বয়স্ক ব্যক্তিরা—অল্পবয়স্কদের জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ
বয়স্ক ব্যক্তিরা—অল্পবয়স্কদের জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ
“হে ঈশ্বর, বৃদ্ধ বয়স ও পক্বকেশের কাল পর্য্যন্তও আমাকে পরিত্যাগ করিও না, যাবৎ আমি এই বর্ত্তমান লোকদিগকে তোমার বাহুবল, ভাবী লোক সকলকে তোমার পরাক্রম, জ্ঞাত না করি।”—গীতসংহিতা ৭১:১৮.
১, ২. ঈশ্বরের বয়স্ক দাসদের কোন বিষয়টা বোঝা উচিত আর আমরা এখন কী বিবেচনা করব?
পশ্চিম আফ্রিকার এক খ্রিস্টান প্রাচীন একজন বয়স্ক অভিষিক্ত ভাইকে দেখতে গিয়েছিলেন ও তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আপনি কেমন আছেন?” সেই ভাই উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি দৌড়াতে পারি, আমি লাফ দিতে পারি,” এগুলো বলার সময় তিনি তা করে দেখানোর চেষ্টা করছিলেন। “কিন্তু,” তিনি আরও যুক্ত করেছিলেন, “আমি উড়তে পারি না।” তিনি যা বলতে চেয়েছিলেন, তা বোঝা গিয়েছিল। ‘আমি যা করতে পারি, তা আনন্দের সঙ্গে করি কিন্তু আমি যা করতে পারি না, তা করি না।’ যে-প্রাচীন দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার নিজের বয়স এখন ৮০-র কোঠায় আর তিনি আনন্দের সঙ্গে সেই ভাইয়ের কৌতুকবোধ ও আনুগত্য সম্বন্ধে স্মরণ করেন।
২ একজন বয়স্ক ব্যক্তি যে-ঈশ্বরীয় গুণাবলি প্রদর্শন করেন, সেগুলো অন্যদের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। অবশ্য, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমনি এমনিই প্রজ্ঞা ও খ্রিস্টতুল্য গুণাবলি উৎপন্ন হয় না। (উপদেশক ৪:১৩) বাইবেল বলে: “পক্ব কেশ শোভার মুকুট; তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়।” (হিতোপদেশ ১৬:৩১) আপনি যদি বয়স্ক ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি বুঝতে পারেন যে আপনার কথাবার্তা ও কাজ অন্যদের ওপর কতটা উপকারজনক প্রভাব ফেলতে পারে? বাইবেলের কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন, যেগুলো সেই ক্ষেত্র সম্বন্ধে তুলে ধরে, যেখানে বয়স্ক ব্যক্তিরা অল্পবয়স্কদের জন্য এক প্রকৃত আশীর্বাদ হয়েছে।
সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে এমন বিশ্বাস
৩. কীভাবে নোহের বিশ্বস্ততা আজকে জীবিত সমস্ত লোককে উপকৃত করেছে?
৩ নোহের বিশ্বাস ও দৃঢ়তার কারণে যেসমস্ত উপকার পাওয়া গিয়েছে, সেগুলো এমনকি আজকেও উপলব্ধি করা হয়। নোহ যখন জাহাজ নির্মাণ, পশুপাখি একত্রিত এবং তার প্রতিবেশীদের কাছে প্রচার করেছিলেন, তখন নোহের বয়স প্রায় ৬০০ বছরের কাছাকাছি ছিল। (আদিপুস্তক ৭:৬; ২ পিতর ২:৫) তার ঈশ্বরীয় ভয়ের কারণে নোহ ও তার পরিবার মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিল এবং আজকে পৃথিবীতে জীবিত সমস্ত লোকের পূর্বপুরুষ হয়েছিল। এটা ঠিক যে, নোহ এমন সময়ে বেঁচে ছিলেন, যখন মানুষ সাধারণত বেশিদিন বেঁচে থাকত। কিন্তু, এমনকি একেবারে শেষ বয়সেও নোহ বিশ্বস্ত ছিলেন আর তা অনেক উল্লেখযোগ্য আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল। কীভাবে?
৪. কীভাবে নোহের দৃঢ়তা আজকে ঈশ্বরের দাসদের উপকৃত করেছে?
