সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের অদ্বিতীয় সৌরজগৎ এটা যেভাবে অস্তিত্বে এসেছে

আমাদের অদ্বিতীয় সৌরজগৎ এটা যেভাবে অস্তিত্বে এসেছে

আমাদের অদ্বিতীয় সৌরজগৎ এটা যেভাবে অস্তিত্বে এসেছে

 নিখিলবিশ্বে আমাদের সৌরজগৎকে অদ্বিতীয় করে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় সংযুক্ত রয়েছে। আমাদের সৌরজগৎ, মিল্কিওয়ের দুটো কুণ্ডলিত শাখার মাঝখানে এমন এক স্থানে অবস্থিত, যেখানে তুলনামূলকভাবে কম নক্ষত্র রয়েছে। রাতে আমরা যে-নক্ষত্রগুলো দেখতে পাই, সেগুলোর প্রায় সবই আমাদের কাছ থেকে এতটাই দূরে রয়েছে যে, সবচেয়ে বড় দূরবিন দিয়েও যখন দেখা হয়েছে, তখনও সেগুলোকে শুধুমাত্র আলোর বিন্দুর মতোই দেখা গিয়েছে। আমাদের সৌরজগতের কি এইরকম এক অবস্থানেই থাকা উচিত?

আমাদের সৌরজগৎ যদি মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকত, তা হলে আমাদেরকে ঘন নক্ষত্ররাজির মাঝে ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর শিকার হতে হতো। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর কক্ষপথ বিঘ্নিত হতো আর তা মানব জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করত। তাই, সৌরজগৎ এই ধরনের ও অন্যান্য বিপদ যেমন, গ্যাসীয় মেঘের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এবং বিস্ফোরিত নক্ষত্র ও অন্যান্য মারাত্মক রশ্মির উৎসের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে, ছায়াপথের মধ্যে একেবারে উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে মনে হয়, যেমনটা এখন রয়েছে।

আমাদের প্রয়োজনগুলোর জন্য সূর্য হল এক আদর্শ নক্ষত্র। এটা অবিরত জ্বলন্ত, দীর্ঘস্থায়ী এবং খুব বড়ও নয় বা উত্তপ্তও নয়। আমাদের ছায়াপথে থাকা অধিকাংশ নক্ষত্রই সূর্যের চেয়ে বেশ ছোট আর সেগুলো একটা পৃথিবীতুল্য গ্রহে জীবনধারণের পক্ষে উপযুক্ত পরিমাণ আলো বা উপযুক্ত মাত্রায় উত্তাপও জোগায় না। এ ছাড়া, বেশির ভাগ নক্ষত্রই মহাকর্ষীয় বলের মাধ্যমে এক বা একাধিক নক্ষত্রের সঙ্গে আবদ্ধ এবং একে অন্যের চারপাশে আবর্তিত হয়। এর বৈসাদৃশ্যে, আমাদের সূর্য স্বাধীন। কিন্তু, আমাদের ওপর যদি দুই বা ততোধিক সূর্যের মহাকর্ষীয় বলের প্রভাব পড়ত, তা হলে আমাদের সৌরজগতের পক্ষে স্থির থাকার কোনো সম্ভাবনাই থাকত না।

আরেকটা বিষয় যা আমাদের সৌরজগৎকে অদ্বিতীয় করে তুলেছে তা হল, বহিঃস্থ প্রকাণ্ড গ্রহগুলোর অবস্থান, যেগুলো প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথবিশিষ্ট আর আভ্যন্তরীণ পৃথিবীতুল্য গ্রহগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক মহাকর্ষীয় বল প্রয়োগ করে না। * এর পরিবর্তে, বহিঃস্থ গ্রহগুলো ক্ষতিকর পদার্থগুলোকে শোষণ ও ভিন্ন পথে পরিচালিত করে এক প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে। “আমাদের গ্রহের পিছনে বিভিন্ন প্রকাণ্ড গ্যাসীয় গ্রহ যেমন, বৃহস্পতি গ্রহ থাকার ফলে, গ্রহাণুপুঞ্জ ও ধূমকেতুগুলো আমাদের আঘাত করে বটে কিন্তু অত্যধিক মাত্রায় করতে পারে না,” বিজ্ঞানী পিটার ডি. ওয়ার্ড এবং ড্যানাল্ড ব্রাউনলি তাদের বিরল পৃথিবী—যেকারণে নিখিলবিশ্বে জটিল জীবন এত অসাধারণ (ইংরেজি) বইয়ে ব্যাখ্যা করে। আমাদের সৌরজগতের মতো প্রকাণ্ড গ্রহসমেত আরও সৌরজগৎ আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু, এই প্রকাণ্ড গ্রহগুলোর বেশির ভাগেরই এমন কক্ষপথ রয়েছে, যা পৃথিবীর মতো কোনো ছোট গ্রহকে বিপন্ন করে দিতে পারে।

চাঁদের ভূমিকা

প্রাচীনকাল থেকেই, আমাদের চাঁদ মানবজাতিকে বিস্মিত করেছে। এটা কবি ও সংগীতজ্ঞদের অনুপ্রাণিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রাচীন ইব্রীয় কবি চাঁদকে “চিরকাল অটল থাকিবে; আর গগনস্থ সাক্ষী বিশ্বস্ত” বলে বর্ণনা করেছেন।—গীতসংহিতা ৮৯:৩৭.

একটা যে-গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে চাঁদ পৃথিবীর জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে তা হল, এর মহাকর্ষীয় আকর্ষণের প্রভাবে জোয়ারভাটা হয়। জোয়ারভাটা মহাসাগরীয় স্রোতের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয়, যা আমাদের আবহাওয়ার জন্য অত্যাবশ্যক।

আমাদের চাঁদ আরেকটা যে-মূল উদ্দেশ্যসাধন করে তা হল, সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে পৃথিবীর অক্ষকে চাঁদের মহাকর্ষীয় বল স্থির রাখে। বিজ্ঞান সংক্রান্ত পত্রিকা প্রকৃতি (ইংরেজি) অনুসারে, চাঁদ না থাকলে, পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকা দীর্ঘসময় ধরে “প্রায় ০ [ডিগ্রি] থেকে ৮৫ [ডিগ্রি] পর্যন্ত” পরিবর্তন হতো। ধরুন, পৃথিবীর অক্ষ যদি হেলে না থাকত! তা হলে, আমরা মনোরম ঋতুর পরিবর্তন থেকে বঞ্চিত হতাম এবং বৃষ্টি কম হতো। পৃথিবীর হেলে থাকা, এর তাপমাত্রাকে অত্যধিক চরম হয়ে যাওয়াকে রোধ করে, যাতে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। “আমাদের বর্তমান জলবায়ুর স্থিতিশীলতার জন্য আমরা এক ব্যতিক্রমী বিষয়ের কাছে ঋণী আর তা হল: চাঁদের উপস্থিতি,” জ্যোতির্বিদ ঝাক লাসকার উপসংহারে বলেন। এর স্থিতিশীল ভূমিকা পূর্ণ করতে আমাদের চাঁদ, অন্যান্য প্রকাণ্ড গ্রহের উপগ্রহগুলোর তুলনায় আয়তনে অনেক বড়।

অধিকন্তু, প্রাচীন বই বাইবেলের আদিপুস্তকের লেখক যেমন উল্লেখ করেছিলেন যে, পৃথিবীর এই প্রাকৃতিক উপগ্রহের আরেকটা কাজ হল, চাঁদ রাতের বেলা আলো দিয়ে থাকে।—আদিপুস্তক ১:১৬.

আকস্মিকভাবে অথবা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে?

কীভাবে একজন ব্যক্তি এমন বহুবিধ ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যা করবেন, যেগুলো পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বকে শুধু সম্ভবপরই করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে উপভোগ্যও করে তুলেছে? এই বিষয়ে দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে। প্রথমটা হল যে, এইসমস্ত বাস্তব বিষয় উদ্দেশ্যহীনভাবে আকস্মিক সৃষ্টি হয়েছে। আর দ্বিতীয়টা হল, এই সমস্তকিছুর পিছনে কোনো বুদ্ধিদীপ্ত উদ্দেশ্য রয়েছে।

হাজার হাজার বছর আগে পবিত্র শাস্ত্র বর্ণনা করেছিল যে, আমাদের পৃথিবী একজন সৃষ্টিকর্তার—সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের—দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। এটা যদি সত্য হয়, তবে এর মানে হবে যে, আমাদের সৌরজগতে বিদ্যমান অবস্থা, আকস্মিকভাবে নয় বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সৃষ্ট। পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব করার জন্য সৃষ্টিকর্তা যে-পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন, তা জানানোর জন্য তিনি আমাদেরকে এক লিখিত বিবরণ দিয়েছেন। এটা জেনে আপনি হয়তো আশ্চর্য হবেন যে, যদিও এই বিবরণ প্রায় ৩,৫০০ বছরের পুরোনো কিন্তু এটির মধ্যে বর্ণিত নিখিলবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্ত ইতিহাস মূলত, যা অবশ্যই ঘটেছিল বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে, সেগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বিবরণ বাইবেলের আদিপুস্তক বইয়ে রয়েছে। এটি কী বলে, তা বিবেচনা করুন।

সৃষ্টি সম্বন্ধে আদিপুস্তকের বিবরণ

“আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।” (আদিপুস্তক ১:১) বাইবেলের প্রারম্ভিক কথাগুলো আমাদের সৌরজগতের সৃষ্টি সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যার অন্তর্ভুক্ত আমাদের গ্রহ এবং সেইসঙ্গে কোটি কোটি ছায়াপথে থাকা নক্ষত্ররাজি, যেগুলোর সমন্বয়ে আমাদের নিখিলবিশ্ব গঠিত। বাইবেল অনুসারে, একসময় পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ “ঘোর ও শূন্য ছিল।” সেখানে কোনো মহাদেশ এবং উৎপাদনশীল ভূমি ছিল না। কিন্তু, এর ঠিক পরবর্তী কথাগুলো সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করায়, যা একটা জীবন সংরক্ষণকারী গ্রহের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা বলে বিজ্ঞানীরা মনে করে আর সেটা হল প্রচুর পরিমাণ জল। ঈশ্বরের আত্মা “জলের উপরে অবস্থিতি করিতেছিলেন।”—আদিপুস্তক ১:২.

পৃষ্ঠভাগের জলকে তরল অবস্থায় রাখার জন্য একটা গ্রহকে অবশ্যই সূর্য থেকে উপযুক্ত দূরত্বে থাকতে হবে। “মঙ্গল অত্যধিক ঠাণ্ডা, শুক্র অত্যধিক উত্তপ্ত, পৃথিবী হল একেবারে উপযুক্ত,” গ্রহ সংক্রান্ত বিজ্ঞানী আ্যন্ড্রু ইঙ্গারসোল ব্যাখ্যা করেন। একইভাবে, উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য সেখানে অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে আলো থাকা প্রয়োজন। আর লক্ষণীয় বিষয়টা হল বাইবেলের বিবরণ বলে যে, সৃষ্টির সময়ের প্রথম দিকে ঈশ্বর জলীয় বাষ্পের সেই ঘন মেঘের মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলোকে ভেদ করতে দিয়েছিলেন, যে ঘন মেঘ একটা বাচ্চাকে জড়িয়ে রাখা “পটিকা” বা কাপড়ের মতো মহাসাগরকে আবৃত করে রেখেছিল।—ইয়োব ৩৮:৪, ৯; আদিপুস্তক ১:৩-৫.

আদিপুস্তকের পরবর্তী পদগুলোতে আমরা পড়ি যে, বাইবেল যেটাকে “বিতান” বলে, ঈশ্বর তা সৃষ্টি করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:৬-৮) এই বিতান বিভিন্ন গ্যাস দিয়ে পূর্ণ যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল গঠন করে।

বাইবেল তারপর ব্যাখ্যা করে যে, ঈশ্বর পৃথিবীর আকৃতিহীন পৃষ্ঠভাগকে শুষ্ক ভূমিতে পরিবর্তিত করেন। (আদিপুস্তক ১:৯, ১০) স্পষ্টতই তিনি ভূত্বককে কুঞ্চিত ও আলোড়িত করেন। ফলস্বরূপ, সম্ভবত গভীর খাদ গঠিত হয়েছে এবং মহাসাগরের মধ্য থেকে মহাদেশগুলো উত্থিত হয়েছে।—গীতসংহিতা ১০৪:৬-৮.

অতীতে পৃথিবীর কোনো অনির্দিষ্ট সময়ে, ঈশ্বর মহাসাগরগুলোর মধ্যে আণুবীক্ষণিক জলজ উদ্ভিদ সৃষ্টি করেছিলেন। সূর্য থেকে আসা শক্তিকে ব্যবহার করে, ওই সমস্ত স্বয়ং পুনরুৎপাদনশীল এককোষী উদ্ভিদগুলো বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ছাড়ার সময় কারবন ডাইঅক্সাইডকে খাদ্যে রূপান্তরিত করতে শুরু করে। সৃষ্টির তৃতীয় সময়কালে সেইসমস্ত উদ্ভিদ, যেগুলো অবশেষে ভূমিকে আবৃত করেছিল, সেগুলো সৃষ্টির কারণে এই বিস্ময়কর প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। এইভাবে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা মানুষ ও পশুপাখির জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে জীবন রক্ষা করা সম্ভব করে তোলে।—আদিপুস্তক ১:১১, ১২.

ভূমিকে উৎপাদনশীল করার জন্য, সৃষ্টিকর্তা মাটিতে বিভিন্ন প্রকার অণুজীবের উৎপত্তি ঘটান। (যিরমিয় ৫১:১৫) এই অতি ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো মৃত বস্তুকে পচিয়ে ফেলে, উদ্ভিদ এর বৃদ্ধির জন্য যে-উপাদানগুলো ব্যবহার করে থাকে, সেগুলোকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। মাটিতে থাকা বিশেষ ধরনের ব্যাকটিরিয়া বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানকে উদ্ভিদের জন্য প্রাপ্তিসাধ্য করে তোলে, যাতে সেগুলো বৃদ্ধি পেতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় যে, একমুঠো উর্বর মাটিতে গড়ে ৬০০ কোটি অণুজীব থাকতে পারে!

আদিপুস্তক ১:১৪-১৯ পদ সৃষ্টির চতুর্থ সময়কালে সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজির গঠন সম্পর্কে বর্ণনা করে। প্রথম প্রথম, এটাকে হয়তো আগের শাস্ত্রপদের ব্যাখ্যার সঙ্গে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আদিপুস্তকের লেখক মোশি, সৃষ্টির বিবরণ এমনভাবে লিখেছিলেন যেন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। স্পষ্টতই, সেই সময় থেকে সূর্য, চাঁদ এবং নক্ষত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দৃশ্যমান হতে থাকে।

আদিপুস্তকের বিবরণ সৃষ্টির পঞ্চম সময়কালে সামুদ্রিক এবং ভূমিতে গমনশীল প্রাণী ও সৃষ্টির ষষ্ঠ সময়কালে মানুষের প্রকাশমান হওয়ার কথা উল্লেখ করে।—আদিপুস্তক ১:২০-৩১.

পৃথিবীকে উপভোগ করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছিল

আপনার কি এমন মনে হয় না যে, আদিপুস্তকের বিবরণে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, পৃথিবীতে জীবন উপভোগ করার জন্যই এটা সৃষ্টি করা হয়েছিল? আপনি কি কখনো একটা রোদ ঝলমলে দিনে ঘুম থেকে জেগে উঠে, বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে এবং আপনি যে বেঁচে আছেন, তা অনুভব করে খুশি হয়েছেন? আপনি হয়তো একটা বাগানে হাঁটতে হাঁটতে ফুলের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ উপভোগ করেছেন। অথবা আপনি হয়তো কোনো ফলের বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছু রসালো ফল তুলে নিয়েছেন। এইরকম আনন্দ কিছুতেই সম্ভব নয়, যদি এই বিষয়গুলো না থাকে: (১) পৃথিবীতে জলের প্রাচুর্য, (২) সূর্য থেকে আসা সঠিক পরিমাণ তাপ ও আলো, (৩) সঠিক পরিমাণ গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের বায়ুমণ্ডল এবং (৪) উর্বর ভূমি।

এই সমস্ত উপাদান—যেগুলো মঙ্গল, শুক্র এবং আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য প্রতিবেশী গ্রহগুলোতে অনুপস্থিত—আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়নি। পৃথিবীতে জীবনকে পরিতৃপ্তিদায়ক করে তোলার জন্য সেগুলোকে সুবিন্যস্ত করা হয়েছিল। পরের প্রবন্ধ যেমন ব্যাখ্যা করবে যে, বাইবেল এও বলে সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই চমৎকার গ্রহটাকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন, যা চিরকাল স্থায়ী হবে।

[পাদটীকা]

^ আমাদের সৌরজগতের আভ্যন্তরীণ গ্রহগুলোর মধ্যে চারটেকে—বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গলকে—পৃথিবীতুল্য গ্রহ বলা হয়, কারণ এদের পৃষ্ঠভাগ পাথুরে। প্রকাণ্ড বহিঃস্থ গ্রহগুলো—বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন—মূলত গ্যাসীয় উপাদানে গঠিত।

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স]

“একজন ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে আমাকে যদি সাধারণ, গ্রাম্য লোক, যেমন যে-জাতিগুলোরউদ্দেশে আদিপুস্তক লেখা হয়েছিল, তাদের কাছে পৃথিবীর উৎপত্তি ও এতে জীবনের ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে আধুনিক ধারণাগুলো সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করতে বলা হতো, তা হলে আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে যা বলা আছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করার চেয়ে ভাল আর কিছুই আমি করতে পারতাম না।”—ভূতত্ত্ববিদ ওয়ালেস প্র্যাট।

[৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

জ্যোতির্বিদ্যার জন্যও একেবারে উপযুক্ত

সূর্য যদি আমাদের ছায়াপথের অন্য কোথাও অবস্থিত থাকত, তা হলে আমরা নক্ষত্রগুলোকে এত ভাল করে দেখতে পেতাম না। “আমাদের সৌরজগৎ,” অদ্বিতীয় গ্রহ (ইংরেজি) বইটি ব্যাখ্যা করে, “ধুলোবালিপূর্ণ ও অত্যধিক আলো পরিবেষ্টিত এলাকা থেকে . . . অনেক দূরে অবস্থিত, যা কাছাকাছি এবং নিখিলবিশ্বের দূরবর্তী নক্ষত্রগুলো উভয়কেই সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে দেয়।”

অধিকন্তু, সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যকে ঢেকে ফেলার জন্য চাঁদের আয়তন এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব চাঁদের পক্ষে একেবারে উপযুক্ত। এইরকম অসাধারণ, বিস্ময় উদ্রেককারী ঘটনাগুলো জ্যোতির্বিদদের সূর্য সম্বন্ধে পর্যবেক্ষণ করতে দেয়। এই ধরনের পর্যবেক্ষণ তাদেরকে নক্ষত্রগুলো কীভাবে জ্বলে, সেই সম্বন্ধে অজানা তথ্য প্রকাশ করতে সমর্থ করেছে।

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

চাঁদের ভর পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকাকে স্থির রাখার জন্য যথেষ্ট বড়

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কোন বিষয়গুলো পৃথিবীতে জীবন সম্ভবপর করে? এর প্রচুর জল, সঠিক পরিমাণ আলো ও তাপ, বায়ুমণ্ডল এবং উর্বর ভূমি

[সৌজন্যে]

পৃথিবী: Based on NASA Photo; গম: Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.