সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মন্দদূতেরা—কীভাবে আমরা তাদের প্রতিরোধ করতে পারি?

মন্দদূতেরা—কীভাবে আমরা তাদের প্রতিরোধ করতে পারি?

মন্দদূতেরা—কীভাবে আমরা তাদের প্রতিরোধ করতে পারি?

“যে স্বর্গদূতেরা আপনাদের আধিপত্য রক্ষা না করিয়া নিজ বাসস্থান ত্যাগ করিয়াছিল, তাহাদিগকে [ঈশ্বর] মহাদিনের বিচারার্থে ঘোর অন্ধকারের অধীনে অনন্তকালীয় শৃঙ্খলে বদ্ধ রাখিয়াছেন।”—যিহূদা ৬.

১, ২. শয়তান দিয়াবল ও মন্দদূতদের সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

 “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক,” প্রেরিত পিতর সাবধান করে দিয়েছেন। “তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮) ভূত বা মন্দদূতদের বিষয়ে প্রেরিত পৌল বলেন: “আমার এমন ইচ্ছা নয় যে, তোমরা ভূতদের সহভাগী হও। প্রভুর [“যিহোবার,” NW] পানপাত্র ও ভূতদের পানপাত্র, তোমরা এই উভয় পাত্রে পান করিতে পার না; প্রভুর [“যিহোবার,” NW] মেজ ও ভূতদের মেজ, তোমরা এই উভয় মেজের অংশী হইতে পার না।”—১ করিন্থীয় ১০:২০, ২১.

তা হলে, শয়তান দিয়াবল ও মন্দদূত কারা? কীভাবে এবং কখন তারা অস্তিত্বে এসেছিল? ঈশ্বর কি তাদের সৃষ্টি করেছিলেন? মানুষের ওপর তাদের প্রভাব কতটা শক্তিশালী? আর যদি কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে থাকে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারি?

কীভাবে শয়তান ও মন্দদূতেরা অস্তিত্বে এসেছিল?

৩. কীভাবে ঈশ্বরের একজন স্বর্গদূত শয়তান দিয়াবলে পরিণত হয়েছিল?

মানব ইতিহাসের প্রারম্ভে এদন উদ্যানে যখন মানবজাতির শুরু হয়, তখন ঈশ্বরের একজন দূত বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কেন? কারণ যিহোবার স্বর্গীয় ব্যবস্থায় তার ভূমিকা নিয়ে সে সন্তুষ্ট ছিল না। আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে সে তাদের বাধ্যতা ও উপাসনাকে সত্য ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে তার দিকে পরিচালিত করার একটা সুযোগ খুঁজে পায়। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং প্রথম মানব দম্পতিকে এক পাপপূর্ণ পথ অনুধাবন করতে প্ররোচিত করে, এই স্বর্গদূত নিজেকে শয়তান দিয়াবলে পরিণত করে। পরবর্তী সময়ে, অন্যান্য স্বর্গদূতও এই বিদ্রোহে যোগ দেয়। কীভাবে?—আদিপুস্তক ৩:১-৬; রোমীয় ৫:১২; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.

৪. নোহের দিনের জলপ্লাবনের আগে কিছু বিদ্রোহী দূত কী করেছিল?

অনুপ্রাণিত শাস্ত্র আমাদের বলে যে, নোহের দিনের মহাপ্লাবনের কিছু সময় আগে, কোনো কোনো স্বর্গদূত পৃথিবীর নারীদের প্রতি অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। ভুল উদ্দেশ্যের জন্য “ঈশ্বরের [স্বর্গীয়] পুত্ত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া, যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল,” বাইবেল বলে। এই মিলন অস্বাভাবিক ছিল আর তারা নেফিলিম নামে সংকর জাতীয় বংশধর উৎপন্ন করে। (আদিপুস্তক ৬:২-৪) এভাবে যে-আত্মিক প্রাণীরা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল, তারা যিহোবার বিরুদ্ধে শয়তানের বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল।

৫. যিহোবা যখন মহাপ্লাবনের দ্বারা ধ্বংস নিয়ে এসেছিলেন, তখন বিদ্রোহীদের কী হয়েছিল?

যিহোবা যখন মানবজাতির ওপর জলপ্লাবন নিয়ে আসেন, তখন নেফিলিম ও তাদের মানব মায়েরা ধ্বংস হয়ে যায়। বিদ্রোহী স্বর্গদূতেরা তাদের মানবদেহ ত্যাগ করে আত্মিক রাজ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু, তারা আর ঈশ্বরের কাছে “আপনাদের আধিপত্য” লাভ করতে পারেনি। এর পরিবর্তে, তাদেরকে টারটারাস নামে পরিচিত ‘ঘোর [আধ্যাত্মিক] অন্ধকারে’ বন্দি করে রাখা হয়।—যিহূদা ৬; ২ পিতর ২:৪, NW.

৬. কীভাবে মন্দদূতেরা লোকেদের বিভ্রান্ত করে?

যখন থেকে সেই দুষ্ট দূতেরা “আপনাদের আধিপত্য” হারিয়েছিল, তখন থেকে তারা শয়তানের মন্দদূত সঙ্গী হয়ে উঠেছে এবং তার মন্দ ইচ্ছাগুলো সমর্থন করেছে। সেই সময়ের পর থেকে মন্দদূতদের আর মনুষ্যদেহ ধারণ করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু, তারা নারী ও পুরুষকে বিভিন্ন ধরনের যৌন বিকৃতিতে রত হওয়ার জন্য প্রলোভিত করতে পারে। এ ছাড়া, মন্দদূতেরা প্রেতচর্চার মাধ্যমেও সক্রিয়ভাবে মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করে থাকে, যার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এই ধরনের বিষয়গুলো যেমন, জাদুমন্ত্র, ডাকিনীবিদ্যা এবং ভূতুরিয়া। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১৩; ২ বংশাবলি ৩৩:৬) দুষ্ট দূতদের পরিণতিও দিয়াবলের মতো একই আর তা হল অনন্ত ধ্বংস। (মথি ২৫:৪১; প্রকাশিত বাক্য ২০:১০) তবে, এই সময়ের মধ্যে আমাদের দৃঢ় থাকতে হবে ও তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। শয়তান কতটা শক্তিশালী এবং আমরা কীভাবে তার ও তার মন্দদূতদের সফলভাবে প্রতিরোধ করতে পারি, তা বিবেচনা করা আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ।

শয়তান কতটা শক্তিশালী?

৭. জগতের ওপর শয়তানের কোন ক্ষমতা রয়েছে?

ইতিহাস জুড়ে শয়তান যিহোবাকে অপবাদ দিয়ে এসেছে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আর সে বিরাট সংখ্যক মানবজাতিকে প্রভাবিত করেছে। “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে,” ১ যোহন ৫:১৯ পদ বলে। এই কারণে দিয়াবল যিশুকে ‘জগতের সমস্ত রাজ্যের’ কর্তৃত্ব ও প্রতাপ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তাঁকে প্রলোভন দেখাতে পেরেছিল। (লূক ৪:৫-৭) শয়তান সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেন: “কিন্তু আমাদের সুসমাচার যদি আবৃত থাকে, তবে যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদেরই কাছে আবৃত থাকে। তাহাদের মধ্যে এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।” (২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪) শয়তান হল, “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা” কিন্তু সে নিজেকে ‘দীপ্তিময় দূত’ হিসেবে তুলে ধরে। (যোহন ৮:৪৪; ২ করিন্থীয় ১১:১৪) তার কাছে সেই ক্ষমতা ও পদ্ধতিগুলো রয়েছে, যেগুলো জগতের শাসক ও তাদের প্রজাদের মনকে অন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন। অপপ্রচার ও ধর্মীয় পৌরাণিক কাহিনী এবং মিথ্যার মাধ্যমে সে মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করেছে।

৮. শয়তানের প্রভাব সম্বন্ধে বাইবেল কী ইঙ্গিত করে?

শয়তানের ক্ষমতা ও প্রভাব, আমাদের সাধারণ কালের প্রায় পাঁচশো বছর আগে ভাববাদী দানিয়েলের সময়ে স্পষ্ট হয়েছিল। যিহোবা যখন দানিয়েলের কাছে এক উৎসাহমূলক বার্তা প্রদান করার জন্য একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছিলেন, তখন সেই স্বর্গদূত ‘পারস্যরাজ্যের [আত্মিক] অধ্যক্ষের’ কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেই বিশ্বস্ত স্বর্গদূতকে ২১ দিন পর্যন্ত বাধা দেওয়া হয়েছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না “প্রধান অধ্যক্ষদের মধ্যে মীখায়েল” তাকে সাহায্য করতে এসেছিলেন। এ ছাড়া, সেই একই বিবরণ “যবনের [মন্দদূত] অধ্যক্ষ” সম্বন্ধেও বলে। (দানিয়েল ১০:১২, ১৩, ২০) আর প্রকাশিত বাক্য ১৩:১, ২ পদে শয়তানকে “নাগ” হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যে রাজনৈতিক পশুকে “আপনার সিংহাসন ও মহৎ কর্ত্তৃত্ব” দান করে।

৯. কাদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানরা লড়াই করে?

তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” (ইফিষীয় ৬:১২) এমনকি আজকেও, শয়তান দিয়াবলের নিয়ন্ত্রণাধীনে মন্দ দূতবাহিনী অদৃশ্য রয়েছে, মানব শাসক ও সাধারণ মানবজাতির ওপর প্রভাব খাটায়, তাদেরকে গণহত্যা, সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যার মতো অবর্ণনীয় কাজগুলো করার জন্য উসকে দেয়। আসুন এখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, কীভাবে আমরা এই শক্তিশালী আত্মিকবাহিনীকে সফলভাবে প্রতিরোধ করতে পারি।

আমাদের কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে?

১০, ১১. কীভাবে আমরা শয়তান ও তার দুষ্ট দূতদের প্রতিরোধ করতে পারি?

১০ শারীরিক বা মানসিক যা-ই হোক না কেন, আমরা আমাদের নিজেদের শক্তিতে শয়তান ও তার দুষ্ট দূতদের প্রতিরোধ করতে পারি না। পৌল আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন: “তোমরা প্রভুতে ও তাঁহার শক্তির পরাক্রমে বলবান্‌ হও।” সুরক্ষার জন্য আমাদের ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে হবে। পৌল আরও বলেন: “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার। . . . তোমরা ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা গ্রহণ কর, যেন সেই কুদিনে প্রতিরোধ করিতে এবং সকলই সম্পন্ন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে পার।”—ইফিষীয় ৬:১০, ১১, ১৩.

১১ পৌল দুবার তার সহখ্রিস্টানদের “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” পরিধান করার জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন। “সমগ্র” শব্দটি দেখায় যে, মন্দদূতদের আক্রমণকে প্রতিরোধ করার জন্য কোনো অর্ধহৃদয়ের পদক্ষেপ যথেষ্ট হবে না। তাই, আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো কী, যেগুলো আজকে মন্দদূতদের প্রতিরোধ করার জন্য খ্রিস্টানদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন?

“দাঁড়াইয়া থাক”—কীভাবে?

১২. কীভাবে খ্রিস্টানরা সত্যের দ্বারা তাদের কটিকে বদ্ধ করতে পারে?

১২ পৌল ব্যাখ্যা করেন: “অতএব সত্যের কটিবন্ধনীতে বদ্ধকটি হইয়া, ধার্ম্মিকতার বুকপাটা পরিয়া, . . . দাঁড়াইয়া থাক।” (ইফিষীয় ৬:১৪, ১৫) এখানে যে-দুটো যুদ্ধসজ্জার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হল কটিবন্ধনী বা বেল্ট এবং বুকপাটা। একজন সৈন্যকে তার কটিকে (কোমর, কুঁচকি এবং তলপেটকে) সুরক্ষা করার ও তার খড়্গের ভার বহন করার জন্য বেল্টকে শক্ত রাখতে হতো। একইভাবে, রূপকভাবে বললে বাইবেলের সত্যকে আমাদের চারপাশে শক্তভাবে জড়িয়ে রাখতে হবে, যাতে আমরা এর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করি। আমাদের কি রোজ বাইবেল পড়ার তালিকা রয়েছে? পুরো পরিবার কি একসঙ্গে পড়ে থাকে? আমাদের কি পরিবারগতভাবে দৈনিক শাস্ত্রপদ বিবেচনা করার একটা তালিকা রয়েছে? এ ছাড়া, আমরা কি ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা জোগানো প্রকাশনার ব্যাখ্যাগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি? (মথি ২৪:৪৫) যদি এগুলো করে থাকি, তা হলে আমরা পৌলের পরামর্শ কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তা ছাড়াও, আমাদের সেইসমস্ত ভিডিও এবং ডিভিডি রয়েছে, যেগুলো শাস্ত্রীয় নির্দেশনা জোগাতে পারে। সত্যের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকা আমাদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে এবং ভুল পথ অনুসরণ করা থেকে সুরক্ষা করতে পারে।

১৩. কীভাবে আমরা আমাদের রূপক হৃদয়কে সুরক্ষা করতে পারি?

১৩ আক্ষরিক বুকপাটা সৈনিকের বুক, হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সুরক্ষার করার জন্য কাজ করে। একজন খ্রিস্টান ঈশ্বরের ধার্মিকতার জন্য ভালবাসা গড়ে তুলে এবং যিহোবার ধার্মিক মানগুলোর সঙ্গে লেগে থেকে তার রূপক হৃদয়কে—ভিতরের ব্যক্তিকে—সুরক্ষা করতে পারে। রূপক বুকপাটা আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যকে হালকা করে দেওয়া থেকে সুরক্ষা করে। আমরা যখন ‘মন্দকে ঘৃণা করি ও উত্তমকে ভালবাসি,’ তখন আমরা “সমস্ত কুপথ হইতে” আমাদের চরণ দমন করি।—আমোষ ৫:১৫; গীতসংহিতা ১১৯:১০১.

১৪. আমাদের “শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা চরণে” দেওয়ার অর্থ কী?

১৪ সাম্রাজ্যের মধ্যে এঁকেবেঁকে চলা শত শত মাইল রোমীয় পথের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ যাত্রা করার জন্য রোমীয় সৈন্যদের পা সাধারণত উপযুক্ত পাদুকা দিয়ে সুসজ্জিত থাকত। “শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা চরণে” অভিব্যক্তিটার অর্থ খ্রিস্টানদের জন্য কী? (ইফিষীয় ৬:১৫) এর অর্থ হল যে, আমরা কাজের জন্য প্রস্তুত। আমরা প্রতিটা উপযুক্ত সময়ে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য প্রস্তুত। (রোমীয় ১০:১৩-১৫) খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় আমাদের সক্রিয় থাকা শয়তানের “নানাবিধ চাতুরীর” বিরুদ্ধে একটা সুরক্ষা।—ইফিষীয় ৬:১১.

১৫. (ক) কী দেখায় যে, বিশ্বাসের বড় ঢাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? (খ) আমাদের বিশ্বাসের ওপর কোন কোন ‘অগ্নিবাণের’ ক্ষতিকর প্রভাব থাকতে পারে?

১৫ “এই সকল ছাড়া,” পৌল বলে চলেন, “বিশ্বাসের ঢালও গ্রহণ কর, যাহার দ্বারা তোমরা সেই পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে পারিবে।” (ইফিষীয় ৬:১৬) বিশ্বাসের বড় ঢাল গ্রহণ করার পরামর্শকে “এই সকল ছাড়া,” এই অভিব্যক্তির দ্বারা উপস্থাপিত করা ইঙ্গিত দেয় যে, এই যুদ্ধসজ্জা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাসে যেন অবশ্যই কোনো কমতি না থাকে। এক বিরাট সুরক্ষামুলক ঢালের মতো আমাদের বিশ্বাস আমাদেরকে শয়তানের বিভিন্ন “অগ্নিবাণ” থেকে সুরক্ষা করতে পারে। এগুলো আজকে কোন বিষয়গুলোকে চিত্রিত করে? এগুলো হতে পারে চরম অপমান, মিথ্যা এবং সেই শত্রু ও ধর্মভ্রষ্টদের দ্বারা প্রকাশিত অর্ধসত্য, যারা আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ছাড়া, এইসমস্ত “অগ্নিবাণ” হতে পারে বস্তুবাদিতাপূর্ণ হওয়ার প্রলোভনগুলো, যেগুলো আমাদেরকে অনেক জিনিসপত্র কেনাকাটা করায় ব্যস্ত থাকতে পরিচালিত করে আর এমনকি সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য প্ররোচিত করে, যারা লোকদেখানো জীবনযাপন করে থাকে। তারা হয়তো আরও বড় ও আরও ভাল বাড়ি এবং গাড়ির পিছনে খরচ করে থাকে অথবা তাদের দামি গয়নাগাটি ও হালফ্যাশনের কাপড়চোপড় অন্যকে দেখিয়ে থাকে। অন্যেরা যা-ই করুক না কেন, আমাদের এমন বিশ্বাস থাকতে হবে, যা এইসমস্ত “অগ্নিবাণ” দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। কীভাবে আমরা দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তুলতে ও তা বজায় রাখতে পারি?—১ পিতর ৩:৩-৫; ১ যোহন ২:১৫-১৭.

১৬. কী আমাদেরকে দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে?

১৬ নিয়মিত ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন ও আন্তরিক প্রার্থনার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারি। আরও শক্তিশালী বিশ্বাসের জন্য আমরা যিহোবার কাছে বিনতি জানাতে পারি এবং এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা কি সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের জন্য মনোযোগের সঙ্গে প্রস্তুত হই? আমরা যদি বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি পড়ি, তা হলে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে।—ইব্রীয় ১০:৩৮, ৩৯; ১১:৬.

১৭. কীভাবে আমরা ‘পরিত্রাণের শিরস্ত্রাণ গ্রহণ করিতে’ পারি?

১৭ পৌল এই পরামর্শের দ্বারা তার আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার বর্ণনার উপসংহার করেছিলেন: “পরিত্রাণের শিরস্ত্রাণ ও আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ কর।” (ইফিষীয় ৬:১৭) শিরস্ত্রাণ সৈনিকের মস্তক ও মগজ অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেন্দ্রকে সুরক্ষা করে। একইভাবে আমাদের খ্রিস্টীয় আশা আমাদের মানসিক ক্ষমতাকে সুরক্ষা করে। (১ থিষলনীকীয় ৫:৮) বিভিন্ন জাগতিক লক্ষ্য ও বস্তুবাদিতাপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলোর দ্বারা আমাদের মনকে পরিপূর্ণ করার পরিবর্তে, আমাদের চিন্তাভাবনাকে ঈশ্বরদত্ত আশার ওপর কেন্দ্রীভূত করা উচিত, যেমনটা যিশু করেছিলেন।—ইব্রীয় ১২:২.

১৮. নিয়মিত বাইবেল পাঠের কার্যক্রমকে কেন আমাদের অবহেলা করা উচিত নয়?

১৮ শয়তান ও তার মন্দূদতদের প্রভাবের বিরুদ্ধে আমাদের চূড়ান্ত সুরক্ষা হল, বাইবেলে লিপিবদ্ধ ঈশ্বরের বাক্য অথবা বার্তা। এটা হল আরেকটা কারণ, যেজন্য আমাদের নিয়মিত বাইবেল পাঠের কার্যক্রমকে অবহেলা করা উচিত নয়। ঈশ্বরের বাক্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান আমাদেরকে শয়তানের মিথ্যা এবং মন্দদূতদের অপপ্রচার ও সেইসঙ্গে ধর্মভ্রষ্টদের শত্রুতাপূর্ণ কথাবার্তা থেকে সুরক্ষা করে।

‘সর্ব্বসময়ে প্রার্থনা কর’

১৯, ২০. (ক) শয়তান ও তার মন্দদূতদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? (খ) কী আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করতে পারে?

১৯ শয়তান, তার মন্দদূত ও দুষ্ট জগতের অপসারণ কাছেই। শয়তান জানে যে, তার “কাল সংক্ষিপ্ত।” সে ক্রোধান্বিত এবং তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, যারা “ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) তাই, শয়তান ও তার মন্দদূতদের প্রতিরোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০ ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান করার উপদেশের জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! পৌল এই পরামর্শের দ্বারা তার আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার আলোচনা শেষ করেন: “সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি সহকারে সর্ব্বসময়ে আত্মাতে প্রার্থনা কর, এবং ইহার নিমিত্ত সম্পূর্ণ অভিনিবেশ ও বিনতিসহ জাগিয়া থাক।” (ইফিষীয় ৬:১৮) প্রার্থনা আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করতে এবং আমাদের সতর্ক থাকার জন্য সাহায্য করতে পারে। আসুন আমরা পৌলের কথাগুলোতে মনোযোগ দিই এবং সবসময় প্রার্থনা করে চলি, কারণ তা আমাদেরকে শয়তান ও তার মন্দদূতদের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

আপনি কী শিখেছেন?

• কীভাবে শয়তান ও তার মন্দদূতেরা অস্তিত্বে এসেছিল?

• দিয়াবল কতটা শক্তিশালী?

• শয়তান ও তার মন্দদূতদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

‘ঈশ্বরের পুত্ত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে দেখিল’

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার ছয়টা অংশকে শনাক্ত করতে পারেন?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

এই কাজগুলোতে রত থাকা কীভাবে শয়তান ও তার মন্দদূতদের বিরুদ্ধে এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা?