আলোর দিকে গমন করুন
আলোর দিকে গমন করুন
বাতিঘরগুলো অগণিত জীবন বাঁচিয়েছে। তবে, একজন পরিশ্রান্ত ভ্রমণকারীর জন্য দূরে দেখতে পাওয়া এক আলো, সমুদ্রের নীচে বিপদজনক পাথরগুলোর বিষয়ে সতর্ক করার চাইতেও বেশি কিছু করে থাকে। এটা এও জানায় যে, তার গন্তব্যস্থল খুবই কাছে। একইভাবে, আজকে খ্রিস্টানরাও এক দীর্ঘ যাত্রার শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে, যে-যাত্রা তাদেরকে এক অন্ধকারের অর্থাৎ আধ্যাত্মিকভাবে বিপদজনক জগতের মধ্যে দিয়ে পরিচালিত করেছে। বাইবেলে, সাধারণ মানবজাতিকে—ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন জনসাধারণকে—“আলোড়িত সমুদ্রের” সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, ‘যাহা স্থির হইতে পারে না, ও যাহার জলে পঙ্ক ও কর্দ্দম উঠে।’ (যিশাইয় ৫৭:২০) ঈশ্বরের লোকেদের চারপাশে এই ধরনের এক পরিবেশই রয়েছে। কিন্তু, তাদের পরিত্রাণের এক উজ্জ্বল প্রত্যাশা রয়েছে, যেটা তাদের জন্য এক রূপক, নির্ভরযোগ্য আলোস্বরূপ। (মীখা ৭:৮) যিহোবা এবং তাঁর লিখিত বাক্যের কারণে “দীপ্তি বপন করা গিয়াছে ধার্ম্মিকের জন্য, আর সরলচিত্তদের জন্য আনন্দ।”—গীতসংহিতা ৯৭:১১. *
কিন্তু, কিছু খ্রিস্টান যিহোবার আলো থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিতে প্রলুব্ধ করার জন্য বিক্ষেপগুলোকে সুযোগ দিয়েছে, ফলে বস্তুবাদিতা, অনৈতিকতা অথবা এমনকি ধর্মভ্রষ্টতার কারণে তাদের বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন হয়েছে, যেগুলোকে আমরা হয়তো চোরা পাথরের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। হ্যাঁ, প্রথম শতাব্দীর মতো আজকেও কারো কারো “বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ১:১৯; ২ পিতর ২:১৩-১৫, ২০-২২) নতুন জগৎকে সবচেয়ে শেষ বন্দরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে পৌঁছানোর জন্য আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর এখন এর খুব কাছাকাছি এসে, একজন ব্যক্তির জন্য যিহোবার অনুগ্রহ হারানো কতই না দুঃখজনক এক পরিণতি হবে!
‘আপনার বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন’ হওয়া এড়িয়ে চলুন
বিগত শতাব্দীগুলোতে, একটা জাহাজ হয়তো বিশাল সমুদ্রে নিরাপদেই চলাচল করত, তা সত্ত্বেও বন্দরের কাছাকাছি হওয়ার সময় সেটা ভগ্ন হতে পারত। প্রায়ই যখন জাহাজ তীরের কাছাকাছি আসত, তখনই যাত্রার সবচেয়ে প্রতারণাপূর্ণ অংশের মুখোমুখি হতে হতো। একইভাবে, অনেকের জন্য মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিপদজনক সময়কাল হচ্ছে, এই বর্তমান বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কাল।’ বিশেষভাবে উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানদের জন্য এই সময়কে বাইবেল যথার্থভাবে “বিষম” বা মোকাবিলা করা কঠিন বলে বর্ণনা করে।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
কেন এই শেষকাল খুবই কঠিন এক সময়? কারণ শয়তান জানে যে, ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তার “কাল সংক্ষিপ্ত।” তাই, সে তাদের বিশ্বাস ভেঙে ফেলার জন্য তার বিদ্বেষপূর্ণ অভিযানকে তীব্রতর করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) কিন্তু, আমরা কোনো সাহায্য ও নির্দেশনাবিহীন অবস্থায় নেই। যিহোবা সবসময়ই সেই ব্যক্তিদের শরণ বা আশ্রয়, যারা তাঁর পরামর্শে মনোযোগ দেয়। (২ শমূয়েল ২২:৩১) তিনি আমাদের জন্য সতর্কতামূলক উদাহরণগুলো প্রদান করেছেন, যেগুলো শয়তানের চতুর অথচ মন্দ পরিকল্পনাগুলো প্রকাশ করে দেয়। আসুন এখন আমরা ইস্রায়েল জাতির প্রতিজ্ঞাত দেশের নিকটবর্তী হওয়ার সময়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই ধরনের দুটো উদাহরণ পুনরালোচনা করি।—১ করিন্থীয় ১০:১১; ২ করিন্থীয় ২:১১.
প্রতিজ্ঞাত দেশের কাছে
মোশির নেতৃত্বে ইস্রায়েলের লোকেরা মিশর থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। খুব শীঘ্রই তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের দক্ষিণ সীমান্তের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তখন মোশি সেই দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য ১২ জন গুপ্তচরকে পাঠিয়েছিলেন। দশজন অবিশ্বস্ত গুপ্তচর এক নেতিবাচক তথ্য নিয়ে ফিরে এসেছিল, বলেছিল যে, ইস্রায়েলীয়রা কনানীয়দের গণনাপুস্তক ১৩:১, ২, ২৮-৩২; ১৪:১-৪.
বিরুদ্ধে সফল হতে পারবে না কারণ তারা “ভীমকায়” এবং সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী। এটা কীভাবে ইস্রায়েলীয়দেরকে প্রভাবিত করেছিল? বিবরণ আমাদের বলে যে, তারা মোশি ও হারণের বিরুদ্ধে বচসা করতে শুরু করেছিল, বলেছিল: “সদাপ্রভু আমাদিগকে খড়গ-ধারে নিপাত করাইতে এ দেশে কেন আনিলেন? আমাদের স্ত্রী ও বালকগণ ত লুটিত হইবে। . . . আইস, আমরা এক জনকে সেনাপতি করিয়া মিসরে ফিরিয়া যাই।”—চিন্তা করে দেখুন তো! এই একই লোকেরা দেখেছিল যে, যিহোবা ধ্বংসাত্মক দশটা আঘাত এবং লোহিত সাগরে এক বিস্ময়কর অলৌকিক কাজ করার মাধ্যমে পরাক্রমী মিশরকে—সেই সময়ের বিশ্বশক্তিকে—অবমানিত করেছেন। আর প্রতিজ্ঞাত দেশ তাদের একেবারে সামনেই ছিল, তাই তাদেরকে কেবল সেই দেশের দিকে গমন করতে হতো, ঠিক যেমন একটা জাহাজ এর গন্তব্যস্থল চিহ্নিত করে এমন এক আলোর দিকে গমন করে। কিন্তু, তারা মনে করেছিল যে, যিহোবা মিশরের তুলনায় নগন্য এই কনানের বিভক্ত নগর-রাজ্যগুলোর পতন ঘটাতে অসমর্থ। এই বিশ্বাসহীন প্রতিক্রিয়া ঈশ্বরকে এবং দুজন সাহসী গুপ্তচর যিহোশূয় ও কালেবকে নিশ্চয়ই কত হতাশই না করেছিল, যারা কনানীয়দেরকে “[ইস্রায়েলের] ভক্ষ্যস্বরূপ” মনে করেছিল! সমগ্র কনান দেশ ভ্রমণ করার ফলে এই দুজনের কাছে প্রত্যক্ষ তথ্য ছিল। যখন লোকেরা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করেনি, তখন যিহোশূয় এবং কালেবকেও বেশ কয়েক দশক ধরে প্রান্তরেই থাকতে হয়েছিল কিন্তু তারা সেই অবিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সেখানে মৃত্যুবরণ করেনি। বস্তুতপক্ষে, যিহোশূয় এবং কালেব পরবর্তী বংশধরকে প্রান্তরের মধ্যে থেকে বের হতে ও প্রতিজ্ঞাত দেশের দিকে চালিত করায় সাহায্য করেছিল। (গণনাপুস্তক ১৪:৯, ৩০) দ্বিতীয়বার সেই দেশের নিকটবর্তী হলে ইস্রায়েল এক ভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। তারা কীভাবে অগ্রসর হবে?
গণনাপুস্তক ২২:১-৭; ২৪:১০) দমে না গিয়ে বিলিয়ম অন্য আরেকটা ক্ষতিকর পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিলেন, যেটা ঈশ্বরের লোকেদের সেই দেশ অধিকার করার ক্ষেত্রে অযোগ্য করে তুলতে তৈরি করা হয়েছিল। কীভাবে? তাদেরকে অনৈতিকতায় এবং বালের উপাসনায় প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে। যদিও এই কৌশলও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল কিন্তু এর ফলে ২৪,০০০ ইস্রায়েলীয় বিপথে চালিত হয়েছিল। তারা মোয়াবীয় নারীদের সঙ্গে ব্যভিচার করেছিল এবং বাল্-পিয়োর দেবের প্রতি আসক্ত হয়েছিল।—গণনাপুস্তক ২৫:১-৯.
মোয়াবের রাজা বালাক মিথ্যা ভাববাদী বিলিয়মকে ব্যবহার করে ইস্রায়েলকে অভিশাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা বিলিয়মকে অভিশাপের পরিবর্তে আশীর্বাদ উচ্চারণ করতে বাধ্য করার মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। (বিষয়টা একটু চিন্তা করুন! এই একই ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে অনেকেই যিহোবাকে ‘সেই বৃহৎ ও ভয়ঙ্কর প্রান্তরের’ মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিরাপদে পরিচালনা করতে দেখেছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৯) তা সত্ত্বেও, তাদের উত্তরাধিকারের ঠিক প্রবেশদ্বারে এসে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে ২৪,০০০ জন মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর কাছে নতিস্বীকার করেছিল এবং যিহোবার হাতে মৃত্যুবরণ করেছিল। আজকে ঈশ্বরের দাসদের জন্য এটা কী এক সতর্কবাণী, যখন কিনা তারা সর্বোৎকৃষ্ট এক উত্তরাধিকারের নিকটবর্তী হচ্ছে!
যিহোবার আধুনিক দিনের দাসদেরকে তাদের পুরস্কার লাভ করা থেকে বাধা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার সময়ে শয়তানের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করার দরকার নেই। ইস্রায়েল প্রথমবার প্রতিজ্ঞাত দেশের নিকটবর্তী হওয়ার সময় যা ঘটেছিল, সেই সময়কার একটা কৌশল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শয়তান প্রায়ই ভয় ও সন্দেহের উদ্রেক করার চেষ্টা করে, যেটা হুমকি, তাড়না বা উপহাসের মাধ্যমে হতে পারে। কিছু খ্রিস্টান এই ধরনের ভয়ের কাছে নতিস্বীকার করেছে। (মথি ১৩:২০, ২১) আরেকটা কার্যকারী কৌশল হল, লোকেদেরকে নৈতিকভাবে কলুষিত করা। মাঝে মাঝে, মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আসা কিছু ব্যক্তি, সেই লোকেদের কলুষিত করার চেষ্টা করেছে, যারা আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল এবং যারা আস্থার সঙ্গে ঐশিক আলোতে গমনাগমন করে না।—যিহূদা ৮, ১২-১৬.
আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব এবং সতর্ক ব্যক্তিদের কাছে জগতের দ্রুত নৈতিক অধঃপতন, শয়তানের বেপরোয়া হয়ে ওঠার জোরালো এক প্রমাণ দেয়। হ্যাঁ, শয়তান জানে যে, শীঘ্রই ঈশ্বরের অনুগত দাসেরা তার নাগালের বাইরে চলে যাবে। তাই, নিঃসন্দেহে এই সময়ই হচ্ছে আমাদের জন্য শয়তানের প্রচেষ্টাগুলোর বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক থাকার এক সময়।
আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক থাকার সহায়কগুলো
প্রেরিত পিতর ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যকে ‘এমন প্রদীপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যা “অন্ধকারময় স্থানে দীপ্তি দেয়,” কারণ এটি খ্রিস্টানদের ঐশিক উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতাকে বোধগম্যতাসহ উপলব্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। (২ পিতর ১:১৯-২১) যারা ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলে এবং সবসময় এর নির্দেশনা অনুযায়ী চলে, তারা দেখে যে, যিহোবা তাদের পথ সকল সরল করবেন। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) আশায় পূর্ণ হয়ে এই ধরনের কৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা ‘চিত্তের সুখে আনন্দরব করে,’ অন্যদিকে যারা যিহোবাকে জানে না বা তাঁর পথ পরিত্যাগ করে, তারা শেষপর্যন্ত ‘চিত্তে দুঃখ’ এবং ‘আত্মার ক্ষোভ’ অনুভব করে। (যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪) তাই, অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং আমরা যা কিছু শিখি, সেগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের চোখকে বর্তমান বিধিব্যবস্থার ক্ষণস্থায়ী আনন্দফুর্তির ওপর নয় বরং আমাদের নিশ্চিত আশার ওপর কেন্দ্রীভূত রাখতে পারি।
এ ছাড়া, আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার জন্য প্রার্থনাও অপরিহার্য। বর্তমান ব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে কথা বলার সময় যিশু বলেছিলেন: “কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা [“মিনতি,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্ হও।” (লূক ২১:৩৪-৩৬) লক্ষ করুন যে, যিশু এখানে “মিনতি” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যেটি আন্তরিক প্রার্থনাকে বোঝায়। যিশু জানতেন যে, এই কঠিন সময়ে অনন্তজীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। আপনার প্রার্থনাগুলো কি আধ্যাত্মিকভাবে পুরোপুরি জেগে থাকার জন্য আপনার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে?
আসুন আমরা যেন ভুলে না যাই যে, আমাদের উত্তরাধিকারের দিকে দীর্ঘ যাত্রার সবচেয়ে বিপদজনক অংশ হতে পারে যাত্রা পথের একেবারে শেষ পর্যায়ে। তাই, এটা কত গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যেন সেই আলোর প্রতি দৃষ্টি হারিয়ে না ফেলি, যে-আলো আমাদেরকে রক্ষা পাওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
ভ্রান্ত আলোগুলোর বিষয়ে সতর্ক হোন
অতীতে পাল-তোলা জাহাজগুলোর সময়ে, অমাবস্যার রাতগুলোতে যখন নাবিকদের পক্ষে তীর খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো, তখন দুষ্ট লোকেরা সেই রাতগুলো বেছে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট বিপদ সৃষ্টি করত। এই লোকেরা হয়তো জাহাজের ক্যাপ্টেনদের পথ পরিবর্তন করতে প্রতারিত করার জন্য সমুদ্রতীরের বিপদজনক এলাকা বরাবর আলোগুলো স্থাপন করত। ফলস্বরূপ হয়তো এই প্রতারিত ব্যক্তিদের জাহাজ ভগ্ন হতো, তাদের মালপত্র লুট করা হতো এবং অনেকে জীবন হারাত।
একইভাবে, প্রতারক ‘দীপ্তিময় দূত’ শয়তান, ঈশ্বরের লোকেদের তাঁর সঙ্গে যে-সম্পর্ক রয়েছে, তা হরণ করতে চায়। দিয়াবল অসতর্ক ব্যক্তিকে প্রতারণা করার জন্য “ভাক্ত প্রেরিত” এবং “ধাম্মিকতার” ধর্মভ্রষ্ট “পরিচারকদের” ব্যবহার করতে পারে। (২ করিন্থীয় ১১:১৩-১৫) কিন্তু, একজন সতর্ক, অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন ও নাবিক যেমন প্রতারণাপূর্ণ আলোগুলো দ্বারা সম্ভবত খুব কমই ভ্রান্ত হন, তেমনই “যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে” এমন খ্রিস্টানরা সেই লোকেদের দ্বারা ভ্রান্ত হয় না, যারা বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা এবং ক্ষতিকর দর্শনবিদ্যা তুলে ধরে।—ইব্রীয় ৫:১৪; প্রকাশিত বাক্য ২:২.
নাবিকরা পথে যে-বাতিঘরগুলো দেখতে পাবে, সেগুলোর একটা তালিকা সঙ্গে রাখে। সেই তালিকায় প্রত্যেকটা বাতিঘরের স্বতন্ত্র সংকেতসহ এর বৈশিষ্ট্যগুলোর বিষয়ে বর্ণনা করা থাকে। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “নাবিকরা একটা বাতিঘরের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ এবং বাতিঘরের তালিকা বিবেচনা করার মাধ্যমে, তারা কোন বাতিঘর দেখতে পাচ্ছে সেটাকে—আর এভাবে তাদের অবস্থানকে—নির্ধারণ করে থাকে।” একইভাবে, বিশেষ করে এই শেষকালে যিহোবা যখন সত্য উপাসনাকে মিথ্যা ধর্মের ঊর্ধ্বে উচ্চীকৃত করেছেন, তখন ঈশ্বরের বাক্য সৎহৃদয়ের লোকেদেরকে সত্য উপাসনা এবং যারা তা অনুধাবন করছে সেই ব্যক্তিদেরকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। (যিশাইয় ২:২, ৩; মালাখি ৩:১৮) সত্য ও মিথ্যা উপাসনার মধ্যে এক স্পষ্ট বৈসাদৃশ্য দেখিয়ে যিশাইয় ৬০:২, ৩ পদ বলে: “অন্ধকার পৃথিবীকে, ঘোর তিমির জাতিগণকে, আচ্ছন্ন করিতেছে, কিন্তু তোমার উপরে সদাপ্রভু উদিত হইবেন, এবং তাঁহার প্রতাপ তোমার উপরে দৃষ্ট হইবে। আর জাতিগণ তোমার দীপ্তির কাছে আগমন করিবে, রাজগণ তোমার অরুণোদয়ের আলোর কাছে আসিবে।”
সমস্ত জাতির মধ্যে থেকে আসা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যখন যিহোবার আলো দ্বারা নিজেদেরকে ক্রমাগত পরিচালিত হতে দেয়, তখন তারা এই যাত্রা পথের একেবারে শেষ পর্যায়ে থাকাকালীন তাদের বিশ্বাস হারাবে না। এর পরিবর্তে, তারা বর্তমান বিধিব্যবস্থার বাকি দিনগুলোর মধ্যে দিয়ে নিরাপদে যাত্রা করবে এবং নতুন জগতের শান্তিপূর্ণ পোতাশ্রয়ের দিকে যাবে।
[পাদটীকা]
^ শাস্ত্র ‘দীপ্তিকে’ অনেকবার প্রতীকী বা রূপক অর্থে ব্যবহার করে। উদাহরণ হিসেবে, বাইবেল ঈশ্বরকে আলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে। (গীতসংহিতা ১০৪:১, ২; ১ যোহন ১:৫) ঈশ্বরের বাক্য থেকে প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোককে আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (যিশাইয় ২:৩-৫; ২ করিন্থীয় ৪:৬) পৃথিবীতে যিশু তাঁর পরিচর্যার সময় এক আলোস্বরূপ ছিলেন। (যোহন ৮:১২; ৯:৫; ১২:৩৫) আর যিশুর অনুসারীদেরকে তাদের আলো উজ্জ্বল করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল।—মথি ৫:১৪, ১৬.
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
নাবিকদের মতো, খ্রিস্টানরা ভ্রান্ত আলোগুলোর দ্বারা প্রতারিত না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকে