“ভাষার দিক দিয়ে বিভক্ত কিন্তু প্রেমের দ্বারা একতাবদ্ধ”
“ভাষার দিক দিয়ে বিভক্ত কিন্তু প্রেমের দ্বারা একতাবদ্ধ”
মুক্তি। স্বাধীনতা। পরিত্রাণ। শত শত বছর ধরে, লোকেরা বোঝা এবং উদ্বেগের হাত থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছে। কীভাবে আমরা জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি? কখনো কি মুক্তি পাওয়া যাবে? যদি পাওয়া যায়, তা হলে কীভাবে?
এটা ছিল যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা ব্যবস্থাকৃত ধারাবাহিক তিনদিন ব্যাপী জেলা সম্মেলনের বিষয়, যেটা ২০০৬ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল। এটার মূলভাব ছিল, “মুক্তি সন্নিকট!”
এই সম্মেলনগুলোর মধ্যে নয়টা সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার প্রতিনিধি এসেছিল। এগুলো ২০০৬ সালের জুলাই থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে; স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাটিস্লাভাতে; পোল্যান্ডের * হজু এবং পোজনান শহরে এবং জার্মানির পাঁচটি শহর—ডর্টমুন্ড, ফ্রাঙ্কফুর্ট, মিউনিক, লিপজিগ এবং হামবুর্গে—অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনগুলোর মোট উপস্থিতি ৩,১৩,০০০ জনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
সম্মেলনগুলোর পরিবেশ কেমন ছিল? এই সম্মেলনগুলো সম্বন্ধে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে কী ধরনের প্রচারণা করা হয়েছিল? আর এই সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার পরই বা কেমন অনুভব করেছিল?
প্রস্তুতি
সকল দর্শনার্থী ও স্থানীয় সাক্ষি উভয়ের মধ্যেই অধীর আগ্রহ ছিল কারণ তারা জানত যে, এই সম্মেলনগুলো এক স্মরণীয় আধ্যাত্মিক উপলক্ষ হবে। প্রতিনিধিদের জন্য থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা ছিল একটা বড় কাজ। উদাহরণস্বরূপ, হজুতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের জন্য পোলিশ সাক্ষিরা পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা প্রায় ১৩,০০০ জন অতিথিকে তাদের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আর্মেনিয়া, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, এস্টোনিয়া, কাজাকস্তান, কিরগিজস্তান, জর্জিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, বেলারুস, মলডোভা, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়েনিয়া থেকে প্রতিনিধিরা সেই সম্মেলনে এসেছিল।
অনেক প্রতিনিধিকে বেশ আগে থেকে তাদের যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হয়েছিল। জাপানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে অবস্থিত রাশিয়ান উপদ্বীপ কামচাটকাতে, তাতিয়ানা নামে একজন পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারিকা, এক বছর আগে থেকে এই যাত্রার জন্য টাকা জমাতে শুরু করেছিলেন। তাকে প্রায় ১০,৫০০ কিলোমিটার পথ যাত্রা করতে হয়েছিল। প্রথমে, তিনি ৫ ঘন্টা প্লেনে যাত্রা করেছিলেন তারপর, প্রায় তিনদিন ট্রেনে যাত্রা করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত হজুতে পৌঁছনোর জন্য তাকে ৩০ ঘন্টা বাসে যাত্রা করতে হয়েছিল।
হাজার হাজার ব্যক্তি স্টেডিয়ামগুলো এবং এগুলোর আশেপাশের জায়গাগুলোকে উপাসনাস্থলের উপযোগী করে তোলার জন্য সম্মেলনের আগে যে-কাজগুলো করার থাকে তাতে স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১৪) একটা উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল, লিপজিগে স্থানীয় সাক্ষিরা স্টেডিয়ামকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার দ্বারা এক উত্তম কাজ করেছিল এবং সম্মেলনের শেষে স্টেডিয়ামকে আবারও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেবে বলে তারা প্রতিজ্ঞা করেছিল। ফলস্বরূপ, সেই স্টেডিয়ামের কর্তৃপক্ষ ভাড়ার চুক্তিতে যে-পরিমাণ অর্থ পরিষ্কার-পরিছন্নতার খাতের জন্য নেওয়া হয়েছিল, তা ফেরত দিয়েছিল।
আমন্ত্রণপত্র
বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীগুলো “মুক্তি সন্নিকট!” সম্মেলন সম্বন্ধে ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল। যে-ব্যক্তিরা এই বিশেষ সম্মেলনগুলোতে যোগদান করতে যাচ্ছিল, তারা এই বিশেষ প্রচার অভিযানে মহা উদ্যমের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল। সম্মেলন শুরু হওয়ার আগের দিন প্রায় রাত পর্যন্ত তারা সম্মেলন সম্বন্ধে প্রচার করা চালিয়ে গিয়েছিল। তাদের উদ্যোগ কি কোনো ভাল ফল নিয়ে এসেছিল?
বগডান নামে একজন পোলিশ সাক্ষির সঙ্গে একজন বয়স্ক ব্যক্তির দেখা হয়েছিল, যিনি সম্মেলনে যোগদান করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বলেছিলেন যে, তার সামান্য পেনশনের অর্থ দিয়ে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হজুতে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। জানা যায় যে, স্থানীয় মণ্ডলীর ভাড়া করা বাসে একটা আসন খালি ছিল। বগডান বর্ণনা করেন: “আমরা সেই ব্যক্তিকে বলেছিলাম যে, যদি তিনি ভোর ৫:৩০ মিনিটে বাস ছাড়ার জায়গায় আসতে পারেন, তা হলে বিনামূল্যে তিনি আমাদের সঙ্গে যেতে পারেন।” সেই ব্যক্তি ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন এবং সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরে তিনি ভাইদের উদ্দেশে এই কথাগুলো লিখেছিলেন: “এই সম্মেলনে যোগদান করার পর, আমি আরও ভাল একজন ব্যক্তি হতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছি।”
প্রাগ শহরে একজন ব্যক্তি, যিনি ব্রিটেন থেকে আসা প্রতিনিধিরা যে-হোটেলগুলোতে ছিল, সেগুলোর একটাতে ছিলেন, তিনি এক সন্ধ্যায় সম্মেলনে যোগদানকারী ব্যক্তিদের বলেছিলেন যে, তিনিও সেদিনের সম্মেলনের অধিবেশনগুলোতে যোগ দিয়েছিলেন। কী তাকে সেখানে যেতে পরিচালিত করেছিল? সেই ব্যক্তি বলেছিলেন যে, ওই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় দশজন প্রকাশকের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর তিনি স্থির করে ফেলেছিলেন যে, তাকে সেখানে যেতেই হবে! তিনি খুবই প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং আরও কিছু জানতে আগ্রহী ছিলেন।—১ তীমথিয় ২:৩, ৪.
পুষ্টিকর আধ্যাত্মিক কার্যক্রম
বিভিন্ন সমস্যাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, এই কার্যক্রমে তা আলোচনা করা হয়েছিল। সরাসরি দেওয়া শাস্ত্রীয় পরামর্শ ব্যাখ্যা করেছিল যে, কীভাবে এই সমস্যাগুলোকে সমাধান করা যায় বা সেগুলোকে সহ্য করা যায়।
বার্ধক্যের, দুর্বল স্বাস্থ্যের, মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর বা অন্যান্য ব্যক্তিগত সমস্যার দ্বারা জর্জরিত ব্যক্তিরা তাদের জীবনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য সাহায্য পেতে বাইবেল থেকে উৎসাহ লাভ করেছিল। (গীতসংহিতা ৭২:১২-১৪) বিবাহিত দম্পতিরা ও বাবামায়েরা, কীভাবে এক সুখী বিবাহ উপভোগ করা যায় এবং কীভাবে তাদের সন্তানদের সফলতার সঙ্গে বড় করে তোলা যায়, সেই বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ শুনেছিল। (উপদেশক ৪:১২; ইফিষীয় ৫:২২, ২৫; কলসীয় ৩:২১) খ্রিস্টান যুবক-যুবতীরা—যারা স্কুলে সঙ্গীসাথিদের থেকে ক্ষতিকর চাপের সম্মুখীন হয় কিন্তু ঘরে এবং মণ্ডলীতে ঈশ্বরের বাক্যের বিজ্ঞ পরামর্শ লাভ করে তারা—বন্ধুবান্ধবদের চাপগুলোর সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এবং কীভাবে ‘যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন করিতে’ হয়, সেই সম্বন্ধে ব্যবহারিক পরামর্শ লাভ করেছিল।—২ তীমথিয় ২:২২.
এক প্রকৃত আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ
যিহোবার সাক্ষিরা তাদের সমাবেশগুলোতে সবসময় উত্তম শাস্ত্রীয় নির্দেশনা পেয়ে থাকে। (২ তীমথিয় ৩:১৬) কিন্তু, যে-বিষয়টা এই সম্মেলনগুলোকে ভিন্ন করে তুলেছিল তা হল, এগুলোর আন্তর্জাতিক স্বাদ। বিশেষ সম্মেলনগুলোর সবকটাতেই একই আধ্যাত্মিক কার্যক্রম বেশ কয়েকটা ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রতিদিন, যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর সদস্যরা বক্তৃতা দিয়েছিল এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রিপোর্টগুলো বিশেষভাবে আগ্রহজনক ছিল। সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন ভাষার দলগুলোর উপকারের জন্য বক্তৃতা ও রিপোর্টগুলোকে অনুবাদ করা হয়েছিল।
প্রতিনিধিরা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তাদের ভাইবোনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য উৎসুক ছিল। “ভাষার পার্থক্য বিশেষ কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেনি,” একজন প্রতিনিধি বলেছিলেন। “এর বিপরীতে, এটা সেই উপলক্ষের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। অতিথিরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে এসেছিল কিন্তু তারা সকলে একই বিশ্বাস দ্বারা একতাবদ্ধ হয়েছিল।” মিউনিকে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যোগদানকারীরা বলেছিল: “ভাষার দিক দিয়ে বিভক্ত কিন্তু প্রেমের দ্বারা একতাবদ্ধ।” তাদের দেশ এবং ভাষা যা-ই হোক না কেন, যোগদানকারীরা অনুভব করেছিল যে, তারা প্রকৃত বন্ধুদের—আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের—মাঝে রয়েছে।—সখরিয় ৮:২৩.
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
পোল্যান্ডে সম্মেলন চলাকালে আবহাওয়া, প্রতিনিধিদের মনোভাব ও ধৈর্যকে পরীক্ষা করেছিল। সেখানে যে সবসময় বৃষ্টিই হচ্ছিল তা নয় কিন্তু আবহাওয়াও বেশ ঠাণ্ডা ছিল—প্রায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যুক্তরাষ্ট্রের একজন ভাই উল্লেখ করেছিলেন: “আমি এই প্রথম কোনো সম্মেলনের সময়, এত খারাপ আবহাওয়া ও এত নিম্ন তাপমাত্রার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম এবং আমি কার্যক্রমের খুব অল্প বিষয়ই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু অবিশ্বাস্য আন্তর্জাতিক পরিবেশ, চমৎকার মনোভাব এবং অদ্বিতীয় আতিথেয়তা, সেগুলোর ঘাটতিকে পূরণ করেছিল। এই সম্মেলন ছিল অবিস্মরণীয়!”
সম্মেলনে যোগদানকারী পোলিশভাষী সাক্ষিদের জন্য আরেকটা বিষয় অবিস্মরণীয় ছিল আর সেটা হচ্ছে পোলিশ ভাষায় শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি বইগুলোর প্রকাশের ঘোষণা—ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি সহ্য করার কারণে এক চমৎকার পুরস্কার। যিহোবার দিনের কথা মনে রেখে জীবনযাপন করুন শিরোনামের নতুন বইটির প্রকাশও “মুক্তি সন্নিকট!” সম্মেলনগুলোর আনন্দকে বৃদ্ধি করেছিল।
সেখানে উপস্থিত অনেকেই অন্য কারণগুলোর জন্য সেই সম্মেলনের কথা মনে রাখবে। ক্রিস্টিনা নামে একজন চেক বোন, যিনি বিদেশ থেকে বাসে করে আসা প্রতিনিধিদের সঙ্গ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন, তিনি স্মরণ করেন: “আমাদের বিদায় জানানোর সময়, একজন বোন আমাকে এক কোণে নিয়ে যান, জড়িয়ে ধরেন এবং বলেন: ‘আমি খুবই যত্ন পেয়েছি! আপনি একেবারে আমাদের আসনে এসে খাবার আর এমনকি পান করার জন্য জলও দিয়ে গিয়েছেন। আপনার আত্মত্যাগমূলক প্রেমের জন্য অনেক ধন্যবাদ।’” তিনি বিদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা সম্বন্ধে বলছিলেন। “এটা ছিল এমন ধরনের কাজ, যেটার অভিজ্ঞতা আমাদের পূর্বে কখনো হয়নি,” একজন ভাই বলেছিলেন। “সেই কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রতিদিন প্রায় ৬,৫০০ জনের জন্য দুপুরের খাবার সরবরাহ করা। ছোট ছেলেমেয়েরাসহ এত এত স্বেচ্ছাসেবককে সাহায্য করতে দেখা হৃদয়গ্রাহী ছিল।”
একজন বোন, যিনি সম্মেলনের জন্য ইউক্রেন থেকে হজুতে এসেছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “সহবিশ্বাসীদের প্রেম, যত্ন এবং উদারতা আমাদের গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। আমরা কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।” আর ফিনল্যান্ডের আট বছর বয়সি আ্যনিকা যিহোবার সাক্ষিদের পোল্যান্ডের শাখা অফিসকে লিখেছিল: “আমি যতটা কল্পনা করেছিলাম, সম্মেলন তার চেয়েও বেশি অপূর্ব হয়েছে। যিহোবার সংগঠনের অংশ হতে পারা হল এক চমৎকার ব্যাপার, কারণ একজন ব্যক্তির সারা পৃথিবীতেই বন্ধুবান্ধব রয়েছে!”—গীতসংহিতা ১৩৩:১.
প্রত্যক্ষদর্শীদের মন্তব্য
সম্মেলনের আগে, কিছু প্রতিনিধির জন্য সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাভেরিয়ান
গ্রামে গিয়ে দর্শনার্থীরা কিংডম হলগুলো দেখার জন্য থেমেছিল, যেখানে স্থানীয় সাক্ষিরা তাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। একটা ভ্রমণদলের গাইড, যিনি যিহোবার সাক্ষি ছিলেন না, তিনি এই ভ্রাতৃপ্রেম দেখে খুবই অভিভূত হয়েছিলেন। “বাসে করে আমাদের হোটেলে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সময়” একজন প্রতিনিধি বর্ণনা করেন, “সেই টুর গাইড বলেছিলেন যে, আমরা অন্যান্য ভ্রমণ দল থেকে খুবই আলাদা ছিলাম। আমরা পরিপাটিভাবে পোশাক-আশাক পরেছিলাম এবং সবাই নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল। সেখানে কোনো কটু কথা বলা বা ভুল বোঝাবুঝি ছিল না। অপরিচিত ব্যক্তিরা কীভাবে এত তাড়াতাড়ি একে অন্যের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে, তা দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন।”একজন ভাই, যিনি প্রাগ সম্মেলনে সংবাদ বিভাগে কাজ করছিলেন, তিনি বর্ণনা করেন: “রবিবার সকালে, সম্মেলনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখানে যে-শান্তি বিরাজ করছিল, তা তিনি লক্ষ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তার কিছুই করার নেই। তিনি এও উল্লেখ করেছিলেন যে, স্টেডিয়ামের চারপাশের স্থানীয় অধিবাসীরা কী ধরনের কার্যক্রম হচ্ছে, সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছিল। যখন তিনি যিহোবার সাক্ষিদের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, তখন তারা ভয় পেয়ে গিয়েছিল আর তাই সেই কর্মকর্তা তাদের বলেছিলেন: ‘লোকেরা যদি যিহোবার সাক্ষিদের মতো কিছুটাও আচরণ করে থাকে, তা হলে হয়তো পুলিশের দরকার হতো না।’”
অনেকে ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে!
ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল, বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে, খ্রিস্টানদের শান্তি ও একতায় একতাবদ্ধ করছে। (রোমীয় ১৪:১৯; ইফিষীয় ৪:২২-২৪; ফিলিপীয় ৪:৭) “মুক্তি সন্নিকট!” বিশেষ সম্মেলনগুলো এটার প্রমাণ দিয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরা ইতিমধ্যেই এমন বহু মহামারী থেকে মুক্ত হয়েছে, যেগুলো এই জগৎকে জর্জরিত করে। অসহিষ্ণুতা, আক্রমণাত্মক মনোভাব, বর্ণভেদ—হল সমাজের রোগগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটা যেগুলো—তাদের মধ্যে থেকে প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছে এবং তারা সেই দিনের জন্য সানন্দে অপেক্ষা করে আছে, যখন সমগ্র জগৎ এই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত হবে।
যারা এই সম্মেলনগুলোতে যোগ দিয়েছিল, তারা স্বচক্ষে এই একতা অনুভব করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, যা বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির সাক্ষিদের মধ্যে রয়েছে। এটা সম্মেলনের শেষে খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সকলে হাততালি দিচ্ছিল, নতুন বন্ধুদের জড়িয়ে ধরছিল এবং শেষবারের মতো ছবি তুলছিল। (১ করিন্থীয় ১:১০; ১ পিতর ২:১৭) সমস্ত রকমের সমস্যা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি সন্নিকট জেনে সুখী ও প্রত্যয়ী হয়ে, প্রতিনিধিরা ঈশ্বরের ‘জীবনের বাক্যকে’ আরও শক্ত করে ধরে রাখার পুনরুজ্জীবিত দৃঢ়সংকল্প নিয়ে তাদের নিজ নিজ দেশের মণ্ডলীতে ফিরে গিয়েছিল।—ফিলিপীয় ২:১৫, ১৬.
[পাদটীকা]
^ কার্যক্রমের যে-অংশগুলো অতিথি বক্তারা উপস্থাপন করেছিল, সেগুলো পোল্যান্ড জুড়ে আরও ছয়টা সম্মেলনস্থলে এবং স্লোভাকিয়ার একটাতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল।
[১০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
ছাব্বিশটা ভাষা যেন একটা ভাষায় কথা বলছিল
নয়টা সম্মেলনের সবকটাতেই, কার্যক্রম স্থানীয় ভাষাতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। জার্মানিতে সম্মেলন চলাকালে, বক্তৃতাগুলো আরও ১৮টা ভাষাতেও দেওয়া হয়েছিল। ডর্টমুন্ডে বক্তৃতাগুলো আরবি, পর্তুগিজ, ফার্সি, রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষায়; ফ্র্যাঙ্কফুর্টে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ এবং সার্বিয়ান/ক্রোয়েশীয় ভাষায়; হামবুর্গে ড্যানিশ, ডাচ্, তামিল এবং সুইডিশ ভাষায়; লিপজিগে চাইনিজ, তুর্কি এবং পোলিশ ভাষায়; আর মিউনিকে ইতালীয়, গ্রিক এবং জার্মান সাংকেতিক ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রাগ শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সব বক্তৃতা-ই ইংরেজি, চেক এবং রুশ ভাষায় দেওয়া হয়েছিল। ব্রাটিস্লাভায় কার্যক্রম ছিল ইংরেজি, স্লোভাক, স্লোভাকীয় সাংকেতিক ভাষা এবং হাংগেরীয় ভাষায়। হজু সম্মেলনের ভাষাগুলো ছিল ইউক্রেনীয়, পোলিশ, রুশ এবং পোলিশ সাংকেতিক ভাষা। আর পোজনানে সেগুলো পোলিশ আর ফিনিশ ভাষায় দেওয়া হয়েছিল।
সব মিলে ছাব্বিশটা ভাষা! সত্যিই, সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা ভাষার দিক থেকে বিভক্ত ছিল কিন্তু প্রেমের দ্বারা একতাবদ্ধ ছিল।
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
ফ্রাঙ্কফুর্টে ক্রোয়েশীয় প্রতিনিধিরা তাদের নিজেদের ভাষায় “নতুন জগৎ অনুবাদ” পেয়ে আনন্দিত হয়েছিল