“সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও”
“সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও”
“উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।”—লূক ১২:১৫.
১, ২. (ক) আজকে লোকেদের আগ্রহ ও লক্ষ্যগুলোর ব্যাপারে আপনি কী দেখতে পাচ্ছেন? (খ) কীভাবে আমরা এই ধরনের মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি?
টাকাপয়সা, সহায়সম্পদ, প্রতিপত্তি, উচ্চবেতনের চাকরি, পরিবার—এগুলো হল সেইসমস্ত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোকে বেশির ভাগ লোকই সফলতার মাপকাঠি অথবা নিরাপদ ভবিষ্যতের বিমা বলে মনে করে থাকে। এটা স্পষ্ট যে, ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোতে অনেক লোকের আগ্রহ এবং লক্ষ্যই হচ্ছে বস্তুগত বিষয় লাভ করা ও সাফল্য অর্জন করা। অন্যদিকে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ—যদি থেকেও থাকে—দ্রুত কমে যাচ্ছে।
২ ঠিক এই বিষয়েই বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। এটি বলে: “শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, . . . ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১-৫) প্রতিনিয়ত এইরকম লোকেদের মাঝে বাস করার ফলে প্রকৃত খ্রিস্টানরা এই ধরনের মনমানসিকতা ও জীবনধারা অনুযায়ী চলার জন্য ক্রমাগত চাপ অনুভব করে থাকে। কী আমাদেরকে ‘তার মতো করে আমাদেরকে গড়তে দেওয়ার’ ব্যাপারে জগতের প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য করতে পারে?—রোমীয় ১২:২, জে. বি. ফিলিপসের দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট ইন মডার্ন ইংলিশ।
৩. আমরা এখন যিশুর দেওয়া কোন পরামর্শ বিবেচনা করব?
৩ আমাদের “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা” হিসেবে যিশু খ্রিস্ট এই বিষয়ে বিভিন্ন জোরালো শিক্ষা প্রদান করেছেন। (ইব্রীয় ১২:২) একবার যিশু যখন আধ্যাত্মিকভাবে জ্ঞানালোকিত কিছু বিষয় নিয়ে জনতার উদ্দেশে কথা বলছিলেন, তখন একজন ব্যক্তি এই অনুরোধ করে সেই আলোচনায় বাধা দিয়েছিলেন: “হে গুরু, আমার ভ্রাতাকে বলুন, যেন আমার সহিত পৈতৃক ধন বিভাগ করে।” উত্তরে, যিশু সেই ব্যক্তিকে—ও সেইসঙ্গে যারা শুনছিল, তাদেরকে—কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি লোভের বিরুদ্ধে এক জোরালো সাবধানবাণী দিয়েছিলেন এবং চিন্তা উদ্রেগকারী এক দৃষ্টান্তের মাধ্যমে সেই সাবধানবাণীকে আরও জোরদার করেছিলেন। সেই সময় যিশু যা বলেছিলেন, তাতে আমাদের গভীর মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং নিজেদের জীবনে তা কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করতে পারি, সেটা দেখা উচিত।—লূক ১২:১৩-২১.
এক অনুপযুক্ত অনুরোধ
৪. কেন যিশুর কথার মাঝখানে সেই ব্যক্তির বাধাদান অনুপযুক্ত ছিল?
৪ সেই ব্যক্তির বাধাদানের আগে, যিশু তাঁর শিষ্য ও অন্যদের সঙ্গে কপটতার বিরুদ্ধে সাবধান হওয়ার, মনুষ্যপুত্রকে স্বীকার করার ব্যাপারে সাহস রাখার এবং পবিত্র আত্মার কাছ থেকে সাহায্য লাভ করার বিষয়ে কথা বলছিলেন। (লূক ১২:১-১২) নিশ্চিতভাবেই এগুলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলোর প্রতি শিষ্যদের গুরুত্বের সঙ্গে মনোযোগ দিতে হবে। কিন্তু, এইরকম এক চিন্তা উদ্রেগকারী আলোচনার মাঝখানে হঠাৎ সেই ব্যক্তি বাধা দিয়েছিলেন এবং যিশুকে বিষয়সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব বলে প্রতীয়মান একটা বিষয় নিষ্পত্তি করতে বলেছিলেন। তবে, এই ঘটনা থেকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি।
৫. সেই ব্যক্তির অনুরোধ তার সম্বন্ধে কী প্রকাশ করেছিল?
৫ কথিত আছে যে, “একজন ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রায়ই, কোনো ধর্মীয় উপদেশ শোনার সময় তার চিন্তাভাবনা তাকে যে-দিকে পরিচালিত করে, সেটার মাধ্যমে জানা যায়।” যিশু যখন গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন সেই ব্যক্তি হয়তো নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধাগুলো লাভ করার জন্য তিনি কী করতে পারেন, সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলেন। উত্তরাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয় নিয়ে অভিযোগ করার কোনো উপযুক্ত কারণ তার ছিল কি না, সেই সম্বন্ধে কিছু বলা হয়নি। তিনি হয়তো যিশুর কর্তৃত্ব এবং মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে একজন বিজ্ঞ বিচারক হিসেবে তাঁর সুনামকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। (যিশাইয় ১১:৩, ৪; মথি ২২:১৬) যা-ই হোক, তিনি যা বলেছিলেন তা দেখিয়েছিল যে, তার হৃদয়ে একটা সমস্যা ছিল আর সেটা হল আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধির এক চরম অভাব। এটাই কি আমাদের জন্য নিজেদের পরীক্ষা করার এক উত্তম কারণ নয়? উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টীয় সভা চলাকালীন আমাদের মনকে অন্যত্র বিচরণ করতে দেওয়া অথবা পরে আমরা কী করব, তা নিয়ে চিন্তা করা খুবই সহজ। এর পরিবর্তে, যা বলা হচ্ছে তাতে আমাদের মনোযোগ দেওয়া এবং সেই তথ্য ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগানোর উপায়গুলো সম্বন্ধে চিন্তা করা উচিত, যাতে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা ঈশ্বর এবং আমাদের সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে সম্পর্ককে উন্নত করতে পারি।—গীতসংহিতা ২২:২২; মার্ক ৪:২৪.
৬. কেন যিশু সেই ব্যক্তির অনুরোধ অনুযায়ী কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?
৬ ওই ব্যক্তিকে যে-বিষয়ই অনুরোধ করতে অনুপ্রাণিত করুক না কেন, যিশু সেই অনুযায়ী কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর পরিবর্তে, যিশু তাকে বলেছিলেন: “মনুষ্য, তোমাদের উপরে বিচারকর্ত্তা বা বিভাগকর্ত্তা করিয়া আমাকে কে নিযুক্ত করিয়াছে?” (লূক ১২:১৪) এই কথা বলার মাধ্যমে যিশু এমন কিছুর প্রতি নির্দেশ করছিলেন, যে-সম্বন্ধে লোকেরা খুব ভালভাবে অবগত ছিল কারণ মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী নগরের বিচারকদের ঠিক সেই ধরনের বিষয়ই মীমাংসা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৮-২০; ২১:১৫-১৭; রূতের বিবরণ ৪:১, ২) অন্যদিকে, যিশু আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত ছিলেন আর সেগুলো হল রাজ্যের সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদান ও লোকেদেরকে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে শিক্ষাদান। (যোহন ১৮:৩৭) যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করে আমরা মামুলি বিষয়গুলোর দ্বারা বিক্ষিপ্ত না হয়ে বরং সুসমাচার প্রচার ও ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ জন্য আমাদের সময় ও শক্তিকে ব্যবহার করি।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯.
লোভ থেকে সাবধান থাকুন
৭. যিশু কোন অন্তর্দৃষ্টিমূলক পর্যবেক্ষেণ করেছিলেন?
৭ হৃদয়ের গভীরতম উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে বুঝতে সমর্থ হওয়ায় যিশু জানতে পেরেছিলেন যে, ব্যক্তিগত একটা বিষয়ে যিশুর মধ্যস্থতা করার ব্যাপারে সেই ব্যক্তির অনুরোধের পিছনে আরও গুরুতর কিছু জড়িত ছিল। তাই, যিশু কেবল সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যানই করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে বিষয়টার একেবারে মূলে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।”—লূক ১২:১৫.
৮. লোভ কী আর এটা কোন দিকে পরিচালিত করতে পারে?
৮ লোভ হল কোনোকিছু “পাইবার জন্য বা লাভ করিবার জন্য প্রবল বাসনা; পরদ্রব্য আত্মসাৎ করিবার প্রবৃত্তি।” এর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়—হয়তো অন্যের অধিকারভুক্ত বিষয়গুলো—শুধুমাত্র লাভ করতে চাওয়ার অতৃপ্ত, লোভাতুর আকাঙ্ক্ষা জড়িত থাকতে পারে আর এক্ষেত্রে নিজের চাহিদা বা অন্যদের ওপর তা কেমন প্রভাব ফেলবে, সেটা বিবেচনা করা হয় না। একজন লোভী ব্যক্তি তার কাঙ্ক্ষিত বিষয়বস্তুকে তার চিন্তাভাবনা ও কাজের ওপর এতটাই প্রভাব ফেলতে দেন যে, সেটাই মূলত তার ঈশ্বর হয়ে ওঠে। মনে করে দেখুন যে, প্রেরিত পৌল একজন লোভী ব্যক্তিকে এমন একজন প্রতিমাপূজকের সমরূপ বলে তুলে ধরেছিলেন, যিনি ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাবেন না।—ইফিষীয় ৫:৫; কলসীয় ৩:৫.
৯. কোন কোন উপায়ে লোভ প্রকাশ পেতে পারে? কিছু উদাহরণ দিন।
৯ আগ্রহজনক যে, যিশু ‘সর্ব্বপ্রকার লোভের’ বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন। লোভ বিভিন্ন উপায়ে এসে থাকে। দশ আজ্ঞার শেষ আজ্ঞাটিতে এগুলোর কয়েকটা এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: “তোমার প্রতিবাসীর গৃহে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর স্ত্রীতে, কিম্বা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিম্বা তাহার গোরুতে কি গর্দ্দভে, প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না।” (যাত্রাপুস্তক ২০:১৭) বাইবেলে এমন ব্যক্তিদের অনেক উদাহরণ রয়েছে, যারা কোনো না কোনো লোভের কারণে গুরুতর পাপে পতিত হয়েছিল। এদের মধ্যে শয়তানই ছিল প্রথম, যে এমন কিছু পাওয়ার লোভ করেছিল, যা অন্যের অধিকারভুক্ত ছিল—গৌরব, সম্মান ও কর্তৃত্ব, যা কেবল যিহোবারই। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) হবা নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই গ্রহণ করার অধিকার পাওয়ার লোভ করেছিল আর এই ক্ষেত্রে সে প্রতারিত হওয়ার ফলেই মানবজাতি পাপ ও মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে শুরু করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:৪-৭) মন্দদূতেরা ছিল সেই দূত, যারা “আপনাদের আধিপত্য” নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিল এবং এমন কিছুর জন্য “নিজ বাসস্থান ত্যাগ করিয়াছিল,” যার অধিকার তাদের ছিল না। (যিহূদা ৬; আদিপুস্তক ৬:২) এ ছাড়া, বিলিয়ম, আখন, গেহসি এবং যিহূদার কথাও চিন্তা করুন। তারা তাদের জীবনধারা নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে বরং বস্তুগত বিষয়সম্পত্তির প্রতি তাদের অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষার দ্বারা তাদের দায়িত্বপূর্ণ পদের অপব্যবহার করেছিল, যা তাদেরকে সর্বনাশ ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
১০. যিশুর উপদেশ অনুযায়ী, কীভাবে আমাদের “সাবধান” থাকা উচিত?
১০ এটা কতই না উপযুক্ত যে, লোভের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে যিশু শুরুতেই বলেছিলেন “সাবধান”! কেন? কারণ, লোকেরা খুব কমই স্বীকার করে যে, তারা নিজেরাও লোভের অপরাধে দোষী। অথচ, প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছিলেন, “ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল।” (১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) আর শিষ্য যাকোব ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, মন্দ কামনা বা আকাঙ্ক্ষা “সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।” (যাকোব ১:১৫) তাই, যিশুর উপদেশের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের হৃদয়ে “সাবধান” থাকা উচিত, যাতে ‘সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিতে’ পারি।
প্রাচুর্যপূর্ণ এক জীবন
১১, ১২. (ক) লোভের বিরুদ্ধে যিশু কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন? (খ) কেন আমাদের যিশুর সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিতে হবে?
১১ আরও একটা কারণ রয়েছে, যার জন্য আমাদেরকে লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। লক্ষ করুন যে, এরপর যিশু কী বলেছিলেন: “উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) নিশ্চিতভাবেই, এই কথাগুলো আমাদের বস্তুবাদিতাপূর্ণ এই যুগে বিশেষ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য, যখন লোকেরা সমৃদ্ধিকে সুখ ও সাফল্যের সমরূপ বলে মনে করে। এই কথাগুলোর দ্বারা যিশু নির্দেশ করছিলেন যে, প্রকৃতই অর্থপূর্ণ ও পরিতৃপ্তিদায়ক এক জীবন বস্তুগত বিষয়সম্পত্তিতে হয় না বা এর ওপর নির্ভর করে না, তা সেটা যত প্রচুর পরিমাণেই থাকুক না কেন।
১২ কিন্তু, কেউ কেউ হয়তো একমত না-ও হতে পারে। তারা হয়তো এই যুক্তি দেখাতে পারে যে, বস্তুগত বিষয়সম্পত্তি জীবনকে আরও আরামদায়ক এবং উপভোগ্য করে তোলে আর এভাবে তা আরও মূল্যবান হয়ে ওঠে। তাই, তারা এমন লক্ষ্যগুলোর পিছনে নিজেদের বিলিয়ে দেয়, যা তাদেরকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সমস্ত ধরনের বস্তুগত সম্পদ ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী অর্জন করতে সক্ষম করবে। তারা মনে করে যে, এর ফলে তারা এক উত্তম জীবন লাভ করতে পারবে। কিন্তু, এভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে তারা যিশুর উল্লেখিত বিষয়টা বুঝতে ব্যর্থ হয়।
১৩. জীবন ও বিষয়সম্পত্তি সম্বন্ধে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি কী?
১৩ প্রাচুর্য থাকা সঠিক না ভুল, সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে যিশু এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিলেন যে, একজন মানুষের জীবন “মনুষ্যের সম্পত্তিতে” অর্থাৎ ইতিমধ্যেই তার যা রয়েছে, সেটার দ্বারা হয় না। এই ক্ষেত্রে আমরা সবাই জানি যে, বেঁচে থাকার জন্য অথবা আমাদের জীবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য আসলে প্রচুর বিষয়বস্তুর প্রয়োজন নেই। এর জন্য কেবল সামান্য খাবার, পরিধেয় বস্ত্র এবং শোবার একটা স্থানই যথেষ্ট। ধনী ব্যক্তিদের এই বিষয়বস্তু প্রচুর পরিমাণে রয়েছে আর দরিদ্র লোকেদের হয়তো তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু জোগাড় করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু, পার্থক্য যা-ই হোক না কেন, যখন জীবন শেষ হয়ে যায়, তখন ফলাফল একই হয়—সমস্তকিছু শেষ হয়ে যায়। (উপদেশক ৯:৫, ৬) তাই, জীবনকে অর্থপূর্ণ ও মূল্যবান হতে হলে তা একজন ব্যক্তি যে-বিষয়বস্তু অর্জন করতে পারেন বা তিনি যেগুলোর অধিকারী, শুধুমাত্র সেগুলোই যথেষ্ট হতে পারে না বা হওয়া উচিত নয়। এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়, যখন আমরা যিশু যে-জীবন সম্বন্ধে বলছিলেন, সেটা পরীক্ষা করে দেখি।
১৪. বাইবেলের বিবরণে প্রাপ্ত “জীবন” শব্দটি থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৪ যিশু যখন বলেছিলেন যে, “মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না,” তখন তিনি বলছিলেন যে, আমরা ধনী বা গরিব যা-ই হই না কেন, বিলাসী বা কষ্টসাধ্য জীবনযাপন যা-ই করি না কেন, আমরা কত দিন বেঁচে থাকব অথবা এমনকি আগামীকাল বেঁচে থাকব কি না, সেটার ওপর আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হইয়া আপন বয়স এক হস্তমাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে?” (মথি ৬:২৭) বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায় যে, একমাত্র যিহোবাই হলেন “জীবনের উনুই” বা উৎস আর কেবল তিনিই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের হয় স্বর্গে নতুবা পৃথিবীতে “প্রকৃতরূপে জীবন” অথবা “অনন্ত জীবন” অর্থাৎ অন্তহীন জীবন দিতে পারেন।—গীতসংহিতা ৩৬:৯; ১ তীমথিয় ৬:১২, ১৯.
১৫. কেন অনেকে বস্তুগত বিষয়সম্পত্তির ওপর নির্ভর করে?
১৫ যিশুর কথাগুলো দেখায় যে, লোকেদের পক্ষে জীবন সম্বন্ধে বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা কত সহজ। ধনী বা গরিব, যা-ই হোক না কেন, সমস্ত মানুষ অসিদ্ধ এবং সকলের পরিণতি একই। প্রাচীনকালের মোশি বলেছিলেন: “আমাদের আয়ুর পরিমাণ সত্তর বৎসর; বলযুক্ত হইলে আশী বৎসর হইতে পারে; তথাপি তাহাদের দর্প ক্লেশ ও দুঃখমাত্র, কেননা তাহা বেগে পলায়ন করে, এবং আমরা উড়িয়া যাই।” (গীতসংহিতা ৯০:১০; ইয়োব ১৪:১, ২; ১ পিতর ১:২৪) এই কারণে, যে-লোকেরা ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলেনি, তারা প্রায়ই এই মনোভাব পোষণ করে, “আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব,” যে-সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৩২) আবার অন্যেরা, জীবন যে ক্ষণস্থায়ী এবং অনিশ্চিত, তা বুঝতে পেরে বস্তুগত বিষয়সম্পত্তির মধ্যে নিরাপত্তা ও স্থায়ীত্ব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে। তারা হয়তো এইরকম মনে করে যে, দৃশ্যমান বস্তুগত অনেক সম্পদ থাকা, যেকোনোভাবেই হোক জীবনকে আরও নিরাপদ করে তুলবে। তাই, তারা ধনসম্পদ ও বিষয়সম্পত্তি সঞ্চয় করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে থাকে, ভুলভাবে এগুলোকে নিরাপত্তা ও সুখের সমরূপ বলে মনে করে।—গীতসংহিতা ৪৯:৬, ১১, ১২.
এক নিরাপদ ভবিষ্যৎ
১৬. জীবনের প্রকৃত মূল্য কীসের ওপর নির্ভর করে না?
১৬ এটা হয়তো ঠিক যে, উচ্চমানের জীবনযাত্রা—প্রচুর পরিমাণে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও অন্যান্য বিলাস সামগ্রী—আরও আরামদায়ক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে অথবা এমনকি আরও ভাল স্বাস্থ্যসেবা লাভ করার সুযোগ করে দিতে পারে আর এর ফলে একজন ব্যক্তির জীবনকাল হয়তো কয়েক বছর বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, এই ধরনের এক জীবন কি আসলেই আরও অর্থপূর্ণ ও নিরাপদ? জীবনের প্রকৃত মূল্য, একজন ব্যক্তি কত বছর বেঁচে থাকতে পারেন অথবা একজন ব্যক্তির কী পরিমাণ বস্তুগত বিষয় রয়েছে বা তিনি কী পরিমাণ বস্তুগত বিষয় উপভোগ করতে পারেন, সেটা দিয়ে পরিমাপ যায় না। প্রেরিত পৌল এই ধরনের বিষয়ের ওপর অতিরিক্ত আস্থা রাখার বিপদ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। তীমথিয়কে তিনি লিখেছিলেন: “যাহারা এই যুগে ধনবান্, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্ব্বিতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে।”—১ তীমথিয় ৬:১৭.
১৭, ১৮. (ক) বস্তুগত বিষয়সম্পত্তি সম্বন্ধে কোন উল্লেখযোগ্য উদাহরণগুলো আমাদের অনুকরণযোগ্য? (খ) পরের প্রবন্ধে যিশুর বলা কোন নীতিগল্প বিবেচনা করা হবে?
১৭ ধনসম্পদের ওপর কারো প্রত্যাশা রাখা বোকামি কারণ সেগুলো ‘অস্থির।’ কুলপতি ইয়োব অনেক ধনী ছিলেন কিন্তু যখন আকস্মিক বিপর্যয় এসেছিল, তখন তার ধনসম্পদ তাকে সাহায্য করতে পারেনি; রাতারাতি সেগুলো শেষ হয়ে গিয়েছিল। ঈশ্বরের সঙ্গে তার দৃঢ় সম্পর্কই তাকে তার সমস্ত পরীক্ষা ও ক্লেশের মধ্যে টিকিয়ে রেখেছিল। (ইয়োব ১:১, ৩, ২০-২২) অব্রাহাম তার প্রচুর বস্তুগত বিষয়সম্পত্তিকে যিহোবার কাছ থেকে এক কঠিন কার্যভার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাধা হতে দেননি আর এর ফলে তিনি “বহুজাতির আদিপিতা” হওয়ার আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:১, ৪; ১৭:৪-৬) এগুলো এবং অন্যান্য উদাহরণ আমাদের অনুকরণযোগ্য। যুবক বা বৃদ্ধ যে-ই হই না কেন, নিজেদেরকে আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, আমাদের জীবনে প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী এবং আমরা কীসের ওপর প্রত্যাশা রাখি।—ইফিষীয় ৫:১০; ফিলিপীয় ১:১০, NW.
১৮ লোভ ও জীবন সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর যিশু যে-অল্প কয়েকটা কথা বলেছিলেন, সেগুলো সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ এবং শিক্ষণীয়। কিন্তু, যিশুর মনে আরও কিছু ছিল এবং তিনি এক অযৌক্তিক ধনী ব্যক্তি সম্বন্ধে এক চিন্তা উদ্রেগকারী নীতিগল্প অথবা দৃষ্টান্ত বলে চলেছিলেন। সেই দৃষ্টান্ত আজকে কীভাবে আমাদের জীবনের জন্য প্রযোজ্য আর তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? পরের প্রবন্ধে এর উত্তর পাওয়া যাবে।
আপনি কী উত্তর দেবেন?
• যিশু যে জনতার মধ্যে থেকে একজন ব্যক্তির অনুরোধ অনুযায়ী কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
• কেন আমাদের লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
• কেন বস্তুগত বিষয়সম্পত্তিতে জীবন হয় না?
• কী জীবনকে প্রকৃতই মূল্যবান ও নিরাপদ করে তুলতে পারে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
কেন যিশু একজন ব্যক্তির অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
লোভ মারাত্মক পরিণতির দিকে পরিচালিত করতে পারে
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
কীভাবে অব্রাহাম বস্তুগত বিষয়সম্পত্তি সম্বন্ধে এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলেন?