সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 নিস্তারপর্বের সময় যিহুদিদেরকে যেহেতু “তাড়ীযুক্ত কোন দ্রব্য” ব্যবহার “না” করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা হলে কেন যিশু তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ সভা প্রবর্তনের সময় দ্রাক্ষারস—তাড়িযুক্ত এক দ্রব্য—ব্যবহার করেছিলেন?—যাত্রাপুস্তক ১২:২০; লূক ২২:৭, ৮, ১৪-২০.

নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে প্রবর্তন করা হয়েছিল, যা মিশর থেকে ইস্রায়েল সন্তানদের যাত্রা করার বিষয়টাকে চিহ্নিত করে। এই উদ্‌যাপনের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার সময় যিহোবা বলেছিলেন: “তোমরা তাড়ীযুক্ত কোন দ্রব্য খাইও না; তোমরা আপনাদের সমস্ত বাসস্থানে তাড়ীশূন্য রুটী খাইও।” (যাত্রাপুস্তক ১২:১১, ২০) এই ঐশিক নিষেধাজ্ঞা কেবলমাত্র সেই রুটির প্রতি প্রযোজ্য ছিল, যা নিস্তারপর্বের সময়ে খাওয়া হতো। দ্রাক্ষারসের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

তাড়িযুক্ত করার বিষয়ে এই বিধিনিষেধের মূল কারণ ছিল, ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হতে হয়েছিল। “ময়দার তালে তাড়ী মিশাইবার পূর্ব্বে লোকেরা,” যাত্রাপুস্তক ১২:৩৪ পদ বলে, “তাহা লইয়া কাঠুয়া সকল আপন আপন বস্ত্রে বাঁধিয়া স্কন্ধে করিল।” পরবর্তী সময়ের নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপনগুলোতে তাড়ি না মেশানোর বিষয়টা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিত।

পরে এক সময়ে, তাড়িযুক্ত করাকে প্রায়ই পাপ বা কলুষতার এক প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। উদাহরণ হিসেবে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একজন অনৈতিক ব্যক্তির বিষয় উল্লেখ করে প্রেরিত পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, অল্প তাড়ী সূজীর সমস্ত তাল তাড়ীময় করিয়া ফেলে।” এরপর তিনি বলেছিলেন: “পুরাতন তাড়ী বাহির করিয়া দেও; যেন তোমরা নূতন তাল হইতে পার—তোমরা ত তাড়ীশূন্য। কারণ আমাদের নিস্তারপর্ব্বীয় মেষশাবক বলীকৃত হইয়াছেন, তিনি খ্রীষ্ট। অতএব আইস, আমরা পুরাতন তাড়ী দিয়া নয়, হিংসা ও দুষ্টতার তাড়ী দিয়া নয়, কিন্তু সরলতা ও সত্যশীলতার তাড়ীশূন্য রুটী দিয়া পর্ব্বটী পালন করি।” (১ করিন্থীয় ৫:৬-৮) কেবলমাত্র তাড়িশূন্য রুটিই যিশুর নিষ্পাপ মানবদেহের এক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যেত।—ইব্রীয় ৭:২৬.

নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপনের সময়ে দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা যিহুদিরা পরবর্তী সময়ে যুক্ত করেছিল। সম্ভবত, এটা তাদের বাবিলের নির্বাসন থেকে ফিরে আসার পর যুক্ত করা হয়েছিল। বাইবেলের বিবরণে এই নতুন রীতি সম্বন্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ নেই আর তাই যিশু নিস্তারপর্বের ভোজের সময় উপযুক্তভাবেই দ্রাক্ষারস ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। অবশ্য, প্রাচীনকালের দ্রাক্ষারস প্রাকৃতিক উপায়ে যেভাবে তাড়িযুক্ত হতো, সেটা রুটির তাড়িযুক্ত করার প্রক্রিয়া থেকে ভিন্ন ছিল। ময়দার তালের ক্ষেত্রে, এটাকে তাড়িযুক্ত করার জন্য ইস্ট বা তাড়ি মেশাতে হতো। আঙুর থেকে তৈরি দ্রাক্ষারসে এমন কোনো কিছু যুক্ত করার প্রয়োজন ছিল না। তাড়ির উপাদানগুলো আঙুরের মধ্যে ইতিমধ্যেই থাকত। নিস্তারপর্বের সময় বিশুদ্ধ আঙুরের রস পাওয়া যেত না, কারণ এটা শরৎকালে ফল সংগ্রহের সময় থেকে বসন্তকালের নিস্তারপর্বের সময় পর্যন্ত তাড়িবিহীন অবস্থায় থাকত না।

তাই, স্মরণার্থের প্রতীক হিসেবে যিশুর দ্রাক্ষারস ব্যবহার করার সঙ্গে তাড়ির বিষয়ে নিস্তারপর্ব সম্বন্ধীয় নির্দেশনার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যেকোনো লাল দ্রাক্ষারস, যা মিষ্ট নয়, যেটাতে আলাদা কোনো আ্যলকোহলের মিশ্রণ নেই অথবা অন্য কোনো উপাদান যুক্ত করা হয়নি, সেটাই খ্রিস্টের ‘বহুমূল্য রক্তের’ এক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা উপযুক্ত।—১ পিতর ১:১৯.