সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত”

আমরা “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত”

আমরা “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত”

“আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত।”—গীতসংহিতা ১৩৯:১৪.

১. কেন অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তি পৃথিবীর অপূর্ব বিষয়গুলোর জন্য ঈশ্বরকে কৃতিত্ব দেয়?

 প্রাকৃতিক জগৎ অপূর্ব সব সৃষ্টি দিয়ে পরিপূর্ণ। কীভাবে সেগুলো অস্তিত্বে এসেছে? কেউ কেউ মনে করে যে, উত্তরটি একজন বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে উল্লেখ না করেও পাওয়া যেতে পারে। আবার অন্যেরা মনে করে যে, ইচ্ছেমতো একজন সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দেওয়া প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতার ক্ষমতাকে সীমিত করে দেয়। তারা মনে করে যে, পৃথিবীর সৃষ্টিগুলো এতটাই জটিল, এতটাই বৈচিত্র্যময় আর আপনিও হয়তো বলতে পারেন, এতটাই অপূর্ব যে, সেগুলো দৈবক্রমে অস্তিত্বে আসতে পারে না। অনেক লোকের কাছে, যাদের মধ্যে বিজ্ঞানীরাও রয়েছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখায় যে, এই নিখিলবিশ্বের একজন বিজ্ঞ, শক্তিশালী এবং দয়ালু নির্মাতা রয়েছেন। *

২. কোন বিষয়টা দায়ূদকে যিহোবার প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল?

প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, একজন নির্মাতা তাঁর আশ্চর্য বা অপূর্ব সৃষ্টির জন্য প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। যদিও দায়ূদ আজকের এই বৈজ্ঞানিক যুগ থেকে বহু আগে বাস করতেন কিন্তু তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তার চারপাশে ঈশ্বরের সৃজনশীল কাজের বিস্ময়কর উদাহরণগুলো রয়েছে। ঈশ্বরের সৃজনশীল ক্ষমতা দ্বারা গভীরভাবে বিস্মিত হওয়ার জন্য দায়ূদের কেবল তার নিজ দেহের গঠনশৈলী বিবেচনা করার প্রয়োজন ছিল। “আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত,” তিনি লিখেছিলেন। “তোমার কর্ম্ম সকল আশ্চর্য্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।”—গীতসংহিতা ১৩৯:১৪.

৩, ৪. কেন আমাদের প্রত্যেকের যিহোবার কাজগুলো নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ?

গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করার মাধ্যমে দায়ূদ এই দৃঢ়প্রত্যয় লাভ করতে পেরেছিলেন। বর্তমানে, স্কুলের পাঠ্যসূচি এবং প্রচারমাধ্যমগুলো এমন সব মতবাদ দিয়ে পূর্ণ, যেগুলো মানুষের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয়। আমরা যদি দায়ূদের মতো বিশ্বাস বজায় রাখতে চাই, তা হলে আমাদেরও গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। অন্যদের চিন্তাভাবনাকে আমাদের ওপর প্রভাব ফেলতে দেওয়া বিপদজনক, বিশেষ করে একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও ভূমিকার মতো মৌলিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে।

অধিকন্তু, যিহোবার কাজগুলো নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা, তাঁর প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে শক্তিশালী করে এবং ভবিষ্যতের জন্য করা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর আস্থা এনে দেয়। ফলস্বরূপ, সেটা যিহোবাকে আরও ভালভাবে জানতে এবং তাঁর সেবা করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তা হলে আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, কীভাবে আধুনিক বিজ্ঞান দায়ূদের এই উপসংহারকে সত্য বলে স্বীকার করেছে যে, আমরা “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত।”

আমাদের বিস্ময়কর দৈহিক বৃদ্ধি

৫, ৬. (ক) কীভাবে আমাদের সকলের জীবন শুরু হয়েছিল? (খ) আমাদের বৃক্কগুলো কোন ভূমিকা পালন করে?

“তুমিই আমার মর্ম্ম [“বৃক্কগুলো,” NW] রচনা করিয়াছ; তুমি মাতৃগর্ব্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৩) আমাদের মায়ের দেহে একটা বিন্দুর চেয়েও ছোট একক কোষ হিসেবে আমাদের সকলের অস্তিত্ব শুরু হয়েছিল। অতি ক্ষুদ্র সেই কোষ ছিল অত্যন্ত জটিল—ক্ষুদ্রাকার এক রাসায়নিক গবেষণাগার! এটা অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। গর্ভের মধ্যে আপনার বয়স যখন দুই মাসের মতো, তখন আপনার প্রধান অঙ্গগুলো ইতিমধ্যেই গঠিত হয়ে গিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ছিল আপনার বৃক্কগুলো (কিডনি)। আপনি যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তখন আপনার বৃক্কগুলো আপনার রক্ত সরবরাহকে পরিশোধিত করার—বিষাক্ত পদার্থ ও অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন করে প্রয়োজনীয় পদার্থগুলো অক্ষুণ্ণ রাখার—জন্য তৈরি ছিল। যদি ঠিকমতো কাজ করে, তা হলে আপনার দুটো বৃক্ক প্রতি ৪৫ মিনিটে আপনার রক্তে বিদ্যমান জলকে—একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীরের প্রায় ৫ লিটার জলকে—পরিশোধিত করে!

এ ছাড়া, আপনার বৃক্কগুলো রক্তের খনিজ উপাদান ও সেইসঙ্গে এর অম্লত্ব এবং চাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এগুলো আরও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে থাকে, যেমন ভিটামিন ডি-কে এমন এক সক্রিয় উপাদানে রূপান্তরিত করে, যা হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি এবং ইরিথ্রোপোয়িটিন হরমোন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য, যে-হরমোন আপনার হাড়ে লোহিত কণিকার উৎপাদনে সহায়তা করে। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বৃক্কগুলোকে “দেহের দক্ষ রসায়নবিদ” বলে অভিহিত করা হয়! *

৭, ৮. (ক) এক অজাত শিশুর প্রাথমিক বৃদ্ধি সম্বন্ধে বর্ণনা করুন। (খ) কোন অর্থে বৃদ্ধিরত এক শিশু “পৃথিবীর অধঃস্থানে শিল্পিত” হয়?

“আমার দেহ [“অস্থি-মজ্জা”, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] তোমা হইতে লুক্কায়িত ছিল না, যখন আমি গোপনে নির্ম্মিত হইতেছিলাম, পৃথিবীর অধঃস্থানে শিল্পিত হইতেছিলাম।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৫) মূল কোষটি বিভক্ত হয়েছিল এবং নতুন কোষগুলো ক্রমাগত বিভক্ত হচ্ছিল। শীঘ্রই কোষগুলো স্নায়ুকোষ, পেশীকোষ, ত্বককোষ এবং অন্যান্য কোষে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য বিভাজিত অথবা স্বতন্ত্র হতে শুরু করেছিল। কলা ও এরপর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠন করার জন্য একই ধরনের কোষগুলো একত্রিত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, গর্ভধারণের তৃতীয় সপ্তাহে আপনার মধ্যে কঙ্কালতন্ত্র গঠিত হতে শুরু করেছিল। আপনার বয়স যখন মাত্র সাত সপ্তাহ এবং আপনার দৈর্ঘ্য মাত্র প্রায় ২.৫ সেন্টিমিটার, তখন ইতিমধ্যেই ২০৬টি প্রাপ্তবয়স্ক হাড়ের প্রাথমিক গঠন হয়ে গিয়েছিল, যদিও তখনও সেগুলো শক্ত হাড়ে পরিণত হয়নি।

এই বিস্ময়কর বৃদ্ধি পাওয়ার প্রক্রিয়া আপনার মায়ের গর্ভে, মানুষের দৃষ্টির অগোচরে হয়েছিল, যেন মাটির নীচে গুপ্ত ছিল। বস্তুতপক্ষে, কীভাবে আমরা বৃদ্ধি পাই, সেই সম্বন্ধে অধিকাংশ বিষয়ই মানুষের কাছে অজানা রয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কোন বিষয়টা বিভাজনের প্রক্রিয়াকে সচল রাখার জন্য আপনার কোষগুলোতে বিদ্যমান নির্দিষ্ট জিনগুলোকে সক্রিয় রেখেছিল? বিজ্ঞান হয়তো একসময় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে কিন্তু দায়ূদ যেমন পরে মন্তব্য করেছিলেন যে, আমাদের নির্মাতা—যিহোবা—সবসময়ই তা পুরোপুরিভাবে জানেন।

৯, ১০. কীভাবে একটা ভ্রূণের ভূমিকার গঠন সম্বন্ধে ঈশ্বরের ‘পুস্তকে লিখিত’ আছে?

“তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল, যখন সে সকলের একটীও ছিল না।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৬) আপনার প্রথম কোষটির মধ্যেই আপনার সম্পূর্ণ দেহের এক পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা বিদ্যমান ছিল। সেই পরিকল্পনাই জন্মের আগে যে-নয় মাস আপনি গর্ভে ছিলেন, তখন এবং এরপর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আপনার বৃদ্ধিতে পরিচালনা দিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে আপনার দেহ অনেকগুলো পর্যায় পার হয়ে এসেছে আর এই সমস্তকিছুই সেই মূল কোষের মধ্যে বিদ্যমান পূর্বোক্ত তথ্যের দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিল।

১০ কোষ এবং জিন সম্বন্ধে দায়ূদের কোনো ধারণাই ছিল না এবং তার কাছে কোনো অণুবীক্ষণ যন্ত্রও ছিল না। কিন্তু, তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তার নিজ দেহের বৃদ্ধি পূর্বপরিকল্পনার এক প্রমাণ ছিল। কীভাবে পিণ্ডাকার অবস্থা বা ভ্রূণ বৃদ্ধি পায়, সেই সম্বন্ধে দায়ূদের হয়তো কিছু জ্ঞান ছিল, তাই তিনি যুক্তি করতে পেরেছিলেন যে, প্রতিটা ধাপ নিশ্চয়ই পূর্বেই বিদ্যমান নকশা ও সময় অনুযায়ী হয়ে থাকে। কাব্যিক ভাষায় তিনি এই নকশাকে ঈশ্বরের ‘পুস্তকে লিখিত’ আছে বলে বর্ণনা করেছিলেন।

১১. কী আমাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে নির্ধারণ করে?

১১ আজকে এটা সবারই জানা যে, আপনার বাবামা ও পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আপনি যে-বৈশিষ্ট্যগুলো—যেমন আপনার উচ্চতা, চেহারা, চোখ ও চুলের রং এবং অন্যান্য হাজার হাজার বৈশিষ্ট্য—পেয়েছেন, সেগুলো আপনার জিনগুলোর দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল। আপনার প্রতিটা কোষে হাজার হাজার জিন রয়েছে আর প্রত্যেকটা জিন ডিএনএ (ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিয়েক আ্যসিড) দ্বারা গঠিত একটা দীর্ঘ চেইনের অংশ। আপনার দেহের গঠন সংক্রান্ত নির্দেশনা আপনার ব্যক্তিগত ডিএনএ-র রাসায়নিক গঠনের মধ্যে “লিখিত।” যতবারই আপনার কোষগুলো—নতুন নতুন কোষ গঠন করার অথবা পুরোনো কোষগুলোকে প্রতিস্থাপন করার জন্য—বিভক্ত হয়, ততবারই আপনার ডিএনএ সেই নির্দেশনাগুলো প্রেরণ করে আর এভাবে আপনাকে সজীব রাখে এবং আপনার মৌলিক রূপকে অক্ষুণ্ণ রাখে। আমাদের স্বর্গীয় নির্মাতার শক্তি ও প্রজ্ঞার কতই না উল্লেখযোগ্য এক উদাহরণ!

আমাদের অদ্বিতীয় মন

১২. কোন বিষয়টা বিশেষভাবে মানুষকে পশুপাখি থেকে পৃথক করে?

১২ “হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান। তাহার সমষ্টি কেমন অধিক! গণনা করিলে তাহা বালুকা অপেক্ষা বহুসংখ্যক হয়।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৭, ১৮ক) পশুপাখিও অপূর্বরূপে নির্মিত এবং কোনো কোনো পশুপাখির এমন অনুভূতি ও ক্ষমতা রয়েছে, যা মানুষেরও নেই। কিন্তু, ঈশ্বর মানুষকে মানসিক ক্ষমতা দিয়েছেন, যা যেকোনো পশু বা পাখির থেকে শ্রেষ্ঠ। “আমরা মানুষরা অনেক দিক দিয়ে যতই অন্যান্য প্রজাতির মতো হই না কেন, ভাষা ও চিন্তা করার ক্ষমতা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা পৃথিবীর জীবিত বস্তুগুলোর মধ্যে অদ্বিতীয়,” বিজ্ঞানের একটি পাঠ্যপুস্তক বলে। “নিজেদের সম্বন্ধে আমাদের গভীর কৌতূহলের ক্ষেত্রেও আমরা অদ্বিতীয়: কীভাবে আমাদের দেহ নির্মিত হয়েছে? কীভাবে আমরা গঠিত হয়েছি?” এই প্রশ্নগুলো নিয়ে দায়ূদও চিন্তা করেছিলেন।

১৩. (ক) কীভাবে দায়ূদ ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করতে পেরেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা দায়ূদের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?

১৩ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল যে, পশুপাখির বৈসাদৃশ্যে আমাদের ঈশ্বরের সংকল্প বা চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করার অদ্বিতীয় ক্ষমতা রয়েছে। * এই বিশেষ উপহারটা হল বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে একটা, যে-উপায়ে আমরা ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে’ সৃষ্ট হয়েছি। (আদিপুস্তক ১:২৭) দায়ূদ এই উপহারের সদ্ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং তার চারপাশের পৃথিবীতে প্রতিফলিত ঈশ্বরের উত্তম গুণাবলির প্রমাণ নিয়ে ধ্যান করেছিলেন। এ ছাড়া, দায়ূদের কাছে পবিত্র শাস্ত্রের প্রথম দিকের বইগুলো ছিল, যেগুলোর মধ্যে ঈশ্বর তাঁর নিজের ও তাঁর কাজগুলো সম্বন্ধে প্রকাশ করেছেন। এই অনুপ্রাণিত লেখাগুলো দায়ূদকে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা, ব্যক্তিত্ব এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করেছিল। শাস্ত্র, সৃষ্টি এবং তার সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ নিয়ে ধ্যান করা দায়ূদকে তার নির্মাতার প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

বিশ্বাসের সঙ্গে যা জড়িত

১৪. ঈশ্বরে বিশ্বাস করার জন্য কেন আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সমস্তকিছু জানার প্রয়োজন নেই?

১৪ সৃষ্টি ও শাস্ত্র নিয়ে দায়ূদ যতই মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করতেন, ততই তিনি বুঝতে পারতেন যে, ঈশ্বরের জ্ঞান ও ক্ষমতা পূর্ণরূপে বোঝা তার সাধ্যের বাইরে। (গীতসংহিতা ১৩৯:৬) আমাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য। আমরা কখনো ঈশ্বরের সমস্ত সৃজনশীল কাজ সম্বন্ধে সবকিছু বুঝতে পারব না। (উপদেশক ৩:১১; ৮:১৭) কিন্তু, শাস্ত্রের মাধ্যমে ও প্রকৃতিতে ঈশ্বর যথেষ্ট জ্ঞান “প্রকাশ করিয়াছেন,” যাতে যেকোনো সময়ে বেঁচে থাকা সত্য অনুসন্ধানকারীরা সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পারে, যা প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে।—রোমীয় ১:১৯, ২০; ইব্রীয় ১১:১, ৩.

১৫. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

১৫ বিশ্বাস থাকার সঙ্গে শুধু এই বিষয়টা স্বীকার করার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত যে, জীবন ও নিখিলবিশ্বের পিছনে অবশ্যই একজন বুদ্ধিমান উৎস রয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত, যিহোবাকে এমন একজন হিসেবে দেখে তাঁর ওপর নির্ভর করা, যিনি চান যে আমরা তাঁকে জানি ও তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখি। (যাকোব ৪:৮) আমরা হয়তো সেই বিশ্বাস ও নির্ভরতার বিষয়ে চিন্তা করতে পারি, যা একজন ব্যক্তির তার প্রেমময় বাবার প্রতি রয়েছে। একজন সন্দেহবাদী ব্যক্তি যদি প্রশ্ন তোলেন যে, আপনার বাবা সংকটের সময়ে আপনাকে আসলেই সাহায্য করবেন কি না, তখন আপনি হয়তো তাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করাতে পারবেন না যে, আপনার বাবা নির্ভরযোগ্য। কিন্তু, অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে আপনি যদি আপনার বাবার উত্তম বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রমাণ পেয়ে থাকেন, তা হলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তিনি আপনাকে হতাশ করবেন না। একইভাবে, শাস্ত্র অধ্যয়ন, সৃষ্টি সম্বন্ধে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা এবং আমাদের প্রার্থনার উত্তর হিসেবে তাঁর সাহায্য লাভ করার মাধ্যমে যিহোবাকে জানা আমাদেরকে তাঁর ওপর নির্ভর করতে অনুপ্রাণিত করে। এটা আমাদেরকে তাঁর সম্বন্ধে আরও জানতে এবং নিঃস্বার্থ প্রেম ও ভক্তি সহকারে চিরকাল তাঁর সেবা করতে অনুপ্রাণিত করে। এটাই হল সবচেয়ে সম্মানীয় উদ্দেশ্য, যা যেকোনো ব্যক্তি অনুধাবন করতে পারে।—ইফিষীয় ৫:১, ২.

আমাদের নির্মাতার নির্দেশনা খুঁজুন!

১৬. যিহোবার সঙ্গে দায়ূদের নিকট সম্পর্ক থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৬ “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।” (গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪) দায়ূদ জানতেন যে, যিহোবা ইতিমধ্যেই তার সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন—তিনি যা চিন্তা করেন, বলেন অথবা করেন, সেই সমস্তকিছুই তার নির্মাতার নখদর্পণে রয়েছে। (গীতসংহিতা ১৩৯:১-১২; ইব্রীয় ৪:১৩) ঈশ্বরের এইরকম গভীর জ্ঞান থাকায় দায়ূদ নিরাপদ বোধ করেছিলেন, ঠিক যেমন একটা ছোট বাচ্চা তার প্রেমময় বাবামার বাহুতে নিরাপদ বোধ করে থাকে। দায়ূদ যিহোবার সঙ্গে এই নিকট সম্পর্ককে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন এবং তাঁর কাজগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার ও তাঁর কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমে তা বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। বস্তুতপক্ষে, দায়ূদের অনেক গীত—ও সেইসঙ্গে ১৩৯ গীত—মূলত এমন প্রার্থনা, যেগুলো গানের আকারে করা হয়েছে। ধ্যান এবং প্রার্থনা আমাদেরও যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করতে পারে।

১৭. (ক) কেন দায়ূদ চেয়েছিলেন যেন যিহোবা তার হৃদয় পরীক্ষা করেন? (খ) আমরা যেভাবে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করি, তা কীভাবে আমাদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে?

১৭ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হওয়ায় আমাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছা দেওয়া হয়েছে। আমরা ভাল অথবা মন্দ কাজ করা বেছে নিতে পারি। সেই স্বাধীনতার সঙ্গে নৈতিকভাবে নিকাশ দেওয়ার বিষয়টাও জড়িত। দায়ূদ দুষ্টদের শ্রেণীভুক্ত হতে চাননি। (গীতসংহিতা ১৩৯:১৯-২২) তিনি বেদনাদায়ক ভুলগুলো করা এড়িয়ে চলতে চেয়েছিলেন। তাই, যিহোবার সামগ্রিক জ্ঞান নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করার মাধ্যমে দায়ূদ নম্রভাবে ঈশ্বরকে বলেছিলেন, যেন তিনি তার ভিতরের ব্যক্তিত্বকে পরীক্ষা করেন এবং তাকে সেই পথে পরিচালনা দেন, যা তাকে জীবনের পথে নিয়ে যায়। ঈশ্বরের ধার্মিক নৈতিক মানগুলো সকলের প্রতি প্রযোজ্য; তাই আমাদেরও সঠিক বাছাইগুলো করতে হবে। যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে তাঁর বাধ্য হওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দেন। তা করা আমাদের জন্য তাঁর অনুগ্রহ ও অনেক সুফল নিয়ে আসে। (যোহন ১২:৫০; ১ তীমথিয় ৪:৮) প্রতিদিন ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা আমাদের মনের শান্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে আর তা এমনকি গুরুতর সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হলেও।—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

আমাদের অপূর্ব নির্মাতাকে অনুসরণ করুন!

১৮. সৃষ্টি সম্বন্ধে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করে দায়ূদ কোন উপসংহারে পৌঁছেছিলেন?

১৮ একজন অল্পবয়স্ক হিসেবে দায়ূদ প্রায়ই বাইরে থাকতেন, মেষপাল চরাতেন। মেষগুলো মাথা নিচু করে ঘাস খেত কিন্তু তিনি আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকাতেন। সন্ধ্যার সময় দায়ূদ নিখিলবিশ্বের মহিমা ও এই সমস্তকিছুর অর্থ কী, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে,” দায়ূদ লিখেছিলেন। “দিবস দিবসের কাছে বাক্য উচ্চারণ করে, রাত্রি রাত্রির কাছে জ্ঞান প্রচার করে।” (গীতসংহিতা ১৯:১, ২) দায়ূদ বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার সেই ব্যক্তিকে অনুসন্ধান ও অনুসরণ করা উচিত, যিনি সমস্তকিছু অপূর্বভাবে নির্মাণ করেছেন। আমাদেরও একই বিষয় করতে হবে।

১৯. “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত” হওয়া থেকে যুবক এবং বৃদ্ধ সকলে কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারে?

১৯ দায়ূদ সেই পরামর্শ মেনে চলার দ্বারা এক উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, যা তার ছেলে শলোমন পরবর্তী সময়ে যুবক-যুবতীদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “আর তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর, . . . ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।” (উপদেশক ১২:১, ১৩) একজন অল্পবয়স্ক হিসেবে দায়ূদ ইতিমধ্যেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তিনি “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত।” এই অন্তর্দৃষ্টি অনুযায়ী জীবনযাপন করা সারাজীবন ধরে তার জন্য প্রচুর উপকার নিয়ে এসেছিল। যুবক এবং বৃদ্ধ হিসেবে আমরা যদি আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা ও সেবা করি, তা হলে আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জীবন আনন্দদায়ক হবে। যারা যিহোবার নিকটে থাকে এবং তাঁর ধার্মিক পথ অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তাদের সম্বন্ধে বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “তাহারা বৃদ্ধ বয়সেও ফল উৎপন্ন করিবে, তাহারা সরস ও তেজস্বী হইবে; তদ্দ্বারা প্রচারিত হইবে যে, সদাপ্রভু সরল।” (গীতসংহিতা ৯২:১৪, ১৫) আর আমাদের নির্মাতার অপূর্ব কাজগুলো চিরকাল ধরে উপভোগ করার আশা আমাদের থাকবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০৪ সালের ২২শে জুন সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকা দেখুন।

^ এ ছাড়া, ১৯৯৭ সালের ৮ই আগস্ট সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “আপনার বৃক্কগুলো—আপনার জীবনের পরিশোধক” নামক প্রবন্ধটাও দেখুন।

^ গীতসংহিতা ১৩৯:১৮খ পদে বলা দায়ূদের কথাগুলোর অর্থ আপাতদৃষ্টিতে এইরকম মনে হয় যে, রাতে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত সারাদিন তিনি যদি যিহোবার চিন্তাভাবনা গণনা করতে ব্যয় করেন, তারপরেও সকালে ঘুম থেকে উঠে গণনা করার মতো তার আরও অনেক বিষয় থাকবে।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• একটা ভ্রূণ যেভাবে বৃদ্ধি পায়, তা কীভাবে দেখায় যে আমরা “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত”?

• কেন আমাদের যিহোবার চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করা উচিত?

• কীভাবে বিশ্বাস ও যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

গর্ভের মধ্যে একটা শিশুর বৃদ্ধি পূর্বনির্ধারিত একটা নকশা অনুসরণ করে

ডিএনএ

[সৌজন্যে]

অজাত ভ্রূণ: Lennart Nilsson

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন প্রেমময় বাবার ওপর নির্ভর করে এমন সন্তানদের মতো আমাদেরও যিহোবার ওপর আস্থা রয়েছে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার হস্তকৃত কাজ নিয়ে চিন্তা করা দায়ূদকে তাঁর প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল