সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা আপনার বাধ্যতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন

যিহোবা আপনার বাধ্যতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন

যিহোবা আপনার বাধ্যতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন

“বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর।”—হিতোপদেশ ২৭:১১.

১. কোন মনোভাব আজকের সমাজে চারিদিকে ছেয়ে রয়েছে?

 স্বাধীনচেতা ও অবাধ্যতার এক মনোভাব আজকে জগতের চারিদিকে ছেয়ে রয়েছে। প্রেরিত পৌল ইফিষীয় খ্রিস্টানদের কাছে লেখা তার চিঠিতে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন: “তোমরা পূর্ব্বে চলিতে, এই জগতের যুগ অনুসারে, আকাশের কর্ত্তৃত্বাধিপতির অনুসারে, যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মার অধিপতির অনুসারে চলিতে।” (ইফিষীয় ২:১, ২) হ্যাঁ, আপনি হয়তো বলতে পারেন ‘আকাশের কর্ত্তৃত্বাধিপতি’ শয়তান দিয়াবল অবাধ্যতার মনোভাব দ্বারা সমস্ত জগৎকে সংক্রামিত করেছে। প্রথম শতাব্দীতেও সে একই কাজ করছিল এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে স্বর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর থেকে সে আরও তীব্রভাবে তা-ই করে আসছে।—প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.

২, ৩. যিহোবার বাধ্য হওয়ার কোন কারণগুলো আমাদের রয়েছে?

কিন্তু, খ্রিস্টান হিসেবে আমরা জানি যে যিহোবা ঈশ্বর আমাদের আন্তরিক বাধ্যতা পাওয়ার যোগ্য কারণ তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, জীবনের রক্ষাকর্তা, প্রেমময় স্বামীন বা সার্বভৌম এবং আমাদের উদ্ধারকর্তা। (গীতসংহিতা ১৪৮:৫, ৬; প্রেরিত ৪:২৪; কলসীয় ১:১৩; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) মোশির দিনের ইস্রায়েলীয়রা জানত যে, যিহোবা ছিলেন তাদের জীবনদাতা ও তাদের নিস্তারকর্তা। তাই, মোশি তাদেরকে বলেছিলেন: “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যেমন আজ্ঞা করিলেন, তাহা যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৩২) হ্যাঁ, যিহোবা তাদের বাধ্যতা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু, শীঘ্রই তারা তাদের সার্বভৌমের অবাধ্য হয়েছিল।

নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের আজ্ঞাপালন অথবা বাধ্যতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? একবার ঈশ্বর ভাববাদী শমূয়েলের মাধ্যমে রাজা শৌলকে বলেছিলেন: “বলিদান অপেক্ষা আজ্ঞাপালন উত্তম।” (১ শমূয়েল ১৫:২২, ২৩) কেন?

যেকারণে বাধ্যতা ‘বলিদান অপেক্ষা উত্তম’

৪. কোন অর্থে আমরা যিহোবাকে কিছু দিতে পারি?

সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, যিহোবা ইতিমধ্যেই আমাদের সমস্ত বস্তুগত সম্পদের মালিক। তা হলে, এমন কিছু কি আছে, যা আমরা তাঁকে দিতে পারি? হ্যাঁ, আমরা তাঁকে অত্যন্ত মূল্যবান কিছু দিতে পারি। সেটা কী? এই উপদেশ থেকে আমরা এর উত্তর পেতে পারি: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতোপদেশ ২৭:১১) আমরা ঈশ্বরকে আমাদের বাধ্যতা দিতে পারি। যদিও আমাদের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও পটভূমি রয়েছে কিন্তু বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকে শয়তানের এই বিদ্বেষপূর্ণ দাবির উত্তর দিতে পারি যে, পরীক্ষার মুখোমুখি হলে মানুষ ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকবে না। এটা কী এক বিশেষ সুযোগ!

৫. কীভাবে অবাধ্যতা সৃষ্টিকর্তাকে প্রভাবিত করে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

আমরা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকি, সেগুলোর প্রতি ঈশ্বর আগ্রহী। আমরা যদি অবাধ্য হই, তা হলে সেটা তাঁকে প্রভাবিত করে। কীভাবে? যেকাউকে এইরকম মূর্খতাপূর্ণ পথ গ্রহণ করতে দেখে তিনি কষ্ট পান। (গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১) ধরুন, একজন ডায়াবিটিস রোগী তার উপকারের জন্য নির্ধারিত এক স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা কঠোরভাবে মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং যেগুলো তার জন্য ক্ষতিকর সেগুলো খেয়ে চলেছেন। এতে তার যত্নশীল চিকিৎসক কেমন বোধ করবেন? আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, মানুষ যখন যিহোবার অবাধ্য হয়, তখন তিনি কষ্ট পান কারণ জীবনের জন্য তাঁর নির্দেশনা উপেক্ষা করার পরিণতিগুলো সম্বন্ধে তিনি জানেন।

৬. কী আমাদেরকে ঈশ্বরের বাধ্য থাকতে সাহায্য করবে?

কী আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে বাধ্য হতে সাহায্য করবে? আমাদের প্রত্যেকের ঈশ্বরের কাছে “বুঝিবার [“বাধ্য,” NW] চিত্ত” চাওয়া উপযুক্ত, যেমন রাজা শলোমন চেয়েছিলেন। তিনি এইরকম এক হৃদয় চেয়েছিলেন, যাতে তিনি তার সহইস্রায়েলীয়দের বিচার করার জন্য “ভাল মন্দের বিশেষ জানিতে” পারেন। (১ রাজাবলি ৩:৯) আমরা যদি অবাধ্যতার মনোভাবে পূর্ণ এক জগতে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে চাই, তা হলে আমাদেরও “বাধ্য চিত্ত” প্রয়োজন। ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর বাক্য, বাইবেল অধ্যয়ন সহায়ক, খ্রিস্টীয় সভাগুলো এবং মণ্ডলীর যত্নশীল প্রাচীনদের জুগিয়েছেন, যাতে আমরা “বাধ্য চিত্ত” গড়ে তুলতে পারি। আমরা কি এই ধরনের প্রেমময় ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করছি?

৭. কেন যিহোবা বলিদানের চেয়ে বাধ্যতার ওপর বেশি জোর দেন?

এই প্রসঙ্গে স্মরণ করে দেখুন, অতীতে যিহোবা তাঁর প্রাচীন লোকেদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে, পশুবলির চেয়ে বাধ্যতা এমনকি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (হিতোপদেশ ২১:৩, ২৭; হোশেয় ৬:৬; মথি ১২:৭) যেখানে যিহোবাই তাঁর লোকেদেরকে এই ধরনের বলিদান করতে আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সেখানে কেন তিনিই এই কথা বলেছিলেন? আসলে, যে-ব্যক্তি বলি উৎসর্গ করছেন, তার উদ্দেশ্য কী? তিনি কি ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য তা করছেন? নাকি তিনি কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন? একজন উপাসক যদি সত্যিই ঈশ্বরকে খুশি করতে আকাঙ্ক্ষী হন, তা হলে ঈশ্বরের সমস্ত আজ্ঞার প্রতি বাধ্য হওয়ার বিষয়ে তিনি যত্নশীল হবেন। ঈশ্বরের পশুবলির কোনো প্রয়োজন নেই কিন্তু আমাদের বাধ্যতাই এমন এক মূল্যবান বিষয়, যা আমরা তাঁকে দিতে পারি।

সতর্কতামূলক এক উদাহরণ

৮. কেন ঈশ্বর শৌলকে রাজা হিসেবে অগ্রাহ্য করেছিলেন?

রাজা শৌল সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ বাধ্যতার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে। রাজা শৌল শুরুতে একজন নম্র ও বিনয়ী শাসক ছিলেন, ‘আপনার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ছিলেন।’ কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গর্ব ও মিথ্যা যুক্তি তার সিদ্ধান্তগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল। (১ শমূয়েল ১০:২১, ২২; ১৫:১৭) একবার শৌল পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন। শমূয়েল রাজাকে তার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, যেন তিনি এসে যিহোবার কাছে বলি উৎসর্গ করতে এবং তাকে আরও নির্দেশনা দিতে পারেন। কিন্তু, শমূয়েল যে-সময়ে আসবে বলে মনে করা হয়েছিল, সেই সময়ে আসেননি আর এতে লোকেরা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করেছিল। তা দেখার পর, শৌল “হোমবলি উৎসর্গ করিলেন।” এটা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করেছিল। অবশেষে শমূয়েল যখন এসেছিলেন, তখন রাজা এই বলে তার অবাধ্যতার অজুহাত দেখিয়েছিলেন যে, শমূয়েল আসতে দেরি করেছেন বলে তিনি যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য, “ইচ্ছা না থাকিলেও” বলি উৎসর্গ করেছেন। রাজা শৌলের কাছে, বলি উৎসর্গ করতে শমূয়েলের জন্য অপেক্ষা করার যে-নির্দেশনা তিনি লাভ করেছিলেন, সেটার বাধ্য হওয়ার চেয়ে বরং বলি উৎসর্গ করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শমূয়েল তাকে বলেছিলেন: “তুমি অজ্ঞানের কর্ম্ম করিয়াছ; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে আজ্ঞা দিয়াছেন, তাহা পালন কর নাই।” যিহোবার অবাধ্য হওয়ায় শৌলকে তার রাজপদ হারাতে হয়েছিল।—১ শমূয়েল ১০:৮; ১৩:৫-১৩.

৯. কীভাবে শৌল ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার নমুনা প্রকাশ করেছিলেন?

এই অভিজ্ঞতা থেকে রাজা কি কোনো শিক্ষা লাভ করেছিলেন? না! পরবর্তী সময়ে, যিহোবা শৌলকে অমালেক জাতিকে নিঃশেষে বিনষ্ট করার আদেশ দিয়েছিলেন, যারা এর আগে কোনো কারণ ছাড়াই ইস্রায়েলকে আক্রমণ করেছিল। শৌলের এমনকি তাদের গবাদি পশুপালকেও রেহাই দেওয়া উচিত ছিল না। তিনি ‘হবীলা অবধি শূর পর্য্যন্ত অমালেককে আঘাত করিবার’ দ্বারা বাধ্য হয়েছিলেন। শমূয়েল যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন, তখন রাজা তার বিজয়ের কারণে উৎফুল্ল হয়ে বলেছিলেন: “আপনি সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদের পাত্র; আমি সদাপ্রভুর বাক্য পালন করিয়াছি।” কিন্তু, তারা যে-স্পষ্ট নির্দেশনাগুলো পেয়েছিল, সেগুলোর বিপরীতে শৌল ও তার লোকেরা রাজা অগাগকে এবং ‘উত্তম মেষ ও গোরু ও পুষ্ট গোবৎস এবং মেষশাবকগুলি ও সমস্ত উত্তম বস্তু’ জীবিত রেখেছিল। রাজা শৌল এই কথা বলার মাধ্যমে তার অবাধ্যতার কাজকে ন্যায্য বলে দেখাতে চেয়েছিলেন: “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিবার জন্য লোকেরা উত্তম উত্তম মেষের ও গোরুর প্রতি দয়া করিয়াছে।”—১ শমূয়েল ১৫:১-১৫.

১০. শৌল কোন শিক্ষাটা লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

১০ এর ফলে, শমূয়েল শৌলকে বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর রবে অবধান করিলে যেমন, তেমন কি হোমে ও বলিদানে সদাপ্রভু প্রসন্ন হন? দেখ, বলিদান অপেক্ষা আজ্ঞাপালন উত্তম, এবং মেষের মেদ অপেক্ষা অবধান করা উত্তম।” (১ শমূয়েল ১৫:২২) যেহেতু যিহোবা সেই পশুগুলোকে ধ্বংস করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাই সেগুলো বলি হিসেবে উৎসর্গের জন্য গ্রহণযোগ্য ছিল না।

সমস্ত বিষয়ে বাধ্য হোন

১১, ১২. (ক) আমাদের উপাসনার মাধ্যমে যিহোবাকে খুশি করার প্রচেষ্টাকে তিনি কীভাবে দেখেন? (খ) কীভাবে একজন ব্যক্তি এই চিন্তার দ্বারা নিজেকে প্রতারিত করতে পারেন যে, প্রকৃতপক্ষে অবাধ্য হয়েও তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছেন?

১১ যিহোবা তাঁর অনুগত দাসদের দেখে কতই না আনন্দিত হন, যারা তাড়না সত্ত্বেও স্থির থাকে, অধিকাংশ লোকের উদাসীনতা সত্ত্বেও রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করে এবং জীবিকার্জনের চাপ বোধ করা সত্ত্বেও খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেয়! আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে আমাদের বাধ্যতা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে! যিহোবাকে উপাসনা করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা তাঁর কাছে মূল্যবান, যখন তা প্রেমের বশবর্তী হয়ে করা হয়। মানুষ হয়তো আমাদের কঠোর পরিশ্রমকে উপেক্ষা করতে পারে কিন্তু ঈশ্বর আমাদের আন্তরিক উৎসর্গগুলো লক্ষ করেন এবং সেগুলো স্মরণে রাখেন।—মথি ৬:৪.

১২ তবে, আমাদের ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণরূপে প্রীতিজনক হতে হলে, আমাদেরকে অবশ্যই জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে বাধ্য থাকতে হবে। আমরা কখনো এমন চিন্তার দ্বারা নিজেদেরকে প্রতারিত করব না যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জীবনের অন্যান্য দিকে তাঁকে উপাসনা করে যাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঈশ্বরের চাহিদাগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা স্বাধীনতা পেতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো এই চিন্তা করে নিজেকে প্রতারিত করতে পারেন যে, তিনি যদি নিয়মমাফিক উপাসনা করে চলেন, তা হলে অনৈতিকতা করে অথবা অন্যান্য গুরুতর অন্যায় কাজগুলোতে জড়িত হয়ে রেহাই পেতে পারেন। এইরকম চিন্তা করা কী এক ভুলই না হবে!—গালাতীয় ৬:৭, ৮.

১৩. একান্তে থাকার সময়, কীভাবে যিহোবার প্রতি আমাদের বাধ্যতা পরীক্ষিত হতে পারে?

১৩ তাই, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি রোজকার কাজগুলোতে, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে যিহোবার বাধ্য হচ্ছি?’ যিশু বলেছিলেন: “যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত; আর যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে অধার্ম্মিক, সে প্রচুর বিষয়েও অধার্ম্মিক।” (লূক ১৬:১০) আমরা কি ‘আমাদের হৃদয়ের সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] চলিতেছি,’ এমনকি ‘আমাদের গৃহমধ্যে,’ যেখানে অন্যেরা আমাদের দেখতে পায় না? (গীতসংহিতা ১০১:২) হ্যাঁ, আমরা যখন ঘরে থাকি, তখনও আমাদের নীতিনিষ্ঠা পরীক্ষিত হতে পারে। অনেক দেশে, যেখানে কম্পিউটার সাধারণ গৃহস্থালী সামগ্রী, সেখানে চাইলে অতি সহজেই অশ্লীল চিত্রগুলো দেখা যায়। মাত্র কয়েক বছর আগেও, একজন ব্যক্তি অনৈতিক আমোদপ্রমোদ উপস্থাপন করা হয় এমন জায়গাগুলোতে না গেলে এই ধরনের চিত্রগুলো দেখতে পারতেন না। আমরা কি বাধ্যতার সঙ্গে যিশুর এই কথাগুলোতে মনোযোগ দেব: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল”? হ্যাঁ, আমরা কি নোংরা চিত্রগুলোর দিকে এমনকি দৃষ্টিপাত করাও প্রত্যাখ্যান করব? (মথি ৫:২৮; ইয়োব ৩১:১, ৯, ১০; গীতসংহিতা ১১৯:৩৭; হিতোপদেশ ৬:২৪, ২৫; ইফিষীয় ৫:৩-৫) দৌরাত্ম্যপূর্ণ বিষয়বস্তু রয়েছে, টিভির এমন অনুষ্ঠান সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? আমরা কি আমাদের ঈশ্বরের সঙ্গে একমত, যাঁর প্রাণ ‘দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক ঘৃণা’ করে? (গীতসংহিতা ১১:৫) অথবা একান্তে মাত্রাতিরিক্ত মদ খাওয়ার বিষয়ে কী বলা যায়? বাইবেল মাতাল হওয়াকে নিন্দা করে কিন্তু সেইসঙ্গে এটি খ্রিস্টানদের “বহুমদ্যের” অভ্যাসের বিষয়েও সাবধান করে।—তীত ২:৩; লূক ২১:৩৪, ৩৫; ১ তীমথিয় ৩:৩.

১৪. কিছু উপায় কী, যেগুলোতে টাকাপয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বাধ্যতা স্পষ্ট হয়?

১৪ আরেকটা যে-ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে, সেটা হল টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কি দ্রুত ধনী হওয়ার প্রকল্পে জড়িত হব, যেটাকে প্রায় প্রতারণা বলা চলে? কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য আমরা কি অবৈধ উপায় অবলম্বন করার জন্য প্রলোভিত হই? নাকি আমরা বিবেকবুদ্ধিপূর্বক ‘যাহার যাহা প্রাপ্য, তাহাকে তাহা দিবার, যাঁহাকে কর দিতে হয়, কর দিবার’ আদেশের প্রতি বাধ্য হই?—রোমীয় ১৩:৭.

প্রেমের দ্বারা উদ্ভূত বাধ্যতা

১৫. কেন আমরা যিহোবার আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হই?

১৫ ঐশিক নিয়মকানুনের প্রতি বাধ্যতা অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, তামাকের ব্যবহার পরিহার করে, নৈতিকভাবে জীবনযাপন করে এবং রক্তের পবিত্রতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা কোনো কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়া এড়াতে পারি। অধিকন্তু, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাইবেলের সত্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা পরিবারগতভাবে উপকৃত হতে পারি। (যিশাইয় ৪৮:১৭) এই ধরনের যেকোনো দৈহিক উপকারকে উপযুক্তভাবেই এমন আশীর্বাদ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা ঈশ্বরের আইনগুলোর ব্যবহারিক দিক সম্বন্ধে প্রমাণ দেয়। তবে, যে-প্রধান কারণে আমরা যিহোবার বাধ্য হই সেটা হল, আমরা তাঁকে ভালবাসি। আমরা স্বার্থপর কারণগুলোর জন্য ঈশ্বরকে সেবা করি না। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪, ৫) ঈশ্বর আমাদেরকে আমরা যাকে চাই, তার প্রতি বাধ্য হওয়ার বিষয়ে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা যিহোবার বাধ্য থাকা বেছে নিই, কারণ আমরা তাঁকে খুশি করতে চাই এবং যা সঠিক, তা পালন করতে চাই।—রোমীয় ৬:১৬, ১৭; ১ যোহন ৫:৩.

১৬, ১৭. (ক) কীভাবে যিশু আন্তরিক প্রেম সহকারে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি?

১৬ যিহোবার প্রতি আন্তরিক প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে যিশু নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। (যোহন ৮:২৮, ২৯) পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু বাধ্যতা বা “আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন।” (ইব্রীয় ৫:৮, ৯) কীভাবে? যিশু “আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।” (ফিলিপীয় ২:৭, ৮) যদিও যিশু স্বর্গে ইতিমধ্যেই বাধ্য ছিলেন, তবুও পৃথিবীতে তাঁর বাধ্যতা পরীক্ষিত হয়েছিল। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, প্রতিটা দিক দিয়ে যিশু তাঁর আধ্যাত্মিক ভাইবোন ও সেইসঙ্গে অন্যান্য বিশ্বাসী মানবজাতির জন্য মহাযাজক হিসেবে সেবা করার ক্ষেত্রে সুযোগ্য।—ইব্রীয় ৪:১৫; ১ যোহন ২:১, ২.

১৭ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি বাধ্য থাকার বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি। (১ পিতর ২:২১) আমরা ব্যক্তিগতভাবে পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারি, যখন ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে যিহোবার আজ্ঞাগুলো পালন করতে অনুপ্রাণিত করে, এমনকি সেই সময়েও যখন আমরা তা না করার জন্য চাপ অনুভব করি ও প্রলোভিত হই। (রোমীয় ৭:১৮-২০) এর অন্তর্ভুক্ত সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার প্রতি বাধ্য হতে ইচ্ছুক হওয়া, যারা সত্য উপাসনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে, এমনকি যদিও তারা অসিদ্ধ। (ইব্রীয় ১৩:১৭) আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঐশিক আজ্ঞাগুলোর প্রতি আমাদের বাধ্যতা যিহোবার চোখে মূল্যবান।

১৮, ১৯. ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আন্তরিক বাধ্যতা কোন ফল নিয়ে আসে?

১৮ আজকে, যিহোবার প্রতি আমাদের বাধ্য হওয়ার সঙ্গে আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য তাড়না সহ্য করা জড়িত হতে পারে। (প্রেরিত ৫:২৯) এ ছাড়া, প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে যিহোবার আজ্ঞার প্রতি বাধ্য হওয়ার জন্য এই বিধিব্যবস্থার শেষ না আসা পর্যন্ত আমাদের ধৈর্য ধরা প্রয়োজন। (মথি ২৪:১৩, ১৪; ২৮:১৯, ২০) আমাদের ভাইদের সঙ্গে সবসময় একত্রিত হওয়ার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন, এমনকি যদিও আমরা জগৎ থেকে প্রচণ্ড চাপ ভোগ করে থাকি। আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর এই ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে বাধ্য হওয়ার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে পূর্ণরূপে অবগত আছেন। কিন্তু, পূর্ণরূপে বাধ্য হওয়ার জন্য আমাদেরকে নিজেদের পাপপূর্ণ মাংসের সঙ্গে লড়াই করতে ও মন্দ বিষয় থেকে সরে আসতে এবং একই সময়ে যা ভাল, সেটার প্রতি উপলব্ধি গড়ে তুলতে হবে।—রোমীয় ১২:৯.

১৯ আমরা যখন প্রেমের বশবর্তী হয়ে এবং উপলব্ধিপূর্ণ হৃদয়ে যিহোবাকে সেবা করি, তখন তিনি আমাদের কাছে ‘যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তাহাদের পুরস্কারদাতা’ হন। (ইব্রীয় ১১:৬) সঠিক বলি আবশ্যিক ও কাম্য কিন্তু যিহোবার প্রতি প্রেমের বশবর্তী হয়ে সম্পূর্ণ বাধ্যতাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি খুশি করে।—হিতোপদেশ ৩:১, ২.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবাকে দেওয়ার মতো কিছু আমাদের আছে?

• শৌল কোন ভুলগুলো করেছিলেন?

• কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন, আপনি বিশ্বাস করেন যে, বলিদান অপেক্ষা বাধ্যতা উত্তম?

• কী আপনাকে যিহোবার বাধ্য হতে অনুপ্রাণিত করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন যত্নশীল চিকিৎসক সেই রোগী সম্বন্ধে কেমন বোধ করবেন, যিনি তার পরামর্শগুলোকে উপেক্ষা করেন?

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন রাজা শৌল যিহোবার অসন্তোষ জন্মিয়েছিলেন?

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি আপনার বাড়ির একান্ত পরিবেশে থাকার সময়ে ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হন?