যদি বিশ্বস্ত ও বাধ্য থাকি, তা হলে সেটা এই অনুকূল ইঙ্গিত দেয় যে, যিহোবার প্রতি আমাদের এমন ‘একাগ্র অন্তঃকরণ’ রয়েছে, যেটা উদ্দেশ্যর ক্ষেত্রে শুদ্ধ এবং যা সঠিক, তা করার ব্যাপারে দৃঢ়। (১ বংশাবলি ২৮:৯) এই ধরনের আচরণ যিহোবার হৃদয়কে কতই না আনন্দিত করে!—হিতোপদেশ ২৭:১১; ১ যোহন ৩:২২.

১২, ১৩. কীভাবে আমরা আমাদের মন ও হৃদয়কে রক্ষা করতে পারি এবং বিশ্বস্ত শিষ্য নথনেলের মতো হতে পারি?

১২ এই কারণে, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা মন ও হৃদয়কে কলুষিত করে এমন গোপন পাপের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকে, যেমন অশ্লীল ও দৌরাত্ম্যমূলক বিষয়গুলো দেখা। যদিও কিছু পাপ মানুষের কাছে লুকানো যেতে পারে কিন্তু আমরা বুঝতে পারি যে, “তাঁহার চক্ষুর্গোচরে সকলই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে, যাঁহার কাছে আমাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে।” (ইব্রীয় ৪:১৩; লূক ৮:১৭) ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করার মাধ্যমে আমরা এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখি এবং এটা জেনে আনন্দিত হই যে, আমাদের প্রতি ঈশ্বরের অনুমোদন রয়েছে। হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা সত্যিই সেই ব্যক্তির প্রতি উপলব্ধি দেখান, “যে ব্যক্তি সিদ্ধ আচরণ ও ধর্ম্মকর্ম্ম করে, এবং হৃদয়ে সত্য কহে।”—গীতসংহিতা ১৫:১, ২.

১৩ তা হলে, কীভাবে আমরা এমন এক জগতে আমাদের মন ও হৃদয়কে রক্ষা করতে পারি, যা মন্দতায় পরিপূর্ণ? (হিতোপদেশ ৪:২৩; ইফিষীয় ২:২) সমস্ত আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করা ছাড়াও, আমাদের যা মন্দ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করার ও যা উত্তম তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলো সগর্ভা হয়ে পাপ প্রসব না করে। (যাকোব ১:১৪, ১৫) চিন্তা করে দেখুন যে, আপনি কত আনন্দিতই না হবেন, যদি যিশু নথনেলকে যা বলেছিলেন, তা আপনাকে বলেন: “ঐ দেখ, এক জন [ব্যক্তি], যাহার অন্তরে ছল নাই।” (যোহন ১:৪৭) নথনেল, যাকে বর্থলময়ও বলা হতো, পরবর্তী সময়ে যিশুর ১২ জন প্রেরিতের মধ্যে একজন হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলেন।—মার্ক ৩:১৬-১৯.

“দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাযাজক”

১৪. মরিয়মের কাজের প্রতি যিশু অন্যদের তুলনায় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১৪ ‘অদৃশ্য ঈশ্বর’ যিহোবার “প্রতিমূর্ত্তি” হওয়ায় যিশু, যারা শুচি হৃদয়ে ঈশ্বরের সেবা করে, তাদের প্রতি উপলব্ধি দেখানোর ক্ষেত্রে সবসময় তাঁর পিতাকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেন। (কলসীয় ১:১৫) উদাহরণস্বরূপ, তাঁর জীবন সমর্পণ করার পাঁচ দিন আগে যিশু ও তাঁর কিছু শিষ্য বৈথনিয়ার শিমোনের বাড়িতে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যার সময় লাসার ও মার্থার বোন মরিয়ম “অর্দ্ধ সের বহুমূল্য” (প্রায় এক বছরের বেতনের সমান) “জটামাংসীর আতর আনিয়া” যিশুর মাথায় ও পায়ে ঢেলে দেন। (যোহন ১২:৩) “এ অপব্যয় কেন?” কেউ কেউ বলেছিল। কিন্তু, মরিয়মের কাজকে যিশু সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন। যিশু তাঁর আসন্ন মৃত্যু ও সমাধির পরিপ্রেক্ষিতে এই কাজকে মহান উদারতার ও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কাজ হিসেবে দেখেছিলেন। তাই, মরিয়মের সমালোচনা করার পরিবর্তে, যিশু তাকে সম্মান দিয়েছিলেন। “সমুদয় জগতে যে কোন স্থানে এই সুসমাচার প্রচারিত হইবে,” তিনি বলেছিলেন “সেই স্থানে ইহার এই কর্ম্মের কথাও ইহার স্মরণার্থে বলা যাইবে।”—মথি ২৬:৬-১৩.

১৫, ১৬. যিশু একজন মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করেছিলেন এবং ঈশ্বরের সেবা করেছিলেন বলে কীভাবে আমরা উপকৃত হতে পারি?

১৫ যিশুর মতো এইরকম একজন উপলব্ধিপরায়ণ ব্যক্তিকে আমাদের নেতা হিসেবে পেয়ে আমরা কত বড় সুযোগই না পেয়েছি! বস্তুতপক্ষে, মানুষ হিসেবে যিশুর জীবন তাঁকে সেই কাজের জন্য প্রস্তুত করেছিল, যা যিহোবা তাঁর জন্য সঞ্চিত রেখেছিলেন—মহাযাজক ও রাজা হিসেবে সেবা করা, প্রথমে অভিষিক্তদের মণ্ডলীর জন্য এবং পরে জগতের জন্য।—কলসীয় ১:১৩; ইব্রীয় ৭:২৬; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫.

১৬ পৃথিবীতে আসার আগে, মানবজাতির প্রতি যিশুর ইতিমধ্যেই গভীর আগ্রহ ছিল এবং তাদের নিয়ে তিনি বিশেষ আনন্দিত ছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:৩১) মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করার মাধ্যমে তিনি সেই পরীক্ষাগুলো সম্বন্ধে আরও পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, যা আমরা ঈশ্বরের সেবায় ভোগ করে থাকি। “সর্ব্ববিষয়ে আপন ভ্রাতৃগণের তুল্য হওয়া [যিশুর] উচিত ছিল,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “যেন তিনি . . . দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাযাজক হন। কেননা তিনি আপনি পরীক্ষিত হইয়া দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া পরীক্ষিতগণের সাহায্য করিতে পারেন।” যিশু “আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে” পারেন কারণ “তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে।”—ইব্রীয় ২:১৭, ১৮; ৪:১৫, ১৬.

১৭, ১৮. (ক) এশিয়া মাইনরের সাতটা মণ্ডলীকে লেখা চিঠিগুলো যিশুর উপলব্ধির গভীরতা সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে? (খ) সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কীসের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল?

১৭ তাঁর অনুসারীদের পরীক্ষাগুলোর জন্য যিশুর যে-গভীর উপলব্ধি ছিল, তা তাঁর পুনত্থানের পর স্পষ্ট হয়েছিল। এশিয়া মাইনরের সাতটা মণ্ডলীকে দেওয়া তাঁর সেই চিঠিগুলো বিবেচনা করুন, যেগুলো প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন। স্মুর্ণার মণ্ডলীকে যিশু বলেছিলেন: “আমি জানি তোমার ক্লেশ ও দীনতা।” বস্তুতপক্ষে, যিশু এখানে বলছিলেন যে, ‘আমি তোমাদের সমস্যা সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত আছি; আমি সত্যিই জানি যে, তোমরা কীসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ।’ এরপর, তিনি নিজে মৃত্যু ভোগ করেছিলেন বলে সমবেদনা ও দৃঢ় আশ্বাস সহকারে আরও বলেছিলেন: “তুমি মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাক, তাহাতে আমি তোমাকে জীবন-মুকুট দিব।”—প্রকাশিত বাক্য ২:৮-১০.

১৮ সাতটা মণ্ডলীকে লেখা চিঠিগুলো সেই অভিব্যক্তিগুলোর দ্বারা পূর্ণ, যা তাঁর শিষ্যদের পরীক্ষাগুলো সম্বন্ধে যিশুর পূর্ণ সচেতনতা ও তাদের নীতিনিষ্ঠার জীবন সম্বন্ধে অকৃত্রিম উপলব্ধিকে প্রতিফলিত করে। (প্রকাশিত বাক্য ২:১–৩:২২) মনে রাখবেন যে, যিশু যাদেরকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, তারা ছিল তাঁর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করার আশাসম্পন্ন অভিষিক্ত খ্রিস্টান। তাদের প্রভুর মতো তারাও খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপকারিতাগুলো পীড়িত মানবজাতির প্রতি অত্যন্ত সমবেদনা সহকারে প্রয়োগ করায় সাহায্য করতে তাদের উচ্চীকৃত ভূমিকার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।—প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ২২:১-৫.

১৯, ২০. যাদের নিয়ে “বিস্তর লোক” গঠিত, তারা কীভাবে যিহোবা ও তাঁর পুত্রের প্রতি তাদের উপলব্ধি দেখায়?

১৯ অবশ্য, অভিষিক্ত অনুসারীদের প্রতি যিশুর ভালবাসা তাঁর অনুগত সেই ‘আরও মেষের’ প্রতিও বিস্তৃত, যাদের লক্ষ লক্ষ লোক এখন ‘প্রত্যেক জাতি’ থেকে আসা সম্ভাব্য “বিস্তর লোক” গঠন করে, যারা আসন্ন ‘মহাক্লেশ’ থেকে রক্ষা পাবে। (যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) তারা যিশুর মুক্তির মূল্য ও তাদের অনন্তজীবনের আশার প্রতি উপলব্ধির জন্য দলে দলে তাঁর দিকে আসছে। কীভাবে তারা তাদের উপলব্ধি দেখায়? তারা ‘দিবারাত্র [ঈশ্বরের] আরাধনা করিবার’ মাধ্যমে তা দেখিয়ে থাকে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৫-১৭.

২০ সাতাশ থেকে ত্রিশ পৃষ্ঠায় দেওয়া ২০০৬ সালের পরিচর্যা বছরের বিশ্বব্যাপী রিপোর্ট স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে, এই বিশ্বস্ত পরিচারকরা সত্যিই যিহোবাকে ‘দিবারাত্র আরাধনা’ প্রদান করছে। বস্তুতপক্ষে, সেই এক বছরের মধ্যে তারা ও সেইসঙ্গে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অপেক্ষাকৃত অল্পসংখ্যক অবশিষ্টাংশ জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় মোট ১৩৩,৩৯,৬৬,১৯৯ ঘন্টা ব্যয় করেছে—যা ১,৫০,০০০ বছরেরও বেশি সময়ের সমরূপ!

উপলব্ধি দেখিয়ে চলুন!

২১, ২২. (ক) উপলব্ধি দেখানোর ক্ষেত্রে, কেন খ্রিস্টানদের আজকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে? (খ) পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

২১ অসিদ্ধ মানুষদের সঙ্গে আচরণ করার সময় যিহোবা ও তাঁর পুত্র সেই গভীর উপলব্ধি দেখিয়েছেন, যা সত্যিই অভিভূত করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, অধিকাংশ মানুষই ঈশ্বরের প্রতি সামান্য চিন্তা দেখায়, এর পরিবর্তে তারা তাদের নিজেদের চিন্তার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। “শেষ কালে” বসবাসরত লোকেদের সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে পৌল লিখেছিলেন: ‘মানুষ কেবল নিজেকেই ভালবাসবে, টাকার লোভী হবে, তারা অকৃতজ্ঞ হবে।’ (২ তীমথিয় ৩:১-৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) সত্য খ্রিস্টানদের থেকে তারা কতই না আলাদা, যারা আন্তরিক প্রার্থনা, স্বেচ্ছায় বাধ্যতা ও সমস্ত প্রাণ দিয়ে করা সেবার মাধ্যমে ঈশ্বর তাদের জন্য যা কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য উপলব্ধি দেখায়!—গীতসংহিতা ৬২:৮; মার্ক ১২:৩০; ১ যোহন ৫:৩.

২২ পরের প্রবন্ধে আমরা অনেক আধ্যাত্মিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকে কয়েকটা পুনরালোচনা করব, যেগুলো যিহোবা আমাদেরকে প্রেমের সঙ্গে দিয়েছেন। আমরা যখন এই ‘উত্তম দান’ নিয়ে বিবেচনা করব, তখন আমাদের উপলব্ধি যেন আরও গভীর হয়।—যাকোব ১:১৭.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছেন যে, তিনি একজন উপলব্ধিপরায়ণ ঈশ্বর?

• একান্তে থাকার সময় কীভাবে আমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারি?

• কোন কোন উপায়ে যিশু উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন?

• কীভাবে একজন মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করা যিশুকে একজন সমবেদনাময় ও উপলব্ধিপরায়ণ শাসক হতে সাহায্য করেছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন বাবা অথবা মা যেমন তার সন্তানের সরল অভিব্যক্তিকে ভালবাসেন, তেমনই যিহোবাকে আমরা যখন আমাদের সর্বোত্তমটা দিই, তখন তিনি সেটাকে উপলব্ধি করেন