সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার বাক্য কখনো বিফল হয় না

যিহোবার বাক্য কখনো বিফল হয় না

যিহোবার বাক্য কখনো বিফল হয় না

“তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪.

১. যিহোশূয় কে ছিলেন আর তার জীবনের শেষের দিকে তিনি কী করেছিলেন?

 তিনি ছিলেন একজন কর্মশক্তিসম্পন্ন ও নির্ভীক সেনাপতি, একজন বিশ্বাসী ও নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি। তিনি মোশির সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন এবং যিহোবা তাকে সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করেছিলেন, যেন এই ব্যক্তি ইস্রায়েল জাতিকে ভয়ংকর প্রান্তর থেকে বের করে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব দিতে পারেন। তার জীবনের শেষের দিকে, অতি সম্মানিত এই ব্যক্তি যিহোশূয়, ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের উদ্দেশে এক প্রেরণাদায়ক বিদায়ি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, বক্তৃতাটা সেই ব্যক্তিদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল, যারা তার কথা শুনেছিল। আপনার বেলায়ও একই বিষয় হতে পারে।

২, ৩. যিহোশূয় যখন ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের উদ্দেশে কথা বলেছিলেন, তখন ইস্রায়েলের পরিস্থিতি কেমন ছিল আর যিহোশূয় কী বলেছিলেন?

পরিস্থিতিটা মনের চোখে কল্পনা করার চেষ্টা করুন, যেমনটা বাইবেলে বর্ণিত রয়েছে: “অনেক দিন পরে, যখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে তাহাদের চারিদিকের সমস্ত শত্রু হইতে বিশ্রাম দিলেন, এবং যিহোশূয় বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক হইলেন; তখন যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে, তাহাদের প্রাচীনবর্গ, অধ্যক্ষগণ, বিচারকর্ত্তৃগণ ও শাসকগণকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক হইয়াছি।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১, ২.

যিহোশূয়ের বয়স প্রায় ১১০ বছর হয়েছিল আর তিনি ঈশ্বরের লোকেদের ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর সময়ে বাস করছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বিভিন্ন পরাক্রমী কাজের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছিলেন এবং যিহোবার অনেক প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখেছিলেন। তাই, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কারণে তিনি আস্থা সহকারে বলেছিলেন: “তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪.

৪. যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের কোন আশ্বাসগুলো দিয়েছিলেন?

যিহোশূয়ের জীবনকালে যিহোবার কোন বাক্যগুলো সত্য হয়েছিল? আমরা তিনটে আশ্বাস বিবেচনা করব, যেগুলো যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছিলেন। প্রথমত, ঈশ্বর তাদেরকে দাসত্ব থেকে উদ্ধার করবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি তাদের সুরক্ষা করবেন। তৃতীয়ত, তিনি তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন। একই ধরনের আশ্বাস যিহোবা তাঁর আধুনিক দিনের লোকেদেরও দিয়েছেন আর আমরাও আমাদের জীবনকালে সেগুলোকে সত্য হতে দেখেছি। তবে, আধুনিক সময়ে যিহোবা কী করেছেন, তা আলোচনা করার আগে, আসুন আমরা যিহোশূয়ের দিনে তাঁর কৃত কাজ বিবেচনা করি।

যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেন

৫, ৬. কীভাবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন আর এটা কী প্রদর্শন করেছিল?

ইস্রায়েলীয়রা যখন মিশরে তাদের দাসত্বের কারণে ঈশ্বরের কাছে ক্রন্দন করেছিল, তখন যিহোবা তা লক্ষ করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২:২৩-২৫) জ্বলন্ত ঝোপের সামনে যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন: “মিস্রীয়দের হস্ত হইতে [আমার লোকদিগকে] উদ্ধার করিবার জন্য, এবং সেই দেশ হইতে উঠাইয়া লইয়া উত্তম ও প্রশস্ত এক দেশে, . . . সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে তাহাদিগকে আনিবার জন্য নামিয়া আসিয়াছি।” (যাত্রাপুস্তক ৩:৮) যিহোবাকে তা সম্পাদন করতে দেখা নিশ্চয়ই কত রোমাঞ্চকরই না হয়েছিল! ফরৌণ যখন ইস্রায়েলকে মিশর ত্যাগ করার অনুমতি দেননি, তখন মোশি তাকে জানিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর নীলনদের জল রক্তে পরিণত করবেন। যিহোবার বাক্য বিফল হয়নি। নীলনদের জল রক্তে পরিণত হয়েছিল। সমস্ত মাছ মরে গিয়েছিল আর নদীর জল পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ৭:১৪-২১) ফরৌণ তখনও একগুঁয়েই ছিলেন আর যিহোবা আরও নয়টা আঘাত নিয়ে এসেছিলেন, প্রত্যেকটার বিষয়ে আগে থেকেই বর্ণনা করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৮-১২ অধ্যায়) দশম আঘাতের কারণে মিশরের প্রথমজাতরা মারা যাওয়ার পর, ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন—আর তারা সত্যিই চলে গিয়েছিল!—যাত্রাপুস্তক ১২:২৯-৩২.

সেই উদ্ধার যিহোবার জন্য ইস্রায়েলকে তাঁর মনোনীত জাতি হিসেবে গ্রহণ করার পথ খুলে দিয়েছিল। এটা যিহোবাকে প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণকারী হিসেবে মহিমান্বিত করেছিল, যাঁর বাক্য কখনো বিফল হয় না। এটা অন্যান্য জাতির দেবতাদের চেয়ে যিহোবার শ্রেষ্ঠত্বকে প্রদর্শন করেছিল। সেই উদ্ধার সম্বন্ধে পড়া আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করতে কেমন লেগেছিল, তা একটু কল্পনা করে দেখুন! যিহোশূয় দেখেছিলেন যে, নিঃসন্দেহে যিহোবা হলেন “সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।”—গীতসংহিতা ৮৩:১৮.

যিহোবা তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেন

৭. কীভাবে যিহোবা ফরৌণের সেনাবাহিনীর হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের সুরক্ষা করেছিলেন?

যিহোবা তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করবেন—দ্বিতীয় এই আশ্বাস সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিহোবার প্রতিজ্ঞার মধ্যে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি তাদেরকে মিশর থেকে উদ্ধার করবেন ও প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে দেবেন। স্মরণ করে দেখুন যে, ক্রোধান্বিত ফরৌণ শত শত রথে সজ্জিত তাঁর শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে ইস্রায়েলের পিছনে ধাওয়া করেছিলেন। সেই উদ্ধত ব্যক্তি নিশ্চয়ই কত আত্মবিশ্বাসীই না ছিলেন, বিশেষভাবে যখন ইস্রায়েলীয়রা পর্বত ও সমুদ্রের মাঝখানে ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়েছিল! তখন যিহোবা দুই শিবিরের মাঝখানে এক মেঘস্তম্ভ স্থাপন করার মাধ্যমে তাঁর লোকেদেরকে সুরক্ষা করার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন। মিশরীয়দের দিকে অন্ধকার ছিল; আর ইস্রায়েলীয়দের দিকে আলোকিত ছিল। মেঘস্তম্ভ যখন মিশরীয়দের অগ্রগতিকে ব্যাহত করেছিল, তখন মোশি তার যষ্টি উত্তোলন করেছিলেন এবং সূফসাগরের জল দুভাগ হয়ে গিয়েছিল আর এর ফলে ইস্রায়েলীয়দের জন্য পালানোর পথ ও মিশরীয়দের জন্য এক ফাঁদ দুটোই তৈরি হয়েছিল। যিহোবা ফরৌণের পরাক্রমী সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর লোকেদের নিশ্চিত পরাজয় থেকে রক্ষা করেছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ১৪:১৯-২৮.

৮. ইস্রায়েলীয়রা কোন সুরক্ষা উপভোগ করেছিল (ক) প্রান্তরে ও (খ) প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করে?

সূফসাগর পার হওয়ার পর, ইস্রায়েলীয়রা এমন এক দেশে ঘুরে বেড়িয়েছিল, যেটাকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘বিশাল এবং সাংঘাতিক মরুভূমি। সেই মরুভূমিতে বহু বিষাক্ত সাপ ও কাঁকড়াবিছে ছিল। জমি ছিল শুকনো এবং সেখানে কোথাও জল ছিল না।’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১৫, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) যিহোবা সেখানেও তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেছিলেন। আর প্রতিজ্ঞাত দেশে তাদের প্রবেশ করার বিষয়ে কী বলা যেতে পারে? শক্তিশালী কনানীয় সেনাবাহিনী তাদের বিরোধিতা করেছিল। তা সত্ত্বেও, যিহোবা যিহোশূয়কে বলেছিলেন: “উঠ, তুমি এই সমস্ত লোক লইয়া এই যর্দ্দন পার হও, এবং তাহাদিগকে অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আমি যে দেশ দিতেছি, সেই দেশে যাত্রা কর। তোমার সমস্ত জীবনকালে কেহ তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না; আমি যেমন মোশির সহবর্ত্তী ছিলাম, তদ্রূপ তোমার সহবর্ত্তী থাকিব; আমি তোমাকে ছাড়িব না, তোমাকে ত্যাগ করিব না।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:২, ৫) যিহোবার সেই কথাগুলো বিফল হয়নি। প্রায় ছয় বছরের মধ্যে যিহোশূয় ৩১ জন রাজাকে পরাজিত করেছিলেন এবং প্রতিজ্ঞাত দেশের বিরাট অংশ জয় করেছিলেন। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১২:৭-২৪) যিহোবার সুরক্ষামূলক যত্ন ছাড়া সেই বিজয় লাভ করা অসম্ভব হতো।

যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান

৯, ১০. কীভাবে যিহোবা প্রান্তরে তাঁর লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন?

এখন তৃতীয় আশ্বাসটা বিবেচনা করুন আর তা হল যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন। মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার লাভ করার কিছুদিন পর ঈশ্বর তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “দেখ, আমি তোমাদের নিমিত্ত স্বর্গ হইতে খাদ্য দ্রব্য বর্ষণ করিব; লোকেরা বাহিরে গিয়া প্রতিদিন দিনের খাদ্য কুড়াইবে।” নিশ্চিতভাবেই, ঈশ্বর “স্বর্গ হইতে খাদ্য দ্রব্য” জুগিয়েছিলেন। “আর তাহা দেখিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণ পরস্পর কহিল, উহা কি?” সেটা ছিল মান্না, যে-খাদ্যের বিষয়ে যিহোবা তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ১৬:৪, ১৩-১৫.

১০ প্রান্তরে ৪০ বছর ধরে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের যত্ন নিয়েছিলেন, তাদের জন্য খাদ্য ও জল জুগিয়েছিলেন। তিনি এও লক্ষ রেখেছিলেন, যেন তাদের বস্ত্র জীর্ণ না হয় ও তাদের পা ফুলে না যায়। (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩, ৪) যিহোশূয় এই সমস্তকিছু নিজের চোখে দেখেছিলেন। যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছিলেন, সুরক্ষা করেছিলেন এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন, ঠিক যেমনটা তিনি তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।

আধুনিক সময়ে উদ্ধার

১১. বেথেলে ১৯১৪ সালের অক্টোবর মাসে কোন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল? এর অর্থ যিহোবার জন্য কী করার সময় এসেছিল?

১১ আমাদের সময় সম্বন্ধে কী বলা যায়? ১৯১৪ সালের ২রা অক্টোবর শুক্রবার সকালে চার্লস টেজ রাসেল, যিনি সেই সময় বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব দিতেন, তিনি নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বেথেলের ডাইনিং রুমে হেঁটে এসেছিলেন। “সকলকে সুপ্রভাত,” তিনি খুশিমনে বলেছিলেন। এরপর, আসন গ্রহণ করার আগে, তিনি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন: “পরজাতীয়দের সময় শেষ হয়েছে; তাদের রাজাদের সময় শেষ।” আবারও নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম যিহোবার জন্য তাঁর লোকেদের পক্ষে কাজ করার সময় এসেছিল। আর সত্যিই তিনি কাজ করেছিলেন!

১২. কোন উদ্ধার ১৯১৯ সালে লাভ করা গিয়েছিল আর এটা কীসের পথ খুলে দিয়েছিল?

১২ ঠিক পাঁচ বছর পর, যিহোবা তাঁর লোকেদের “মহতী বাবিল” অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের পরাক্রমী বিশ্ব সাম্রাজ্য থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:২) আমাদের মধ্যে খুব কম লোকই সেই রোমাঞ্চকর উদ্ধারের বিষয়টা নিজের চোখে দেখতে পেয়েছিল। তবে, আমরা স্পষ্টভাবেই এর ফলাফল দেখতে পাচ্ছি। যিহোবা সত্য উপাসনাকে পুনর্স্থাপন এবং সেই ব্যক্তিদের একতাবদ্ধ করেছেন, যারা তাঁকে উপাসনা করতে আকুল আকাঙ্ক্ষী। এটা ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; এবং সমস্ত জাতি তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে।”—যিশাইয় ২:২.

১৩. যিহোবার লোকেদের মধ্যে আপনি কোন বৃদ্ধি দেখেছেন?

১৩ যিশাইয়ের কথাগুলো সত্য হওয়ার ক্ষেত্রে বিফল হয়নি। ১৯১৯ সালে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা পৃথিবীব্যাপী সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেওয়ার এক অভিযান শুরু করে, যা সত্য ঈশ্বরের উপাসনাকে উচ্চীকৃত করেছিল। ১৯৩০ এর দশকে এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, ‘আরও মেষকে’ একত্রিত করা হচ্ছিল। (যোহন ১০:১৬) প্রথমে হাজার হাজার ব্যক্তি এসেছিল আর এখন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি সত্য উপাসনাকে সমর্থন করছে! প্রেরিত যোহনকে দেওয়া একটা দর্শনে তাদের সম্বন্ধে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) আপনার জীবনকালে আপনি কী দেখেছেন? আপনি যখন প্রথম সত্য শিখেছিলেন, তখন পৃথিবীতে কত জন যিহোবার সাক্ষি ছিল? আজকে, যারা যিহোবাকে সেবা করছে, তাদের সংখ্যা ৬৭,০০,০০০রও বেশি। মহতী বাবিল থেকে তাঁর লোকেদের উদ্ধার করার মাধ্যমে যিহোবা সেই রোমাঞ্চকর বৃদ্ধির পথ খুলে দিয়েছিলেন, যা এখন আমরা পৃথিবীব্যাপী দেখতে পাচ্ছি।

১৪. এখনও কোন উদ্ধার বাকি আছে?

১৪ আরেকটা উদ্ধারের কাজ এখনও বাকি রয়েছে—যে-উদ্ধার পুরো পৃথিবীর সকলকে জড়িত করবে। লক্ষণীয় শক্তি প্রদর্শন করে যিহোবা সেইসমস্ত ব্যক্তিকে দূর করে দেবেন, যারা তাঁর বিরোধিতা করে এবং তিনি তাঁর লোকেদের এক নতুন জগতে উদ্ধার করবেন, যেখানে ধার্মিকতা বসতি করে। দুষ্টতার শেষ এবং সমস্ত মানব ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবান্বিত যুগের সূচনা দেখা কতই না আনন্দদায়ক হবে!—প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪.

আমাদের দিনে যিহোবার সুরক্ষা

১৫. কেন আধুনিক সময়ে যিহোবার সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে?

১৫ আমরা যেমন দেখেছি যে, যিহোশূয়ের দিনের ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার সুরক্ষার প্রয়োজন ছিল। আধুনিক সময়ে যিহোবার লোকেরা কি এর ব্যতিক্রম? কখনোই না! যিশু তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।” (মথি ২৪:৯) বছরের পর বছর ধরে অনেক দেশে যিহোবার সাক্ষিরা চরম বিরোধিতা ও নিষ্ঠুর তাড়না সহ্য করেছে। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর লোকেদের পক্ষে আছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। (রোমীয় ৮:৩১) তাঁর বাক্য আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, কোনোকিছুই—‘আমাদের বিপরীতে গঠিত কোন অস্ত্রই’—আমাদের রাজ্যের প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজকে থামাতে পারবে না।—যিশাইয় ৫৪:১৭.

১৬. যিহোবা যে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেন, সেটার কোন প্রমাণ আপনি দেখেছেন?

১৬ জগতের ঘৃণা সত্ত্বেও, যিহোবার লোকেরা সমৃদ্ধি লাভ করেছে। যিহোবার সাক্ষিরা দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৬টা জায়গায় সমৃদ্ধি লাভ করে চলছে—সত্যিই জোরালো এক প্রমাণ যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সঙ্গে আছেন, যারা আমাদের ধ্বংস করতে ও চুপ করিয়ে দিতে চায়। আপনি কি এমন পরাক্রমী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের নাম স্মরণ করতে পারেন, যারা আপনার জীবনকালে ঈশ্বরের লোকেদের চরম অত্যাচার করেছে? তাদের প্রতি কী ঘটেছে? তারা এখন কোথায়? তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, ঠিক যেমন মোশি ও যিহোশূয়ের দিনে ফরৌণ হয়েছিল। আর ঈশ্বরের আধুনিক দিনের দাসদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা বিশ্বস্তভাবে মারা গিয়েছে? তারা যিহোবার স্মৃতিতে সুরক্ষিত রয়েছে। তাদের জন্য এর চেয়ে নিরাপদ স্থান আর কোথাও নেই। স্পষ্টতই, সুরক্ষার ব্যাপারে যিহোবার বাক্য সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

আজকে যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান

১৭. আধ্যাত্মিক খাদ্য সম্বন্ধে যিহোবা কোন আশ্বাস দিয়েছিলেন?

১৭ যিহোবা প্রান্তরে তাঁর লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন এবং তিনি আজকেও তাদের তা জুগিয়ে থাকেন। ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে যত্ন নেওয়া হচ্ছে। (মথি ২৪:৪৫) আমরা সেই আধ্যাত্মিক সত্যের জ্ঞান লাভ করি, যা শত শত বছর ধরে গুপ্ত ছিল। একজন দূত দানিয়েলকে বলেছিলেন: “তুমি শেষকাল পর্য্যন্ত এই বাক্য সকল রুদ্ধ করিয়া রাখ, এই পুস্তক মুদ্রাঙ্কিত করিয়া রাখ; অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে।”—দানিয়েল ১২:৪.

১৮. কেন বলা যেতে পারে যে, আজকে প্রচুর পরিমাণে সত্য জ্ঞান রয়েছে?

১৮ আমরা এখন শেষকালে বাস করছি আর সত্য জ্ঞান সত্যিই প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। পৃথিবীব্যাপী, পবিত্র আত্মা সত্যের প্রেমিকদের সত্য ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানের দিকে পরিচালিত করেছে। আজকে সারা পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে বাইবেল ও সেইসঙ্গে প্রকাশনাগুলোও রয়েছে, যেগুলো বাইবেলে প্রাপ্ত মূল্যবান সত্যগুলো লোকেদের বুঝতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? * এই অধ্যয়ন প্রকাশনাটির সূচিপত্র বিবেচনা করুন। এই অধ্যায়গুলোর মধ্যে রয়েছে: “ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্যটি কী?,” “মৃতেরা কোথায়?,” “ঈশ্বরের রাজ্য কী?” এবং “কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?” হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করেছে। এখন এর উত্তর সহজেই পাওয়া যায়। এমনকি শত শত বছর ধরে অবজ্ঞা ও খ্রিস্টীয়জগতের ধর্মভ্রষ্ট শিক্ষা সত্ত্বেও ঈশ্বরের বাক্য টিকে রয়েছে ও তাদের সকলকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে যাচ্ছে, যারা যিহোবাকে সেবা করার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী।

১৯. আপনি কোন প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখেছেন আর আপনি কোন উপসংহারে পৌঁছেছেন?

১৯ নিশ্চিতভাবেই, আমাদের নিজের চোখে আমরা যা দেখেছি, সেই অনুযায়ী আমরা বলতে পারি: “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪) যিহোবা তাঁর দাসদের উদ্ধার করেন, সুরক্ষা করেন এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান। আপনি কি তাঁর এমন কোনো প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করতে পারেন, যা তাঁর নিরূপিত সময়ে পরিপূর্ণ হতে বিফল হয়েছে? এটা অসম্ভব। তাই বিজ্ঞতার সঙ্গেই আমরা ঈশ্বরের নির্ভরযোগ্য বাক্যের ওপর নির্ভর করি।

২০. কেন আমরা আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি?

২০ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিহোবা আমাদের বলেছেন যে, আমাদের মধ্যে অধিকাংশই এমন একটা পৃথিবীতে বাস করার আশা করতে পারি, যা মনোরম পরমদেশে রূপান্তরিত হবে। আমাদের মধ্যে মাত্র অল্পসংখ্যক ব্যক্তির স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার আশা রয়েছে। আমাদের আশা যা-ই হোক না কেন, আমাদের বিশ্বস্ত থাকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যেমনটা যিহোশূয়ও ছিলেন। সেই দিন আসবে, যখন আমাদের আশা বাস্তবে পরিণত হবে। তখন আমরা যিহোবার সেইসমস্ত প্রতিজ্ঞার দিকে ফিরে তাকাব, যেগুলো তিনি করেছেন এবং আমরাও বলব: “সকলই সফল হইয়াছে।”

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• যিহোশূয় যিহোবার কোন আশ্বাসগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখেছিলেন?

• আপনি কোন কোন ঐশিক আশ্বাস পরিপূর্ণ হতে দেখেছেন?

• ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে যিহোবা সূফসাগরে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেছিলেন?

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে যিহোবা প্রান্তরে তাঁর লোকেদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন?

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আজকে যিহোবা তাঁর লোকেদের যত্ন নেন