সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্বর্গদূতেরা—যেভাবে তারা মানবজাতিকে প্রভাবিত করে

স্বর্গদূতেরা—যেভাবে তারা মানবজাতিকে প্রভাবিত করে

স্বর্গদূতেরা—যেভাবে তারা মানবজাতিকে প্রভাবিত করে

“এই সকলের পরে আমি স্বর্গ হইতে আর এক দূতকে নামিয়া আসিতে দেখিলাম; তিনি মহাক্ষমতাপন্ন . . . তিনি প্রবল রবে ডাকিয়া কহিলেন, ‘পড়িল, পড়িল মহতী বাবিল।’”—প্রকাশিত বাক্য ১৮:১, ২.

১, ২. কী দেখায় যে, যিহোবা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদনের জন্য স্বর্গদূতদের ব্যবহার করেন?

 পাট্‌ম দ্বীপে নির্বাসিত অবস্থায় থাকার সময় বৃদ্ধ প্রেরিত যোহনকে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শন দেওয়া হয়েছিল। তিনি যখন “প্রভুর দিনে আত্মাবিষ্ট” হয়েছিলেন, তখন রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো দেখেছিলেন। আর সেই দিন ১৯১৪ সালে যিশু খ্রিস্ট সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং তা তাঁর হাজার বছর রাজত্বের শেষ পর্যন্ত চলবে।—প্রকাশিত বাক্য ১:১০.

যিহোবা ঈশ্বর যোহনকে সরাসরি এই প্রকাশিত বাক্য দেননি। তিনি একটা মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন। প্রকাশিত বাক্য ১:১ পদ বলে: “যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাঁহাকে দান করিলেন, যেন তিনি, যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, সেই সকল আপন দাসগণকে দেখাইয়া দেন; আর তিনি নিজের দূত প্রেরণ করিয়া আপন দাস যোহনকে তাহা জ্ঞাত করিলেন।” যোহনকে ‘প্রভুর দিন’ সম্বন্ধে অপূর্ব বিষয়গুলো জানানোর জন্য যিহোবা যিশুর মাধ্যমে একজন স্বর্গদূতকে ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া, এক সময় যোহন ‘স্বর্গ হইতে আর এক দূতকে নামিয়া আসিতে দেখিয়াছিলেন; তিনি মহাক্ষমতাপন্ন।’ এই স্বর্গদূতের কার্যভার কী ছিল? “তিনি প্রবল রবে ডাকিয়া কহিলেন, ‘পড়িল, পড়িল মহতী বাবিল।’” (প্রকাশিত বাক্য ১৮:১, ২) এই শক্তিশালী স্বর্গদূতকে মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য মহতী বাবিলের পতন সম্বন্ধে ঘোষণা করার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তাই, এই সম্বন্ধে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না যে, যিহোবা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে স্বর্গদূতদের ব্যবহার করেন। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে স্বর্গদূতেরা যে-ভূমিকা পালন করে, সেটা এবং আমরা যেভাবে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হই, তা বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করার আগে, আসুন আমরা এই আত্মিক প্রাণীদের উৎস সম্বন্ধে বিবেচনা করি।

স্বর্গদূতেরা কীভাবে অস্তিত্বে এসেছিল?

৩. স্বর্গদূতদের সম্বন্ধে অনেক লোকের কোন ভুল ধারণা রয়েছে?

আজকে, লক্ষ লক্ষ লোক স্বর্গদূতদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। কিন্তু, তাদের সম্বন্ধে এবং তাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ধর্মপরায়ণ লোক মনে করে যে, কোনো প্রিয়জন যখন মারা যান, তখন সেই ব্যক্তিকে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ও একজন স্বর্গদূত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। স্বর্গদূতদের সৃষ্টি, অস্তিত্ব এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য কি এটাই শিক্ষা দেয়?

৪. স্বর্গদূতদের উৎপত্তি সম্বন্ধে শাস্ত্র আমাদের কী বলে?

যে-স্বর্গদূত সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতার অধিকারী তাঁর নাম হল, প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল। (যিহূদা ৯) তিনি যিশু খ্রিস্ট ছাড়া আর কেউই নন। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৬) অগণিত বছর আগে, যিহোবা যখন একজন সৃষ্টিকর্তা হওয়ার উদ্দেশ্য করেছিলেন, তখন তাঁর সবচেয়ে প্রথম সৃষ্টি ছিল এই দূত পুত্র। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪) পরবর্তী সময়ে, এই প্রথমজাত পুত্রের মাধ্যমে যিহোবা অন্য সকল আত্মিক প্রাণীকে সৃষ্টি করেছিলেন। (কলসীয় ১:১৫-১৭) এই দূতরূপ প্রাণীদের তাঁর পুত্র হিসেবে উল্লেখ করে যিহোবা কুলপতি ইয়োবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? যদি তোমার বুদ্ধি থাকে, তবে বল, . . . কে বা তাহার কোণের প্রস্তর বসাইল? তৎকালে প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দরব করিল, ঈশ্বরের পুত্ত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল।” (ইয়োব ৩৮:৪, ৬, ৭) স্পষ্টতই, স্বর্গদূতেরা হল ঈশ্বরের সৃষ্টি আর তারা মানুষের বহু আগেই অস্তিত্বে এসেছিল।

৫. কীভাবে স্বর্গদূতেরা সংগঠিত?

“ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির,” ১ করিন্থীয় ১৪:৩৩ পদ বলে। তাই, যিহোবা তাঁর আত্মিক পুত্রদের তিনটে প্রাথমিক শ্রেণীতে সংগঠিত করেছেন: (১) সরাফ, যারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে পরিচারক হিসেবে সেবা করে, তাঁর পবিত্রতা সম্বন্ধে ঘোষণা করে ও তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে শুচি রাখে; (২) করূব, যারা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে তুলে ধরে; এবং (৩) অন্যান্য স্বর্গদূত, যারা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করে। (গীতসংহিতা ১০৩:২০; যিশাইয় ৬:১-৩; যিহিষ্কেল ১০:৩-৫; দানিয়েল ৭:১০) কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে এই আত্মিক প্রাণীরা মানুষদের প্রভাবিত করে?—প্রকাশিত বাক্য ৫:১১.

স্বর্গদূতেরা কোন ভূমিকা পালন করে?

৬. কীভাবে যিহোবা এদন উদ্যানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনায় করূবদের ব্যবহার করেছিলেন?

আত্মিক প্রাণীদের সম্বন্ধে প্রথম সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছিল আদিপুস্তক ৩:২৪ পদে, যেখানে আমরা পড়ি: “ঈশ্বর মনুষ্যকে তাড়াইয়া দিলেন, এবং জীবনবৃক্ষের পথ রক্ষা করিবার জন্য এদনস্থ উদ্যানের পূর্ব্বদিকে করূবগণকে ও ঘূর্ণায়মান তেজোময় খড়গ রাখিলেন।” এই করূবদের কারণে আদম ও হবার পক্ষে তাদের আদি উদ্যান গৃহে পুনরায় প্রবেশ করা অসম্ভব ছিল। এটা ঘটেছিল মানব ইতিহাসের একেবারে শুরুতেই। তখন থেকে স্বর্গদূতেরা কোন ভূমিকা পালন করেছে?

৭. ‘স্বর্গদূতের’ জন্য মূল ভাষার শব্দগুলোর অর্থ, স্বর্গদূতেরা যে-ভূমিকাগুলো পালন করে থাকে, তার মধ্যে একটা ভূমিকা সম্বন্ধে কী দেখায়?

স্বর্গদূতদের সম্বন্ধে বাইবেলে প্রায় ৪০০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। ‘স্বর্গদূতের’ জন্য ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষার উভয় শব্দকেই “বার্তাবাহক” হিসেবে অনুবাদ করা যেতে পারে। ফলে স্বর্গদূতেরা ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে যোগাযোগের এক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এই প্রবন্ধের প্রথম দুটো অনুচ্ছেদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রেরিত যোহনকে যিহোবা তাঁর বার্তা সম্বন্ধে জানানোর জন্য একজন স্বর্গদূতকে ব্যবহার করেছিলেন।

৮, ৯. (ক) কীভাবে একজন স্বর্গদূতের সাক্ষাৎ মানোহ ও তার স্ত্রীর ওপর প্রভাব ফেলেছিল? (খ) ঈশ্বরের স্বর্গদূতের সঙ্গে মানোহের সাক্ষাৎ থেকে বাবামারা কী শিখতে পারে?

