সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেকারণে শিষ্য তৈরি করে আমি আনন্দিত

যেকারণে শিষ্য তৈরি করে আমি আনন্দিত

জীবনকাহিনি

যেকারণে শিষ্য তৈরি করে আমি আনন্দিত

বলেছেন পামেলা মোজলি

১৯৪১ সালে যখন ইংল্যান্ড জুড়ে দুর্বার গতিতে যুদ্ধ চলছিল, সেই সময়ে আমার মা আমাকে লেস্টারে যিহোবার সাক্ষিদের একটা সম্মেলনে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা সন্তানদের বিষয়ে জোসেফ রাদারফোর্ডের দেওয়া একটা বিশেষ বক্তৃতা শুনেছিলাম। মা এবং আমি যখন সেই সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম, তখন আমি লক্ষ করেছিলাম যে, আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে যারা সাহায্য করেছিল, তারা খুবই আনন্দিত হয়েছিল। আমি তখন উপলব্ধি করতে পারিনি যে, যিশু খ্রিস্টের শিষ্য তৈরি করা থেকে কতটা আনন্দ পাওয়া যেতে পারে।

 এর ঠিক এক বছর আগে, আমরা শিষ্য হয়ে ওঠার মতো উন্নতি করতে শুরু করেছিলাম। আমার এখনও ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সেই ভয়াবহ দিনের কথা মনে আছে, যেদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আমি দেখেছিলাম মায়ের গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল, যখন বার বার তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কেন, কেন পৃথিবীতে শান্তি নেই?” আমার বাবামা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিল এবং যুদ্ধের ভয়াবহতার বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। মা ব্রিষ্টলের একজন আ্যংলিকান পরিচারককে উক্ত প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছিলেন। সেই পরিচারক শুধু বলেছিলেন: “সবসময়ই যুদ্ধ ছিল আর তা সবসময়ই চলবে।”

কিন্তু এর কিছুদিন পর, একজন বয়স্কা মহিলা আমাদের ঘরে সাক্ষাৎ করেন। তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন। আমার মা তাকে সেই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কেন, কেন পৃথিবীতে শান্তি নেই?” সেই সাক্ষি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, আমরা যে যুগান্তে বা এই দৌরাত্ম্যপূর্ণ বিধিব্যবস্থার শেষে বাস করছি, যুদ্ধবিগ্রহ হচ্ছে সেই চিহ্নের অংশ। (মথি ২৪:৩-১৪) শীঘ্রই তার মেয়ে আমাদেরকে বাইবেল অধ্যয়ন করাতে শুরু করেন। আমাদের বাপ্তিস্মের সময় সেই আনন্দিত দর্শকদের মধ্যে তারা দুজনও ছিল। শিষ্য তৈরি করা কেন লোকেদের এত আনন্দিত করে? পরবর্তী সময়ে, আমি সেই কারণ জেনেছিলাম। ৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিষ্য তৈরি করে আমি যা শিখেছি, সেই বিষয়েই আমি আপনাদের বলছি।

শিক্ষাদানের আনন্দ খুঁজে পাওয়া

আমার বয়স যখন ১১, তখন আমি ব্রিষ্টলে রাজ্যের প্রচারে অংশ নিতে শুরু করি। একজন ভাই আমাকে একটা ফোনোগ্রাফ এবং একটা পরিচয় পত্র দিয়ে বলেছিলেন: “এখন তুমি রাস্তার ওই পাশের সব ঘরে ঘরে যাও।” তাই, আমি একাই এই কাজ শুরু করেছিলাম। অবশ্য, আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি রেকর্ড করা একটা বাইবেল বক্তৃতা চালাতাম আর এরপর গৃহকর্তাকে পরিচয়পত্র দেখাতাম, যেটাতে লোকেদেরকে বাইবেল সাহিত্য গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হতো।

