সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার সমাধান কী?
সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার সমাধান কী?
স্পেনে একজন রেফারি একটা ফুটবল ম্যাচকে মাঝপথে স্থগিত করেন। কেন? কারণ ক্যামেরুন থেকে খেলতে আসা একজন খেলোয়াড়কে লক্ষ্য করে দর্শকরা এতটাই অপমানজনক মন্তব্য করছিল যে, তিনি মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। রাশিয়াতে আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার লোকেদের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে; ২০০৪ সালে, বর্ণগত ভেদাভেদের কারণে সেখানে আক্রমণের ঘটনা শতকরা ৫৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৫ সালে ৩৯৪-এ পৌঁছেছে। ব্রিটেনে একটা সমীক্ষায়, এশিয়ার এবং কৃষ্ণাঙ্গদের এক তৃতীয়াংশ লোক মনে করেছিল যে, তারা বর্ণগত বৈষম্যের কারণেই তাদের চাকরি হারিয়েছিল। এই উদাহরণগুলো বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান এক প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে।
সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার গম্ভীরতার মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে—অপমানজনক বা অবিবেচনাপূর্ণ মন্তব্যগুলো করা থেকে শুরু করে সরকারিভাবে একটা সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্তও করা হয়ে থাকে। * সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার মূলে কী রয়েছে? কীভাবে আমরা এটা প্রদর্শন করা এড়িয়ে চলতে পারি? এইরকম আশা করা কি যুক্তিযুক্ত যে, একদিন সমগ্র মানব পরিবার একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করবে? বাইবেল এই বিষয়ে এক আগ্রহজনক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
নির্যাতন এবং ঘৃণা
“বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনস্কল্পনা দুষ্ট,” বাইবেল বলে। (আদিপুস্তক ৮:২১) তাই, কিছু লোক অন্যদের উপদ্রব বা নির্যাতন করে আনন্দ পায়। বাইবেল আরও বলে: “দেখ, উপদ্রুত লোকদের অশ্রুপাত হইতেছে, কিন্তু তাহাদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই; উপদ্রবী লোকদের হস্তে বল আছে।”—উপদেশক ৪:১.
বাইবেল এও দেখায় যে, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বহু আগে থেকেই রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের সাধারণ কাল পূর্ব ১৮ শতাব্দীতে, একজন মিশরীয় ফরৌণ, ইব্রীয় যাকোব এবং তার বড় পরিবারকে মিশরে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে আরেকজন ফরৌণ অভিবাসীদের এই বিশাল দলকে হুমকিস্বরূপ বলে মনে করেছিলেন। এর ফলে, বিবরণ বলে: “তিনি আপন প্রজাদিগকে কহিলেন, দেখ, আমাদের অপেক্ষা ইস্রায়েল-সন্তানদের জাতি বহুসংখ্যক ও বলবান্; আইস, আমরা তাহাদের সহিত বিবেচনাপূর্ব্বক ব্যবহার করি, পাছে তাহারা বাড়িয়া উঠে, . . . অতএব তাহারা ভার বহন দ্বারা উহাদিগকে দুঃখ দিবার জন্য উহাদের উপরে কার্য্যশাসকদিগকে নিযুক্ত করিল।” (যাত্রাপুস্তক ১:৯-১১) এমনকি মিশরীয়রা, যাকোবের বংশধরদের সমস্ত নবজাত পুত্র সন্তানকে হত্যা করার আদেশ পর্যন্ত দিয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ১:১৫, ১৬.
মূল কারণটা কী?
সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে জগতের ধর্মগুলো খুব কদাচিৎ সাহায্যকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটা ঠিক যে, কিছু ব্যক্তি বীরত্বের সঙ্গে নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে ধর্ম প্রায়ই নির্যাতনকারীদের পক্ষ নিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে এইরকমটাই ঘটেছিল, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ লোকেদের নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টা আইনের মাধ্যমে ও যথাযথ বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দ্বারা বলবৎ করা হয়েছিল এবং মিশ্র বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য থাকাকালীনও এমনটা হয়েছিল, যখন সংখ্যালঘুরা আইনের মাধ্যমে তাদের প্রভাবশালী পদমর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিল, যেটার অন্তর্ভুক্ত ছিল বিভিন্ন বর্ণের লোকেদের মধ্যে বিবাহের নিষেধাজ্ঞা। প্রতিটা ঘটনায়, যে-সাম্প্রদায়িক দল অসহিষ্ণুতাকে বৃদ্ধি করেছিল, সেটার অন্তর্ভুক্ত কিছু ব্যক্তি খুবই ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিল।
কিন্তু, বাইবেল সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার এক প্রধান কারণ সম্বন্ধে জানায়। এটি ব্যাখ্যা করে যে, কেন কিছু সাম্প্রদায়িক দল অন্যদের ওপর নির্যাতন করে। এটি বলে: “যে প্রেম করে না, সে ঈশ্বরকে জানে না, কারণ ঈশ্বর প্রেম। যদি কেহ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী; কেননা যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে ১ যোহন ৪:৮, ২০) এই বিবৃতিটি সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার মূল কারণকে শনাক্ত করে। লোকেরা এমনটা করে চলে—তা তারা নিজেদের ধর্মপ্রাণ বলে দাবি করুক বা না-ই করুক—কারণ তারা ঈশ্বরকে জানতে বা তাঁকে ভালবাসতে পারেনি।
যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না।” (ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান—সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তি
ঈশ্বরকে জানা ও তাঁকে ভালবাসা কীভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উৎপন্ন করে? ঈশ্বরের বাক্য কোন জ্ঞান প্রকাশ করে, যা লোকেদেরকে সেই ব্যক্তিদের ক্ষতি করা থেকে বিরত করে, যাদেরকে আলাদা বলে মনে হয়? বাইবেল জানায় যে, যিহোবা হলেন সমস্ত মানুষের পিতা। এটি বলে: “আমাদের জ্ঞানে একমাত্র ঈশ্বর সেই পিতা, যাঁহা হইতে সকলই হইয়াছে।” (১ করিন্থীয় ৮:৬) এটি আরও বলে: “তিনি এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন।” (প্রেরিত ১৭:২৬) তাই, সমস্ত মানুষই মূলত ভাই ভাই।
সমস্ত সাম্প্রদায়িক দলই ঈশ্বরের কাছ থেকে তাদের জীবন পেয়েছে বলে গর্বিত হতে পারে কিন্তু সকলেরই তাদের পূর্বপুরুষ সম্বন্ধে আক্ষেপ করার কারণ রয়েছে। বাইবেল লেখক পৌল বলেছিলেন: “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, . . . জগতে প্রবেশ করিল।” এর ফলে “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩; ৫:১২) যিহোবা হলেন বৈচিত্র্যের ঈশ্বর—যেকোনো দুটো সৃষ্ট প্রাণী হুবহু একইরকম নয়। তা সত্ত্বেও, তিনি কোনো সাম্প্রদায়িক দলকে শ্রেষ্ঠ বোধ করার ভিত্তি প্রদান করেননি। তাই, কোনো ব্যক্তির নিজ সম্প্রদায় অন্যদের সম্প্রদায়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে থাকা এই মনোভাব শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। স্পষ্টতই, ঈশ্বরের কাছ থেকে যে-জ্ঞান আমরা পেয়ে থাকি, তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বৃদ্ধি করে।
সমস্ত জাতির জন্য ঈশ্বরের চিন্তা
কেউ কেউ এইরকম ভেবেছে যে, ইস্রায়েলীদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়ে এবং তাদেরকে অন্য জাতিগুলো থেকে পৃথক থাকার শিক্ষা দিয়ে স্বয়ং ঈশ্বরই সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্বের বৃদ্ধি করেছিলেন কি না। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:১২) এক সময়, ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে, তাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামের অসাধারণ বিশ্বাসের কারণে তাঁর বিশেষ সম্পত্তি হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। ঈশ্বর নিজে প্রাচীন ইস্রায়েলকে শাসন করেছিলেন, তাদের শাসকদের মনোনীত করেছিলেন ও তাদেরকে আইনবিধি প্রদান করেছিলেন। ইস্রায়েল যে-সময়ে এই ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছিল, অন্য লোকেরা তখন ঈশ্বরের সরকারের ফলগুলো ও মানব সরকারের ফলগুলোর মধ্যে বৈসাদৃশ্য দেখতে পেয়েছিল। এ ছাড়া, যিহোবা সেই সময়ে ইস্রায়েল জাতিকে, ঈশ্বরের সঙ্গে মানবজাতির এক উত্তম সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করার ক্ষেত্রে এক বলিদানের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধেও শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাই ইস্রায়েলের সঙ্গে যিহোবার আচরণ সমস্ত জাতিকে উপকৃত করেছিল। এই বিষয়টা, অব্রাহামকে তিনি যা বলেছিলেন তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ।”—আদিপুস্তক ২২:১৮.
মীখা ৪:২-৪.
অধিকন্তু, যিহুদিরা ঈশ্বরের পবিত্র বচনকলাপ শোনার এবং সেই জাতি হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিল, যে-জাতির মধ্যে মশীহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু, এটাও এইজন্যই ছিল যাতে সমস্ত জাতি উপকৃত হয়। যিহুদিদেরকে দেওয়া ইব্রীয় শাস্ত্রে এক হৃদয়গ্রাহী সময়ের বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে, যখন সমস্ত সাম্প্রদায়িক দল প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করবে: “অনেক জাতি যাইতে যাইতে বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন . . . এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না। কিন্তু প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—যদিও যিশু খ্রিস্ট নিজে যিহুদিদের কাছে প্রচার করেছিলেন কিন্তু তিনি এও বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে।” (মথি ২৪:১৪) কোনো জাতিই সুসমাচার শোনা থেকে বাদ পড়বে না। এই ক্ষেত্রে যিহোবা সমস্ত সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে পক্ষপাতশূন্য আচরণ করে এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.
প্রাচীন ইস্রায়েলকে দেওয়া ঈশ্বরের আইনগুলো এটাও প্রকাশ করে যে, তিনি সমস্ত জাতির জন্য চিন্তা করেন। লক্ষ করুন যে, ব্যবস্থা কীভাবে তাদের দেশে বসবাসকারী ন-ইস্রায়েলীয়দের প্রতি শুধুমাত্র সহিষ্ণুতা দেখানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে বলেছিল, যখন এটি বলেছিল: “তোমাদের নিকটে তোমাদের স্বদেশীয় লোক যেমন, তোমাদের সহপ্রবাসী বিদেশী লোকও তেমনি হইবে; তুমি তাহাকে আপনার মত প্রেম করিও; কেননা মিসর দেশে তোমরাও বিদেশী ছিলে।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৪) ঈশ্বরের আইনগুলোর মধ্যে অনেক আইন ইস্রায়েলীয়দেরকে অভিবাসীদের প্রতি সদয় হতে শিক্ষা দিয়েছিল। তাই যিশুর একজন পূর্বপুরুষ বোয়স যখন এক অভাবী বিদেশি স্ত্রীলোককে শস্য কুড়াতে দেখেছিলেন, তখন সেই স্ত্রীলোক যাতে যথেষ্ট পরিমাণ শস্য সংগ্রহ করতে পারেন, সেইজন্য তার শস্য ছেদনকারীরা কিছু ছেড়ে যাচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার দ্বারা ঈশ্বরের কাছ থেকে তিনি যা শিখেছিলেন, সেই অনুসারে কাজ করেছিলেন।—রূতের বিবরণ ২:১, ১০, ১৬.
যিশু দয়ার সম্বন্ধে শিক্ষা দেন
যিশু অন্য যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান আরও বেশি করে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের দেখিয়েছিলেন যে, সেই ব্যক্তিদের প্রতি কীভাবে সদয় হওয়া যায়, যারা আলাদা। একবার তিনি একজন শমরীয় স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথোপকথন শুরু করেছিলেন। শমরীয়রা এমন এক সাম্প্রদায়িক দল ছিল, যাদেরকে অনেক যিহুদি ঘৃণা করত আর তাই সেই স্ত্রীলোকটি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই আলোচনার সময়ে, যিশু সদয়ভাবে সেই স্ত্রীলোককে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, কীভাবে তিনি অনন্তজীবন লাভ করতে পারেন।—যোহন ৪:৭-১৪.
এ ছাড়া যিশু একজন প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের দৃষ্টান্ত দিয়ে আমাদেরকে অন্য সাম্প্রদায়িক দলগুলো থেকে আসা লোকেদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে তা শিখিয়েছিলেন। এই ব্যক্তি এমন এক যিহুদিকে দেখতে পেয়েছিলেন, যিনি দস্যুদের দ্বারা আক্রমণের ফলে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। সেই শমরীয় হয়তো খুব সহজেই যুক্তি করতে পারতেন: ‘আমি কেন একজন যিহুদিকে সাহায্য করব? যিহুদিরা তো আমার লোকেদের ঘৃণা করে।’ কিন্তু যিশু সেই শমরীয়কে এমনভাবে লূক ১০:৩০-৩৭.
তুলে ধরেছিলেন, যার অপরিচিতদের প্রতি এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এমনকি যদিও অন্য পথচারীরা আহত ব্যক্তিকে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিল কিন্তু সেই শমরীয় ‘করুণাবিষ্ট হইয়াছিলেন’ এবং অনেক সাহায্য প্রদান করেছিলেন। যিশু এই দৃষ্টান্তের উপসংহারে এই কথা বলেছিলেন যে, কেউ যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে চায়, তা হলে তাকেও একইরকম কাজ করতে হবে।—যারা ঈশ্বরকে খুশি করতে চায়, তাদেরকে প্রেরিত পৌল শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, তারা যেন নিজেদের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করে এবং লোকেদের সঙ্গে ঈশ্বর যেভাবে আচরণ করেন, তা অনুকরণ করে। পৌল লিখেছিলেন: “কেননা তোমরা পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করিয়াছ, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিয়াছ, যে আপন সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে। এস্থানে গ্রীক কি যিহূদী, ছিন্নত্বক্ কি অচ্ছিন্নত্বক্, বর্ব্বর, স্কুথীয় . . . বলিয়া কিছু হইতে পারে না . . . আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।”—কলসীয় ৩:৯-১৪.
ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান কি লোকেদের পরিবর্তিত করে?
যিহোবা ঈশ্বরকে জানা কি প্রকৃতপক্ষে অন্য সাম্প্রদায়িক দলের লোকেদের সঙ্গে লোকেরা যেভাবে আচরণ করে থাকে, সেই ব্যাপারে পরিবর্তন ঘটায়? কানাডাতে বসবাসরত এশিয়ার একজন অভিবাসী ভদ্রমহিলার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন, যিনি সেখানে বৈষম্যের শিকার হয়ে খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল এবং তারা তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিল। পরে তিনি তাদেরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটা চিঠি লিখেছিলেন, যেটাতে তিনি বলেছিলেন: ‘আপনারা ছিলেন খুবই ভাল ও সদয় শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি। যখন আমি বুঝতে পারি যে, আপনারা অন্য শ্বেতাঙ্গ লোকেদের থেকে সত্যিই আলাদা, তখন আমি ভেবেছিলাম যে, কেন আপনারা আলাদা। আমি বিষয়টা নিয়ে অনেক ভেবেছি ও শেষে এই উপসংহারে এসেছি যে, আপনারা হলেন ঈশ্বরের সাক্ষি। বাইবেলে নিশ্চয়ই কিছু রয়েছে। আমি আপনাদের সভাগুলোতে অনেক শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, বাদামি ও মঙ্গোলীয় লোকেদের দেখেছিলাম, যাদের হৃদয়ের রং ছিল একই—স্বচ্ছ—কারণ তারা ছিল ভাইবোন। এখন আমি জানি যে, কে তাদেরকে এইরকম লোক করে তুলেছে। আপনাদের ঈশ্বরই তা করেছেন।’
ঈশ্বরের বাক্য এমন এক সময় সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে, যখন “পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) এমনকি এখন, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতাস্বরূপ, “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” এক বিস্তর লোক, যাদের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ, তারা সত্য উপাসনায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) তারা এটা দেখার জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করে রয়েছে, যখন বিশ্বব্যাপী এক সমাজে ঘৃণার স্থানে প্রেম জায়গা করে নেবে, যা শীঘ্রই অব্রাহামের কাছে প্রকাশিত যিহোবার এই উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবে: “পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল আশীর্ব্বাদ পাইবে।”—প্রেরিত ৩:২৫.
[পাদটীকা]
^ “সাম্প্রদায়িক” শব্দটি এমন এক জনসংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছুকে বর্ণনা করে, যাদেরকে বর্ণগত, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত বা সাংস্কৃতিগতভাবে অন্যদের থেকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
[৪, ৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের বিদেশিদেরকে ভালবাসতে শিখিয়েছিল
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
[৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ঈশ্বর কোনো সাম্প্রদায়িক দলকেই শ্রেষ্ঠ বোধ করার কোনো কারণ প্রদান করেননি