এ ছাড়া, পৃথিবীতে ঈশ্বরের দাসদের সাহায্য করার এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্যও স্বর্গদূতদের ব্যবহার করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলে বিচারকর্তৃগণের সময়ে মানোহ ও তার বন্ধ্যা স্ত্রী আন্তরিকভাবে একটা সন্তান চেয়েছিল। মানোহের স্ত্রীকে এই কথা জানানোর জন্য যিহোবা তাঁর স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছিলেন যে, তার একটা পুত্রসন্তান হবে। বিবরণ আমাদের বলে: “দেখ, তুমি গর্ব্ভধারণ করিয়া পুত্ত্র প্রসব করিবে; আর তাহার মস্তকে ক্ষুর উঠিবে না, কেননা সেই বালক গর্ব্ভহইতেই ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয় হইবে, এবং সে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে ইস্রায়েলকে নিস্তার করিতে আরম্ভ করিবে।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:১-৫.

মানোহের স্ত্রী অবশেষে শিম্‌শোন নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, যিনি বাইবেলের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:২৪) সেই সন্তান জন্মগ্রহণ করার আগে, মানোহ অনুরোধ করেছিলেন যে, সেই পুত্রকে লালনপালনের ব্যাপারে তাদের কী কর্তব্য, সেই সম্বন্ধে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যেন সেই স্বর্গদূত তাদের কাছে পুনর্বার আসেন। মানোহ জিজ্ঞেস করেছিলেন: “সেই বালকের প্রতি কি বিধি ও কি কর্ত্তব্য?” যিহোবার দূত মানোহের স্ত্রীকে যেসমস্ত নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা পুনরায় বলেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:৬-১৪) মানোহ নিশ্চয়ই কতই না উৎসাহিত হয়েছিলেন! আজকে, স্বর্গদূতেরা একই উপায়ে ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে না কিন্তু বাবামারা তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় মানোহের মতো যিহোবার নির্দেশনার অন্বেষণ করতে পারে।—ইফিষীয় ৬:৪, NW.

১০, ১১. (ক) আক্রমণকারী অরামীয় সেনাবাহিনী দেখে ইলীশায় ও তার দাস কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল? (খ) এই ঘটনা বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?

১০ ভাববাদী ইলীশায়ের দিনে স্বর্গদূতদের সাহায্যের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ছিল। ইলীশায় ইস্রায়েলের দোথন নগরে ছিলেন। একদিন ইলীশায়ের দাস যখন খুব সকালে উঠে বাইরে তাকিয়েছিলেন, তখন তিনি দেখেছিলেন যে, সেই নগর অনেক অশ্ব ও যুদ্ধরথ দ্বারা পরিবেষ্টিত। ইলীশায়কে বন্দি করার জন্য অরাম রাজা এক শক্তিশালী সৈন্যদল পাঠিয়েছিলেন। ইলীশায়ের পরিচারক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? ভয় পেয়ে, সম্ভবত আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তিনি আর্তনাদ করে বলেছিলেন: “হায় হায়, হে প্রভু! আমরা কি করিব?” তার কাছে পরিস্থিতি একেবারেই হতাশাজনক বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, ইলীশায় উত্তর দিয়েছিলেন: “ভয় করিও না, উহাদের সঙ্গীদের অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক।” এর দ্বারা তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?—২ রাজাবলি ৬:১১-১৬.

১১ ইলীশায় জানতেন যে, তাকে সাহায্য করার জন্য দূতবাহিনী উপস্থিত রয়েছে। কিন্তু, তার দাস কিছুই দেখতে পাননি। তাই, “ইলীশায় প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, ইহার চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন এ দেখিতে পায়। তখন সদাপ্রভু সেই যুবকটীর চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং সে দেখিতে পাইল, আর দেখ, ইলীশায়ের চারিদিকে অগ্নিময় অশ্বে ও রথে পর্ব্বত পরিপূর্ণ।” (২ রাজাবলি ৬:১৭) তখন সেই পরিচারক দূতবাহিনীকে দেখতে পেরেছিলেন। আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি সহকারে আমরাও বুঝতে পারি যে, যিহোবা ও খ্রিস্টের নির্দেশনার অধীনে যেসমস্ত স্বর্গদূত রয়েছে, তারা যিহোবার লোকেদের সাহায্য ও সুরক্ষা প্রদান করে।

খ্রিস্টের সময়ে স্বর্গদূতদের সাহায্য

১২. গাব্রিয়েল দূতের কাছ থেকে মরিয়ম কোন সাহায্য লাভ করেছিলেন?

১২ যিহুদি কুমারী মরিয়ম যখন এই কথা শুনেছিলেন, তখন যে-সাহায্য লাভ করেছিলেন, তা বিবেচনা করে দেখুন: “তুমি গর্ব্ভবতী হইয়া পুত্ত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম যীশু রাখিবে।” এই চমকপ্রদ বার্তা জানানোর ঠিক আগে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রেরিত গাব্রিয়েল দূত মরিময়কে বলেছিলেন: “ভয় করিও না, কেননা তুমি ঈশ্বরের নিকটে অনুগ্রহ পাইয়াছ।” (লূক ১:২৬, ২৭, ৩০, ৩১) এই কথাগুলোর দ্বারা মরিয়ম কত উৎসাহ ও শক্তিই না পেয়েছিলেন, যেগুলো তাকে ঐশিক অনুগ্রহ সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দিয়েছিল!

১৩. কীভাবে স্বর্গদূতেরা যিশুকে সাহায্য করেছিল?

১৩ স্বর্গদূতের সাহায্যের আরেকটা ঘটনা, যিশু তিনটে পরীক্ষা বা প্রলোভন প্রতিরোধ করার পর ঘটেছিল, যে-প্রলোভনগুলো শয়তান প্রান্তরে যিশুর সামনে নিয়ে এসেছিল। বিবরণ আমাদের বলে যে, প্রলোভনের শেষে “দিয়াবল তাঁহাকে ছাড়িয়া গেল, আর দেখ, দূতগণ কাছে আসিয়া তাঁহার পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন।” (মথি ৪:১-১১) যিশুর মৃত্যুর আগের রাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। নিদারুণ যন্ত্রণায় যিশু হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে শুরু করেছিলেন, বলেছিলেন: “পিতঃ, যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর; তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক; তখন স্বর্গ হইতে এক দূত দেখা দিয়া তাঁহাকে সবল করিলেন।” (লূক ২২:৪২, ৪৩) কিন্তু আজকে স্বর্গদূতদের কাছ থেকে কোন ধরনের সাহায্য আমরা পাই?

আধুনিক সময়ে স্বর্গদূতদের সাহায্য

১৪. আধুনিক সময়ে যিহোবার সাক্ষিদের কোন তাড়না সহ্য করতে হয়েছিল আর এর ফল কী হয়েছে?

১৪ আমরা যখন যিহোবার সাক্ষিদের প্রচার কাজের আধুনিক দিনের ইতিহাস বিবেচনা করি, তখন আমরা কি স্বর্গদূতদের সাহায্যের প্রমাণ দেখতে পাই না? উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার লোকেরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) আগে ও যুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে এবং পশ্চিম ইউরোপে নাৎসিবাদের প্রচণ্ড আক্রমণ সহ্য করতে সমর্থ হয়েছিল। ইতালি, স্পেন ও পোর্তুগালের ক্যাথলিক ফ্যাসিবাদের শাসন আমলে, তাদের এমনকি আরও দীর্ঘ সময় তাড়না সহ্য করতে হয়েছিল। আর কয়েক দশক ধরে তারা প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন দেশগুলোর কাছ থেকে তাড়না সহ্য করেছিল। এ ছাড়া, আফ্রিকার কিছু দেশে সাক্ষিরা যে-তাড়না ভোগ করেছে, সেটাকেও উপেক্ষা করা যায় না। * আরও সাম্প্রতিক সময়ে, যিহোবার দাসেরা জর্জিয়াতে প্রচণ্ড তাড়না ভোগ করেছে। যিহোবার সাক্ষিদের কাজকে শেষ করে দেওয়ার জন্য শয়তান তার ক্ষমতায় রয়েছে এমন সমস্তকিছুই করেছে। তা সত্ত্বেও, এক সংগঠন হিসেবে সাক্ষিরা সেই বিরোধিতার মধ্যে টিকে রয়েছে এবং সমৃদ্ধি লাভ করছে। আর এর আংশিক কারণ হল, স্বর্গদূতেরা সুরক্ষা জুগিয়েছে বলেই তা সম্ভবপর হয়েছে।—গীতসংহিতা ৩৪:৭; দানিয়েল ৩:২৮; ৬:২২.

১৫, ১৬. যিহোবার সাক্ষিরা তাদের বিশ্বব্যাপী পরিচর্যায় স্বর্গদূতদের কোন সাহায্য লাভ করে থাকে?

১৫ যিহোবার সাক্ষিরা, পৃথিবীব্যাপী ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার এবং সমস্ত জায়গার আগ্রহী ব্যক্তিদের বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে শিষ্য তৈরি করার দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। (মথি ২৮:১৯, ২০) কিন্তু, তারা খুব ভাল করেই জানে যে, স্বর্গদূতদের সাহায্য ছাড়া তারা এই দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে পারে না। তাই, প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭ পদে বলা কথাগুলো তাদের জন্য ক্রমাগত উৎসাহের এক উৎস হয়ে এসেছে। সেখানে আমরা পড়ি: “আমি [প্রেরিত যোহন] আর এক দূতকে দেখিলাম, তিনি আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন, তাঁহার কাছে অনন্তকালীন সুসমাচার আছে, যেন তিনি পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে, সুসমাচার জানান; তিনি উচ্চ রবে এই কথা কহিলেন, ঈশ্বরকে ভয় কর ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর, কেননা তাঁহার বিচার-সময় উপস্থিত; যিনি স্বর্গ, পৃথিবী, সমুদ্র ও জলের উনুই সকল উৎপন্ন করিয়াছেন, তাঁহার ভজনা কর।”

১৬ এই কথাগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সুসমাচারের কাজের পিছনে স্বর্গদূতদের সাহায্য ও পরিচালনা রয়েছে। যিহোবা আন্তরিক ব্যক্তিদের তাঁর সাক্ষিদের কাছে পরিচালিত করার জন্য তাঁর দূতদের ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া, স্বর্গদূতেরাও সাক্ষিদেরকে যোগ্য ব্যক্তিদের কাছে পরিচালিত করে থাকে। এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কেন এত অনেকবার—এত ঘন ঘন যে সেগুলোকে কেবল এক কাকতালীয় ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না—যিহোবার সাক্ষিদের একজন একেবারে ঠিক সেই উপযুক্ত সময়ে একজন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যে-সময়ে তিনি কোনো সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এবং তার আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন।

নিকট ভবিষ্যতে এক নাটকীয় ভূমিকা

১৭. অশূরীয়রা যখন মাত্র একজন স্বর্গদূতের আক্রমণের শিকার হয়েছিল, তখন কী ঘটেছিল?

১৭ যিহোবার উপাসকদের জন্য বার্তাবাহক এবং শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করা ছাড়াও স্বর্গদূতেরা আরেকটা উদ্দেশ্য সম্পাদন করে। অতীতে, তারা ঐশিক বিচারগুলো সম্পাদন করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, সা.কা.পূ. অষ্টম শতাব্দীতে যিরূশালেম অশূরীয় সৈন্যদের বিরাট দলের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “আমি আপনার নিমিত্ত, ও আপন দাস দায়ূদের নিমিত্ত, এই নগরের রক্ষার্থে ইহার ঢালস্বরূপ হইব।” বাইবেলের বিবরণ আমাদেরকে বলে যে কী ঘটেছিল: “সেই রাত্রিতে সদাপ্রভুর দূত যাত্রা করিয়া অশূরীয়দের শিবিরে এক লক্ষ পঁচাশী সহস্র লোককে বধ করিলেন; লোকেরা প্রত্যূষে উঠিল, আর দেখ, সমস্তই মৃত দেহ।” (২ রাজাবলি ১৯:৩৪, ৩৫) মাত্র একজন স্বর্গদূতের শক্তির সঙ্গে তুলনা করলে মানব সেনাবাহিনী কতই না নগন্য!

১৮, ১৯. নিকট ভবিষ্যতে স্বর্গদূতেরা কোন নাটকীয় ভূমিকা পালন করবে আর তা কীভাবে মানবজাতিকে প্রভাবিত করবে?

১৮ স্বর্গদূতেরা নিকট ভবিষ্যতে ঈশ্বরের দণ্ডদানকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করবে। খুব শীঘ্রই যিশু “আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে” আসবেন। তাদের উদ্দেশ্য হবে “যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড” দেওয়া। (২ থিষলনীকীয় ১:৭, ৮) এই পদক্ষেপ মানবজাতির ওপর কী এক প্রভাবই না ফেলবে! যারা পৃথিবীব্যাপী এই সময়ে ঘোষিত ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেওয়া প্রত্যাখ্যান করে, তারা ধ্বংস ভোগ করবে। একমাত্র যারা যিহোবা, ধার্মিকতা, ও নম্রতার অনুশীলন করে, কেবল তারাই “সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে . . . গুপ্তস্থানে রক্ষা পাইবে” এবং অক্ষত থাকবে।—সফনিয় ২:৩.

১৯ আমরা কৃতজ্ঞ থাকতে পারি যে, যিহোবা পৃথিবীতে তাঁর উপাসকদের সাহায্য ও বলবান করার জন্য তাঁর শক্তিশালী স্বর্গদূতদের ব্যবহার করেন। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে স্বর্গদূতেরা যে-ভূমিকা পালন করে, সেটার প্রতি আমাদের উপলব্ধি বিশেষভাবে সান্ত্বনাজনক, যেহেতু এমন স্বর্গদূতেরাও রয়েছে, যারা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং শয়তানের নেতৃত্বাধীনে এসেছে। পরের প্রবন্ধ আলোচনা করবে যে, শয়তান দিয়াবল ও তার মন্দদূতদের শক্তিশালী প্রভাবের বিরুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য সত্য খ্রিস্টানরা কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারে।

[পাদটীকা]

^ তাড়নার এই ঢেউয়ের বিস্তারিত বিবরণের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক (ইংরেজি) ১৯৮৩ (আ্যংগোলা), ২০০২ (ইউক্রেন), ১৯৮২ (ইতালি), ১৯৯২ (ইথিওপিয়া), ২০০০ (চেক প্রজাতন্ত্র), ১৯৭২ (চেকোস্লোভাকিয়া), ১৯৭৪ এবং ১৯৯৯ (জার্মানি), ২০০৬ (জাম্বিয়া), ১৯৯৪ (পোল্যান্ড), ১৯৮৩ (পোর্তুগাল), ২০০৪ (মলডোভা), ১৯৯৯ (মালাউই), ১৯৯৬ (মোজাম্বিক) এবং ১৯৭৮ (স্পেন) দেখুন।

আপনি কী শিখেছেন?

• স্বর্গদূতেরা কীভাবে অস্তিত্বে এসেছিল?

• বাইবেলের সময়ে স্বর্গদূতদের কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল?

• আজকে স্বর্গদূতদের কাজ সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭ পদ কী প্রকাশ করে?

• নিকট ভবিষ্যতে স্বর্গদূতেরা কোন নাটকীয় ভূমিকা পালন করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

মানোহ ও তার স্ত্রী একজন স্বর্গদূতের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

“উহাদের সঙ্গীদের অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক”