সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ভেসেল খাংস্‌ফর্ট “সংস্কারসাধনের আগেই একজন সংস্কারক”

ভেসেল খাংস্‌ফর্ট “সংস্কারসাধনের আগেই একজন সংস্কারক”

ভেসেল খাংস্‌ফর্ট “সংস্কারসাধনের আগেই একজন সংস্কারক”

লুথার, টিনডেল ও ক্যালভিন নামগুলো প্রটেস্টান্ট সংস্কারের সমস্ত ছাত্রের কাছেই সুপরিচিত, যে-সংস্কার ১৫১৭ সালে শুরু হয়েছিল। কিন্তু, খুব অল্প লোকই ভেসেল খাংস্‌ফর্টের নাম জানে। তাকে “সংস্কারসাধনের আগেই একজন সংস্কারক” বলে অভিহিত করা হয়েছে। আপনি কি এই ব্যক্তি সম্বন্ধে আরও কিছু তথ্য জানতে চান?

 ভেসেল ১৪১৯ সালে নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিনগেন শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে খুব বেশি লোক স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেত না কিন্তু ভেসেল সেই সুযোগ পেয়েছিলেন। যদিও তিনি পড়াশোনায় অন্যদের চেয়ে ভাল ছিলেন কিন্তু তার বাবামার চরম দরিদ্রতার কারণে তাকে নয় বছর বয়সেই স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। তার জন্য আনন্দের বিষয়টা ছিল, একজন ধনী বিধবা যখন অল্পবয়সি ভেসেলের মেধার বিষয়ে শুনেছিলেন, তখন তিনি তার স্কুলের বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এভাবেই তিনি তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি মাস্টার অভ্‌ আর্টস্‌ ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। মনে করা হয় যে, তিনি পরে ঈশ্বরতত্ত্ববিদ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডক্টর উপাধিও অর্জন করেছিলেন।

ভেসেলের প্রচণ্ড জ্ঞানলিপ্সা ছিল। কিন্তু, তার সময়ে খুব অল্প সংখ্যক লাইব্রেরি ছিল। এমনকি যদিও তার জীবনকালেই চলমান মুদ্রাক্ষরের সাহায্যে ছাপানোর কাজ উদ্ভাবন করা হয়েছিল কিন্তু তখনও পর্যন্ত অধিকাংশ বই হাতে লেখা ও বেশ দামি ছিল। ভেসেল এমন একটা পণ্ডিত ব্যক্তিদের দলের সদস্য ছিলেন, যারা বিভিন্ন লাইব্রেরি ও মঠে গিয়ে দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ও দীর্ঘদিন ধরে হারিয়ে যাওয়া বইয়ের সন্ধান করত। তারপর তারা তাদের উদ্‌ঘাটিত বিষয়বস্তু একে অপরকে জানাত। তিনি প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন আর প্রাচীন গ্রিক ও রোমীয় সাহিত্যের উদ্ধৃতি এবং ছাপানো অংশবিশেষ দিয়ে একটা ব্যক্তিগত নোটবুক ভরে ফেলেছিলেন। অন্যান্য ঈশ্বরতত্ত্ববিদ প্রায়ই সন্দেহ করত কারণ ভেসেল এমন অনেক বিষয় জানতেন, যেসব বিষয় সম্বন্ধে তারা আগে কখনো শোনেনি। ভেসেলকে ম্যাজিস্টার কনট্রাডিকশিওনিস বা মাস্টার অভ্‌ কনট্রাডিকশন বলা হতো।

“আপনি কেন আমাকে খ্রিস্টের প্রতি চালিত করছেন না?”

সংস্কারসাধনের প্রায় ৫০ বছর আগে ভেসেল, টমাস এ কেমপিসের (প্রায় ১৩৭৯-১৪৭১ সাল) সঙ্গে দেখা করেছিলেন, যাকে সাধারণত বিখ্যাত দে ইমিটেশিওনি ক্রিস্টি (ইমিটেশন অভ্‌ ক্রাইস্ট) এর গ্রন্থকার বলে মনে করা হয়। টমাস এ কেমপিস, ব্রেদরেন অভ্‌ দ্যা কমন লাইফ এর সদস্য ছিলেন, যেটা এমন এক আন্দোলন ছিল, যা ধার্মিক জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিল। ভেসেলের একজন জীবনীলেখক বলেন যে, টমাস এ কেমপিস বিভিন্ন সময়ে ভেসেলকে সাহায্যের জন্য যিশুর মা মরিয়মের কাছে প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিলেন। ভেসেল এই বলে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন: “আপনি কেন আমাকে খ্রিস্টের প্রতি চালিত করছেন না, যিনি সদয়ভাবে ভারাক্রান্ত লোক সকলকে তাঁর কাছে আসতে আমন্ত্রণ জানান?”

মনে করা হয় যে, ভেসেল একজন যাজক হতে চাননি। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যাজকশ্রেণীর একজন সদস্য হিসেবে শনাক্ত হতে কেন তিনি মাথা মুড়িয়ে ফেলতে বা মাথার ওপরের অংশের চুল কামিয়ে ফেলতে চাননি, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ফাঁসিকাষ্ঠকে ভয় পান না। স্পষ্টতই তিনি এই সত্যকে নির্দেশ করছিলেন যে, নিযুক্ত যাজকদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না এবং বস্তুতপক্ষে তাদের মুড়োনো মাথাই অনেক যাজককে ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে রক্ষা করেছিল বলে মনে হয়! এ ছাড়া, ভেসেল কিছু সাধারণ ধর্মীয় প্রথাও মেনে নেননি। উদাহরণস্বরূপ, তার সময়ের বিখ্যাত ডায়ালগুস মিরাকুলোরুম বইয়ে বর্ণিত অলৌকিক ঘটনাগুলো বিশ্বাস করতে চাননি বলে তার সমালোচনা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন: “পবিত্র শাস্ত্র থেকে পড়া আরও ভাল হবে।”

“আমরা কেবল ততটুকুই জানি, যতটুকু আমরা জিজ্ঞেস করি”

ভেসেল ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষা অধ্যয়ন করেছিলেন এবং প্রাথমিক গির্জার ফাদারদের লেখাগুলো সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। বাইবেলের মূল ভাষাগুলোর প্রতি তার ভালবাসা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ তিনি ইরাজমাস ও রইশলিনের সময়ের আগে বেঁচে ছিলেন। * সংস্কারসাধনের আগে গ্রিক ভাষা সম্বন্ধে জ্ঞান বলতে গেলে ছিলই না। জার্মানিতে কেবলমাত্র কয়েক জন পণ্ডিত ব্যক্তি গ্রিক ভাষা জানত আর এই ভাষা শেখার জন্য কোনো সহায়ক প্রাপ্তিসাধ্য ছিল না। ১৪৫৩ সালে কনস্টানটিনোপলের পতনের পর ভেসেল স্পষ্টতই পশ্চিমে পালিয়ে যাওয়া গ্রিক সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং তাদের কাছে গ্রিক ভাষা সম্বন্ধে মৌলিক জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সেই সময়ে, ইব্রীয় ভাষা মূলত যিহুদি লোকেরাই বলত আর ভেসেল ধর্মান্তরিত যিহুদিদের কাছ থেকে মৌলিক ইব্রীয় ভাষা শিখেছিলেন বলে মনে হয়।

বাইবেলের প্রতি ভেসেলের বিশেষ ভালবাসা ছিল। তিনি এটিকে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত এক বই হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন যে, বাইবেলের সব বই একটি আরেকটির সঙ্গে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ। ভেসেলের মতে, বাইবেলের পদগুলোর অনুবাদ প্রসঙ্গের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে ও সেগুলোকে বিকৃত করা যাবে না। প্রত্যেকটা বিকৃত ব্যাখ্যাকে প্রচলিত ধর্মমত বিরুদ্ধ বিশ্বাস বলে মনে করা উচিত। তার প্রিয় বাইবেলের পদগুলোর মধ্যে একটি ছিল মথি ৭:৭ পদ, যেটি বলে: “অন্বেষণ কর, পাইবে।” এই পদের বার্তার কারণে ভেসেল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, প্রশ্ন করা উপকারী আর তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, “আমরা কেবল ততটুকুই জানি, যতটুকু আমরা জিজ্ঞেস করি।”

এক উল্লেখযোগ্য অনুরোধ

ভেসেল ১৪৭৩ সালে রোম পরিদর্শন করেছিলেন। সেখানে তাকে পোপ সিক্সটাস ৪র্থ-র সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পোপ সিক্সটাস ৪র্থ ছিলেন সেই ছয়জন পোপের মধ্যে প্রথম জন, যার জঘন্য অনৈতিক আচরণ শেষ পর্যন্ত প্রটেস্টান্ট সংস্কারের দিকে পরিচালিত করেছিল। ইতিহাসবেত্তা বারবারা ডব্লু. টাকম্যান বলেন যে, সিক্সটাস ৪র্থ এমন এক সময়কালের সূচনা করেছিলেন, যা ছিল “ব্যক্তিগত অর্জন ও ক্ষমতার রাজনীতির পিছনে নির্লজ্জ, উন্মুক্ত ও বেপরোয়া অনুধাবন।” খোলাখুলিভাবে স্বজনপ্রীতি দেখানোর মাধ্যমে তিনি জনমতকে নির্বাক করে দিয়েছিলেন। একজন ইতিহাসবেত্তা লেখেন যে, সিক্সটাস সম্ভবত পোপের কার্যালয়কে একটা পারিবারিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বানাতে চেয়েছিলেন। খুব অল্প লোকেরই সেইসমস্ত অন্যায়ের নিন্দা করার সাহস ছিল।

কিন্তু, ভেসেল খাংস্‌ফর্ট আলাদা ছিলেন। একদিন সিক্সটাস তাকে বলেছিলেন: “তুমি কী চাও বলো, আমরা তোমাকে তা-ই দেব।” ভেসেল সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিয়েছিলেন: “পুন্য পিতা, . . . যেহেতু আপনিই পৃথিবীতে সর্বোচ্চ যাজক ও পালকের পদ অধিকার করে আছেন, তাই আমি চাই . . . যে, আপনি আপনার মহৎ দায়িত্বকে এমনভাবে পরিপূর্ণ করুন, যেন মেষদের মহান পালক যখন . . . আসেন, তখন তিনি যাতে আপনাকে বলতে পারেন: ‘বেশ! উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস, তুমি আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও।’” সিক্সটাস উত্তর দিয়েছিলেন যে, এটা তার নিজের দায়িত্ব আর ভেসেলের নিজের জন্য ব্যক্তিগতভাবে কিছু বেছে নেওয়া উচিত। ভেসেল উত্তর দিয়েছিলেন: “তা হলে আমি আপনাকে ভ্যাটিকান লাইব্রেরি থেকে একটি গ্রিক ও ইব্রীয় বাইবেল দিতে বলছি।” পোপ তার অনুরোধ রেখেছিলেন কিন্তু বলেছিলেন যে, ভেসেল বোকার মতো কাজ করেছে এবং তার বিশপের পদ চাওয়া উচিত ছিল!

“একটা মিথ্যা এবং একটা ভুল”

এখনকার বিখ্যাত সিসটিন চ্যাপেলের নির্মাণকাজে তহবিলের অত্যন্ত প্রয়োজন দেখা দিলে সিক্সটাস শেষ পর্যন্ত মৃতদের জন্য মুক্তিপত্র (ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পাপমোচনের পরে অবশিষ্ট পাপ থেকে নিষ্কৃতিদান) বিক্রির উপায় অবলম্বন করেছিলেন। এই মুক্তিপত্রগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। খ্রিস্টের প্রতিনিধিরা—পোপের শাসনের অন্ধকারময় দিক (ইংরেজি) বইটি বলে: “বিধবা ও বিপত্নীকরা এবং মৃত্যুতে সন্তানদের হারানো বাবামায়েরা তাদের প্রিয়জনদের পুরগাতরি থেকে মুক্ত করার জন্য সমস্ত সঞ্চয় শেষ করে দিয়েছিল।” সেই সাধারণ লোকেরা মুক্তিপত্রগুলোকে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছিল, যারা পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করেছিল যে, তাদের মৃত প্রিয়জনেরা যে স্বর্গে যাবে সেই ব্যাপারে পোপ নিশ্চয়তা দিতে পারেন।

কিন্তু, ভেসেল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, পোপসহ ক্যাথলিক গির্জারও পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা নেই। ভেসেল খোলাখুলিভাবেই মুক্তিপত্র বিক্রি করাকে “একটা মিথ্যা এবং একটা ভুল” বলে অভিহিত করেছিলেন। তা ছাড়া, তিনি এটাও বিশ্বাস করতেন যে, পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্য যাজকদের কাছে পাপস্বীকার করা আবশ্যক নয়।

এ ছাড়া, পোপ ভুল করতে পারেন না এই ধারণা সম্বন্ধে ভেসেল প্রশ্ন তুলেছিলেন আর বলেছিলেন যে, যেহেতু পোপরাও ভুল করেছে, তাই যদি লোকেদের কাছ থেকে সবসময়ই আশা করা হয় যে তারা পোপদের বিশ্বাস করবে, তা হলে বিশ্বাসের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে। ভেসেল লিখেছিলেন: “উচ্চপদস্থ পুরোহিতরা যদি ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের নিজেদের তৈরি আজ্ঞাগুলো চাপিয়ে দেয়, . . . তা হলে তারা যা করে ও আজ্ঞা প্রদান করে, সেগুলো বৃথা।”

ভেসেল সংস্কারসাধনের জন্য পথ প্রস্তুত করেন

ভেসেল ১৪৮৯ সালে মারা গিয়েছেন। যদিও তিনি গির্জার কিছু ভুলের বিরোধিতা করেছিলেন কিন্তু তিনি একজন ক্যাথলিকই ছিলেন। তবে, গির্জা কখনোই তাকে প্রচলিত ধর্মমত বিরুদ্ধ ব্যক্তি বলে নিন্দা করেনি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর, গোঁড়া ক্যাথলিক সন্ন্যাসীরা তার লেখাগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কারণ গির্জার শিক্ষার সঙ্গে সেগুলোর পুরোপুরিভাবে মিল ছিল না। লুথারের সময়ে ভেসেলের নাম প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল, তার কোনো লেখাই ছাপানো হয়নি আর খুব অল্পসংখ্যক পাণ্ডুলিপিই রক্ষা পেয়েছিল। অবশেষে, ১৫২০ থেকে ১৫২২ সালের মধ্যে ভেসেলের লেখার প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। এর মধ্যে লুথারের লিখিত একটা চিঠিও ছিল, যেটাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ভেসেলের লেখাগুলোর সুপারিশ করেছিলেন।

ভেসেল যদিও লুথারের মতো একজন সংস্কারক ছিলেন না কিন্তু তিনি খোলাখুলিভাবে কিছু ভুলের নিন্দা করেছিলেন, যা সংস্কারসাধনের দিকে পরিচালিত করেছিল। বস্তুতপক্ষে, ম্যাকক্লিনটক ও স্ট্রংয়ের সাইক্লোপিডিয়া-তে তাকে ‘জার্মান বংশোদ্ভূত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘যিনি সংস্কারসাধনের জন্য পথ প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছিলেন।’

লুথার, ভেসেলকে তার একজন মিত্র হিসেবেই দেখেছিলেন। গ্রন্থকার সি. অখাস্টাইন লেখেন: “লুথার তার সময়কাল ও পরিণতিকে এলিয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। ঠিক যেমন ভাববাদী ভেবেছিলেন যে, ঈশ্বরের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য তিনি একাই অবশিষ্ট আছেন, তেমনই লুথারও মনে করেছিলেন গির্জার সঙ্গে তার লড়াইয়ে তিনিও একেবারে একা। কিন্তু, ভেসেলের লেখা পড়ার পর তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, প্রভু এক ‘অবশিষ্টাংশকে ইস্রায়েলে’ রক্ষা করেছিলেন।” “এমনকি লুথার এটাও ঘোষণা করেন যে: ‘আমি যদি আরও আগে তার লেখাগুলো পড়তাম, তা হলে আমার শত্রুরা হয়তো মনে করত যে, ভেসেলের কাছ থেকেই লুথার সমস্তকিছু শিখেছেন, তার চিন্তাভাবনা আমার চিন্তাভাবনার সঙ্গে একেবারে সংগতিপূর্ণ।’” *

“পাইবে”

সংস্কার যখন শুরু হয়েছিল, তখন তা হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। যে-ধারাবাহিক ধারণাগুলো সংস্কারের দিকে চালিত করেছিল, সেগুলো কিছু সময় ধরে চলেছিল। ভেসেল উপলব্ধি করেছিলেন যে, পোপদের অধঃপতন শেষ পর্যন্ত সংস্কার করার আকাঙ্ক্ষার দিকে মোড় নেবে। একবার তিনি একজন ছাত্রকে বলেছিলেন: “ওহে অধ্যবসায়ী ছেলে, তুমি সেই সময় দেখার জন্য বেঁচে থাকবে, যখন . . . ঝগড়াটে ঈশ্বরতত্ত্ববিদদের শিক্ষাগুলোকে সমস্ত সত্য খ্রিস্টান পণ্ডিত ব্যক্তি প্রত্যাখ্যান করবে।”

যদিও ভেসেল তার সময়ের কিছু ভুল ও দুর্নীতি সম্বন্ধে উপলব্ধি করেছিলেন কিন্তু তিনি বাইবেলের সত্যের পূর্ণ জ্যোতি প্রকাশ করতে অসমর্থ হয়েছিলেন। তারপরও বাইবেল তার কাছে এমন এক বই ছিল, যেটি পড়া ও অধ্যয়ন করা উচিত। খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস (ইংরেজি) বইটি অনুসারে, ভেসেল “মনে করতেন যে, পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়ায় বিশ্বাসের ব্যাপারে বাইবেলই হচ্ছে চূড়ান্ত নির্ভরযোগ্য উৎস।” আধুনিক বিশ্বে সত্য খ্রিস্টানরা বাইবেলকে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বলে বিশ্বাস করে। (২ তীমথিয় ৩:১৬) কিন্তু, বাইবেলের সত্যগুলো এখন আর অস্পষ্ট নয় বা সেগুলোকে খুঁজে পাওয়াও মুশকিল নয়। তবে আজকে, বাইবেলের এই নীতিটা অতীতের চেয়েও আরও বেশি সত্য: “অন্বেষণ কর, পাইবে।”—মথি ৭:৭; হিতোপদেশ ২:১-৬.

[পাদটীকাগুলো]

^ বাইবেলের মূল ভাষাগুলো অধ্যয়নে এই ব্যক্তিরা প্রচুর অবদান রেখেছিল। ১৫০৬ সালে রইশলিন তার ইব্রীয় ব্যাকরণ প্রকাশ করেছিলেন, যা ইব্রীয় শাস্ত্র সম্বন্ধে আরও গভীর অধ্যয়নের দিকে চালিত করেছিল। ইরাজমাস ১৫১৬ সালে খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের মূল গ্রিক পাঠ্যাংশ প্রকাশ করেছিলেন।

^ ভেসেল খাংস্‌ফর্ট (১৪১৯-১৪৮৯) এবং উত্তরাঞ্চলের মানবতাবাদ (ইংরেজি), পৃষ্ঠা ৯, ১৫.

[১৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

ভেসেল এবং ঈশ্বরের নাম

ভেসেলের লেখাগুলোতে ঈশ্বরের নামকে সাধারণত “ইয়োহেভা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। যাই হোক, ভেসেল অনন্তপক্ষে দুবার “ইহোবা” নামটি ব্যবহার করেছিলেন। ভেসেলের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করার সময়ে গ্রন্থকার এইচ. এ. ওবারম্যান উপসংহার করেন, ভেসেল মনে করতেন যে, যদি টমাস আ্যকুইনাস ও অন্যেরা ইব্রীয় ভাষা জানত, তা হলে “তারা বুঝতে পারত যে, মোশির কাছে প্রকাশিত ঈশ্বরের নামের অর্থ, ‘আমি যে আছি সে-ই আছি’ নয় বরং তা হল, ‘আমি যা হব, তা-ই হব।’” * নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল সঠিকভাবে এর অর্থ প্রকাশ করে, “আমি যা হতে চাই, তা-ই হই।”—যাত্রাপুস্তক ৩:১৩, ১৪.

[পাদটীকা]

^ ভেসেল খাংস্‌ফর্ট (১৪১৯-১৪৮৯) এবং উত্তরাঞ্চলের মানবতাবাদ (ইংরেজি), পৃষ্ঠা ১০৫.

[সৌজন্যে]

পাণ্ডুলিপি: Universiteitsbibliotheek, Utrecht

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ভেসেল, পোপ সিক্সটাস ৪র্থ-র দ্বারা অনুমোদিত মুক্তিপত্র বিক্রির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন