আপনি কি ভবিষ্যৎকে ভয় পান?
আপনি কি ভবিষ্যৎকে ভয় পান?
ভয় পাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু লোক ভবিষ্যতে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের কী হবে, তা ভেবে ভয় পায়। “তাপপ্রবাহ থেকে শুরু করে ঝড়, বন্যা, দাবানল, বিশাল পরিমাণে হিমশৈলের গলন দেখায় যে, পৃথিবীব্যাপী আবহাওয়া দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,” ২০০৬ সালের ৩রা এপ্রিল এর টাইম পত্রিকা বলে।
২০০২ সালের মে মাসে, রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল যার শিরোনাম ছিল “পৃথিবীব্যাপী পরিবেশের ভবিষ্যৎ-৩.” এটা ১,০০০রেরও বেশি লোকের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছিল। একটা সংবাদ বিবৃতি অনুসারে, এটা বলেছিল: “এই গ্রহটা আজকে এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে কারণ বর্তমানে যে-সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়েছে সেগুলো বনভূমি, সাগর-মহাসাগর, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, বন্যজীবন বা বাস্তুসংস্থান, যেগুলোর ওপর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নির্ভর করে, সেগুলোকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করছে।”
পৃথিবীর বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থা হল উদ্বেগের একটা কারণ। আজ পৃথিবীর সব জায়গায় লোকেরা সন্ত্রাসী আক্রমণের আশঙ্কায় বাস করে। কানাডার সর্বোচ্চ গুপ্তচর সংস্থা পরিচালনার উপপরিচালক বলেছিলেন: “আমরা এমন সব হুমকির বিষয়ে দুশ্চিন্তা করে নির্ঘুম রাত কাটাই, যেগুলো সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না।” বস্তুতপক্ষে, টেলিভিশনে শুধুমাত্র সন্ধ্যার খবর দেখাই হয়তো উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে!
প্রাপ্তবয়স্ক অনেক পরিশ্রমী ব্যক্তি তাদের চাকরি হারানোর ভয়ের মধ্যে রয়েছে। কর্মী ছাঁটাই, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা এবং নিয়োগকর্তাদের মাত্রাতিরিক্ত দাবিগুলো হয়তো কর্মক্ষেত্রে এক অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। কিশোর-কিশোরীরা তাদের বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ের মুখোমুখি হয়। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা হয়তো এই ভেবে ভয় পেয়ে থাকে যে, তাদের বাবামা তাদের প্রকৃতপক্ষে ভালবাসে না। কিন্তু, তাদের চারপাশের জগতের অবস্থা সম্বন্ধে
তারা কেমন বোধ করে? “অল্পবয়সি ও অনভিজ্ঞদের জন্য, কখনো কখনো তাদের ঘরের বাইরের পরিবেশ এক বিশাল ভীতিকর জায়গা বলে মনে হয়,” একজন চিন্তিত মা বলেন। আর অনেক বাবামা, জগতের নৈতিক অধঃপতন তাদের প্রিয়জন, বিশেষ করে তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর যে-প্রভাব ফেলে থাকে, সেই বিষয়ে উদ্বিগ্ন।বয়স্ক ব্যক্তিরা সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার বা রাস্তায় শারীরিক আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় পেয়ে থাকে। হ্যাঁ, “লোকে উচ্চস্থান হইতে ভীত হইবে, ও পথে ত্রাস হইবে।” (উপদেশক ১২:৫) গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় রয়েছে। প্রাণঘাতী ফ্লু ভাইরাস, ক্যান্সার এবং সংক্রামক রোগগুলোর রিপোর্ট আমাদের নতুন নতুন ও অদ্ভুত ধরনের রোগের শিকার হওয়া সম্বন্ধে ভীত করে তুলতে পারে, যেগুলো হয়তো আমাদের এবং আমাদের পরিবারকে পঙ্গু করে দিতে বা মেরে ফেলতে পারে। এইজন্য যখন আমরা দেখি যে স্বাস্থ্যবান, সবল লোকেরা অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ছে, তখন আমাদের বা আমাদের প্রিয়জনদের ক্ষেত্রেও যে একই বিষয় ঘটতে পারে এইরকম ভেবে দুশ্চিন্তা না করা কঠিন হয়ে থাকে। আর একজন অসুস্থ ব্যক্তির আশাহীন চোখের দিকে তাকানো কতই না দুঃখজনক!
বিভিন্ন ধরনের ভয় দ্বারা জর্জরিত হয়ে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের আশাবাদী হওয়ার কি কোনো উত্তম কারণ রয়েছে? কোনোকিছু কি আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে? পরবর্তী প্রবন্ধ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে।
[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
© Jeroen Oerlemans/Panos Pictures