সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মণ্ডলী গেঁথে উঠুক

মণ্ডলী গেঁথে উঠুক

মণ্ডলী গেঁথে উঠুক

“মণ্ডলী শান্তিভোগ করিতে ও গ্রথিত হইতে লাগিল।”—প্রেরিত ৯:৩১.

১. ‘ঈশ্বরের মণ্ডলী’ সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা যেতে পারে?

 সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, খ্রিস্টের শিষ্যদের একটা দলকে যিহোবা নতুন জাতি অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। (গালাতীয় ৬:১৬) এ ছাড়া, এই আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা বাইবেল অনুযায়ী ‘ঈশ্বরের মণ্ডলী’ হয়ে উঠেছিল। (১ করিন্থীয় ১১:২২) কিন্তু, এর সঙ্গে কী জড়িত ছিল? ‘ঈশ্বরের মণ্ডলী’ কীভাবে সংগঠিত হবে? এর সদস্যরা যেখানেই বাস করুক না কেন, পৃথিবীতে এটি কীভাবে কাজ করবে? আর এর সঙ্গে কীভাবে আমাদের জীবন ও সুখ জড়িত?

২, ৩. কীভাবে যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, মণ্ডলীর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা থাকবে?

আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, যিশু প্রেরিত পিতরকে এই কথা বলার দ্বারা অভিষিক্ত অনুসারীদের এই মণ্ডলীর অস্তিত্ব সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “এই পাথরের [যিশু খ্রিস্টের] উপরে আমি আপন মণ্ডলী গাঁথিব, আর পাতালের পুরদ্বার সকল তাহার বিপক্ষে প্রবল হইবে না।” (মথি ১৬:১৮) অধিকন্তু, প্রেরিতদের সঙ্গে থাকাকালীন যিশু শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমন মণ্ডলীর কার্যকলাপ ও ব্যবস্থা সম্বন্ধে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

যিশু কথা ও কাজের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, মণ্ডলীর কেউ কেউ নেতৃত্ব দেবে। তারা তাদের দলের মধ্যে অন্যদের সেবা বা পরিচর্যা করার মাধ্যমে তা করবে। খ্রিস্ট বলেছিলেন: “তোমরা জান, জাতিগণের মধ্যে যাহারা শাসনকর্ত্তা বলিয়া গণ্য, তাহারা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের মধ্যে যাহারা মহান্‌, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। তোমাদের মধ্যে সেরূপ নয়; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে সকলের দাস হইবে।” (মার্ক ১০:৪২-৪৪) স্পষ্টতই, ‘ঈশ্বরের মণ্ডলী’ ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বিশেষ হবে না, যা এক নির্দিষ্ট কাঠামোহীন মণ্ডলীর সদৃশ। এর পরিবর্তে, একটা সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে মণ্ডলীর ব্যক্তি বিশেষরা পরস্পরের সঙ্গে ভাববিনিময় করবে।

৪, ৫. কীভাবে আমরা জানি যে, মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক নির্দেশনার প্রয়োজন হবে?

যে-ব্যক্তি “ঈশ্বরের” সেই ‘মণ্ডলীর’ মস্তক হবেন, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রেরিতদের ও অন্য যে-ব্যক্তিরা তাঁর কাছ থেকে শিখেছিল তাদের, মণ্ডলীর বাকি সকলের প্রতি নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকবে। কী করার দায়িত্ব? একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার হবে, মণ্ডলীর সকলকে আধ্যাত্মিক নির্দেশনা প্রদান করা। মনে করে দেখুন যে, পুনরুত্থিত যিশু অন্য কয়েক জন প্রেরিতের সামনে পিতরকে বলেছিলেন: “হে যোহনের পুত্ত্র শিমোন, . . . তুমি কি আমাকে . . . প্রেম কর?” পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভালবাসি।” যিশু তাকে বলেছিলেন: “আমার মেষশাবকগণকে চরাও। . . . আমার মেষগণকে পালন কর। . . . আমার মেষগণকে চরাও।” (যোহন ২১:১৫-১৭) কত গুরুত্বপূর্ণ এক কার্যভার!

যিশুর কথাগুলো থেকে আমরা দেখতে পারি যে, যাদেরকে মণ্ডলীতে একত্রিত করা হচ্ছে, তারা একটা খোঁয়াড়ের মেষদের মতো। এই মেষদের—খ্রিস্টান পুরুষ, নারী ও শিশুদের—আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট করতে এবং সঠিকভাবে পালন করতে হবে। অধিকন্তু, যেহেতু যিশু তাঁর সমস্ত অনুসারীকে অন্যদের শিক্ষা দিতে ও শিষ্য তৈরি করতে আদেশ দিয়েছেন, তাই যেকোনো নতুন ব্যক্তি তাঁর শিষ্য হয়, তাকে কীভাবে সেই ঐশিক দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষিত হতে হবে।—মথি ২৮:১৯, ২০.

৬. “ঈশ্বরের” নবগঠিত ‘মণ্ডলীতে’ কোন ব্যবস্থাগুলো করা হয়েছিল?

‘ঈশ্বরের মণ্ডলী’ যখন গঠিত হয়েছিল, তখন যাদের নিয়ে এটা গঠিত হয়েছিল, তারা নির্দেশনা ও পারস্পরিক উৎসাহের জন্য নিয়মিতভাবে একত্রিত হতো: “তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটী ভাঙ্গায় ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিল।” (প্রেরিত ২:৪২, ৪৬, ৪৭) ঐতিহাসিক বিবরণে আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে, নির্দিষ্ট ব্যবহারিক বিষয়ের যত্ন নেওয়ায় সাহায্য করার জন্য কিছু যোগ্য পুরুষকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাদেরকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অথবা কারিগরি দক্ষতার কারণে বাছাই করা হয়নি। এই পুরুষরা ছিল, “আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ।” তাদের মধ্যে একজন ছিলেন স্তিফান এবং বিবরণ তার “বিশ্বাসে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ” হওয়ার বিষয়ে জোর দেয়। মাণ্ডলিক ব্যবস্থার একটা ফল ছিল যে, “ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল, এবং যিরূশালেমে শিষ্যদের সংখ্যা অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল।”—প্রেরিত ৬:১-৭.

ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত পুরুষরা

৭, ৮. (ক) প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে যিরূশালেমের প্রেরিতরা ও প্রাচীনবর্গ কী হিসেবে কাজ করেছিল? (খ) মণ্ডলীগুলোর মাধ্যমে যখন নির্দেশনা জোগানো হয়েছিল, তখন কী ফল হয়েছিল?

এটা যুক্তিসংগত যে, প্রাথমিক মাণ্ডলিক ব্যবস্থায় প্রেরিতরা নেতৃত্ব দিত, তবে কেবল তারাই নেতৃত্ব দেয়নি। একটা সময়ে, পৌল ও তার সঙ্গীরা সুরিয়ার আন্তিয়খিয়াতে ফিরে গিয়েছিল। প্রেরিত ১৪:২৭ পদ বলে: “তাঁহারা যখন উপস্থিত হইলেন, ও মণ্ডলীকে একত্র করিলেন, তখন ঈশ্বর তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া যে কত কার্য্য করিয়া ছিলেন . . . সেই সকল বর্ণনা করিলেন।” তারা সেই স্থানীয় মণ্ডলীতে থাকাকালীন ধর্মান্তরিত বিশ্বাসী ব্যক্তিদের ত্বক্‌চ্ছেদ করতে হবে কি না, সেই বিষয়ে একটা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। বিষয়টা সমাধান করার জন্য পৌল ও বার্ণবাকে “যিরূশালেমে প্রেরিতগণের ও প্রাচীনবর্গের নিকটে” পাঠানো হয়েছিল, যারা স্পষ্টতই পরিচালক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করত।—প্রেরিত ১৫:১-৩.

যখন “এই বিষয় আলোচনা করিবার জন্য প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ সমবেত হইলেন,” তখন খ্রিস্টান প্রাচীন যাকোব অর্থাৎ যিশুর সৎ ভাই তবে প্রেরিত নন, তিনি সভাপতিত্ব করেছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৬) আলাপআলোচনার পর এবং পবিত্র আত্মার সাহায্যে, তারা শাস্ত্রের সঙ্গে মিল রেখে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল। তারা সেই সিদ্ধান্ত একটা চিঠির মাধ্যমে স্থানীয় মণ্ডলীগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। (প্রেরিত ১৫:২২-৩২) যারা এই তথ্য লাভ করেছিল, তারা সেটা মেনে নিয়েছিল ও কাজে লাগিয়েছিল। এর ফল কী হয়েছিল? ভাই ও বোনেরা গেঁথে উঠেছিল এবং উৎসাহ লাভ করেছিল। বাইবেল জানায়: “এইরূপে মণ্ডলীগণ বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইতে থাকিল, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল।”—প্রেরিত ১৬:৫.

৯. যোগ্য খ্রিস্টান পুরুষদের জন্য বাইবেল কোন ভূমিকাগুলো সম্বন্ধে তুলে ধরে?

কিন্তু, স্থানীয় মণ্ডলীগুলো কীভাবে নিয়মিতভাবে কাজ করে গিয়েছিল? উদাহরণস্বরূপ, ক্রীতী দ্বীপের মণ্ডলীগুলোর কথা বিবেচনা করুন। যদিও সেখানে বসবাসরত লোকেদের অনেকেরই বদনাম ছিল তবে কেউ কেউ পরিবর্তিত হয়ে সত্য খ্রিস্টান হয়েছিল। (তীত ১:১০-১২; ২:২, ৩) তারা বিভিন্ন নগরে বাস করত এবং সেগুলো যিরূশালেমের পরিচালক গোষ্ঠী থেকে অনেক দূরে ছিল। কিন্তু, সেটা কোনো বড় সমস্যা ছিল না কারণ ক্রীতীর প্রতিটা স্থানীয় মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিক “প্রাচীনদিগকে” নিযুক্ত করা হয়েছিল, যেমনটা অন্যান্য জায়গায়ও করা হয়েছিল। এই পুরুষরা সেই যোগ্যতাগুলো পূরণ করেছিল, যেগুলো আমরা বাইবেলে লিপিবদ্ধ দেখতে পাই। তারা প্রাচীন অথবা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত ছিল, যারা “নিরাময় শিক্ষাতে উপদেশ দিতে এবং প্রতিকূলবাদীদের দোষ ব্যক্ত করিতে” পারে। (তীত ১:৫-৯; ১ তীমথিয় ৩:১-৭) অন্যান্য আধ্যাত্মিক পুরুষ, পরিচারক দাস হিসেবে মণ্ডলীকে সাহায্য করার জন্য যোগ্য ছিল।—১ তীমথিয় ৩:৮-১০, ১২, ১৩.

১০. মথি ১৮:১৫-১৭ পদ অনুযায়ী, কীভাবে গুরুতর সমস্যাগুলো সমাধান করা হতো?

১০ যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, এই ধরনের এক ব্যবস্থা থাকবে। মথি ১৮:১৫-১৭ পদের বিবরণটা মনে করে দেখুন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, মাঝে মাঝে ঈশ্বরের দুজন লোকের মধ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যখন একজন ব্যক্তি হয়তো যেকোনো উপায়ে আরেকজনের বিরুদ্ধে পাপ করে। যে-ব্যক্তি অন্যায়ের শিকার হতো, তাকে অন্যজনের কাছে গিয়ে একান্তে, কেবল তাদের দুজনের মধ্যে “সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া” দিতে হতো। সেই পদক্ষেপ যদি বিষয়টার সমাধান না করত, তা হলে আসল বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানে এমন একজন বা দুজন ব্যক্তিকে হয়তো সাহায্য করার জন্য ডাকা যেতে পারে। তারপরও যদি বিষয়টা অমীমাংসিত থেকে যেত, তা হলে? যিশু বলেছিলেন: “যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক।” যিশু যখন এই কথাগুলো বলেছিলেন, তখনও ‘ঈশ্বরের মণ্ডলী’ যিহুদিদের নিয়ে গঠিত ছিল, তাই তাঁর কথাগুলো প্রাথমিকভাবে তাদের প্রতি প্রযোজ্য ছিল। * কিন্তু, একবার খ্রিস্টীয় মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর, যিশুর নির্দেশনা সেই খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রতি প্রযোজ্য হবে। এটা আরেকটা ইঙ্গিত যে, আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক খ্রিস্টানের গেঁথে ওঠার ও নির্দেশনার জন্য ঈশ্বরের লোকেদের এক মাণ্ডলিক ব্যবস্থা থাকবে।

১১. সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে প্রাচীনরা কীভাবে জড়িত ছিল?

১১ উপযুক্তভাবেই, প্রাচীনবর্গ অথবা অধ্যক্ষরা সমস্যাগুলো মীমাংসা বা সমাধান করার অথবা পাপ সংক্রান্ত বিষয়ের বিহিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় মণ্ডলীকে প্রতিনিধিত্ব করত। আর এটা তীত ১:৯ পদে উল্লেখিত প্রাচীনদের যোগ্যতাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা ঠিক যে, স্থানীয় প্রাচীনরা অসিদ্ধ পুরুষ ছিল যেমনটা ছিলেন তীত, যাকে পৌল মণ্ডলীগুলোতে এই কারণে পাঠিয়েছিলেন, “যেন যাহা যাহা অসম্পূর্ণ, . . . তাহা ঠিক করিয়া” দেন। (তীত ১:৩-৫) আজকে, যাদেরকে প্রাচীন হিসেবে সেবা করার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে, তাদেরকেও অবশ্যই দীর্ঘসময় ধরে তাদের বিশ্বাস ও ভক্তির প্রমাণ দিতে হয়েছে। তাই, মণ্ডলীর অন্যদের এই ব্যবস্থার মাধ্যমে জোগানো নির্দেশনা ও নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করার কারণ রয়েছে।

১২. মণ্ডলীর প্রতি প্রাচীনদের কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১২ ইফিষীয় মণ্ডলীর প্রাচীনদের প্রতি পৌল বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান, এবং পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে অধ্যক্ষ করিয়া যাহার মধ্যে নিযুক্ত করিয়াছেন, সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হও, ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীকে পালন কর, যাহাকে তিনি নিজ রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন।” (প্রেরিত ২০:২৮) একইভাবে এটা আজকেও সত্য যে, মণ্ডলীর অধ্যক্ষদের ‘ঈশ্বরের মণ্ডলীকে পালন’ করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের তা প্রেমের সঙ্গে করা উচিত, পালের ওপর কর্তৃত্ব করার জন্য নয়। (১ পিতর ৫:২, ৩) অধ্যক্ষদের গেঁথে ওঠার এবং ‘সমস্ত পালকে’ সাহায্য করার জন্য চেষ্টা করা উচিত।

মণ্ডলীর সঙ্গে লেগে থাকা

১৩. মাঝে মাঝে মণ্ডলীতে কী দেখা দিতে পারে এবং কেন?

১৩ প্রাচীনরা ও মণ্ডলীর অন্য সকলে অসিদ্ধ, তাই মাঝে মাঝে ভুলবোঝাবুঝি এবং সমস্যা দেখা দেয়, যেমনটা প্রথম শতাব্দীতে কিছু প্রেরিতদের উপস্থিতির সময়েও দেখা গিয়েছিল। (ফিলিপীয় ৪:২, ৩) একজন অধ্যক্ষ অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি হয়তো এমন কিছু বলতে পারেন, যেটা রূঢ়, নির্দয় বলে মনে হতে পারে অথবা যেটা পুরোপুরি সত্য নয়। অথবা আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, অশাস্ত্রীয় কোনো কিছু ঘটছে কিন্তু মনে হচ্ছে যে, স্থানীয় প্রাচীনরা বিষয়টা সম্বন্ধে জানা সত্ত্বেও বিষয়টা সংশোধন করছে না। অবশ্য এমনটা হতে পারে যে, বিষয়টা শাস্ত্র অনুযায়ী ও আমাদের অজানা এমন আসল বিষয়গুলোর আলোকে বিবেচনা করে তা মীমাংসা করা হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু, এমনকি অশাস্ত্রীয় কিছু ঘটতে থাকলেও এটা বিবেচনা করুন: কিছু সময়ের জন্য করিন্থীয় মণ্ডলীতে একটা গুরুতর অন্যায় বিদ্যমান ছিল, যে-মণ্ডলীর জন্য যিহোবা চিন্তা করতেন। এক সময়ে, তিনি সঠিকভাবে এবং দৃঢ় উপায়ে সেই অন্যায় কাজের মীমাংসা করিয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ৫:১, ৫, ৯-১১) আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি যদি সেই সময়ে করিন্থে থাকতাম, তখন আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতাম?’

১৪, ১৫. কেন কেউ কেউ যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছিল আর এটা আমাদের জন্য কোন শিক্ষা প্রদান করে?

১৪ মণ্ডলীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেকটা সম্ভাবনা সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। ধরুন, একজন ব্যক্তি শাস্ত্রীয় কোনো শিক্ষাকে বুঝতে ও মেনে নিতে কঠিন বলে মনে করেন। তিনি হয়তো বাইবেল ও মণ্ডলীর মাধ্যমে প্রাপ্তিসাধ্য প্রকাশনা থেকে গবেষণা করেছেন এবং পরিপক্ব সহখ্রিস্টান ও এমনকি প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছেন। তারপরও সেই বিষয়টা বুঝতে অথবা তা মেনে নিতে তার কাছে কঠিন লাগছে। তিনি কী করতে পারেন? যিশু মারা যাওয়ার প্রায় এক বছর আগে একইরকম একটা বিষয় ঘটেছিল। যিশু বলেছিলেন যে, তিনি ছিলেন “জীবন-খাদ্য” এবং একজন ব্যক্তি যদি চিরকাল বেঁচে থাকতে চান, তা হলে তাকে “মনুষ্যপুত্ত্রর মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান” করতে হবে। এটা তাঁর শিষ্যদের কাউকে কাউকে মর্মাহত করেছিল। কোনো ব্যাখ্যা খোঁজার অথবা কেবল বিশ্বাস সহকারে অপেক্ষা করার পরিবর্তে অনেক শিষ্য “[যিশুর] সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।” (যোহন ৬:৩৫, ৪১-৬৬) আবারও, আমরা যদি সেখানে থাকতাম, তা হলে আমরা কী করতাম?

১৫ আধুনিক সময়ে, কেউ কেউ স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছে এই মনে করে, যে তারা নিজে নিজে ঈশ্বরকে সেবা করবে। তারা হয়তো বলে থাকে যে এর কারণ হল, তাদের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে, তারা মনে করে যে, কোনো একটা ভুলকে সংশোধন করা হচ্ছে না অথবা তারা কোনো শিক্ষা মেনে নিতে পারছে না। তাদের এই মনোভাব কতটা যুক্তিযুক্ত? যদিও এটা সত্য যে, প্রত্যেক খ্রিস্টানের ঈশ্বরের সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা উচিত কিন্তু আমরা এটা অস্বীকার করতে পারি না যে, তিনি এক বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীকে ব্যবহার করছেন, যেমনটা তিনি প্রেরিতদের দিনেও করেছিলেন। অধিকন্তু, প্রথম শতাব্দীতে যিহোবা স্থানীয় মণ্ডলীগুলোকে ব্যবহার ও আশীর্বাদ করেছিলেন, মণ্ডলীর উপকারের জন্য যোগ্য প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের ব্যবস্থা করেছিলেন। আজকেও এটা সত্য।

১৬. একজন ব্যক্তি যদি মণ্ডলী ত্যাগ করার জন্য প্রলোভিত হন, তা হলে কোন বিষয়ে তার চিন্তা করা উচিত?

১৬ একজন খ্রিস্টান যদি মনে করেন যে, তিনি স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা না করেই ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে পারেন, তা হলে তিনি ঈশ্বর নিযুক্ত এক ব্যবস্থাকে—অর্থাৎ ঈশ্বরের লোকেদের বিশ্বব্যাপী মণ্ডলী ও স্থানীয় মণ্ডলীগুলোকে—অস্বীকার করছেন। একজন ব্যক্তি হয়তো ঈশ্বরকে স্বাধীনভাবে উপাসনা করতে অথবা কেবল অল্পসংখ্যক ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেন কিন্তু মণ্ডলীর প্রাচীন এবং পরিচারক দাসদের ব্যবস্থা কোথায়? লক্ষণীয় বিষয় হল, পৌল যখন কলসীর মণ্ডলীকে লিখেছিলেন এবং সেই চিঠি লায়দিকেয়াতেও পড়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তখন তিনি “[খ্রিস্টেই] বদ্ধমূল ও সংগ্রথিত” হওয়ার বা গেঁথে ওঠার কথা বলেছিলেন। যারা মণ্ডলীতে ছিল, তারা এটা থেকে উপকার লাভ করেছিল, যারা এই ধরনের মণ্ডলী থেকে নিজেদেরকে পৃথক রেখেছিল, তারা নয়।—কলসীয় ২:৬, ৭; ৪:১৬.

সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি

১৭. প্রথম তীমথিয় ৩:১৫ পদ মণ্ডলী সম্বন্ধে কী দেখায়?

১৭ খ্রিস্টান প্রাচীন তীমথিয়ের প্রতি লেখা তার প্রথম চিঠিতে প্রেরিত পৌল স্থানীয় মণ্ডলীগুলোর প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের যোগ্যতাগুলো সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন। এর পর পরই পৌল “জীবন্ত ঈশ্বরের মণ্ডলী” সম্বন্ধে উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, এটা হল “সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি।” (১ তীমথিয় ৩:১৫) নিশ্চিতভাবেই, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সমগ্র মণ্ডলী প্রথম শতাব্দীতে এইরকম স্তম্ভ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। আর এটা প্রশ্নাতীত যে, আলাদা আলাদা খ্রিস্টানের জন্য এই ধরনের সত্য লাভ করার প্রধান ব্যবস্থা স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। সেখানেই তারা সত্য সম্বন্ধে তুলে ধরা ও সত্যকে সমর্থন করা হচ্ছে বলে শুনতে পারত এবং সেখানেই তারা গেঁথে উঠতে পারত।

১৮. কেন মণ্ডলীর সভাগুলো গুরুত্বপূর্ণ?

১৮ একইভাবে, বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় মণ্ডলী হল ঈশ্বরের গৃহ, “সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি।” স্থানীয় মণ্ডলীতে আমাদের নিয়মিত উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ হল, আমাদের জন্য গেঁথে ওঠার ও ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার প্রধান উপায়। করিন্থের একটা মণ্ডলীকে লেখার সময় পৌল সেই বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, যেগুলো এই ধরনের সভাগুলোতে বলা হতো। তিনি লিখেছিলেন যে, তিনি আশা করেন তাদের সভাগুলোতে যা কিছু বলা হয়, তা যেন স্পষ্ট ও বোধগম্য হয়, যাতে উপস্থিত সকলে “গাঁথিয়া” উঠতে পারে। (১ করিন্থীয় ১৪:১২, ১৭-১৯) আজকে আমরা গেঁথে উঠতে পারি, যদি আমরা স্বীকার করি যে, যিহোবা ঈশ্বর স্থানীয় মণ্ডলীগুলোর এই ব্যবস্থাকে অনুমোদন করেছেন এবং তিনি এটিকে সমর্থন করছেন।

১৯. কেন আপনি আপনার মণ্ডলীর কাছে ঋণী বোধ করেন?

১৯ হ্যাঁ, আমরা যদি খ্রিস্টান হিসেবে গেঁথে উঠতে চাই, তা হলে আমাদের মণ্ডলীর মধ্যে থাকা উচিত। এটা দীর্ঘসময় ধরে মিথ্যা শিক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে এক সুরক্ষা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে আর ঈশ্বর এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য মণ্ডলীকে ব্যবহার করেছেন যেন তাঁর মশীহ রাজ্যের সুসমাচার সারা পৃথিবীতে ঘোষিত হয়। নিঃসন্দেহে, ঈশ্বর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে অনেক কিছু সম্পাদন করেছেন।—ইফিষীয় ৩:৯, ১০.

[পাদটীকা]

^ বাইবেল পণ্ডিত আ্যলবার্ট বার্নেস স্বীকার করেছিলেন যে, ‘মণ্ডলীকে বলিবার’ বিষয়ে যিশুর নির্দেশনা বলতে বোঝাতে পারে “তাদেরকে, যারা এই ধরনের বিষয়গুলো তদন্ত করার জন্য অধিকারপ্রাপ্ত—গির্জার প্রতিনিধিরা অথবা যারা তাদের হয়ে কাজ করত। যিহুদি সমাজগৃহে প্রাচীনদের এক বিচারকমণ্ডলী ছিল, যাদের কাছে এই ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ে আসা হতো।”

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন আমাদের আশা করা উচিত যে, ঈশ্বর পৃথিবীতে তাঁর মণ্ডলীগুলোকে ব্যবহার করবেন?

• যদিও অসিদ্ধ তবুও প্রাচীনরা মণ্ডলীর জন্য কী করে থাকে?

• স্থানীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে আপনি কীভাবে গেঁথে উঠছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিরূশালেমের প্রেরিতরা ও প্রাচীনবর্গ পরিচালক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করত

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রাচীনরা ও পরিচারক দাসেরা নির্দেশনা লাভ করে যাতে তারা মণ্ডলীর প্রতি তাদের দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করতে পারে