সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গোটানো পুস্তক থেকে কোডেক্স বাইবেল যেভাবে একটি বইয়ে পরিণত হয়

গোটানো পুস্তক থেকে কোডেক্স বাইবেল যেভাবে একটি বইয়ে পরিণত হয়

গোটানো পুস্তক থেকে কোডেক্স বাইবেল যেভাবে একটি বইয়ে পরিণত হয়

 শত শত বছর ধরে লোকেরা বিভিন্ন উপায়ে তথ্য সংরক্ষণ করেছে। অতীতে, লেখকরা তাদের লেখাগুলো স্মৃতিস্মারকে, পাথরে বা কাঠের ফলকে, চর্মপত্রে এবং অন্যান্য বস্তুর ওপর লিপিবদ্ধ করে রাখত। প্রথম শতাব্দীর মধ্যে, মধ্যপ্রাচ্যে লিখিত বাক্যকে সংরক্ষণ করে রাখার গ্রহণযোগ্য এবং প্রতিষ্ঠিত মাধ্যম ছিল গোটানো পুস্তক। এরপর আসে কোডেক্স, যা এক সময়ে গোটানো পুস্তকের জায়গা নেয় এবং লিখিত বিষয়বস্তু সংরক্ষণ করার প্রচলিত মাধ্যম হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, এটা বাইবেল বিতরণের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখে। কোডেক্স কী ছিল এবং কীভাবে এটাকে কাজে লাগানো শুরু হয়?

কোডেক্স ছিল আজকের বইয়ের আদিরূপ। এই কোডেক্সে অনেক পাতা ছিল, যেগুলোকে ভাঁজ করে পর পর সাজিয়ে ভাঁজের এক ধার দিয়ে একসঙ্গে বেঁধে রাখা যেত। পৃষ্ঠাগুলোর দুপাশেই লেখা থাকত এবং এগুলো একটা কভার দ্বারা আচ্ছাদিত থাকত। প্রথমদিকের কোডেক্স দেখতে আজকের দিনের বইগুলোর মতো ছিল না কিন্তু অন্যান্য উদ্ভাবনগুলোর মতো এটিও ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী বিন্যস্ত ও পরিবর্তিত হয়েছিল।

কাঠ, মোম এবং চামড়া

প্রথম প্রথম কোডেক্সগুলো প্রায়ই মোমের প্রলেপ দেওয়া কাঠের ফলক দিয়ে তৈরি ছিল। মোমের প্রলেপে লিখিত ফলকগুলোর লম্বা ধারটা বাঁধা অবস্থায় ছিল, যেগুলো হারকুলেনিয়াম নামে একটা শহরে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, যে-শহরটা সা.কা. ৭৯ সালে ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্নুৎপাতের কারণে পম্পেই শহরের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে অনমনীয় ফলকগুলোর জায়গায়, ভাঁজ করা যায় এমন উপাদানে তৈরি পাতাগুলো এসেছিল। ল্যাটিন ভাষায় এই কোডেক্স বা বইগুলোকে মেমব্রানাই অথবা চর্মপুস্তক বলা হতো, কারণ এর পৃষ্ঠাগুলোর জন্য সাধারণত চামড়া ব্যবহৃত হতো।

কিছু কোডেক্স যেগুলো এখনও অস্তিত্বে রয়েছে, সেগুলো প্যাপিরাস দিয়ে তৈরি। জানামতে সবচেয়ে পুরনো খ্রিস্টীয় কোডেক্সগুলো, যেগুলো মিশরের নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোর শুষ্ক আবহাওয়ায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে প্যাপাইরাই। *

গোটানো পুস্তক নাকি কোডেক্স?

এটা স্পষ্ট যে, খ্রিস্টানরা প্রথম শতাব্দীর প্রায় শেষ পর্যন্ত প্রধানত গোটানো পুস্তক ব্যবহার করত। সা.কা. প্রথম শতাব্দীর শেষ থেকে তৃতীয় শতাব্দীর সময়কালে কোডেক্স এবং গোটানো পুস্তকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। গোটানো পুস্তক ব্যবহারে অভ্যস্ত রক্ষণশীল ব্যক্তিরা সুপ্রতিষ্ঠিত চলতি প্রথা ও রীতিগুলো পরিত্যাগ করতে অনিচ্ছুক ছিল। কিন্তু, একটা গোটানো পুস্তক পড়ার সঙ্গে কী জড়িত ছিল, তা বিবেচনা করুন। একটি গোটানো পুস্তক সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক প্যাপিরাসের পাতা অথবা চর্মপত্র দিয়ে তৈরি হতো, যেগুলোকে একটা লম্বা পাতা তৈরি করার জন্য পর পর সাজিয়ে জোড়া দেওয়া হতো, যা পরে গোটানো যেত। পাঠ্যাংশকে গোটানো পুস্তকের সামনের দিকে এক একটা কলামের মধ্যে লেখা হতো। এটি পড়ার জন্য ব্যবহারকারী গোটানো পুস্তকটি খুলতেন, যাতে তিনি তার প্রয়োজনীয় বাক্যাংশটা খুঁজে বের করতে পারেন। পড়ার পর তিনি পুনরায় এটিকে গুটিয়ে রেখে দিতেন। একটি বইয়ের জন্য প্রায়ই একাধিক গোটানো পুস্তকের প্রয়োজন হতো, যার ফলে এটি ব্যবহার করা খুব কষ্টকর ছিল। যদিও দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টানরা স্পষ্টতই শাস্ত্রকে কোডেক্সের আকারে প্রতিলিপি করা অধিক পছন্দ করত, তবুও শত শত বছর ধরে গোটানো পুস্তকের ব্যবহার অব্যাহত ছিল। তা সত্ত্বেও, পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করে যে, খ্রিস্টানদের দ্বারা কোডেক্সের ব্যবহার করার বিষয়টা এটিকে ব্যাপক আকারে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কোডেক্সের উপকারগুলো স্পষ্ট—এটির আকার, এটি সুবিধাজনক এবং এটি বহন করা সহজ। এমনকি যদিও প্রাচীন সময়ের কেউ কেউ এর সুবিধাগুলো লক্ষ করেছিল কিন্তু বেশির ভাগ লোকই গোটানো পুস্তক ব্যবহার করা পরিত্যাগ করতে ইতস্তত করেছিল। কিন্তু, বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে বিভিন্ন কারণে ক্রমাগতভাবে কোডেক্সের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছিল।

গোটানো পুস্তকের তুলনায় কোডেক্সের দাম খুব কম ছিল। একটা পৃষ্ঠার দুই পাশেই লিখতে পারা যেত এবং একই খণ্ডে অনেকগুলো বই বাঁধানো যেত। কারো কারো মতানুসারে, কোডেক্সে নির্দিষ্ট বাক্যাংশগুলো কোথায় রয়েছে, তা সহজেই বের করতে পারার ফলে মূলত খ্রিস্টানদের এবং আইনবিদদের মতো পেশাদার ব্যক্তিদের মধ্যে কোডেক্স জনপ্রিয়তা লাভ করার মূল কারণ ছিল। খ্রিস্টানদের জন্য ছোট আকারের কোডেক্সগুলো—অথবা শুধুমাত্র বাইবেলের উদ্ধৃতিগুলোর এক সুবিধাজনক তালিকা—সুসমাচার প্রচার করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ছিল। অধিকন্তু, কোডেক্সের ওপর একটা কভার লাগানো থাকত, যা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি ছিল, ফলে এটা গোটানো পুস্তকের তুলনায় বেশি টেকসই ছিল।

এ ছাড়া, ব্যক্তিগত পাঠের জন্যও কোডেক্সগুলো ব্যবহারিক ছিল। তৃতীয় শতাব্দীর শেষে চর্মের ওপর লিখিত ছোট আকারের সুসমাচারের বইগুলো নামধারী খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। তখন থেকে, কোডেক্সের আকারে আক্ষরিকভাবেই পুরো বা আংশিক বাইবেলের কোটি কোটি প্রতিলিপি প্রকাশিত হয়েছে।

আজকে, বিভিন্ন হাতিয়ার বা মাধ্যম খুব দ্রুত এবং সহজেই বাইবেলের ঐশিক প্রজ্ঞা লাভ করার উপায় করে দিয়েছে। এটি কম্পিউটারে, অডিও রেকর্ডিংয়ে এবং ছাপানো পৃষ্ঠায় পাওয়া যেতে পারে। আপনি যেকোনো আকারেই বাইবেল পছন্দ করুন না কেন, ঈশ্বরের বাক্যকে আপনার রোজকার ধ্যানের বিষয় করে তুলতে এটির প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলুন।—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭, ১৬৭.

[পাদটীকা]

^ ১৯৬২ সালের ১৫ই আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৫০১-৫ পৃষ্ঠার “প্রাথমিক খ্রিস্টীয় কোডেক্স,” প্রবন্ধটি দেখুন।

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বাইবেল বিতরণের ক্ষেত্রে কোডেক্স এক বিরাট অবদান রেখেছিল