সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবর্তনশীল মূল্যবোধগুলোর এক সমুদ্রে ভাসমান

পরিবর্তনশীল মূল্যবোধগুলোর এক সমুদ্রে ভাসমান

পরিবর্তনশীল মূল্যবোধগুলোর এক সমুদ্রে ভাসমান

 একটা জনপ্রিয় উপকথা বলে যে, তিনি দিনের আলোতে একটা লণ্ঠন হাতে নিয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধভাবে একজন ধার্মিক ব্যক্তির খোঁজে ঘুরতেন কিন্তু তার সেই সন্ধান ব্যর্থ হয়েছিল। তার নাম ছিল ডায়াজিনিস, একজন বিখ্যাত দার্শনিক, যিনি সা.কা.পূ. চতুর্থ শতাব্দীতে এথেন্সে বাস করতেন।

সেই উপকথাটা সত্য কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তা সত্ত্বেও, আজকে ডায়াজিনিস যদি জীবিত থাকতেন আর তিনি যদি নীতিবান লোকেদের খোঁজার জন্য আরও কঠোর পরিশ্রমও করতেন, তা হলে তা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় হতো না। অনেকে এই বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে বলে মনে হয় যে, লোকেদের কোনো একটা নির্দিষ্ট নৈতিক মূল্যবোধকে গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। প্রায়ই প্রচারমাধ্যমগুলো ব্যক্তিগত জীবনের, সরকার ব্যবস্থায়, পেশায়, খেলাধূলায়, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের নৈতিক ত্রুটিগুলোর দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে থাকে। অতীত প্রজন্মের সযত্নে লালিত বহু মূল্যবোধকে এখন আর সম্মানের চোখে দেখা হয় না। প্রতিষ্ঠিত মানগুলোকে পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং প্রায়ই প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। অন্যান্য মূল্যবোধকে মতবাদ হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয় কিন্তু কাজে লাগানো হয় না।

“সাধারণভাবে গৃহীত নৈতিক মানগুলোর দিন শেষ হয়ে গিয়েছে,” ধর্ম সংক্রান্ত সমাজবিজ্ঞানী আ্যলেন ওল্ফ বলেন। তিনি এও বলেছিলেন বলে উদ্ধৃতি করা হয়েছে: “ইতিহাসে আর কোনো যুগেই এইরকম চিন্তাভাবনা ছিল না যে, তাদেরকে নৈতিকভাবে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য লোকেরা পরম্পরাগত রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করতে পারে না।” বিগত ১০০ বছর সম্পর্কে লস আ্যঞ্জেলস টাইমস খবরের কাগজ, দার্শনিক জোনাথন গ্লোভারের পর্যবেক্ষণের ওপর মন্তব্য করে যে, ধর্মের অধঃপতন এবং সর্বজনীন নৈতিক আইনগুলো সমগ্র বিশ্বকে দৌরাত্ম্যে নিমজ্জিত করার ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা পালন করে।

তবে, সাধারণভাবে গৃহীত এইরকম মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে বিভ্রান্তি, কিছু লোককে একটা নৈতিক মান খোঁজা থেকে বিরত করতে পারেনি। অল্প কয়েক বছর আগে, ইউনেস্কো-র প্রাক্তন মহাপরিচালক ফেডেরিকো মেয়র বলেছিলেন যে, “অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে নীতিবিদ্যা এখন বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।” কিন্তু, ইতিবাচক মূল্যবোধগুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে জগৎ ব্যর্থ হয়েছে মানে এই নয় যে, গঠনমূলক মূল্যবোধগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই, যেগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে এবং যেগুলো গ্রহণ করা উচিত।

তা সত্ত্বেও, সব লোক কি এই বিষয়ে একমত হতে পারে যে, কোন মানগুলোকে গ্রহণ করা যায়? অবশ্যই নয়। আর কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, সেই বিষয়ে যদি সর্বসম্মত কোনো মান না থাকে, তা হলে কীভাবে কোনো ব্যক্তি কোনো মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করতে পারবে? এই ধরনের নৈতিক সাপেক্ষবাদ বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও, আপনি দেখতে পাবেন যে, এইরকম মনোভাব সাধারণভাবে নৈতিকতার কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি।

ব্রিটিশ ইতিহাসবেত্তা পল জনসন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, সাপেক্ষবাদের এই দর্শনবিদ্যা, আপাতদৃষ্টিতে বিংশ শতাব্দী শুরুর আগে প্রচলিত ছিল এমন ‘প্রতিষ্ঠিত ও নিরপেক্ষভাবে সত্য নৈতিক মানের প্রতি ব্যক্তিগত গভীর দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধকে নষ্ট করে দিতে’ সাহায্য করেছে।

তা হলে, ‘নিরপেক্ষভাবে সত্য নৈতিক মান’ খুঁজে পাওয়া বা ‘সর্বজনীন নৈতিক আইনগুলোর’ দ্বারা জীবনযাপন করা কি সম্ভব? এমন কোনো কর্তৃপক্ষ কি আছেন, যিনি সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য, অপরিবর্তনীয় মূল্যবোধগুলো জোগাতে পারেন, যেগুলো আমাদের জীবনে স্থিরতা এনে দিতে পারে ও ভবিষ্যতের জন্য আশা দিতে পারে? পরের প্রবন্ধ এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করবে।