সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেকারণে এখনও দুষ্টতা রয়েছে

যেকারণে এখনও দুষ্টতা রয়েছে

যেকারণে এখনও দুষ্টতা রয়েছে

 “সদাপ্রভু আপনার সমস্ত পথে ধর্ম্মশীল,” বাইবেল বলে। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৭; প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩) তাঁর সম্বন্ধে ভাববাদী মোশি ঘোষণা করেছিলেন: “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) “প্রভু [“যিহোবা,” NW] স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়,” যাকোব ৫:১১ পদ বলে। ঈশ্বর দুষ্টতা ঘটাতে পারেন না এবং তিনি তা ঘটানও না।

শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “পরীক্ষার সময়ে কেহ না বলুক, ঈশ্বর হইতে আমার পরীক্ষা হইতেছে; কেননা মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না।” (যাকোব ১:১৩) যিহোবা ঈশ্বর কখনো লোকেদের দুষ্টতা দ্বারা প্রলুব্ধ করেন না কিংবা তাদেরকে মন্দ কাজকর্ম করার জন্য প্ররোচিত করেন না। তা হলে, দুষ্টতা এবং এটা যে-দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে, তার জন্য কে দায়ী?

দুষ্টতার জন্য কে দায়ী?

বাইবেল লেখক যাকোব বলেন যে, দুষ্টতার জন্য আংশিকভাবে মানুষ দায়ী। তিনি বলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে, এবং পাপ পরিপক্ব হইয়া মৃত্যুকে জন্ম দেয়।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) লোকেরা হয়তো তাদের অশোভন কামনা অনুসারে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া, মানুষের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের প্রভাবকেও বিবেচনা করুন। পাপের প্রভাব অন্যায় কামনাগুলোকে তীব্রতর করতে পারে ও খুবই মন্দ পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। (রোমীয় ৭:২১-২৩) বস্তুতপক্ষে, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ “রাজত্ব” করছে, মানুষকে দিয়ে সেইসব মন্দ কাজ করাচ্ছে, যা চরম দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে। (রোমীয় ৫:২১) অধিকন্তু, দুষ্ট লোকেরা অন্যদেরকে কলুষিত হতে প্রভাবিত করতে পারে।—হিতোপদেশ ১:১০-১৬.

তবে, দুষ্টতা থাকার পিছনে প্রধান কারণ হল শয়তান দিয়াবল। সে জগতে দুষ্টতা নিয়ে এসেছে। যিশু খ্রিস্ট শয়তানকে “মন্দ” বা দুষ্ট ব্যক্তি এবং “জগতের” অর্থাৎ অধার্মিক সমাজের “অধিপতি” বলেছিলেন। সাধারণভাবে মানবজাতি যিহোবা ঈশ্বরের উত্তম পথে না চলার বিষয়ে শয়তানের প্ররোচনায় মনোযোগ দিয়ে তার বাধ্য হয়ে থাকে। (মথি ৬:১৩; যোহন ১৪:৩০; ১ যোহন ২:১৫-১৭) “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে,” ১ যোহন ৫:১৯ পদ বলে। বস্তুতপক্ষে, শয়তান এবং তার দূতেরা “সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়” আর তারা কেবলমাত্র ‘সন্তাপই’ নিয়ে আসে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২) তাই, দুষ্টতার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরাসরি শয়তান দিয়াবলকেই দায়ী করা যায়।

দুর্দশা ও দুঃখকষ্টের আরেকটা কারণ প্রকাশ করে উপদেশক ৯:১১ পদ বলে: “[আমাদের] সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।” যিশু খ্রিস্ট নির্দিষ্টভাবে একটা দুর্ঘটনা সম্পর্কে বলেছিলেন, যেটাতে একটা উচ্চগৃহ ১৮ জন ব্যক্তির ওপর পড়ে যাওয়ায় সকলে মারা গিয়েছিল। (লূক ১৩:৪) তারা দুর্দশা ভোগ করেছিল কারণ তারা ভুল সময়ে ভুল জায়গায় উপস্থিত ছিল। আজও একইরকম বিষয় ঘটে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটা বিল্ডিংয়ের ওপর তলায় কাজ করার সময় একজন রাজমিস্ত্রির হাত থেকে হয়তো একটা ইট খসে পড়ে একজন পথিককে আহত করতে পারে। এর জন্য কি ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া যায়? না। এটা ছিল অনিচ্ছাকৃত এবং দৈব বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। একই বিষয় বলা যেতে পারে, যখন পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে বা পরিবারের কর্তার আকস্মিক মৃত্যুতে বাচ্চারা অনাথ হয় এবং স্ত্রী বিধবা হয়ে পড়েন।

তাই এটা স্পষ্ট যে, দুষ্টতার জন্য ঈশ্বর দায়ী নন; কিংবা তিনি দুঃখকষ্ট ঘটানও না। এর বিপরীতে, যিহোবার উদ্দেশ্য হল দুষ্টতাকে এবং যারা এটা ঘটায় তাদেরকে নির্মূল করা। (হিতোপদেশ ২:২২) বস্তুতপক্ষে, তিনি তার চেয়েও বেশি কিছু করবেন। শাস্ত্র ঘোষণা করে যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল খ্রিস্টের মাধ্যমে ‘দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করা।’ (১ যোহন ৩:৮) বর্তমান বিধিব্যবস্থা—যেটার ভিত্তি হল লোভ, ঘৃণা এবং দুষ্ট কার্যকলাপ—এরপর ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। ঈশ্বর এমনকি “সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন” আর এইভাবে দুঃখকষ্টের শেষ নিয়ে আসবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) কিন্তু, আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘ঈশ্বর কেন ইতিমধ্যেই এটা করেননি? কেন তিনি আমাদের দিন পর্যন্ত দুষ্টতা ও দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?’ বাইবেলে আদম ও হবার বিবরণে এর মূল উত্তরটা পাওয়া যায়।

এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় উত্থাপিত হয়

ঈশ্বর কেন আমাদের দিন পর্যন্ত দুষ্টতা থাকতে দিয়েছেন, সেটার কারণ মানব ইতিহাসের প্রায় শুরুতে যা ঘটেছিল, তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সেই সময়ে ঘটা একটা ঘটনা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল—একটা প্রশ্ন যেটাকে দ্রুত বা সহজে মীমাংসা করা যেত না। আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, আসলে কী ঘটেছিল।

যিহোবা ঈশ্বর প্রথম মানব-মানবীকে সিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাদেরকে পরমদেশে রেখেছিলেন। তাদেরকে একটা উপহার দেওয়া হয়েছিল, যেটা তাদেরকে অন্য সমস্ত প্রাণী থেকে আলাদা করেছিল আর সেই উপহারটি ছিল স্বাধীন ইচ্ছা। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:১৫, ১৯) নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে, আদম ও হবা তাদের বুদ্ধিকে তাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভালবাসার, সেবা করার এবং তাঁর বাধ্য হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারত। অথবা তারা ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হয়ে বেঁচে থাকার এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর অবাধ্য হওয়ার এক পথ বেছে নিতে পারত।

আদম ও হবাকে ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালবাসা দেখানোর একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য, সত্য ঈশ্বর তাদের ওপর একটা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। আদমকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) তাদের নিজেদের ও তাদের ভবিষ্যৎ পরিবারের উপকারের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহের অধীনে থাকতে হলে, আদম ও হবাকে সেই নির্দিষ্ট একটা গাছের ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হতো। তারা কি বিরত ছিল?

বাইবেল আমাদেরকে জানায় যে, কী ঘটেছিল। শয়তান দিয়াবল তার মুখপাত্র হিসেবে একটা সাপকে ব্যবহার করে হবার কাছে গিয়ে বলেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” হবা যখন তার কাছে ঈশ্বরের আজ্ঞাটি পুনরাবৃত্তি করেছিল, তখন শয়তান তাকে বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” ফলে, সেই গাছটি হবার কাছে এতটাই লোভনীয় বলে মনে হয়েছিল যে, “তিনি তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন।” বিবরণ বলে চলে: “পরে আপনার মত নিজ স্বামীকে দিলেন, আর তিনিও ভোজন করিলেন।” (আদিপুস্তক ৩:১-৬) এভাবে, আদম ও হবা দুজনেই ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার দ্বারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার এবং পাপ করেছিল।

যা ঘটেছিল, তার গুরুত্ব কি আপনি বুঝতে পারছেন? আদমকে ঈশ্বর যা বলেছিলেন, দিয়াবল তার বিপরীত কথা বলেছিল। শয়তানের সেই কথাগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তাদের জন্য কোনটা ভাল বা কোনটা মন্দ, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আদম ও হবার যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। তাই, শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানুষের ওপর যিহোবার শাসন করার অধিকার ও ন্যায্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিল। অতএব, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-বিচার্য বিষয়টা শয়তান উত্থাপিত করেছিল, সেটা হচ্ছে যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা সংক্রান্ত। সত্য ঈশ্বর কীভাবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দিয়েছিলেন?

পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন

তিনজন বিদ্রোহীকে—শয়তান, আদম ও হবাকে—ধ্বংস করার শক্তি যিহোবার ছিল। প্রশ্নাতীতভাবেই ঈশ্বর তাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু, ঈশ্বরের শক্তি সম্বন্ধে শয়তান কোনো প্রশ্ন তোলেনি। পরিবর্তে, সে যিহোবার শাসন করার অধিকার সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল। সেই বিচার্য বিষয়টা স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী সমস্ত প্রাণীকে প্রভাবিত করেছিল। তাদের বোঝা উচিত ছিল যে, স্বাধীন ইচ্ছার উপহারটিকে অবশ্যই সঠিকভাবে—ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া শারীরিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক নির্দেশাবলির সীমার মধ্যে থেকে—ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে, পরিণতি বেদনাদায়ক হবে, ঠিক যেমন একজন ব্যক্তি মাধ্যাকর্ষণের নিয়মকে উপেক্ষা করে একটা উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলে আহত হন। (গালাতীয় ৬:৭, ৮) ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার এক পথ বেছে নেওয়ার মন্দ পরিণতি দেখে বুদ্ধিবিশিষ্ট সমস্ত প্রাণী উপকৃত হতে পারে। আর এটা দেখার জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল।

কিছু কিছু বিষয় মীমাংসা করার জন্য যে সময়ের দরকার, সেই বিষয়টা এইভাবে স্পষ্ট করা যেতে পারে: একটা পরিবারের বাবা, আরেকটা পরিবারের বাবাকে এমন একটা প্রতিযোগিতায় আহ্বান জানান, যেখানে কে বেশি শক্তিশালী, তা প্রমাণিত হবে। সেই বিচার্য বিষয়টাকে দ্রুত মীমাংসা করা যেতে পারে। দুজনের মধ্যে কার শক্তি বেশি, তা পাথর তোলার দ্বারাই প্রমাণিত হতে পারে। যে-বাবা সবচেয়ে ভারী পাথরটা তুলতে পারবেন, তিনিই বেশি শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হবেন। কিন্তু, ধরুন সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত যে, কোন বাবা তার ছেলেমেয়েকে সত্যিই ভালবাসে আর ফলস্বরূপ তারাও তাকে ভালবাসে কি না। বা যদি সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই প্রশ্নটা উত্থাপন করে যে, কোন বাবা সর্বোত্তম উপায়ে তার পরিবারের দেখাশোনা করে থাকেন, তা হলে? এইক্ষেত্রে শক্তি প্রদর্শন বা শুধুমাত্র মুখে বলাই যথেষ্ট হবে না। সেই বিচার্য বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য যথেষ্ট সময় অতিবাহিত হতে হবে, সতর্ক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হবে এবং সঠিক উপসংহারে আসতে হবে।

অতিবাহিত সময় যা দেখিয়েছে

ঈশ্বরের শাসন করার অধিকার সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলার পর থেকে প্রায় ৬,০০০ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। ইতিহাস কী প্রকাশ করেছে? ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শয়তানের অভিযোগের দুটো দিক বিবেচনা করুন। শয়তান সাহসের সঙ্গে হবাকে বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না।” (আদিপুস্তক ৩:৪) আদম ও হবা সেই নিষিদ্ধ ফল খেলেও মারা যাবে না, এটা বলার দ্বারা শয়তান আসলে যিহোবাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। বাস্তবিকই এক গুরুতর অভিযোগ! ঈশ্বর যদি এই ব্যাপারে সত্যবাদী না হন, তা হলে যেকোনো বিষয়ে তাঁর ওপর কীভাবে নির্ভর করা যাবে? কিন্তু, অতিবাহিত সময় কী দেখিয়েছে?

আদম ও হবা অসুস্থতা, ব্যথা, বার্ধক্য এবং শেষপর্যন্ত মৃত্যু ভোগ করেছিল। “সর্ব্বশুদ্ধ আদমের নয় শত ত্রিশ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল,” বাইবেল বলে। (আদিপুস্তক ৩:১৯; ৫:৫) আর আদম থেকে এই দুঃখজনক উত্তরাধিকার সমগ্র মানবজাতির মধ্যে প্রবেশ করেছে। (রোমীয় ৫:১২) অতিবাহিত সময় শয়তানকে একজন “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা” বলে প্রমাণ করেছে এবং দেখিয়েছে যে, যিহোবা হলেন “সত্যের ঈশ্বর।”—যোহন ৮:৪৪; গীতসংহিতা ৩১:৫.

শয়তান হবাকে এও বলেছিল: “ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ৩:৫) ওই ধূর্ত কথাগুলোর দ্বারা শয়তান মানুষের সামনে নিজে নিজে শাসন করার এক মিথ্যা সুযোগ তুলে ধরেছিল। ভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে শয়তান ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হয়ে মানুষ আরও বেশি ভাল থাকবে। এটা কি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে?

সমগ্র ইতিহাস জুড়ে, বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হয়েছে। সম্ভাব্য প্রত্যেকটা মানব সরকার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু, মানব পরিবারে বারংবার ভয়ংকর ঘটনাগুলো ঘটেছে। “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে,” একজন বিজ্ঞ বাইবেল লেখক প্রায় ৩,০০০ বছর আগে এই উপসংহার করেছিলেন। (উপদেশক ৮:৯) “মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না,” ভাববাদী যিরমিয় লিখেছিলেন। (যিরমিয় ১০:২৩) এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্যগুলোও এই বিবৃতির সত্যতাকে ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। অতিবাহিত সময় এই মন্তব্যগুলোকে সত্য বলেই প্রমাণ করেছে।

আপনি কী করবেন?

ঈশ্বরের দেওয়া সময়, যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়ে শয়তানকে ভুল বলে প্রমাণিত করেছে। যিহোবা ঈশ্বর হলেন নিখিলবিশ্বের চূড়ান্ত সার্বভৌম। তাঁর সৃষ্টির ওপর শাসন করার অধিকার তাঁর রয়েছে আর তাঁর শাসনপদ্ধতি হল সর্বোত্তম। এই বিষয়টার সত্যতা স্বীকার করে স্বর্গীয় প্রাণীরা, যাদের ঈশ্বরের শাসনাধীনে থাকার বহু বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা ঘোষণা করে: “তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।’”—প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

ঈশ্বরের শাসন সম্পর্কিত বিচার্য বিষয় সম্বন্ধে আপনি কী মনে করেন? আপনি কি এই বিষয়ে একমত যে, আপনার ওপর শাসন করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরই হলেন যোগ্য? যদি হন, তা হলে আপনাকে অবশ্যই যিহোবার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করতে হবে। আর তাঁর বাক্য বাইবেলে পাওয়া চমৎকার সত্য এবং পরামর্শকে আপনার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার দ্বারা আপনি তা করতে পারেন। “ঈশ্বর প্রেম” আর তাঁর আইন ও আজ্ঞাগুলো, তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের প্রতি তাঁর ভালবাসা থেকে এসেছে। (১ যোহন ৪:৮) আমাদের জন্য যা উপকারী এমন কোনোকিছু থেকে যিহোবা কখনো আমাদেরকে বঞ্চিত করেন না। তাই, আপনি বাইবেলের এই পরামর্শে মনোযোগ দিতে পারেন: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং এটি যা বলে, তা আপনার জীবনে প্রয়োগ করার দ্বারা ঈশ্বরের শাসনকে বেছে নিতে পারেন

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

© Jeroen Oerlemans/Panos Pictures