সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহিষ্কেল বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

যিহিষ্কেল বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

যিহিষ্কেল বইয়ের দ্বিতীয় বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

 সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৯ সালের ডিসেম্বর মাস। বাবিলের রাজা যিরূশালেমে তার চূড়ান্ত অবরোধ শুরু করেছেন। এই পর্যন্ত, বাবিলের বন্দিদের কাছে যিহিষ্কেলের বার্তা একটি মূলভাবের ওপর কেন্দ্রীভূত রয়েছে, যা হল: তাদের প্রিয় নগর যিরূশালেমের পতন এবং ধ্বংস। কিন্তু, এখন যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর বিষয়বস্তু পালটে পৌত্তলিক জাতিগুলোর ধ্বংসের বিষয় হয়, যে-জাতিগুলো ঈশ্বরের লোকেদের দুর্দশা দেখে আনন্দ করবে। ১৮ মাস পর যিরূশালেমের পতন হলে যিহিষ্কেলের বার্তা নতুন এই মূলভাব গ্রহণ করে: সত্য উপাসনার গৌরবান্বিত পুনর্স্থাপন।

যিহিষ্কেল ২৫:১–৪৮:৩৫ পদে ইস্রায়েলের চারপাশের জাতিগুলো সম্বন্ধে এবং ঈশ্বরের লোকেদের উদ্ধার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। * যিহিষ্কেল ২৯:১৭-২০ পদ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত বিবরণ কালানুক্রমিকভাবে ও বিষয় অনুসারে সাজানো হয়েছে। কিন্তু, এই চারটে পদ কালানুক্রমিক নয় বরং এগুলোতে মিশরের বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের অংশ হিসেবে যিহিষ্কেল বইয়ে এমন এক বার্তা রয়েছে, যা “জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।”—ইব্রীয় ৪:১২.

‘এই দেশ এদন উদ্যানের তুল্য হইবে’

(যিহিষ্কেল ২৫:১–৩৯:২৯)

যিরূশালেমের পতনে তাদের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে আগে থেকেই বুঝতে পেরে যিহোবা অম্মোন, মোয়াব, ইদোম, পলেষ্টিয়া, সোর ও সীদোনের বিরুদ্ধে যিহিষ্কেলকে ভবিষ্যদ্বাণী করতে বলেন। মিশর লুণ্ঠিত হবে। “মিসর-রাজ ফরৌণকে ও তাহার লোকারণ্যকে” এরস বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা “বাবিল-রাজের খড়্গ” দ্বারা কেটে ফেলা হবে।—যিহিষ্কেল ৩১:২, ৩, ১২; ৩২:১১, ১২.

সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের প্রায় ছয় মাস পর, একজন পলাতক ব্যক্তি যিহিষ্কেলের কাছে আসেন এবং তাকে বলেন: “নগর পরাজিত হইয়াছে।” বন্দিদের কাছে ভাববাদী ‘আর বোবা রহিলেন না।’ (যিহিষ্কেল ৩৩:২১, ২২) ঘোষণা করার জন্য তার কাছে পুনর্স্থাপনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো রয়েছে। যিহোবা ‘তাহাদের উপরে একমাত্র পালককে উৎপন্ন করিবেন, তিনি [তাঁহার] দাস দায়ূদ।’ (যিহিষ্কেল ৩৪:২৩) ইদোম ধ্বংস হবে কিন্তু ইদোমকে ছাড়িয়ে যিহূদা “এদন উদ্যানের তুল্য” হবে। (যিহিষ্কেল ৩৬:৩৫) যিহোবা তাঁর পুনর্স্থাপিত লোকেদের “গোগের” আক্রমণ থেকে সুরক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেন।—যিহিষ্কেল ৩৮:২.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

২৯:৮-১২—মিশর কখন ৪০ বছরের জন্য ধ্বংস হয়েছিল? সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংসের পর, যিহূদার অবশিষ্ট লোকেরা যিরমিয়ের সতর্কবাণী সত্ত্বেও, মিশরে পালিয়ে গিয়েছিল। (যিরমিয় ২৪:১, ৮-১০; ৪২:৭-২২) সেটা তাদের জন্য পালানোর এক উপযুক্ত স্থান বলে প্রমাণিত হয়নি কারণ নবূখদ্‌নিৎসর মিশরের বিরুদ্ধে এসেছিলেন এবং তা জয় করেছিলেন। হয়তো এই বিজয়ের পরেই মিশর ৪০ বছরের জন্য ধ্বংস হয়েছিল। যদিও জগতের ইতিহাসে এই ধ্বংস সম্বন্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না কিন্তু আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তা হয়েছিল কারণ যিহোবা হলেন ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতাকারী।—যিশাইয় ৫৫:১১.

২৯:১৮—কীভাবে “সকলের মস্তক টাকপড়া ও সকলের স্কন্ধ জীর্ণত্বক্‌” হয়েছিল? সোরের মূল ভূখণ্ডকে অবরোধ করা এতটাই চরম ও শ্রমসাধ্য হয়েছিল যে, নবূখদ্‌নিৎসরের সৈন্যদের মাথায় তাদের শিরস্ত্রাণের ঘষায় টাক পড়ে গিয়েছিল এবং দুর্গের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বহন করার কারণে তাদের স্কন্ধ জীর্ণত্বক হয়ে গিয়েছিল।—যিহিষ্কেল ২৬:৭-১২.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

২৯:১৯, ২০. যেহেতু সোরের লোকেরা তাদের বেশির ভাগ সম্পদ নিয়েই তাদের দ্বীপে পালিয়ে গিয়েছিল, তাই রাজা নবূখদ্‌নিৎসর সোর থেকে খুব অল্পই লুট করতে পেরেছিলেন। এমনকি যদিও নবূখদ্‌নিৎসর একজন অহংকারী, আত্মকেন্দ্রিক পৌত্তলিক শাসক ছিলেন কিন্তু যিহোবা “তাহার সৈন্যের বেতন” হিসেবে তাকে মিশর দেওয়ার মাধ্যমে নবূখদ্‌নিৎসরের কাজের জন্য তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। সরকারগুলো আমাদের পক্ষে যে-কাজগুলো করে থাকে, সেগুলোর জন্য কর প্রদান করার মাধ্যমে আমাদের কি সত্য ঈশ্বরকে অনুকরণ করা উচিত নয়? জাগতিক কর্তৃপক্ষদের আচরণ অথবা যে-উপায়ে কর ব্যবহৃত হয়, তার কোনোটাই এই বাধ্যবাধকতাকে বাতিল করে দেয় না।—রোমীয় ১৩:৪-৭.

৩৩:৭-৯. আধুনিক দিনের প্রহরী শ্রেণী—অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ—ও তাদের সহযোগীদের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে ও আসন্ন “মহাক্লেশ” সম্বন্ধে লোকেদের সতর্ক করতে কখনো ইতস্তত বোধ করা উচিত নয়।—মথি ২৪:২১.

৩৩:১০-২০. মন্দপথ থেকে ফিরে আসার ও ঈশ্বর যা চান, তা মেনে চলার ওপর আমাদের পরিত্রাণ নির্ভর করে। বস্তুতপক্ষে, যিহোবার পথ হল “সরল।”

৩৬:২০, ২১. “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] প্রজা” অর্থাৎ যে-নামে তারা পরিচিত ছিল, সেই অনুযায়ী জীবনযাপন না করার কারণে ইস্রায়েলীয়রা জাতিগণের কাছে ঈশ্বরের নামকে অপবিত্র করেছিল। আমাদের কখনোই যিহোবার নামমাত্র উপাসক হওয়া উচিত নয়।

৩৮:১-২৩. যিহোবা যে তাঁর লোকেদের মাগোগ দেশীয় গোগের আক্রমণ থেকে উদ্ধার করবেন, তা জানা কতই না আশ্বাসদায়ক! “এ জগতের অধিপতি” শয়তান দিয়াবলকে স্বর্গ থেকে বের করে দেওয়ার পর তাকে গোগ নাম দেওয়া হয়েছে। মাগোগ দেশ পৃথিবীর সীমাকে নির্দেশ করে, যেখানে শয়তান ও তার মন্দদূতদের আবদ্ধ রাখা হয়েছে।—যোহন ১২:৩১; প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১২.

‘আমি তোমাকে যাহা যাহা দেখাইব, তাহাতে তোমার চিত্ত নিবেশ কর’

(যিহিষ্কেল ৪০:১–৪৮:৩৫)

যিরূশালেম নগরকে আঘাত করার পর এখন ১৪তম বছর। (যিহিষ্কেল ৪০:১) এখনও পর্যন্ত বন্দিত্বের ছাপ্পান্ন বছর বাকি রয়েছে। (যিরমিয় ২৯:১০) যিহিষ্কেলের বয়স এখন প্রায় ৫০ বছর। একটা দর্শনে, তাকে ইস্রায়েল দেশে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে: “হে মনুষ্য-সন্তান, আমি তোমাকে যাহা যাহা দেখাইব, সেই সকল তুমি স্বচক্ষে নিরীক্ষণ কর, স্বকর্ণে শ্রবণ কর ও তাহাতে তোমার চিত্ত নিবেশ কর।” (যিহিষ্কেল ৪০:২-৪) একটা নতুন মন্দিরের দর্শন পেয়ে যিহিষ্কেল নিশ্চয় কত রোমাঞ্চিতই না হয়েছিলেন!

যিহিষ্কেল যে-গৌরবান্বিত মন্দির দেখেন সেটাতে ৬টা দ্বার, ৩০টা কুঠরি, পবিত্র স্থান, অতি পবিত্র স্থান, একটা কাঠের বেদি এবং হোমবলি উৎসর্গের জন্য একটা বেদি রয়েছে। মন্দির থেকে জলপ্রবাহ “বাহির হইয়া” একটা বড় নদীতে পরিণত হয়। (যিহিষ্কেল ৪৭:১) এ ছাড়া, যিহিষ্কেল বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভূমি ভাগ করে দেওয়ার ব্যাপারেও একটা দর্শন লাভ করেন, যেগুলোর প্রতিটা ভাগ পূর্ব-পশ্চিম বরাবর অবস্থিত এবং যিহূদা ও বিন্যামীনের ভাগের মধ্যে এক প্রশাসনিক জায়গা রয়েছে। “সদাপ্রভুর ধর্ম্মধাম” এবং সদাপ্রভু তত্র নামক “নগরটী” এই জায়গায় অবস্থিত।—যিহিষ্কেল ৪৮:৯, ১০, ১৫, ৩৫.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৪০:৩–৪৭:১২—দর্শনে দেখা মন্দির কী চিত্রিত করে? যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা বিশালাকার মন্দির প্রকৃতপক্ষে কখনো নির্মিতই হয়নি। এটা ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরকে—আমাদের দিনে বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য তাঁর মন্দিরতুল্য ব্যবস্থাকে—চিত্রিত করেছিল। (যিহিষ্কেল ৪০:২; মীখা ৪:১; ইব্রীয় ৮:২; ৯:২৩, ২৪) মন্দিরের দর্শনটা “শেষ কালে” পরিপূর্ণ হয়, যখন যাজক শ্রেণীকে পরিষ্কৃত করা হয়। (২ তীমথিয় ৩:১; যিহিষ্কেল ৪৪:১০-১৬; মালাখি ৩:১-৩) কিন্তু, পরমদেশে এর চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা হবে। দর্শনে দেখা মন্দির বন্দি যিহুদিদের একটা প্রতিজ্ঞা জুগিয়েছিল যে, বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত হবে এবং প্রত্যেক যিহুদি পরিবার সেই দেশে উত্তরাধিকার লাভ করবে।

৪০:৩–৪৩:১৭—মন্দির পরিমাপ করার তাৎপর্য কী? মন্দির পরিমাপ করা হল এক চিহ্ন যে, বিশুদ্ধ উপাসনার বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবেই হবে।

৪৩:২-৪, ৭, ৯—‘তাহাদের রাজগণের শব’ কী ছিল, যেগুলোকে মন্দির থেকে সরিয়ে নিতে হতো? শব স্পষ্টতই প্রতিমাগুলোকে নির্দেশ করেছিল। যিরূশালেমের শাসকরা ও এর লোকেরা প্রতিমার দ্বারা ঈশ্বরের মন্দিরকে কলুষিত করেছিল, মূলত সেই প্রতিমাগুলোকে তাদের রাজা বানিয়েছিল।

৪৩:১৩-২০—যিহিষ্কেল দর্শনে যে-যজ্ঞবেদি দেখেছিলেন, সেটার দ্বারা কী চিত্রিত হয়? রূপক যজ্ঞবেদি যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই ব্যবস্থার কারণে অভিষিক্তরা ঈশ্বরের চোখে ধার্মিক এবং “বিস্তর লোক” শুচি ও বিশুদ্ধ বলে গণিত হয়। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪; রোমীয় ৫:১, ২) সম্ভবত এই কারণেই দর্শনে দেখা মন্দিরে, শলোমনের মন্দিরের ‘ছাঁচে ঢালা সমুদ্র-পাত্র’—যাজকদের পরিষ্কৃত হওয়ার জন্য জলের বিশাল আধার—নেই।—১ রাজাবলি ৭:২৩-২৬.

৪৪:১০-১৬—যাজক শ্রেণী কাদের প্রতিনিধিত্ব করে? যাজক শ্রেণী আমাদের দিনের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের দলের পূর্বাভাস দেয়। তাদেরকে ১৯১৮ সালে পরিশোধন করা হয়েছিল, যখন যিহোবা তাঁর আত্মিক মন্দিরে ‘পরিষ্কারক ও শুচিকারক হইয়া’ বসেছিলেন। (মালাখি ৩:১-৫) যারা শুচি ছিল বা যারা অনুতপ্ত হয়েছিল, তারা তাদের বিশেষ সেবা চালিয়ে যেতে পেরেছিল। এরপর নিজেদেরকে জগৎ বা ‘সংসার হইতে নিষ্কলঙ্করূপে’ রক্ষা করার জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল আর এভাবে তারা অযাজকীয় শ্রেণীর দ্বারা প্রতিনিধিত্বকারী ‘বিস্তর লোকের’ জন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছিল।—যাকোব ১:২৭; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০.

৪৫:১; ৪৭:১৩–৪৮:২৯—‘ভূমি’ এবং এর ভাগ কী চিত্রিত করে? ভূমি ঈশ্বরের লোকেদের কার্যকলাপের এক রাজ্যকে চিত্রিত করে। যিহোবার একজন উপাসক যেখানেই থাকুন না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি সত্য উপাসনাকে সমর্থন করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি পুনর্স্থাপিত ভূমিতে থাকবেন। নতুন জগতে ভূমি ভাগ করার কাজ চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা লাভ করবে, যখন প্রত্যেক বিশ্বস্ত ব্যক্তি এক স্থানের অধিকারী হবে।—যিশাইয় ৬৫:১৭, ২১.

৪৫:৭, ১৬—যাজকবর্গ ও অধ্যক্ষদের জন্য দেওয়া লোকেদের উপহারের দ্বারা কী চিত্রিত হয়? আত্মিক মন্দিরে এটা মূলত আধ্যাত্মিক সমর্থনকে—সাহায্য করতে চাওয়া এবং সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করাকে—নির্দেশ করে।

৪৭:১-৫—যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা নদীর জল কী চিত্রিত করে? জল জীবনের জন্য যিহোবার আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোকে চিত্রিত করে, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত খ্রিস্ট যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান এবং বাইবেলে প্রাপ্ত ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান। (যিরমিয় ২:১৩; যোহন ৪:৭-২৬; ইফিষীয় ৫:২৫-২৭) যে-নতুন ব্যক্তিরা সত্য উপাসনাকে গ্রহণ করে, তাদের স্থান দেওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য সেই নদী ধীরে ধীরে গভীর হয়। (যিশাইয় ৬০:২২) হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালীন সেই নদীর জীবন-জল সবচেয়ে প্রবলভাবে প্রবাহিত হবে আর সেই জলের অন্তর্ভুক্ত হবে সেইসময়ে যে-“কয়েকখান পুস্তক” খোলা হবে, সেগুলো থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য বোধগম্যতা।—প্রকাশিত বাক্য ২০:১২; ২২:১, ২.

৪৭:১২—ফলদায়ক বৃক্ষ কী চিত্রিত করে? রূপক বৃক্ষ মানবজাতিকে সিদ্ধতায় পুনর্স্থাপনের জন্য ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোকে চিত্রিত করে।

৪৮:১৫-১৯, ৩০-৩৫—যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা নগর কী চিত্রিত করে? “সদাপ্রভু তত্র” নগরটি “সাধারণ” স্থানে অবস্থিত, যা ইঙ্গিত করে যে এটা নিশ্চয়ই পার্থিব কোনোকিছুকে চিত্রিত করে। নগরটি পার্থিব প্রশাসনকে চিত্রিত করে বলে মনে হয়, যা সেই ব্যক্তিদেরকে উপকৃত করে, যারা ধার্মিক ‘নূতন পৃথিবী’ গঠন করবে। (২ পিতর ৩:১৩) উভয় পাশেই দ্বার থাকা এর উন্মুক্ততাকে তুলে ধরে। ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে অধ্যক্ষদের এমন হতে হবে, যাদের কাছে সহজেই যাওয়া যায়।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৪০:১৪, ১৬, ২২, ২৬. মন্দিরের প্রবেশপথের দেওয়ালে খোদাই করা তাল জাতীয় গাছ বা খেজুর গাছের চিত্র দেখায় যে, কেবলমাত্র নৈতিকভাবে ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিদেরই এখানে প্রবেশ করার অনুমতি রয়েছে। (গীতসংহিতা ৯২:১২) এটা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমরা যদি ন্যায়নিষ্ঠ হই, একমাত্র তা হলেই আমাদের উপাসনা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য।

৪৪:২৩. আধুনিক দিনের যাজক শ্রেণী যে-পরিচর্যা করে থাকে, তার জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিয়ে থাকে, যা আমাদেরকে যিহোবার চোখে কোনটা শুচি ও কোনটা অশুচি তার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করে।—মথি ২৪:৪৫.

৪৭:৯, ১১. জ্ঞান—রূপক জলের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য—আমাদের সময়ে চমৎকার আরোগ্যসাধন করছে। যেখানেই তা জানা বা গ্রহণ করা হোক না কেন, সেটা লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে জীবন দান করে। (যোহন ১৭:৩) অন্যদিকে, যারা জীবনদায়ী জল গ্রহণ করে না, তারা “লবণার্থে নিরূপিত” অর্থাৎ চিরতরে ধ্বংস হবে। তাই, আমাদের জন্য ‘সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানা’ কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—২ তীমথিয় ২:১৫.

“আমি আমার সেই মহৎ নাম পবিত্র করিব”

দায়ূদের বংশের শেষ রাজাকে সরিয়ে দেওয়ার পর, সত্য ঈশ্বর রাজপদের জন্য ‘যাঁহার অধিকার আছে,’ তাঁর আসার আগে এক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হতে দিয়েছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বর দায়ূদের সঙ্গে তাঁর চুক্তি বাতিল করেননি। (যিহিষ্কেল ২১:২৭; ২ শমূয়েল ৭:১১-১৬) যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণী “আমার দাস দায়ূদ” সম্বন্ধে বলে, যিনি একজন “পালক” ও “রাজা” হবেন। (যিহিষ্কেল ৩৪:২৩, ২৪; ৩৭:২২, ২৪, ২৫) এই ব্যক্তি রাজ্য ক্ষমতায় যিশু খ্রিস্ট ছাড়া আর কেউ নন। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) যিহোবা মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে “[তাঁহার] মহৎ নাম পবিত্র” করবেন।—যিহিষ্কেল ৩৬:২৩.

খুব শীঘ্রই, সেইসমস্ত ব্যক্তিকে ধ্বংস করা হবে, যারা ঈশ্বরের পবিত্র নামকে অপবিত্র করে। কিন্তু, যারা যিহোবাকে এক গ্রহণযোগ্য উপায়ে উপাসনা করার মাধ্যমে তাদের জীবনে সেই নামকে পবিত্র করে, তারা অনন্তজীবন লাভ করবে। তাই, আসুন আমরা সেই জীবনদায়ী জলের সদ্ব্যবহার করি, যা আমাদের দিনে প্রচুররূপে প্রবাহিত হচ্ছে এবং সত্য উপাসনাকে আমাদের জীবনের প্রধান বিষয় করে তুলি।

[পাদটীকা]

^ যিহিষ্কেল ১:১–২৪:২৭ পদের ওপর আলোচনার জন্য ২০০৭ সালের ১লা জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “যিহিষ্কেল বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো” শিরোনামের প্রবন্ধটি দেখুন।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা গৌরবান্বিত মন্দির

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা জীবন নদী কী চিত্রিত করে?

[সৌজন্যে]

Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.