সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌”?

আপনি কি “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌”?

আপনি কি “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌”?

“যে কেহ আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌ নয়, সে এইরূপ।”—লূক ১২:২১.

১, ২. (ক) কীসের জন্য লোকেরা বড় বড় ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক? (খ) খ্রিস্টানদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিপদের মুখোমুখি হতে হয়?

 যুগ যুগ ধরে, বিভিন্ন দেশের লোকেরা বস্তুগত ধনসম্পদ অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে প্রচুর কষ্ট ও কঠোর পরিশ্রম করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঊনবিংশ শতাব্দীতে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্বর্ণ অভিযান দূরদূরান্ত থেকে সেইসমস্ত লোককে আকৃষ্ট করেছে, যারা অজানা-অচেনা এমনকি মাঝে মাঝে বসবাসের অযোগ্য দেশগুলোতে ধন অন্বেষণ করার জন্য নিজ বাড়িঘর ও প্রিয়জনদের ছেড়ে আসতে ইচ্ছুক ছিল। হ্যাঁ, অনেক লোকই তাদের হৃদয়ের কাঙ্ক্ষিত ধনসম্পদ অর্জন করার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি নিতে ও প্রচুর ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক।

যদিও বেশির ভাগ লোক আজকে আক্ষরিক ধনসম্পদ খোঁজায় অংশ নিচ্ছে না কিন্তু জীবিকার্জনের জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। আর বর্তমান বিধিব্যবস্থায় তা করা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, চাপপূর্ণ এবং দুর্বহ হতে পারে। তাই, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়া সহজ যে, এর ফলে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয় অথবা সেগুলোকে ভুলে যাওয়া হয়। (রোমীয় ১৪:১৭) যিশু একটি দৃষ্টান্ত অথবা নীতিগল্প বলেছিলেন, যা যথাযথভাবে মানুষের এই প্রবণতা সম্বন্ধে বর্ণনা করে। এটি লূক ১২:১৬-২১ পদে পাওয়া যায়।

৩. লূক ১২:১৬-২১ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর দৃষ্টান্তটি সংক্ষেপে বলুন।

যিশুর দৃষ্টান্তটি সেই সময়ই দেওয়া হয়েছিল, যখন তিনি লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে কথা বলছিলেন, যে-বিষয়ে আমরা আগের প্রবন্ধে কিছুটা বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করেছি। লোভ সম্বন্ধে সাবধান করার পর, যিশু একজন ধনী ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেছিলেন, যিনি ইতিমধ্যেই তার যে-দ্রব্যগুলো ছিল, সেগুলো দ্বারা পূর্ণ গোলাঘর নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না বরং সেগুলো ভেঙে বড় বড় গোলাঘর নির্মাণ করেছিলেন, যাতে আরও দ্রব্য সঞ্চয় করতে পারেন। ঠিক যখনই তিনি চিন্তা করেছিলেন যে, তিনি এখন স্বস্তি লাভ ও আরামদায়ক জীবন উপভোগ করতে যাচ্ছেন, তখনই ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন যে, তার জীবন শেষ হতে চলছে আর সেই ব্যক্তি যেসমস্ত দ্রব্য সঞ্চয় করেছেন, সেগুলো অন্য কারো হবে। এরপর যিশু এই উপসংহারমূলক বিবৃতি যুক্ত করেছিলেন: “যে কেহ আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌ নয়, সে এইরূপ।” (লূক ১২:২১) এই নীতিগল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারি? কীভাবে আমরা এই শিক্ষা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি?

সমস্যার সম্মুখীন এক ব্যক্তি

৪. যিশুর নীতিগল্পে কোন ধরনের ব্যক্তিকে চিত্রিত করা হয়েছে বলে আমরা বলতে পারি?

যিশু যে-দৃষ্টান্তটি বলেছিলেন, তা খুবই পরিচিত। আমরা দেখতে পাই যে, যিশু কেবল এই কথা বলে তাঁর গল্প শুরু করেছিলেন: “এক জন ধনবানের ভূমিতে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হইয়াছিল।” যিশু বলেননি যে, সেই ব্যক্তি কোনো প্রতারণাপূর্ণ অথবা অবৈধ উপায়ে ধনসম্পদ অর্জন করেছেন। অন্য কথায়, তাকে একজন খারাপ ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়নি। বস্তুতপক্ষে, যিশু যা বলেছিলেন, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে এটা চিন্তা করা যুক্তিযুক্ত যে, নীতিগল্পে চিত্রিত সেই ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। অন্ততপক্ষে এটা বোঝা যেতে পারে যে, তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা এবং সঞ্চয় করেছিলেন আর তা সম্ভবত তার পরিবারের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই। তাই, জগতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, তাকে একজন কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা যেতে পারে, যিনি তার দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেছিলেন।

৫. যিশুর নীতিগল্পে উল্লেখিত ব্যক্তিটি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন?

যাই হোক, যিশু নীতিগল্পের সেই ব্যক্তিকে একজন ধনবান ব্যক্তি বলে অভিহিত করেছিলেন অর্থাৎ এমন কেউ, যার বিষয়সম্পত্তিতে ইতিমধ্যেই প্রচুর পরিমাণে বস্তুগত সম্পদ ছিল। কিন্তু, যিশু যেমন বর্ণনা করেছিলেন যে, সেই ধনী ব্যক্তি একটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তার জমিতে তিনি যতটা আশা করেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি শস্য উৎপন্ন হয়েছিল, তার যতটা প্রয়োজন ছিল অথবা তিনি যতটুকুর যত্ন নিতে পারতেন, তার চেয়েও অনেক বেশি হয়েছিল। তার কী করা উচিত?

৬. ঈশ্বরের অনেক দাস আজকে কোন বাছাইগুলোর মুখোমুখি হয়?

যিহোবার অনেক দাস আজকে এমন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হয়, যেগুলো অনেকটা সেই ধনী ব্যক্তির পরিস্থিতির মতোই। সত্য খ্রিস্টানরা সৎ, অধ্যবসায়ী এবং কর্তব্যপরায়ণ কর্মী হওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে থাকে। (কলসীয় ৩:২২, ২৩) তারা কারো কর্মচারী হোক অথবা তাদের নিজেদের ব্যাবসা থাকুক, যা-ই হোক না কেন, তারা প্রায়ই সফল হয়ে থাকে আর এমনকি তারা যা করে, তাতে সবচেয়ে ভাল করে থাকে। যখন পদোন্নতি অথবা নতুন নতুন সুযোগের প্রস্তাব আসে, তখন তারা এক সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হয়। তাদের কি সেই পদোন্নতি গ্রহণ করা বা আরও টাকাপয়সা রোজগার করা উচিত? একইভাবে, অল্পবয়স্ক অনেক সাক্ষি স্কুলে অন্যদের চেয়ে ভাল করে। এর ফলে তাদেরকে হয়তো নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য অনুদান অথবা ছাত্রবৃত্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের কি অন্য সকলের মতো প্রস্তাবিত বিষয়টা গ্রহণ করা উচিত?

৭. যিশুর নীতিগল্পে উল্লেখিত ব্যক্তিটি কীভাবে তার সমস্যার সমাধান করেছিলেন?

যিশুর দৃষ্টান্তে ফিরে গিয়ে দেখি যে, সেই ধনী ব্যক্তি কী করেছিলেন, যখন তার জমিতে এত শস্য উৎপন্ন হয়েছিল যে, তার ফসল রাখার কোনো স্থানই ছিল না? তিনি তার গোলাঘর ভেঙে বড় বড় গোলাঘর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে অতিরিক্ত সমস্ত শস্য ও দ্রব্য সেখানে সঞ্চয় করতে পারেন। এই পরিকল্পনা স্পষ্টতই তাকে এতটাই নিরাপত্তা ও পরিতৃপ্তিবোধ প্রদান করেছিল যে, তিনি মনে মনে চিন্তা করেছিলেন: “আপন প্রাণকে বলিব, প্রাণ, বহুবৎসরের নিমিত্ত তোমার জন্য অনেক দ্রব্য সঞ্চিত আছে; বিশ্রাম কর, ভোজন পান কর, আমোদ প্রমোদ কর।”—লূক ১২:১৯.

কেন “নির্ব্বোধ”?

৮. যিশুর নীতিগল্পে উল্লেখিত ব্যক্তিটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়টা উপেক্ষা করেছিলেন?

কিন্তু, যিশু যেমন তুলে ধরেছিলেন যে, ধনী ব্যক্তির পরিকল্পনা কেবল এক মিথ্যা নিরাপত্তাবোধ প্রদান করেছিল। সেটাকে যতই ব্যবহারিক বলে মনে হোক না কেন, তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়কে—ঈশ্বরের ইচ্ছাকে—অন্তর্ভুক্ত করেনি। সেই ব্যক্তি কেবল নিজের কথা চিন্তা করেছিলেন যে, কীভাবে তিনি বিশ্রাম নিতে এবং ভোজন, পান ও আমোদপ্রমোদ করতে পারবেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন যে, যেহেতু তার “অনেক দ্রব্য” আছে, তাই তিনি ‘বহুবৎসর’ জীবিতও থাকবেন। কিন্তু, তার জন্য দুঃখজনক ঘটনা হল যে, তেমনটা ঘটেনি। ঠিক যেমন যিশু আগে বলেছিলেন, “উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) সেই রাতেই, লোকটি যেসমস্ত বিষয়ের জন্য পরিশ্রম করেছিলেন, সেগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে শেষ হতে চলেছিল, কারণ ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: “হে নির্ব্বোধ, অদ্য রাত্রিতেই তোমার প্রাণ তোমা হইতে দাবি করিয়া লওয়া যাইবে, তবে তুমি এই যে আয়োজন করিলে, এ সকল কাহার হইবে?”—লূক ১২:২০.

৯. কেন নীতিগল্পে উল্লেখিত ব্যক্তিটিকে নির্বোধ বলে অভিহিত করা হয়েছিল?

এখানেই আমরা যিশুর দৃষ্টান্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা দেখতে পাই। ঈশ্বর সেই ব্যক্তিকে নির্বোধ বলে অভিহিত করেছেন। এক্সিজেটিক্যাল ডিকশনারি অভ্‌ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট ব্যাখ্যা করে যে, যে-ধরনের গ্রিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা “সবসময় বোধগম্যতার অভাবকে নির্দেশ করে।” এটি বলে যে, এই নীতিগল্পে ঈশ্বরকে এমনভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, যিনি “ধনী ব্যক্তির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অবাস্তবতা” প্রকাশ করার জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করছিলেন। এই শব্দটি সেই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে না, যার বুদ্ধির অভাব রয়েছে বরং তাকে নির্দেশ করে, “যিনি ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতাকে স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেন।” ধনী ব্যক্তি সম্বন্ধে বলা যিশুর বর্ণনা সেই বিষয়টা মনে করিয়ে দেয়, যা পরবর্তী সময়ে তিনি প্রথম শতাব্দীর এশিয়া মাইনরের লায়দিকেয়া মণ্ডলীর খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “তুমি কহিতেছ, আমি ধনবান্‌, ধন সঞ্চয় করিয়াছি, আমার কিছুরই অভাব নাই; কিন্তু জান না যে, তুমিই দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ।”—প্রকাশিত বাক্য ৩:১৭.

১০. কেন “অনেক দ্রব্য” থাকা ‘বহুবৎসর’ লাভ করার নিশ্চয়তা নয়?

১০ এই শিক্ষাটার প্রতি আমাদের গভীর মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমরা কি নীতিগল্পে উল্লেখিত ব্যক্তিটির মতো হতে পারি—“অনেক দ্রব্য” লাভ করার বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি কিন্তু সেই বিষয়টা করতে ব্যর্থ হই, যা ‘বহুবৎসর’ লাভ করার প্রত্যাশা অর্জন করার জন্য আবশ্যক? (যোহন ৩:১৬; ১৭:৩) বাইবেল বলে: “ক্রোধের দিনে ধন উপকার করে না,” এবং “যে আপন ধনে নির্ভর করে, সে পতিত হয়।” (হিতোপদেশ ১১:৪, ২৮) তাই, যিশু সেই নীতিগল্পে সর্বশেষ এই উপদেশ যুক্ত করেন: “যে কেহ আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌ নয়, সে এইরূপ।”—লূক ১২:২১.

