ধৈর্য সহকারে যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করা
ধৈর্য সহকারে যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করা
‘তোমরা আপনাদের বিশ্বাসে ধৈর্য্য যোগাও।’—২ পিতর ১:৫-৭.
১, ২. ধৈর্য কী আর কেন তা খ্রিস্টানদের প্রয়োজন?
যিহোবার মহাদিন খুবই নিকটে। (যোয়েল ১:১৫; সফনিয় ১:১৪) খ্রিস্টান হিসেবে আমরা যেহেতু ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, তাই আমরা উৎসুকভাবে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছি, যখন যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন হবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের বিশ্বাসের জন্য ঘৃণা, নিন্দা, তাড়না এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে থাকি। (মথি ৫:১০-১২; ১০:২২; প্রকাশিত বাক্য ২:১০) এর জন্য ধৈর্য—দুর্দশা সহ্য করার ক্ষমতা—প্রয়োজন। প্রেরিত পিতর আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন: ‘তোমরা আপনাদের বিশ্বাসে ধৈর্য্য যোগাও।’ (২ পিতর ১:৫-৭) আমাদের স্থির থাকার বা ধৈর্যের প্রয়োজন রয়েছে কারণ যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”—মথি ২৪:১৩.
২ এ ছাড়া, আমরা অসুস্থতা, মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোক ও অন্যান্য পরীক্ষা ভোগ করে থাকি। আমাদের বিশ্বাস যদি লোপ পায়, তা হলে শয়তান কত আনন্দিতই না হবে! (লূক ২২:৩১, ৩২) যিহোবার সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা সহ্য করতে পারি। (১ পিতর ৫:৬-১১) বাস্তব জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন, যেগুলো প্রমাণ দেয় যে, ধৈর্য ও সম্পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে আমরা যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারি।
অসুস্থতা তাদের থামাতে পারেনি
৩, ৪. অসুস্থতা সত্ত্বেও আমরা যে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করতে পারি, তা দেখানোর জন্য একটা উদাহরণ দিন।
৩ এখন ঈশ্বর আমাদের অলৌকিকভাবে সুস্থ করেন না কিন্তু অসুস্থতা সহ্য করার জন্য তিনি আমাদের শক্তি দেন। (গীতসংহিতা ৪১:১-৩) “আমার যতদূর মনে পড়ে,” শ্যারন বলেন, “হুইলচেয়ারই আমার সর্বসময়ের সঙ্গী। জন্মের পর থেকেই মস্তিস্কের পক্ষাঘাত আমার শৈশবের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।” যিহোবা ও সেইসঙ্গে নিখুঁত স্বাস্থ্য সম্বন্ধে তাঁর প্রতিজ্ঞার বিষয়ে শিখতে পেরে শ্যারন প্রত্যাশা লাভ করেছেন। যদিও কথা বলতে ও হাঁটাচলা করতে তার কষ্ট হয় কিন্তু খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় তিনি আনন্দ খুঁজে পান। প্রায় ১৫ বছর আগে, তিনি লিখেছিলেন: “আমার স্বাস্থ্য হয়তো ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যেতে পারে কিন্তু ঈশ্বরের ওপর আমার নির্ভরতা এবং তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কের ওপরই আমার জীবন নির্ভর করে। যিহোবার লোকেদের মধ্যে থাকতে পেরে এবং তাঁর অফুরন্ত সাহায্য লাভ করে আমি কতই না আনন্দিত!”
৪ প্রেরিত পৌল থিষলনীকীর খ্রিস্টানদেরকে ‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বলার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪, NW) চরম হতাশার মতো বিষয়গুলো বিষণ্ণতা নিয়ে আসতে পারে। ১৯৯৩ সালে, শ্যারন লিখেছিলেন: “সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি এইরকম মনে করে আমি . . . তিন বছর পর্যন্ত গভীর বিষণ্ণতায় ডুবে ছিলাম। . . . প্রাচীনদের কাছ থেকে সান্ত্বনা ও পরামর্শ এসেছিল। . . . প্রহরীদুর্গ পত্রিকার মাধ্যমে যিহোবা কোমলভাবে গভীর বিষণ্ণতা সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি জুগিয়েছিলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর লোকেদের জন্য চিন্তা করেন এবং আমাদের অনুভূতিগুলো বোঝেন।” (১ পিতর ৫:৬, ৭) যিহোবার মহাদিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় শ্যারন এখনও বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করে চলছেন।
৫. কোন প্রমাণ রয়েছে যে, খ্রিস্টানরা প্রচণ্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে পারে?
৫ কিছু খ্রিস্টান অতীত জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কারণে প্রচণ্ড মানসিক চাপ ভোগ করে থাকে। হার্লি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভয়াবহ লড়াই দেখেছিলেন আর তাই যুদ্ধ নিয়ে তিনি দুঃস্বপ্ন দেখতেন। ঘুমের মধ্যে তিনি এই বলে চিৎকার করে উঠতেন: “সাবধান! হুঁশিয়ার!” ঘুম থেকে জেগে উঠে তিনি দেখতেন যে, তিনি ঘেমে সম্পূর্ণরূপে ভিজে গিয়েছেন। কিন্তু, তিনি ধার্মিক জীবনধারা অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং একসময় এই ধরনের ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা ও বার বার তা দেখা কমে গিয়েছিল।
৬. কীভাবে একজন খ্রিস্টান আবেগগত সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করেছিলেন?
৬ একজন খ্রিস্টান বাইপোলার ডিসঅর্ডার (পর্যায়ক্রমে বাতিকগ্রস্ত এবং মানসিক অবসাদগ্রস্ত) রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার পক্ষে ঘরে ঘরে প্রচার কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি এই কাজে লেগে ছিলেন কারণ তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, পরিচর্যার অর্থ হল তার নিজের জন্য ও যারা অনুকূলভাবে সাড়া দেয়, তাদের জন্য জীবন। (১ তীমথিয় ৪:১৬) মাঝে মাঝে তিনি কলিংবেল বাজাতেও ভয় পেতেন কিন্তু তিনি বলেছিলেন: “কিছু সময় নিয়ে আমি আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে পরের ঘরটাতে যেতাম এবং আবারও চেষ্টা করতাম। পরিচর্যায় ক্রমাগত অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আমি উপযুক্ত আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পেরেছিলাম।” এ ছাড়া, সভাগুলোতে যোগ দেওয়াও এক কঠিন বিষয় ছিল কিন্তু এই ভাই আধ্যাত্মিক মেলামেশার মূল্য বুঝতে পেরেছিলেন। তাই, তিনি সভাগুলোতে উপস্থিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা করেছিলেন।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
৭. যদিও কেউ কেউ জনসমক্ষে কথা বলতে অথবা মন্তব্য করতে ভয় পায়, তবুও কীভাবে তারা ধৈর্য দেখিয়ে থাকে?
৭ কিছু খ্রিস্টানের বিভিন্ন আতঙ্ক—নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতি অথবা বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভয়—রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা হয়তো জনসমক্ষে কথা বলতে অথবা এমনকি সভাতে উপস্থিত হতেও ভয় পেতে পারে। কল্পনা করে দেখুন যে, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে মন্তব্য করা অথবা ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ একটা বক্তৃতা দেওয়া তাদের জন্য কতটা কঠিন! তা সত্ত্বেও, তারা ধৈর্য ধরছে এবং আমরা তাদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণকে প্রচুররূপে উপলব্ধি করি।
৮. আবেগগত সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার সময় কোন বিষয়টা বিশেষভাবে কার্যকারী?
৮ পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম হয়তো একজন ব্যক্তিকে আবেগগত সমস্যাগুলো সহ্য করার জন্য সাহায্য করতে পারে। চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য উপযুক্ত হতে পারে। তবে, প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা বিশেষভাবে কার্যকারী। গীতসংহিতা ৫৫:২২ পদ বলে, “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন, কখনও ধার্ম্মিককে বিচলিত হইতে দিবেন না।” তা হলে, যেকোনোভাবেই হোক “সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস” বা নির্ভর করুন।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.
মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোক সহ্য করা
৯-১১. (ক) যখন কোনো প্রিয়জন মারা যায়, তখন কী আমাদেরকে দুঃখ সহ্য করার জন্য সাহায্য করতে পারে? (খ) কীভাবে হান্নার উদাহরণ আমাদেরকে মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোক সহ্য করার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৯ মৃত্যু যখন পরিবারের সদস্যদের পৃথক করে দেয়, তখন এই ধরনের বিরাট বিচ্ছেদ গভীর দুঃখ নিয়ে আসতে পারে। অব্রাহাম তার প্রিয় স্ত্রী সারার মৃত্যুতে কেঁদেছিলেন। (আদিপুস্তক ২৩:২) এমনকি সিদ্ধ ব্যক্তি যিশুও ‘কাঁদিয়াছিলেন,’ যখন তাঁর বন্ধু লাসার মারা গিয়েছিলেন। (যোহন ১১:৩৫) তাই, মৃত্যু যখন আপনার কোনো প্রিয়জনের জীবন কেড়ে নেয়, তখন দুঃখিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, খ্রিস্টানরা জানে যে, ভবিষ্যতে পুনরুত্থান ঘটবে। (প্রেরিত ২৪:১৫) তাই, তারা “যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত . . . দুঃখার্ত্ত” হয় না।—১ থিষলনীকীয় ৪:১৩.
১০ কীভাবে আমরা মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোককে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি? এক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত সম্বন্ধে চিন্তা করা হয়তো সাহায্যকারী হবে। যখন একজন বন্ধু কোনো ভ্রমণে যায়, তখন সাধারণত আমরা দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ ভোগ করি না, যেহেতু আমরা আশা করি যে, সে যখন ফিরে আসবে, তখন আমরা তাকে আবার দেখব। একজন বিশ্বস্ত খ্রিস্টানের মৃত্যুকে একই দৃষ্টিতে দেখা হয়তো আমাদের শোককে লাঘব করতে পারে কারণ আমরা জানি যে, তার পুনরুত্থানের আশ্বাস রয়েছে।—উপদেশক ৭:১.
১১ ‘সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা আমাদেরকে মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোক সহ্য করতে সাহায্য করবে। (২ করিন্থীয় ১:৩, ৪) এ ছাড়া, প্রথম শতাব্দীর বিধবা হান্না যা করেছিলেন, তা বিবেচনা করাও আমাদের জন্য সাহায্যকারী হবে। তার বিয়ের মাত্র সাত বছর পরই তিনি বিধবা হয়েছিলেন। কিন্তু, ৮৪ বছর বয়সেও তিনি মন্দিরে যিহোবার উপাসনা করে চলছিলেন। (লূক ২:৩৬-৩৮) এই ধরনের ধার্মিক জীবনযাপন নিঃসন্দেহে তাকে তার শোক ও একাকিত্বের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল। রাজ্যের প্রচার কাজসহ খ্রিস্টীয় কাজকর্মে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করা আমাদেরকে মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোক সহ্য করার জন্য সাহায্য করতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করা
১২. কিছু খ্রিস্টান, পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন পরীক্ষা সহ্য করে থাকে?
১২ কিছু খ্রিস্টান নিশ্চয়ই পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরীক্ষাগুলো সহ্য করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সাথি যদি পারদারিকতায় লিপ্ত হন, তা হলে সেটা পরিবারের ওপর কত মারাত্মক প্রভাবই না ফেলতে পারে! মানসিক আঘাত ও শোকের কারণে নির্দোষ বিবাহসাথি হয়তো ঘুমাতে পারেন না এবং দিনরাত কান্নাকাটি করেন। ছোটোখাটো কাজগুলো করাও হয়তো এতটা চাপপূর্ণ হতে পারে যে, ভুলত্রুটি হতে থাকে অথবা দুর্ঘটনা ঘটে। নির্দোষ সাথি হয়তো খেতে পারেন না, তার ওজন হয়তো কমে যেতে পারে এবং হয়তো আবেগগতভাবে কষ্ট ভোগ করেন। খ্রিস্টীয় কাজকর্মে অংশ নেওয়া হয়তো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। আর সন্তানদের ওপর তা কত চরম প্রভাবই না ফেলতে পারে!
১৩, ১৪. (ক) মন্দির উদ্বোধনের সময় শলোমনের প্রার্থনা থেকে আপনি কোন উৎসাহ লাভ করতে পারেন? (খ) কেন আমরা পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করি?
১৩ আমরা যখন এই ধরনের পরীক্ষা ভোগ করি, তখন যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগান। (গীতসংহিতা ৯৪:১৯) ঈশ্বর তাঁর লোকেদের প্রার্থনা শোনেন, যেমনটা যিহোবার মন্দির উদ্বোধনের সময় রাজা শলোমনের প্রার্থনায় দেখানো হয়েছে। শলোমন ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করেছিলেন: “কোন ব্যক্তি বা তোমার সমস্ত প্রজা ইস্রায়েল, যাহারা প্রত্যেকে আপন আপন মনের মারী জানে, এবং এই গৃহের দিকে অঞ্জলি বিস্তার করিয়া কোন প্রার্থনা কি বিনতি করে; তবে তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং ক্ষমা করিও, কার্য্য করিও, এবং প্রত্যেক জনকে স্ব স্ব পথ অনুযায়ী প্রতিফল দিও—তুমি ত তাহাদের অন্তঃকরণ জান, কেননা একমাত্র তুমিই যাবতীয় মনুষ্য-সন্তানের অন্তঃকরণ জ্ঞাত আছ;—যেন আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে তুমি যে দেশ দিয়াছ, এই দেশে তাহারা যত দিন জীবিত থাকিবে, তাবৎ তোমাকে ভয় করে।”—১ রাজাবলি ৮:৩৮-৪০.
১৪ পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করে চলা বিশেষভাবে সাহায্যকারী হতে পারে। (মথি ৭:৭-১১) আত্মার ফলের মধ্যে এই ধরনের গুণও রয়েছে, যেমন আনন্দ ও শান্তি। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আমাদের স্বর্গীয় পিতা যখন আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন—শোকের পরিবর্তে আনন্দ এবং নিদারুণ যন্ত্রণার পরিবর্তে শান্তি আসে—তখন আমরা কত স্বস্তিই না অনুভব করি!
১৫. কোন শাস্ত্রপদগুলো আমাদের উদ্বিগ্নতাকে লাঘব করার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১৫ আমাদের যখন প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে হয়, তখন কিছুটা ভাবনা বা উদ্বিগ্নতা আসবেই। কিন্তু, আমরা যদি যিশুর এই কথাগুলো মনে রাখি, তা হলে অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও এই দুঃশ্চিন্তা লাঘব করা যেতে পারে: “‘কি ভোজন করিব, কি পান করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিম্বা ‘কি পরিব’ বলিয়া শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না; . . . কিন্তু তোমরা প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:২৫, ৩৩, ৩৪) প্রেরিত পিতর আমাদেরকে ‘আমাদের সমস্ত ভাবনার ভার ঈশ্বরের উপরে ফেলিয়া দিবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন, ‘কেননা তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন।’ (১ পিতর ৫:৬, ৭) কোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য প্রচেষ্টা করা উপযুক্ত। কিন্তু, আমাদের যথাসাধ্য করার পর, সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা নয় বরং সেই বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করা আমাদের সাহায্য করতে পারে। “তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাঁহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য্য সাধন করিবেন,” গীতরচক গেয়েছিলেন।—গীতসংহিতা ৩৭:৫.
১৬, ১৭. (ক) কেন আমরা সম্পূর্ণরূপে উদ্বিগ্নতামুক্ত নই? (খ) আমরা যদি ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ কাজে লাগাই, তা হলে আমরা কোন অভিজ্ঞতা লাভ করব?
১৬ পৌল লিখেছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) স্বাভাবিকভাবেই, আদমের অসিদ্ধ বংশধর পুরোপুরিভাবে উদ্বিগ্নতামুক্ত হতে পারবে না। (রোমীয় ৫:১২) এষৌর হিত্তীয় স্ত্রীরা এষৌর ঈশ্বরভয়শীল বাবামা ইস্হাক ও রিবিকার “মনের দুঃখদায়িকা” ছিল। (আদিপুস্তক ২৬:৩৪, ৩৫) অসুস্থতার কারণে তীমথিয় ও ত্রফিমের মতো খ্রিস্টানরাও নিশ্চয়ই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। (১ তীমথিয় ৫:২৩; ২ তীমথিয় ৪:২০) সহবিশ্বাসীদের জন্য পৌলের উদ্বিগ্নতা ছিল। (২ করিন্থীয় ১১:২৮) কিন্তু, “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” সবসময়ই তাদের জন্য আছেন, যারা তাঁকে ভালবাসে।—গীতসংহিতা ৬৫:২.
১৭ যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময়, ‘শান্তির ঈশ্বরের’ কাছ থেকে আমরা সাহায্য ও সান্ত্বনা লাভ করি। (ফিলিপীয় ৪:৯) যিহোবা হলেন, “স্নেহশীল ও কৃপাময়,” “মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্” আর “আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬; গীতসংহিতা ৮৬:৫; ১০৩:১৩, ১৪) তাই, আসুন আমরা ‘আমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত করি’ কারণ এর ফলে আমরা “ঈশ্বরের শান্তি”—মানুষের কল্পনাতীত প্রশান্তি—লাভ করতে পারব।
১৮. ইয়োব ৪২:৫ পদে যেমন বলা হয়েছে, কীভাবে ঈশ্বরকে ‘দেখা’ সম্ভব?
১৮ যখন আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়, তখন আমরা জানি যে ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে আছেন। পরীক্ষাগুলো সহ্য করার পর ইয়োব বলেছিলেন: “পূর্ব্বে তোমার বিষয় কর্ণে শুনিয়াছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি আমার চক্ষু তোমাকে [সদাপ্রভুকে] দেখিল।” (ইয়োব ৪২:৫) উপলব্ধি, বিশ্বাস এবং কৃতজ্ঞতার চোখে আমরা আমাদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারি এবং তাঁকে এমনভাবে ‘দেখিতে’ পারি, যেভাবে আগে কখনো দেখিনি। এই ধরনের অন্তরঙ্গতা আমাদের হৃদয় ও মনে কত শান্তিই না নিয়ে আসে!
১৯. আমরা যদি ‘আমাদের সমস্ত ভাবনার ভার ঈশ্বরের উপরে ফেলিয়া দিই,’ তা হলে কী হবে?
১৯ আমরা যদি ‘আমাদের সমস্ত ভাবনার ভার ঈশ্বরের উপরে ফেলিয়া দিই,’ তা হলে আমরা সেই মনের শান্তি নিয়ে পরীক্ষা সহ্য করতে পারব, যা আমাদের হৃদয় ও মনকে রক্ষা করে। আমাদের রূপক হৃদয়ের একেবারে গভীরে আমরা অস্বাচ্ছন্দ্য, ভয় ও বিপদাশঙ্কা থেকে স্বাধীন হওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করব। আমাদের মন বিহ্বলতা অথবা উদ্বিগ্নতা দ্বারা অস্থির হবে না।
২০, ২১. (ক) স্তিফানের ঘটনা তাড়না ভোগ করার সময় প্রশান্ত মনোভাবের কোন প্রমাণ দেয়? (খ) বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করার সময় শান্তভাব সম্বন্ধে আধুনিক দিনের একটা উদাহরণ উল্লেখ করুন।
২০ শিষ্য স্তিফান যখন তার বিশ্বাসের এক কঠিন পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন, তখন তিনি প্রশান্তভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি শেষ সাক্ষ্য দেওয়ার আগে, মহাসভার সকলে “তাঁহার প্রতি . . . চাহিয়া দেখিল, তাঁহার মুখ স্বর্গদূতের মুখের তুল্য।” (প্রেরিত ৬:১৫) তার মুখের ভাব ছিল প্রশান্তজনক—একজন স্বর্গদূত অর্থাৎ ঈশ্বরের একজন বার্তাবাহকের মতো। স্তিফান যখন যিশুর মৃত্যুর বিষয়ে তাদের দোষ প্রকাশ করে দিয়েছিলেন, তখন বিচারকরা “মর্ম্মাহত হইল তাঁহার প্রতি দন্তঘর্ষণ করিতে লাগিল।” “পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইয়া” স্তিফান “স্বর্গের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া দেখিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতাপ রহিয়াছে, এবং যীশু ঈশ্বরের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া আছেন।” সেই দর্শনের দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে স্তিফান মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। (প্রেরিত ৭:৫২-৬০) যদিও আমরা দর্শন লাভ করি না কিন্তু আমরা যখন তাড়িত হই, তখন ঈশ্বরদত্ত প্রশান্তি পেতে পারি।
২১ কিছু খ্রিস্টানের মনোভাব বিবেচনা করুন, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাতে মৃত্যু ভোগ করেছিলেন। আদালতে তার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে একজন বলেছিলেন: “আমার জন্য মৃত্যুদণ্ড জারি করা হয়েছিল। আমি তা শুনেছিলাম এবং তারপর আমি ‘মৃত্যু অবধি বিশ্বস্ত থাক,’ এই কথা এবং প্রভুর আরও কিছু বাক্য বলার পর, সবকিছুই শেষ হয়ে গিয়েছিল। . . . কিন্তু, এই বিষয় নিয়ে এখন চিন্তা না করাই ভাল। কারণ আমার এত সুখ ও এত প্রশান্তি রয়েছে যে, তোমরা তা কল্পনাই করতে পারবে না!” একজন যুবক খ্রিস্টান, যাকে শিরচ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তিনি তার বাবামাকে লিখেছিলেন: “মধ্যরাত পার হয়ে গিয়েছে। আমার মন পরিবর্তন করার এখনও সময় আছে। আমি কি আমাদের প্রভুকে অস্বীকার করে এই পৃথিবীতে আবার সুখী হতে পারব? নিশ্চয়ই না! কিন্তু, এখন তোমাদের এই নিশ্চয়তা আছে যে, আমি আনন্দ ও শান্তির মধ্য দিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছি।” কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা তাঁর অনুগত দাসদের সাহায্য করেন।
আপনি ধৈর্য ধরতে পারেন!
২২, ২৩. ধৈর্য সহকারে যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় আপনি কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন?
২২ আমরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো বিবেচনা করেছি, আপনি হয়তো সেগুলোর মুখোমুখি হননি। তবে, ঈশ্বরভয়শীল ইয়োব সঠিক বিষয়ই বলেছিলেন: “মনুষ্য, অবলাজাত সকলে, অল্পায়ু ও উদ্বেগে পরিপূর্ণ।” (ইয়োব ১৪:১) হতে পারে, আপনি এমন একজন বাবা অথবা মা যিনি নিজের সন্তানদের আধ্যাত্মিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছেন। তারা নিশ্চয়ই স্কুলে বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করে থাকে কিন্তু যিহোবা ও তাঁর ধার্মিক নীতিগুলোর পক্ষে তারা যখন দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়, তখন আপনি কত আনন্দিতই না হন! আপনি হয়তো কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কষ্ট ও প্রলোভন ভোগ করে থাকেন। কিন্তু, এগুলো ও অন্যান্য পরিস্থিতি সহ্য করা যেতে পারে কারণ “প্রভু [ঈশ্বর], দিন দিন আপনার ভার বহন করেন।”—গীতসংহিতা ৬৮:১৯.
২৩ আপনি হয়তো নিজেকে একজন সাধারণ লোক বলে মনে করতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন যে, যিহোবা কখনো আপনার কাজ এবং তাঁর পবিত্র নামের প্রতি প্রদর্শিত আপনার প্রেম ভুলে যাবেন না। (ইব্রীয় ৬:১০) তাঁর সাহায্যে আপনি বিশ্বাসের পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে পারবেন। তাই, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করাকে আপনার প্রার্থনা ও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করুন। তা হলে, ধৈর্য সহকারে যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় আপনি ঐশিক আশীর্বাদ ও সাহায্য সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কেন খ্রিস্টানদের ধৈর্যের প্রয়োজন?
• কী আমাদেরকে অসুস্থতা ও মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোক সহ্য করার জন্য সাহায্য করতে পারে?
• কীভাবে প্রার্থনা আমাদেরকে পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করে?
• কেন ধৈর্য সহকারে যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার ওপর নির্ভরতা আমাদেরকে মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর শোক সহ্য করতে সমর্থ করে
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
আন্তরিক প্রার্থনা আমাদেরকে বিশ্বাসের পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করে