সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছেন?

আপনি কি পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছেন?

আপনি কি পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছেন?

“মৃত্যুজনক পাপ আছে।”—১ যোহন ৫:১৬.

১, ২. কীভাবে আমরা জানি যে, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করা সম্ভব?

 “এই বিষয়টা চিন্তা করতে করতে আমি অস্থির হয়ে গিয়েছি যে, আমি পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছি।” এই কথাগুলো জার্মানির একজন মহিলা লিখেছিলেন, যদিও তিনি ঈশ্বরের সেবা করতেন। একজন খ্রিস্টান কি আসলেই ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বা সক্রিয় শক্তির বিরুদ্ধে পাপ করতে পারেন?

হ্যাঁ, যিহোবার পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করা সম্ভব। “মনুষ্যদের সকল পাপ ও নিন্দার ক্ষমা হইবে,” যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন, “কিন্তু পবিত্র আত্মার নিন্দার ক্ষমা হইবে না।” (মথি ১২:৩১) আমাদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে: “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পাইলে পর যদি আমরা স্বেচ্ছাপূর্ব্বক পাপ করি, তবে পাপার্থক আর কোন যজ্ঞ অবশিষ্ট থাকে না, কেবল থাকে বিচারের ভয়ঙ্কর প্রতীক্ষা।” (ইব্রীয় ১০:২৬, ২৭) আর প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “মৃত্যুজনক পাপ আছে।” (১ যোহন ৫:১৬) কিন্তু, যে-ব্যক্তি গুরুতর পাপ করেছেন, তিনিই কি নির্ধারণ করবেন যে তিনি “মৃত্যুজনক পাপ” করেছেন কি না?

অনুতাপের মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যায়

৩. আমাদের কৃত কোনো পাপের কারণে আমরা যদি গভীরভাবে দুঃখার্ত হই, তা হলে কোন বিষয়টা সম্ভবত সত্য?

যিহোবাই হলেন অন্যায়কারীদের চূড়ান্ত বিচারক। বস্তুতপক্ষে, আমাদের সকলকে তাঁর কাছে নিকাশ দিতে হবে এবং তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করে থাকেন। (আদিপুস্তক ১৮:২৫; রোমীয় ১৪:১২) যিহোবাই নির্ধারণ করেন যে, আমরা ক্ষমার অযোগ্য পাপ করেছি কি না আর তিনিই আমাদের কাছ থেকে তাঁর আত্মা সরিয়ে নিতে পারেন। (গীতসংহিতা ৫১:১১) তবে, আমাদের কৃত কোনো পাপের কারণে আমরা যদি গভীরভাবে দুঃখার্ত হই, তা হলে খুব সম্ভবত আমরা সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছি। কিন্তু, প্রকৃত অনুতাপ কী?

৪. (ক) অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী? (খ) গীতসংহিতা ১০৩:১০-১৪ পদে বলা গীতরচকের কথাগুলো কেন এত সান্ত্বনাদায়ক?

অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ হল, আমরা অতীতের বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা অন্যায়ের প্রতি আমাদের মনোভাবকে পরিবর্তন করি। এর অর্থ হল, আমরা দুঃখ বা অপরাধ বোধ করি এবং কোনো পাপ কাজ থেকে দূরে সরে আসি। গুরুতর পাপ করার পর আমরা যে প্রকৃতই অনুতপ্ত হয়েছি, তা দেখানোর জন্য আমরা যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করি, তা হলে গীতরচকের এই কথাগুলো থেকে আমরা সান্ত্বনা লাভ করতে পারি: “তিনি [সদাপ্রভু] আমাদের প্রতি আমাদের পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই, আমাদের অধর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল আমাদিগকে দেন নাই। কারণ পৃথিবীর উপরে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে তাঁহার দয়া তত মহৎ। পশ্চিম দিক্‌ হইতে পূর্ব্ব দিক্‌ যেমন দূরবর্ত্তী, তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনি দূরবর্ত্তী করিয়াছেন। পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন। কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।”—গীতসংহিতা ১০৩:১০-১৪.

৫, ৬. প্রথম যোহন ৩:১৯-২২ পদের প্রধান বিষয়বস্তু বলুন এবং প্রেরিতের কথাগুলোর অর্থ ব্যাখ্যা করুন।

এ ছাড়া, প্রেরিত যোহনের এই কথাগুলোও সান্ত্বনাদায়ক: “ইহাতে জানিব যে, আমরা সত্যের, এবং তাঁহার সাক্ষাতে আপনাদের হৃদয় আশ্বাসযুক্ত করিব, কারণ আমাদের হৃদয় যদি আমাদিগকে দোষী করে, ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌, এবং সকলই জানেন। প্রিয়তমেরা, আমাদের হৃদয় যদি আমাদিগকে দোষী না করে, তবে ঈশ্বরের উদ্দেশে আমাদের সাহস লাভ হয়; এবং যে কিছু যাচ্ঞা করি, তাহা তাঁহার নিকটে পাই; কেননা আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি, এবং তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা যাহা প্রীতিজনক, তাহা করি”।—১ যোহন ৩:১৯-২২.

আমরা ‘জানি যে, আমরা সত্যের’ কারণ আমরা ভ্রাতৃপ্রেম প্রদর্শন করি এবং পাপ কাজ করে চলি না। (গীতসংহিতা ১১৯:১১) কোনো কারণে আমরা যদি নিজেদের দোষী মনে করি, তা হলে আমাদের মনে রাখা উচিত যে, “ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌, এবং সকলই জানেন।” যিহোবা আমাদের প্রতি করুণা দেখান কারণ তিনি আমাদের নিষ্কপট বা ‘অকল্পিত ভ্রাতৃপ্রেম,’ পাপের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে অবগত আছেন। (১ পিতর ১:২২) আমাদের হৃদয় ‘আমাদিগকে দোষী করিবে না,’ যদি আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি, ভ্রাতৃপ্রেম প্রদর্শন করি এবং ইচ্ছাকৃত পাপ করে চলার দোষে দোষী না হই। প্রার্থনা করার সময় আমরা “ঈশ্বরের উদ্দেশে . . . সাহস” লাভ করতে বা নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারব আর তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন, কারণ আমরা তাঁর আজ্ঞাসকল পালন করি।

তারা আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল

৭. কী নির্ধারণ করে যে, কোনো পাপ ক্ষমার যোগ্য কি না?

কোন পাপগুলোর ক্ষমা নেই? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা বাইবেলের কিছু উদাহরণ বিবেচনা করি। এগুলোর মাধ্যমে আমাদের সান্ত্বনা লাভ করা উচিত, যদি আমরা অনুতপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের গুরুতর ভুলগুলোর জন্য প্রচণ্ড কষ্ট পেতে থাকি। আমরা দেখব যে, একজন ব্যক্তি কোন ধরনের পাপ করেছেন, সেটা নয়; বরং উদ্দেশ্য অর্থাৎ হৃদয়ের অবস্থা এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রাই নির্ধারণ করে যে, কোনো পাপ ক্ষমার যোগ্য কি না।

৮. কীভাবে প্রথম শতাব্দীর কিছু যিহুদি ধর্মীয় নেতা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল?

প্রথম শতাব্দীর যে-যিহুদি ধর্মীয় নেতারা বিদ্বেষপূর্ণভাবে যিশু খ্রিস্টের বিরোধিতা করেছিল, তারা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল। তারা ঈশ্বরের আত্মাকে যিশুর মধ্যে কার্যরত দেখেছিল, যখন তিনি যিহোবাকে সম্মানিত করে এমন অলৌকিক কাজগুলো সম্পাদন করেছিলেন। অথচ খ্রিস্টের এই শত্রুরা বলেছিল যে, সেই শক্তি শয়তান দিয়াবলের কাছ থেকে ছিল। যিশুর কথা অনুসারে, এভাবে যারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার নিন্দা করেছিল, তারা এমন পাপ করেছিল যে তা ক্ষমা করা যাবে না, “ইহকালেও নয়, পরকালেও নয়।”—মথি ১২:২২-৩২.

৯. নিন্দা কী আর এই সম্বন্ধে যিশু কী বলেছিলেন?

নিন্দা হল মানহানিকর, ক্ষতিকর অথবা কটুক্তিপূর্ণ কথাবার্তা। যেহেতু পবিত্র আত্মার উৎস হলেন ঈশ্বর, তাই তাঁর আত্মার বিরুদ্ধে কথা বলার অর্থ হল যিহোবার বিরুদ্ধেই কথা বলা। অনুতাপহীনভাবে সেই ধরনের কথাবার্তা বলে চলা ক্ষমার অযোগ্য। এই ধরনের পাপ সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলো দেখায় যে, যিশু সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে উল্লেখ করছিলেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার কাজের বিরোধিতা করে। যেহেতু যিশুর মধ্যে যিহোবার আত্মা কার্যরত ছিল অথচ তাঁর বিরোধীরা বলেছিল যে, সেটা দিয়াবলের শক্তি, তাই তারা পাপপূর্ণভাবে আত্মার নিন্দা করেছিল। এই কারণে, যিশু ঘোষণা করেছিলেন: “যে ব্যক্তি পবিত্র আত্মার নিন্দা করে, অনন্তকালেও তাহার ক্ষমা নাই, সে বরং অনন্ত পাপের দায়ী।”—মার্ক ৩:২০-২৯.

১০. কেন যিশু যিহূদাকে “বিনাশ-সন্তান” বলে অভিহিত করেছিলেন?

১০ এ ছাড়া, ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার কথাও বিবেচনা করুন। তিনি অসৎ কাজ করতেন, আস্থা সহকারে তার কাছে রাখা টাকার থলি থেকে চুরি করতেন। (যোহন ১২:৫, ৬) যিহূদা পরবর্তী সময়ে যিহুদি শাসকদের কাছে যান এবং ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে যিশুকে ধরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। হ্যাঁ, ধরিয়ে দেওয়ার পর যিহূদা অনুশোচনা করেন কিন্তু তার ইচ্ছাকৃত পাপের কারণে তিনি কখনো অনুতপ্ত হননি। এই কারণে, যিহূদা পুনরুত্থানের যোগ্য নন। তাই, যিশু তাকে “বিনাশ-সন্তান” বলে অভিহিত করেছিলেন।—যোহন ১৭:১২; মথি ২৬:১৪-১৬.

তারা আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেনি

১১-১৩. কীভাবে রাজা দায়ূদ বৎশেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পাপ করেছিলেন আর ঈশ্বর তাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে কোন সান্ত্বনা লাভ করা যেতে পারে?

১১ যে-খ্রিস্টানরা তাদের গুরুতর পাপ স্বীকার করেছে এবং মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাহায্য লাভ করেছে, তারাও মাঝে মাঝে অতীতে ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করার কথা চিন্তা করে হয়তো এখনও কষ্ট পেতে পারে। (যাকোব ৫:১৪) ব্যক্তিগতভাবে আমরা যদি এভাবে কষ্ট পাই, তা হলে খুব সম্ভবত আমরা সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে শাস্ত্র যা বলে, তা বিবেচনা করে উপকার লাভ করব, যাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।

১২ রাজা দায়ূদ ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গুরুতর পাপ করেছিলেন। কাছের একটা ছাদ থেকে এই সুন্দরী বিবাহিত মহিলাকে স্নান করতে দেখার পর, দায়ূদ তাকে তার রাজপ্রাসাদে নিয়ে এসেছিলেন এবং তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করেছিলেন। পরে, দায়ূদকে যখন জানানো হয়েছিল যে বৎশেবা গর্ভবতী হয়েছেন, তখন তিনি নিজের পারদারিকতা ঢাকার জন্য বৎশেবার স্বামী ঊরিয়কে বৎশেবার সঙ্গে শয়ন করানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই ফন্দি যখন ভেস্তে গিয়েছিল, তখন রাজা ঊরিয়কে যুদ্ধে হত হওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপর, বৎশেবা দায়ূদের স্ত্রী হয়েছিলেন এবং তার জন্য একটা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, যে-সন্তান মারা গিয়েছিল।—২ শমূয়েল ১১:১-২৭.

১৩ দায়ূদ ও বৎশেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই বিষয়গুলো যিহোবা মীমাংসা করেছিলেন। ঈশ্বর দায়ূদকে ক্ষমা করেছিলেন, তবে স্পষ্টতই সেটা তার অনুতাপ ও তার সঙ্গে করা রাজ্য চুক্তির বিষয়টা বিবেচনা করে। (২ শমূয়েল ৭:১১-১৬; ১২:৭-১৪) নিশ্চিতভাবেই বৎশেবার অনুতপ্ত মনোভাব ছিল কারণ তিনি রাজা শলোমনের মা ও যিশু খ্রিস্টের পূর্বপুরুষী হওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। (মথি ১:১, ৬, ১৬) আমরা যদি পাপ করে থাকি, তা হলে এটা মনে রাখা উত্তম যে, যিহোবা আমাদের অনুতপ্ত হৃদয়কে লক্ষ করেন।

১৪. কীভাবে ঈশ্বরের ক্ষমার পরিধি রাজা মনঃশির ঘটনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে?

১৪ যিহোবার ক্ষমার পরিধি, যিহূদার রাজা মনঃশির ঘটনার মাধ্যমেও তুলে ধরা হয়েছে। তিনি যিহোবার চোখে যা মন্দ, তা-ই করেছিলেন। মনঃশি বাল দেবতার উদ্দেশে যজ্ঞবেদি স্থাপন করেছিলেন, “আকাশের সমস্ত বাহিনীর” উপাসনা করেছিলেন আর এমনকি মন্দিরের দুই প্রাঙ্গণে মিথ্যা দেবতাদের উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেছিলেন। তিনি নিজের সন্তানদের অগ্নির মধ্যে দিয়ে গমন করিয়েছিলেন, প্রেতচর্চা করতে উৎসাহিত করেছিলেন এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকেদের দিয়ে “সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে বিনষ্ট করিয়াছিলেন, . . . তাহাদের অপেক্ষা অধিক কদাচরণ” করিয়েছিলেন। ঈশ্বরের ভাববাদীরা যে-সাবধানবাণীগুলো দিয়েছিল, সেগুলোতে কান দেননি। পরিশেষে, মনঃশিকে অশূররাজ বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। বন্দিত্বে থাকার সময় মনঃশি অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং নম্রভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন আর এর ফলে যিহোবা তাকে ক্ষমা করেছিলেন এবং যিরূশালেমের রাজপদে পুনর্স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তিনি সত্য উপাসনাকে উচ্চীকৃত করেছিলেন।—২ বংশাবলি ৩৩:২-১৭.

১৫. প্রেরিত পিতরের জীবনের কোন ঘটনা দেখায় যে, যিহোবা “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন?

১৫ কয়েক শতাব্দী পর, প্রেরিত পিতর যিশুকে অস্বীকার করার মাধ্যমে গুরুতর পাপ করেছিলেন। (মার্ক ১৪:৩০, ৬৬-৭২) কিন্তু, যিহোবা পিতরকে “প্রচুররূপে ক্ষমা” করেছিলেন। (যিশাইয় ৫৫:৭) কেন? কারণ পিতর আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়েছিলেন। (লূক ২২:৬২) ৫০ দিন পরে ঈশ্বরের ক্ষমা সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল, যখন পঞ্চাশত্তমীর দিনে পিতর যিশুর বিষয়ে সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ২:১৪-৩৬) এইরকম মনে করার কোনো কারণ কি রয়েছে যে, আজকে প্রকৃতই অনুতপ্ত খ্রিস্টানদের প্রতি ঈশ্বর কম ক্ষমাশীল হবেন? “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” গীতরচক গেয়েছিলেন, “কিন্তু তোমার কাছে ক্ষমা আছে।”—গীতসংহিতা ১৩০:৩, ৪.

পাপের ভয়কে লাঘব করা

১৬. কোন পরিস্থিতিগুলোতে ঈশ্বর ক্ষমা প্রদান করে থাকেন?

১৬ আগে উল্লেখিত উদাহরণগুলো, পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে করা পাপ সম্বন্ধে আমাদের উদ্বিগ্নতাকে লাঘব করতে সাহায্য করবে। এই উদাহরণগুলো দেখায় যে, যিহোবা অনুতপ্ত পাপীদের ক্ষমা করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, ঈশ্বরের কাছে আন্তরিক প্রার্থনা করা। আমরা যদি পাপ করে থাকি, তা হলে আমরা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান, যিহোবার করুণা, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আমাদের অসিদ্ধতা এবং আমাদের বিশ্বস্ত সেবার নথির ভিত্তিতে ক্ষমার জন্য মিনতি করতে পারি। যিহোবার অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়া সম্বন্ধে জানি বলে আমরা এই আস্থা সহকারে ক্ষমা চাইতে পারি যে, তিনি আমাদের তা প্রদান করবেন।—ইফিষীয় ১:৭.

১৭. আমরা যদি পাপ করে থাকি এবং আমাদের আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তা হলে কী করা উচিত?

১৭ তবে, আমরা যদি পাপ করে থাকি কিন্তু আমাদের পাপের কারণে আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় প্রার্থনা করতে অসমর্থ হই, তা হলে? এই বিষয়ে, শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “[এইরকম এক ব্যক্তি] মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করুক; এবং তাঁহারা প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করুন। তাহাতে বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং প্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে।”—যাকোব ৫:১৪, ১৫.

১৮. এমনকি একজন ব্যক্তিকে যদি মণ্ডলী থেকে বের করেও দেওয়া হয়, তবুও কেন তার পাপ যে একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য, এমন নয়?

১৮ এমনকি একজন অন্যায়কারী যদি অনুতপ্ত না হন এবং এর ফলে তাকে মণ্ডলী থেকে বের করেও দেওয়া হয়, তবুও তার পাপ যে একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য, এমন নয়। করিন্থের একজন সমাজচ্যুত অভিষিক্ত অন্যায়কারীর বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “অধিকাংশ লোকের দ্বারা তাদৃশ ব্যক্তি যে দণ্ড পাইয়াছে, তাহাই তাহার পক্ষে যথেষ্ট। অতএব তোমরা বরং তাহাকে ক্ষমা করিলে ও সান্ত্বনা করিলে ভাল হয়, পাছে অতিরিক্ত মনোদুঃখে তাদৃশ ব্যক্তি কবলিত হয়।” (২ করিন্থীয় ২:৬-৮; ১ করিন্থীয় ৫:১-৫) কিন্তু, আধ্যাত্মিক অবস্থা পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য ভুল করেছেন এমন ব্যক্তিদের খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে বাইবেলভিত্তিক আধ্যাত্মিক সাহায্য গ্রহণ করতে হবে এবং প্রকৃত অনুতাপের প্রমাণ দিতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই অনুতাপ বা ‘মনপরিবর্ত্তনের উপযুক্ত ফলে ফলবান্‌ হইতে’ হবে।—লূক ৩:৮.

১৯. কী আমাদেরকে ‘বিশ্বাসে নিরাময়’ থাকতে সাহায্য করতে পারে?

১৯ কোন বিষয়গুলোর কারণে আমরা হয়তো এইরকম মনে করতে পারি যে, আমরা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছি? অতিরিক্ত আত্মসচেতনতা অথবা দুর্বল স্বাস্থ্য এর কারণ হতে পারে। এইরকম ক্ষেত্রে, প্রার্থনা ও কিছুটা অতিরিক্ত সময় বিশ্রাম নেওয়া উপকারী হতে পারে। বিশেষভাবে শয়তানকে আমাদের এতটাই নিরুৎসাহিত করতে দেওয়া উচিত নয় যে, আমরা ঈশ্বরকে সেবা করা বন্ধ করে দিই। যেহেতু দুষ্ট লোকের মরণে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন না, তাই নিশ্চিতভাবেই তাঁর কোনো দাসকে হারিয়ে তিনি আনন্দিত হন না। অতএব, আমরা যদি এই ভেবে ভয় পাই যে, আমরা আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছি, তা হলে আমাদের গীতসংহিতা বইয়ের সান্ত্বনাদায়ক অংশগুলোসহ ঈশ্বরের বাক্য থেকে ক্রমাগত পুষ্টি লাভ করা উচিত। আমাদের সবসময় মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিতে এবং রাজ্যের প্রচার কাজে অংশ নিতে হবে। তা করা আমাদেরকে ‘বিশ্বাসে নিরাময়’ থাকতে এবং ক্ষমার অযোগ্য পাপ করেছি এমন সম্ভাবনার উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করবে।—তীত ২:২.

২০. কোন যুক্তি হয়তো একজন ব্যক্তিকে এটা দেখতে সাহায্য করতে পারে যে, তিনি পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেননি?

২০ যে-ব্যক্তিরা এইরকম ভেবে ভয় পায় যে, তারা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছে, নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘আমি কি পবিত্র আত্মার নিন্দা করেছি? আমি কি আমার পাপের জন্য আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়েছি? ঈশ্বরের ক্ষমার প্রতি কি আমার বিশ্বাস আছে? আমি কি এমন একজন ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি, যে আধ্যাত্মিক আলো প্রত্যাখ্যান করেছে?’ খুব সম্ভবত, এই ধরনের ব্যক্তিরা বুঝতে পারবে যে, তারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার নিন্দা করেনি অথবা তারা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিতেও পরিণত হয়নি। তারা অনুতপ্ত হয়েছে এবং যিহোবার ক্ষমার ওপর তাদের চিরন্তন বিশ্বাস রয়েছে। যদি তা-ই হয়, তা হলে তারা যিহোবার পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেনি।

২১. পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে?

২১ এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকা কী এক আশীর্বাদ যে, আমরা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করিনি! যাই হোক, এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রশ্নগুলো পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি সত্যিই পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছি? এর ফল কি আমার জীবনে প্রকাশ পাচ্ছে?’

আপনার উত্তর কী?

• কেন আমরা বলতে পারি যে, পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করা সম্ভব?

• অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী?

• যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন কারা আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল?

• ক্ষমার অযোগ্য কোনো পাপ করেছি এমন উদ্বিগ্নতা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যারা বলেছিল যে, যিশু অলৌকিক কাজগুলো শয়তানের শক্তিতে সম্পাদন করেছেন, তারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যদিও পিতর যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন কিন্তু তিনি ক্ষমার অযোগ্য পাপ করেননি