সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিরমিয় বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিরমিয় বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

যিরমিয় বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিরমিয় তার নিজের লোকেদের উদ্দেশে যে-বিপর্যয়গুলোর কথা ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলো নিশ্চয়ই কত ভয়ংকরই না শুনিয়েছে! গৌরবান্বিত মন্দির যা তিন শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে উপাসনার কেন্দ্র হিসেবে ছিল, সেটাকে সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যিরূশালেম শহর ও যিহূদা দেশ জনশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকবে, তাদের অধিবাসীদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হবে। এগুলোর এবং অন্যান্য বিচারের ঘোষণাগুলোর নথি বাইবেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই যিরমিয়তে পাওয়া যায়। এ ছাড়া, এটি আরও বর্ণনা করে যে, বিশ্বস্তভাবে ৬৭ বছরের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার সময়ে যিরমিয় ব্যক্তিগতভাবে কোন অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। এই বইটিতে তথ্য কালানুক্রমিকভাবে নয় বরং বিষয় অনুসারে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বাইবেলের যিরমিয় বইটি কেন আমাদের জন্য আগ্রহজনক? এটির পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আমাদের এই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে যে, যিহোবা হলেন তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতাকারী। (যিশাইয় ৫৫:১০, ১১) ভাববাদী হিসেবে যিরমিয়ের কাজ এবং তার বার্তার প্রতি লোকেদের মনোভাব আমাদের দিনের মতো একই। (১ করিন্থীয় ১০:১১) অধিকন্তু, যিহোবা তাঁর লোকেদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেগুলোর নথি তাঁর গুণাবলিকে তুলে ধরে এবং তা আমাদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলা উচিত।—ইব্রীয় ৪:১২.

“আমার প্রজাবৃন্দ দুই দোষ করিয়াছে”

(যিরমিয় ১:১–২০:১৮)

যিহূদার রাজা যোশিয়ের রাজত্বের ১৩তম বছরে, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের ৪০ বছর আগে যিরমিয়কে একজন ভাববাদী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। (যিরমিয় ১:১, ২) যে-ঘোষণাগুলোর অধিকাংশই যোশিয়ের রাজত্বের অবশিষ্ট ১৮ বছরে করা হয়েছিল, সেগুলো যিহূদার মন্দতাকে উন্মোচন করে এবং এর বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার ঘোষণা করে। “আমি যিরূশালেমকে ঢিবি . . . করিব,” যিহোবা ঘোষণা করেন, “আমি যিহূদার নগর সকল নিবাসীবিহীন ধ্বংসস্থান করিব।” (যিরমিয় ৯:১১) কেন? “কেননা আমার প্রজাবৃন্দ দুই দোষ করিয়াছে।”—যিরমিয় ২:১৩.

এই বার্তা অনুতপ্ত অবশিষ্টাংশের পুনর্স্থাপন সম্বন্ধেও বলে। (যিরমিয় ৩:১৪-১৮; ১২:১৪, ১৫; ১৬:১৪-২১) কিন্তু, এই বার্তাবাহককে সাদরে গ্রহণ করা হয় না। “সদাপ্রভুর গৃহের প্রধান অধ্যক্ষ” যিরমিয়কে প্রহার করেন এবং সারারাত ধরে হাড়িকাঠে বদ্ধ করে রাখেন।—যিরমিয় ২০:১-৩.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১:১১, ১২—যিহোবার তাঁর বাক্য সফল করতে জাগ্রত থাকা কেন ‘বাদাম গাছের এক শাখার’ সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? বাদাম গাছ হচ্ছে, বসন্তকালে প্রথম ফুল আসে এমন গাছগুলোর মধ্যে একটা। যিহোবা লোকেদের কাছে তাঁর বিচার সম্বন্ধে সাবধান করার জন্য রূপকভাবে ‘প্রত্যূষে উঠিয়া তাঁহার ভাববাদীগণকে প্রেরণ করিয়া আসিতেন’ এবং সেগুলো পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত “জাগ্রৎ” ছিলেন।—যিরমিয় ৭:২৫.

২:১০, ১১—কোন বিষয়টা অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের কার্যকলাপকে এতটা অস্বাভাবিক করে তুলেছিল? যদিও কিত্তীমের পশ্চিম ও কেদরের পূর্ব থেকে পৌত্তলিক জাতিগুলো তাদের নিজেদের দেব-দেবীর সঙ্গে যুক্ত করতে অন্যান্য জাতির দেব-দেবী নিয়ে আসতে পারে কিন্তু এমন কথা শোনা যায়নি যে, তারা বিদেশিদের দেব-দেবীকে পুরোপুরিভাবে তাদের দেব-দেবীর স্থলাভিষিক্ত করেছিল। অন্যদিকে, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবাকে পরিত্যাগ করেছিল, নিষ্প্রাণ মূর্তিগুলোর সঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বরের গৌরবের পরিবর্তন করেছিল।

৩:১১-২২; ১১:১০-১২, ১৭—এমনকি যদিও সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে শমরিয়ার পতন হয়েছিল, তা সত্ত্বেও কেন যিরমিয় উত্তরের দশ বংশের রাজ্যকে তার ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন? এর কারণ সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস, শুধুমাত্র যিহূদার ওপর নয় বরং সমগ্র ইস্রায়েল জাতির ওপর যিহোবার বিচারের প্রকাশ ছিল। (যিহিষ্কেল ৯:৯, ১০) অধিকন্তু, এর পতনের পর দশ বংশের রাজ্যের পুনর্স্থাপনের প্রত্যাশা ক্রমাগত যিরূশালেমেই প্রতিনিধিত্ব হয়েছিল কারণ ঈশ্বরের ভাববাদীদের বার্তা ইস্রায়েলীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করে চলেছিল।

৪:৩, ৪—এই আদেশের অর্থ কী? অবিশ্বস্ত যিহুদিদেরকে তাদের হৃদয়ের ভূমিকে প্রস্তুত, নরম এবং পরিষ্কার করতে হয়েছিল। তাদের হৃদয়ের “ত্বক্‌” সরিয়ে ফেলতে অর্থাৎ অশুদ্ধ চিন্তাভাবনা, আবেগঅনুভূতি ও উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হতে হয়েছিল। (যিরমিয় ৯:২৫, ২৬; প্রেরিত ৭:৫১) এর জন্য জীবনধারায় পরিবর্তন—যা মন্দ সেটার পরিবর্তে, ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে আসে এমন বিষয়—করতে হয়েছিল।

৪:১০; ১৫:১৮—কোন অর্থে যিহোবা তাঁর বিপথগামী লোকেদের ভ্রান্ত করেছিলেন? যিরমিয়ের দিনে এমন ভাববাদীরা ছিল, যারা ‘মিথ্যা ভাববাণী বলিতেছিল।’ (যিরমিয় ৫:৩১; ২০:৬; ২৩:১৬, ১৭, ২৫-২৮, ৩২) যিহোবা তাদেরকে ভ্রান্ত বার্তা ঘোষণা করা থেকে দমন করেননি।

১৬:১৬—“অনেক ধীবর আনাইব” ও “অনেক ব্যাধ আনাইব,” যিহোবার এই কথাগুলো কী ইঙ্গিত করে? এটা হয়তো সেই অবিশ্বস্ত যিহুদিদের খোঁজার জন্য শত্রুবাহিনী পাঠানোকে নির্দেশ করে, যাদের ওপর যিহোবা তাঁর বিচার নিয়ে আসবেন। কিন্তু, যিরমিয় ১৬:১৫ পদ যা বলে সেটার পরিপ্রেক্ষিতে, এই পদ অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়দের অনুসন্ধান করাকেও বোঝাতে পারে।

২০:৭—কোন উপায়ে যিহোবা যিরমিয়ের চেয়ে “বলবান্‌” ছিলেন ও তাকে প্ররোচিত করেছিলেন? যিহোবার বিচার ঘোষণা করার সময়ে উদাসীনতা, প্রত্যাখ্যান ও তাড়নার মুখোমুখি হওয়ার কারণে যিরমিয় হয়তো মনে করেছিলেন যে, তার আর কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো বল নেই। কিন্তু, এই ধরনের প্রবণতার বিরুদ্ধে যিহোবা নিজের বল ব্যবহার করেছিলেন, কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যিরমিয়কে শক্তিশালী করেছিলেন। এভাবে ভাববাদী নিজে যেটা করতে পারবেন না বলে মনে করেছিলেন, তা সম্পাদন করতে তাকে ব্যবহার করার মাধ্যমে যিহোবা যিরমিয়কে প্ররোচিত করেছিলেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:৮. যিহোবা হয়তো মাঝে মাঝে নিরপেক্ষ বিচারকদের ব্যবহার করার মাধ্যমে, বিদ্বেষপরায়ণ কর্মকর্তার স্থলে যুক্তিবাদী কর্মকর্তা নিযুক্ত করার মাধ্যমে অথবা তাঁর উপাসকদের সহ্য করার শক্তি প্রদান করার মাধ্যমে তাঁর লোকেদের তাড়না থেকে উদ্ধার করেন।—১ করিন্থীয় ১০:১৩.

২:১৩, ১৮. অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা দুটো দোষ করেছিল। তারা আশীর্বাদ, নির্দেশনা ও সুরক্ষার নিশ্চিত উনুই বা উৎস, যিহোবাকে ত্যাগ করেছিল। আর তারা মিসর ও অশূরের সঙ্গে মিত্রবাহিনী গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে নিজেদের জন্য রূপক কূপ খনন করেছিল। আমাদের সময়ে মানব দর্শনবিদ্যা, মতবাদ ও জাগতিক রাজনীতির সমর্থন করতে গিয়ে সত্য ঈশ্বরকে ত্যাগ করা হল, ‘জীবন্ত জলের উনুইয়ের’ স্থলে “ভগ্ন কূপ” স্থাপন করা।

৬:১৬. যিহোবা তাঁর বিদ্রোহী লোকেদের থামতে, নিজেদের পরীক্ষা করে দেখতে এবং তাদের বিশ্বস্ত পূর্বপুরুষদের ‘মার্গে’ বা পথে ফিরে যেতে পরামর্শ দেন। আমরা যে-পথে চলি বলে যিহোবা চান, সেই পথে আসলেই চলছি কি না, তা কি আমাদের মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখা উচিত নয়?

৭:১-১৫. মন্দিরের ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করা, এটাকে কোনো ধরনের সুরক্ষাকবচ হিসেবে দেখা যিহুদিদের রক্ষা করেনি। আমাদের বিশ্বাস দ্বারা চলা উচিত, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়।—২ করিন্থীয় ৫:৭.

১৫:১৬, ১৭. যিরমিয়ের মতো আমরাও নিরুৎসাহিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। অর্থপূর্ণ ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের ফলে আনন্দ লাভ করার, পরিচর্যায় যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করার এবং কুসংসর্গ এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি।

১৭:১, ২. যিহূদার লোকেদের পাপ, তাদের বলিদানকে ঈশ্বরের কাছে অসন্তোষজনক করে তুলেছিল। নৈতিক অশুদ্ধতা আমাদের স্তববলিকে অগ্রহণযোগ্য করে তোলে।

১৭:৫-৮. মনুষ্য ও প্রতিষ্ঠানগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নির্ভরতা পাওয়ার যোগ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা ও ঐশিক নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে। যখন পরিত্রাণ এবং প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো আসে, তখন আমরা একমাত্র যিহোবার ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞ হই।—গীতসংহিতা ১৪৬:৩.

২০:৮-১১. আমরা উদাসীনতা, বিরোধিতা অথবা তাড়নাকে রাজ্যের প্রচার কাজের জন্য আমাদের উদ্যোগকে ম্লান করতে দেব না।—যাকোব ৫:১০, ১১.

‘আপনারা আপন আপন গ্রীবা বাবিল-রাজের যোঁয়ালির নীচে রাখুন’

(যিরমিয় ২১:১–৫১:৬৪)

যিরমিয় যিহূদার শেষ চারজন রাজা ও সেইসঙ্গে মিথ্যা ভাববাদী, দায়িত্বহীন মেষপালক ও দুর্নীতিপরায়ণ যাজকদের বিরুদ্ধে বিচার ঘোষণা করেন। বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশদের উত্তম ডুমুর হিসেবে উল্লেখ করে যিহোবা বলেন: “আমি মঙ্গলার্থে তাহাদের প্রতি দৃষ্টি রাখিব।” (যিরমিয় ২৪:৫, ৬) ২৫ অধ্যায়ের তিনটে ভবিষ্যদ্বাণী সেই বিচারের সারাংশ করে, যেগুলো পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

যাজক ও ভাববাদীরা যিরমিয়কে হত্যা করার জন্য চক্রান্ত করে। তার বার্তাটা হল, তাদেরকে অবশ্যই বাবিলের রাজার দাসত্ব করতে হবে। রাজা সিদিকিয়কে যিরমিয় বলেন: ‘আপনারা আপন আপন গ্রীবা বাবিল-রাজের যোঁয়ালির নীচে রাখুন।’ (যিরমিয় ২৭:১২) কিন্তু, “যিনি ইস্রায়েলকে ছড়াইয়াছেন, তিনিই তাহাকে [ইস্রায়েলকে] সংগ্রহ করিবেন।” (যিরমিয় ৩১:১০) উত্তম কারণে রেখবীয়দের কাছে একটা প্রতিজ্ঞা করা হয়। যিরমিয়কে “রক্ষীদের প্রাঙ্গণে” রাখা হয়। (যিরমিয় ৩৭:২১) যিরূশালেম ধ্বংস হয় এবং এর অধিকাংশ অধিবাসীকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়। যাদেরকে রেখে যাওয়া হয়, তাদের মধ্যে যিরমিয় ও তার সচিব বারূক রয়েছে। যদিও যিরমিয় তাদেরকে না যেতে সতর্ক করেছিলেন, তবুও আতঙ্কিত লোকেরা মিসরে চলে যায়। ৪৬ থেকে ৫১ অধ্যায় সেই বার্তা সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যা যিরমিয় সেই জাতিগুলোর বিষয়ে বলেন।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

২২:৩০—এই আদেশ কি দায়ূদের সিংহাসনে আরোহণ করার জন্য যিশু খ্রিস্টের অধিকারকে বাতিল করে দিয়েছিল? (মথি ১:১, ১১) না, তা করেনি। এই আদেশ যিহোয়াখীনের যেকোনো বংশধরকে ‘যিহূদায় দায়ূদের সিংহাসনে উপবেশন’ করতে বাধা দিয়েছিল। যিশুর স্বর্গ থেকে শাসন করার কথা ছিল, যিহূদার সিংহাসন থেকে নয়।

২৩:৩৩—“সদাপ্রভুর ভারবাণী” কী? যিরমিয়ের দিনে যিরূশালেমের ধ্বংসের বিষয়ে ভাববাদীর ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলো তার সহঅধিবাসীদের জন্য এক ভারস্বরূপ ছিল। অন্যদিকে, উদাসীন লোকেরা যিহোবার কাছে এমন ভারস্বরূপ ছিল যে, তিনি তাদের প্রত্যাখ্যান করবেন। একইভাবে, খ্রিস্টীয়জগতের ওপর আসা আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় বার্তা খ্রিস্টীয়জগতের জন্য ভারস্বরূপ আর যারা এতে মনোযোগ দেয় না, তারা ঈশ্বরের কাছে ক্লান্তিকর।

৩১:৩৩—কীভাবে ঈশ্বরের ব্যবস্থা হৃদয়ে লিখিত রয়েছে? যখন একজন ব্যক্তি যিহোবাকে এতটাই ভালবাসেন যে যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য তার ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা থাকে, তখন বলা যেতে পারে যে, তার হৃদয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থা লিখিত রয়েছে।

৩২:১০-১৫—একই চুক্তির দুটো পত্র বা দলিল তৈরি করার উদ্দেশ্য কী ছিল? খোলা দলিলটি আলাপ-আলোচনার জন্য ছিল। মুদ্রাঙ্কিত দলিলটি প্রয়োজনে খোলা দলিলের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রমাণ হিসেবে কাজ করত। এমনকি আত্মীয় ও সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে লেনদেনের সময়েও যুক্তিসংগত আইনগত বিষয়গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে যিরমিয় আমাদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

৩৩:২৩, ২৪—এখানে বলা ‘দুই গোষ্ঠী’ কী? একটা হচ্ছে রাজা দায়ূদের বংশধারায় রাজকীয় গোষ্ঠী এবং অন্যটা হারোণের বংশধরদের যাজকীয় গোষ্ঠী। যিরূশালেম ও যিহোবার মন্দির ধ্বংস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছিল যে, যিহোবা এই দুই গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং পৃথিবীতে তাঁর কোনো রাজ্য থাকবে না বা তাঁর উপাসনা পুনরুদ্ধার করা হবে না।

৪৬:২২—মিসরের শব্দকে কেন সর্পের শব্দের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে? এটা হয়তো পিছু হটে যাওয়া সাপের ফোঁস ফোঁস শব্দ অথবা বিপর্যয় ভোগ করার কারণে এক জাতি হিসেবে মিসরের অবমানিত অবস্থাকে নির্দেশ করে। এই উপমা এও দেখায় যে, নাগদেবী উয়াটচিটের দ্বারা সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে মিশরীয় ফরৌণদের মস্তকাবরণীতে পবিত্র সাপের মূর্তি পরা কতটা নিষ্ফল।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

২১:৮, ৯; ৩৮:১৯. যিহোবা এমনকি একেবারে শেষ মুহূর্তে যিরূশালেমের যে-অননুতপ্ত অধিবাসীরা মৃত্যুর যোগ্য ছিল, তাদের জন্য বেছে নেওয়ার একটা বিষয় জুগিয়েছিলেন। হ্যাঁ, “তাঁহার করুণা প্রচুর।”—২ শমূয়েল ২৪:১৪; গীতসংহিতা ১১৯:১৫৬.

৩১:৩৪. যিহোবা যাদের পাপ ক্ষমা করেন, ভবিষ্যতে তিনি যে তাদের পাপ পুনরায় স্মরণ করেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন না, তা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক!

৩৮:৭-১৩; ৩৯:১৫-১৮. যিহোবা আমাদের বিশ্বস্ত সেবা ভুলে যান না, যার অন্তর্ভুক্ত হল ‘পবিত্রগণের পরিচর্য্যা।’—ইব্রীয় ৬:১০.

৪৫:৪, ৫. যিহূদার শেষ সময়ে যেমনটা হয়েছিল, তেমনই এই বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কাল’ “মহৎ মহৎ বিষয়” যেমন ধনসম্পদ, খ্যাতি অথবা বস্তুগত নিরাপত্তার চেষ্টা করার সময় নয়।—২ তীমথিয় ৩:১; ১ যোহন ২:১৭.

যিরূশালেমকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়

(যিরমিয় ৫২:১-৩৪)

সময়টা হল সা.কা.পূ. ৬০৭ সাল। সিদিকিয় তার রাজত্বের ১১তম বছরে রয়েছেন। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর বিগত ১৮ মাস ধরে যিরূশালেম অবরোধ করেছেন। নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের ১৯তম বছরের পঞ্চম মাসের সপ্তম দিনে রক্ষকসেনাপতি নবূষরদন যিরূশালেমে ‘আসেন’ বা উপস্থিত হন। (২ রাজাবলি ২৫:৮) সম্ভবত নবূষরদন নগর প্রাচীরের বাইরে তার শিবির থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখেন এবং পদক্ষেপ নেওয়ার উপায় সম্বন্ধে পরিকল্পনা করেন। তিন দিন পর, মাসের দশম দিনে তিনি যিরূশালেমে ‘প্রবেশ করেন।’ আর তিনি সেই শহর পুড়িয়ে দেন।—যিরমিয় ৫২:১২, ১৩.

যিরমিয় যিরূশালেমের পতনের বিবরণ সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। তাই, তার বর্ণনা বিলাপ বা শোক করার ভিত্তি জোগায়। এই রচনাগুলো বাইবেলের বিলাপ বইয়ে পাওয়া যায়।

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার যিরমিয়ের ঘোষণাগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

কোন উপায়ে যিহোবা যিরমিয়ের চেয়ে “বলবান্‌” ছিলেন?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘আমি যিহূদার বন্দিগণকে এই উত্তম ডুমুরফলের সদৃশ করিয়া . . . লক্ষ্য করিব।’—যিরমিয় ২৪:৫