সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্ত্রীরা—আপনাদের স্বামীদের গভীর সম্মান করুন

স্ত্রীরা—আপনাদের স্বামীদের গভীর সম্মান করুন

স্ত্রীরা—আপনাদের স্বামীদের গভীর সম্মান করুন

“নারীগণ, তোমরা . . . নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও।”—ইফিষীয় ৫:২২.

১. স্বামীকে সম্মান করা কেন প্রায়ই কঠিন হয়ে থাকে?

 অনেক দেশে যখন কোনো যুগল বিয়ে করে, তখন কনে একটা অঙ্গীকার করেন, যেখানে প্রতিজ্ঞা করা হয় যে তিনি তার স্বামীকে গভীরভাবে সম্মান করবেন। কিন্তু, অনেক স্বামী তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করে, তার ওপর নির্ভর করে যে, সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী জীবনযাপন করা কঠিন কি না। তা সত্ত্বেও, বিয়ের সূচনাটা অপূর্বভাবেই হয়েছিল। ঈশ্বর প্রথম মানুষ আদমের কাছ থেকে একটা পাঁজর নিয়েছিলেন এবং নারীকে তৈরি করেছিলেন। আদম অভিভূত হয়ে বলেছিলেন: “এবার [হইয়াছে]; ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস।”—আদিপুস্তক ২:১৯-২৩.

২. কীভাবে সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের প্রতি নারীদের ভূমিকা ও মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে?

সেই উত্তম সূচনা সত্ত্বেও, ১৯৬০ দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে নারী স্বাধীনতা নামক এক আন্দোলন—পুরুষ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য নারীদের এক প্রচেষ্টা—শুরু হয়। সেই সময়, পরিবারকে পরিত্যাগ করত এমন স্বামী ও স্ত্রীর অনুপাত ছিল যথাক্রমে প্রায় ৩০০ ও ১. আর ১৯৬০ এর দশকের শেষে সেই অনুপাত পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল যথাক্রমে প্রায় ১০০ ও ১. এখন দেখা যাচ্ছে যে, পুরুষদের মতো নারীরাও কটুক্তি, মদ্যপান, ধূমপান ও অনৈতিক আচরণ করে থাকে। তা হলে, নারীরা কি আগের চেয়ে সুখী? না। কিছু দেশে বিয়ে করেছে এমন লোকেদের প্রায় অর্ধেকই অবশেষে বিবাহবিচ্ছেদ করেছে। কিছু নারীর বৈবাহিক অবস্থাকে উন্নত করার প্রচেষ্টা কী বিষয়গুলোকে আরও ভাল করেছে, নাকি খারাপের দিকে নিয়ে গিয়েছে?—২ তীমথিয় ৩:১-৫.

৩. সেই মূল সমস্যাটা কী, যা বিয়েকে প্রভাবিত করে?

মূল সমস্যাটা কী? কিছুটা হলেও এটা হল সেই সমস্যা, যা বিদ্রোহী দূত অর্থাৎ “পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়,” তার দ্বারা হবার প্রতারিত হওয়ার সময় থেকে বিদ্যমান রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯; ১ তীমথিয় ২:১৩, ১৪) ঈশ্বর যা শিক্ষা দিয়েছিলেন, শয়তান সেটাকে অবজ্ঞা করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, বিয়েকে দিয়াবল কড়াকড়ি ও কঠোর বলে তুলে ধরেছিল। এই জগতের—যার শাসক হচ্ছে সে—প্রচারমাধ্যমের দ্বারা সে যে-অপপ্রচার চালিয়ে থাকে, তা ঈশ্বরের নির্দেশনাকে অন্যায্য ও সেকেলে বলে তুলে ধরার জন্য তৈরি করা হয়েছে। (২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪) কিন্তু আমরা যদি বিয়েতে একজন নারীর ভূমিকা সম্বন্ধে ঈশ্বর কী বলেন, সেটা খোলাখুলিভাবে পরীক্ষা করি, তা হলে আমরা দেখব যে, ঈশ্বরের বাক্য কত বিজ্ঞতাপূর্ণ ও ব্যবহারিক।

যারা বিয়ে করে, তাদের প্রতি সাবধানবাণী

৪, ৫. (ক) বিয়ে সম্বন্ধে বিবেচনা করার সময় কেন সাবধান থাকার উপদেশ দেওয়া হয়? (খ) বিয়ের জন্য রাজি হওয়ার আগে একজন নারীর কী করা উচিত?

বাইবেল সাবধানবাণী জোগায়। এটি বলে যে, দিয়াবল শাসিত এই জগতে এমনকি যাদের বিয়ে সফল, তাদের প্রতিও “ক্লেশ” ঘটবে। তাই, যদিও বিয়ে হল এক ঐশিক ব্যবস্থা, তবুও বাইবেল তাদেরকে সাবধান করে, যারা বিয়ে করে থাকে। স্বামী মারা যাওয়ায় পুনর্বিবাহ করার জন্য মুক্ত ছিলেন এমন একজন নারী সম্বন্ধে একজন অনুপ্রাণিত বাইবেল লেখক এই কথা বলেছিলেন: “সে অমনি থাকিলে আরও ধন্যা।” যিশুও সেই ব্যক্তিদেরকে অবিবাহিত থাকার জন্য সুপারিশ করেছিলেন, যারা “গ্রহণ করিতে পারে।” কিন্তু, কেউ যদি বিয়ে করা বেছে নেয়, তা হলে সেটা কেবল “প্রভুতেই” হওয়া উচিত অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত একজন উপাসককেই করা উচিত।—১ করিন্থীয় ৭:২৮, ৩৬-৪০; মথি ১৯:১০-১২.

বাইবেলের যে-সাবধানবাণীর কারণে বিশেষত একজন নারীর সেই ব্যক্তির প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাকে তিনি বিয়ে করবেন, তা হল: “সধবা স্ত্রী ব্যবস্থা দ্বারা [স্বামীর] কাছে আবদ্ধ থাকে।” একমাত্র তিনি যদি মারা যান অথবা অনৈতিক কাজ করেন আর এর ফলে দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকে, তা হলে সেই স্ত্রী “ঐ ব্যবস্থা হইতে স্বাধীন।” (রোমীয় ৭:২, ৩) প্রথম দেখাতেই প্রেমের অনুভূতি হয়তো সুখকর রোমান্টিকতার জন্য যথেষ্ট হতে পারে কিন্তু এক সুখী বিয়ের জন্য তা পর্যাপ্ত ভিত্তি নয়। তাই, একজন অবিবাহিত নারীর নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘আমি কি এমন এক ব্যবস্থার মধ্যে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক, যেখানে আমি এই পুরুষের ব্যবস্থার অধীনে আসব?’ এই প্রশ্ন বিবেচনা করার সময় হল বিয়ের আগে, বিয়ের পরে নয়।

৬. আজকে অধিকাংশ নারী কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে আর কেন তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ?

আজকে অনেক জায়গায়, একজন নারী বিয়ের প্রস্তাবকে হয় গ্রহণ করতে, না হয় প্রত্যাখ্যান করতে পারে। কিন্তু, একটা বিজ্ঞতাপূর্ণ বাছাই করা হয়তো একজন নারীর পক্ষে সবচেয়ে কঠিন হতে পারে, যেহেতু বিয়ের মাধ্যমে যে-অন্তরঙ্গতা ও প্রেম লাভ করা যায়, সেই বিষয়ে তার আকাঙ্ক্ষা অনেক তীব্র হতে পারে। একজন লেখক বলেছিলেন: “যতই আমরা একটা বিষয় করতে চাই—হোক তা বিয়ে করা অথবা একটা পর্বতে আরোহণ করা—ততই আমরা ধরে নিই যে, পরিস্থিতিগুলো উত্তম আর শুধু সেই তথ্যের ওপরই মনোযোগ দিই, যে-তথ্য আমরা শুনতে চাই।” একজন পর্বতারোহীর জন্য এক অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত তার জীবন কেড়ে নিতে পারে; একইভাবে একজন বিবাহসাথির মূর্খতাপূর্ণ বাছাই ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

৭. একজন সাথি খোঁজার বিষয়ে কোন বিজ্ঞ পরামর্শ জোগানো হয়েছে?

যে-পুরুষ একজন নারীকে প্রস্তাব দেয়, তার ব্যবস্থার অধীনে থাকার সঙ্গে কী জড়িত হতে পারে, তা সেই নারীর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। কয়েক বছর আগে একজন ভারতীয় অল্পবয়সি মেয়ে বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করেছিল: “আমাদের বাবামা আমাদের চেয়ে বয়স্ক ও বিজ্ঞ আর তারা আমাদের মতো সহজেই প্রতারিত হয় না। . . . আমি খুব সহজেই ভুল করতে পারতাম।” বাবামা এবং অন্যেরা যে-সাহায্য জুগিয়ে থাকে, তা গুরুত্বপূর্ণ। একজন বিজ্ঞ পরামর্শদাতা অনেক বছর ধরে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদেরকে তাদের সম্ভাব্য বিবাহসাথির বাবামাকে ও সেইসঙ্গে বাবামা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তার আচারব্যবহারকে মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করতে উৎসাহিত করে আসছেন।

যিশু যেভাবে বশ্যতা দেখিয়েছিলেন

৮, ৯. (ক) ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বশ্যতাকে যিশু কীভাবে দেখেছিলেন? (খ) বশ্যতা থেকে কোন উপকার লাভ করা যেতে পারে?

যদিও বশ্যতা দেখানো কঠিন হতে পারে কিন্তু নারীরা এটাকে সম্মানজনক হিসেবে দেখতে পারে, এমনকি যেমনটা যিশুও দেখেছিলেন। যদিও ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বশ্যতার সঙ্গে যাতনাদণ্ডে মৃত্যুদণ্ডসহ দুঃখভোগ জড়িত ছিল কিন্তু তিনি ঈশ্বরের প্রতি বশীভূত থেকে আনন্দ লাভ করেছিলেন। (লূক ২২:৪১-৪৪; ইব্রীয় ৫:৭, ৮; ১২:৩) নারীরা উদাহরণ হিসেবে যিশুর প্রতি দৃষ্টি দিতে পারে কারণ বাইবেল বলে: “স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) কিন্তু উল্লেখযোগ্য যে, নারীরা যখন বিয়ে করে কেবলমাত্র তখনই যে তারা পুরুষের মস্তকপদের অধীনে আসে, তা নয়।

বাইবেল ব্যাখ্যা করে যে, বিবাহিত হোক বা না হোক, তাদের সেই আধ্যাত্মিক যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষদের মস্তকপদের বশীভূত হওয়া উচিত, যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করে থাকে। (১ তীমথিয় ২:১২, ১৩; ইব্রীয় ১৩:১৭) নারীরা যখন বশীভূত হওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশনা পালন করে, তখন ঈশ্বরের সাংগঠনিক ব্যবস্থায় তারা দূতদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করে। (১ করিন্থীয় ১১:৮-১০) অধিকন্তু, বয়স্ক বিবাহিত নারীরা তাদের উত্তম উদাহরণ ও উপকারী বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে যুবতী নারীদের “আপন আপন স্বামীর বশীভূতা” হতে শিক্ষা দেয়।—তীত ২:৩-৫.

১০. কীভাবে যিশু বশ্যতা দেখানোর ক্ষেত্রে এক উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১০ যিশু উপযুক্ত বশ্যতার মূল্য সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন। একবার তিনি প্রেরিত পিতরকে তাদের উভয়ের জন্যই মনুষ্য কর্তৃপক্ষদের কাছে কর দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন আর এমনকি তা দেওয়ার জন্য তিনি পিতরকে করের টাকা জুগিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা প্রভুর নিমিত্ত মানব-সৃষ্ট সমস্ত নিয়োগের বশীভূত হও।” (১ পিতর ২:১৩; মথি ১৭:২৪-২৭) যিশুর বশ্যতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “তিনি . . . আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, . . . আজ্ঞাবহ হইলেন।”—ফিলিপীয় ২:৫-৮.

১১. কেন পিতর স্ত্রীদেরকে এমনকি সেই স্বামীদেরও বশীভূত থাকতে উৎসাহিত করেছিলেন, যারা অবিশ্বাসী ছিল?

১১ খ্রিস্টানদেরকে যখন এমনকি এই জগতের কঠোর, ন্যায়পরায়ণহীন কর্তৃপক্ষদের বশীভূত হওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করেছিলেন, তখন পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন: “কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) যিশু কতটা দুঃখভোগ করেছিলেন এবং কীভাবে তিনি বশীভূত থেকে ধৈর্য ধরেছিলেন, তা বর্ণনা করার পর পিতর অবিশ্বাসী স্বামী রয়েছে এমন স্ত্রীদের উৎসাহিত করেছিলেন: “তদ্রূপ, হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় [“গভীর সম্মানপূর্ণ,” NW] বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।”—১ পিতর ৩:১, ২.

১২. যিশুর বশ্যতাপূর্ণ কাজের ফলে কোন উপকারগুলো দেখা গিয়েছিল?

১২ উপহাস ও অপব্যবহারের মুখেও বশ্যতা দেখানোকে হয়তো দুর্বলতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হতে পারে। কিন্তু, যিশু বিষয়টাকে এভাবে দেখেননি। “তিনি নিন্দিত হইলে,” পিতর লিখেছিলেন, “প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না।” (১ পিতর ২:২৩) যিশুকে দুঃখভোগ করতে দেখেছিল এমন কেউ কেউ অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও বিশ্বাসী হয়েছিল, যাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল যিশুর পাশে দণ্ডপ্রাপ্ত একজন দস্যু ও তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেখেছিল এমন একজন শতপতি। (মথি ২৭:৩৮-৪৪, ৫৪; মার্ক ১৫:৩৯; লূক ২৩:৩৯-৪৩) একইভাবে পিতর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, কিছু অবিশ্বাসী স্বামী—এমনকি যারা গালিগালাজ করে তারাও—তাদের স্ত্রীদের বশ্যতাপূর্ণ আচরণ দেখে একদিন খ্রিস্টান হবে। আমরা আজকে এর প্রমাণ দেখেছি।

স্ত্রীরা যেভাবে অনুগ্রহ লাভ করতে পারে

১৩, ১৪. অবিশ্বাসী স্বামীদের প্রতি বশীভূত থাকা কীভাবে উপকারী হয়েছে?

১৩ যে-স্ত্রীরা বিশ্বাসী হয়েছে, তারা তাদের খ্রিস্টতুল্য আচরণের মাধ্যমে তাদের স্বামীদের বিশ্বাস লাভ করেছে। যিহোবার সাক্ষিদের এক সাম্প্রতিক জেলা সম্মেলনে একজন স্বামী তার খ্রিস্টান স্ত্রী সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমার মনে হয়, তার সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে আমি নিষ্ঠুর ছিলাম। তা সত্ত্বেও, আমাকে সে অনেক সম্মান করত। সে কখনোই আমাকে একবারের জন্যও ছোট করেনি। সে তার বিশ্বাস আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত না। সে প্রেমের সঙ্গে আমার যত্ন নিত। সে যখন কোনো সম্মেলনে যেত, তখন আগে থেকেই আমার খাবার প্রস্তুত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করত এবং ঘরের কাজকর্ম সেরে ফেলত। তার মনোভাবই বাইবেলের প্রতি আমার আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছিল। আর সেই কারণেই আজকে আমি এখানে আছি!” হ্যাঁ, বস্তুতপক্ষে তার স্ত্রীর আচরণের দ্বারা তাকে ‘বাক্য বিহীনে লাভ করা’ হয়েছিল।

১৪ পিতর যেমন জোর দিয়েছিলেন যে, স্ত্রী যা বলেন তা নয় কিন্তু তিনি যা করেন, সেটাই অনেক ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসে। এটা একজন স্ত্রীর উদাহরণে দেখা গিয়েছিল, যিনি বাইবেলের সত্য শিখেছিলেন এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। “আ্যগ্নেস, তুমি যদি ওই দরজা দিয়ে বাইরে যাও, তা হলে আর ফিরে আসতে পারবে না!” তার স্বামী চিৎকার করে বলেছিলেন। তিনি “ওই দরজা” দিয়ে বাইরে যাননি কিন্তু আরেকটা দরজা দিয়ে গিয়েছিলেন। পরের সভার রাতে স্বামী ভয় দেখিয়েছিলেন: “তুমি ফিরে এসে আমাকে আর এখানে দেখতে পাবে না।” আসলেই তিনি সেখানে ছিলেন না—তিনি তিন দিনের জন্য চলে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ফিরে এসেছিলেন, তখন তার স্ত্রী সদয়ভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কি কিছু খেতে চাও?” আ্যগ্নেস যিহোবার প্রতি ভক্তির ক্ষেত্রে কখনো একটুও টলে যাননি। তার স্বামী অবশেষে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন, ঈশ্বরের কাছে তার জীবন উৎসর্গ করেন এবং পরে অনেক দায়িত্বসহ একজন অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করেন।

১৫. খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য কোন ‘ভূষণের’ বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে?

১৫ প্রেরিত পিতর এমন কিছুর বিষয়ে সুপারিশ করেছেন, যা ওপরে উল্লেখিত স্ত্রীরা দেখিয়েছে আর তা হল “ভূষণ” তবে তা “কেশবিন্যাস” অথবা ‘বস্ত্র পরিধানরূপের’ প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার দ্বারা নয়। বরং পিতর বলেছিলেন: “হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভা, [তোমাদের] ভূষণ হউক; তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।” এই আত্মা বা মনোভাব গলার স্বর এবং আচরণে প্রতিফলিত হয়, যা দিন দিন কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বা কঠিন হয়ে উঠছে। এভাবে একজন খ্রিস্টান স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করেন।—১ পিতর ৩:৩, ৪.

যে-উদাহরণগুলো থেকে শেখা যায়

১৬. কোন কোন উপায়ে সারা খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ?

১৬ পিতর লিখেছিলেন: “পূর্ব্বকালের যে পবিত্র নারীগণ ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখিতেন, তাঁহারাও সেই প্রকারে আপনাদিগকে ভূষিত করিতেন, আপন আপন স্বামীর বশীভূত হইতেন।” (১ পিতর ৩:৫) এই নারীরা বুঝতে পেরেছিল যে, যিহোবার পরামর্শ শোনার দ্বারা তাঁকে খুশি করা পরিশেষে পারিবারিক সুখ ও অনন্তজীবনের পুরস্কার নিয়ে আসে। পিতর, অব্রাহামের সুন্দরী স্ত্রী সারার বিষয়ে উল্লেখ করেন, তার সম্বন্ধে এই কথা বলেন যে, সারা “অব্রাহামের আজ্ঞা মানিতেন, নাথ বলিয়া তাঁহাকে ডাকিতেন।” সারা তার ঈশ্বরভয়শীল স্বামীকে সমর্থন করতেন, যাকে ঈশ্বর দূরদেশে সেবা করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি আরামদায়ক জীবনধারা ত্যাগ করেছিলেন আর এমনকি তার জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:১, ১০-১৩) সারার সাহসী উদাহরণের জন্য পিতর এই বলে তার সম্বন্ধে সুপারিশ করেছিলেন: “তোমরা যদি সদাচরণ কর ও কোন মহাভয়ে ভীত না হও, তবে তাঁহারই সন্তান হইয়া উঠিয়াছ।”—১ পিতর ৩:৬.

১৭. খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য উদাহরণ হিসেবে কেন অবীগলের কথা হয়তো পিতরের মনে ছিল?

১৭ অবীগল ছিলেন আরেকজন নির্ভীক নারী, যিনি ঈশ্বরের ওপর আশা রাখতেন আর পিতরের মনে হয়তো তার কথাও ছিল। তিনি “সুবুদ্ধি” ছিলেন কিন্তু তার স্বামী নাবল “কঠিন ও দুর্বৃত্ত ছিল।” নাবল যখন দায়ূদ ও তার লোকেদের সাহায্য করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তখন তারা নাবল ও তার সম্পূর্ণ পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু, অবীগল তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি গাধার পিঠে খাবারের সরবরাহ নেন এবং দায়ূদ ও তার সশস্ত্র লোকেরা যখন পথিমধ্যে ছিল, তখন তার সঙ্গে দেখা হয়। দায়ূদকে দেখামাত্র তিনি নেমে আসেন, তার পায়ে পড়েন এবং বেপরোয়াভাবে কাজ না করার জন্য তার কাছে অনুরোধ করেন। দায়ূদ এতে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। “ধন্য ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিনি অদ্য আমার সহিত সাক্ষাৎ করাইতে তোমাকে প্রেরণ করিলেন,” তিনি বলেছিলেন, “আর ধন্য তোমার সুবিচার।”—১ শমূয়েল ২৫:২-৩৩.

১৮. ভিন্ন আরেকজন ব্যক্তির প্রণয়শীল মনোযোগের দ্বারা প্রলোভিত হলে স্ত্রীরা কোন উদাহরণের কথা চিন্তা করতে পারে এবং কেন?

১৮ স্ত্রীদের জন্য আরেকটা উত্তম উদাহরণ হল যুবতী শূলম্মীয়া, যে সেই নম্র মেষপালকের প্রতি অনুগত ছিল, যাকে সে বিয়ে করবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল। একজন ধনী রাজার প্রণয়শীল মনোযোগ সত্ত্বেও মেষপালকের প্রতি তার প্রেম জোরালো ছিল। যুবক মেষপালকের প্রতি তার অনুভূতি প্রকাশ করতে পরিচালিত হয়ে সে বলেছিল: “তুমি আমাকে মোহরের ন্যায় তোমার হৃদয়ে, মোহরের ন্যায় তোমার বাহুতে রাখ; কেননা প্রেম মৃত্যুর ন্যায় বলবান . . . বহু জল প্রেম নির্ব্বাণ করিতে পারে না, স্রোতস্বতীগণ তাহা ডুবাইয়া দিতে পারে না।” (পরমগীত ৮:৬, ৭) এটিই যেন সেইসমস্ত নারীর দৃঢ়সংকল্প হয়, যারা তাদের স্বামীদের প্রতি অনুগত থাকার ও তাদেরকে গভীরভাবে সম্মান করার জন্য বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করে।

আরও ঐশিক পরামর্শ

১৯, ২০. (ক) কোন কারণে স্ত্রীদের তাদের স্বামীদের বশীভূত থাকা উচিত? (খ) স্ত্রীদের জন্য কোন উত্তম উদাহরণ জোগানো হয়েছে?

১৯ পরিশেষে, আমাদের মূল শাস্ত্রপদের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে বিবেচনা করুন: “নারীগণ, তোমরা . . . নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও।” (ইফিষীয় ৫:২২) কেন এই বশ্যতা আবশ্যক? “কেননা,” পরের পদ বলে চলে, “স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক।” তাই, স্ত্রীদের জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূত, তেমনি নারীগণ সর্ব্ববিষয়ে আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হউক।”—ইফিষীয় ৫:২৩, ২৪, ৩৩.

২০ এই আদেশ পালন করার জন্য স্ত্রীদের খ্রিস্টের অভিষিক্ত অনুসারীদের মণ্ডলীর উদাহরণ সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে এবং এরপর তা অনুকরণ করতে হবে। দয়া করে ২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৮ পদ পড়ুন এবং জানুন যে, সেই মণ্ডলীর একজন সদস্য প্রেরিত পৌল তার মস্তক যিশু খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য কী সহ্য করেছিলেন। পৌলের মতো, স্ত্রীদের ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীর বাকি সকলের যিশুর প্রতি অনুগতভাবে বশীভূত থাকতে হবে। আর স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের প্রতি বশীভূত থাকার দ্বারা তা প্রদর্শন করে থাকে।

২১. স্বামীদের বশীভূত থাকার ব্যাপারে কোন বিষয়টা স্ত্রীদের জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে পারে?

২১ যদিও আজকে অনেক স্ত্রী বশীভূত থাকাকে বিরক্তিকর বলে মনে করতে পারে, কিন্তু একজন বিজ্ঞ স্ত্রী এর উপকারগুলো নিয়ে বিবেচনা করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন অবিশ্বাসী স্বামীর ক্ষেত্রে ঈশ্বরের আইন বা নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করা হবে না এমন সমস্ত ব্যাপারে তার মস্তকপদের বশীভূত থাকলে, তা হয়তো সেই স্ত্রীকে ‘তাহার স্বামীকে পরিত্রাণ’ করতে সমর্থ হওয়ার অপূর্ব পুরস্কার এনে দিতে পারে। (১ করিন্থীয় ৭:১৩, ১৬) অধিকন্তু, তিনি এটা জেনে পরিতৃপ্তি পেতে পারেন যে, যিহোবা ঈশ্বর তার কাজকে অনুমোদন করেন এবং তাঁর প্রিয় পুত্রের উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য তাকে প্রচুররূপে পুরস্কৃত করবেন।

আপনার কি মনে আছে?

• কেন একজন স্ত্রীর পক্ষে তার স্বামীকে সম্মান করা কঠিন হতে পারে?

• কেন বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?

• কীভাবে যিশু স্ত্রীদের জন্য এক উদাহরণ হিসেবে কাজ করেন আর তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করা থেকে কোন কোন উপকার আসতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে কি না, তা নির্ধারণ করা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অবীগলের মতো বাইবেলের চরিত্রগুলোর উদাহরণ থেকে স্ত্রীরা কী শিখতে পারে?