সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চিরন্তন মূল্যবোধগুলোর দ্বারা আবদ্ধ

চিরন্তন মূল্যবোধগুলোর দ্বারা আবদ্ধ

চিরন্তন মূল্যবোধগুলোর দ্বারা আবদ্ধ

 সমস্ত মানবসমাজই কোনো না কোনো ধরনের নৈতিক মান গ্রহণ করে থাকে। আপনি কি এই বিষয়ে একমত হবেন না যে, পৃথিবীর সর্বত্রই সততা, দয়া, সমবেদনা এবং নিঃস্বার্থ মনোভাবের মতো গুণগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করা হয় এবং আমাদের অধিকাংশের কাছেই এই গুণগুলো কাম্য?

এই নৈতিক মূল্যবোধগুলোর উৎস কী?

সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে শৌল নামে একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি, যিহুদি, গ্রিক এবং রোমীয় এই তিনটে সাংস্কৃতির প্রভাব বিস্তারকারী নৈতিক মূল্যবোধগুলো পরিব্যাপ্ত থাকার সময়ে বাস করতেন। সেই সংস্কৃতিগুলোর জটিল প্রথা এবং আইনগুলোর পাশাপাশি, শৌল উপলব্ধি করেছিলেন যে, অধিকাংশ মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এক নৈতিক মূল্যবোধের দ্বারা পরিচালিত হয়। আর সেটা হল আমাদের বিবেক। শৌল, খ্রিস্টান প্রেরিত পৌল হওয়ার পর লিখেছিলেন: “যে পরজাতিরা কোন ব্যবস্থা পায় নাই, তাহারা যখন স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী [“সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী,” দা নিউ টেস্টামেন্ট ইন মর্ডান স্পিচ] আচরণ করে, তখন কোন ব্যবস্থা না পাইলেও আপনাদের ব্যবস্থা আপনারাই হয়; যেহেতুক তাহারা ব্যবস্থার কার্য্য আপন আপন হৃদয়ে লিখিত বলিয়া দেখায়, তাহাদের সংবেদও সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষ্য দেয়।”—রোমীয় ২:১৪, ১৫.

কিন্তু, যখন আমরা কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করি, তখন কি “সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী” পরিচালিত হওয়াই আমাদের জন্য যথেষ্ট? যেমন আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন, ব্যক্তিবিশেষ বা দলগত ব্যর্থতার দ্বারা মানব ইতিহাস পরিপূর্ণ। এটা অনেক ব্যক্তিকে প্রত্যয়ী করেছে যে, জীবনধারণের সর্বোত্তম মূল্যবোধগুলো প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের এক উন্নত উৎস থেকে নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে। অনেকেই এই বিষয়ে একমত হবে যে, মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা এইরকম চিরন্তন মানগুলো সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থানে রয়েছেন। অনাবিষ্কৃত সত্তা (ইংরেজি) নামক তার বইয়ে ড. কার্ল জাং উল্লেখ করেন: “যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের দ্বারা আবদ্ধ নন, তিনি তার নিজের শক্তিতে জগতের শক্তিশালী দৈহিক ও নৈতিক প্রলোভনগুলো থেকে নিজেকে প্রতিহত করতে পারেন না।”

ওই উপসংহার একজন প্রাচীন ভাববাদী যা লিখেছিলেন, তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ: “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) আমাদের সৃষ্টিকর্তা বলেন: “আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।”—যিশাইয় ৪৮:১৭.

বিশ্বাসযোগ্য মূল্যবোধগুলোর এক নির্ভরযোগ্য উৎস

সবেমাত্র উদ্ধৃত করা কথাগুলো সবচেয়ে বেশি বিতরিত নৈতিক মূল্যবোধগুলোর উৎস—পবিত্র শাস্ত্রে—পাওয়া যায়। পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোক, এমনকি ন-খ্রিস্টীয় ও ধর্মপ্রাণ নয় এমন ব্যক্তিরাও অন্তর্দৃষ্টি ও প্রজ্ঞার জন্য শাস্ত্রের মধ্যে সাহায্য খুঁজেছে। জার্মান কবি ইয়োহান ভল্ফগাং ভন গয়েথ লিখেছিলেন: “আমি [বাইবেলকে] ভালবাসি ও শ্রদ্ধা করি, কারণ আমার প্রায় সমস্ত নৈতিক ধারণাই বাইবেলের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।” হিন্দু নেতা মোহনদাস গান্ধী এটা বলেছিলেন বলে রিপোর্ট করা হয়েছে: “পর্বতেদত্ত উপদেশের [বাইবেলে প্রাপ্ত যিশু খ্রিস্টের শিক্ষার অংশ] মধ্যে থাকা ঝরনার জল যা আপনাকে দেওয়া হয়েছে তা পান করুন . . . কারণ সেই উপদেশের শিক্ষা আমাদের প্রত্যেকের জন্য দেওয়া হয়েছিল।”

পূর্বে উদ্ধৃত প্রেরিত পৌল, দৃঢ় মূল্যবোধগুলো প্রদান করার ক্ষেত্রে পবিত্র শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্বন্ধে জোর দিয়েছিলেন, এই বলে: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি . . . উপকারী।” (২ তীমথিয় ৩:১৬) সত্যিই কি তাই?

আপনি নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন না কেন? পরের পৃষ্ঠায় তালিকাবদ্ধ নীতিগুলো পরীক্ষা করুন। সেগুলো যে-ইতিবাচক মূল্যবোধগুলো বৃদ্ধি করে, তা দেখুন। এই শিক্ষাগুলোর অন্তর্ভুক্ত ধারণাগুলো কীভাবে আপনার জীবন ও অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের গুণগত মানকে উন্নত করার ক্ষমতা রাখে, সেই সম্বন্ধে ধ্যান করুন।

আপনি কি উপকৃত হবেন?

তালিকাবদ্ধ নীতিগুলো হল পবিত্র শাস্ত্রে পাওয়া ব্যবহারিক পরামর্শের মধ্যে শুধুমাত্র কয়েকটা উদাহরণ। এগুলোর পাশাপাশি, আমাদের জীবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এমন মন্দ চিন্তা, কথাবার্তা এবং কাজের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বাক্যে অগণিত সতর্কবাণী রয়েছে।—হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯.

হ্যাঁ, বাইবেলের শিক্ষাগুলো এমন কিছু প্রদান করে, সামগ্রিকভাবে মানবসমাজে যেগুলোর খুবই অভাব রয়েছে আর সেগুলো হচ্ছে সেই পরামর্শ যেগুলো লোকেদের যথাসম্ভব সর্বোত্তম নৈতিক মানগুলো গড়ে তুলতে সক্ষম করে। যারা এই শিক্ষাগুলো গ্রহণ ও প্রয়োগ করে, তাদের মধ্যে এক তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে থাকে। তাদের চিন্তাভাবনার উন্নতি ঘটে। (ইফিষীয় ৪:২৩, ২৪) তাদের উদ্দেশ্যগুলো উন্নত হয়। বাইবেলে বর্ণিত ঈশ্বরের মূল্যবোধগুলো শেখা অনেককে তাদের হৃদয় থেকে জাতিভেদ, প্রতিকূল ধারণা এবং ঘৃণার মূল উপড়ে ফেলতে সাহায্য করেছে। (ইব্রীয় ৪:১২) শাস্ত্র যে-মূল্যবোধগুলোকে গড়ে তুলতে উৎসাহ দেয়, সেগুলো লোকেদেরকে সমস্ত ধরনের দৌরাত্ম্য এবং দুষ্টতাকে পরিত্যাগ করতে এবং আরও ভালো ব্যক্তি হতে পরিচালিত করেছে।

হ্যাঁ, বাইবেলের মূল্যবোধগুলো লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে তাদের মধ্যে গভীরভাবে গেঁথে থাকা সেই অভ্যাস এবং কাজগুলোকে ছাড়তে সাহায্য করেছে, যেগুলো অন্যদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) বাইবেলের শিক্ষাগুলো এই ধরনের ব্যক্তিদের—শুধুমাত্র অভ্যাসই নয় কিন্তু তাদের হৃদয়ে, তাদের আশায় এবং তাদের পরিবারের মধ্যেও পরিবর্তন ঘটিয়েছে। জগতের যতই অধঃপতন ঘটুক না কেন, পৃথিবীব্যাপী লোকেরা ভাল ব্যক্তি হওয়ার জন্য পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। আর এটা কোনোভাবে থামবে না। “তৃণ শুষ্ক হইয়া যায়, পুষ্প ম্লান হইয়া পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।”—যিশাইয় ৪০:৮.

কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে আপনি কি “ঈশ্বরের বাক্য” থেকে উপকৃত হতে পারেন? যিহোবার সাক্ষিরা আপনাকে এটা দেখাতে পেরে খুশি হবে যে, আপনার উপকারের জন্য বাইবেলের মূল্যবোধগুলোকে কীভাবে গ্রহণ করা যায়। এই মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করার অর্থ হল, এখন ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা এবং তা ঐশিক চিরন্তন নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত এক স্থায়ী জীবনের দিকে নিয়ে যাবে।

[৬, ৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

চিরন্তন নীতিগুলো

সুবর্ণ নিয়ম। “অতএব সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও; কেননা ইহাই ব্যবস্থার ও ভাববাদি-গ্রন্থের সার।”—মথি ৭:১২.

আপনার প্রতিবেশীকে প্রেম করুন। “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৯) “প্রেম প্রতিবাসীর অনিষ্ট সাধন করে না, অতএব প্রেমই ব্যবস্থার পূর্ণসাধন।”—রোমীয় ১৩:১০.

অন্যদেরকে সম্মান করুন। “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—রোমীয় ১২:১০.

শান্তি রাখার চেষ্টা করুন। “পরস্পর শান্তিতে থাক।” (মার্ক ৯:৫০) “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।” (রোমীয় ১২:১৮) “যে যে বিষয় শান্তিজনক, . . . আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি।”—রোমীয় ১৪:১৯.

ক্ষমাশীল হোন। “আমাদের অপরাধ [“ঋণ,” পাদটীকা] সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে [“ঋণীদিগকে,” পাদটীকা] ক্ষমা করিয়াছি।” (মথি ৬:১২) “তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর।”—ইফিষীয় ৪:৩২.

অনুগত হোন, বিশ্বস্ত হোন। “তোমার নিজ স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত হও এবং একা তাকেই তোমার ভালবাসা দাও। . . . তোমার স্ত্রীর সঙ্গে সুখী হও এবং তুমি যাকে বিয়ে করেছ, সেই মেয়ের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নাও . . . তার সৌন্দর্য তোমাকে সুখী করুক; সে তোমাকে ভালবাসা দিয়ে রাখুক। . . . কেন তুমি অন্য নারীর প্রতি তোমার ভালবাসা দেবে? অন্যের স্ত্রীর সৌন্দর্যকে তুমি কেন পছন্দ করবে?” (হিতোপদেশ ৫:১৫-২০, টুডেজ ইংলিশ ভারসন) “যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত; আর যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে অধার্ম্মিক, সে প্রচুর বিষয়েও অধার্ম্মিক।” (লূক ১৬:১০) “ধনাধ্যক্ষের এই গুণ চাই, যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায়।”—১ করিন্থীয় ৪:২.

সৎ হোন। “দুষ্টতার নিক্তিতে ও ছলনার বাট্‌খারায় আমি কি বিশুদ্ধ হইব?” (মীখা ৬:১১) “আমরা নিশ্চয় জানি, আমাদের সৎসংবেদ আছে, সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে বাঞ্ছা করিতেছি।”—ইব্রীয় ১৩:১৮.

সত্যবাদী, ন্যায্য হোন। “মন্দকে ঘৃণা কর ও উত্তমকে ভালবাস, এবং নগর-দ্বারে ন্যায়বিচার স্থাপন কর।” (আমোষ ৫:১৫) “আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলিও, তোমাদের নগর-দ্বারে সত্য ও শান্তিজনক বিচার করিও।” (সখরিয় ৮:১৬) “তোমরা, যাহা মিথ্যা, তাহা ত্যাগ করিয়া প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও।”—ইফিষীয় ৪:২৫.

পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী হোন। “তুমি কি কোন ব্যক্তিকে তাহার ব্যাপারে তৎপর দেখিতেছ? সে রাজগণের সাক্ষাতে দাঁড়াইবে।” (হিতোপদেশ ২২:২৯) “যত্নে শিথিল হইও না।” (রোমীয় ১২:১১) “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] কর্ম্ম বলিয়া কর।”—কলসীয় ৩:২৩.

মৃদু, করুণাপূর্ণ এবং মধুর ভাবপূর্ণ বা সদয় হোন। “তোমরা, . . . করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর।”—কলসীয় ৩:১২.

উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় করুন। “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও।” (মথি ৫:৪৪) “তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।”—রোমীয় ১২:২১.

ঈশ্বরকে আপনার সর্বোত্তমটুকু দিন। “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,’ এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা।”—মথি ২২:৩৭, ৩৮.

[চিত্রগুলো]

বাইবেলের মূল্যবোধগুলো গ্রহণ করা আমাদেরকে সফল বিবাহ, সুখী পারিবারিক সম্পর্ক এবং অটুট বন্ধুত্ব উপভোগ করার জন্য সাহায্য করতে পারে