সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চরমে যাওয়া কেন এড়িয়ে চলবেন?

চরমে যাওয়া কেন এড়িয়ে চলবেন?

চরমে যাওয়া কেন এড়িয়ে চলবেন?

 ভারসাম্য দেখানোর ক্ষেত্রে যিহোবা হলেন সর্বোত্তম উদাহরণ। “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ” এবং তাঁর ন্যায়বিচার কখনোই কঠোর নয় কারণ তা সবসময়ই করুণার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) তাঁর প্রেম কখনোই নীতিবিরুদ্ধ নয় কারণ তিনি নিখুঁত আইনগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেন। (গীতসংহিতা ৮৯:১৪; ১০৩:১৩, ১৪) আমাদের আদি পিতামাতাকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল, যারা সমস্ত দিক দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। তাদের যেকোনো বিষয়ে চরমে যাওয়ার প্রবণতা ছিল না। কিন্তু, পাপের শুরু এক “কলঙ্ক”—অসিদ্ধতা—নিয়ে এসেছিল, যার ফলস্বরূপ সেই ভারসাম্যতা হারিয়ে যায়।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫.

উদাহরণস্বরূপ: আপনি কি কখনো এমন একটা গাড়ি অথবা সাইকেলে চড়েছেন, যেটার একটা চাকার কোনো অংশ বেশ স্ফীত হয়ে গিয়েছে? কোনো সন্দেহ নেই যে, চালানোর সময়ে সেই বিকৃত অংশ এটাকে ঝাঁকুনিপূর্ণ ও সেইসঙ্গে বিপদজনক করে তোলে। এই ধরনের চাকা আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার বা চুপসে যাওয়ার আগেই মেরামত করা দরকার। একইভাবে, আমাদের অসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব ত্রুটিপূর্ণ। যদি আমরা সেই “স্ফীত অংশকে” বৃদ্ধি পেতে দিই, তা হলে আমাদের জীবনে চলার পথ অনেক ঝাঁকুনিপূর্ণ এমনকি বিপদজনক হতে পারে।

মাঝে মাঝে আমাদের উত্তম গুণাবলি চরমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী ইস্রায়েলীয়দের বস্ত্রের কোণে থোপ রাখতে হতো কিন্তু যিশুর দিনের ফরীশীরা জনতা থেকে নিজেদের আলাদা দেখানোর জন্য ‘আপনাদের বস্ত্রের থোপ’ চরম মাত্রায় ‘বড় করিয়াছিল।’ তাদের উদ্দেশ্য ছিল সহমানবদের থেকে নিজেদের আরও বেশি পবিত্র দেখানো।—মথি ২৩:৫; গণনাপুস্তক ১৫:৩৮-৪০.

আজকে কেউ কেউ সম্ভাব্য যেকোনো উপায়ে, এমনকি অন্যদের হতবাক করে হলেও মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে। এটা আসলে এই ধরনের এক বেপরোয়া চিৎকার হতে পারে: “আমাকে দেখুন! আমিও একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি!” কিন্তু, পোশাক-আশাক, মনোভাব ও কার্যকলাপের ক্ষেত্রে চরমে যাওয়া একজন খ্রিস্টানের প্রকৃত চাহিদাগুলোকে মেটাতে পারবে না।

কাজের প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব

আমরা যে-ই হই না কেন ও যেখানেই থাকি না কেন, গঠনমূলক কাজ হল এমন এক বিষয়, যা আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করে। আমাদের এই ধরনের কাজে পরিতৃপ্তি লাভ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:১৫) তাই, বাইবেল আলস্যকে নিন্দা করে। প্রেরিত পৌল স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “যদি কেহ কার্য্য করিতে না চায়, তবে সে আহারও না করুক।” (২ থিষলনীকীয় ৩:১০) বস্তুতপক্ষে, কাজের প্রতি শিথিল মনোভাব কেবল দরিদ্রতা ও অতৃপ্তিই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরের অসন্তোষও নিয়ে আসতে পারে।

অনেকে আবার বিপরীত ক্ষেত্রে চরমে যায়, কাজপাগল অর্থাৎ তাদের কাজের প্রতি স্বেচ্ছাকৃত দাস হয়ে ওঠে। কাজের উদ্দেশে সকাল সকাল ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও রাতে দেরি করে ফিরে আসার পিছনে তারা হয়তো যুক্তি দেখায় যে, তাদের পরিবারের সর্বোত্তম মঙ্গলের জন্যই তারা তা করে। কিন্তু, কাজের প্রতি এই ধরনের ভক্তি আসলে তাদের পরিবারের ক্ষতি করে। একজন গৃহবধূ, যার স্বামী প্রায়ই অফিসে বাড়তি সময় কাজ করেন, তিনি বলেন: “আমার স্বামীকে আমার ও সন্তানদের কাছে পাওয়ার সুযোগের বিনিময়ে আমি এই বিলাসবহুল বাড়ির সমস্ত জিনিসপত্র আনন্দের সঙ্গে দিয়ে দিতে রাজি আছি।” যারা অতিরিক্ত সময় কাজ করা বেছে নেয়, তাদের রাজা শলোমনের এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করা উচিত: “আমার হস্ত যে সকল কার্য্য করিত, যে পরিশ্রমে আমি পরিশ্রান্ত হইতাম, সে সমস্তের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সে সকলই অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র।”—উপদেশক ২:১১.

হ্যাঁ, কাজের ব্যাপারে আমাদের উভয় ক্ষেত্রেই চরমে যাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা অধ্যবসায়ী কর্মী হতে পারি, একইসঙ্গে আমাদের এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে যে, কাজের দাস হয়ে ওঠা আমাদের সুখ আর খুব সম্ভবত আরও বেশি কিছুকে হরণ করতে পারে।—উপদেশক ৪:৫, ৬.

আনন্দের ক্ষেত্রে চরম মনোভাব এড়িয়ে চলুন

আমাদের দিন সম্বন্ধে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “মনুষ্যেরা . . . ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:২, ৪) বিলাসিতার বা আনন্দের পিছনে ছোটা, লোকেদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরানোর জন্য প্ররোচিত করতে শয়তানের সবচেয়ে কার্যকারী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিনোদন ও আমোদপ্রমোদ যেমন, চরম বা “উত্তেজক” খেলাধুলায় নিমগ্ন হওয়ার মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধরনের কার্যকলাপের তালিকা দিন দিন বেড়েই চলছে এবং এগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন এগুলো এত জনপ্রিয়? রোজকার জীবনযাপনে সন্তুষ্ট নয় এমন অনেক লোক আরও বেশি আনন্দফুর্তির সন্ধান করে। কিন্তু, এই ধরনের আনন্দফুর্তি করে চলার জন্য ঝুঁকির মাত্রাকে বৃদ্ধি করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন খ্রিস্টানরা জীবনের উপহারের প্রতি ও এর দাতার প্রতি সম্মান দেখাতে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলা এড়িয়ে চলে।—গীতসংহিতা ৩৬:৯.

ঈশ্বর যখন প্রথম মানব দম্পতিকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি তাদের কোথায় রেখেছিলেন? এদন উদ্যানে, মূল ভাষায় যার অর্থ “আনন্দ” বা “মনোরম।” (আদিপুস্তক ২:৮) স্পষ্টতই, মানুষের জন্য এক আনন্দময়, মনোরম জীবন ছিল ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের অংশ।

আনন্দের ক্ষেত্রে এক ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব দেখানোর বিষয়ে যিশু আমাদের জন্য এক নিখুঁত উদাহরণ রেখে গিয়েছেন। যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদন করতে তিনি পুরোপুরি নিয়োজিত ছিলেন এবং তিনি কখনো ঈশ্বরের আইন ও নীতিগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করা থেকে বিরত হননি। এমনকি যখন ক্লান্ত ছিলেন, তখনও তিনি প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। (মথি ১৪:১৩, ১৪) হ্যাঁ, যিশু খাবারের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন এবং বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়া করার জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। অবশ্য, তিনি এই বিষয়ে অবগত ছিলেন যে, তাঁর শত্রুদের মধ্যে কেউ কেউ এই কাজগুলো করার কারণে তাঁর সমালোচনা করত। তারা তাঁর সম্বন্ধে বলেছিল: “ঐ দেখ, এক জন পেটুক ও মদ্যপায়ী।” (লূক ৭:৩৪; ১০:৩৮; ১১:৩৭) কিন্তু, যিশু এমনটা বিশ্বাস করতেন না যে, জীবনের সমস্ত আনন্দ পরিহার করার পরই প্রকৃত ভক্তি দেখানো যায়।

স্পষ্টতই, বিনোদনের ক্ষেত্রে আমরা যেকোনোভাবে চরমে যাওয়া এড়িয়ে চলে বিজ্ঞ হই। আনন্দউল্লাস ও আমোদপ্রমোদকে আমাদের জীবনের প্রধান বিষয় করা কখনো প্রকৃত সুখ নিয়ে আসতে পারে না। কিন্তু, এর ফলে আমরা আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষা করতে পারি, যার অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। তবে, আমাদের সমস্ত ধরনের আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করা অথবা যারা ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে জীবন উপভোগ করে, তাদের সমালোচনা করা উচিত নয়।—উপদেশক ২:২৪; ৩:১-৪.

ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করে সুখ লাভ করুন

শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই।” (যাকোব ৩:২) আমরা যখন চরমে যাওয়া এড়ানোর প্রচেষ্টা করি, তখন হয়তো এই বিষয়টাকে আমাদের ক্ষেত্রে সত্য হতে দেখব। কোন বিষয়টা আমাদেরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে? হ্যাঁ, এর জন্য দরকার আমাদের উত্তম গুণাবলি ও দুর্বলতাগুলোকে শনাক্ত করা। এই ধরনের নিরপেক্ষ বিচার করা সহজ নয়। আমরা নিজেদের অজান্তে কিছু ব্যাপারে চরমে যেতে পারি। তাই, অন্যান্য পরিপক্ব খ্রিস্টানের সাহচর্যে থেকে এবং তাদের ভারসাম্যপূর্ণ উপদেশ শুনে আমরা বিজ্ঞ হই। (গালাতীয় ৬:১) আমরা হয়তো একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু অথবা মণ্ডলীর কোনো অভিজ্ঞ প্রাচীনের কাছ থেকে এই ধরনের উপদেশ চাইতে পারি। এই ধরনের বাইবেলভিত্তিক পরামর্শ ও সেইসঙ্গে শাস্ত্র, যিহোবার সামনে প্রকৃতপক্ষে আমাদের কী অবস্থান রয়েছে, তা পরীক্ষা করার জন্য ‘দর্পণ’ হিসেবে কাজে আসতে পারে।—যাকোব ১:২২-২৫.

আনন্দের বিষয় যে, আমরা এমন চরম জীবনযাপন করি না, যা অপ্রতিরোধ্য। প্রাণপণ প্রচেষ্টা ও যিহোবার আশীর্বাদে আমরা ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে উঠতে আর এভাবে সুখী ব্যক্তি হতে পারি। এভাবে খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হতে পারে এবং আমরা সেই ব্যক্তিদের জন্য আরও ভাল উদাহরণ হয়ে উঠতে পারি, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি। সর্বোপরি, এটা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবাকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুকরণ করব।—ইফিষীয় ৫:১.

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

©Greg Epperson/age fotostock