১১. বস্তুগত বিষয়সম্পত্তির ওপর ভিত্তি করে একজন ব্যক্তির আশা ও নিরাপত্তা গড়ে তোলা কেন অর্থহীন?

১১ যিশু যখন বলেছিলেন “এইরূপ,” তখন তিনি নির্দেশ করছিলেন যে, দৃষ্টান্তে বলা ধনী ব্যক্তির প্রতি যা ঘটেছিল, তা সেই ব্যক্তিদের প্রতিও ঘটবে, যারা তাদের জীবনকে—তাদের আশা ও নিরাপত্তাকে—কেবল বস্তুগত বিষয়সম্পত্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলে। ‘নিজের জন্য ধন সঞ্চয় করা’ দোষের নয় বরং “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” হতে ব্যর্থ হওয়াই দোষের বিষয়। শিষ্য যাকোব একই ধরনের সাবধানবাণী দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “এখন দেখ, তোমাদের কেহ কেহ বলে, অদ্য কিম্বা কল্য আমরা অমুক নগরে যাইব, এবং সেখানে এক বৎসর যাপন করিব, বাণিজ্য করিব ও লাভ করিব। তোমরা ত কল্যকার তত্ত্ব জান না; তোমাদের জীবন কি প্রকার?” তাদের কী করা উচিত? “উহার পরিবর্ত্তে বরং ইহা বল, ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছা হইলেই আমরা বাঁচিয়া থাকিব, এবং এ কাজটী বা ও কাজটী করিব’।” (যাকোব ৪:১৩-১৫) একজন ব্যক্তি যত ধনীই হোন না কেন বা তার যত বিষয়সম্পত্তিই থাকুক না কেন, সমস্তকিছুই অর্থহীন হয়ে যাবে যদি না তিনি ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হন। তা হলে, ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হওয়ার অর্থ কী?

ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হওয়া

১২. কী করা আমাদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান করবে?

১২ যিশুর বিবৃতিতে ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হওয়াটা, নিজের জন্য বস্তুগত ধনসম্পদ সঞ্চয় করা অথবা নিজেকে বস্তুগতভাবে সমৃদ্ধশালী করার বিপরীত। তাই যিশু বলছিলেন যে, বস্তুগত ধনসম্পদ সঞ্চয় করা অথবা আমাদের যা আছে, তা উপভোগ করা আমাদের জীবনের প্রধান চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের সম্পদকে এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত, যাতে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হয় অথবা শক্তিশালী হয়। তা করা আমাদেরকে নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান করবে। কেন? কারণ এটা আমাদের জন্য তাঁর কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ লাভ করার দ্বার খুলে দেয়। বাইবেল আমাদের বলে: “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।”—হিতোপদেশ ১০:২২.

১৩. কীভাবে যিহোবার আশীর্বাদ “ধনবান করে”?

১৩ যিহোবা যখন তাঁর লোকেদের ওপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন, তখন তিনি সবসময় তাদেরকে সর্বোত্তমটা দিয়ে থাকেন। (যাকোব ১:১৭) উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা যখন ইস্রায়েলীয়দের একটা দেশ দিয়েছিলেন, তখন তা “দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ” ছিল। যদিও মিশরকে সেইরকম একটা দেশ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল কিন্তু যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের যে-দেশ দিয়েছিলেন, তা অন্তত একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে ভিন্ন ছিল। “সেই দেশের প্রতি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোযোগ আছে,” মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন। অন্য কথায়, তারা সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে কারণ যিহোবা তাদের যত্ন নেবেন। যতদিন পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, ততদিন পর্যন্ত তারা তাঁর কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করেছিল ও এমন এক জীবন উপভোগ করতে পেরেছিল, যা স্পষ্টতই তাদের চারপাশের জাতিগুলো থেকে উৎকৃষ্ট ছিল। হ্যাঁ, যিহোবার আশীর্বাদই “ধনবান করে”!—গণনাপুস্তক ১৬:১৩; দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৫-৮; ১১:৮-১৫.

১৪. যারা ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান, তারা কী উপভোগ করে?

১৪ “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” অভিব্যক্তিটিকে, “ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধনবান” (বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) অথবা “ঈশ্বরের চোখে ধনী” (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) হিসেবেও অনুবাদ করা হয়েছে। যারা বস্তুগতভাবে ধনী, তারা সাধারণত এটা নিয়ে চিন্তিত থাকে যে, কীভাবে তারা অন্যদের দৃষ্টিগোচর হতে পারে। আর তা প্রায়ই তাদের জীবনধারার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। তারা সেই বিষয়টা দ্বারা লোকেদের প্রভাবিত করতে চায়, যেটাকে বাইবেলে “জীবিকার দর্প” বলা হয়েছে। (১ যোহন ২:১৬) এর বৈসাদৃশ্যে, যারা ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান, তারা ঈশ্বরের অনুমোদন, অনুগ্রহ এবং প্রচুর পরিমাণে অযাচিত দয়া উপভোগ করে ও তাঁর সঙ্গে তাদের এক উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে। এইরকম এক প্রীতিকর অবস্থানে থাকা নিশ্চিতভাবেই তাদেরকে সুখ ও নিরাপত্তাবোধ প্রদান করে আর তা যেকোনো বস্তুগত ধনসম্পদ যা দিতে পারে, তার চেয়েও আরও বেশি। (যিশাইয় ৪০:১১) কিন্তু, যে-প্রশ্নটা থেকে যায় সেটা হল, ঈশ্বরের চোখে ধনবান হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

ঈশ্বরের চোখে ধনবান

১৫. ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হওয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই কী করতে হবে?

১৫ যিশুর দৃষ্টান্তে, সেই ব্যক্তি কেবল নিজেকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য পরিকল্পনা এবং কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন আর তাকে নির্বোধ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। তাই, যিহোবার উদ্দেশে ধনবান হওয়ার জন্য আমাদেরকে সেই কাজগুলোতে কঠোর পরিশ্রম ও পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করতে হবে, যেগুলো ঈশ্বরের চোখে সত্যিই মূল্যবান এবং উপযুক্ত। এগুলোর মধ্যে যিশুর বলা এই আদেশ রয়েছে: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯) আমাদের সময়, শক্তি এবং মেধা ব্যবহার করাকে এক বিনিয়োগ করার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, তবে তা ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয় বরং রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে। যারা তা করেছে, তারা আধ্যাত্মিকভাবে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেছে, যা পরবর্তী অভিজ্ঞতাগুলোর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।—হিতোপদেশ ১৯:১৭.

১৬, ১৭. যে-জীবনধারা একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের চোখে ধনবান করে, তা দেখানোর জন্য আপনি কোন অভিজ্ঞতাগুলো বলতে পারেন?

১৬ প্রাচ্যের একটা দেশের একজন খ্রিস্টান ব্যক্তির ঘটনা বিবেচনা করুন। কম্পিউটার টেকনিসিয়ান হিসেবে তার একটা ভাল বেতনের চাকরি ছিল। কিন্তু, এই কাজ তার প্রায় সমস্ত সময়ই নিয়ে নিত আর তিনি নিজেকে আধ্যাত্মিকভাবে নিঃস্ব বলে মনে করতেন। অবশেষে, সেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে তিনি তা ছেড়ে দেন এবং আইসক্রিম তৈরি করে তা রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করার ব্যাবসা শুরু করেন, যাতে তার আধ্যাত্মিক চাহিদা ও দায়িত্বগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য তার হাতে আরও বেশি সময় থাকে। প্রাক্তন সহকর্মীরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিল কিন্তু ফলাফল কী হয়েছিল? “আসলে কম্পিউটারের কাজ করে আমি যতটা না পারতাম, তার চেয়ে আরও ভাল করে নিজের আর্থিক ভরণপোষণ জোগাতে পেরেছিলাম” তিনি বলেছিলেন। “এটা আমাকে আরও সুখী করেছে কারণ আমার আর কোনো চাপ ও উদ্বিগ্নতা নেই, যা আগের চাকরি নিয়ে আমার ছিল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, আমি এখন যিহোবার আরও নিকটবর্তী বোধ করি।” এইরকম পরিবর্তন এই খ্রিস্টানকে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করতে সমর্থ করেছিল আর এখন তিনি নিজ দেশের যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে সেবা করছেন। যিহোবার আশীর্বাদ সত্যিই “ধনবান করে।”

১৭ আরেকটা উদাহরণ হল একজন মহিলার, যিনি এমন একটা পরিবারে মানুষ হয়েছিলেন, যেখানে পড়াশোনাকে উচ্চমূল্য দেওয়া হতো। তিনি ফ্রান্স, মেক্সিকো এবং সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন এবং তার এক সম্ভাবনাময় কেরিয়ারের প্রত্যাশা ছিল। “আমি সাফল্য অর্জন করেছিলাম; মর্যাদা ও বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলাম,” তিনি বলেছিলেন, “কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমি এক শূন্যতা, এক গভীর অতৃপ্তি অনুভব করতাম।” এরপর তিনি যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি যখন আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে শুরু করি, তখন যিহোবাকে খুশি করার ও তিনি আমাকে যা দিয়েছেন, তার প্রতিদানে সামান্য কিছু দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমাকে কোন পথ অনুধাবন করতে হবে, তা স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করেছিল আর তা হল, তাঁকে পূর্ণসময়ের সেবা করা।” তিনি তার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং শীঘ্রই বাপ্তিস্ম নেন। বিগত ২০ বছর ধরে তিনি আনন্দের সঙ্গে পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় সেবা করছেন। “কেউ কেউ মনে করে যে, আমি আমার মেধাকে নষ্ট করেছি,” তিনি বলেন, “কিন্তু তারা স্বীকার করে যে, আমি সুখী আর আমি যে-নীতিগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তারা সেগুলোর প্রশংসা করে। প্রতিদিন আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, যাতে তিনি আমাকে নম্র হতে সাহায্য করেন আর এর ফলে আমি যেন তাঁর অনুমোদন লাভ করতে পারি।”

১৮. পৌলের মতো আমরা কীভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হতে পারি?

১৮ শৌল, যিনি পরবর্তী সময়ে প্রেরিত পৌল হয়েছিলেন, তার সামনে এক সম্ভাবনাময় বৃত্তি ছিল। তা সত্ত্বেও, পরবর্তী সময়ে তিনি লিখেছিলেন: “বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি।” (ফিলিপীয় ৩:৭, ৮) পৌলের কাছে, খ্রিস্টের মাধ্যমে তিনি যে-ধন লাভ করেছিলেন, তা জগৎ দিতে পারে এমন যেকোনোকিছুর চেয়ে উৎকৃষ্ট ছিল। একইভাবে, যেকোনো স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করার এবং ঈশ্বরীয় ভক্তির এক জীবন অনুধাবন করার মাধ্যমে আমরাও এমন এক জীবন উপভোগ করতে পারি, যা ঈশ্বরের চোখে ধনবান। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, সম্মান ও জীবন।”—হিতোপদেশ ২২:৪.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• যিশুর দৃষ্টান্তে উল্লেখিত ব্যক্তিটি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন?

• কেন নীতিগল্পে উল্লেখিত ব্যক্তিটিকে নির্বোধ বলে অভিহিত করা হয়েছিল?

• ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হওয়ার অর্থ কী?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন ধনী ব্যক্তিকে নির্বোধ বলে অভিহিত করা হয়েছিল?

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে উন্নতি লাভ করার বিভিন্ন সুযোগ এক প্রকৃত পরীক্ষা হয়ে উঠতে পারে?

[২৮, ২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

“সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে”