সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আজকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা

আজকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা

আজকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা

‘খ্রিস্ট সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে জীবন ধারণ না করে।’—২ করিন্থীয় ৫:১৫.

১. একজন মিশনারি তার কার্যভারে যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, তা বর্ণনা করুন।

 “গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, আমাদেরটাই ছিল প্রথম বেসামরিক গাড়ি, যেটা আফ্রিকার প্রত্যন্ত গ্রামে প্রবেশ করে,” আ্যরন নামে একজন মিশনারি স্মরণ করে বলেন। * “সেখানকার ছোট্ট মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল আর আমাদেরকে ভাইদের চাহিদাগুলোর যত্ন নিতে হয়েছিল। খাবারদাবার, কাপড়চোপড় ও বাইবেল সাহিত্যাদি ছাড়াও, আমরা যিহোবার সাক্ষিরা—নামের পিছনে যে-সংগঠন (ইংরেজি) ভিডিওটা নিয়ে এসেছিলাম। * দলে দলে অনেক আগ্রহী ব্যক্তি গ্রামের ‘থিয়েটারে’—ভিসিআর ও টিভিসমেত খড়ের একটা বিরাট কুঁড়েঘরে—সেটা দেখতে এসেছিল, যা আমাদেরকে দুবার দেখাতে হয়েছিল। প্রতিটা প্রদর্শনীর পর অনেক বাইবেল অধ্যয়ন পাওয়া গিয়েছিল। স্পষ্টতই, আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছিল।”

২. (ক) কেন খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের সেবায় তাদের জীবনকে ব্যবহার করতে সংকল্পবদ্ধ? (খ) আমরা এখন কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

কেন আ্যরন ও তার সঙ্গীরা এইরকম এক কঠিন কার্যভার গ্রহণ করেছিল? কারণ যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তারা তাদের জীবনকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছে এবং সেটাকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে ব্যবহার করতে চায়। তাদের মতো সমস্ত উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান ‘আর আপনাদের উদ্দেশে জীবন ধারণ না করিয়া’ বরং “সুসমাচারের জন্য” তাদের যথাসাধ্য করতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছে। (২ করিন্থীয় ৫:১৫; ১ করিন্থীয় ৯:২৩) তারা জানে যে, যখন এই বিধিব্যবস্থা শেষ হয়ে যাবে, তখন জগতের সমস্ত টাকাপয়সা ও পদমর্যাদার কোনো মূল্যই থাকবে না। তাই, তাদের জীবন ও কিছুটা শক্তি আছে বলে তারা সেগুলোকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে ব্যবহার করতে চায়। (উপদেশক ১২:১) কীভাবে আমরা তা করতে পারি? তা করার জন্য কোথা থেকে আমরা প্রয়োজনীয় সাহস ও শক্তি পেতে পারি? আর আমাদের সামনে সেবার কোন কোন সুযোগ খোলা রয়েছে?

অগ্রগতিশীল ও ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা

৩. ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার সঙ্গে কোন মৌলিক পদক্ষেপগুলো যুক্ত?

সত্য খ্রিস্টানদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা হল সারাজীবনের এক প্রচেষ্টা। এটা সাধারণত এই ধরনের মৌলিক পদক্ষেপের দ্বারা শুরু হয় যেমন, ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে নাম লেখানো, রোজ বাইবেল পড়া, প্রচার কাজে অংশ নেওয়া এবং বাপ্তিস্মের দিকে উন্নতি করা। অগ্রগতি করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো মনে রাখি: “এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।” (১ তীমথিয় ৪:১৫) এই ধরনের উন্নতি নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা নয় বরং নিঃস্বার্থভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পের এক প্রতিফলন। এইরকম এক পথ গ্রহণ করা দেখায় যে, আমরা ঈশ্বরকে জীবনের সমস্ত বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপগুলোতে নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ দিই আর তিনি তা আমাদের চেয়ে সর্বোত্তম উপায়ে দিয়ে থাকেন।—গীতসংহিতা ৩২:৮.

৪. কীভাবে আমরা অযথা ভয়গুলোকে দূর করতে পারি?

কিন্তু, দ্বিধাদ্বন্দ্ব অথবা নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা, ঈশ্বরকে সেবা করার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতির পথে এক অন্তরায় হতে পারে। (উপদেশক ১১:৪) তাই, ঈশ্বর ও অন্যদের সেবা করার মধ্যে প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পাওয়ার আগে, প্রথমে আমাদেরকে হয়তো নিজেদের ভয়গুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, এরিক বিদেশিভাষী একটা মণ্ডলীতে সেবা করার কথা চিন্তা করছিলেন। কিন্তু, তিনি দুশ্চিন্তা করেছিলেন: ‘আমি কি খাপ খাইয়ে নিতে পারব? আমি কি ভাইবোনদের পছন্দ করব? তারা কি আমাকে পছন্দ করবে?’ তিনি বলেন: “অবশেষে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমাকে নিজের চেয়ে বরং ভাইবোনদের কথা আরও বেশি বিবেচনা করতে হবে। আমি দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করে দিই এবং নিঃস্বার্থভাবে আমি যা করতে পারি, কেবল সেটার ওপরই মনোযোগ দিই। আমি সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেছিলাম এবং আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে গিয়েছিলাম। এখন আমি সেখানে আমার সেবাকে প্রচুররূপে উপভোগ করি।” (রোমীয় ৪:২০) হ্যাঁ, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিঃস্বার্থভাবে ঈশ্বর ও অন্যদের সেবা করি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আনন্দ ও পরিতৃপ্তি খুঁজে পাব।

৫. কেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

এ ছাড়া, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে সফলভাবে জীবনযাপন করার জন্য আমাদের পদক্ষেপগুলোকেও মনোযোগের সঙ্গে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। আমরা বিজ্ঞতার সঙ্গে অনেক ঋণের দায়ে জড়িয়ে পড়া এড়িয়ে চলি, যা কিনা আমাদেরকে এই বিধিব্যবস্থার দাস করতে এবং ঈশ্বরের কাজ করার জন্য আমাদের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে। বাইবেল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: “ঋণী মহাজনের দাস হয়।” (হিতোপদেশ ২২:৭) যিহোবার ওপর নির্ভর করা এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখা আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয়কে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, গমিং এবং তার দুবোন তাদের মাকে নিয়ে এমন একটা এলাকায় বাস করে, যেখানে বাড়িভাড়া অনেক বেশি ও সেইসঙ্গে স্থায়ী চাকরি খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন হতে পারে। তাদের জমানো টাকা সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করে ও খরচ ভাগ করে নিয়ে তারা এমনকি সেই সময়েও মানিয়ে নিতে পারে, যখন তারা সকলেই চাকরি করে না। “মাঝেমধ্যে, আমরা সকলেই আয় করতে পারি না,” গমিং বলেন। “তা সত্ত্বেও, আমরা অগ্রগামীর পরিচর্যা চালিয়ে যেতে এবং আমাদের মায়েরও উত্তম যত্ন নিতে পারছি। আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে, মা চায়নি যেন আমরা তার জন্য জীবনের বিলাসপূর্ণ বিষয়বস্তু জোগাতে গিয়ে আমাদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো পরিত্যাগ করি।”—২ করিন্থীয় ১২:১৪; ইব্রীয় ১৩:৫.

৬. আমরা আমাদের জীবনকে কীভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে পারি, তা কোন উদাহরণটা তুলে ধরে?

আপনি যদি জাগতিক বিষয়গুলোর—আর্থিক কিংবা অন্যান্য বিষয়ের—সঙ্গে খুব বেশি জড়িত থাকেন, তা হলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে প্রথমে রাখার জন্য হয়তো বড় বড় রদবদল করার প্রয়োজন হতে পারে। এই ধরনের পরিবর্তন রাতারাতি করা যায় না আর আপনার প্রথম প্রচেষ্টাগুলোর সময় ভুল করাকে ব্যর্থতা বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়। কোয়িচির কথা বিবেচনা করুন, যার বিনোদনের পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার সমস্যা ছিল। কোয়িচি কিশোর বয়সে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন কিন্তু অনেক বছর ধরে ভিডিও গেমস্‌ তার জীবনের ধ্যানজ্ঞান ছিল। একদিন কোয়িচি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন: ‘এ আমি কী করছি? আমার বয়স এখন ৩০ এর কোঠায় আর আমি কিনা জীবনে উদ্দেশ্যপূর্ণ কোনোকিছুই করছি না!’ কোয়িচি আবারও বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন এবং মণ্ডলীর কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেন। যদিও পরিবর্তন ধীরে ধীরে এসেছিল কিন্তু তিনি হাল ছেড়ে দেননি। অনেক প্রার্থনা ও অন্যদের প্রেমময় সাহায্যের দরুন তিনি অবশেষে তার খেলার নেশা থেকে মুক্ত হন। (লূক ১১:৯) কোয়িচি এখন আনন্দের সঙ্গে একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছেন।

ভারসাম্যপূর্ণ হতে শিখুন

৭. কেন আমাদেরকে ঈশ্বরের কাজ করার সময় ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে?

ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য আমাদের সর্বান্তঃকরণ প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন। তা করার ব্যাপারে আমাদের কখনো অনিচ্ছুক অথবা অলস হওয়া উচিত নয়। (ইব্রীয় ৬:১১, ১২) তা সত্ত্বেও, যিহোবা চান না যে আমরা পুরোপুরি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ি—দৈহিকভাবে, মানসিকভাবে অথবা আবেগগতভাবে। আমরা আমাদের নিজেদের শক্তিতে ঈশ্বরের কাজ সম্পন্ন করতে পারি না, এই বিষয়টা বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করা তাঁকে গৌরবান্বিত করে এবং দেখায় যে, আমরা ভারসাম্য বজায় রাখছি। (১ পিতর ৪:১১) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি দেবেন কিন্তু নিজেদেরকে আমরা সাধ্যের অতিরিক্ত চাপ দেব না, এমন বিষয়গুলো করার চেষ্টা করব না, যেগুলো তিনি আমাদের কাছ থেকে চান না। (২ করিন্থীয় ৪:৭) পরিশ্রান্ত না হয়ে ঈশ্বরকে সেবা করে চলার জন্য আমাদের কর্মশক্তিকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে।

৮. কী ঘটেছিল, যখন একজন খ্রিস্টান যুবতী জগৎ ও যিহোবা উভয়কেই তার সর্বোত্তমটা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল আর সে কোন রদবদল করেছে?

উদাহরণস্বরূপ, পূর্ব এশিয়ায় বসবাসরত জি হি দুবছর ধরে অগ্রগামীর কাজ করার পাশাপাশি এমন একটা চাকরি করত, যেখানে কাজের চাপ অনেক বেশি। “আমি যিহোবা ও জগৎ, উভয়কেই আমার সর্বোত্তমটা দেওয়ার চেষ্টা করতাম,” সে বলে, “কিন্তু রাতে আমি কেবল পাঁচ ঘন্টা ঘুমাতে পারতাম। অবশেষে, সত্যের জন্য আমার আর মনের শক্তি অবশিষ্ট ছিল না আর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে আমি বলতে গেলে খুব কমই আনন্দ পেতাম।” যিহোবাকে ‘সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ, মন ও শক্তি’ দিয়ে সেবা করার জন্য জি হি এমন একটা চাকরি খুঁজতে থাকে, যেখানে কাজের চাপ কম। (মার্ক ১২:৩০) “আমার পরিবারের কাছ থেকে আর্থিক দিক দিয়ে সফল হওয়ার প্রচেষ্টা করার জন্য চাপ আসা সত্ত্বেও, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে প্রথমে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি,” সে বলে। “মৌলিক বিষয়গুলো, যেমন ভাল কাপড়চোপড় কেনার জন্য আমি এখনও যথেষ্ট টাকাপয়সা অর্জন করি। আর বেশি করে ঘুমাতে পারি বলে আমি সতেজ বোধ করি! আমি আমার পরিচর্যায় আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি আর এখন আমি আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী। এর কারণ হল যে, আমাকে জগতের আকর্ষণ ও বিক্ষেপগুলোতে খুব বেশি জড়িত হতে হয় না।”—উপদেশক ৪:৬; মথি ৬:২৪, ২৮-৩০.

৯. কীভাবে আমাদের প্রচেষ্টাগুলো ক্ষেত্রের লোকেদের প্রভাবিত করতে পারে?

প্রত্যেকেই পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে ঈশ্বরকে সেবা করতে পারে না। আপনাকে যদি বার্ধক্য, খারাপ স্বাস্থ্য অথবা অন্যান্য সীমাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করতেই হয়, তা হলে মনে রাখবেন যে আপনার বিশ্বস্ততা ও সেইসঙ্গে সর্বান্তঃকরণে আপনি যে-সেবাই প্রদান করেন না কেন, সেগুলোকে যিহোবা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করেন। (লূক ২১:২, ৩) তাই, আমাদের প্রচেষ্টাগুলো এমনকি সীমিত হলেও, সেগুলো অন্যদের ওপর যে-প্রভাব ফেলতে পারে সেটাকে আমাদের কারোরই ছোট করে দেখা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আমরা মাত্র কয়েকটা ঘরে গিয়েছি এবং এমন কাউকেই পাইনি, যিনি আমাদের বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। আমরা চলে আসার পর, গৃহকর্তারা হয়তো আমাদের সাক্ষাৎ নিয়ে কয়েক ঘন্টা অথবা কয়েক দিন ধরে কথা বলতে পারে, এমনকি যদি কেউই আমাদের জন্য দরজা না-ও খুলে থাকে! আমরা আশা করি না যে, যারা সুসমাচার শোনে, তারা সকলেই অনুকূলভাবে সাড়া দেবে বরং কেউ কেউ দেবে। (মথি ১৩:১৯-২৩) অন্যেরা হয়তো পরবর্তী সময়ে সাড়া দিতে পারে, যখন জগতের অথবা তাদের জীবনের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যাই হোক, জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় আমরা যা করতে পারি, তা করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের কাজ করছি। আমরা “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।”—১ করিন্থীয় ৩:৯.

১০. মণ্ডলীতে সকলের জন্য কোন সুযোগগুলো খোলা রয়েছে?

১০ অধিকন্তু, আমরা সবাই আমাদের পরিবারের সদস্য এবং আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের সাহায্য করতে পারি। (গালাতীয় ৬:১০) অন্যদের ওপর আমাদের উত্তম প্রভাব গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। (উপদেশক ১১:১, ৬) প্রাচীন ও পরিচারক দাসেরা যখন অধ্যবসায়ের সঙ্গে তাদের দায়িত্বগুলো পালন করে, তখন তারা মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ও সুস্থিত অবস্থার ক্ষেত্রে অবদান রাখে আর এর ফলে খ্রিস্টীয় কাজকর্ম বৃদ্ধি পায়। আমাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, আমরা যখন ‘প্রভুর কার্য্যে উপচিয়া পড়ি,’ তখন আমাদের পরিশ্রম “নিষ্ফল নয়।”—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করাকে কেরিয়ার হিসেবে নেওয়া

১১. স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে কাজ করা ছাড়াও, আমাদের জন্য হয়তো কোন কোন সুযোগ রয়েছে?

১১ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা জীবন উপভোগ করি এবং আমরা আমাদের সমস্ত কাজে ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে চাই। (১ করিন্থীয় ১০:৩১) আমরা যখন বিশ্বস্ততার সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার ও অন্যদেরকে যিশুর আজ্ঞাগুলো পালন করার জন্য শিক্ষা দিতে নিজেদের বিলিয়ে দিই, তখন আমরা ঈশ্বরকে সেবা করার এমন অনেক পথ খুঁজে পাব, যা আমাদেরকে সুখী করে তোলে। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে সেবা করা ছাড়াও, সেবা করার সেই সুযোগগুলো রয়েছে, যেখানে প্রচারকদের অনেক প্রয়োজন আর তা অন্য এলাকায়, ভাষায় অথবা দেশে যা-ই হোক না কেন। যে-যোগ্য প্রাচীন ও পরিচারক দাসেরা এখনও বিয়ে করেনি, তাদেরকে হয়তো মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল-এ যোগ দেওয়ার আর এরপর যে-মণ্ডলীগুলোতে পরিপক্ব খ্রিস্টানদের সাহায্যের প্রয়োজন, সেখানে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে, হোক তা নিজের দেশে অথবা বিদেশে। যে-বিবাহিত দম্পতিরা পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত আছে, তারা হয়তো গিলিয়েড মিশনারি ট্রেনিং লাভ করার এবং অন্য একটা দেশে গিয়ে সেবা করার জন্য যোগ্য হতে পারে। আর বেথেলে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার এবং সভার স্থান ও শাখা অফিস তৈরি করার এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সবসময় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজন রয়েছে।

১২, ১৩. (ক) আপনি কোন ধরনের সেবা বেছে নেবেন, তা আপানি কীভাবে নির্ধারণ করতে পারেন? (খ) উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে একটা কার্যভারে অর্জিত অভিজ্ঞতা অন্যান্য কার্যভারে কার্যকারী হতে পারে?

১২ কোন ধরনের সেবা আপনার বেছে নেওয়া উচিত? যিহোবার একজন উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে নির্দেশনার জন্য সবসময় যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের ওপর নির্ভর করুন। তাঁর “মঙ্গলময় আত্মা” আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। (নহিমিয় ৯:২০) একটা কার্যভার প্রায়ই আরেকটা কার্যভারের দিকে পরিচালিত করে আর একটা সেবা থেকে যে-অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করা যায়, তা পরে আরেকটা কার্যভারের ক্ষেত্রে কার্যকারী হতে পারে।

১৩ উদাহরণস্বরূপ, ডেনিস ও তার স্ত্রী জেনি নিয়মিতভাবে কিংডম হল নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে হারিকেন ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর, তারা ত্রাণকাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিল। ডেনিস রিপোর্ট করেন: “কিংডম হলগুলো নির্মাণে আমরা যে-দক্ষতা গড়ে তুলেছিলাম, তা আমাদের ভাইবোনদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা আমাদের জন্য অনেক আনন্দ নিয়ে এসেছে। যাদেরকে আমরা সাহায্য করেছি, তাদের দ্বারা প্রদর্শিত উপলব্ধি সত্যিই হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। ত্রাণকাজে নিয়োজিত অন্যান্য দলের অধিকাংশই পুনর্নিমাণের ক্ষেত্রে সামান্যই সফল হয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরা ইতিমধ্যে ৫,৩০০রও বেশি বাড়িঘর ও অসংখ্য কিংডম হল মেরামত অথবা পুনর্নিমাণ করেছে। লোকেরা তা লক্ষ করে আর এখন আমাদের বার্তার প্রতি আরও বেশি আগ্রহ দেখায়।”

১৪. আপনি কী করতে পারেন, যদি আপনি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা বেছে নিতে চান?

১৪ পূর্ণসময়ের পরিচর্যাকে আপনার কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়ে আপনি কি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে পারেন? যদি পারেন, তা হলে নিশ্চিতভাবেই আপনি অনেক আশীর্বাদ লাভ করবেন। আপনার বর্তমান পরিস্থিতিগুলো যদি তা করার সুযোগ না দেয়, তা হলে হয়তো রদবদল করা যেতে পারে। নহিমিয়ের মতো প্রার্থনা করুন, যা তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা করার সময়ে করেছিলেন: “হে প্রভু [সদাপ্রভু], বিনয় করি, . . . তোমার এই দাসকে কৃতকার্য্য কর।” (নহিমিয় ১:১১) এরপর, ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ ওপর নির্ভর করে আপনার প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করুন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) তাঁকে আরও পূর্ণরূপে সেবা করার জন্য আপনার প্রচেষ্টায় যিহোবা যাতে আশীর্বাদ করেন, সেইজন্য আপনাকে প্রথমে সেই প্রচেষ্টাগুলো করতে হবে। একবার আপনি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আপনার সিদ্ধান্তে অটল থাকুন। সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে আর আপনার আনন্দও বেড়ে যাবে।

প্রকৃতই মূল্যবান এক জীবন

১৫. (ক) কীভাবে আমরা ঈশ্বরের দীর্ঘসময়ের দাসদের সঙ্গে কথা বলে ও তাদের সম্বন্ধে পড়ে উপকার লাভ করি? (খ) একটা জীবনকাহিনি সম্বন্ধে উল্লেখ করুন, যেটা বিশেষভাবে আপনার কাছে উৎসাহজনক বলে মনে হয়েছে?

১৫ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা থেকে আপনি কোন ফলাফল আশা করতে পারেন? যিহোবার দীর্ঘসময়ের দাসদের সঙ্গে কথা বলুন, বিশেষভাবে তাদের সঙ্গে যারা অনেক বছর ধরে পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত আছে। তারা কতই না পরিতৃপ্তিদায়ক ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপন করছে! (হিতোপদেশ ১০:২২) তারা আপনাকে বলবে যে, যিহোবা কখনো তাদেরকে এমনকি কঠিন পরিস্থিতিগুলোতেও তাদের প্রকৃতই যা প্রয়োজন, তা এবং আরও বেশি কিছু লাভ করার জন্য সাহায্য করতে অসমর্থ হননি। (ফিলিপীয় ৪:১১-১৩) বিগত দশকগুলোতে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় শত শত জীবনকাহিনি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটা জীবনকাহিনি সেই উদ্যোগী মনোভাব ও আনন্দ সম্বন্ধে প্রকাশ করে, যেগুলো আমাদেরকে বাইবেলের প্রেরিত বইয়ে যা রয়েছে, তা মনে করিয়ে দেয়। এই রোমাঞ্চকর বিবরণগুলো পড়া আপনাকে এই বলতে পরিচালিত করবে, ‘এই ধরনের জীবনযাপনই আমি করতে চাই!’

১৬. কী একজন খ্রিস্টানের জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ ও সুখী করে তোলে?

১৬ শুরুতেই উল্লেখিত আ্যরন স্মরণ করে বলেন: “আফ্রিকাতে প্রায়ই আমার এমন যুবক-যুবতীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো, যারা জীবনে উদ্দেশ্য খোঁজার জন্য দেশ জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এদের অধিকাংশই কখনো একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পায়নি। কিন্তু, আমরা সেখানে রাজ্যের সুসমাচারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করছি এবং এক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অর্থপূর্ণ জীবন উপভোগ করছি। আমরা নিজেরা এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছি যে, গ্রহণ করা অপেক্ষা দান করা সুখী হওয়ার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫, NW.

১৭. কেন আমাদের এখনই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে হবে?

১৭ আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনি কোন উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করছেন? ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে সাহায্য করার জন্য আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকে, তা হলে অন্যান্য বিষয় দ্রুত আপনার সময় ও শক্তি নিয়ে নেবে। শয়তানের বিধিব্যবস্থার কল্পনার জগতের মধ্যে কেন আপনার মূল্যবান জীবনকে নষ্ট করবেন? খুব শীঘ্রই যখন “মহাক্লেশ” আসবে, তখন বস্তুগত ধনসম্পদ ও জাগতিক পদমর্যাদা মূল্যহীন হয়ে যাবে। তখন যে-বিষয়টা মুখ্য হবে, সেটা হল যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হব যে, আমরা ঈশ্বর ও অন্যদের সেবা করেছি এবং আমাদের জীবনে পুরোপুরি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেছি!—মথি ২৪:২১; প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪, ১৫.

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• যিহোবা তাঁর প্রতি আমাদের সেবা সম্বন্ধে কেমন বোধ করেন?

• কীভাবে ব্যবহারিক ও ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া আমাদেরকে ঈশ্বর ও অন্যদের সেবা করতে সাহায্য করে?

• সেবা করার কোন কোন সুযোগের দ্বার আমাদের সামনে খোলা রয়েছে?

• কীভাবে আমরা এখনই প্রকৃত উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনে পরিচালিত হতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবাকে সর্বান্তঃকরণে সেবা করে চলার জন্য আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিভিন্ন ধরনের পবিত্র সেবা রয়েছে