সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

  একজন খ্রিস্টানের কি এমন পানীয় ও খাবারগুলো পরিহার করা উচিত, যেগুলোর মধ্যে ক্যাফেইন রয়েছে?

বাইবেল একজন খ্রিস্টানকে এমন কফি, চা, চকোলেট, মেট এবং সোডা খেতে নিষেধ করে না, যেগুলোর মধ্যে ক্যাফেইন রয়েছে। কিন্তু, শাস্ত্রে সেই নীতিগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করতে পারে। আসুন আমরা প্রথমে বিবেচনা করি যে, কেন কিছু লোক এমন পানীয় ও খাবারগুলো পরিহার করে, যেগুলোর মধ্যে ক্যাফেইন রয়েছে।

একটা প্রধান কারণ হল, ক্যাফেইনকে মানসিক অবস্থার পরিবর্তনকারী একটা ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যেটা মনের ওপর এক উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী প্রভাব ফেলে থাকে। এ ছাড়া, এটা আসক্তিজনক হতে পারে। ওষুধ প্রস্তুতকারীদের জন্য প্রচলিত একটি তথ্যগ্রন্থ বলে: “দীর্ঘসময় ধরে বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ করলে, একসময় তা আর তেমন প্রভাব ফেলে না এবং এটার প্রতি আসক্তি গড়ে ওঠে।” কিন্তু, এটা গ্রহণ করা বন্ধ করে দিলে শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ যেমন, মাথাব্যথা, বিরক্তিবোধ, ঘাবড়ে যাওয়া, উদ্বিগ্নতা এবং মাথা-ঘোরার মতো বিষয়গুলো ঘটতে পারে। মানসিক ব্যাধিগুলোর রোগনির্ণায়ক এবং পরিসংখ্যান সংক্রান্ত বই (ইংরেজি) অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করার কারণে দেখা দেওয়া উপসর্গের তালিকার সঙ্গে ক্যাফেইন গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়ার উপসর্গও তালিকাবদ্ধ করে। তাই এটা স্বাভাবিক যে, কিছু খ্রিস্টান হয়তো এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে কারণ তারা যেকোনো ধরনের আসক্তি পরিহার করতে চায় এবং ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করতে চায়।—গালাতীয় ৫:২৩.

কেউ কেউ মনে করে যে, ক্যাফেইন একজন ব্যক্তির অথবা এক অজাত শিশুর স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খ্রিস্টানদের অবশ্যই ‘তাহাদের সমস্ত প্রাণ দিয়া’ ঈশ্বরকে ভালবাসতে হবে, তাই তারা এমন কিছু অভ্যাস করে না, যা তাদের জীবনকে সংক্ষিপ্ত করবে। আর যেহেতু তাদেরকে তাদের প্রতিবেশীকেও ভালবাসতে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাই তারা এমন বিষয়গুলো পরিহার করে, যা এক অজাত শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।—লূক ১০:২৫-২৭.

স্বাস্থ্যের বিষয়ে এই ধরনের উদ্বেগ কি উপযুক্ত? যদিও দাবি করা হয় যে, ক্যাফেইনের কারণে বিভিন্ন রোগ হয়, তবে সবাই এর সঙ্গে একমত নয়। কিছু গবেষক এমনকি রিপোর্ট করে যে, কফি পান করা স্বাস্থ্যকর। ২০০৬ সালে, টাইম পত্রিকা রিপোর্ট করেছিল: “প্রাথমিক গবেষণা ইঙ্গিত করেছিল যে, [ক্যাফেইন] হয়তো মূত্রাশয়ে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য অসুস্থতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। কিন্তু, সাম্প্রতিক গবেষণা উক্ত দাবিগুলোকে কেবল খণ্ডনই করেনি বরং কিছু তাৎপর্যপূর্ণ উপকারও আবিষ্কার করেছে। ক্যাফেইনের লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, পারকিনসন্স রোগ (নার্ভের রোগবিশেষ), ডায়াবিটিস, আলজেইমারস ডিজিস, পিত্তথলিতে পাথর হওয়া, হতাশা এবং কিছু কিছু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে বলে দেখা গিয়েছে।” ক্যাফেইনের ব্যবহারের ওপর একটা সংবাদপত্রিকা রিপোর্ট করেছিল: “স্বাভাবকিভাবেই, মূল চাবিকাঠিটা হচ্ছে, সীমিত মাত্রায় গ্রহণ করা।”

প্রত্যেক খ্রিস্টানের ক্যাফেইন সম্বন্ধে বর্তমানে দেওয়া তথ্যের বোধগম্যতা এবং এর সঙ্গে যুক্ত বাইবেলের নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন গর্ভবতী খ্রিস্টান মহিলা হয়তো তার গর্ভকালীন সময়ে ক্যাফেইন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন, যদি তিনি মনে করেন যে, এটা গ্রহণ করা তার অজাত শিশুর ক্ষতি করতে পারে। যদি একজন খ্রিস্টান দেখেন যে, নিয়মিত ক্যাফেইন গ্রহণ করা থেকে বিরত হওয়ায় তিনি খিটখিটে হয়ে পড়েন বা তা তাকে কিছুটা অসুস্থ করে তোলে, তা হলে তাকে হয়তো সাময়িকভাবে ক্যাফেইন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। (২ পিতর ১:৫, ৬) এই ধরনের এক সিদ্ধান্তকে অন্য খ্রিস্টানদের সম্মান করা উচিত, তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

ক্যাফেইন রয়েছে এমন পানীয় ও খাবারগুলোর বিষয়ে আপনি যেকোনো সিদ্ধান্তই নিন না কেন, পৌলের এই পরামর্শ মনে রাখুন: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।”—১ করিন্থীয় ১০:৩১.