সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না”

“মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না”

“মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না”

“মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর।”—রোমীয় ১২:১৭.

১. কোন ধরনের স্বভাব খুবই সাধারণ?

 একটা ছোট বাচ্চাকে যখন তার কোনো বন্ধু ধাক্কা দেয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই বাচ্চার প্রথম প্রতিক্রিয়া হল, বন্ধুকেও ধাক্কা দেওয়া। দুঃখজনক যে, আঘাতের বদলে আঘাত দেওয়ার এই স্বভাব কেবল ছোট বাচ্চাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও এইরকম আচরণ করে থাকে। কেউ যখন তাদেরকে অসন্তুষ্ট করে, তখন তারা প্রতিশোধ নিতে চায়। এটা ঠিক যে, বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি আক্ষরিকভাবে ধাক্কা দেবে না কিন্তু অনেকেই বিভিন্ন সূক্ষ্ম উপায়ে রূপকভাবে ধাক্কা দিয়ে থাকে। তারা হয়তো সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে ক্ষতিকর গুজব ছড়ায়, যিনি তাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছেন অথবা তার সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করার বিভিন্ন উপায় খোঁজে। যে-পদ্ধতিই ব্যবহার করা হোক না কেন, উদ্দেশ্য একই—প্রতিশোধ নেওয়া।

২. (ক) কেন সত্য খ্রিস্টানরা প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিরোধ করে? (খ) কোন প্রশ্নগুলো এবং বাইবেলের কোন অধ্যায়টি আমরা বিবেচনা করব?

যদিও প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সত্য খ্রিস্টানরা এর কাছে নতি স্বীকার করাকে প্রতিরোধ করে। এর পরিবর্তে, তারা প্রেরিত পৌলের এই উপদেশ পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না।” (রোমীয় ১২:১৭) কী আমাদেরকে এই উচ্চমান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে অনুপ্রাণিত করবে? বিশেষত, কাদের প্রতি আমাদের মন্দের পরিশোধে মন্দ করা উচিত নয়? আমরা যদি প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকি, তা হলে কোন উপকারগুলো লাভ করব? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য, আসুন আমরা পৌলের কথাগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে অধ্যয়ন করি এবং দেখি যে, কীভাবে রোমীয় ১২ অধ্যায় দেখায়, প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকা হল অনুসরণ করার মতো এক সঠিক, প্রেমময় এবং বিনয়ী কাজ। আমরা এক এক করে এই তিনটে বিষয় বিবেচনা করব।

‘অতএব আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি’

৩, ৪. (ক) রোমীয় ১২ অধ্যায় থেকে শুরু করে পৌল কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন আর তিনি যে “অতএব” শব্দটি ব্যবহার করেছেন, সেটার তাৎপর্য কী? (খ) ঈশ্বরের করুণার দ্বারা রোমের খ্রিস্টানদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত ছিল?

বারো অধ্যায় থেকে শুরু করে, পৌল সম্পর্কযুক্ত চারটে বিষয় বিবেচনা করেছেন, যেগুলো একজন খ্রিস্টানের জীবনকে প্রভাবিত করে থাকে। তিনি যিহোবার সঙ্গে, সহবিশ্বাসীর সঙ্গে, অবিশ্বাসী ব্যক্তির সঙ্গে এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে বর্ণনা করেন। পৌল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাসহ খারাপ প্রবণতাগুলো প্রতিরোধ করার একটা মূল কারণ রয়েছে, যখন তিনি এই কথা বলেছেন: “অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি।” (রোমীয় ১২:১) “অতএব” শব্দটি লক্ষ করুন, যেটির অর্থ “আগে উল্লেখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে।” বস্তুতপক্ষে পৌল বলেন, ‘সবেমাত্র আমি তোমাদের কাছে যে-বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তোমাদের তা-ই করার জন্য বিনতি করছি, যা এর পরে আমি তোমাদের বলব।’ রোমের সেই খ্রিস্টানদের কাছে পৌল কী ব্যাখ্যা করেছিলেন?

পৌল তার চিঠির প্রথম ১১টি অধ্যায়ে, যিহুদি ও পরজাতীয় ব্যক্তি উভয়ের সামনে ঈশ্বরের রাজ্যে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসক হওয়ার যে-অপূর্ব সুযোগ রয়েছে, সেই সম্বন্ধে আলোচনা করেন, যে-আশা জন্মগত ইস্রায়েল গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। (রোমীয় ১১:১৩-৩৬) সেই মূল্যবান সুযোগ কেবলমাত্র “ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে” সম্ভবপর হয়েছিল। ঈশ্বরের এই মহান অযাচিত দয়ার প্রতি খ্রিস্টানদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত? তাদের হৃদয় এতটা গভীর কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হওয়া উচিত ছিল যে, পৌল এর পরে যা বলেছেন, তা করার জন্য তারা পরিচালিত হবে: “তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।” (রোমীয় ১২:১) কিন্তু, কীভাবে সেই খ্রিস্টানরা প্রকৃতপক্ষে নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে “বলিরূপে” উৎসর্গ করতে পারত?

৫. (ক) কীভাবে একজন ব্যক্তি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে “বলিরূপে” উৎসর্গ করতে পারেন? (খ) কোন নীতি দ্বারা একজন খ্রিস্টানের আচরণ প্রভাবিত হওয়া উচিত?

পৌল ব্যাখ্যা করে চলেন: “এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” (রোমীয় ১২:২) জগতের আত্মা দ্বারা নিজেদের চিন্তাভাবনাকে পরিচালিত হতে দেওয়ার পরিবর্তে, তাদের মনকে খ্রিস্টের চিন্তাধারা অনুযায়ী পরিচালিত হতে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। (১ করিন্থীয় ২:১৬; ফিলিপীয় ২:৫) সেই নীতি দ্বারা সমস্ত প্রকৃত খ্রিস্টানের ও সেইসঙ্গে আজকে আমাদের রোজকার আচরণ প্রভাবিত হওয়া উচিত।

৬. রোমীয় ১২:১, ২ পদে প্রাপ্ত পৌলের যুক্তির ওপর ভিত্তি করে, কী আমাদেরকে প্রতিশোধ নেওয়া এড়িয়ে চলতে পরিচালিত করে?

কীভাবে রোমীয় ১২:১, ২ পদে প্রাপ্ত পৌলের যুক্তি আমাদের সাহায্য করে? রোমের আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মতো আমরাও ঈশ্বরের সেই ক্রমাগত এবং অনেক করুণা প্রকাশের জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, যেগুলো তিনি আমাদের দেখিয়েছেন এবং আমাদের রোজকার জীবনে দেখিয়ে যাচ্ছেন। অতএব, কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ এক হৃদয় আমাদেরকে আমাদের সমস্ত শক্তি, সম্পদ ও সামর্থ অনুযায়ী ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য পরিচালিত করে। এ ছাড়া, সেই আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা আমাদেরকে জগতের মতো নয় বরং খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করার জন্য যথাসাধ্য করতে পরিচালিত করে। আর খ্রিস্টের মতো মন রাখা, অন্যদের সঙ্গে—সহবিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উভয়ের সঙ্গে—আমরা কীভাবে আচরণ করি, তাতে প্রভাব ফেলে। (গালাতীয় ৫:২৫) উদাহরণস্বরূপ: আমরা যদি খ্রিস্টের মতো চিন্তা করি, তা হলে আমরা প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিরোধ করার তাগিদ অনুভব করে থাকি।—১ পিতর ২:২১-২৩.

“প্রেম নিষ্কপট হউক”

৭. রোমীয় ১২ অধ্যায়ে কোন ধরনের প্রেম সম্বন্ধে বিবেচনা করা হয়েছে?

আমরা মন্দের পরিশোধে মন্দ করা থেকে বিরত থাকি কেবল এই কারণেই নয় যে, এটা সঠিক কাজ কিন্তু সেইসঙ্গে এটা প্রেমময় কাজও। লক্ষ করুন যে, কীভাবে প্রেরিত পৌল এর পরে প্রেমের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিবেচনা করেন। রোমীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে পৌল ঈশ্বর ও খ্রিস্টের প্রেম সম্বন্ধে উল্লেখ করার সময় বেশ কয়েক বার “প্রেম” (গ্রিক ভাষায় আগাপে) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। (রোমীয় ৫:৫, ৮; ৮:৩৫, ৩৯) কিন্তু, ১২ অধ্যায়ে পৌল এক ভিন্ন উপায়ে—সহমানবদের প্রতি দেখানো প্রেমের বিষয়ে বলতে গিয়ে—আগাপে শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আধ্যাত্মিক বর বা দান বিভিন্ন রকমের হতে পারে এবং কোনো কোনো বিশ্বাসীর মধ্যে যে সেই দান রয়েছে, এই সম্বন্ধে বলার পর পৌল এমন একটা গুণের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, যা সমস্ত খ্রিস্টানের গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত। তিনি বলেন: “প্রেম নিষ্কপট হউক।” (রোমীয় ১২:৪-৯) অন্যদের প্রতি প্রেম দেখানো সত্য খ্রিস্টানদের এক মৌলিক চিহ্ন। (মার্ক ১২:২৮-৩১) পৌল আমাদের এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করেছেন যে, খ্রিস্টান হিসেবে আমরা যে-প্রেম দেখাই, তা যেন অকপট হয়।

৮. কীভাবে আমরা নিষ্কপট প্রেম দেখাতে পারি?

অধিকন্তু, কীভাবে নিষ্কপট প্রেম দেখানো যায়, তা এই কথাগুলো বলার দ্বারা পৌল উল্লেখ করেছিলেন: “যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর; যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হও।” (রোমীয় ১২:৯) “নিতান্তই ঘৃণা কর” এবং “আসক্ত হও” খুবই জোরালো শব্দ। আমাদের কেবল মন্দ বিষয়ের পরিণতিকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে স্বয়ং মন্দতাকেও ঘৃণা করতে হবে। (গীতসংহিতা ৯৭:১০) “আসক্ত হও” অভিব্যক্তিটি এমন একটি গ্রিক ক্রিয়াপদ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, যেটির আক্ষরিক অর্থ হল “আঠার মতো লেগে থাকা।” প্রকৃত প্রেম রয়েছে এমন একজন খ্রিস্টান মঙ্গলভাব গুণটির সঙ্গে এতটা দৃঢ়ভাবে আঠার মতো লেগে থাকেন বা সংযুক্ত থাকেন যে, সেটি তার ব্যক্তিত্বের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

৯. পৌল বার বার কোন পরামর্শ দিয়েছেন?

পৌল এক বিশেষ উপায়ে প্রেম প্রকাশ করার বিষয়ে বার বার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “যাহারা তাড়না করে, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ কর, আশীর্ব্বাদ কর, শাপ দিও না।” “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না।” “হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না।” “তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।” (রোমীয় ১২:১৪, ১৭-১৯, ২১) পৌলের কথাগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, অবিশ্বাসীদের সঙ্গে এমনকি যারা আমাদের বিরোধিতা করে, তাদের সঙ্গে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত।

“যাহারা তাড়না করে, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ কর”

১০. কীভাবে আমরা আমাদের তাড়নাকারীদের আশীর্বাদ করতে পারি?

১০ কীভাবে আমরা পৌলের এই পরামর্শ মেনে চলতে পারি: “যাহারা তাড়না করে, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ কর”? (রোমীয় ১২:১৪) যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও।” (মথি ৫:৪৪; লূক ৬:২৭, ২৮) তাই, একটা যে-উপায়ে আমরা তাড়নাকারীদের আশীর্বাদ করতে পারি, সেটা হল তাদের জন্য প্রার্থনা করে, ঈশ্বরের কাছে এই অনুরোধ করে যে, কেউ যদি অজ্ঞানতাবশত আমাদের বিরোধিতা করে, তা হলে যিহোবা যেন সত্যের প্রতি তাদের চোখ খুলে দেন। (২ করিন্থীয় ৪:৪) এটা ঠিক যে, একজন তাড়নাকারীকে আশীর্বাদ করার জন্য ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করা অস্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আমাদের মন যত বেশি খ্রিস্টের চিন্তাধারার মতো হবে, আমরা তত বেশি আমাদের শত্রুদের প্রতি প্রেম দেখাতে সমর্থ হব। (লূক ২৩:৩৪) এই ধরনের প্রেম দেখানোর ফল কী হতে পারে?

১১. (ক) স্তিফানের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) পৌলের জীবনের মাধ্যমে যেমন দেখানো হয়েছে, কিছু তাড়নাকারীর মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখা যেতে পারে?

১১ স্তিফান ছিলেন এইরকম একজন ব্যক্তি, যিনি তার তাড়নাকারীদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন আর তার প্রার্থনা নিষ্ফল হয়নি। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের অল্প কিছুদিন পরই, স্তিফানকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বিরোধীরা গ্রেপ্তার করে, টেনেহিঁচড়ে যিরূশালেমের বাইরে নিয়ে যায় এবং পাথর মারে। মারা যাওয়ার আগে, তিনি উচ্চ স্বরে বলেছিলেন: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] ইহাদের বিপক্ষে এই পাপ ধরিও না।” (প্রেরিত ৭:৫৮–৮:১) সেই দিন স্তিফান যাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন শৌল, যিনি স্তিফানের হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং তা অনুমোদন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, পুনরুত্থিত যিশু শৌলকে দেখা দিয়েছিলেন। সেই প্রাক্তন তাড়নাকারী খ্রিস্টের একজন অনুসারী ও সেইসঙ্গে প্রেরিত পৌল বলে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, যিনি হলেন রোমীয়দের কাছে লেখা চিঠির লেখক। (প্রেরিত ২৬:১২-১৮) স্তিফানের প্রার্থনা অনুযায়ী স্পষ্টতই যিহোবা পৌলকে একজন তাড়নাকারী হিসেবে তার পাপের জন্য ক্ষমা করেছিলেন। (১ তীমথিয় ১:১২-১৬) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাহারা তাড়না করে, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ কর”! অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি জানতেন যে, কিছু তাড়নাকারী হয়তো একসময় ঈশ্বরের দাস হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দিনেও একইভাবে কিছু তাড়নাকারী, যিহোবার সাক্ষিদের শান্তিপ্রবণ আচরণ দেখে বিশ্বাসী হয়েছে।

“মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক”

১২. রোমীয় ১২:১৭ পদে প্রাপ্ত উপদেশ কীভাবে ৯ পদে পৌল যা বলেছিলেন, সেটার এক যুক্তিযুক্ত উপসংহার?

১২ বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে পৌলের পরবর্তী উপদেশ হল: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না।” এই উক্তি এর আগে বলা তার এই কথাগুলোর যুক্তিযুক্ত উপসংহার: “যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর।” বস্তুতপক্ষে, কীভাবে একজন ব্যক্তি বলতে পারেন যে, তিনি মন্দতাকে সত্যিই ঘৃণা করেন, যদি তিনি অন্যদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মন্দতাকেই ব্যবহার করে থাকেন? তা করা “নিষ্কপট” প্রেম দেখানোর বিপরীত হবে। এরপর পৌল বলেন: “সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর।” (রোমীয় ১২:৯, ১৭) কীভাবে আমরা এই কথাগুলো কাজে লাগাতে পারি?

১৩. “সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে” আমরা কেমন আচরণ করে থাকি?

১৩ এর আগে, করিন্থীয়দের কাছে লেখা তার চিঠিতে পৌল প্রেরিতরা যে-তাড়নার মুখোমুখি হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমরা জগতের ও দূতগণের ও মনুষ্যদের কৌতুকাস্পদ [“মানুষদের সামনে দর্শনীয় একটা দৃশ্যের মতো,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] হইয়াছি। . . . নিন্দিত হইতে হইতে আশীর্ব্বাদ করিতেছি, তাড়িত হইতে হইতে সহ্য করিতেছি, অপবাদিত হইতে হইতে বিনয় করিতেছি।” (১ করিন্থীয় ৪:৯-১৩) একইভাবে, আজকেও এই জগতের লোকেরা সত্য খ্রিস্টানদের দেখছে। আমাদের চারপাশের লোকেরা যখন দেখে যে, এমনকি আমাদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা সত্ত্বেও আমরা উত্তম কাজগুলো করছি, তখন তারা হয়তো আমাদের খ্রিস্টীয় বার্তার প্রতি আরও অনুকূলভাবে সাড়া দিতে পারে।—১ পিতর ২:১২.

১৪. শান্তি স্থাপন করার জন্য আমাদের কতদূর পর্যন্ত যাওয়া উচিত?

১৪ কিন্তু, শান্তি স্থাপন করার জন্য আমাদের কতদূর পর্যন্ত যাওয়া উচিত? ঠিক ততটুকু যাওয়া উচিত, যতটুকু আমাদের পক্ষে সম্ভব। পৌল তার খ্রিস্টান ভাইদের বলেন: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।” (রোমীয় ১২:১৮) “যদি সাধ্য হয়” এবং “তোমাদের যত দূর হাত থাকে,” এই বিশেষণীয় অভিব্যক্তিগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, অন্যদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা হয়তো সবসময় সম্ভবপর না-ও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেবল মানুষের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য আমরা ঈশ্বরের কোনো আজ্ঞা অমান্য করব না। (মথি ১০:৩৪-৩৬; ইব্রীয় ১২:১৪) তা সত্ত্বেও, “মনুষ্যমাত্রের সহিত” শান্তি স্থাপন করার জন্য আমরা—ধার্মিক নীতিগুলোর ব্যাপারে আপোশ না করে—যুক্তিযুক্তভাবে যথাসাধ্য করে থাকি।

“তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না”

১৫. রোমীয় ১২:১৯ পদে প্রতিশোধ না নেওয়ার কোন কারণ পাওয়া যায়?

১৫ কেন আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়, সেই সম্বন্ধে পৌল আরেকটা জোরালো কারণ সম্বন্ধে জানান; এটা হল অনুসরণ করার মতো এক বিনয়ী কাজ। তিনি বলেন: “হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও, কারণ লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন।’” (রোমীয় ১২:১৯) যে-খ্রিস্টান প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন, তিনি অহংকারী ব্যক্তি। তিনি সেই ভূমিকা গ্রহণ করার দুঃসাহস দেখান, যা ঈশ্বরের। (মথি ৭:১) অধিকন্তু, বিষয়গুলো নিজের হাতে নেওয়ার মাধ্যমে তিনি যিহোবার এই আশ্বাসের ওপর বিশ্বাসের অভাব দেখান: “আমিই প্রতিফল দিব।” এর বিপরীতে, সত্য খ্রিস্টানরা এই নির্ভরতা রাখে যে, যিহোবা “আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতীকার করিবেন।” (লূক ১৮:৭, ৮; ২ থিষলনীকীয় ১:৬-৮) তারা অন্যায় কাজের প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়টা বিনয়ের সঙ্গে ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেয়।—যিরমিয় ৩০:২৩, ২৪; রোমীয় ১:১৮.

১৬, ১৭. (ক) কারো মাথার ওপর ‘জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া রাখিবার’ অর্থ কী? (খ) ব্যক্তিগতভাবে আপনি কি দেখেছেন যে, কীভাবে দয়া একজন অবিশ্বাসী ব্যক্তির হৃদয়কে নরম করেছে? যদি দেখে থাকেন, তা হলে একটা উদাহরণ দিন।

১৬ কোনো শত্রুর ওপর প্রতিশোধ নেওয়া সম্ভবত তার হৃদয়কে কঠিন করে তুলতে পারে কিন্তু তার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করা হয়তো তার হৃদয়কে নরম করতে পারে। কেন? রোমের খ্রিস্টানদের প্রতি বলা পৌলের কথাগুলো লক্ষ করুন। তিনি বলেন: “তোমার শত্রু যদি ক্ষুধিত হয়, তাহাকে ভোজন করাও; যদি সে পিপাসিত হয়, তাহাকে পান করাও; কেননা তাহা করিলে তুমি তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া রাখিবে।” (রোমীয় ১২:২০; হিতোপদেশ ২৫:২১, ২২) এর অর্থ কী?

১৭ “তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া” রাখা হল এক রূপক অভিব্যক্তি, যা বাইবেলের সময়ে ধাতু গলানোর পদ্ধতি থেকে এসেছে। ধাতুকে একটা অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে রাখা হতো আর অঙ্গার বা কয়লার একটা স্তর কেবল সেই ধাতুর নীচেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এর ওপরেও রাখা হতো। ওপরে রাখা জ্বলন্ত কয়লার রাশি উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে দিত, যাতে কঠিন ধাতু গলে যায় এবং সেই ধাতুতে বিদ্যমান ভেজাল দ্রব্যাদি পৃথক হয়। একইভাবে, একজন বিরোধীর প্রতি সদয় কাজগুলো করার মাধ্যমে আমরা হয়তো তার হৃদয়ের কঠিনতা “গলাতে” এবং তার উত্তম গুণাবলি বের করে আনতে পারি। (২ রাজাবলি ৬:১৪-২৩) বস্তুতপক্ষে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অনেক সদস্য সেই সদয় কাজগুলোর কারণে প্রথম সত্য উপাসনার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল, যেগুলো যিহোবার দাসেরা তাদের জন্য করেছিল।

যেকারণে আমরা প্রতিশোধ নিই না

১৮. কেন প্রতিশোধ না নেওয়া হল এক সঠিক, প্রেমময় এবং বিনয়ী কাজ?

১৮ রোমীয় ১২ অধ্যায় নিয়ে এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ করেছি যে, কেন আমরা ‘মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করি না।’ প্রথমত, প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকা হল অনুসরণ করার মতো এক সঠিক কাজ। আমাদের প্রতি দেখানো ঈশ্বরের করুণার পরিপ্রেক্ষিতে, যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করা এবং স্বেচ্ছায় তাঁর আজ্ঞাগুলো—যার অন্তর্ভুক্ত আমাদের শত্রুদেরও প্রেম করার আজ্ঞা—পালন করা সঠিক ও যুক্তিযুক্ত। দ্বিতীয়ত, মন্দের পরিশোধে কারো মন্দ না করা হল অনুসরণ করার মতো এক প্রেমময় কাজ। প্রতিশোধ না নেওয়ার ও শান্তি স্থাপন করার মাধ্যমে আমরা প্রেমের সঙ্গে এমনকি প্রচণ্ড বিরোধী কিছু ব্যক্তিকেও যিহোবার উপাসক হওয়ার জন্য সাহায্য করার আশা করি। তৃতীয়ত, মন্দের পরিশোধে মন্দ না করা হল অনুসরণ করার মতো এক বিনয়ী কাজ। নিজে নিজে প্রতিশোধ নেওয়ার মাধ্যমে অহংকার দেখানো হবে কারণ যিহোবা বলেন: “প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম।” ঈশ্বরের বাক্য আমাদের এও সাবধান করে: “অহঙ্কার আসিলে অপমানও আইসে; কিন্তু প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী।” (হিতোপদেশ ১১:২) অন্যায় কাজের প্রতিশোধ নেওয়ার ভার বিজ্ঞতার সঙ্গে ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেওয়া দেখায় যে, আমরা নম্র বা বিনয়ী।

১৯. পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

১৯ অন্যদের সঙ্গে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত, সেই বিষয়ে পৌল তার আলোচনার উপসংহার করেন। তিনি খ্রিস্টানদের পরামর্শ দেন: “তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।” (রোমীয় ১২:২১) আজকে আমরা কোন মন্দ প্রভাবগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি? কীভাবে আমরা সেগুলোকে পরাজিত করতে পারি? এগুলো ও সেইসঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

রোমীয় ১২ অধ্যায়ে, বার বার কোন উপদেশ পাওয়া যায়?

• কী আমাদেরকে প্রতিশোধ না নিতে অনুপ্রাণিত করবে?

• আমরা যদি “মন্দের পরিশোধে . . . মন্দ” না করি, তা হলে কোন উপকারগুলো লাভ করব ও সেইসঙ্গে অন্যেরা কোন উপকারগুলো পাবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২২ পৃষ্ঠার বাক্স]

রোমীয় ১২ অধ্যায় এই ব্যক্তিদের সঙ্গে একজন খ্রিস্টানের সম্পর্ক সম্বন্ধে বর্ণনা করে

• যিহোবা

• সহবিশ্বাসী

• অবিশ্বাসী

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

রোমীয়দের কাছে লেখা পৌলের চিঠিতে খ্রিস্টানদের জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ রয়েছে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

শিষ্য স্তিফানের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?