৪ নিম্রোদ ‘পৃথিবী পরিপূর্ণ করিবার’ বিষয়ে যিহোবার আজ্ঞাকে উপেক্ষা করে যখন বাবিলের দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন, তখন নোহের বয়স প্রায় ৮০০ বছর। (আদিপুস্তক ৯:১; ১১:১-৯) কিন্তু, নোহ নিম্রোদের বিদ্রোহে অংশ নেননি। তাই, সেই বিদ্রোহের কারণে যখন তাদের ভাষাভেদ হয়েছিল, তখন সম্ভবত তার ভাষা পরিবর্তিত হয়নি। নোহের বিশ্বাস এবং দৃঢ়তা, যা শুধু তার বৃদ্ধ বয়সেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তার দীর্ঘ জীবনব্যাপীও দেখা গিয়েছে, তা যুগে যুগে ঈশ্বরের দাসদের জন্য সত্যিই অনুকরণযোগ্য।—ইব্রীয় ১১:৭.
পরিবারের ওপর প্রভাব
৫, ৬. (ক) অব্রাহামের বয়স যখন ৭৫ বছর, তখন যিহোবা তাকে কী করতে বলেছিলেন? (খ) ঈশ্বরের আদেশের প্রতি অব্রাহাম কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
৫ বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাসের ওপর যে-প্রভাব ফেলতে পারে, তা নোহের পরবর্তী কুলপতিদের জীবনে দেখা যেতে পারে। অব্রাহামের বয়স তখন ৭৫ বছর, যখন ঈশ্বর তাকে এই কথা বলেছিলেন: ‘তুমি আপন দেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব ও পৈতৃক বাটী পরিত্যাগ করিয়া, আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল। আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব।’—আদিপুস্তক ১২:১, ২.
৬ কল্পনা করুন যে, আপনাকে আপনার বাড়িঘর, বন্ধুবান্ধব, আপনার জন্মভূমি ও সেইসঙ্গে আপনার যৌথ পরিবারের নিরাপত্তা ত্যাগ করে এমন একটা দেশে যেতে বলা হয়েছে, যে-দেশ সম্বন্ধে আপনি জানেন না। অব্রাহামকে ঠিক তা-ই করতে বলা হয়েছিল। তিনি “সদাপ্রভুর সেই বাক্যানুসারে যাত্রা করিলেন,” আর তার বাকি জীবন তিনি কনান দেশে একজন প্রবাসী ও ভ্রমণশীল অধিবাসী হিসেবে তাঁবুতে বাস করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:৪; ইব্রীয় ১১:৮, ৯) যদিও যিহোবা বলেছিলেন যে, অব্রাহাম “মহাজাতি” হয়ে উঠবেন কিন্তু তার বংশধর বহুসংখ্যক হওয়ার অনেক আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী সারা তার জন্য মাত্র একটি সন্তান ইস্হাকের জন্ম দিয়েছিলেন আর তা কেবল অব্রাহাম প্রতিজ্ঞাত দেশে ২৫ বছর ধরে ক্ষণস্থায়ীভাবে থাকার পরই লাভ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২১:২, ৫) তা সত্ত্বেও, অব্রাহাম পরিশ্রান্ত হয়ে সেই নগরে ফিরে যাননি, যেখান থেকে তিনি এসেছিলেন। বিশ্বাস ও ধৈর্যের কী এক উদাহরণ!
৭. অব্রাহামের ধৈর্য তার ছেলে ইস্হাকের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল আর তা মানবজাতির জন্য কোন ফলাফল নিয়ে এসেছে?
৭ অব্রাহামের ধৈর্য তার ছেলে ইস্হাকের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলেছিল, যিনি কনান দেশে তার সম্পূর্ণ জীবন—১৮০ বছর—একজন প্রবাসী হিসেবে কাটিয়েছিলেন। ইস্হাকের ধৈর্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ছিল, যে-বিশ্বাস তার বয়স্ক বাবামা তার মধ্যে গেঁথে দিয়েছিল এবং পরে তা তার প্রতি বলা যিহোবার নিজ বাক্যের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২৬:২-৫) ইস্হাকের দৃঢ়তা যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতায় এক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল যে, সমস্ত মানবজাতির আশীর্বাদের জন্য একটা “বংশ” অব্রাহামের পরিবারের মাধ্যমে আসবে। শত শত বছর পর, সেই “বংশের” প্রধান অংশ যিশু খ্রিস্ট এমন সকলের জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার ও অনন্তজীবন উপভোগ করার পথ খুলে দিয়েছেন, যারা বিশ্বাস দেখিয়ে চলে।—গালাতীয় ৩:১৬; যোহন ৩:১৬.
৮. কীভাবে যাকোব দৃঢ়বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?
৮ এর ফলে, ইস্হাক তার ছেলে যাকোবকে সেই দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন, যা যাকোবকে তার বৃদ্ধ বয়সে টিকিয়ে রেখেছিল। যাকোবের বয়স তখন ৯৭ বছর, যখন তিনি একটা আশীর্বাদের জন্য সারারাত একজন দূতের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩২:২৪-২৮) ১৪৭ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে, যাকোব তার ১২ জন ছেলের প্রত্যেককে আশীর্বাদ করার জন্য যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৪৭:২৮) তিনি যে-ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্য বলেছিলেন, যেগুলো এখন আদিপুস্তক ৪৯:১-২৮ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং এখনও পরিপূর্ণ হচ্ছে।
৯. আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের ওপর যে-প্রভাব ফেলে, সেই সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?
৯ স্পষ্টতই, ঈশ্বরের অনুগত বয়স্ক দাসেরা তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর গঠনমূলক প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞ উপদেশসহ শাস্ত্রীয় নির্দেশনা এবং ধৈর্যের এক উদাহরণ, একজন অল্পবয়স্ককে দৃঢ়বিশ্বাস সহকারে গড়ে উঠতে প্রচুর সহযোগিতা করে পারে। (হিতোপদেশ ২২:৬) বয়স্ক ব্যক্তিরা যে তাদের পরিবারের জন্য উপকারী প্রভাব হতে পারে, সেই বিষয়টাকে তাদের কখনো ছোট করে দেখা উচিত নয়।
সহউপাসকদের ওপর প্রভাব
১০. যোষেফ “আপন অস্থিসমূহের বিষয়ে” কী “আদেশ” দিয়েছিলেন আর এর প্রভাব কী ছিল?
১০ বয়স্ক ব্যক্তিরা সহবিশ্বাসীদের ওপরও উত্তম প্রভাব ফেলতে পারে। যাকোবের ছেলে যোষেফ তার বৃদ্ধ বয়সে বিশ্বাসের এক সামান্য কাজ সম্পাদন করেছিলেন, যা তার পরে জীবিত লক্ষ লক্ষ সত্য উপাসকের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সেই সময় তার বয়স ছিল ১১০ বছর, যখন তিনি ‘আপন অস্থিসমূহের বিষয়ে আদেশ দিয়াছিলেন’ অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়রা যখন অবশেষে মিশর ত্যাগ করবে, তখন তাদেরকে সঙ্গে করে তার অস্থি নিয়ে যেতে হবে। (ইব্রীয় ১১:২২; আদিপুস্তক ৫০:২৫) সেই আদেশ যোষেফের মৃত্যুর পর, অনেক বছর ধরে চরম দাসত্ব ভোগ করার সময় ইস্রায়েলের জন্য এক আশার আলো হিসেবে কাজ করেছিল, এই নিশ্চয়তা জুগিয়েছিল যে, তারা উদ্ধার লাভ করবে।
১১. যিহোশূয়ের ওপর বয়স্ক মোশি সম্ভবত কোন প্রভাব ফেলেছিলেন?
১১ যারা যোষেফের বিশ্বাসের অভিব্যক্তির দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মোশি। মোশির বয়স যখন ৮০ বছর, তখন তিনি যোষেফের অস্থি মিশর দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ১৩:১৯) সেই সময়েই যিহোশূয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল, যার বয়স তখন অনেক কম ছিল। পরবর্তী ৪০ বছর ধরে যিহোশূয় মোশির ব্যক্তিগত পরিচারক হিসেবে সেবা করেছিলেন। (গণনাপুস্তক ১১:২৮) তিনি মোশির সঙ্গে সীনয় পর্বতে উঠেছিলেন এবং মোশি যখন প্রস্তরফলক নিয়ে পর্বত থেকে নেমে এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য যিহোশূয় সেখানে ছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২৪:১২-১৮; ৩২:১৫-১৭) নিশ্চয়ই বয়স্ক মোশি যিহোশূয়ের কাছে পরিপক্ব পরামর্শ ও প্রজ্ঞার কী এক উৎসই না হয়েছিলেন!
১২. কীভাবে যিহোশূয় যতদিন পর্যন্ত জীবিত ছিলেন, ইস্রায়েল জাতির জন্য উত্তম এক প্রভাব হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?
১২ এর ফলে, যিহোশূয় যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন ইস্রায়েল জাতিকে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন। বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:৭ পদ আমাদেরকে বলে: “যিহোশূয়ের সমস্ত জীবনকালে, এবং যে প্রাচীনবর্গ যিহোশূয়ের মরণের পর জীবিত ছিলেন, ও ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কৃত সমস্ত মহাকার্য্য দেখিয়াছিলেন, তাঁহাদেরও সমস্ত জীবনকালে লোকেরা সদাপ্রভুর সেবা করিল।” কিন্তু, যিহোশূয় ও অন্যান্য বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যুর পর, সত্য ও মিথ্যা উপাসনার মধ্যে ৩০০ বছরের জন্য এক দোদুল্যমান অবস্থা দেখা দিয়েছিল, যা ভাববাদী শমূয়েলের দিন পর্যন্ত ছিল।
শমূয়েল “ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করিলেন”
১৩. ‘ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করিবার’ জন্য শমূয়েল কী করেছিলেন?
১৩ শমূয়েল যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তার বয়স কত ছিল, তা বাইবেল জানায় না কিন্তু প্রথম শমূয়েল বইয়ে প্রায় ১০২ বছরের ঘটনা রয়েছে আর শমূয়েল এর বেশির ভাগ ঘটনার সাক্ষি হয়েছিলেন। ইব্রীয় ১১:৩২, ৩৩ পদে আমরা পড়ি যে, ন্যায়নিষ্ঠ বিচারক ও ভাববাদীরা ‘ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন।’ হ্যাঁ, শমূয়েল তার সময়ের কিছু লোককে অন্যায় কাজ এড়িয়ে চলতে অথবা তা পরিত্যাগ করতে প্রভাবিত করেছিলেন। (১ শমূয়েল ৭:২-৪) কীসের মাধ্যমে? তিনি সারাজীবন ধরে যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। (১ শমূয়েল ১২:২-৫) তিনি এমনকি রাজাকেও কড়া পরামর্শ দিতে ভয় পাননি। (১ শমূয়েল ১৫:১৬-২৯) এ ছাড়া, ‘বৃদ্ধ ও পক্বকেশ’ হয়েও শমূয়েল অন্যদের জন্য প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে নিজেকে উদাহরণযোগ্য বলে প্রমাণিত করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, সহইস্রায়েলীয়দের জন্য “প্রার্থনা করিতে বিরত হইয়া সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিব, তাহা দূরে থাকুক।”—১ শমূয়েল ১২:২, ২৩.
১৪, ১৫. কীভাবে আজকে বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রার্থনার ক্ষেত্রে শমূয়েলকে অনুকরণ করতে পারে?
১৪ এইসমস্ত ঘটনা এক অপরিহার্য উপায় সম্বন্ধে তুলে ধরে, যার মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিরা যিহোবার সহদাসদের ওপর ভাল প্রভাব ফেলতে পারে। স্বাস্থ্য বা অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে আসা সীমাবদ্ধতাগুলো সত্ত্বেও, যাদের বয়স হয়ে গিয়েছে, তারা অন্যদের জন্য প্রার্থনা করতে পারে। আপনারা যারা বয়স্ক রয়েছেন, তারা কি বুঝতে পারেন যে, আপনাদের প্রার্থনা মণ্ডলীর কতটা উপকার করতে পারে? খ্রিস্টের পাতিত রক্তের ওপর আপনার বিশ্বাসের কারণে, আপনি যিহোবার সামনে অনুমোদিত এক অবস্থান উপভোগ করে থাকেন আর আপনার ধৈর্যের নথির কারণে আপনার বিশ্বাস “পরীক্ষাসিদ্ধতা” লাভ করেছে। (যাকোব ১:৩; ১ পিতর ১:৭) কখনো ভুলে যাবেন না: “ধার্ম্মিকের বিনতি কার্য্যসাধনে মহাশক্তিযুক্ত।”—যাকোব ৫:১৬.
১৫ যিহোবার রাজ্যের কাজের সমর্থনের জন্য আপনার প্রার্থনার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের কিছু ভাইবোন তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার জন্য জেলে রয়েছে। অন্যেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধবিগ্রহ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার হয়েছে। আবার অনেকে, ঠিক আমাদের মণ্ডলীতেই প্রলোভন অথবা বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। (মথি ১০:৩৫, ৩৬) যারা প্রচার কাজে নেতৃত্ব দেয় এবং মণ্ডলীর দেখাশোনা করে, তাদের জন্যও আপনার নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করা প্রয়োজন। (ইফিষীয় ৬:১৮, ১৯; কলসীয় ৪:২, ৩) এটা কতই না উত্তম যে, আপনি আপনার প্রার্থনায় সহবিশ্বাসীদের বিষয়ে উল্লেখ করে থাকেন, যেমনটা ইপাফ্রা করেছিলেন!—কলসীয় ৪:১২.
ভাবী লোক সকলকে শিক্ষা দেওয়া
১৬, ১৭. গীতসংহিতা ৭১:১৮ পদে কী ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল আর তা কীভাবে সত্য হয়েছে?
১৬ স্বর্গীয় আহ্বানসম্পন্ন ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে সেই “আরও মেষ” অপরিহার্য প্রশিক্ষণ লাভ করেছে, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বাস করার আশা রয়েছে। (লূক ১২:৩২; যোহন ১০:১৬) এটা গীতসংহিতা ৭১:১৮ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, যেখানে বলা আছে: “হে ঈশ্বর, বৃদ্ধ বয়স ও পক্বকেশের কাল পর্য্যন্তও আমাকে পরিত্যাগ করিও না, যাবৎ আমি এই বর্ত্তমান লোকদিগকে তোমার বাহুবল, ভাবী লোক সকলকে তোমার পরাক্রম, জ্ঞাত না করি।” আত্মায় অভিষিক্ত ব্যক্তিরা, যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে গৌরবান্বিত হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গী আরও মেষকে ছেড়ে যাওয়ার আগে বৃদ্ধিরত দায়িত্বগুলোর জন্য প্রশিক্ষণ দিতে সবসময় উৎসুক রয়েছে।
১৭ সাধারণভাবে, “ভাবী লোক সকলকে” নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে গীতসংহিতা ৭১:১৮ পদ যা বলে, তা সেই আরও মেষের বেলায়ও প্রয়োগ করা যেতে পারে, যারা ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করেছে। যিহোবা আস্থা সহকারে বয়স্ক ব্যক্তিদেরকে সেইসমস্ত ব্যক্তির কাছে তাঁর সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, যারা এখন সত্য উপাসনাকে নিজের করে নিচ্ছে। (যোয়েল ১:২, ৩) অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আরও মেষ যা শিখেছে, সেটার জন্য তারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত বলে মনে করে এবং তারা তাদের শাস্ত্রীয় শিক্ষা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে তাগিদ অনুভব করে, যারা যিহোবাকে সেবা করতে চায়।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০.
১৮, ১৯. (ক) যিহোবার অনেক বয়স্ক দাস কোন মূল্যবান তথ্য প্রদান করতে পারে? (খ) কোন বিষয়ে বয়স্ক খ্রিস্টানরা নিশ্চিত থাকতে পারে?
১৮ যিহোবার বয়স্ক দাসেরা, অভিষিক্ত ও আরও মেষ উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। সর্বপ্রথম যখন “ফটো-ড্রামা অভ্ ক্রিয়েশন” দেখানো হয়েছিল, তখন যারা বেঁচে ছিল, তাদের মধ্যে অল্প কয়েক জন এখনও বেঁচে আছে। কেউ কেউ নেতৃত্বদানকারী সেই ভাইদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনত, যাদের ১৯১৮ সালে কারাবদ্ধ করা হয়েছিল। কেউ কেউ আবার ওয়াচটাওয়ার রেডিও স্টেশনের অর্থাৎ ডব্লুবিবিআর এর সম্প্রচারে অংশ নিয়েছিল। অনেকে সেই সময় সম্বন্ধে বলতে পারে, যখন যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মীয় স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত মামলাগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতে লড়াই করা হয়েছিল। আবার অন্যেরা একনায়কতান্ত্রিক শাসনাধীনে বাস করার সময় সত্য উপাসনার পক্ষে দৃঢ় ছিল। হ্যাঁ, বয়স্ক ব্যক্তিরা বলতে পারে যে, কীভাবে সত্যের বোধগম্যতা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেয়েছে। বাইবেল আমাদেরকে অভিজ্ঞতার এই প্রাচুর্য থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৭.
১৯ বয়স্ক খ্রিস্টানদেরকে অল্পবয়স্কদের কাছে উত্তম উদাহরণ হওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। (তীত ২:২-৪) আপনার ধৈর্য, প্রার্থনা এবং পরামর্শের যে-প্রভাব অন্যদের ওপর রয়েছে, তা হয়তো আপনি এখন দেখতে পাচ্ছেন না। নোহ, অব্রাহাম, যোষেফ, মোশি এবং অন্যেরা হয়তো ভাবী লোক সকলের ওপর তাদের বিশ্বস্ততার সম্পূর্ণ প্রভাব সম্বন্ধে জানত না। তা সত্ত্বেও, তাদের বিশ্বাস ও নীতিনিষ্ঠার নথির অনেক জোরালো প্রভাব ছিল; আপনাদের নথিরও একই প্রভাব থাকতে পারে।
২০. যারা শেষ পর্যন্ত তাদের আশা দৃঢ় রাখে, তাদের জন্য কোন আশীর্বাদগুলো রয়েছে?
২০ আপনাকে ‘মহাক্লেশের’ সময় রক্ষা করা অথবা পুনরুত্থানের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা, যা-ই করা হোক না কেন, “প্রকৃতরূপে জীবন” উপভোগ করা কতই না আনন্দদায়ক হবে! (মথি ২৪:২১; ১ তীমথিয় ৬:১৯) খ্রিস্টের হাজার বছর রাজত্বের সময়ের কথা কল্পনা করুন, যখন যিহোবা বৃদ্ধ বয়সের প্রভাবগুলো দূর করে দেবেন। আমাদের দেহের অনিবার্য অবনতি ভোগ করার পরিবর্তে, আমরা প্রতিদিন ক্রমবর্ধমান শারীরিক উন্নতি—আরও শক্তি, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি, স্পষ্ট শ্রবণশক্তি, সুন্দর চেহারা—নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠব! (ইয়োব ৩৩:২৫; যিশাইয় ৩৫:৫, ৬) যারা ঈশ্বরের নতুন জগতে বাস করার জন্য আশীর্বাদপ্রাপ্ত, তারা যে-অনন্তকালীন সময় উপভোগ করতে যাচ্ছে, সেটার তুলনায় সবসময় তরুণ হবে। (যিশাইয় ৬৫:২২) তাই, আমরা সকলে যেন শেষ পর্যন্ত আমাদের আশাকে দৃঢ় রাখি এবং ক্রমাগত পূর্ণহৃদয়ে যিহোবাকে সেবা করি। আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা যাকিছু প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই সমস্তকিছু পরিপূর্ণ করবেন এবং তিনি যা করবেন, তা আমাদের যে-প্রত্যাশাগুলোই থাকুক না কেন, সেগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।—গীতসংহিতা ৩৭:৪; ১৪৫:১৬.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কীভাবে বয়স্ক ব্যক্তি নোহের দৃঢ়তা সমস্ত মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল?
• কুলপতিদের বিশ্বাস তাদের বংশধরের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল?
• যোষেফ, মোশি, যিহোশূয় এবং শমূয়েল তাদের বৃদ্ধ বয়সে কীভাবে সহউপাসকদের শক্তিশালী করেছিল?
• বয়স্ক ব্যক্তিরা কোন নথি প্রদান করতে পারে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
অব্রাহামের ধৈর্য ইস্হাকের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলেছিল
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
মোশির পরিপক্ব পরামর্শ যিহোশূয়কে উৎসাহিত করেছিল
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
অন্যদের জন্য করা আপনার প্রার্থনা অনেক উত্তম কিছু সম্পাদন করতে পারে
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অল্পবয়স্করা বিশ্বস্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের কথা শোনার দ্বারা উপকৃত হয়