সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ত্বক্‌চ্ছেদ পুরুষত্বের এক চিহ্ন?

ত্বক্‌চ্ছেদ পুরুষত্বের এক চিহ্ন?

ত্বক্‌চ্ছেদ পুরুষত্বের এক চিহ্ন?

 পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এক স্বাস্থ্যগত কারণে ছেলে শিশুদের ত্বক্‌চ্ছেদ করা হয়। আবার পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় পুরুষদের জীবনভর অছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় থাকাই হচ্ছে সেখানকার প্রথা। কারো কারো কাছে, যেমন যিহুদি ও মুসলিমদের কাছে ত্বক্‌চ্ছেদ করা এক স্বাস্থ্যগত কারণের চেয়ে অধিক কিছু; এর ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে।

কিন্তু, নির্দিষ্ট কিছু দেশের মধ্যে একটা ছেলে সন্তান যখন পরিপক্বতার দিকে বা পুরুষত্বের পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন ত্বক্‌চ্ছেদের এক আচারঅনুষ্ঠান করা হয়। এর অন্তর্ভুক্ত হল, ছেলেটিকে এমন এক প্রথাগত স্কুলে পাঠানো, যেখানে তার ত্বক্‌চ্ছেদ করা হয় এবং অপারেশন থেকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েক সপ্তাহ তাকে নিজস্ব সমাজ থেকে আলাদা রাখা হয়। এই সময়কালে ছেলেটিকে নির্দিষ্ট রীতিনীতি অনুসরণ করতে হয় এবং একজন পুরুষের মতো আচরণ করতে শেখানো হয়। একটা ছেলে যে পুরুষত্বের পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা প্রমাণ করার জন্য কি এই ধরনের ত্বক্‌চ্ছেদের প্রয়োজন আছে? এই বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে, আসুন আমরা তা বিবেচনা করি।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

ত্বক্‌চ্ছেদ সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রাচীনকালে কিছু লোক, যেমন মিশরীয়দের মধ্যে ত্বক্‌চ্ছেদ করার প্রথা প্রচলিত ছিল যেটা হল, পুরুষ লিঙ্গাগ্রের ত্বক কেটে ফেলা। কিন্তু, অব্রাহাম এই ধরনের এক সংস্কৃতিতে জন্মগ্রহণ করেননি। আসলে, অব্রাহাম তার জীবনের বেশির ভাগ সময় অছিন্নত্বক্‌ ছিলেন। অধিকন্তু, তার অছিন্নত্বক্‌ অবস্থাতেই তিনি নিজেকে একজন বলবান বীর হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। একটা ছোট্ট দল নিয়ে তিনি সেই চারজন রাজার সেনাবাহিনীর পিছু নিয়েছিলেন এবং তাদের পরাজিত করেছিলেন, যারা তার ভাইপো লোটকে বন্দি করেছিল। (আদিপুস্তক ১৪:৮-১৬) এর প্রায় ১৪ বছর পর, ঈশ্বর অব্রাহামকে ত্বক্‌চ্ছেদ করতে এবং তার পরিবারের সমস্ত পুরুষকে ত্বক্‌চ্ছেদ করাতে আদেশ দিয়েছিলেন। কেন ঈশ্বর তা করতে বলেছিলেন?

নিশ্চিতভাবে এটা এমন কোনো চিহ্ন ছিল না যা দেখিয়েছিল যে, অব্রাহাম আর বালক নন কিন্তু পুরুষত্বের পর্যায়ে পৌঁছেছেন। কারণ সেই সময়ে তার বয়স ছিল ৯৯ বছর! (আদিপুস্তক ১৭:১, ২৬, ২৭) ঈশ্বর এই আদেশের যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে বলেন: “তোমরা আপন আপন লিঙ্গাগ্রচর্ম্ম ছেদন করিবে; তাহাই তোমাদের সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে।” (আদিপুস্তক ১৭:১১) অব্রাহামের সঙ্গে করা নিয়ম বা চুক্তি ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল যে, অব্রাহামের মাধ্যমে “ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী” অবশেষে মহৎ আশীর্বাদগুলো পাবে। (আদিপুস্তক ১২:২, ৩) তাই, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ত্বক্‌চ্ছেদের সঙ্গে পুরুষত্বের কোনো সম্পর্কই নেই। এই বিষয়টা ইঙ্গিত করার জন্য ত্বক্‌চ্ছেদ করা হতো যে, একজন ব্যক্তি অব্রাহামের ইস্রায়েলীয় বংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদের ‘ঈশ্বরের বচনকলাপ গচ্ছিত করিবার’ বিশেষ সুযোগ হয়েছিল।—রোমীয় ৩:১, ২.

এক সময়ে, ইস্রায়েল জাতি অব্রাহামের প্রকৃত বংশ যিশু খ্রিস্টকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা তাদের নির্ভরযোগ্যতায় অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিল। তাই, ঈশ্বর তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ঈশ্বরের চোখে তাদের ত্বক্‌চ্ছেদ অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু, প্রথম শতাব্দীতে কিছু খ্রিস্টান দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছিল যে, ত্বক্‌চ্ছেদ তখনও ঈশ্বরের এক চাহিদা ছিল। (প্রেরিত ১১:২, ৩; ১৫:৫) এই কারণে প্রেরিত পৌল বিভিন্ন মণ্ডলীতে ‘যাহা যাহা অসম্পূর্ণ, তাহা ঠিক করিয়া’ দেওয়ার জন্য তীতকে পাঠিয়েছিলেন। তীতের কাছে পৌল এইরকম একটা অসম্পূর্ণতা বা ত্রুটির বিষয় লিখেছিলেন: “অনেক অদম্য লোক, অসার বাক্যবাদী ও বুদ্ধিভ্রামক লোক আছে, বিশেষতঃ ত্বক্‌ছেদীদের মধ্যে আছে; তাহাদের মুখ বদ্ধ করা চাই। তাহারা কুৎসিত লাভের অনুরোধে অনুপযুক্ত শিক্ষা দিয়া কখন কখন একেবারে ঘর উল্টাইয়া ফেলে।”—তীত ১:৫, ১০, ১১.

পৌলের পরামর্শ এখনও প্রযোজ্য। একজন সত্য খ্রিস্টানের পক্ষে কোনো একজন ব্যক্তিকে তার সন্তানের ত্বক্‌চ্ছেদ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা নিশ্চিতভাবে শাস্ত্রের বিপরীত। “পরাধিকারচর্চ্চক” হওয়ার পরিবর্তে একজন খ্রিস্টান এই ধরনের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার বিষয়টা বাবামার ওপরই ছেড়ে দেবেন। (১ পিতর ৪:১৫) অধিকন্তু, পৌল মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী ত্বক্‌চ্ছেদের বিষয়ে এভাবে লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “কেহ কি ছিন্নত্বক্‌ হইয়া আহূত হইয়াছে? সে ত্বক্‌ছেদ লোপ না করুক। কেহ কি অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় আহূত হইয়াছে? সে ছিন্নত্বক্‌ না হউক। ত্বক্‌ছেদ কিছু নয়, অত্বক্‌ছেদও কিছু নয়, কিন্তু ঈশ্বরের আজ্ঞা পালনই সার। যে ব্যক্তি যে আহ্বানে আহূত হইয়াছে, সে তাহাতেই থাকুক।”—১ করিন্থীয় ৭:১৮-২০.

“ত্বক্‌চ্ছেদের স্কুলগুলো” সম্বন্ধে কী বলা যায়?

খ্রিস্টান বাবামারা যদি তাদের ছেলে সন্তানদের ত্বক্‌চ্ছেদ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে কী? এইক্ষেত্রে তাদের ছেলেদেরকে পূর্বে বর্ণিত তথাকথিত ত্বক্‌চ্ছেদের স্কুলগুলোত পাঠানো কি বাইবেলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে? এই ধরনের স্কুলগুলোতে যারা যোগ দিয়ে থাকে, তাদের লিঙ্গাগ্রের ত্বক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা ছাড়াও তাদেরকে আরও অনেক কিছুতে অংশ নিতে হয়। সেখানে যোগ দেওয়া একজনকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সেইসব ছেলে ও শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতে হবে, যারা যিহোবার উপাসক নয়। এই স্কুলগুলোতে শেখানো অনেক বিষয় বাইবেলের উচ্চ নৈতিক মানগুলোর বিপরীত। বাইবেল সাবধান করে: “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।”—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.

এ ছাড়া, এই ধরনের স্কুলগুলোতে যোগ দেওয়া শারীরিক বিপদের ঝুঁকিকেও বাড়ায়। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসা বিষয়ক পত্রিকা (ইংরেজি) সতর্ক করেছিল: “সারা বিশ্বে সমস্ত বড় বড় সংবাদ বিভাগের দ্বারা প্রকাশিত মৃত্যু ও অঙ্গহানির বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, আবার এই বছরে ত্বক্‌চ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কারণে মারাত্মক পরিণতি লক্ষ করা গিয়েছে। . . . সংক্ষেপে বললে, আজকের তথাকথিত ‘ত্বক্‌চ্ছেদের স্কুলগুলো’ ভণ্ডামিপূর্ণ এবং মারাত্মক।”

সম্ভবত, একজন অল্পবয়সির শারীরিক ক্ষতি হওয়া ছাড়াও এর সঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবে আরও বড় ধরনের বিপদ জড়িত। ত্বক্‌চ্ছেদের স্কুলগুলোতে শেখানো বিভিন্ন শিক্ষা ও রীতিনীতি প্রেতচর্চা ও মৃত পূর্বপুরুষদের উপাসনা করার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, চিকিৎসকদের গাফিলতি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশই যে শারীরিক ক্ষতিগুলোর জন্য দায়ী, তা স্বীকার করার পরিবর্তে, অনেকে বিশ্বাস করে যে, কোনো সম্মোহনের কাজ বা মৃত পূর্বপুরুষদের অসন্তুষ্টই এইসমস্ত বেদনাদায়ক ঘটনার কারণ। মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়ে বাইবেল আদেশ দেয়: “তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না; কেননা ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি সহভাগিতা? . . . অতএব ‘তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্‌ হও, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] কহিতেছেন, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না; তাহাতে আমিই তোমাদিগকে গ্রহণ করিব।’” (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৭) এই পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে, খ্রিস্টান বাবামাদের তাদের ছেলে সন্তানদের একটা ত্বক্‌চ্ছেদের স্কুলে পাঠানো সবচেয়ে বোকামির কাজ হবে।

কী একজন খ্রিস্টানকে পুরুষোচিত করে?

একজন খ্রিস্টান পুরুষের ত্বক্‌চ্ছেদ করা বা না করাটা তার পুরুষোচিত হওয়ার কোনো চিহ্ন নয়। সত্য খ্রিস্টানদের প্রধান চিন্তার বিষয় ‘মাংসে সুরূপ দেখানো’ নয় বরং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে প্রীতিজনক হওয়া।—গালাতীয় ৬:১২.

কিন্তু, ঈশ্বরের প্রীতিজনক হওয়ার জন্য একজন খ্রিস্টানকে অবশ্যই ‘হৃদয়ে ছিন্নত্বক্‌’ হতে হবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৬; ৩০:৬; মথি ৫:৮) এটা কোনো ছুরি দিয়ে কেটে করা হয় না, বরং মন্দ কামনা এবং অহংকারী চিন্তাভাবনা যেমন এই বিশ্বাস যে, মাংসে ত্বক্‌চ্ছেদ করা একজনকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে তোলে, এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা সম্পন্ন হয়। একজন খ্রিস্টান ছিন্নত্বক্‌ হোন বা না হোন, তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করে এবং “বিশ্বাসে” অটল থেকে নিজেকে পুরুষোচিত বলে প্রমাণ করতে পারেন।—১ করিন্থীয় ১৬:১৩; যাকোব ১:১২.