১৯৫০ এর দশকের শুরুতে, আমাদেরকে ঘরে ঘরে প্রচারের সময় বাইবেল থেকে পড়ার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছিল। প্রথম প্রথম, আমার লাজুক স্বভাবের কারণে অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলা এবং বাইবেলের পাঠ্যাংশ ব্যাখ্যা করা আমার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু, আমি ধীরে ধীরে আস্থা অর্জন করেছিলাম। আর ঠিক সেই সময়ই আমি পরিচর্যা সত্যিকারভাবে উপভোগ করতে শুরু করেছিলাম। কিছু লোক আমাদেরকে কেবলমাত্র বই বিক্রেতা হিসেবে দেখত কিন্তু যখন আমরা বাইবেলের পাঠ্যাংশগুলো পড়তাম এবং তাদের কাছে সেগুলো ব্যাখ্যা করতাম, তখন তারা আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষক হিসেবেই চিনতে পেরেছিল। আমি এটা করা এতটাই উপভোগ করেছিলাম যে, আমি আরও বেশি করে অংশ নিতে চেয়েছিলাম। তাই, ১৯৫৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একজন অগ্রগামী হিসেবে আমি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করি।

অধ্যবসায় বিভিন্ন পুরস্কার নিয়ে আসে

প্রথম যে-শিক্ষাটা আমি লাভ করেছিলাম তা হল, আন্তরিক অধ্যবসায় বিভিন্ন পুরস্কার নিয়ে আসতে পারে। একবার, আমি ভাইয়োলেট মরিস নামের একজন ভদ্রমহিলাকে একটা প্রহরীদুর্গ পত্রিকা দিয়েছিলাম। যখন আমি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আবার ফিরে এসেছিলাম, তখন তিনি তার দরজা খুলে, বুকের ওপর হাত দুটো ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে আমি শাস্ত্র থেকে তার কাছে যা বলেছিলাম, তা শুনেছিলেন। প্রত্যেকবার আমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম, তখন তাকে সত্যিই আগ্রহী বলে মনে হতো। কিন্তু, যখন আমি তাকে নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন: “না। ছেলেমেয়েরা আগে বড় হোক, তারপর আমি অধ্যয়ন করব।” এটা শুনে আমি কতই না হতাশ হয়েছিলাম! বাইবেল “অন্বেষণের কাল ও হারাইবার কাল” সম্বন্ধে বলে। (উপদেশক ৩:৫) আমি হারিয়ে না ফেলার বা হাল ছেড়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

একমাস পর, আমি আবারও ফিরে যাই এবং ভাইয়োলেটের সঙ্গে আরও কিছু শাস্ত্রপদ আলোচনা করি। খুব শীঘ্রই তিনি তার দরজায় দাঁড়িয়েই আমার সঙ্গে সাপ্তাহিক বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। অবশেষে তিনি বলেন: “আমার মনে হয়, আপনি ঘরের ভিতরে আসলে আরও ভাল হয়, তাই নয় কি?” ভাইয়োলেট কত চমৎকার একজন সহবিশ্বাসী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুই না হয়ে উঠেছিলেন! হ্যাঁ, ভাইয়োলেট বাপ্তিস্ম নিয়ে একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন।

একদিন ভাইয়োলেট এটা জেনে খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন যে, তার স্বামী তাকে না জানিয়েই তাদের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন এবং তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আনন্দের বিষয় যে, সেদিন বিকেলেই তিনি একজন সাক্ষি বন্ধুর সহযোগিতায় অন্য একটা ঘর পেতে সমর্থ হয়েছিলেন। যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে, তিনি বাকি জীবন একজন অগ্রগামী হিসেবে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যখন আমি দেখেছিলাম যে, সত্য উপাসনার জন্য যিহোবার আত্মা তাকে উদ্যোগে পূর্ণ করেছে, তখন আমি শিষ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে আনন্দিত হওয়ার সেই কারণ বুঝতে পেরেছিলাম। হ্যাঁ, এই কাজ করাটাই আমার কেরিয়ার হবে!

১৯৫৭ সালে মেরি রবিনসন এবং আমাকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর রুদারগ্লেন শিল্প এলাকায় অগ্রগামী হিসেবে কার্যভার দেওয়া হয়। আমরা ঘন কুয়াশায়, ঝড়ো বাতাসে, বৃষ্টিতে এবং তুষারপাতের মধ্যেও প্রচার করেছি কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। একদিন জেসি নামে এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমি তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করা উপভোগ করতাম। তার স্বামী ওয়েলি একজন সাম্যবাদী ব্যক্তি ছিলেন এবং প্রথম প্রথম আমাকে এড়িয়ে চলতেন। যখন তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করেন এবং বুঝতে পারেন যে, একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই লোকেদের জন্য মনোরম পরিবেশ নিয়ে আসবে, তখন তিনি রোমাঞ্চিত হন। পরবর্তী সময়ে, দুজনেই শিষ্য তৈরি করার কাজ করে।

প্রথম প্রতিক্রিয়া বিভ্রান্তিকর হতে পারে

পরে, আমরা স্কটল্যান্ডের পেইজলি শহরে এক নতুন কার্যভার পাই। একদিন সেখানে প্রচার করার সময়, একজন ভদ্রমহিলা আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেন। কিন্তু, শীঘ্রই তিনি ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরের সপ্তাহে যখন আমি ফিরে গিয়েছিলাম, তিনি আমাকে বলেছিলেন: “আমি এমনটা মনে করেছিলাম যে, আমি বুঝি ঈশ্বরের মুখের ওপরই দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তাই, আমি আপনার খোঁজ করছিলাম।” তার নাম ছিল পার্ল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজনের দ্বারা তিনি এতটাই হতাশ হয়েছেন যে, একজন সত্যিকারের বন্ধুর জন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। “আর এরপরই আপনি আমার দরজায় এসেছিলেন,” তিনি বলেন। “আমি এখন বুঝতে পারছি যে, আপনি নিশ্চয়ই সেই সত্যিকারের বন্ধু।”

পার্লের বন্ধু হওয়া সহজ বিষয় ছিল না। তিনি একটা খাড়া পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় বাস করতেন আর আমাকে হেঁটে সেখানে উঠতে হতো। আমি যখন তাকে প্রথম সভাতে নিয়ে আসার জন্য তার ঘরে গিয়েছিলাম, তখন ঝড়ো বাতাস এবং বৃষ্টি আমাকে একেবারে কাবু করে ফেলেছিল। আমি আমার ছাতাটা ফেলে দিয়েছিলাম কারণ সেটা ভেঙে গিয়েছিল। আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়ার মাত্র ছয় মাস পর, পার্ল ঈশ্বরের কাছে তার উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।

খুব শীঘ্রই, তার স্বামী বাইবেল অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নেন আর অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি আমার সঙ্গে ঘরে ঘরে পরিচর্যায় যোগ দেন। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও বৃষ্টি হচ্ছিল। “আমার জন্য চিন্তা করবেন না,” তিনি বলেন। “আমি ফুটবল খেলা দেখার জন্য এই ধরনের আবহাওয়ার মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকি, তাই যিহোবার জন্যও আমি নিশ্চয়ই বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব।” স্কটল্যান্ডের লোকেদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ মনোভাবকে আমি সবসময় শ্রদ্ধা করেছি।

বেশ কয়েক দশক পর ফিরে এসে, যাদেরকে আমি অধ্যয়ন করিয়েছি তাদের বেশির ভাগই যে বিশ্বাসে স্থির রয়েছে, তা দেখা আমার জন্য কতই না পরিতৃপ্তিদায়ক! এটাই হচ্ছে শিষ্য তৈরি করার আনন্দ। (১ থিষলনীকীয় ২:১৭-২০) স্কটল্যান্ডে আট বছরেরও বেশি সময় ধরে অগ্রগামীর কাজ করার পর, একজন মিশনারি হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে ১৯৬৬ সালে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অভ্‌ গিলেয়েড-এ আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এক বিদেশি ক্ষেত্রে সেবা করা

আমাকে বলিভিয়ার গ্রীষ্মপ্রধান শহর স্যান্টা ক্রুজে কার্যভার দেওয়া হয়, যেখানে প্রায় ৫০ জন সদস্যের একটা মণ্ডলী ছিল। এই শহরটি আমাকে হলিউডের চলচ্চিত্রগুলোতে দেখানো রুক্ষ ও অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। অতীতের দিনগুলোর কথা চিন্তা করে, আমার মনে পড়ে যে, আমি অত্যন্ত সাধারণ একজন মিশনারি ছিলাম। আমি কখনো কুমিরের আক্রমণের মুখে পড়িনি, ক্রুদ্ধ জনতার মাঝে পড়িনি, মরুভূমিতে হারিয়ে যাইনি অথবা মাঝ সমুদ্রে জাহাজডুবির শিকারও হয়নি। তা সত্ত্বেও, আমার কাছে শিষ্য তৈরি করাই আরও বেশি রোমাঞ্চকর ছিল।

স্যান্টা ক্রুজে আমি যে-ভদ্রমহিলাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছিলাম, তাদের মধ্যে প্রথম জন ছিলেন আনটোনিয়া। আমার পক্ষে স্প্যানিশ ভাষায় শিক্ষা দেওয়া খুবই কঠিন ছিল। একবার আনটোনিয়ার ছোট্ট ছেলে বলেছিল: “মা, তিনি কি আমাদের হাসানোর জন্য ইচ্ছে করে ভুল বলেন?” আনটোনিয়া অবশেষে একজন শিষ্য হয়েছিলেন আর তার মেয়ে ইয়োলান্ডাও একই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ডিটো নামে ইয়োলান্ডার একজন বন্ধু ছিলেন, যিনি একজন আইনের ছাত্র। তিনিও বাইবেল অধ্যয়ন করতে এবং আমাদের সভাগুলোতে উপস্থিত হতে শুরু করেন। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি বাইবেলের সত্য শেখানোর বিষয়ে একটা জিনিস শিখেছিলাম: কখনো কখনো লোকেদের মৃদুভাবে তাগাদা দেওয়ার দরকার হয়।

ডিটো যখন তার অধ্যয়নে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন, তখন আমি তাকে বলি: “ডিটো, যিহোবা তাঁর রাজ্যকে সমর্থন করার জন্য আপনাকে জোর করেন না। আপনাকেই বেছে নিতে হবে।” যখন তিনি উত্তরে বলেন যে, তিনি ঈশ্বরকে সেবা করতে চান, তখন আমি বলি: “আপনার কাছে একজন বিপ্লবী নেতার বিভিন্ন ছবি রয়েছে। একজন অতিথি এসে এই ছবিগুলো দেখে কি বুঝতে পারবে যে, আপনি ঈশ্বরের রাজ্যের সমর্থক হওয়া বেছে নিয়েছেন?” এই মৃদু তাগাদাই তার দরকার ছিল।

দুই সপ্তাহ পর, একটা বিপ্লব ঘটে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। “এসো, আমরা এখান থেকে বের হয়ে যাই!” ডিটো তার বন্ধুকে চিৎকার করে বলেছিলেন। “না! এই মহান দিনটার জন্যই আমরা এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম,” তার সঙ্গী উত্তর দেন এবং একটা রাইফেল নিয়ে দৌড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদের ওপর চলে যান। তিনি ছিলেন ডিটোর আটজন বন্ধুর মধ্যে একজন, যারা সেদিন মারা গিয়েছিল। আপনারা কি কল্পনা করতে পারছেন যে, ডিটোকে দেখা আমার জন্য কতটা আনন্দের বিষয় ছিল, যিনি একজন সত্য খ্রিস্টান হওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে হয়তো সেদিন মারাই যেতেন?

যিহোবার আত্মাকে কার্যরত দেখা

ঘরটায় ইতিমধ্যেই কাজ করা হয়ে গিয়েছে মনে করে একদিন আমি সেই দরজা ছেড়ে চলে আসার সময় সেই বাড়ির মহিলা আমাকে ডাক দেন। তার নাম ছিল ইগনাসিয়া। তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে জানতেন কিন্তু তার স্বামীর—আডালবারটো নামে বিশালদেহী একজন পুলিশ অফিসারের—কাছ থেকে চরম বিরোধিতা, আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করার ক্ষেত্রে তাকে বাধা দিয়েছিল। ইগনাসিয়া বাইবেলের অনেক মৌলিক শিক্ষার বিষয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন, তাই আমি তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে শুরু করি। যদিও আডালবারটো বাইবেল অধ্যয়ন বন্ধ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন কিন্তু আমি তার সঙ্গেও অন্যান্য বিষয়ে দীর্ঘসময় কথা বলতে পেরেছিলাম। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটা ছিল প্রথম পদক্ষেপ।

ইগনাসিয়াকে মণ্ডলীর একজন প্রেমময় সদস্য হয়ে উঠতে দেখার এবং সান্ত্বনার প্রয়োজন এমন অনেকের আধ্যাত্মিক ও দৈহিক মঙ্গলের জন্য উপস্থিত হতে দেখার আনন্দ একবার কল্পনা করুন। পরবর্তী সময়ে তার স্বামী এবং তাদের তিন ছেলেমেয়ে সাক্ষি হয়েছিল। আসলে, আডালবারটো শেষ পর্যন্ত যখন সুসমাচারের অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন, তখন তিনি পুলিশ স্টেশনে ফিরে গিয়েছিলেন এবং এতটাই উদ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন যে, তিনি পুলিশদের কাছ থেকে প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! পত্রিকার ২০০টি গ্রাহক সংগ্রহ করেছিলেন।

যিহোবা বৃদ্ধিদাতা

স্যান্টা ক্রুজে ছয় বছর সেবা করার পর, আমাকে বলিভিয়ার প্রধান শহর লা পাজে কার্যভার দেওয়া হয়, যেখানে আমি পরবর্তী ২৫ বছর ব্যয় করি। ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে, যিহোবার সাক্ষিদের শাখা গৃহ মাত্র ১২ জন সদস্যকে নিয়ে লা পাজে অবস্থিত ছিল। প্রচার কাজের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আরও বড় জায়গার প্রয়োজন হয় আর তাই দ্রুত বৃদ্ধিরত স্যান্টা ক্রুজ শহরে একটা নতুন শাখা ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে সেখানে শাখা পুনর্স্থাপন করা হয় আর আমাকে শাখার একজন সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে এখন ৫০ জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে।

১৯৬৬ সালে স্যান্টা ক্রুজে একটা মণ্ডলী ছিল আর এখন সেখানে ৫০টারও বেশি মণ্ডলী রয়েছে। সেই সময়ে বলিভিয়াতে ৬৪০ জন প্রকাশক ছিল, যা আজকে বেড়ে প্রায় ১৮,০০০ জন হয়েছে!

আনন্দের বিষয় যে, বলিভিয়াতে আমার কার্যভার ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু, আমি সবসময় সব জায়গার সহখ্রিস্টানদের বিশ্বস্ততার দ্বারা উদ্দীপিত হয়েছি। আমরা সবাই রাজ্যের প্রচার কাজের ওপর যিহোবার আশীর্বাদ দেখতে পেয়ে আনন্দিত। শিষ্য তৈরি করার কাজে অংশগ্রহণ করা নিশ্চিতভাবেই এক আনন্দের বিষয়।—মথি ২৮:১৯, ২০.

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্কটল্যান্ডে অগ্রগামীর কাজ করা

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বলিভিয়ার শাখা অফিসে সেবারত; (ইনসেট) গিলিয়েডের ৪২তম ক্লাসের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে