সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার আত্মা কি বেঁচে থাকবে?

আপনার আত্মা কি বেঁচে থাকবে?

আপনার আত্মা কি বেঁচে থাকবে?

 আমরা কি কেবল রক্তমাংস দিয়েই গঠিত? নাকি আমরা যেসমস্ত উপাদান দিয়ে তৈরি, সেগুলো ছাড়াও আরও অন্যান্য কিছু দিয়ে গঠিত? আমরা কি আজ আছি কাল নেই? নাকি আমাদের কোনো অদৃশ্য অংশ মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে?

যদিও জগতের ধর্মগুলো পরকাল সম্বন্ধে এক বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস গড়ে তুলেছে কিন্তু সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই একটা মৌলিক ধারণার সঙ্গে একমত: একজন ব্যক্তির মধ্যে অমর কোনো অংশ রয়েছে আর মৃত্যুর পরেও তা বেঁচে থাকে। অনেক লোক বিশ্বাস করে যে, এই “কোনো অংশ” হল আত্মা, যা একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে। আপনি কী বিশ্বাস করেন? আত্মা কী? একজন জীবিত ব্যক্তির মধ্যে কি আত্মা বলে কিছু রয়েছে আর মৃত্যুর পর সেটা কি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়? যদি বেরিয়ে যায়, তা হলে সেটার কী ঘটে?

“আত্মাবিহীন দেহ মৃত”

বাইবেলে, যে-ইব্রীয় এবং গ্রিক শব্দগুলোকে “আত্মা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেগুলোর অর্থ মূলত “নিঃশ্বাস” বা “বাতাস।” কিন্তু, “আত্মা” শব্দটি শুধুমাত্র শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ার চেয়েও আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল বলে: “আত্মাবিহীন দেহ মৃত।” (যাকোব ২:২৬) তাই আত্মা হল এমন কিছু, যা দেহকে জীবন দান করে। এটা হচ্ছে সেই শক্তি, যা দেহকে সজীব রাখে।

এইরকম সজীবতা দানকারী শক্তি যে ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত শুধুমাত্র নিঃশ্বাস বা বাতাস নয় তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন আমরা শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর একজন ব্যক্তির অবস্থা বিবেচনা করি। শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার অল্প কিছুসময় পরেও, তার চেতনা ফিরিয়ে আনার জন্য মানুষের প্রচেষ্টার দ্বারা তাকে আবারও সক্রিয় করে তোলা যায়। কেন? কারণ জীবনের স্ফুলিঙ্গ তখনও দেহের কোষগুলোর মধ্যে বর্তমান থাকে। কিন্তু, তা নিভে যাওয়ার পর, সেই ব্যক্তিকে আবারও শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য মানুষের আর কোনো প্রচেষ্টাই সফল হতে পারে না। যেকোনো পরিমাণ নিঃশ্বাস বা বাতাস পুনরায় সেই নির্জীব কোষগুলোকে আবার সক্রিয় করতে পারে না। তাই, আত্মা হচ্ছে জীবনের সেই স্ফুলিঙ্গ, যা কোষগুলোকে এবং সেই ব্যক্তিকে সজীব রাখে। এটা হচ্ছে সেই সক্রিয় জীবনীশক্তি, যা গর্ভধারণের সময় বাবামার কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের দ্বারা সক্রিয় থাকে।—ইয়োব ৩৪:১৪, ১৫.

প্রত্যেক ব্যক্তির কি এক ভিন্ন আত্মা রয়েছে? অথবা সজীবতা দানকারী জীবনীশক্তি কি সব লোকের মধ্যেই একইরকম? বাইবেল আমাদের এই প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট উত্তর প্রদান করে। সমস্ত জীবিত বস্তুর মধ্যেই যে, একই আত্মা সক্রিয় রয়েছে, তা দেখিয়ে জ্ঞানী রাজা শলোমন বলেছিলেন: “মনুষ্য-সন্তানদের প্রতি যাহা ঘটে, তাহা পশুর প্রতিও ঘটে, সকলেরই প্রতি একরূপ ঘটনা ঘটে; এ যেমন মরে, সে তেমনি মরে; এবং তাহাদের সকলেরই নিঃশ্বাস [“আত্মা,” NW] এক; . . . সকলেই এক স্থানে গমন করে, সকলেই ধূলি হইতে উৎপন্ন, এবং সকলেই ধূলিতে প্রতিগমন করে। মনুষ্য-সন্তানদের আত্মা ঊর্দ্ধ্বগামী হয়, ও পশুর আত্মা ভূতলের দিকে অধোগামী হয়, ইহা কে জানে?” (উপদেশক ৩:১৯-২১) হ্যাঁ, পশুপাখি এবং মানুষের মূলত একই আত্মা বা জীবনীশক্তি রয়েছে।

দেহের মধ্যে থাকা আত্মাকে বিদ্যুৎপ্রবাহের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা একটা যন্ত্রকে চালু করে। একটা যন্ত্রের বা মেশিনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত অদৃশ্য বিদ্যুৎ, সেই যন্ত্রটাকে যে-কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যুৎপ্রবাহ একটা বাল্বকে জ্বালাতে পারে অথবা ফ্যান, রেডিও, টেলিভিশন বা কম্পিউটারকে চালু করতে পারে। কিন্তু, যে-বস্তুগুলোকে এটা সচল করে, এটা কখনো সেগুলোর বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে না। বিদ্যুৎপ্রবাহ যা—এক শক্তি—তা-ই থাকে। আত্মা বা জীবনীশক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। এটা সেই দেহের কোনো বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে না, যে-দেহকে তা জীবন দান করে। এই জীবনীশক্তি বা আত্মার কোনো ব্যক্তিত্ব বা চিন্তা করার ক্ষমতা কিছুই নেই—এটা শুধুমাত্র এক শক্তি। মানুষ এবং পশুপাখি উভয়ের একই আত্মা রয়েছে। তাই, যখন একজন ব্যক্তি মারা যান, তখন তার আত্মা কোনো স্বতন্ত্র সত্তা বা এক আত্মিক প্রাণী হিসেবে অন্য কোনো রাজ্যে বেঁচে থাকে না।

আমরা যখন মারা যাই, তখন আত্মার কী হয়?

উপদেশক ১২:৭ পদ বলে যে, একজন ব্যক্তি যখন মারা যান, তখন “ধূলি পূর্ব্ববৎ মৃত্তিকাতে প্রতিগমন করিবে; এবং আত্মা যাঁহার দান, সেই ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করিবে” বা ফিরে যাবে। তবে, এই কথার মানে এই নয় যে, কোনো ধরনের বিদেহী আত্মা আক্ষরিকভাবে মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ঈশ্বর যেখানে থাকেন, সেখান যায়। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা তাঁর ভাববাদী মালাখির মাধ্যমে অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের কী বলেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। “আমার কাছে ফিরিয়া আইস,” তিনি বলেছিলেন, “আমিও তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব।” (মালাখি ৩:৭) সেই ইস্রায়েলীয়দেরকে যিহোবার কাছে ‘ফিরিয়া আসিবার’ জন্য, তাদের ভুল পথে চলা বন্ধ করতে এবং আবারও ঈশ্বরের ধার্মিক চাহিদাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে হয়েছিল। ইস্রায়েলের কাছে যিহোবার ‘ফিরিয়া আসিবার’ অর্থ ছিল যে, তিনি পুনরায় তাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখাবেন। উভয় ক্ষেত্রেই, আক্ষরিকভাবে কোনো স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল না। এই ‘ফিরিয়া আসিবার’ সঙ্গে কেবলমাত্র মনোভাব পরিবর্তন করা জড়িত ছিল। এটা দেখায় যে, বাইবেল যেভাবে ‘ফিরিয়া আসা’ শব্দটিকে ব্যবহার করে থাকে, তার জন্য সবসময় আক্ষরিকভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

একইভাবে, মৃত্যুতে “আত্মা যাঁহার দান, সেই ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করিবে” এর অর্থ হল যে, একজন ব্যক্তির মধ্যে থেকে আত্মা বা জীবনীশক্তি বেরিয়ে যায় আর একমাত্র সত্য ঈশ্বরই যিনি প্রথমে এটা দান করেছিলেন, তাঁরই সেটা পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। অর্থাৎ, সেই ব্যক্তির জন্য ভবিষ্যৎ জীবনের যেকোনো আশা এখন সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে।

উদাহরণ হিসেবে, যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু সম্পর্কে লূকের লেখা সুসমাচার কী বলে তা বিবেচনা করুন। বিবরণ বর্ণনা করে: “যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিলেন, পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; আর এই বলিয়া তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন।” (লূক ২৩:৪৬) যিশু মারা যাওয়ার সময় যখন তাঁর আত্মা বা জীবনীশক্তি তাঁর মধ্যে থেকে বের হয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি স্বর্গে তাঁর পিতার কাছে চলে যাওয়ার পথে ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে, যিশু কবরে—অস্তিত্বহীন—ছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁকে তাঁর মৃত্যুর তৃতীয় দিনে উত্থিত করা হয়েছিল। (উপদেশক ৯:৫, ১০) এমনকি তাঁর পুনরুত্থানের পরও, যিশু সঙ্গে সঙ্গে স্বর্গারোহণ করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি “চল্লিশ দিন যাবৎ” তাঁর শিষ্যদের কাছে “আপনাকে জীবিত দেখাইলেন” ও তারপর “তিনি . . . ঊদ্ধের্ব নীত হইলেন।” (প্রেরিত ১:৩, ৯) মৃত্যুর সময় যিশু ‘তাঁহার আত্মা তাঁহার পিতার হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলেন,’ সম্পূর্ণরূপে এই আস্থা রেখে যে, যিহোবা তাঁকে পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম আছেন।

আত্মা বলতে যা বোঝায়

আত্মা কী, তা বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায়। এটা হল সাধারণভাবে সেই জীবনীশক্তি, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই থাকতে হবে। সেই জীবনীশক্তিকে সক্রিয় রাখার জন্য নিঃশ্বাস বা বাতাসের প্রয়োজন। তাই, একজন মানুষের মধ্যে কোনোকিছুই মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে না।

অতএব, মৃত ব্যক্তিদের জন্য ভবিষ্যৎ জীবনের যেকোনো আশা, পুনরুত্থানের ওপর নির্ভর করে। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে [যিশুর] রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) তাই, পুনরুত্থানের—আত্মার অমরত্বের কোনো শিক্ষা নয়—নিশ্চিত প্রতিজ্ঞাই হচ্ছে মৃতদের প্রকৃত আশার ভিত্তি।

এই পুনরুত্থান কী এবং তা মানবজাতির জন্য কী অর্থ রাখে, সেই সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান নেওয়া কতই না গুরুত্বপূর্ণ! ঈশ্বর এবং খ্রিস্ট সম্পর্কে জানা বা জ্ঞান নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। (যোহন ১৭:৩) আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিরা আপনাকে বাইবেল অধ্যয়ন করায় সাহায্য করতে পেরে খুশি হবে, যাতে ঈশ্বর, তাঁর পুত্র এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর আপনি আপনার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করতে পারেন। সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা এই পত্রিকার প্রকাশকদের লেখার জন্য আমরা আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

তাদের সকলেরই আত্মা এক

[সৌজন্যে]

ছাগল: CNPC—Centro Nacional de Pesquisa de Caprinos (Sobral, CE, Brasil)