শিষ্য তৈরির কাজ আমার জীবনে প্রভাব ফেলেছে
জীবনকাহিনি
শিষ্য তৈরির কাজ আমার জীবনে প্রভাব ফেলেছে
বলেছেন লিনেট পিটারস্
তারা আমাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য এসেছিল। একজন অব্যর্থ বন্দুকধারী বিল্ডিংয়ের ওপরে দাঁড়িয়েছিলেন। নৌসেনারা ঘাসের ওপর শুয়ে পড়েছিল, তাদের বন্দুক তাক করে রেখেছিল। সেই রবিবার সকালে আমরা যখন অপেক্ষারত হেলিকপ্টারের দিকে তাড়াহুড়ো করে ছুটে যাচ্ছিলাম, তখন আমার সহমিশনারিরা এবং আমি শান্ত থাকার জন্য জোর প্রচেষ্টা করেছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে আমরা হেলিকপ্টারে করে শূন্যপথে ওপরের দিকে উঠে গিয়েছিলাম। দশ মিনিট পর, আমরা নিরাপদে একটা সামরিক জাহাজে অবতরণ করেছিলাম, যেটা তীরের খুব কাছেই নোঙ্গর করা ছিল।
পরদিন সকালে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, গতরাতে আমরা যে-হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলাম, সেখানে বিদ্রোহীরা বোমা হামলা চালিয়েছিল। সিয়েরা লিওনে বছরের পর বছর ধরে চলা আভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ, শেষ পর্যন্ত পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধের তীব্ররূপ ধারণ করেছিল। সমস্ত বিদেশিকে অল্প সময়ের নোটিশেই সেই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে আমরাও ছিলাম। কেন আমি এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলাম, তার বর্ণনা আমি একেবারে শুরু থেকেই করি।
আমি ব্রিটিশ গায়েনাতে বড় হয়েছিলাম, যেটা ১৯৬৬ সাল থেকে গায়েনা হিসেবে পরিচিত। ১৯৫০ এর দশকে সেখানে আমার ছেলেবেলার দিনগুলো ভাবনাহীন এবং আনন্দদায়ক ছিল। অধিকাংশ বাবামা শিক্ষাকে উচ্চমূল্য দিত এবং অল্পবয়সিরা স্কুলে ভাল করবে বলে আশা করা হতো। আমার মনে আছে যে, একবার একটা ব্যাঙ্কের একজন কর্মচারী আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনি আপনার সন্তানদের শিক্ষার পিছনে এত এত টাকাপয়সা ব্যয় করছেন কেন?” বাবা এভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, “একমাত্র সর্বোত্তম শিক্ষাই তাদের সাফল্যের নিশ্চয়তা দেবে।” সেই সময়ে তিনি ভেবেছিলেন যে, সর্বোত্তম শিক্ষা নামকরা স্কুলগুলোতেই পাওয়া যায়। শীঘ্রই তিনি ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন।
আমার বয়স যখন ১১ বছর, তখন মা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। তিনি একজন প্রতিবেশীর সঙ্গে একটা কিংডম হলে যান। সেই সন্ধ্যায় তারা যা যা শুনেছিল, সেগুলো তাদের উভয়কে বিশ্বাস করতে পরিচালিত করেছিল যে, তারা সত্য খুঁজে পেয়েছে। পরে, আমার মা যে-বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে, তা আরেকজন প্রতিবেশীর কাছে বলেছিলেন। শীঘ্রই তারা তিনজনই ডেফনি হ্যারি (পরে বার্ড) এবং রোজ কুফি নামে দুজন মিশনারির সঙ্গে অধ্যয়ন করতে শুরু করে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে মা এবং তার দুই বান্ধবী বাপ্তিস্ম নেয়। এর পাঁচ বছর পর আমার বাবা সেভেন্থ-ডে আ্যডভেনটিস্ট চার্চ থেকে সরে আসেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়ে একজন যিহোবার সাক্ষি হন।
অল্পবয়সে আমার ছোট দুই বোন এবং আমি—দশজন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় তিনজন—মিশনারি হোমে অনেক আনন্দদায়ক সময় কাটিয়েছিলাম, যেখানে ডেফনি এবং রোজ থাকত। এই সময়গুলোতে আমরা তাদের বর্ণিত ক্ষেত্রের পরিচর্যার অভিজ্ঞতাগুলো শুনতাম। এই মিশনারিদের মধ্যে অক্লান্তভাবে অন্যদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের যত্ন নেওয়ার আনন্দ উজ্জ্বল ছিল। তাদের সেই উদাহরণ আমার মধ্যে একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা গেঁথে দিয়েছিল।
কিন্তু, সফল কেরিয়ারের বিষয়ে চিন্তা করে এমন আত্মীয়স্বজন ও সহছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও, কোন বিষয়টা আমাকে পূর্ণসময়ের পরিচর্যার প্রতি মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করেছিল? প্রলুব্ধকর অনেক সুযোগ ছিল—আমি আইন, সংগীত, চিকিৎসা বা অন্য কোনো বিষয়ে অধ্যয়ন করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে পারতাম। আমার বাবামার চমৎকার উদাহরণ আমাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে। তারা তাদের জীবনে সত্যকে কাজে লাগিয়েছে, অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছে এবং যিহোবা সম্বন্ধে জানতে অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে। * অধিকন্তু, তারা নিয়মিতভাবে পূর্ণসময়ের পরিচারকদের আমাদের ঘরে আমন্ত্রণ জানাত। এই ভাইবোনেরা যে-আনন্দ ও পরিতৃপ্তি প্রদর্শন করেছে, তা শিষ্য তৈরির কাজকে আমার জীবনে প্রভাব ফেলতে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করেছিল।
আমি ১৫ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিই। এরপর, আমার হাইস্কুল শেষ করার পর পরই আমি পূর্ণসময়ের অগ্রগামীর পরিচর্যা কাজ শুরু করি। ফিলোমিনা নামের একজন হাসপাতাল কর্মী ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যাকে আমি উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্মের দিকে অগ্রগতি করার জন্য সাহায্য করি। তিনি যিহোবাকে ভালবেসেছিলেন, এটা দেখার আনন্দ পূর্ণসময়ের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরালো করেছিল। এর অল্প সময় পরেই, আমি যে-সরকারি অফিসে সচিবের কাজ করছিলাম, সেখানে আমাকে আরও ভাল একটা চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি, এর পরিবর্তে অগ্রগামীর কাজ চালিয়ে যাওয়া বেছে নিই।
আমি তখনও পর্যন্ত ঘরেই থাকতাম এবং মিশনারিরা বরাবরই আমাদের ঘরে আসত। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো শোনা আমি কতই না উপভোগ করেছি! এই সমস্ত বিষয় একজন মিশনারি হওয়ার জন্য আমার আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরদার করেছিল, যদিও এটাকে এক অনিশ্চিত বিষয় বলে মনে হয়েছিল।
গায়েনাতে তখনও মিশনারিদের পাঠানো হতো এবং এখনও তাদেরকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে। ১৯৬৯ সালের কোনো একদিন, আমি নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অভ্ গিলিয়েড-এ যোগ দেওয়ার এক আমন্ত্রণ পেয়ে অবাক কিন্তু আনন্দিত হই।অপ্রত্যাশিত এক কার্যভার
গিলিয়েডের ৪৮তম ক্লাসে ২১টা দেশ থেকে ৫৪ জন ছাত্র-ছাত্রী এসেছিল। এর মধ্যে আমরা ১৭ জন অবিবাহিত বোন ছিলাম। যদিও এটা ৩৭ বছর আগের ঘটনা কিন্তু আমার এখনও সেই পাঁচ মাসের ঘটনার কথা স্পষ্ট মনে আছে। অনেক কিছুই শেখার ছিল—কেবলমাত্র শাস্ত্রীয় সত্য বিষয়গুলো নয় বরং ভবিষ্যৎ মিশনারিদের জীবনের জন্য বাস্তব পরামর্শ এবং উপদেশও ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি নির্দেশনা অনুসরণ করতে, নতুন ফ্যাশনের বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ হতে এবং বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে অটল থাকতে শিখেছিলাম।
আমার বাবামা নিয়মিত সভাতে উপস্থিত থাকার জন্য সবসময় জোর দিত। কোনো একজন অসুস্থতার জন্য রবিবারের সভাতে উপস্থিত থাকতে না পারলে, পরের সন্ধ্যায় কোনো পিয়ানো বাদন অনুষ্ঠানে অথবা কনসার্টে উপস্থিত থাকার অনুমতি পেত না। কিন্তু, গিলিয়েড স্কুলে থাকার সময় কিছু সময়ের জন্য আমার সভায় উপস্থিতি বাদ পড়েছিল। এক শুক্রবার সন্ধ্যায়, আমি বেথেলের এক দম্পতি ডন এবং ডলোরেস আ্যডামসের কাছে আমার অনুপস্থিতির যথার্থ কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলাম, যারা আমাকে সভাগুলোতে গাড়িতে করে নিয়ে যেত ও নিয়ে আসত। আহ্, গাদা গাদা হোমওয়ার্ক, রিপোর্ট! কীভাবে আমি ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় এবং পরিচর্যা সভার জন্য সময় বের করতে পারতাম? আমার সঙ্গে কিছু সময় যুক্তি করার পর, ভাই আ্যডামস্ বলেছিলেন: “আপনার বিবেক যা বলে, তা-ই করুন।” আমি তার পরামর্শ শুনেছিলাম এবং সেই সন্ধ্যায় বা এরপর কোনো সভাই আর বাদ দিইনি। বছরের পর বছর ধরে, কোনো চরম পরিস্থিতি ছাড়া, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত থাকতে কোনোকিছুকেই আমি বাধা হতে দিইনি।
গিলিয়েডে কোর্স চলার মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে আমরা আমাদের কার্যভার গ্রহণের বিষয়ে কথা বলছিলাম। আমি মনে মনে সবসময় চিন্তা করতাম যে, আমাকে গায়েনাতেই পাঠানো হবে, যেখানে প্রচার কাজে সাহায্যের খুবই প্রয়োজন ছিল। আমি সেখানে যাচ্ছি না জেনে কতটা অবাক হয়েছিলাম, তা একটু ভেবে দেখুন। এর পরিবর্তে আমাকে পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। আমি যিহোবার প্রতি কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম যে, বাড়ি থেকে দূরে আমার মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হয়েছিল!
অনেক কিছুই জানার ছিল
“চমৎকার,” এই শব্দটি দিয়েই অনেক পাহাড়, পর্বত, উপসাগর এবং বেলাভূমি সমৃদ্ধ সিয়েরা লিওন সম্বন্ধে আমার প্রথম অনুভূতি প্রকাশ করা উত্তম। কিন্তু, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির আসল সৌন্দর্য এর অধিবাসীদের মধ্যে দেখা যায়, যাদের ভালবাসা এবং দয়া এমনকি বিদেশিদেরও এমন বোধ করায় যে, তারা যেন নিজের দেশেই আছে। এটি নতুন মিশনারিদের তাদের বাড়ির জন্য মন খারাপ করাকে কাটিয়ে ওঠায় সাহায্য করতে যথেষ্ট অবদান রাখে। সিয়েরা লিওনের অধিবাসীরা তাদের বিভিন্ন রীতি ও সংস্কৃতির বিষয়ে কথা বলতে এবং বিশেষ করে নতুন ব্যক্তিদেরকে দেশের প্রচলিত ক্রিও ভাষা শেখার জন্য সাহায্য করতে ভালবাসে।
ক্রিও ভাষাভাষী লোকেদের প্রাণবন্ত অনেক প্রবাদ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বানর শ্রম করে, বেবুনে খায় অর্থাৎ বপনকারীই সবসময় শস্য পান না। এই কথাগুলো জগতে বেড়ে চলা অন্যায়ের প্রতি কতই না উপযুক্ত!—যিশাইয় ৬৫:২২.
প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ আনন্দদায়ক ছিল। বাইবেলের প্রতি আগ্রহী নয়, এমন লোক খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায়। বছরের
পর বছর ধরে মিশনারিরা এবং দীর্ঘসময়ের যিহোবার দাসেরা সমস্ত পেশার এবং উপজাতির—অল্পবয়সি ও বয়স্ক—লোকেদের সত্যকে গ্রহণ করার জন্য সাহায্য করেছে।ইরল্যা সেন্ট হিল নামে একজন বোন আমার প্রথম মিশনারি সঙ্গী ছিলেন, যিনি অক্লান্ত একজন কর্মী ছিলেন। মিশনারি হোমের সঙ্গে যুক্ত কাজগুলোর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তার অধ্যবসায় প্রায় পরিচর্যায় উদ্যোগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি আমাকে অনেক বিষয়ের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যেমন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, অসুস্থ সাক্ষি ও আগ্রহী ব্যক্তিদের দেখতে যাওয়া এবং যেখানে সম্ভব অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানকে সমর্থন করা। এ ছাড়া, একটা এলাকায় ক্ষেত্রের পরিচর্যার পর, সেই এলাকায় থাকা ভাইবোনকে সংক্ষেপে হলেও সম্ভাষণ না জানিয়ে কখনো এলাকা ত্যাগ না করার গুরুত্ব বুঝতেও তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। এই বিষয়গুলো করার মাধ্যমে আমি খুব তাড়াতাড়ি অনেক মা, ভাই, বোন ও বন্ধু-বান্ধব লাভ করতে পেরেছিলাম আর আমার কার্যভারই আমার ঘর হয়ে উঠেছিল।—মার্ক ১০:২৯, ৩০.
এ ছাড়া, যে-মিশনারিরা আমার সঙ্গে সেবা করত, আমি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের দৃঢ়বন্ধন গড়ে তুলেছিলাম। তাদের মধ্যে ছিলেন আমার রুমমেট আ্যডনা বার্ড, যিনি সিয়েরা লিওনে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে সেবা করেছিলেন এবং শেরিল ফারগুসন, যিনি গত ২৪ ধরে আমার রুমমেট।
গৃহযুদ্ধ বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়ে আসে
১৯৯৭ সালে, সিয়েরা লিওনে নতুন শাখা অফিসের উৎসর্গীকরণের প্রায় একমাস পর, যুদ্ধের কারণে সেই দেশ থেকে আমাদের সরে যেতে বাধ্য করা হয়, যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর ছয় বছর আগে, আমরা লাইবেরিয়ার সেই সাক্ষিদের বিশ্বাস দ্বারা অভিভূত হয়েছিলাম, যারা লাইবেরিয়ার যুদ্ধ থেকে বাঁচার জন্য সিয়েরা লিওনে পালিয়ে এসেছিল। কেউ কেউ একেবারে খালি হাতেই এসেছিল। কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও, তারা প্রতিদিন পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করেছিল। যিহোবা এবং লোকেদের জন্য তাদের ভালবাসা দেখতে পাওয়া খুবই হৃদয়গ্রাহী ছিল।
এবার আমরা নিজেরাই গিনিতে শরণার্থী হই, আমরা লাইবেরিয়ার ভাইবোনদের উদাহরণ অনুসরণ করেছিলাম আর অবিরত যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলাম এবং রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রেখেছিলাম। এক বছর পর, আমরা সিয়েরা লিওনে ফিরে আসতে পেরেছিলাম কিন্তু সাত মাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় এবং আমাদের আবার গিনিতে সরে যেতে হয়।
শীঘ্রই আমাদের বলা হয় যে, যুদ্ধরত দলগুলোর মধ্যে একটা দলের সদস্যরা কিসিতে আমাদের মিশনারি হোম দখল করে নিয়েছে আর আমাদের জিনিসপত্র লুঠ করা বা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। হতাশ বোধ না করে বরং আমরা জীবিত ছিলাম বলে কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম। আমরা অল্প কিছু জিনিস নিয়ে বের হয়ে এসেছিলাম, তবে আমরা সেই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম।
দ্বিতীয়বার আমরা সেখান থেকে সরে আসার পর, আমার রুমমেট শেরিল ও আমি গিনিতেই থেকে যাই। এর মানে ছিল আমাদের ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতে হবে। আমার কিছু সহমিশনারি তাদের শেখা ফ্রেঞ্চ ভাষা খুব তাড়াতাড়িই ব্যবহার করতে পেরেছিল, তারা এক্ষেত্রে কোনো ভুল হলেও বিব্রত বোধ করত না। কিন্তু আমি ভুলভাবে কথা বলার ধারণাকে পছন্দ করতাম না, তাই আমি কেবল তখনই ফ্রেঞ্চ বলতাম, যখন দরকার হতো। এটা খুবই কষ্টদায়ক ছিল। নিজেকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দিতে হতো যে, কেন আমি গিনিতে আছি—অন্যদের যিহোবাকে জানতে সাহায্য করার জন্য।
অধ্যয়ন করে, এই ভাষা ভালমতো বলে এমন ব্যক্তিদের কথা শুনে এবং মণ্ডলীর স্পষ্টভাষী ছোট ছোট ছেলেমেয়ের কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে ধীরে ধীরে আমি উন্নতি করি। এরপর, অপ্রত্যাশিতভাবে যিহোবার সংগঠন থেকে সময়োপযোগী সাহায্য এসেছিল। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-য় বিভিন্ন ধর্মীয় মতের লোকেদের কাছে পত্রিকা উপস্থাপনার ভূমিকাগুলোসহ বই ও ব্রোশার অর্পণের উপায়গুলো দেওয়া হচ্ছে। যদিও ফ্রেঞ্চ ভাষা বলার ক্ষেত্রে আমি আমার মাতৃভাষার মতো সাবলীল নই, তবুও আমি এখন পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার সময় নিজেকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী বলে মনে করি।
একটা বড় পরিবারে বড় হয়ে ওঠা আমাকে নিশ্চিতভাবেই একসঙ্গে অনেক লোকের সঙ্গে, এমনকি একবার মিশনারি হোমে ১৭ জন মিশনারির সঙ্গে বাস করাকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। আমার ৩৭ বছরের মিশনারির সেবায় আমি ১০০ জনেরও বেশি মিশনারির সঙ্গে বাস করেছি। সেই অনেক লোকের সম্বন্ধে জানা কী এক বিশেষ সুযোগ, যাদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও সবাই একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে! আর ঈশ্বরের সহকার্যকারী হওয়া এবং লোকেদের বাইবেলের সত্যকে গ্রহণ করতে দেখায় এক অংশ থাকা কতই না আনন্দের বিষয়!—১ করিন্থীয় ৩:৯.
বছরের পর বছর ধরে, আমি আমার নিজের পরিবারের সদস্যদের জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি, যেমন আমার বেশির ভাগ ছোট ভাইবোনদের বিয়ের অনুষ্ঠান। আর অনেকবার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি আমার ভাইবোনদের ছেলেমেয়েকে দেখিনি। এটা আমার জন্য ও আমার পরিবারের জন্য এক ত্যাগস্বীকার, যারা নিঃস্বার্থভাবে আমাকে মিশনারি কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে।
কিন্তু আমি ঘরের যে-বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছি, সময়ে সময়ে আমি মিশনারি সেবায় তা উপভোগ করেছি। এমনকি যদিও আমি অবিবাহিত থাকা বেছে নিয়েছি, তবুও আমার অনেক আধ্যাত্মিক সন্তান রয়েছে, এদের মধ্যে শুধুমাত্র আমি যাদেরকে বাইবেল অধ্যয়ন করিয়েছি, তারাই নয় কিন্তু অন্যেরাও রয়েছে, যারা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছে। অধিকন্তু, আমি তাদের ছেলেমেয়েকে বড় হতে, বিয়ে করতে আর এমনকি তাদের ছেলেমেয়েকেও সত্যে মানুষ করে তুলতে দেখেছি। তাদের মধ্যেও কেউ কেউ আমার মতো শিষ্য তৈরির কাজকে তাদের জীবনে প্রভাব ফেলতে দিয়েছে।
[পাদটীকা]
^ আমার মা ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অগ্রগামীর কাজ করেন এবং বাবা অবসর নেওয়ার পর একজন সহায়ক অগ্রগামী হন।
[১৫ পৃষ্ঠার মানচিত্রগুলো]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
আমাকে পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল
গিনি
সিয়েরা লিওন
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমার দুই বোন, যারা আমার সঙ্গে ১৯৫০ এর দশকে মিশনারিদের সঙ্গে অনেক আনন্দদায়ক সময়ে কাটিয়েছিল
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
গিলিয়েডের ৪৮তম ক্লাসের সহছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
সিয়েরা লিওনে শাখা অফিসের উৎসর্গীকরণ