সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পোল্যান্ডের জন্য “উৎকৃষ্ট উপহার”

পোল্যান্ডের জন্য “উৎকৃষ্ট উপহার”

পোল্যান্ডের জন্য “উৎকৃষ্ট উপহার”

 ডি উক আলব্রিখ্‌ট হোয়েনজোলার্ন ১৫২৫ সালের ৬ই জুলাই লুথারবাদকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে ঘোষণা করেছিলেন। তাই, ডিউকের অধীনস্থ প্রাশিয়া, পোল্যান্ডের অধিকারে থাকার সময় প্রথম রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিল, যেটা সরকারিভাবে মার্টিন লুথারের শিক্ষাগুলো গ্রহণ করেছিল।

আলব্রিখ্‌ট কোনিগ্সবার্গকে—পূর্ব প্রাশিয়ার রাজধানীকে—প্রটেস্টান্ট সংস্কৃতির একটা কেন্দ্রস্থল বানাতে চেয়েছিলেন। তিনি শহরে একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং বেশ কয়েকটা ভাষায় লুথারিয়ান লেখাগুলো ছাপানোর ব্যয় ভার বহন করেছিলেন। ১৫৪৪ সালে ডিউক এই আইনও জারি করেছিলেন যে, তার অধিকারভুক্ত পোলিশ লোকেদের তাদের নিজের ভাষায় পবিত্র শাস্ত্র থেকে পাঠ শোনা উচিত। কিন্তু, পোলিশ ভাষায় তখনও পর্যন্ত বাইবেলের কোনো অনুবাদ ছিল না।

“চলতি ভাষার” এক অনুবাদ

সেই পরিস্থিতিকে বদলানোর জন্য আলব্রিখ্‌ট এমন একজনকে খুঁজতে থাকেন, যিনি পোলিশ ভাষায় খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের অনুবাদ প্রকাশ করার মতো যোগ্য। ১৫৫০ সালের দিকে, তিনি ইয়ান সেক্লুটজ্‌ইয়ান নামে একজন লেখক, বই বিক্রেতা এবং মুদ্রাকরকে ভাড়া করেন। সেক্লুটজ্‌ইয়ান লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক উপাধি লাভ করেছিলেন এবং প্রটেস্টান্ট শিক্ষাগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার দ্বারা ক্যাথলিক গির্জাকে উত্যক্ত করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিচারের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে আগেই কোনিগ্সবার্গে চলে গিয়েছিলেন।

ইয়ান সেক্লুটজ্‌ইয়ান পোলিশ ভাষায় শাস্ত্রের অনুবাদ প্রকাশ করতে আগ্রহী ছিলেন। সেক্লুটজ্‌ইয়ানকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার মাত্র এক বছর পর, মথির সুসমাচারের প্রথম কপিগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। এই সংস্করণটির অন্তর্ভুক্ত ছিল এক বিস্তারিত টীকা ও সাহায্যকারী মার্জিনাল নোট, যেখানে কিছু বাক্যাংশের সম্ভাব্য বিকল্প অনুবাদ ছিল। এর পরই, সেক্লুটজ্‌ইয়ান এমন একটি সংস্করণ ছাপানোর কাজ তত্ত্বাবধান করছিলেন, যেটিতে চারটি সুসমাচারের বিবরণই ছিল। মাত্র তিন বছরের মধ্যে, তিনি পুরো খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র ছাপিয়েছিলেন।

এক নির্ভুল অনুবাদ প্রকাশের জন্য, অনুবাদকরা গ্রিক পাঠ্যাংশগুলোর সাহায্য নিয়েছিল। অধিকন্তু, ১৫৫১ সালের সংস্করণের ভূমিকায় বলা হয়েছিল যে, ল্যাটিন অনুবাদগুলো এবং “অন্যান্য ভাষার অনুবাদগুলো থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছিল।” ১৬শ শতাব্দীর পোলিশ ভাষা নিয়ে অধ্যয়ন (ইংরেজি) বইয়ের গ্রন্থকার স্ত্যানিস্ল্যাফ রোসপন্ড এই অনুবাদটিকে “চমৎকার এবং সাবলীল গদ্য” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে বলে বর্ণনা করেন। রোসপন্ড মন্তব্য করেন যে, অনুবাদক “পুঁথিগত ভাষা” ব্যবহার করতে বাধ্য ছিলেন না। পরিবর্তে, তিনি পোলিশ শব্দগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন, যেগুলোর “চলতি ভাষার সঙ্গে খুবই মিল ছিল।”

যদিও সেক্লুটজ্‌ইয়ান এই প্রকল্পের মধ্যে সম্বন্বয়সাধন করেছিলেন তবুও প্রমাণগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি নিজে অনুবাদক ছিলেন না। তা হলে, কে সেই পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনুবাদক ছিলেন? তিনি ছিলেন স্ত্যানিস্ল্যাফ মুরঝিনভস্কি, সম্ভবত তার বয়স ২০-র কোঠার প্রথম দিকে ছিল, যখন সেক্লুটজ্‌ইয়ান তাকে এই কঠিন কার্যভারের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।

মুরঝিনভস্কি একটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু বড় হওয়ার পর তার বাবা তাকে গ্রিক ও ইব্রীয় ভাষা নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করার জন্য কোনিগ্সবার্গে পাঠিয়েছিলেন। তারপর মুরঝিনভস্কি জার্মানির উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, যেখানে তিনি সম্ভবত মার্টিন লুথারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। এই যুবক ছাত্র ফিলিপ মিলাংকথনের বক্তৃতাগুলো শুনেছিলেন, যিনি নিঃসন্দেহে তাকে গ্রিক ও ইব্রীয় শাস্ত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। ইতালিতে অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়ার পর মুরঝিনভস্কি কোনিগ্সবার্গে ফিরে এসেছিলেন এবং ডিউক আলব্রিখ্‌টের জন্য কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

“মুরঝিনভস্কি অধ্যবসায় ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন” মারিয়া কোসভস্কা পোলিশ ভাষায় বাইবেল (ইংরেজি) নামক তার বইতে লেখেন, “কিন্তু তিনি নিজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাননি, বিশিষ্ট পদমর্যাদা পাওয়ার পিছনে ছোটেননি বা সেই অনুবাদের নামপত্রে তার নাম উল্লেখ করার জন্যও অনুরোধ করেননি।” প্রকৃতপক্ষে, এই যুবকটি তার নিজের দক্ষতা সম্বন্ধে লেখেন: “আমি ল্যাটিন বা পোলিশ কোনো ভাষাতেই দক্ষ নই।” সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও, মুরঝিনভস্কি পোলিশ লোকেদের কাছে ঈশ্বরের বাক্যকে প্রাপ্তিসাধ্য করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার সহযোগী, সেক্লুটজ্‌ইয়ান তাদের প্রকাশিত অনুবাদকে পোল্যান্ডের জন্য “উৎকৃষ্ট উপহার” বলে বর্ণনা করেছিলেন।

সর্বোৎকৃষ্ট উপহারগুলোর মধ্যে একটা

পোলিশ ভাষায় প্রথম বাইবেল অনুবাদ হওয়ার পর থেকে, আরও অনেকে তা অনুবাদ করার চেষ্টা করেছে। ১৯৯৪ সালে পোলিশ ভাষায় খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) প্রকাশিত হয় আর ১৯৯৭ সালে সম্পূর্ণ পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) প্রকাশিত হয়। অনুবাদকরা, যারা নিজেদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে না, তারা ঈশ্বরের বাক্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা করেছে, যেটি কেবলমাত্র নির্ভুলই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আজকের দিনের চলতি ভাষায়, সেই ষোড়শ শতাব্দীর ভাষায় নয়।

বর্তমানে বাইবেল সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রায় ২,৪০০টি ভাষায় পাওয়া যায়। আপনার যদি নিজস্ব ভাষায় ঈশ্বরের বাক্যের নির্ভুল অনুবাদ পাওয়ার সুযোগ থাকে, তা হলে আপনি সর্বোৎকৃষ্ট উপহারগুলোর মধ্যে একটি পেতে পারেন, যেটি হচ্ছে আপনার নির্দেশনার জন্য যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহার।—২ তীমথিয় ৩:১৫-১৭.

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্ত্যানিস্ল্যাফ মুরঝিনভস্কির স্মারণিক স্তম্ভ, যিনি পোলিশ ভাষায় “নূতন নিয়ম” এর একজন অনুবাদক

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্ত্যানিস্ল্যাফ মুরঝিনভস্কির অনুবাদ করা মথি পুস্তকের ৩ অধ্যায়

[সৌজন্যে]

Dzięki uprzejmości Towarzystwa Naukowego Płockiego