সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেকারণে সমস্ত দুঃখকষ্ট শীঘ্রই শেষ হবে

যেকারণে সমস্ত দুঃখকষ্ট শীঘ্রই শেষ হবে

যেকারণে সমস্ত দুঃখকষ্ট শীঘ্রই শেষ হবে

“তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪.

১, ২. (ক) কেন আপনি চিরকাল বেঁচে থাকার আশাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন? (খ) কী অনেককে সেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে বাধা দেয়, যিনি ভবিষ্যতের জন্য অপূর্ব প্রতিজ্ঞাগুলো করেছেন?

 আপনি কি পরমদেশে জীবন সম্বন্ধে চিন্তা করতে ভালবাসেন? আপনি হয়তো এইরকম কল্পনা করেন যে, আপনি এই বিস্ময়কর গ্রহ সম্বন্ধে তথ্য আবিষ্কার করছেন এবং এর প্রায় অফুরন্ত প্রজাতির জীবিত বস্তু সম্বন্ধে শিখছেন। অথবা এই পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার এবং এটিকে বিশ্বব্যাপী উদ্যানে পরিণত করতে সাহায্য করার জন্য অন্যদের সঙ্গে কাজ করার সময় আপনি যে-পরিতৃপ্তি বোধ করবেন, সেই সম্বন্ধে হয়তো চিন্তা করেন। কিংবা আপনি হয়তো শিল্পকলা, স্থাপত্যশিল্প, সংগীত বা অন্যান্য যে-বিষয়গুলোর জন্য এই কর্মব্যস্ত জীবনে কোনো সময় পান না, সেগুলোতে যে-দক্ষতা গড়ে তুলতে পারবেন, সেই সম্বন্ধে গভীরভাবে বিবেচনা করে থাকেন। যাই হোক, আপনি সেইভাবে বেঁচে থাকার আশাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, যেটাকে বাইবেল “প্রকৃতরূপে জীবন” বলে অভিহিত করে, যে-জীবন আমরা অনন্তকাল ধরে উপভোগ করব বলে যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল।—১ তীমথিয় ৬:১৯.

বাইবেলভিত্তিক সেই আশা সম্বন্ধে অন্যদেরকে বলা এক আনন্দদায়ক ও মূল্যবান সুযোগ, তা-ই নয় কি? কিন্তু, অনেকে এই ধরনের এক আশাকে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। তারা এটাকে সহজে প্রতারিত হয় এমন লোকেদের জন্য এক মোহময়, অবাস্তব স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দেয়। তারা হয়তো এমনকি সেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করাকেও কঠিন বলে মনে করে, যিনি পরমদেশে অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা করেন। কেন? কারো কারো জন্য এর সঙ্গে জড়িত বাধাটা হল মন্দতার সমস্যা—প্রায়ই এটাকে যেভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তারা মনে করে যে, ঈশ্বর যদি থেকে থাকেন এবং সর্বশক্তিমান ও প্রেমময় হন, তা হলে জগতে মন্দতা এবং দুঃখকষ্টের কারণ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা কঠিন। তারা যুক্তি দেখায়, মন্দতাকে প্রশ্রয় দেন এমন কোনো ঈশ্বর থাকতে পারেন না—অথবা তিনি যদি থেকে থাকেন, তা হলে হয় তিনি সর্বশক্তিমান নন নতুবা তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন না। কারো কারো কাছে এই ধরনের যুক্তিকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। নিশ্চিতভাবেই শয়তান মানুষের মনকে অন্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ বলে প্রমাণিত হয়েছে।—২ করিন্থীয় ৪:৪.

৩. কোন কঠিন প্রশ্নের উত্তর পেতে আমরা লোকেদেরকে সাহায্য করতে পারি আর তা করার জন্য কেন আমরা এক অদ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি?

যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা সেই লোকেদের সাহায্য করার জন্য এক অদ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি, যারা শয়তান ও এই জগতের জ্ঞান বা প্রজ্ঞার দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে। (১ করিন্থীয় ১:২০; ৩:১৯) আমরা বুঝতে পারি যে, কেন অনেকে বাইবেলের প্রতিজ্ঞাগুলোতে বিশ্বাস করে না। তারা স্পষ্টতই যিহোবাকে জানে না। তারা হয়তো তাঁর নাম অথবা এই নামের অর্থ জানে না এবং তারা সম্ভবত তাঁর গুণাবলি বা প্রতিজ্ঞাগুলো রাখার ব্যাপারে তাঁর যে সুনাম রয়েছে, সেই সম্বন্ধে সামান্যই জানে অথবা কিছুই জানে না। আমাদের এই ধরনের জ্ঞান লাভ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে এটা পুনরালোচনা করা আমাদের জন্য উপকারী যে, যে-লোকেরা “চিত্তে অন্ধীভূত” তাদেরকে কীভাবে আমরা মানুষ জিজ্ঞেস করে থাকে এইরকম সবচেয়ে কঠিন একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারি আর সেই প্রশ্নটা হল, “কেন ঈশ্বর মন্দতা ও দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?” (ইফিষীয় ৪:১৮) প্রথমে আমরা বিবেচনা করব যে, কীভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর কার্যকারীভাবে দেওয়া যায়। এরপর আমরা আলোচনা করব যে, মন্দতার বিষয়টাকে যিহোবা যেভাবে মীমাংসা করেছেন, সেটার মধ্যে কীভাবে তাঁর গুণাবলি স্পষ্ট হয়।

সঠিক উপায়টা খোঁজা

৪, ৫. কেউ যখন এই প্রশ্নটা উত্থাপন করে যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, তখন আমাদের হয়তো কী করা প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করুন।

কেউ যখন জিজ্ঞেস করে যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন, তখন আমরা কীভাবে উত্তর দিই? আমরা হয়তো অবিলম্বে তাদেরকে এদন উদ্যানে কী ঘটেছিল, সেখান থেকে শুরু করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার তাগিদ অনুভব করতে পারি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা সঠিক হতে পারে। তবে, সতর্ক থাকা আবশ্যক। এর জন্য হয়তো কিছু ভিত্তি স্থাপন করা প্রয়োজন। (হিতোপদেশ ২৫:১১; কলসীয় ৪:৬) আসুন আমরা তিনটে শাস্ত্রীয় বিষয় বিবেচনা করি, যেগুলো হয়তো আমরা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে সংক্ষেপে স্পষ্ট করতে চাই।

প্রথমত, সেই ব্যক্তি যদি নির্দিষ্টভাবে জগতের সর্বত্র বিদ্যমান মন্দতার কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, তা হলে সম্ভবত সেই মন্দতা ব্যক্তিগতভাবে তাকে অথবা তার প্রিয়জনদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাই, অকৃত্রিম সহমর্মিতা দেখিয়ে কথা শুরু করা বিজ্ঞতার কাজ হতে পারে। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর।” (রোমীয় ১২:১৫) সহমর্মিতা দেখানো অথবা “পরদুঃখে দুঃখিত” হওয়া হয়তো সেই ব্যক্তিকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। (১ পিতর ৩:৮) তিনি যদি বুঝতে পারেন যে আমরা তার প্রতি আগ্রহী, তা হলে তিনি খুব সম্ভবত আমরা যা বলতে চাই, সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।

৬, ৭. কেন আমরা হয়তো উপযুক্তভাবে একজন আন্তরিক ব্যক্তিকে প্রশংসা করতে পারি, যিনি বিভ্রান্তিকর আধ্যাত্মিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন?

দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটা উত্থাপন করার জন্য আমরা হয়তো আন্তরিক ব্যক্তিদের প্রশংসা করতে পারি। কিছু লোক এই উপসংহারে আসে যে, এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে বলে তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত নয় অথবা তাঁকে সম্মান দেখায় না। এমনকি একজন পাদরিও হয়তো তাদেরকে এইরকম কথা বলে থাকেন। কিন্তু, বিষয়টা আসলে তা নয়। বস্তুতপক্ষে, বাইবেলের সময়ের বিশ্বস্ত লোকেরাও এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, গীতরচক দায়ূদ জিজ্ঞেস করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, কেন দূরে দাঁড়াইয়া থাক? সঙ্কটের সময়ে কেন লুকাইয়া থাক?” (গীতসংহিতা ১০:১) একইভাবে, ভাববাদী হবক্‌কূক জিজ্ঞেস করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, কত কাল আমি আর্ত্তনাদ করিব, আর তুমি শুনিবে না? আমি দৌরাত্ম্যের বিষয়ে তোমার কাছে কাঁদিতেছি, আর তুমি নিস্তার করিতেছ না। তুমি কেন আমাকে অধর্ম্ম দেখাইতেছ, কেন দুষ্কার্য্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছ? লুটপাট ও দৌরাত্ম্য আমার সম্মুখে হইতেছে, বিরোধ উপস্থিত, বিসংবাদ বাড়িয়া উঠিতেছে।”—হবক্‌কূক ১:২, ৩.

এই ব্যক্তিরা ছিল বিশ্বস্ত, যাদের ঈশ্বরের প্রতি প্রচুর সম্মান ছিল। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন উত্থাপন করার জন্য তাদেরকে কি তিরস্কার করা হয়েছিল? এর বিপরীতে, যিহোবা তাদের আন্তরিক প্রশ্নগুলোকে তাঁর বাক্যে লিপিবদ্ধ করাকে উপযুক্ত বলে মনে করেছেন। আজকে, যে-ব্যক্তি সর্বত্র বিদ্যমান মন্দতার কারণে উদ্বিগ্ন, তিনি হয়তো আসলে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত—সেই উত্তরগুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষী, যেগুলো কেবল বাইবেলই দিতে পারে। মনে রাখবেন যে, যিশু সেই ব্যক্তিদের প্রশংসা করেছিলেন, যারা আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত অথবা যারা “আত্মাতে দীনহীন।” (মথি ৫:৩) এই ধরনের ব্যক্তিকে সেই সুখ খুঁজে পেতে সাহায্য করা কতই না বিশেষ সুযোগ, যে-সুখ সম্বন্ধে যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন!

৮. কোন বিভ্রান্তিকর শিক্ষাগুলো লোকেদের এটা বিশ্বাস করতে পরিচালিত করেছে যে, দুঃখকষ্টের জন্য ঈশ্বরই দায়ী আর কীভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি?

তৃতীয়ত, আমাদের হয়তো সেই ব্যক্তিকে এটা বুঝতে সাহায্য করতে হবে যে, জগতের সর্বত্র বিদ্যমান দুষ্টতার জন্য ঈশ্বর দায়ী নন। অনেক লোককে শিক্ষা দেওয়া হয় যে, আমরা যে-জগতে বাস করি, সেই জগৎকে ঈশ্বর শাসন করছেন, আমাদের প্রতি ঘটা সমস্তকিছুই ঈশ্বর অনেক আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং মানবজাতির ওপর দুর্দশা নিয়ে আসার পিছনে তাঁর বিভিন্ন রহস্যময় ও দুর্বোধ্য কারণ রয়েছে। এই শিক্ষাগুলো মিথ্যা। এগুলো ঈশ্বরকে অসম্মান করে এবং জগতের দুষ্টতা ও দুঃখকষ্টের জন্য তিনিই দায়ী বলে তুলে ধরে। তাই, এই ধরনের বিষয়গুলো সংশোধন করার জন্য আমাদের হয়তো ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করতে হবে। (২ তীমথিয় ৩:১৬) যিহোবা এই কলুষিত বিধিব্যবস্থার শাসক নন; শয়তান দিয়াবল হল এর শাসক। (১ যোহন ৫:১৯) যিহোবা তাঁর বুদ্ধিমান প্রাণীদের ভবিষ্যৎ পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখেন না; তিনি প্রত্যেককে ভাল ও মন্দ, সঠিক ও ভুলের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা এবং সুযোগ দেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯) আর যিহোবা কখনোই দুষ্টতার উৎস নন; তিনি দুষ্টতা ঘৃণা করেন এবং যারা অন্যায্যভাবে দুঃখকষ্ট ভোগ করে, তাদের জন্য তিনি চিন্তা করেন।—ইয়োব ৩৪:১০; হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯; ১ পিতর ৫:৭.

৯. কেন যিহোবা ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, তা লোকেদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” কোন হাতিয়ারগুলো জুগিয়েছেন?

এই ধরনের ভিত্তি স্থাপন করার পর, আপনি হয়তো দেখতে পাবেন আপনার শ্রোতা এই বিষয়টা জানার জন্য প্রস্তুত যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট চলতে দিচ্ছেন। আপনাকে সাহায্য করার জন্য “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” অনেক হাতিয়ার জুগিয়েছে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫/০৬ সালের “ঈশ্বরীয় বাধ্যতা” জেলা সম্মেলনে “সমস্ত দুঃখকষ্ট শীঘ্রই শেষ হবে!” নামক একটি ট্র্যাক্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। আমরা আপনাকে এই ট্র্যাক্টটির বিষয়বস্তু ভাল করে জানতে উৎসাহিত করছি। একইভাবে, বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইটি এখন ১৫৭টি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে আর বইটির একটা অধ্যায়ে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধরনের হাতিয়ার যথাসম্ভব কার্যকারী উপায়ে ব্যবহার করুন। এগুলো এদনে উত্থাপিত নিখিলবিশ্বের সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টা ও কেন যিহোবা সেই বিষয়টাকে তাঁর মতো করে মীমাংসা করেছেন, সেটার শাস্ত্রীয় পটভূমি সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে। এ ছাড়া, এও মনে রাখবেন যে, আপনি যখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, তখন আপনার শ্রোতার সামনে আপনি জ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সম্বন্ধে প্রকাশ করছেন। সেটা হল যিহোবা ও তাঁর অপূর্ব গুণাবলি বিষয়ক জ্ঞান।

যিহোবার গুণাবলির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন

১০. দুঃখকষ্ট থাকার ব্যাপারে ঈশ্বরের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টা বোঝা কেন অনেকের জন্য কঠিন আর কোন জ্ঞান তাদেরকে সাহায্য করতে পারে?

১০ আপনি যখন লোকেদেরকে বুঝতে সাহায্য করেন যে, কেন যিহোবা শয়তানের প্রভাবাধীনে মানুষকে নিজেদের শাসন করতে দিয়েছেন, তখন যিহোবার অপূর্ব গুণাবলির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করানোর চেষ্টা করুন। অনেক লোক জানে যে, ঈশ্বর শক্তিশালী; প্রায়ই তারা ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান বলে ডাকতে শুনে থাকে। কিন্তু, তাদের জন্য এটা বোঝা হয়তো কঠিন যে, কেন তিনি এখনই অবিচার ও দুঃখকষ্ট শেষ করে দেওয়ার জন্য তাঁর মহান শক্তিকে ব্যবহার করেন না। তাদের হয়তো যিহোবার অন্যান্য গুণ যেমন পবিত্রতা, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং প্রেম সম্বন্ধে বোধগম্যতার অভাব রয়েছে। যিহোবা এই বৈশিষ্ট্যগুলো সিদ্ধ বা নিখুঁত ও ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে প্রদর্শন করেন। তাই, বাইবেল বলে: “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) এই বিষয়ে প্রায়ই উত্থাপিত হয় এমন প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় কীভাবে আপনি এই গুণাবলি তুলে ধরতে পারেন? আসুন আমরা কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করি।

১১, ১২. (ক) আদম ও হবা যখন পাপ করেছিল, তখন কেন ক্ষমা করা সম্ভব ছিল না? (খ) কেন যিহোবা চিরকাল পাপ সহ্য করবেন না?

১১ যিহোবা কি আদম ও হবাকে সহজেই ক্ষমা করে দিতে পারতেন? এক্ষেত্রে ক্ষমা করা কখনোই সম্ভব ছিল না। সিদ্ধ মানুষ হিসেবে আদম ও হবা ইচ্ছাকৃতভাবে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করে এর পরিবর্তে শয়তানের নির্দেশনা গ্রহণ করা বেছে নিয়েছিল। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বিদ্রোহীদের মধ্যে অনুতপ্ত হওয়ার কোনো চিহ্নই দেখা যায়নি। কিন্তু লোকেরা যখন জিজ্ঞেস করে, কেন যিহোবা তাদেরকে ক্ষমা করেননি, তখন তারা আসলে এই ভেবে থাকে যে, কেন যিহোবা তাঁর মানকে শুধু শিথিল করে পাপ ও বিদ্রোহের অস্তিত্বকে সহ্য করেননি। এর উত্তরের সঙ্গে এমন একটা গুণ জড়িত, যা যিহোবার বৈশিষ্ট্যের অপরিহার্য দিক আর তা হল তাঁর পবিত্রতা।

১২ বাইবেল অসংখ্যবার যিহোবার পবিত্রতার ওপর জোর দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এই কলুষিত জগতের অল্প সংখ্যক লোকই সেই গুণ সম্বন্ধে বুঝতে পারে। যিহোবা শুচি, শুদ্ধ এবং সমস্ত পাপ থেকে পৃথক। (যিশাইয় ৬:৩; ৫৯:২) পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার, এটাকে দূর করে দেওয়ার জন্য তিনি একটা মাধ্যমের ব্যবস্থা করেছেন কিন্তু তিনি এটাকে চিরকাল সহ্য করবেন না। যিহোবা যদি অনন্তকাল পাপকে সহ্য করতে চাইতেন, তা হলে আমাদের ভবিষ্যতের কোনো আশাই থাকত না। (হিতোপদেশ ১৪:১২) তাঁর নিরূপিত সময়ে, যিহোবা সমস্ত সৃষ্টিকে এক পবিত্র অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। এটা নিশ্চিত কারণ এটা হল সেই পবিত্রতমের ইচ্ছা।

১৩, ১৪. কেন যিহোবা এদনে বিদ্রোহীদের ধ্বংস না করা বেছে নিয়েছিলেন?

১৩ যিহোবা কি এদনের বিদ্রোহীদের শুধু ধ্বংস করে দিয়ে নতুন করে শুরু করতে পারতেন? নিশ্চিতভাবেই তা করার শক্তি তাঁর ছিল; শীঘ্রই সমস্ত দুষ্টতা শেষ করে দেওয়ার জন্য তিনি সেই শক্তি ব্যবহার করবেন। ‘কেন,’ কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে, ‘তিনি তা করেননি, যখন নিখিলবিশ্বে মাত্র তিনজন পাপী ছিল? এর ফলে, পাপ ছড়িয়ে পড়াকে—ও জগতে আমরা যেসমস্ত দুর্দশা দেখি সেগুলোকে—কি রোধ করা যেত না?’ কেন যিহোবা সেভাবে কাজ করা বেছে নেননি? দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪ পদ বলে: “তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য।” ন্যায়বিচার সম্বন্ধে যিহোবার অনুভূতি খুবই গভীর। বস্তুতপক্ষে, “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৮) ন্যায়বিচার ভালবাসেন বলেই যিহোবা এদনে বিদ্রোহীদের নির্মূল করে দেওয়া থেকে বিরত হয়েছিলেন। কেন?

১৪ শয়তানের বিদ্রোহ যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা নিয়ে একটা প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। যিহোবার ন্যায়বিচারবোধের কারণে শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক ন্যায্য উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। বিদ্রোহীদের তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে—যদিও তারা সেটার প্রাপ্য ছিল—এইরকম এক উত্তর দেওয়া হতো না। এটা যিহোবার শক্তির শ্রেষ্ঠত্বের অতিরিক্ত প্রমাণ দিত কিন্তু আসলে তাঁর শক্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। অধিকন্তু, যিহোবা আদম ও হবাকে তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেছিলেন। তাদের বংশবৃদ্ধি করার ও পৃথিবী পরিপূর্ণ করে সেটাকে বশীভূত করার এবং সমস্ত পার্থিব সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করার কথা ছিল। (আদিপুস্তক ১:২৮) যিহোবা যদি আদম ও হবাকে শুধু ধ্বংস করে দিতেন, তা হলে মানবজাতির বিষয়ে তাঁর ঘোষিত উদ্দেশ্য নিষ্ফল হয়ে যেত। যিহোবার ন্যায়বিচার কখনো এইরকম পরিণতি ঘটতে দেবে না কারণ তাঁর উদ্দেশ্য সবসময় সম্পন্ন হয়ে থাকে।—যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.

১৫, ১৬. লোকেরা যখন এদনে উত্থাপিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে বিকল্প “সমাধানগুলো” জানায়, তখন কীভাবে আমরা হয়তো তাদের সাহায্য করতে সক্ষম হতে পারি?

১৫ নিখিলবিশ্বের কেউ কি সেই বিদ্রোহকে যিহোবার চেয়ে আরও বেশি প্রজ্ঞার সঙ্গে মীমাংসা করতে পারত? কিছু লোক হয়তো এদনে বিদ্রোহের ব্যাপারে তাদের নিজেদের “সমাধানগুলো” জানাতে পারে। কিন্তু, তা করার মাধ্যমে তারা কি এই নির্দেশ করে না যে, সেই বিচার্য বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য তারা আরও উত্তম উপায় সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারত? তারা হয়তো দুষ্ট মনোভাব নিয়ে তা করে থাকে না কিন্তু তাদের যিহোবা ও তাঁর সশ্রদ্ধ প্রজ্ঞা সম্বন্ধে বোধগম্যতা নেই। রোমের খ্রিস্টানদের লেখার সময়ে প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের প্রজ্ঞা নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করেছিলেন, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল বিশ্বস্ত মানবজাতির জন্য মুক্তি নিয়ে আসতে এবং তাঁর পবিত্র নামকে পবিত্রীকৃত করতে মশীহ রাজ্যকে ব্যবহার করার জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য বিষয়ক “নিগূঢ়তত্ত্ব।” পৌল ঈশ্বরের প্রজ্ঞা সম্বন্ধে কেমন বোধ করেছিলেন, যিনি এই উদ্দেশ্য স্থির করেছিলেন? প্রেরিত এই কথাগুলো দিয়ে তার চিঠি শেষ করেন: “যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা সেই একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌ ঈশ্বরের গৌরব যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে হউক। আমেন।”—রোমীয় ১১:২৫; ১৬:২৫-২৭.

১৬ পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবাই হলেন “একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌”—নিখিলবিশ্বে প্রজ্ঞার চূড়ামণি। অসিদ্ধ মানুষের মধ্যে কেই বা যেকোনো সমস্যা—ঐশিক প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে নিয়ে আসা সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাটার কথা না হয় বাদই রইল—মীমাংসা করার সবচেয়ে উত্তম উপায় সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারে? তাই, যিনি “চিত্তে জ্ঞানবান” সেই ঈশ্বরের প্রতি আমরা যে-শ্রদ্ধা বোধ করে থাকি, লোকেদেরও সেই একইরকম বোধ করার জন্য আমাদের সাহায্য করতে হবে। (ইয়োব ৯:৪) যিহোবার প্রজ্ঞা সম্বন্ধে আমরা যত বেশি উপলব্ধি করতে পারব, তত পূর্ণরূপে আমরা নির্ভর করতে পারব যে, বিভিন্ন বিষয় মীমাংসা করার ক্ষেত্রে তাঁর উপায়ই হল সর্বোত্তম।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

যিহোবার প্রধান গুণকে উপলব্ধি করা

১৭. যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে আরও ভালভাবে বোঝা কীভাবে সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে, যারা ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন বলে কষ্ট পাচ্ছে?

১৭ “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) এই লক্ষণীয় কথাগুলোর দ্বারা বাইবেল যিহোবার প্রধান গুণকে শনাক্ত করে, যে-গুণটা অন্য সমস্ত গুণের চেয়ে বেশি আবেদনময় এবং যারা সর্বত্র বিদ্যমান দুষ্টতার কারণে কষ্ট পাচ্ছে, তাদের জন্য সবচেয়ে সান্ত্বনাজনক। তাঁর সৃষ্টির ওপর পাপের ধ্বংসাত্মক প্রভাবকে তিনি যেভাবে মীমাংসা করেছেন, তার প্রতিটা দিকে তিনি প্রেম দেখিয়েছেন। প্রেম যিহোবাকে আদম ও হবার পাপী বংশধরকে আশা প্রদান করতে অনুপ্রাণিত করেছে, তাঁর নিকটে আসার জন্য এক মাধ্যম জোগাতে এবং তাঁর সঙ্গে অনুমোদনযোগ্য এক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। প্রেম ঈশ্বরকে মুক্তির মূল্য জোগাতে অনুপ্রাণিত করেছে, যা পাপের সম্পূর্ণ ক্ষমা লাভ করার এবং পুনরায় সিদ্ধ, অনন্তকালীন জীবন পাওয়ার পথ খুলে দেবে। (যোহন ৩:১৬) আর প্রেম তাঁকে মানবজাতির প্রতি ধৈর্যশীল হতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং যত জনকে সম্ভব শয়তানকে প্রত্যাখ্যান করে যিহোবাকে তাদের সার্বভৌম হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।—২ পিতর ৩:৯.

১৮. আমাদের কোন অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে আর পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

১৮ মারাত্মক এক সন্ত্রাসী আক্রমণের বিষয়ে স্মরণ করার জন্য একত্রিত শ্রোতাদের উদ্দেশে কথা বলার সময় একজন পাদরি বলেছিলেন: “আমরা জানি না যে, কোন কারণে ঈশ্বর মন্দতা থাকতে ও দুঃখকষ্ট চলতে দিয়েছেন।” কতই না দুঃখজনক! এই বিষয়ে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে বলে আমরা কি সুখী নই? (দ্বিতীয় বিবরণ ২৯:২৯) আর যিহোবা যেহেতু বিজ্ঞ, ন্যায়পরায়ণ এবং প্রেমময়, তাই আমরা জানি যে, শীঘ্রই তিনি সমস্ত দুঃখকষ্ট শেষ করে দেবেন। বস্তুতপক্ষে, তা করার জন্য তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) কিন্তু, শত শত বছর ধরে যারা মারা গিয়েছে, তাদের কী হবে? এদনে যিহোবা যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা মীমাংসা করেছেন, তাতে কী তাদেরকে আশাহীন অবস্থায় মারা যেতে হয়েছে? না। প্রেম তাঁকে তাদের জন্যও ব্যবস্থা করতে অনুপ্রাণিত করেছে আর তা হল পুনরুত্থান। এটাই হবে পরের প্রবন্ধের বিষয়বস্তু।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• সেই ব্যক্তিকে আমরা কী বলতে পারি, যিনি জিজ্ঞেস করেন যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?

• কীভাবে যিহোবার পবিত্রতা ও ন্যায়বিচার, এদনে বিদ্রোহকে তিনি যেভাবে মীমাংসা করেছেন, সেটার মাধ্যমে প্রকাশ পায়?

• কেন আমাদের লোকেদেরকে যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করার চেষ্টা করুন, যারা জগতের দুঃখকষ্টের কারণে কষ্ট পাচ্ছে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিশ্বস্ত ব্যক্তি দায়ূদ ও হবক্‌কূক ঈশ্বরকে আন্তরিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল