সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘সন্তানেরা, তোমরা পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও’

‘সন্তানেরা, তোমরা পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও’

‘সন্তানেরা, তোমরা পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও’

“সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য।”—ইফিষীয় ৬:১.

১. কীভাবে বাধ্যতা আপনাকে সুরক্ষা করতে পারে?

 আমরা বাধ্য হয়েছি বলে হয়তো এখন বেঁচে রয়েছি কিন্তু অন্যদিকে অন্যেরা বাধ্য হতে ব্যর্থ হয়েছে বলে বেঁচে নেই। কীসের বাধ্য? উদাহরণস্বরূপ, “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত” আমাদের দেহের কাছ থেকে আসা সতর্কবাণীর বাধ্য হওয়া। (গীতসংহিতা ১৩৯:১৪) আমাদের চোখ কালো মেঘ দেখতে পারে এবং আমাদের কান বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পারে। এরপর, বাতাসের মধ্যে বিদ্যমান বৈদ্যুতিক শক্তি আমাদের চুলগুলোকে খাড়া করে দেয়। যাদেরকে সম্ভাব্য বিপদ সম্বন্ধে শেখানো হয়েছে, তাদের কাছে এই চিহ্নগুলো হল জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে এমন বিদ্যুৎ ও শিলাসহ আসন্ন ঝড়ের মধ্যে নিরাপদ স্থান খোঁজার এক সতর্কবাণী।

২. কেন সন্তানদের সতর্কবাণীর প্রয়োজন আর কেন তাদের বাবামার বাধ্য হওয়া উচিত?

অল্পবয়স্করা, সম্ভাব্য বিপদ সম্বন্ধে তোমাদের সতর্কবাণীর প্রয়োজন রয়েছে আর সেই সতর্কবাণী জোগানোর দায়িত্ব হল তোমাদের বাবামার। তোমাদের হয়তো এইরকম কথা বলা হয়েছে বলে তোমরা স্মরণ করতে পারো: “চুলাতে হাত দেবে না। এটা গরম।” “গভীর জলের কাছে যাবে না। বিপদ ঘটবে।” “রাস্তা পার হওয়ার আগে দুদিক দেখে নেবে।” দুঃখের বিষয় যে, বাধ্য না হওয়ায় ছোট ছেলেমেয়েরা আঘাত পেয়েছে অথবা এমনকি মারাও গিয়েছে। তোমাদের বাবামার বাধ্য হওয়া “ন্যায্য”—সঠিক ও উপযুক্ত। এ ছাড়া, এটা জ্ঞানের বা বিজ্ঞতার কাজ। (হিতোপদেশ ৮:৩৩) আরেকটা বাইবেলের পদ বলে যে, এটা আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টের কাছে “তুষ্টিজনক।” বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বর তোমাদেরকে তোমাদের বাবামার বাধ্য থাকার আজ্ঞা দিয়েছেন।—কলসীয় ৩:২০; ১ করিন্থীয় ৮:৬.

বাধ্যতার স্থায়ী পুরস্কার

৩. আমাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকের কাছে “প্রকৃতরূপে জীবন” কী এবং সন্তানরা কীভাবে তা উপভোগ করার আশা রাখতে পারে?

বাবামার বাধ্য হওয়া তোমাদের ‘বর্ত্তমান জীবনকে’ সুরক্ষা করে কিন্তু বাধ্য হওয়া সেই ‘ভবিষ্যৎ জীবন’ উপভোগ করাকেও সম্ভবপর করবে, যেটাকে “প্রকৃতরূপে জীবন” বলা হয়েছে। (১ তীমথিয় ৪:৮; ৬:১৯) আমাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকের কাছে প্রকৃতরূপে জীবন হল, ঈশ্বরের নতুন জগতের পৃথিবীতে সীমাহীন জীবন, যে-সম্বন্ধে তিনি সেইসমস্ত ব্যক্তির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করে। সেই আজ্ঞাগুলোর মধ্যে একটি প্রধান আজ্ঞা বলে: “‘তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও,’—এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা —‘যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে [“পৃথিবীতে,” NW] দীর্ঘায়ু হও।’” তাই, তোমরা যদি তোমাদের বাবামার বাধ্য হও, তা হলে তোমরা সুখী হবে। তোমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে এবং তোমরা হয়তো পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন উপভোগ করতে পারবে!—ইফিষীয় ৬:২, ৩.

৪. কীভাবে সন্তানরা ঈশ্বরকে সম্মান করতে পারে আর এভাবে উপকার লাভ করতে পারে?

তোমরা যখন তোমাদের বাবামার বাধ্য থাকার দ্বারা তাদের সমাদর বা সম্মান করো, তখন তোমরা ঈশ্বরকেও সম্মান করে থাকো কারণ তিনিই তোমাদেরকে তাদের বাধ্য থাকার আজ্ঞা দিয়েছেন। একই সময়ে তোমরা উপকারও লাভ করে থাকো। “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি,” বাইবেল বলে। (যিশাইয় ৪৮:১৭; ১ যোহন ৫:৩) কীভাবে বাধ্য হওয়া তোমাদেরকে উপকৃত করে? এটা তোমাদের মা ও বাবাকে সুখী করে এবং এর ফলে তারা নিশ্চিতভাবে এমন সব উপায়ে তাদের আনন্দকে প্রকাশ করবে, যা তোমাদের জীবনকে আরও সুখী করবে। (হিতোপদেশ ২৩:২২-২৫) কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যে, তোমাদের বাধ্যতা তোমাদের স্বর্গীয় পিতাকে সুখী করে আর তিনি তোমাদেরকে চমৎকার উপায়গুলোতে পুরস্কৃত করবেন! এসো আমরা দেখি যে, কীভাবে যিহোবা যিশুকে আশীর্বাদ ও সুরক্ষা করেছিলেন, যিনি যিহোবা সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি সর্ব্বদা তাঁহার সন্তোষজনক কার্য্য করি।”—যোহন ৮:২৯.

যিশু—একজন উত্তম কর্মী

৫. যিশু যে একজন উত্তম কর্মী ছিলেন, তা বিশ্বাস করার কোন কোন কারণ রয়েছে?

যিশু ছিলেন তাঁর মা মরিয়মের প্রথম সন্তান। তাঁর পালক বাবা যোষেফ ছিলেন একজন সূত্রধর। যিশুও একজন সূত্রধর হয়েছিলেন, স্পষ্টতই যোষেফের কাছ থেকে সেই পেশা সম্বন্ধে শিখেছিলেন। (মথি ১৩:৫৫; মার্ক ৬:৩; লূক ১:২৬-৩১) যিশু কী ধরনের সূত্রধর ছিলেন বলে তোমরা মনে করো? অলৌকিকভাবে তাঁর কুমারী মা তাঁকে গর্ভে ধারণ করার আগে, তিনি যখন স্বর্গে ছিলেন, তখন ব্যক্তিরূপে মূর্ত প্রজ্ঞা হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি [ঈশ্বরের] কাছে কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] ছিলাম; আমি দিন দিন আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহলাদ করিতাম।” ঈশ্বর যিশুর প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন, যিনি স্বর্গে একজন উত্তম কর্মী ছিলেন। তোমরা কি মনে করো যে, পৃথিবীতে তিনি যখন অল্পবয়স্ক ছিলেন, তখনও তিনি একজন উত্তম কর্মী অর্থাৎ একজন উত্তম সূত্রধর হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন?—হিতোপদেশ ৮:৩০; কলসীয় ১:১৫, ১৬.

৬. (ক) কেন তোমরা মনে করো যে, অল্পবয়স্ক হিসেবে যিশু হয়তো ঘরে কাজকর্ম করেছেন? (খ) কোন কোন উপায়ে সন্তানরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারে?

কোন সন্দেহ নেই যে, যিশু যখন ছোট ছিলেন, তখন তিনি মাঝেমধ্যে খেলাধুলা করতেন, এমনকি বাইবেলও বলে যে, প্রাচীনকালের ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করত। (সখরিয় ৮:৫; মথি ১১:১৬, ১৭) কিন্তু, তোমরা নিশ্চিত থাকতে পারো যে, দরিদ্র ও বড় পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান হিসেবে তাঁকে যোষেফের কাছ থেকে একজন সূত্রধর হওয়ার প্রশিক্ষণ লাভ করার পাশাপাশি ঘরের টুকিটাকি কাজও করতে হতো। পরবর্তী সময়ে, যিশু একজন প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন এবং তাঁর পরিচর্যায় নিজেকে এতটাই বিলিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁকে ব্যক্তিগত অনেক আরাম-আয়েশ ত্যাগ করতে হয়েছিল। (লূক ৯:৫৮; যোহন ৫:১৭) তোমরা যে-উপায়গুলোতে যিশুকে অনুকরণ করতে পারো, তা কি দেখতে পাচ্ছ? বাবামা কি তোমাদেরকে তোমাদের রুম পরিষ্কার করতে অথবা ঘরের টুকিটাকি কাজ করতে বলে? তারা কি তোমাদেরকে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে বলার এবং অন্যদের কাছে তোমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে বলতে বলার মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনায় অংশ নিতে উৎসাহিত করে? অল্পবয়স্ক যিশু এই ধরনের অনুরোধের প্রতি কীভাবে সাড়া দিতেন বলে তোমাদের মনে হয়?

একজন উত্তম বাইবেল ছাত্র ও শিক্ষক

৭. (ক) যিশু হয়তো কাদের সঙ্গে নিস্তারপর্বের জন্য যাত্রা করেছিলেন? (খ) অন্যেরা যখন বাড়ি ফেরার পথে যাত্রা করছিল, তখন যিশু কোথায় ছিলেন এবং কেন তিনি সেখানে ছিলেন?

ইস্রায়েলীয় পরিবারের প্রত্যেক পুরুষ সদস্যকে তিনটে যিহুদি উৎসবের সময় মন্দিরে যিহোবার উপাসনা করার জন্য যেতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৬) যিশুর বয়স যখন ১২ বছর, তখন তাঁর পুরো পরিবার হয়তো নিস্তারপর্বের জন্য যিরূশালেমে যাত্রা করেছিল। সেই যাত্রায় সম্ভবত তাঁর সৎ ভাই ও বোনেরাও ছিল। যাই হোক, যিশুর পরিবারের সঙ্গে সেই যাত্রায় হয়তো শালোমী, সম্ভবত যিনি মরিময়ের বোন ছিলেন তিনি, তার স্বামী সিবদিয় এবং তাদের সন্তান যাকোব ও যোহনও ছিল, যারা পরে প্রেরিত হয়েছিল। * (মথি ৪:২০, ২১; ১৩:৫৪-৫৬; ২৭:৫৬; মার্ক ১৫:৪০; যোহন ১৯:২৫) ফেরার পথে যোষেফ ও মরিয়ম হয়তো মনে করেছিল যে, যিশু আত্মীয়স্বজনের মধ্যে রয়েছেন, তাই প্রথমে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ করা হয়নি। তিনদিন পরে, মরিয়ম ও যোষেফ অবশেষে যখন যিশুকে খুঁজে পেয়েছিলেন, তখন তিনি ধর্মধামে ছিলেন, “গুরুদিগের মধ্যে বসিয়া তাঁহাদের কথা শুনিতেছিলেন ও তাঁহাদিগকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন।”—লূক ২:৪৪-৪৬.

৮. ধর্মধামে যিশু কী করেছিলেন আর কেন লোকেরা আশ্চর্য হয়েছিল?

কোন উপায়ে যিশু গুরুদের “জিজ্ঞাসা” বা প্রশ্ন করছিলেন? তাঁর প্রশ্ন করা হয়তো কেবল তাঁর কৌতূহল মেটানো অথবা শুধু তথ্য জানার জন্য ছিল না। এখানে যে-গ্রিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা এমন প্রশ্ন করাকে নির্দেশ করতে পারে, যা বিচার সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর এভাবে পালটা প্রশ্ন করার বিষয়টা জড়িত থাকতে পারে। হ্যাঁ, এমনকি একজন অল্পবয়স্ক হয়েও যিশু এমন একজন বাইবেল ছাত্র হিসেবে বৃদ্ধি পেয়েছিলেন, যিনি বিজ্ঞ ধর্মীয় গুরুদের চমৎকৃত করেছিলেন! বাইবেল বলে, “যাহারা তাঁহার কথা শুনিতেছিল, তাহারা সকলে তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তরে অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল।”—লূক ২:৪৭.

৯. বাইবেল অধ্যয়ন করার ব্যাপারে কীভাবে তুমি যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারো?

তোমরা কী মনে করো, কেন যিশু অল্পবয়সে তাঁর বাইবেলের জ্ঞান দিয়ে এমনকি অভিজ্ঞ গুরুদের অবাক করে দিয়েছিলেন? অবশ্যই, তাঁকে ঈশ্বরভয়শীল বাবামা দেওয়ার মাধ্যমে আশীর্বাদ করা হয়েছিল, যারা একেবারে ছোটবেলা থেকেই তাঁকে ঐশিক নির্দেশনা দিয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১২:২৪-২৭; দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৯; মথি ১:১৮-২০) আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যোষেফ ছোট্ট যিশুকে শাস্ত্র পাঠ ও আলোচনা শোনানোর জন্য সমাজগৃহে নিয়ে যেতেন। তোমাদেরকেও কি এমন বাবামা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে, যারা তোমাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে এবং তোমাদেরকে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়ে যায়? তোমরা কি তাদের প্রচেষ্টাগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করো, ঠিক যেমন যিশু তাঁর বাবামার প্রচেষ্টাগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন? তোমরা যা শেখো, তা কি অন্যদের কাছে বলো, যেমনটা যিশু বলেছিলেন?

যিশু বশীভূত ছিলেন

১০. (ক) কেন যিশুর বাবামার জানা উচিত ছিল যে, তাঁকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে? (খ) সন্তানদের জন্য যিশু কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

১০ তিনদিন পরে অবশেষে যিশুকে ধর্মধামে পেয়ে মরিয়ম ও যোষেফ কেমন বোধ করেছিল বলে তোমরা মনে করো? কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা অনেক স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু, তিনি কোথায় ছিলেন তা তাঁর বাবামা জানত না বলে যিশু বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তারা উভয়েই যিশুর অলৌকিক জন্ম সম্বন্ধে জানত। অধিকন্তু, বিস্তারিত বিষয় সম্বন্ধে অবগত না থাকলেও, পরিত্রাতা ও ঈশ্বরের রাজ্যের শাসক হিসেবে তাঁর ভবিষ্যৎ ভূমিকা সম্বন্ধে তারা কিছুটা জানত। (মথি ১:২১; লূক ১:৩২-৩৫; ২:১১) তাই, যিশু তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কেন আমার অন্বেষণ করিলে? আমার পিতার গৃহে আমাকে থাকিতেই হইবে, ইহা কি জানিতে না?” কিন্তু, বাধ্য হয়ে যিশু তাঁর বাবামার সঙ্গে গিয়েছিলেন এবং নাসরতে তাদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। বাইবেল বলে: “তিনি . . . তাঁহাদের বশীভূত থাকিলেন।” অধিকন্তু, “তাঁহার মাতা সমস্ত কথা আপন হৃদয়ে রাখিলেন।”—লূক ২:৪৮-৫১.

১১. যিশুর কাছ থেকে বাধ্যতা সম্বন্ধে তোমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারো?

১১ তোমরা কি সবসময় তোমাদের বাবামার বাধ্য হয়ে যিশুকে অনুকরণ করতে সহজ বোধ করো? নাকি তোমরা এইরকম মনে করো যে, বেশির ভাগ সময়ই তারা এই জগৎকে বুঝতে পারে না এবং তাদের চেয়ে তোমরা আরও বেশি জানো? এটা ঠিক যে, কিছু বিষয়—হতে পারে সেল ফোন, কমপিউটার অথবা অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে—তোমরা হয়তো আরও ভাল জানো। কিন্তু, যিশুর সম্বন্ধে চিন্তা করো, যিনি “তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তর” দ্বারা অভিজ্ঞ গুরুদের আশ্চর্য করে দিয়েছিলেন। তোমরা হয়তো একমত হবে যে, তাঁর তুলনায় তোমরা সামান্যই জানো। তা সত্ত্বেও, যিশু তাঁর বাবামার বশীভূত ছিলেন। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি সবসময় তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন। তবুও, “তিনি . . . তাঁহাদের বশীভূত থাকিলেন”—তাঁর সমস্ত কিশোর বয়সে। এই উদাহরণ থেকে তোমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারো বলে তোমরা মনে করো?—দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৬, ২৯.

বাধ্যতা—এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা

১২. কীভাবে বাধ্যতা তোমাদের জীবন রক্ষা করতে পারে?

১২ বাধ্য হওয়া সবসময় সহজ নয়, যেমনটা কয়েক বছর আগের একটা উদাহরণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, যখন দুজন অল্পবয়সি মেয়ে ব্রিজ দিয়ে পার হওয়ার পরিবর্তে ছয় লেনবিশিষ্ট রাজপথ দিয়ে প্রায় দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। “আমাদের সঙ্গে এসো জন,” তারা তাদের এক সঙ্গীকে পীড়াপীড়ি করছিল, যখন সে ওপরে ব্রিজের দিকে যাচ্ছিল। “তুমি কি আমাদের সঙ্গে পার হচ্ছ না?” সে যখন ইতস্তত করছিল, তখন একজন মেয়ে তাকে তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, “তুমি একটা ভিতু!” জন নির্ভয়ে বলেছিল, “আমাকে আমার মায়ের কথা শুনতে হবে।” ব্রিজ দিয়ে পার হওয়ার সময় কিছুক্ষণের মধ্যে সে টায়ার ঘর্ষণের তীব্র শব্দ শোনে এবং ঠিক তখনই নীচে তাকিয়ে দেখে, যখন সেই মেয়েরা একটা গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খায়। একজন মেয়ে মারা যায় এবং আরেকজন এত গুরুতরভাবে আঘাত পায় যে, তার একটা পা কেটে ফেলতে হয়। সেই মেয়েদের মা, যিনি তার মেয়েদেরকেও রাস্তার মধ্যে দিয়ে পার না হয়ে ব্রিজ ব্যবহার করার জন্য বলেছিলেন, তিনি পরবর্তী সময়ে জনের মাকে বলেছিলেন, “তারা যদি আপনার ছেলের মতো বাধ্য হতো।”—ইফিষীয় ৬:১.

১৩. (ক) কেন তোমাদের বাবামার বাধ্য হওয়া উচিত? (খ) কখন একজন সন্তানের পক্ষে বাবা অথবা মা যা বলেন, তা না করা উপযুক্ত হবে?

১৩ কেন ঈশ্বর বলেছেন: “সন্তানেরা, তোমরা . . . পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও”? তোমাদের বাবামার বাধ্য হওয়ার দ্বারা তোমরা ঈশ্বরেরও বাধ্য হয়ে থাকো। তা ছাড়াও, তোমাদের চেয়ে তোমাদের বাবামা আরও বেশি অভিজ্ঞ। উদাহরণস্বরূপ, ওপরে উল্লেখিত দুর্ঘটনা ঘটার মাত্র পাঁচ বছর আগে জনের মায়ের একজন বান্ধবীর সন্তানও সেই একই রাজপথ পার হওয়ার সময় মারা গিয়েছিল! এটা ঠিক যে, সবসময় তোমাদের বাবামার বাধ্য হওয়া হয়তো সহজ নয় কিন্তু ঈশ্বর বলেছেন যে, তোমাদের উচিত তাদের বাধ্য হওয়া। অন্যদিকে, তোমাদের বাবামা—অথবা অন্যেরা—যদি তোমাদেরকে মিথ্যা বলতে, চুরি করতে অথবা ঈশ্বর অনুমোদন করেন না এমন কিছু করতে বলে, তা হলে তোমাদেরকে অবশ্যই “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” এই কারণে বাইবেল বলে যে, “তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও।” এর অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বরের আইনগুলোর সঙ্গে মিল রয়েছে এমন সমস্ত বিষয়ে তোমাদের বাবামার বাধ্য হওয়া।—প্রেরিত ৫:২৯.

১৪. কেন সিদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে বাধ্যতা সহজ কিন্তু কেন তাকেও বাধ্যতা সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করতে হবে?

১৪ তোমরা কি মনে করো যে, তোমরা যদি সিদ্ধ—অর্থাৎ যিশুর মতো “বিমল, পাপিগণ হইতে পৃথক্‌কৃত”—হতে, তা হলে সবসময় তোমাদের বাবামার বাধ্য হওয়া সহজ হতো? (ইব্রীয় ৭:২৬) তোমরা যদি সিদ্ধ হতে, তা হলে মন্দ বিষয়ের প্রতি তোমাদের প্রবণতা থাকত না, যেমনটা এখন রয়েছে। (আদিপুস্তক ৮:২১; গীতসংহিতা ৫১:৫) কিন্তু, এমনকি যিশুকেও বাধ্যতা সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করতে হয়েছিল। বাইবেল বলে: “যদিও [যিশু] পুত্ত্র ছিলেন, তথাপি যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন।” (ইব্রীয় ৫:৮) কীভাবে দুঃখভোগ করা যিশুকে বাধ্যতা সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করেছিল, যে-শিক্ষা তাঁকে কখনো স্বর্গে শিখতে হয়নি?

১৫, ১৬. কীভাবে যিশু বাধ্যতা সম্বন্ধে শিখেছিলেন?

১৫ যিহোবার নির্দেশাধীনে, যোষেফ এবং মরিয়ম যিশুকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছিলেন, যখন তিনি শিশু ছিলেন। (মথি ২:৭-২৩) কিন্তু, অবশেষে ঈশ্বর যিশুর ওপর থেকে অতিপ্রাকৃত সুরক্ষা সরিয়ে নিয়েছিলেন। যিশুর মানসিক ও শারীরিক কষ্ট এতটাই তীব্র ছিল যে, বাইবেল বলে তিনি “প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে . . . প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন।” (ইব্রীয় ৫:৭) কখন তা ঘটেছিল?

১৬ বিশেষত এটা যিশুর পার্থিব জীবনের চূড়ান্ত সময়ে ঘটেছিল, যখন শয়তান তাঁর নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিল। তথাকথিত মন্দ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর মৃত্যু কীভাবে তাঁর পিতার সুনামের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, সেই চিন্তা দ্বারা যিশু স্পষ্টতই এতটা যন্ত্রণা পাচ্ছিলেন যে, যখন “তিনি [গেৎশিমানী বাগানে] . . . আরও একাগ্রভাবে প্রার্থনা করিলেন,” তখন “তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিত পড়িতে লাগিল।” কয়েক ঘন্টা পরে যাতনাদণ্ডে তাঁর মৃত্যু এতটাই বেদনাদায়ক ছিল যে, যিশু “প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত” করেছিলেন। (লূক ২২:৪২-৪৪; মার্ক ১৫:৩৪) এভাবে তিনি “যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন” এবং এর দ্বারা তাঁর পিতার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিলেন। এখন স্বর্গে যিশু আমাদের বেদনা বুঝতে পারেন, যখন আমরা প্রায়ই বাধ্য হওয়ার জন্য লড়াই করি।—হিতোপদেশ ২৭:১১; ইব্রীয় ২:১৮; ৪:১৫.

বাধ্যতার শিক্ষা সম্বন্ধে শেখা

১৭. শাসন লাভ করাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১৭ তোমাদের বাবামা যখন তোমাদের শাসন করে, তখন এটা দেখায় যে তারা তোমাদের জন্য সর্বোত্তমটা চায়, তারা তোমাদেরকে ভালবাসে। “পিতা যাহাকে শাসন না করেন, এমন পুত্ত্র কোথায়?” বাইবেল প্রশ্ন করে। তোমাদের বাবামা যদি তোমাদেরকে সংশোধন করার জন্য সময় না করে নিয়ে ও প্রচেষ্টা না করে যথেষ্ট ভালবাসা না দেখায়, তা হলে সেটা কি দুঃখজনক হবে না? একইভাবে, যিহোবা তোমাদেরকে ভালবাসেন বলে তিনি সংশোধন করেন। “কোন শাসনই আপাততঃ আনন্দের বিষয় বোধ হয় না, কিন্তু দুঃখের বিষয় বোধ হয়; তথাপি তদ্দ্বারা যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে, তাহা পরে তাহাদিগকে ধার্ম্মিকতার শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে।”—ইব্রীয় ১২:৭-১১.

১৮. (ক) প্রেমের সঙ্গে করা শাসন কীসের প্রমাণ? (খ) কোন কোন ইতিবাচক উপায়ে তোমরা লোকেদের এই ধরনের শাসনের দ্বারা গড়ে উঠতে দেখেছ?

১৮ প্রাচীন ইস্রায়েলের একজন রাজা, যার মহান প্রজ্ঞার জন্য যিশু তার সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, তিনি বাবামার প্রেমের সঙ্গে করা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বলেছিলেন। শলোমন লিখেছিলেন, “যে দণ্ড না দেয়, সে পুত্ত্রকে দ্বেষ করে; কিন্তু যে তাহাকে প্রেম করে, সে সযত্নে শাস্তি দেয়।” শলোমন এমনকি বলেছিলেন যে, যে-ব্যক্তি প্রেমের সঙ্গে করা সংশোধন গ্রহণ করেন, তিনি মৃত্যু থেকে তার প্রাণকে রক্ষা করেন। (হিতোপদেশ ১৩:২৪; ২৩:১৩, ১৪; মথি ১২:৪২) একজন খ্রিস্টান মহিলা স্মরণ করেন যে, তিনি ছোট থাকতে যখন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে খারাপ আচরণ করতেন, তখন তার বাবা বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসন করার প্রতিজ্ঞা করতেন। এখন তিনি তার বাবার প্রেমের সঙ্গে শাসন করার বিষয়টা আনন্দের সঙ্গে স্মরণ করেন, যে-শাসন তার জীবনকে উত্তমরূপে গড়ে তুলেছে।

১৯. কেন বিশেষভাবে তোমাদের বাবামার প্রতি বাধ্য হওয়া উচিত?

১৯ তোমাদের যদি এমন বাবামা থাকে, যারা তোমাদেরকে ভালবাসে বলে প্রেমের সঙ্গে শাসন করতে সময় করে নেয় ও প্রচেষ্টা করে থাকে, তা হলে কৃতজ্ঞ হও। তাদের বাধ্য থাকো, ঠিক যেমন আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্ট তাঁর বাবামা যোষেফ ও মরিয়মের বাধ্য ছিলেন। কিন্তু, বিশেষভাবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা ঈশ্বর তাদের বাধ্য থাকতে বলেছেন বলে তাদের বাধ্য হও। এভাবে তোমরা নিজেদের জন্য উপকার নিয়ে আসবে আর এতে “যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও।”—ইফিষীয় ৬:২, ৩.

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের ২য় খণ্ডের ৮৪১ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• সন্তানরা তাদের বাবামার বাধ্য হয়ে কোন কোন উপকার লাভ করতে পারে?

• একজন সন্তান হিসেবে কীভাবে যিশু তাঁর বাবামার বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

• কীভাবে যিশু বাধ্যতা সম্বন্ধে শিখেছিলেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

বারো বছর বয়সি যিশু শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ছিলেন

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে যিশু দুঃখভোগ থেকে বাধ্যতা সম্বন্ধে শিখেছিলেন?