সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পর্তুগিজ ভাষায় প্রথম বাইবেল অধ্যবসায়ের এক কাহিনি

পর্তুগিজ ভাষায় প্রথম বাইবেল অধ্যবসায়ের এক কাহিনি

পর্তুগিজ ভাষায় প্রথম বাইবেল অধ্যবসায়ের এক কাহিনি

 “যে-ব্যক্তি অধ্যবসায়ী, তিনি সফল হবেন।” এই আদর্শবাণীটি ঝোআওঁ ফেরেরা ডে আলমেডার দ্বারা লিখিত সপ্তদশ শতাব্দীর একটি ধর্মীয় প্যামফ্লেটের প্রচ্ছদপৃষ্ঠায় দেখা যায়। এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে আরও উপযুক্ত কোনো বর্ণনা পাওয়া কঠিন, যিনি তার জীবনকে পর্তুগিজ ভাষায় বাইবেল অনুবাদ ও প্রকাশ করার জন্য একান্তভাবে নিয়োজিত করেছিলেন।

আলমেডা ১৬২৮ সালে উত্তর পোর্তুগালের টরি ডি টাভারেজ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন অনাথ শিশু হিসেবে, তিনি পোর্তুগালের রাজধানী লিসবনে তার কাকার কাছে বড় হয়েছিলেন, যিনি একটা ধর্মীয় সংগঠনের সভ্য ছিলেন। ঐতিহ্যগত বিশ্বাস অনুসারে, যাজক হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে আলমেডা এক চমৎকার শিক্ষা লাভ করেছিলেন, যা অল্প বয়সেই তাকে ভাষা সম্বন্ধে এক অসাধারণ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।

কিন্তু, আলমেডা পোর্তুগালে থাকাকালীন বাইবেল অনুবাদের কাজে তার এই দক্ষতাকে ব্যবহার করেছিলেন কি না, সেই বিষয়টা অনিশ্চিত। মাতৃভাষার বাইবেল নিয়ে যখন উত্তর ও মধ্য ইউরোপে সংস্কার ছড়িয়ে পড়েছিল, তখনও পোর্তুগাল দৃঢ়ভাবে ক্যাথলিক ধর্মীয় বিচারসভার (ইনকুইজিশন) প্রভাবাধীনে ছিল। কেবল নিজের ভাষায় একটি বাইবেল থাকার কারণেই একজন ব্যক্তিকে ধর্মীয় বিচারসভার সামনে উপস্থিত হতে হতো। *

সম্ভবত এই দমনমূলক পরিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আলমেডা কিশোর বয়সে নেদারল্যান্ডসে চলে গিয়েছিলেন। এর অল্পসময় পরে যখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর, তখন তিনি ইন্দোনেশিয়ার বেটাভিয়া (বর্তমানে জাকার্তা) হয়ে এশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন, যা সেই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল।

একজন কিশোর অনুবাদক

এশিয়ার উদ্দেশে যাত্রার শেষের দিকে আলমেডা তার জীবনের এক সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছিলেন। পশ্চিম মালয়েশিয়ার বেটাভিয়া ও মালাক্কার (বর্তমানে মেলাকা) মধ্যে সমুদ্রপথে যাত্রা করার সময় তিনি স্প্যানিশ ভাষায় একটা প্রটেস্টান্ট প্যামফ্লেট খুঁজে পেয়েছিলেন, যেটার শিরোনাম ছিল ডিফারেনসিয়াস ডে লা ক্রিস্টিয়ানডাড (খ্রিস্টীয়জগতের মধ্যে পার্থক্যগুলো)। মিথ্যা ধর্মীয় মতবাদগুলোকে আক্রমণ করা ছাড়াও সেই প্যামফ্লেটে একটা বিবৃতি ছিল, যা বিশেষভাবে অল্পবয়সি আলমেডার মনে ছাপ ফেলেছিল: “গির্জায় এক অজানা ভাষার ব্যবহার, এমনকি ঈশ্বরের গৌরব করার জন্য হলেও, সেই ভাষা বুঝতে অক্ষম শ্রোতাদের কোনো উপকারই আনে না।”—১ করিন্থীয় ১৪:৯.

উপসংহারটা আলমেডার কাছে স্পষ্ট ছিল: ধর্মীয় ভুলগুলোকে উন্মোচন করে দেওয়ার চাবিকাঠি হল, বাইবেলকে সকলের কাছে বোধগম্য করে তোলা। মালাক্কায় পৌঁছে তিনি ডাচ রিফর্মড ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং অবিলম্বে সুসমাচারের বিবরণের কিছু অংশ স্প্যানিশ থেকে পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করতে শুরু করেছিলেন, সেগুলো সেই লোকেদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন, “যারা সত্য জানার জন্য এক অকৃত্রিম আগ্রহ দেখিয়েছিল।” *

দুবছর পর আলমেডা আরও বড় দায়িত্ব পালন করার জন্য—ল্যাটিন ভালগেট থেকে পুরো খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র অনুবাদ সম্পন্ন করার জন্য—প্রস্তুত ছিলেন। তিনি তা এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করেছিলেন, যা ১৬ বছর বয়সি একজন কিশোরের জন্য এক উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল! সেটি প্রকাশ করার জন্য সাহসের সঙ্গে তিনি বেটাভিয়ায় ডাচ গভর্নর-জেনারেলের কাছে তার অনুবাদের একটি প্রতিলিপি পাঠিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, বেটাভিয়ার রিফর্মড চার্চ তার পাণ্ডুলিপিটি আমস্টারডামে পাঠিয়ে দিয়েছিল কিন্তু যে-বয়স্ক পরিচারককে আস্থা সহকারে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তিনি মারা গিয়েছিলেন এবং আলমেডার রচিত গ্রন্থটি হারিয়ে গিয়েছিল।

১৬৫১ সালে সিলোনের (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) রিফর্মড মণ্ডলীর জন্য যখন তার অনুবাদের একটি প্রতিলিপি তৈরি করতে বলা হয়েছিল, তখন আলমেডা আবিষ্কার করেন যে, গির্জার সংরক্ষণাগার থেকে মূল অনুবাদটি হারিয়ে গিয়েছে। দমে না গিয়ে তিনি যেকোনোভাবেই হোক, একটি প্রতিলিপি—সম্ভবত প্রথম দিকের কোনো সংস্করণ—খুঁজে পেয়েছিলেন এবং পরের বছর সুসমাচারের বিবরণ ও প্রেরিত বইয়ের সংশোধিত সংস্করণ সম্পন্ন করেছিলেন। বেটাভিয়ার ধর্ম-বিচারালয় * তাকে পুরস্কার হিসেবে ৩০ গিল্ডার দিয়েছিল। আলমেডার সহকর্মীদের মধ্যে একজন লিখেছিলেন, এটা “তিনি যে-বিশাল কাজ করেছিলেন, সেই তুলনায় অতি সামান্য ছিল।”

স্বীকৃতিদানের অভাব সত্ত্বেও আলমেডা তার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, ১৬৫৪ সালে তার পুনর্সংশোধিত সম্পূর্ণ নূতন নিয়ম পেশ করেছিলেন। আবারও প্রকাশনাটি প্রকাশ করার সম্ভাবনা বিবেচনায় আনা হয়েছিল কিন্তু কিছু গির্জায় ব্যবহারের জন্য হাতে লেখা কিছু প্রতিলিপির প্রস্তুতি ছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে আর কিছুই করা হয়নি।

ধর্মীয় বিচারসভার দ্বারা নিন্দিত

পরবর্তী এক দশক, আলমেডা রিফর্মড চার্চের যাজক সম্বন্ধীয় ও মিশনারি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি ১৬৫৬ সালে নিযুক্ত হয়েছিলেন ও প্রথমে সিলোনে সেবা করেছিলেন, যেখানে তিনি অল্পের জন্য হাতির পায়ের তলায় পিষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং পরে ভারতে প্রথম প্রটেস্টান্ট মিশনারি হিসেবে সেই দেশে গিয়ে সেবা করেছিলেন।

আলমেডা ছিলেন বিদেশে সেবারত একজন প্রটেস্টান্ট ধর্মান্তরিত ব্যক্তি। তাই, তিনি যে-পর্তুগিজভাষী সমাজগুলোতে পরিদর্শন করেছিলেন, সেখানকার অনেকে তাকে একজন ধর্মভ্রষ্ট ও একজন রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে দেখেছিল। এ ছাড়া, পাদরিশ্রেণীর মধ্যে বিদ্যমান নৈতিক কলুষতা সম্বন্ধে সরাসরি নিন্দা করার এবং গির্জার মতবাদগুলো প্রকাশ করে দেওয়ার কারণে প্রায়ই ক্যাথলিক মিশনারিদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হতো। ১৬৬১ সালে এই দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যখন ভারতের গোয়ার ধর্মীয় বিচারসভা প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধ বিশ্বাসের কারণে আলমেডাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। তার অনুপস্থিতিতে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিল। সম্ভবত আলমেডার তর্কপ্রবণ স্বভাব সম্পর্কে শঙ্কিত হয়ে ডাচ গভর্নর-জেনারেল তাকে শীঘ্রই আবার বেটাভিয়ায় ফিরে আসতে আদেশ দিয়েছিলেন।

আলমেডা একজন উদ্যোগী মিশনারি ছিলেন কিন্তু তিনি কখনোই পর্তুগিজ বাইবেলের চাহিদা সম্বন্ধে ভুলে যাননি। এর পরিবর্তে বাইবেল সম্বন্ধে অজ্ঞানতা, যা পাদরিশ্রেণী ও সাধারণ জনগণ উভয়ের মধ্যেই সুস্পষ্ট ছিল, সেটা তার সংকল্পকে কেবল আরও জোরালোই করেছিল। ১৬৬৮ সালের একটি ধর্মীয় ট্র্যাক্টের প্রারম্ভিক মন্তব্যে আলমেডা তার পাঠকদের কাছে ঘোষণা করেছিলেন: “আমি আশা করি যে, . . . খুব শীঘ্রই আমি আপনাদেরকে আপনাদের নিজেদের ভাষায় পুরো বাইবেল দিতে পেরে আনন্দিত হব, এক সর্বোৎকৃষ্ট উপহার ও সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, যা কেউ কখনো আপনাদের দেয়নি।”

আলমেডা বনাম পুনর্সংশোধন কমিটি

১৬৭৬ সালে আলমেডা তার নূতন নিয়ম এর একটি চূড়ান্ত সংস্করণ পুনর্সংশোধনের জন্য বেটাভিয়ার গির্জার ধর্ম-বিচারালয়ের কাছে পেশ করেছিলেন। শুরু থেকেই অনুবাদক ও সংশোধনকারীদের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা বিদ্বেষপূর্ণ ছিল। জীবনীলেখক জে. এল. সুয়েলেংখ্রেবেল ব্যাখ্যা করেন যে, আলমেডার ডাচভাষী সহকর্মীদের হয়তো অর্থ ও রচনাশৈলীর সূক্ষ্ম তারতম্য বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছিল। এ ছাড়া, ভাষা বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও মতবিরোধ ছিল। বাইবেলে কি স্থানীয় পর্তুগিজ ভাষা ব্যবহার করা উচিত, নাকি আরও পরিশোধিত পর্তুগিজ ভাষা ব্যবহার করা উচিত, যা অনেকের পক্ষে বোঝা কঠিন হবে? অবশেষে, সেই কাজটা সম্পূর্ণ হতে দেখার জন্য আলমেডার উদ্যোগ এক ক্রমাগত বিরোধের উৎস হয়েছিল।

সম্ভবত মতবিরোধ অথবা সংশোধনকারীদের অনাগ্রহের কারণে কাজটা ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছিল। চার বছর পর, সংশোধনকারীরা লূকের প্রথম দিকের অধ্যায়গুলো নিয়েই তর্কবিতর্ক করছিল। এই বিলম্বের কারণে বিরক্ত হয়ে আলমেডা সংশোধনকারীদের না জানিয়েই সেটি ছাপানোর জন্য তার পাণ্ডুলিপির একটি প্রতিলিপি নেদারল্যান্ডসে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

এটির ছাপানো রোধ করার জন্য ধর্ম-বিচারালয়ের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ১৬৮১ সালে তার নূতন নিয়ম আমস্টারডামের ছাপাখানায় গিয়েছিল এবং পরের বছর এর প্রথম ছাপানো কপিগুলো বেটাভিয়ায় পৌঁছেছিল। কিন্তু কল্পনা করুন যে, আলমেডা কত হতাশই না হয়েছিলেন, যখন তিনি দেখেছিলেন যে, নেদারল্যান্ডসের সংশোধনকারীরা তার অনুবাদে কিছু কিছু পরিবর্তন করেছিল! যেহেতু সংশোধনকারীরা পর্তুগিজ ভাষার সঙ্গে পরিচিত ছিল না, তাই আলমেডা লক্ষ করেছিলেন যে, তারা “অনুপযোগী ও পরস্পরবিরোধী অনুবাদগুলো” তুলে ধরেছিল, “যা পবিত্র আত্মার অর্থকে দুর্বোধ্য করে তুলেছিল।”

এ ছাড়া, ডাচ সরকারও অসন্তুষ্ট হয়েছিল এবং তারা পুরো সংস্করণটি নষ্ট করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, আলমেডা সরকারকে এই শর্তে কিছু কপি সংরক্ষণ করার জন্য রাজি করিয়েছিলেন যে, সবচেয়ে গুরুতর ভুলগুলো হাতে লিখে সংশোধন করা হবে। একটি পুনর্সংশোধিত কপি প্রস্তুত করার আগে পর্যন্ত এই কপিগুলো ব্যবহার করা হবে।

বেটাভিয়ার সংশোধনকারীরা খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের ওপর তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুনরায় সমবেত হয়েছিল এবং আলমেডা যখন সেগুলো সম্পূর্ণ করেছিলেন, তখন তারা ইব্রীয় শাস্ত্রের বইগুলো প্রস্তুত করতে শুরু করেছিল। অনুবাদকের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে, সেই ভয়ে ধর্ম-বিচারালয় চূড়ান্ত কপির স্বাক্ষরিত কাগজপত্র গির্জার রক্ষণাগারে রেখে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, আলমেডা তাদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন।

এই সময়ের মধ্যে, বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় জীবনযাপন কঠিন হওয়ার কারণে তার স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছিল। ১৬৮৯ সালে, তার স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয় বিবেচনা করে আলমেডা ইব্রীয় শাস্ত্রের অনুবাদের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য গির্জার কাজ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় যে, ১৬৯১ সালে যিহিষ্কেল পুস্তকের শেষ অধ্যায়গুলো নিয়ে কাজ করার সময় তিনি মারা যান।

নূতন নিয়ম এর দ্বিতীয় সংস্করণ, যেটি তার মৃত্যুর অল্প সময় আগে সমাপ্ত হয়েছিল, সেটি ১৬৯৩ সালে ছাপানো হয়েছিল। কিন্তু আবারও মনে হয় যে, তার কাজ অযোগ্য সংশোধনকারীদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার আ বিবলিয়া ইঁ পোর্তুগাল (পোর্তুগালে বাইবেল) বইয়ে জি. এল. স্যানটোস ফেরেরা বলেন: “সংশোধনকারীরা . . . আলমেডার চমৎকার কাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো করেছিল, প্রথম সংস্করণের সংশোধনকারীরা মূল রচনার যে-সৌন্দর্যকে পরিবর্তন করেনি, সেগুলোকেও বিকৃত ও কলুষিত করেছিল।”

পর্তুগিজ বাইবেল সম্পন্ন হয়

আলমেডার মৃত্যুতে বেটাভিয়ায় পর্তুগিজ ভাষায় বাইবেল পুনর্সংশোধনের এবং ছাপানোর প্রেরণা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের ট্রানকুইবারে কর্মরত ড্যানিশ মিশনারিদের অনুরোধে ১৭১১ সালে লন্ডনভিত্তিক সোসাইটি ফর প্রমোটিং খ্রিস্টান নলেজ আলমেডার নূতন নিয়ম এর তৃতীয় সংস্করণের জন্য অর্থ প্রদান করেছিল।

সেই সোসাইটি ট্রানকুইবারে ছাপাখানা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু, জাহাজে করে ছাপানোর সরঞ্জামাদি ও প্রেরিত পর্তুগিজ বাইবেল ভারতে পাঠানোর সময় ফরাসি জলদস্যুরা সেগুলো কেড়ে নেয় এবং অবশেষে সেগুলো ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো বন্দরে ফেলে আসা হয়। স্যানটোস ফেরেরা লেখেন: “ব্যাখ্যাতীত কিছু কারণে এবং অনেকের কাছে অলৌকিক বলে মনে হয়েছে এমন কিছু পরিস্থিতিতে, ছাপানোর সরঞ্জামাদিতে ভরা বাক্সগুলো জাহাজের খোলের নীচে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল এবং সেগুলোসহ সেই একই জাহাজ ট্রানকুইবারের উদ্দেশে যাত্রা চালিয়ে গিয়েছিল।” ড্যানিশ মিশনারিরা বাইবেলের বাকি বইগুলোর আলমেডা সংস্করণটি সতর্কতার সঙ্গে পুনর্সংশোধন করেছিল ও ছাপিয়েছিল। পর্তুগিজ ভাষায় বাইবেলের শেষ খণ্ডটি ১৭৫১ সালে ছাপানো হয়েছিল, যা ছিল বাইবেল অনুবাদক হিসেবে আলমেডা তার কেরিয়ার শুরু করার প্রায় ১১০ বছর পর।

এক দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার

অল্প বয়স থেকেই আলমেডা পর্তুগিজ ভাষায় একটি বাইবেলের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন, যাতে সাধারণ লোকেরা তাদের নিজেদের ভাষায় সত্য উপলব্ধি করতে পারে। ক্যাথলিক গির্জার বিরোধিতা, সঙ্গীসাথিদের উদাসীনতা, আপাতদৃষ্টিতে অফুরন্ত বলে মনে হওয়া পুনর্সংশোধনের সমস্যা ও তার নিজের খারাপ স্বাস্থ্য সত্ত্বেও, তিনি সারাজীবন ধরে অটলভাবে সেই লক্ষ্যের পিছনে অনুধাবন করেছিলেন। তার অধ্যবসায় পুরস্কৃত হয়েছিল।

যদিও আলমেডা যে-পর্তুগিজভাষী সমাজগুলোতে প্রচার করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে ও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু তার বাইবেল টিকে রয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীতে, ব্রিটিশ আ্যন্ড ফরেন বাইবেল সোসাইটি ও আমেরিকান বাইবেল সোসাইটি পোর্তুগালে ও ব্রাজিলের উপকূলীয় শহরগুলোতে হাজার হাজার আলমেডা সংস্করণ বিতরণ করেছিল। ফলস্বরূপ, তার মূল পাঠ্যাংশ থেকে উদ্ভূত বাইবেল আজকের দিন পর্যন্ত পর্তুগিজভাষী দেশগুলোতে জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে বিতরিত।

নিঃসন্দেহে, অনেকে আলমেডার মতো প্রাথমিক বাইবেল অনুবাদকদের কাছে ঋণী। কিন্তু, আমাদের ভাববিনিময়কারী ঈশ্বর যিহোবার কাছে এমনকি আরও কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, যাঁর “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৩, ৪) সর্বোপরি, তিনিই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি তাঁর বাক্যকে সংরক্ষণ করেছেন এবং আমাদের উপকারের জন্য এটিকে প্রাপ্তিসাধ্য করেছেন। আমরা যেন সবসময় আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে পাওয়া ‘সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদকে’ উচ্চ বলে গণ্য করি ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে তা অধ্যয়ন করি।

[পাদটীকাগুলো]

^ ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ক্যাথলিক গির্জা নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা (ইংরেজি) প্রকাশ করার মাধ্যমে মাতৃভাষায় বাইবেল ব্যবহারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে, এই ব্যবস্থা “পরবর্তী ২০০ বছরের জন্য ক্যাথলিক অনুবাদের কাজকে বলতে গেলে একেবারে থামিয়ে দিয়েছিল।”

^ আলমেডা বাইবেলের পুরোনো সংস্করণগুলো তাকে পাদরি (ফাদার) আলমেডা হিসেবে উল্লেখ করে, যার ফলে কেউ কেউ এইরকম মনে করেছিল যে, তিনি একজন ক্যাথলিক যাজক হিসেবে সেবা করেছিলেন। কিন্তু, আলমেডা বাইবেলের ডাচ সম্পাদকরা ভুলবশত এই শব্দটি ব্যবহার করেছিল, এটিকে এমন উপাধি বলে মনে করেছিল, যা একজন পাস্টর বা পরিচারক ব্যবহার করতেন।

^ রিফর্মড চার্চের শাসকগোষ্ঠী।

[২১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

ঐশিক নাম

একজন অনুবাদক হিসেবে আলমেডার নীতিনিষ্ঠার এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল, তিনি ইব্রীয় টেট্রাগ্র্যামাটোন অনুবাদের জন্য ঐশিক নাম ব্যবহার করেন।

[সৌজন্যে]

Cortesia da Biblioteca da Igreja de Santa Catarina (Igreja dos Paulistas)

[১৮ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

আটলান্টিক মহাসাগর

পোর্তুগাল

লিসবন

টরি ডি টাভারেজ

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

সপ্তদশ শতাব্দীতে বেটাভিয়া

[সৌজন্যে]

From Oud en Nieuw Oost-Indiën, Franciscus Valentijn, ১৭২৪

[১৮, ১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৬৮১ সালে প্রকাশিত প্রথম পর্তুগিজ নূতন নিয়ম এর প্রচ্ছদপৃষ্ঠা

[সৌজন্যে]

Courtesy Biblioteca Nacional, Portugal