সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যে-ধর্ম আপনি বেছে নেন তা কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?

যে-ধর্ম আপনি বেছে নেন তা কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?

যে-ধর্ম আপনি বেছে নেন তা কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?

 আমাদের মধ্যে বেশির ভাগই যখন কেনাকাটা করতে যাই, তখন ভাল জিনিসটা বাছাই করতে পছন্দ করি। একটা বাজারে যখন বিভিন্ন ধরনের ফল আর শাকসবজি সাজানো থাকে, তখন আমরা সেগুলোই বেছে নিতে পারি, যেগুলো আমরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি ও আমাদের পরিবারের জন্য উপকারজনক। একটা পোশাকের দোকানে যদি আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে এমন স্টাইল ও রঙের বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যায়, তা হলে আমরা সেটা বেছে নিতে পারি, যেটা আমাদের সবচেয়ে বেশি মানায়। জীবনে আমরা যেসমস্ত বাছাই করে থাকি, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা আমাদের ব্যক্তিগত রুচিকে প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু, অন্যগুলো যেমন স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া অথবা বিজ্ঞ বন্ধুবান্ধব বাছাই করা আমাদের মঙ্গলের ওপর প্রভাব ফেলে। তা হলে, আমাদের ধর্ম বাছাই করা সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? আমাদের উপাসনা করার পদ্ধতি কি শুধুমাত্র আমাদের ব্যক্তিগত রুচি প্রকাশের এক অভিব্যক্তি হওয়া উচিত? নাকি এটা এমন একটা বিষয়, যা আমাদের মঙ্গলকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে?

বাছাই করার জন্য প্রচুর ধর্ম রয়েছে। বহু দেশে এখন ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে আর তাই লোকেরা দিন দিন তাদের বাবামার ধর্মকে পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে নিজেদের আরও বেশি স্বাধীন বলে মনে করছে। যুক্তরাষ্ট্রে করা একটা সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ৮০ শতাংশ আমেরিকান “বিশ্বাস করে যে একাধিক ধর্ম গ্রহণ করা পরিত্রাণ পাওয়ার এক পথ হতে পারে।” সেই একই সমীক্ষা অনুসারে, “প্রতি পাঁচজন উত্তরদাতাদের মধ্যে একজন বলেছিলেন যে, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন।” ব্রাজিলের একটা সমীক্ষা প্রকাশ করে যে, সমস্ত ব্রাজিলীয় লোকের মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশ লোক তাদের ধর্ম পরিবর্তন করেছে।

অতীতে লোকেরা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে সেইসব মতবাদ নিয়ে তর্কবিতর্ক করত, যেগুলো একটা ধর্ম থেকে আরেকটা ধর্মকে পৃথক করে। এখনকার জনপ্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি হল, ‘আপনি যে-ধর্মই বেছে নিন না কেন, তা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।’ কিন্তু সত্যিই কি তা-ই? আপনার ধর্ম কি আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে?

বিচক্ষণ ক্রেতারা যেমন পণ্যদ্রব্যগুলো কোথা থেকে এসেছে, সেই সম্বন্ধে প্রশ্ন করে থাকে, তেমনই আপনিও বিচক্ষণভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘এইসমস্ত এত এত ধর্মের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল এবং কেনই বা হয়েছিল?’ বাইবেল এর উত্তর দেয়।

কীভাবে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল?

যিশু পৃথিবীতে আসারও প্রায় এক হাজার বছর আগে, প্রাচীন ইস্রায়েলে রাজা যারবিয়াম একটা নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন। যারবিয়াম ছিলেন ইস্রায়েলের স্বাধীন উত্তর রাজ্যের প্রথম রাজা। তিনি লোকেদেরকে তার লক্ষ্যগুলোতে পরিচালিত করার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। “রাজা মন্ত্রণা করিয়া স্বর্ণময় দুই গোবৎস নির্ম্মাণ করাইলেন; আর তিনি লোকদিগকে কহিলেন, যিরূশালেমে যাওয়া তোমাদের পক্ষে বাহুল্যমাত্র, হে ইস্রায়েল, দেখ, এই তোমার দেবতা।” (১ রাজাবলি ১২:২৮) স্পষ্টতই, লোকেরা যেখানে উপাসনা করত, সেই যিরূশালেম থেকে তাদের আনুগত্যকে বিমুখে পরিচালিত করার জন্য রাজা ধর্মকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। যারবিয়াম যে-ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন, তা বহু শতাব্দী ধরেই টিকে ছিল আর ঈশ্বর যখন শেষ পর্যন্ত ধর্মভ্রষ্ট ইস্রায়েল জাতিকে বিচারের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন, তখন তা লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। যারবিয়ামের সেই ধর্ম ছিল রাজনৈতিক সুবিধালাভের এক কৌশল। কিছু রাষ্ট্রীয় ধর্ম, যেগুলো বর্তমান দিন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে, সেগুলোও অনুরূপভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল।

প্রেরিত পৌল আরেকটা উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রকাশ করেছিলেন, যা লোকেদেরকে একটা নতুন ধর্ম প্রবর্তন করতে পরিচালিত করে, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমি জানি, আমি গেলে পর দুরন্ত কেন্দুয়ারা তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করিবে, পালের প্রতি মমতা করিবে না; এবং তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে।” (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) উদ্ধত নেতারা নিজেদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্য প্রায়ই ধর্মীয় আন্দোলন শুরু করে থাকে। খ্রিস্টান বলে মিথ্যাভাবে দাবি করে এমন গির্জাগুলো অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।

ধর্মগুলো কাকে খুশি করতে চায়?

জনপ্রিয় দাবির প্রতি সাড়া দেওয়া হয়তো কিছু ব্যক্তিকে একটা নতুন ধর্ম প্রবর্তন করতে পরিচালিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইকনমিস্ট পত্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত বিশাল গির্জাগুলো সম্বন্ধে রিপোর্ট করেছিল। সেই প্রবন্ধ মন্তব্য করে যে, এই গির্জাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ এগুলোর “ভিত্তি সেই একই ব্যবসায়িক নিয়ম, যা হচ্ছে: ক্রেতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।” কিছু গির্জা “ভিডিও, নাটক ও সমসাময়িক সংগীত দ্বারা মনোরঞ্জন” করে থাকে। এই গির্জাগুলোর নির্দিষ্ট ধর্মীয় নেতারা দাবি করে যে, তারা তাদের সদস্যদের “ধনী, স্বাস্থ্যবান এবং সমস্যা মুক্ত” হওয়ার বিষয়ে শিক্ষা দেয়। যদিও এই গির্জাগুলোকে বিনোদন জগতের সঙ্গে অথবা “স্বাবলম্বী ব্যাবসার” সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সমালোচনা করা হয় কিন্তু সেই একই উৎস বলে, “তারা শুধুমাত্র তাদের সদস্যদের দাবি মেটাচ্ছে।” সেই রিপোর্ট এই বলে শেষ করে: “ব্যাবসা এবং ধর্মের মধ্যে মৈত্রীবন্ধন দারুণভাবে সফল হয়েছে।”

এমনকি যদিও অন্যান্য ধর্ম প্রকাশ্যে ততটা ব্যবসায়িক মনোভাব প্রকাশ করে না, তবুও যে-গির্জাগুলো “তাদের সদস্যদের দাবি মেটাচ্ছে” সেগুলোর সম্পর্কে পৌল আমাদের এক সতর্কবাণীর বিষয় মনে করিয়ে দেন। তিনি লিখেছিলেন: “এমন সময় আসিবে, যে সময় লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, কিন্তু কাণচুল্‌কানি-বিশিষ্ট হইয়া আপন আপন অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে, এবং সত্য হইতে কাণ ফিরাইয়া গল্পের দিকে বিপথে যাইবে।”—২ তীমথিয় ৪:৩, ৪.

যেহেতু অনেক ধর্ম ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে উৎপন্ন হয়েছে, তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ধর্ম শিশু নির্যাতন, শঠতা, যুদ্ধ বা সন্ত্রাসবাদের মতো মন্দ বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। প্রায়ই, ধর্ম হল একটা প্রতারণা। কীভাবে আপনি নিজেকে প্রতারিত হওয়া থেকে এড়াতে পারেন?

[৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

অনেক ধর্ম ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে উৎপন্ন হয়েছে