সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবাকে সেবা করা —এক অতুলনীয় সম্মান ও সুযোগ

যিহোবাকে সেবা করা —এক অতুলনীয় সম্মান ও সুযোগ

জীবনকাহিনি

যিহোবাকে সেবা করা —এক অতুলনীয় সম্মান ও সুযোগ

বলেছেন জিরা স্টিগার্স

আমার স্বামী, যে পূর্ণসময় পরিচর্যায় আমার একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিল, সে ১৯৩৮ সালে মারা যায়। সেই সময় দেখাশোনা করার জন্য আমার দুই ছেলের মধ্যে একটি কোলে এবং আরেকটি দশ বছর বয়সি ছিল। যদিও আমি তখনও একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করতে আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলাম কিন্তু আমি কীভাবে সেই কাজ করতে পারতাম? সেই সম্বন্ধে বলার আগে আমি আমার আগের জীবন সম্পর্কে আপনাদের বলছি।

 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামাতে ১৯০৭ সালের ২৭শে জুলাই, আমার জন্মের কিছুদিন পরে আমার বাবামা, আমাকে এবং আমার ভাইবোনেদেরকে নিয়ে জর্জিয়ায় চলে আসে। তার কিছু সময় পরে আমরা টেনেসিতে আর তারপর ফ্লোরিডার টামপা শহরের কাছাকাছি চলে যাই। সেখানে থাকাকালীন, ১৯১৬ সালে আমি শব্দসহ ছবি “ফটো-ড্রামা অফ ক্রিয়েশন” দেখেছিলাম। সেই সময় চলচ্চিত্র শিল্প সবে শিশু অবস্থায় ছিল আর তাই সকলে “ফটো-ড্রামা” খুবই উপভোগ করেছিল!

আমার বাবামা প্রহরীদুর্গ এবং অন্যান্য বাইবেল সাহিত্যাদির অত্যন্ত আগ্রহী পাঠক ছিল। যদিও বাবা সেই পত্রিকাগুলো পড়তে খুবই পছন্দ করতেন কিন্তু সেই সময় তিনি বাইবেল ছাত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতেন না, যে-নামে যিহোবার সাক্ষিদের তখন ডাকা হতো। কিন্তু, মা আমাদের সব ভাইবোনকে সভাগুলোতে নিয়ে যেতেন। আসলে, আমরা মিশিগানের নাইলে চলে যাওয়ার অল্প কিছু সময় পর, ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ডে সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য ট্রেনে করে প্রায় দশ মাইল ভ্রমণ করতাম।

শেষ পর্যন্ত, ১৯২৪ সালের ২২শে জুলাই, যিহোবার কাছে আমার উৎসর্গীকরণের চিহ্ন হিসেবে আমি বাপ্তিস্ম নিই। এর ঠিক পরেই, মা তার কাজকর্মকে সুবিন্যস্ত করেন যাতে তিনি একজন কলপোর্টার হতে পারেন, যে-নামে যিহোবার সাক্ষিদের পূর্ণসময়ের পরিচারকদের সেই সময় ডাকা হতো। তার এবং অন্যান্য কলপোর্টারের উত্তম উদাহরণ, সেই কাজ করার জন্য আমার মধ্যে এক আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল।

একজন সাথি খুঁজে পাওয়া

১৯২৫ সালে, ইন্ডিয়ানার ইন্ডিয়ানাপোলিসে অনুষ্ঠিত একটা বড় সম্মেলনে যোগদান করার সময় জেমস স্টিগার্সের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, যে শিকাগোতে থাকত। যিহোবার একজন উদ্যোগী সেবক হিসেবে জেমস তখনই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। শিকাগো থেকে আমি প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে থাকতাম, তাই পরস্পরের সঙ্গে দেখা করাটা আমাদের জন্য সহজ ছিল না। সেই সময়ে, বড় শহরটাতে শুধুমাত্র একটাই মণ্ডলী ছিল আর সভাগুলো ওপর তলার ভাড়া করা ঘরে করা হতো। জেমস প্রায়ই আমাকে আধ্যাত্মিক বিষয়ে উৎসাহ দিয়ে চিঠি লিখত। আমরা ১৯২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বিয়ে করি আর প্রায় এক বছর পরে আমাদের প্রথম ছেলে, এডির জন্ম হয়।

তার কিছু সময় পর, জেমস ও আমি একসঙ্গে অগ্রগামী পরিচর্যা শুরু করি। আমরা আটটি রাজ্যে—মিশিগান, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, দক্ষিণ ডাকোটা, আইওয়া, নেব্রাসকা, ক্যালিফোর্নিয়া আর ইলিনোয়ায়—সেবা করেছি আর সেই সময়টা ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ বছর। জেমস অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই কেবল পরিবার হিসেবে সেই আনন্দের দিনগুলোতে বাধা পড়েছিল।

জেমসের অসুস্থতার কারণে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ায়, ১৯৩৬ সালে আমার শাশুড়ি, যিনি একজন সাক্ষি ছিলেন, তার সঙ্গে থাকার জন্য আমাদেরকে শিকাগোতে ফিরে যেতে হয়েছিল। জেমসের অসুস্থতার শেষের দিকে, যখন আমি দ্বিতীয় বার মা হতে যাচ্ছিলাম, আমি একটা ক্যাফেটেরিয়াতে দৈনিক ১ ডলারের বিনিময়ে কাজ করতাম। আমার প্রিয় শাশুড়ি খেয়াল রাখতেন যে, আমাদের জন্য যথেষ্ট খাবার রয়েছে কি না আর বিনিময়ে তিনি এক পয়সাও নিতেন না। তিনি আমাদের যথাসাধ্য যত্ন নিয়েছিলেন।

মস্তিষ্কপ্রদাহ রোগে মারা যাওয়ার আগে, জেমস প্রায় দু-বছর অসুস্থ ছিল। সেটা ছিল ১৯৩৮ সালের জুলাই মাস। তার অসুস্থতার সময়ে, সে গাড়ি চালাতে বা ঘরে ঘরে সাক্ষ্যদান করতে পারত না, তবুও সে অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতিটা সুযোগকে কাজে লাগাত। আমাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য আমি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করা ছেড়ে দিই। আমি বিভিন্ন ধরনের চাকরি খুঁজে পেয়েছিলাম, যেগুলোর প্রত্যেকটা অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়েছিল।

১৯৩৮ সালের ৩০শে জুলাই আমাদের ছেলে ববি, তার বাবার মৃত্যুর ঠিক আট দিন পরে জন্মগ্রহণ করে। তবুও আমার শাশুড়ি আমাকে কাউন্টি হাসপাতালে (যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়) যেতে দেননি। পরিবর্তে, তিনি আমার জন্য আরও ভাল এক হাসপাতালে যাওয়ার এবং তার ডাক্তারকে দেখানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি সমস্ত বিল পরিশোধ করেছিলেন আর তার দেখানো এই খ্রিস্টীয় প্রেমের জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

আবারও পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় ফিরে যাওয়া

ববির বয়স ২ বছরের চেয়ে আরেকটু বেশি হওয়া পর্যন্ত আমরা আমার শাশুড়ির সঙ্গেই থেকেছিলাম আর সেই সময় এডির বয়স ছিল ১২ বছর। যদিও আমাকে আমার নতুন নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল, তবুও পূর্ণসময়ে যিহোবাকে সেবা করার আকুল আকাঙ্ক্ষা তখনও আমার মধ্যে ছিল। ১৯৪০ সালে, মিশিগানের ডিট্রয়িটে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এক দম্পতির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, যারা দক্ষিণ ক্যারোলিনায় অগ্রগামীর কাজ করতে আসার জন্য আমাকে উৎসাহ দিয়েছিল। তাই, আমি ১৫০ ডলার দিয়ে একটা ১৯৩৫ পন্টিয়াক গাড়ি কিনেছিলাম এবং সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ১৯৪১ সালে, যে-বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িত হয়েছিল, সেই বছর আমার দুই ছেলে ও আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে ভ্রমণ করেছিলাম এবং আবারও পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছিলাম।

দক্ষিণ ক্যারোলিনাতে যাওয়ার পর, প্রথমে আমরা ক্যামডেনে ও পরে লিট্‌ল রিভার শহরে আর তারপর কনওয়েতে যাই। কনওয়েতে, আমি একটা ছোট ট্রেইলার কিনি। একটা পেট্রল-পাম্পের দয়ালু মালিক আমাকে তার পেট্রল-পাম্পের কাছে গাড়িটাকে রাখার এবং তার গ্যাস ও বিদ্যুৎ, এমনকি সেই পাম্পের শৌচাগারও ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, রেশনে জ্বালানি দেওয়া হতো আর আমি কোনো জ্বালানিই পেতাম না। তাই, আমি একটা পুরোনো বাইসাইকেল কিনেছিলাম। তারপর ১৯৪৩ সালে, আমাদের সমস্ত টাকাপয়সা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় যখন অগ্রগামীর কাজ আর চালানো যাবে না বলে মনে হয়েছিল, তখনই আমাকে বিশেষ অগ্রগামী হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়; এর ফলে, খরচগুলো চালিয়ে নেওয়ার জন্য আমি মাসিক হাতখরচ পেতাম। সেই বছরগুলোতে যিহোবা আমাকে প্রচুররূপে সাহায্য করেছিলেন!

কনওয়েতে সেই সময় অন্য কোনো সাক্ষি ছিল না আর এইজন্য বাচ্চাদের ও আমার জন্য একা একা পরিচর্যায় যাওয়া কঠিন ছিল। তাই আমার সঙ্গী হিসেবে একজন বিশেষ অগ্রগামীকে পাঠানোর জন্য আমি চিঠি লিখি আর ১৯৪৪ সালে একজন চমৎকার ব্যক্তিকে পাওয়ার দ্বারা আমি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হই, তিনি ছিলেন এডিথ ওয়াকার! বিভিন্ন কার্যভারে আমরা একসঙ্গে ১৬ বছর সেবা করেছি। দুঃখের বিষয় যে, তারপর তাকে শারীরিক সমস্যার জন্য ওহাইওতে ফিরে যেতে হয়েছিল।

স্মরণীয় আশীর্বাদগুলো

সেই বছরগুলোর সঙ্গে জড়িত আমার বহু মধুর স্মৃতির মধ্যে আমি কখনো ১৩ বছর বয়সি আ্যলবার্থাকে ভুলব না, যে কনওয়েতে থাকত আর তার পঙ্গু দিদিমার ও দুই ভাইয়ের দেখাশোনা করত। আমি তাকে বাইবেলের যে-সত্যগুলো শিখিয়েছিলাম, সেগুলোকে সে ভালবেসেছিল আর অন্যদেরকে সেই সত্য সম্বন্ধে বলতে চেয়েছিল। সে-ও অগ্রগামী কাজের প্রতি গভীর উপলব্ধি গড়ে তুলেছিল এবং ১৯৫০ সালে হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করেছিল। ৫৭ বছরেরও বেশি সময় পর, এখনও সে একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক!

১৯৫১ সালে, এডিথ এবং আমি অল্প কিছুদিনের জন্য দক্ষিণ ক্যারোলিনার রকহিলে সেবা করার কার্যভার পাই, যেখানে অল্প কয়েকজন সাক্ষি থাকত। তারপর আমরা জর্জিয়ার এলবার্টন শহরে তিন বছরের জন্য চলে যাই। এরপর আবারও দক্ষিণ ক্যারোলিনাতে ফিরে আসি, যেখানে আমি ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ছিলাম। ওয়ালহালাতে, নেটি নামে একজন বয়স্ক, কানে কম শোনেন এমন একজন মহিলার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়, যিনি একটা গ্রাম্য এলাকাতে একাই থাকতেন। বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় তিনি প্রকাশনা থেকে একটা অনুচ্ছেদ পড়তেন, তারপর আমি পৃষ্ঠার একেবারে নীচে দেওয়া সেই অনুচ্ছেদের প্রশ্নটা তাকে আঙুল দিয়ে দেখাতাম আর এরপর তিনি অনুচ্ছেদ থেকে উত্তরটা দেখিয়ে দিতেন।

যখন তিনি কিছু বুঝতে পারতেন না, তখন তিনি তার প্রশ্নটা একটা কাগজে লিখে রাখতেন এবং আমি সেই প্রশ্নের পাশে উত্তরটা লিখে দিতাম। ধীরে ধীরে বাইবেলের প্রতি নেটির উপলব্ধি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, তিনি মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিতে এবং সেইসঙ্গে ঘরে ঘরে পরিচর্যাও শুরু করেন। তিনি একাই প্রচার করতেন কিন্তু আমি সবসময়ই তার কাছাকাছি, সাধারণত রাস্তার ওপারেই, তার কোনো সাহায্য লাগবে কি না, সেইজন্য তৈরি থাকতাম।

ওয়ালহালাতে থাকার সময়, আমার পুরোনো গাড়িটা খারাপ হয়ে যায়। তাই, ১০০ ডলার দিয়ে একটা গাড়ি কেনার প্রয়োজন হয়ে পড়ে কিন্তু আমার কোনো টাকাপয়সা ছিল না। আমি একজন সাক্ষির সঙ্গে যোগাযোগ করি, যার একটা ব্যাবসা ছিল আর তিনি আমাকে ১০০ ডলার ধার দিয়েছিলেন। তার কিছু পরে, আমি আমার বোনের কাছ থেকে একটা অপ্রত্যাশিত চিঠি পাই যেটাতে বলা ছিল, আমার ভাইবোনেরা সম্প্রতি জানতে পেরেছে যে, আমাদের বাবা মারা যাওয়ার আগে একটা ব্যাঙ্কে কিছু টাকা রেখে গিয়েছিলেন। সেই টাকাটা দিয়ে তারা কী করবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে আর সবাই একমত হয়েছে যে, সেটা তারা আমাকে পাঠাবে। সেটা ছিল ঠিক ১০০ ডলার!

আমার ছেলেদের সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করা

এডি এবং ববি যখন ছোট ছিল, তখন ঘরে ঘরে প্রচার কাজের সময় সবসময় তারা আমার সঙ্গে থাকত। সেই দিনগুলোতে, লোকেদের মধ্যে সাধারণত আজকের সময়ের মতো মাদকাসক্তি এবং অনৈতিক প্রভাবের সমস্যাগুলো এত প্রবল ছিল না। আমাদের জীবন সাধাসিধে রাখা এবং প্রচার কাজে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা আমাকে এমন অনেক সমস্যা এড়াতে সাহায্য করেছে, যেগুলো আজকের বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের যিহোবাকে সেবা করার জন্য বড় করে তুলতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে থাকে।

এডি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্যামডেনের একটা স্কুলে গিয়েছিল, তারপর সে আমার সঙ্গে অগ্রগামী হতে চায়। কয়েক বছর ধরে আমরা একসঙ্গে অগ্রগামী কাজকে উপভোগ করেছি। এরপর সে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্ব প্রধান কার্যালয়ে সেবা করতে আকাঙ্ক্ষী হয়, যেখানে সে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সেবা করেছে। ১৯৫৮ সালে সে আমার প্রাক্তন বাইবেল ছাত্রী আ্যলবার্থাকে বিয়ে করে আর অগ্রগামী হিসেবে তারা পরস্পরের সঙ্গী হয়ে ওঠে। ২০০৪ সালে, এটা কতই আনন্দের বিষয়ই না ছিল, যখন আমরা তিন জন একসঙ্গে অগ্রগামী পরিচর্যা বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলাম!

আমার মনে আছে, অনেক বছর আগে একদিন আমি ছোট্ট ববিকে যিহোবার কাছে প্রার্থনায় বলতে শুনেছিলাম যে, যাতে আমি আমার গাড়িতে করে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়নগুলোতে যেতে পারি, সেইজন্য যিহোবা যেন আমাকে যথেষ্ট পেট্রল পেতে সাহায্য করেন। তার সারাজীবনে, ববি পরিচর্যার প্রতি তার ভালবাসা প্রদর্শন করেছে এবং সে বহু বছর ধরে অগ্রগামী কাজ উপভোগ করেছে। দুঃখের বিষয় যে, ববিও পারিবারিক জীবনে দুঃখজনক অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। ১৯৭০ সালে, তাদের বিয়ের মাত্র ২২ মাস পরে, সে তার স্ত্রীকে হারায়, যখন তার স্ত্রী তাদের যমজ বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে বাচ্চারাসহ মারা যায়। ববি আর আমি সবসময় একে অন্যের কাছাকাছি থেকেছি এবং আমরা খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছি।

এখনও অগ্রগামীর কাজ করছি!

১৯৬২ সালে, উত্তর ক্যারোলিনার লামবার্টনে আমাকে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে যেটা আমার মণ্ডলী আর ৪৫ বছর পর এখনও আমি এখানেই রয়েছি। আমার বয়স ৮০-র কোঠায় না হওয়া পর্যন্ত নিজেই গাড়ি চালিয়েছি। একটি যিহোবার সাক্ষি পরিবার যারা কাছেই থাকে, তারা এখন আমাকে মণ্ডলীর সভাগুলোতে এবং প্রচার কাজে নিয়ে যায়।

আমার একটা ওয়াকার এবং একটা হুইলচেয়ার আছে কিন্তু যেহেতু আমি কোনো সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে পারি তাই সেগুলোর কোনোটাই আমার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। আমার চমৎকার স্বাস্থ্যের জন্য আমি যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ, শুধু সম্প্রতি আমার চোখে কিছু সমস্যা হয়েছিল। খুবই অসুস্থ না হলে আমি কখনো মণ্ডলীর সভা বাদ দিইনি আর আমি একজন দুর্বল নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে যাচ্ছি।

আনন্দের সঙ্গে ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অগ্রগামী পরিচর্যায় সেবা করে, আমি আন্তরিকভাবে বলতে পারি যে, যিহোবা আমাকে সারাজীবন সাহায্য করেছেন। * আমি উপলব্ধি করি যে, যদিও আমি কখনোই একজন খুব বুদ্ধিমতি বা খুব দ্রুতগতিসম্পন্ন কর্মী ছিলাম না কিন্তু যিহোবা জানেন যে, আমি কী করতে পারি এবং কী করতে পারি না। আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, তিনি জানেন আমি চেষ্টা করছি আর তাই তিনি আমাকে ব্যবহার করেছেন।

আমি অনুভব করেছি যে, যিহোবাকে যথাসাধ্য পূর্ণরূপে সেবা করা হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ আমরা সমস্তকিছুর জন্য তাঁর কাছে ঋণী। যতদিন পর্যন্ত আমি পারব, আমি একজন অগ্রগামী হিসেবেই সেবা করে যেতে চাই। এটা কী এক চমৎকার সুযোগই না হয়েছে! আমার প্রার্থনা এই যেন আমি চিরকাল ধরে যিহোবার দ্বারা ব্যবহৃত হই।

[পাদটীকা]

^ বোন স্টিগার্স ২০০৭ সালের ২০শে এপ্রিল তার ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার ঠিক তিন মাস আগে তার পার্থিব জীবন শেষ করেন। আমরা তার বহু বছরের বিশ্বস্ত পরিচর্যা দ্বারা উৎসাহিত হই এবং তার স্বর্গীয় পুরস্কার পাওয়ায় আনন্দিত হই।

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্বামী এবং আমি কলপোর্টার কাজের সময় এই গাড়িটা ব্যবহার করেছিলাম

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪১ সালে আমার ছেলেদের সঙ্গে

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

সম্প্রতি এডি ও ববির সঙ্গে